Ajker Patrika

সব নির্যাতনই নিন্দনীয়

হাসান আলী
আপডেট : ১৫ জুন ২০২৩, ০৯: ৪৮
সব নির্যাতনই নিন্দনীয়

যেকোনো নির্যাতনই নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তারপরও নির্যাতন বন্ধ করা যাচ্ছে না। কে নির্যাতিত হন? দুর্বল মানুষই বেশি নির্যাতনের শিকার হন। কে দুর্বল? প্রবীণ, নারী ও শিশুরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সহায়-সম্বলহীন মানুষ যাঁরা শ্রম বিক্রি করেন, তাঁরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হন।

নির্যাতনকারী যখন বুঝতে পারেন নির্যাতিত ব্যক্তির প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করার ক্ষমতা দুর্বল, তখন তিনি নির্যাতনের কথা ভাববেন। নির্যাতন করলে কিছু হবে না বা হলেও তা মোকাবিলা করতে পারবেন, এই মনোভাব থেকে নির্যাতনে আগ্রহী হন।

যুগে যুগে নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে মানুষ লড়াই-সংগ্রাম করে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছেন। নির্যাতনে শারীরিক শক্তি একসময় প্রধান ছিল। শারীরিকভাবে শক্তিশালী লোকজন আশপাশের লোকজনকে সব সময়ই তাঁর নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেন। নিয়ন্ত্রণ অমান্যকারীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতো।
শারীরিক নির্যাতন নিয়ে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ বাড়ছে। ফলে নির্যাতনের ধরন পাল্টে গেছে।

এখন তুলনামূলকভাবে মানসিক নির্যাতন-নিপীড়নের হার অনেক বেড়ে গেছে। মানসিক নির্যাতন পরিবারে, কর্মক্ষেত্রে, গণপরিবহনে, সেবা প্রতিষ্ঠানে, অফিস-আদালতে দিন দিন বাড়ছে। নির্যাতিত মানুষের মনে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দানা বাঁধছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ক্ষোভ প্রশমনে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে। বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে নির্যাতন-নিপীড়নের শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া কার্যকর রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, আইন শেষ পর্যন্ত শক্তিমানের পক্ষেই যায়। তবুও মানুষ আশায় বুক বাঁধে একদিন সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রকৃতপক্ষে মানুষ সুযোগ-সুবিধার চেয়ে ন্যায়বিচার বেশি দাবি করে। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাক—এটাই একমাত্র কাম্য হয়ে ওঠে। কারণ যা-ই হোক না কেন রাষ্ট্রযন্ত্র শেষ পর্যন্ত শক্তিমানের স্বার্থ রক্ষায় বেশি মনোযোগী হয়। নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষেরা লড়াই-সংগ্রাম করে রাষ্ট্রকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য করেন। বরাবরই নির্যাতন-নিপীড়ন ভোগ করার জন্য দুর্বল মানুষই থাকে। এই দুর্বল মানুষের রক্ত-ঘামে আমাদের সমাজসভ্যতা ও সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।

আমাদের দৈনন্দিন সুখ-শান্তি, আরাম-আয়েশ দুর্বল মানুষের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতা থেকে প্রাপ্ত। দুর্বল মানুষের লড়াই-সংগ্রাম থেকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছিল।

নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে মানুষকে মুক্ত করার সংগ্রাম করতে গিয়ে সভ্যতার বিকাশ সাধন হয়েছে। নির্যাতন মানুষকে প্রতিবাদী হতে প্রেরণা জোগায়। নতুন সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে নির্যাতন-নিপীড়ন সহনীয় মাত্রায় রাখার চেষ্টা করা হয়।

একটা সময় জমিদারি প্রথা, মহাজনি সুদ মানুষকে চরম নির্যাতনের মধ্যে রেখেছিল। মানুষের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মুখে জমিদারি ও মহাজনি সুদ বিলুপ্ত হলেও নতুন কায়দায় জমিদারি প্রথা ও মহাজনি সুদ সমাজে বিরাজমান রয়েছে।

কিছু কিছু ধর্মীয় বিধান মানুষের জন্য পীড়াদায়ক হওয়ার কারণে আন্দোলন-সংগ্রাম-দাবির মুখে স্থগিত করা হয়েছে।

প্রবীণেরা সমাজের দুর্বল জনগোষ্ঠী। তাঁদের অধিকাংশই সহায়সম্পদহীন অবস্থায় প্রবীণ জীবনে প্রবেশ করেন। ভরসা করেন সন্তান এবং নিয়তির ওপর। কপালের লিখন খণ্ডানো যায় না—এই বিশ্বাস থেকে সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়নকে মেনে নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। প্রবীণেরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। এই নির্যাতনের প্রায় পুরোটাই পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে পেয়ে থাকেন। নির্যাতনবিরোধী আইন থাকার পরও অল্প কিছুসংখ্যক মানুষ সন্তানসন্ততির বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেন। মানসিক নির্যাতন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। প্রবীণের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করা কিংবা চুপ করে থাকাও বড় ধরনের মানসিক নির্যাতন। প্রতিনিয়ত আমাদের চোখের সামনে প্রবীণ নির্যাতনের ঘটনা দেখতে পাই গণমাধ্যমের কল্যাণে। কোনো নির্যাতনই এককভাবে মোকাবিলা করা যায় না। মোকাবিলা করতে হয় সম্মিলিতভাবে। প্রবীণদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে তাঁদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ প্রবীণ জনগোষ্ঠী পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করার জন্য সক্রিয় হবেন। প্রবীণেরা বার্ধক্যের ভার পরিবার-পরিজন আর নিয়তির ওপর ছেড়ে দিতে চাইবেন না। তাঁরা নিজেদের শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে অর্থ সঞ্চয় করবেন, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবেন, স্বস্তিদায়ক জীবনের জন্য কু-অভ্যাস ত্যাগ করবেন, সন্তাননির্ভর মানসিকতা বাদ দেবেন।

প্রবীণদের সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে তাঁরা নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন। তাঁদের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে পারলে নির্যাতনের পরিমাণ অনেক কমে যাবে।

কারও ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করা পাপ—এটা শত-সহস্রবার প্রচার করলেও নির্যাতন বন্ধ করা যাবে না। নির্যাতন করা মানবাধিকার পরিপন্থী, এ কথায়ও কাজ হবে না। নির্যাতনবিরোধী কঠিন আইন করা হলেও নির্যাতন বন্ধ হবে না। নির্যাতন বন্ধ করতে ব্যক্তিকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। ব্যক্তির নির্ভরতা যত কম হবে, নির্যাতনের মাত্রাও তত কম হবে। সন্তাননির্ভর জীবনের আকাঙ্ক্ষা কিংবা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে পারিবারিক জীবনের শেষ দিনগুলো অতিবাহিত করার ইচ্ছা মানুষকে আবেগিক সংকটে ফেলে দেয়। যদি জীবনের শুরু থেকে প্রবীণ জীবনের প্রস্তুতি নেওয়া যায়, তবে নির্যাতনের আশঙ্কা অনেকখানি কমে যায়। ব্যক্তি তখন ঠিক করেন আয়ের কতটুকু নিজের জন্য, কতটুকু সন্তানের জন্য, কতটুকু স্ত্রী বা স্বামীর জন্য, কতটুকু প্রবীণ জীবনের জন্য রাখবেন। নিজের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা থেকে সরে আসতে থাকবেন। নিজেকে বঞ্চিত করে সবকিছু পরিবারের সদস্যদের জন্য উৎসর্গ করা মূর্খতা ছাড়া আর কী হতে পারে?

প্রবীণ নির্যাতন অবশ্যই বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে ভালো কিছু অর্জনের সুযোগ থাকে। প্রবীণ নির্যাতনের ঘটনা যত বেশি মানুষের সামনে হাজির হবে, মানুষ তত বেশি নিজের নিরাপত্তার কথা ভাববেন। নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে নানান রকমের উপায় খুঁজে বের করবেন। নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য আশপাশের শক্তিকে কেন্দ্রীভূত করে বৃহৎ শক্তি হিসেবে আবির্ভাব ঘটাতে পারবেন। বৃহৎ শক্তির মোকাবিলা করার বিষয়টি সব সময় নির্যাতনকারী মাথায় রাখবেন। তিনি বুঝতে পারবেন, নির্যাতন করলে শাস্তির হাত থেকে রেহাই পাবেন না।

লেখক: সভাপতি, এজিং সাপোর্ট ফোরাম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

লটারিতে স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেল ৩ লাখ ৫ হাজার শিক্ষার্থী

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: গলার পোড়া দাগেই শনাক্ত হন গৃহকর্মী আয়েশা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।

স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

লটারিতে স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেল ৩ লাখ ৫ হাজার শিক্ষার্থী

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: গলার পোড়া দাগেই শনাক্ত হন গৃহকর্মী আয়েশা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

লটারিতে স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেল ৩ লাখ ৫ হাজার শিক্ষার্থী

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: গলার পোড়া দাগেই শনাক্ত হন গৃহকর্মী আয়েশা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

লটারিতে স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেল ৩ লাখ ৫ হাজার শিক্ষার্থী

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: গলার পোড়া দাগেই শনাক্ত হন গৃহকর্মী আয়েশা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অতি লোভে তাঁতি নষ্ট: ৬০০ কোটি টাকা হারালেন নওগাঁর ৮০০ জন!

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ৩৪
বুধবার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনু। ছবি: সিআইডি
বুধবার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনু। ছবি: সিআইডি

‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’— প্রচলিত প্রবাদ যে হুবহু বাস্তবে ঘটতে পারে, তার প্রমাণ মিলল উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁয়। এই জেলার ৮০০ জনের বেশি মানুষকে অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।

বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অন্যতম হোতা মো. নাজিম উদ্দিন তনুকে (৩৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি। গতকাল বুধবার সকালে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিআইডির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনুর বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার জগৎসিংহপুরে। প্রায় এক বছর আগে ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নওগাঁ সদর থানায় নাজিম উদ্দিনসহ কয়েকজনের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা করেছিলেন এক ব্যক্তি। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির নওগাঁ জেলা ইউনিট পরিচালনা করছে।

মামলার তদন্তে জানা যায়, প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু।

প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন। পরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকেরা সুকৌশলে প্রচার করা শুরু করেন। তাঁদের এই ফাঁদে পড়ে বহু সাধারণ মানুষ বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে গ্রাহক হিসেবে বিনিয়োগে আগ্রহী হন। মামলার বাদী নিজেই ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতা দেখা দেয়। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা সে সময় থেকে তাঁদের জমাকৃত কিংবা ঋণের অর্থ ঠিকঠাক উত্তোলন করতে পারছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে অভিযাগ জানালে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে গ্রাহকদের কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নেন পরিচালক তনু।

কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে আও বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে গিয়ে বাদীসহ অন্য ভুক্তভোগীরা নিজেদের অর্থ ফেরত চাইলে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। একপর্যায়ে গ্রাহকদের অর্থ দেওয়া হবে না মর্মে জানিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

এই ঘটনার পর বাদী নওগাঁ সদর থানায় মামলা (মামলা নম্বর ২০, তারিখ ১২-১১-২০২৪, ধারা-৪০৬/৪২০ পেনাল কোড-১৮৬০) করেন। বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন যে ভুক্তভোগীদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল।

তবে সিআইডি জানায়, এ পর্যন্ত আট শতাধিক ভুক্তভোগী ৬০০ কোটির বেশি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় মো. নাজিম উদ্দিন তনুসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

লটারিতে স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেল ৩ লাখ ৫ হাজার শিক্ষার্থী

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: গলার পোড়া দাগেই শনাক্ত হন গৃহকর্মী আয়েশা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত