Ajker Patrika

স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দুর্গাপুরের শজনে যাচ্ছে সারা দেশে

দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ মে ২০২৩, ০১: ০৮
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দুর্গাপুরের শজনে যাচ্ছে সারা দেশে

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে এবার শজনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকের উৎপাদিত শজনের এখন গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজারগুলোয় ভরপুর। প্রতি কেজি শজনে পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। রাস্তার ধার, জমির আইল, ফসলের মাঠ ও বাড়ির আঙিনায় কম খরচে উৎপাদন ও পরিচর্যা কম হয় বলে বলেই কৃষকেরা পুষ্টিকর এ সবজি চাষে আগ্রহী হয়েছেন।

এদিকে উৎপাদিত শজনে উপজেলা ও জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় শজনেতে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। প্রতিদিন উপজেলার পাড়া মহল্লা ও মোড়ে মোড়ে শজনে কিনছেন পাইকারেরা।

হাটবাজার ও বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাজারের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে কৃষকদের কাছে থেকে শজনে কিনছেন। দুপর নাগাদ ক্রয়কৃত শজনে ব্যবসায়ীরা আঁটি বেঁধে ট্রাকে তুলছেন। ব্যবসায়ীদের ক্রয়কৃত শজনে ঢাকা, জামালপুর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ বছর শুরুতে উপজেলার প্রায় হাটে-বাজারে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

পৌর এলাকার শালঘরিয়া বদির মোড়ে ঢাকা থেকে আগত ব্যবসায়ী হায়দার আলী বলেন, ‘দীর্ঘ দিন থেকে আমি এ অঞ্চল থেকে শজনে কিনি। শুধু দুর্গাপুর উপজেলার না, রাজশাহীর চারটি উপজেলা থেকে প্রতি বছর কৃষকদের থেকে শজনে কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করি।’

কৃষকের উৎপাদিত শজনের এখন গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজারগুলোয় ভরপুর। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিনি আরও বলেন, ‘চলিত মৌসুমে দুই দফা কাল বৈশাখী ঝড়ে শজনের উৎপাদন কম হয়েছে। উৎপাদন শজনের দাম বেশ চড়া। কৃষকদের কাছে থেকে পাইকারি ৯৫ থেকে ১০০ কেজি দরে কিনছি।’

দুর্গাপুর সদর মোড়ের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এখান থেকে শজনে কিনে ট্র্যাকে করে ঢাকার কারওয়ান বাজারে পাঠিয়ে দেই। কারওয়ান বাজারে আমার ছোট ভাই কাঁচা মালের ব্যবসা করে। এখন বাজারে শজনে একটু কম পাওয়া গেলেও সপ্তাহখানেক পর পর্যাপ্ত শজনে পাওয়া যাবে। তবে কম উৎপাদন হলেও দামও ভালো পাচ্ছে কৃষকেরা।’

পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের লাইলী বেগম বলেন, ‘আমার গাছের শজনেগুলো পুষ্ট ও ভালো মানের হওয়া প্রথম দিনেই আমি পাইকারি ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। বাজারে প্রচুর আমদানি হলে আগামী সপ্তাহে দাম একটু কমে আসবে।’

লাইলী বেগম আরও বলেন, ‘রাস্তার ধারে নিজের জমির সীমানায় তাঁর প্রায় ২০টি শজনে গাছ আছে। গত বছর রাস্তার ধারে জমির শজনে গাছ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকার শজনে বিক্রি করে ছিলাম। এ ছাড়াও পরিবারসহ আত্মীয়স্বজনকেও দিয়েছি।’

দাম ভালো দাম পাওয়ায় পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে শজনে বিক্রি করছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকাউপজেলার বাদইল গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শজনে গাছের কাঠ হালকা ও নরম। একটু জোড়ে বাতাস বা ঝড় হলে ভেঙে পড়ে। এ কারণে শজনে গাছ লালন পালন করা খুব কঠিন। পরিবারের খাওয়ার জন্য বাড়ির আঙিনা দিয়ে কিছু গাছ লাগিয়েছি। এ বছর সেসব গাছে পর্যাপ্ত শজনে এসেছে। নিজের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয়স্বজনদের দিয়েছি। এ ছাড়া বাজারে বিক্রি করে কিছু টাকাও পেয়েছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রহিমা খাতুন বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ উপজেলা প্রচুর পরিমাণ শজনে পাওয়া যায়। বিশেষ করে বাড়ির গৃহিণীরা বাড়ির আশপাশে বেশি শজনে গাছ লাগিয়ে থাকেন। জমির আইল, সড়কের ধার, অনাবাদি জমিতে শজনের চাষ বেশি দেখা যায়। বেশির ভাগ কৃষকেরাই বাড়িতে খাওয়ার উদ্দ্যেশ্যে লাগিয়ে থাকেন। যখন প্রচুর উৎপাদন হয়, তখন নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে ৪ দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৭
পঞ্চগড় সদর উপজেলার টুনিরহাট এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পঞ্চগড় সদর উপজেলার টুনিরহাট এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় চার দিন ধরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। উত্তরের ঠান্ডা বাতাসে শীতের তীব্রতায় ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীরা। মাঠঘাটে কাজ করতে গিয়ে তাঁদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। ঘণ্টায় ৯-১০ কিলোমিটার বেগে ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

সকালে রোদ দেখা দেওয়ায় দিনের বেলায় শীতের প্রকোপ কিছুটা কম থাকে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা আবার বেড়ে যায়। রাত ও ভোরের দিকে কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে জেলার তাপমাত্রায় উল্লেখযোগ্য ওঠানামা লক্ষ করা যাচ্ছে। রোববার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে শনিবার ৯ দশমিক ৩, শুক্রবার ৯ দশমিক ৫, বৃহস্পতিবার ৮ দশমিক ৯, বুধবার ১০ দশমিক ৭, মঙ্গলবার ১০ দশমিক ৭ এবং সোমবার ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। গতকাল শনিবার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, তাপমাত্রা ১০ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৮ থেকে ৬ ডিগ্রি হলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ৬ ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হয়। সে হিসাবে বর্তমানে তেঁতুলিয়ায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, গত কয়েক দিনে জেলার তাপমাত্রা ক্রমেই নিম্নমুখী। আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে, যা মৃদু শৈত্যপ্রবাহের আওতায় পড়ে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় শরীরে ঠান্ডার প্রভাব বেশি অনুভূত হচ্ছে। পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। রাত ও ভোরের দিকে তাপমাত্রা আরও কমে শীতের তীব্রতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দুর্গাপুরে বধ্যভূমিতে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা ও মোনাজাত

মিজান মাহী, দুর্গাপুর (রাজশাহী)  
বধ্যভূমিটি ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে। গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বধ্যভূমিটি ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে। গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

১৯৭১ সালের ২২ অক্টোবর রাতে তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে ধরে এনে গগণবাড়িয়া গ্রামে বেঁধে রাখে। পরদিন শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে তাঁদের গগণবাড়িয়া গ্রামের একটি মাঠে নিয়ে গিয়ে সারবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া অনেককে জীবন্ত মাটিচাপা দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ১৮৫ জন শহীদ হন।

এই গণহত্যার স্মৃতি ধরে রাখতে এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গণকবরের পাশে একটি বধ্যভূমি নির্মাণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তারা ২০১১ সালের ৬ মার্চ গগণবাড়িয়া গ্রামে নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞ ও জীবন্ত মানুষ মাটিচাপা দেওয়ার গণকবর ও বধ্যভূমি পরিদর্শন করলেও এখন পর্যন্ত এই ঘটনার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে গগণবাড়িয়া ঐতিহাসিক গণকবর ও বধ্যভূমিতে গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

শনিবার দুপুরে গগণবাড়িয়া গ্রামের শহীদ মিনারে গিয়ে দেখা যায়, ঐতিহাসিক গণকবরের পাশে নির্মিত বধ্যভূমিটি ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে। দাওকান্দি সরকারি কলেজের প্রভাষক আয়নাল হক বলেন, ‘স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণনা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গগণবাড়িয়া গ্রামের ১৮৫ জন মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে গুলি করে এবং জীবন্ত মাটিচাপা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা।’

যুগিশো গ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা যদুনাথ সরকারের ভাতিজা এবং প্রাইম ইউনিভার্সিটির উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. প্রফুল্ল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে গগণবাড়িয়া গ্রামের গণহত্যার স্থানটি অবহেলিত ছিল। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন দপ্তর ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হলে ২০০২ সালে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ওই স্থানে গণকবরের পাশে বধ্যভূমি নির্মাণ করা হয়।’

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আনিছুর রহমান বলেন, ‘গগণবাড়িয়া একটি ঐতিহাসিক স্থান। মহান মুক্তিযুদ্ধে সেখানে ভয়াবহ গণহত্যা চালানো হয়েছিল।’

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাশতুরা আমিনা বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ১৪ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় গগণবাড়িয়ার গণকবর ও বধ্যভূমিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মোটরসাইকেলের সঙ্গে প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ১

আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি
দুমড়েমুচড়ে যাওয়া মোটরসাইকেল। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুমড়েমুচড়ে যাওয়া মোটরসাইকেল। ছবি: আজকের পত্রিকা

বগুড়ার আদমদীঘিতে মোটরসাইকেলের সঙ্গে প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষে রিমন হোসেন (১৭) নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও তিনজন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের সান্তাহার পূর্ব ঢাকা রোডে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত রিমন হোসেন উপজেলার কাশিমালা গ্রামের উজ্জ্বল প্রামানিকের ছেলে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন একই উপজেলার শিয়ালশন গ্রামের মিলন হোসেনের ছেলে মোস্তাকিম হোসেন (২৩), জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুরের পুনঘরদীঘি গ্রামের জুয়েল রানার ছেলে রাহিম রানা (২০) ও একই গ্রামের লিটন আলীর ছেলে তৌফিক আলী (২২)।

আদমদীঘি থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার থেকে আদমদীঘি অভিমুখে যাচ্ছিল দুই মোটরসাইকেল। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি প্রাইভেট কারের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে দুটি মোটরসাইকেলের। এ সময় দুই মোটরসাইকেলে থাকা চার আরোহী গুরুতর আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। রাত ১১টায় সেখানকার চিকিৎসক রিমন হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে আদমদীঘি থানার উপপরিদর্শক বাবুল আকতার জানান, দুর্ঘটনায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া প্রাইভেট কার ও দুই মোটরসাইকেল উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চাঁদপুর সেচ প্রকল্প: ৩৫৪ কিমি খাল দখল-ভরাট

  • খালের পরিমাণ কাগজে ৭৫৪ কিমি, বাস্তবে ৪০০
  • ভরাট-দখলে নাই হয়ে গেছে প্রকল্পের ৩৫৪ কিমি
  • প্রয়োজনে পানি পাচ্ছেন না কৃষকেরা, অন্য সময়ে পানিতে নষ্ট হচ্ছে ফসল
  • প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন মাছচাষিরা
মুহাম্মদ মাসুদ আলম, চাঁদপুর
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৮
সদর উপজেলার বাগাদি ইউনিয়নের নানুপুর গ্রামে খালে বাঁধ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন মাছচাষিরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
সদর উপজেলার বাগাদি ইউনিয়নের নানুপুর গ্রামে খালে বাঁধ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন মাছচাষিরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের আওতাধীন সেকেন্ডারি সেচ খাল ৭৫৪ কিলোমিটার (কিমি) কাগজে থাকলেও বাস্তবে আছে ৪০০ কিমি। খালের বাকি অংশ বিভিন্নভাবে দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। কৃষকদের অভিযোগ, নির্দিষ্ট সময়ে সেচের অভাবে ফসল উৎপাদনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে অনাবাদি হয়ে পড়ছে কৃষিজমি। তাই জরুরি ভিত্তিতে খাল সংস্কার এবং অবৈধ দখল মুক্ত করতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, সেচ নিশ্চিত করতে খালগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলার ছয়টি উপজেলার প্রকল্পভুক্ত আবাদযোগ্য জমিতে সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সেচ প্রকল্প তৈরি করা হয়। প্রকল্পভুক্ত ৫৩ হাজার

হেক্টর এলাকা বন্যামুক্ত এবং জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করে সাড়ে ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়।

সরেজমিনে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সঠিক সময়ে সেচের প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে; বিশেষ করে বোরো আবাদের সময় পানি সংকট দেখা দেয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা। ২০২৪ সালে সদর উপজেলার বাগাদি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণ সাখুয়া গ্রামে পানির অভাবে ৪০ একর জমি অনাবাদি ছিল বলেও তথ্য মিলেছে।

মধ্য বাগাদি গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সামনে বোরো আবাদ শুরু হবে। গেল বছর মৌসুমের শুরুতে একবার পানি দেওয়ার পর সংকট শুরু হয়।

পানির অভাবে আমাদের জমিগুলো ফেটে যায়।’

একই এলাকার আরেক কৃষক কবির ঢালী বলেন, ‘সঠিক সময়ে পানি পাই না। প্রয়োজন শেষ হলে পানি পাওয়া যায়। তখন অতিরিক্ত পানিতে ধানগাছ নষ্ট হয়ে যায়। সেচ প্রকল্প করা হয়েছে ফসল উৎপাদনের জন্য। কিন্তু সেচ খালে মাছচাষিরা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রাখেন। তাঁদের পানির প্রয়োজনের কারণে পানি নিষ্কাশন বন্ধ থাকে। এসব সমস্যা দূর করতে হবে।’

পাশের নানুপুর গ্রামের কৃষক ইব্রাহীম গাজী বলেন, ‘বোরো মৌসুমে নদীতেও পানি কম থাকে। যে কারণে সেচ পাম্পগুলো চালিয়ে কোনো লাভ হয় না। পানির অভাবে আমাদের ধানের চারাগুলো নিস্তেজ হয়ে পড়ে।’

সদরের বালিয়া ইউনিয়নের দুর্গাদি গ্রামের কৃষক হান্নান গাজী বলেন, গেল বছর সেচ খালের কিছু অংশ সংস্কার হয়েছে। কিন্তু ওই খাল থেকে জমিগুলোতে পানি আসার জন্য সুরু খাল স্থানীয় লোকজন ভরাট করে রেখেছে। অনেক সময় লোকজন খালে মাছ ধরার জন্য বাঁধ দেয়; পরে সেগুলো অপসারণ না করায় পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।

একই ইউনিয়নের সাপদী গ্রামের কৃষক লেয়াকত হোসেন খান বলেন, সেচ খাল সংস্কার হলেও প্রধান খালের মুখে হাজার ফুট সংস্কার হয়নি। এ ছাড়া খালের বিভিন্ন অংশ ভরাট হয়ে গেছে, অনেকে বাড়িঘর তৈরি করেছে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে এসব সমস্যা দূর করতে হবে। ফসল উৎপাদনের জন্য সঠিক সময় পানি যেমন প্রয়োজন, তেমনি বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন দরকার হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. রহুল আমিন বলেন, ‘কৃষকদের সেচ নিশ্চিত করতে আমাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। তবে স্থানীয় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ, তারা সেচ খালের বিভিন্ন স্থানে মাছ ধরার জন্য বাঁধ দেয়; পরে সেগুলো অপসারণ করা হয় না। আমরা নির্ধারিত সর্বোচ্চ পন্ড লেভেল (২.৪৪ মি.) পানি দিলেও প্রতিবন্ধকতার কারণে পানি খালে প্রবেশ করতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিক থাকলে সব খালে পানি পৌঁছে যাওয়ার কথা।’ তিনি আরও বলেন, সেচ প্রকল্প প্রতিষ্ঠার সময় খাল ছিল ৭৫০ কিলোমিটার। এখন প্রায় ৪০০ কিলোমিটার খাল সচল রয়েছে। সেচ প্রকল্পের বাগাদি পাম্পহাউসের মেশিনগুলো প্রায় সাড়ে চার যুগ আগে বসানো। এগুলো এখন কোনোরকমে সংস্কার করে সেচ চালু রাখা হয়। তবে নতুন করে পাম্প মেশিন বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছর বোরো আবাদের সময় কৃষকেরা পানি না পেলে অভিযোগ দেয়। তবে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করি। গেল বছর থেকে খাল সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২৫ কিলোমিটার সংস্কার হয়েছে। এ বছর আরও ৩০ কিলোমিটার সংস্কার হবে। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। জানুয়ারি মাসের মধ্যে পানি দেওয়া শুরু হবে। কোনো এলাকায় সেচসংকট দেখা দিলে ওই এলাকায় আমরা তাৎক্ষণিক পানির ব্যবস্থা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত