Ajker Patrika

নিউইয়র্কের জার্নাল: পৃথিবীর রাজধানীর গল্প

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৩, ১৯: ১১
নিউইয়র্কের জার্নাল: পৃথিবীর রাজধানীর গল্প

অবশেষে কাতার এয়ারওয়েজের ৭০৫ রুটের বিমানটি নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে অবতরণ করল। খুবই মসৃণ অবতরণ। ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে এগারোটা। ১৯ এপ্রিল। ঢাকায় ততক্ষণে ২০ এপ্রিলের সকাল হয়ে গেছে। আমরা ঢাকা থেকে রওনা হয়েছিলাম ১৯ এপ্রিল সকাল দশটা পঞ্চাশ মিনিটে। এর মধ্যে টাইমজোন পরিবর্তিত হয়েছে। এখন নিউইয়র্কে আমরা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দশ ঘণ্টা এগিয়ে।

নিউইয়র্কে যখনই আসি, তখনই একবার ব্রডওয়ে ঘুরে আসতে মন চায়। ব্রডওয়ের কোনো এক থিয়েটারে একটা নাটক দেখতে পেলে অনেক কিছু ভাবার অবকাশ মেলে। হোক সেটা ব্রডওয়ে, অফ ব্রডওয়ে কিংবা অফ অফ ব্রডওয়ে। তাতে কিছু আসে যায় না। শিল্পকে এরা কোথায় নিয়ে গেছে, তা ভেবে মানুষের কল্পনাশক্তি আর কারিগরি ক্যারিশমার সৃজনশীল অবয়বের জন্য গর্ব হয়। চ্যাটজিপিটির কালে মানুষের নান্দনিকতার দাম কমে না যাওয়ার একটা বড় জায়গা হিসেবে সৃজনশীলতা আরও বহুদিন বেঁচে থাকবে বলে অন্তত আমার মনে হয়। আর সেই সৃজনশীলতা মরে যেতে পারে, হেরে যেতে পারে, যদি যান্ত্রিক শব্দাবলিই একসময় মানুষের স্বপ্নের আকাশ ঢেকে দেয়।

যাহোক, ঢাকা মহানগর যখন চল্লিশোর্ধ্ব সেলসিয়াস মাথায় করে কাটিয়ে যাচ্ছিল ভয়াবহ দিন-রাত, তখন শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে পূর্বনির্ধারিত নিউইয়র্কগামী প্লেনে চড়ে বসার পরও মনে হয়নি যে রাত সাড়ে এগারোটায় নিউইয়র্ক পৌঁছুলে একটা জ্যাকেট চড়াতে হবে শরীরে। দশ ঘণ্টা সময়ের হেরফের বাংলাদেশ আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে, আর তাতেই তাপমাত্রা নত হয়েছে কতটা!

এবারের বিমানযাত্রা, ইমিগ্রেশন, লাগেজ বুঝে পাওয়া—সবই ছিল সহজ। শুধু ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার সময় এয়ারপোর্টে কাতার এয়ারওয়েজের এক কর্মকর্তার চোখ পড়েছিল আমার হ্যান্ড লাগেজের দিকে। বিমানবন্দরের কাতার এয়ারওয়েজের কাউন্টারগুলোর সর্বত্র লেখা আছে, ল্যাপটপসহ সাত কেজির বেশি জিনিসপত্তর নেওয়া যাবে না হাতব্যাগে। আমার হ্যান্ড লাগেজে মালামাল ছিল কিছুটা বেশি। বেঁকে বসলেন সেবাদানকারী কর্মকর্তা। এ জন্য বাড়তি টাকা গুনতে বললেন। তাঁকে সুযোগ না দিয়ে ব্যাগে থাকা সোয়েটারটি পরে নিলাম, হাতে নিলাম দুটো থান ইটের মতো বই, তারপর বললাম, ‘বইগুলো আমরা পড়ব। আর এবার ব্যাগটা মাপুন তো!’

ভদ্রলোক তাজ্জব বনে গেলেন এবং চুপ করে রইলেন। এ রকম সহজ সমাধান আছে, সেটা তাঁর মাথায় কুলাল না। তাঁরই একজন ডান হাত বা বাঁ হাত, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী হ্যান্ড লাগেজে ট্যাগ লাগিয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘ঈদ হিসেবে স্যার আপনার লাগেজের জন্য অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। ঈদের সময় এমনটা হতেই পারে। আপনাদের যাত্রা শুভ হোক।’

দেখো দেখি কাণ্ড! এ কথাটা আগে বললে কি আর ভারী সোয়েটারটা শরীরে জড়াতে হয়!

প্লেনে নাকি এখন ভালো খাবার দেয় না, এমনটাই শুনেছিলাম। গতবার যখন নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দর থেকে কুয়েত এয়ারওয়েজে করে ফিরেছিলাম ঢাকায়, তখন সত্যিই খাবারের এই রেশনিংয়ের সামনে পড়েছিলাম। পাইলট মহাশয় অবশ্য আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘তোমাদের কারও খিদে লাগলে কেবিন ক্রুকে বোলো। ওরা তোমার ইচ্ছেমতো জুস, চা-কফি আর স্যান্ডউইচ সরবরাহ করবে।’

কখনো চেয়ে খাওয়ার ইচ্ছে হয়নি আমার। তাই যে কবার যেচে এসে খাবার দিয়ে গেছে ক্রুরা, তার বেশি চাইনি।

ঢাকা-দোহা রুটে যে বিমানটি ছিল, সেটিতে আসনগুলো ভাগ করা ছিল ২-৪-২ হিসেবে। আমরা দুজন। একটি আইল-আসন পেলে সুবিধা হয়। সেটা পাওয়া গিয়েছিল। তবে আসনের সামনে যে মনিটরটি আছে, সেটি নিয়ন্ত্রণে রাখা মোটেই সহজসাধ্য ছিল না। যে সিনেমা দেখতে চাই, সেটা ঠিকভাবে দেখা যায় না। গান শুনতে চাইলে সেটা খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে ঢাকা-দোহার আকাশটা ছিল বিনোদনের সুযোগহীন।

তবে দোহা-নিউইয়র্কের পথে সেই সমস্যা ছিল না। ৩-৪-৩ আসনবিন্যাসের বড় উড়োজাহাজটির ইকোনমি ক্লাসের ভ্রমণটি ছিল আরামদায়ক।

একটা কৌতূহল আমার মনে অনেক দিন ধরেই বাস করছে। আমরা যারা সাশ্রয়ী মূল্যে বিমানের টিকিট কিনি, তাদের ইকোনমি ক্লাসের যাত্রী বলা হয়। এই গরিব যাত্রীদের প্লেনে ওঠানো হয় বিজনেস ক্লাসের দরজা দিয়ে। অর্থাৎ আঁটসাঁট ইকোনমি ক্লাসের আসনের দিকে এগোনোর সময় বিজনেস ক্লাসের বিলাসবহুল আসনগুলো দেখে যেন পরবর্তীকালে বেশি পয়সা খরচ করে বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করার স্বাদ জাগে—তারই মনস্তাত্ত্বিক খেলা কি না এটা, কে জানে!

আরে ভাই, বাজার অর্থনীতির যুগে আমাদের বসবাস। এখানে নিজেকে জাহির করার চেয়ে ‘বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান’।

এবার ঢাকা-দোহা, দোহা-নিউইয়র্কে দেখা গেল খাদ্য আর পানীয়ের সমাহার। কিছুক্ষণ পর পর হয় গলা ভেজাতে বলে, নয়তো খাবার গিলতে বলে! এবং অবাক হয়ে লক্ষ করি, ফ্লাইটের কোনো না কোনো বিমানবালার চেহারায় যে বিরক্তি ফুটে উঠতে দেখেছি নানা সময়ে, এবার যেন তা ছিল না। বরং ছোটখাটো কথা বলে বিমানযাত্রাটি আনন্দমুখর করে তুলতে চাইছিলেন তাঁরা। একটা উদাহরণ না দিলে বোঝা যাবে না। ডিনারে ছিল চিকেন অ্যান্ড রাইস, আর বিফ অ্যান্ড পটেটো। গরুর মাংসের সঙ্গে আমার আজন্ম ভালোবাসা বলে সেটাই চাইলাম।

বিমানবালা হেসে জানতে চাইল, ‘তুমি চিকেন খাবে না কেন?’

 ‘আগেরবার চিকেন নিয়েছিলাম। আর ডিনারে আমি বিফ পছন্দ করি।’

 ‘কোথা থেকে আসছ?’

 ‘ঢাকা থেকে।’ 

 ‘আচ্ছা!’ 

এটুকুই কথাবার্তা। কিন্তু এই যে আপাতকার্যকারণহীন কথাবার্তা, তারও তো একটা মূল্য আছে জীবনে।

জেএফকে বিমানবন্দরে রাত সাড়ে এগারোটায় নামার পর শীতটা টের পাওয়া গেল। লাগেজের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। দুটো ট্রলি বারো ডলার দিয়ে নিয়ে মালসামানসহ আট নম্বর টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে এলাম আমরা দুজন। নিউইয়র্কে থাকা আমাদের মেয়ে ঝড়ের বেগে টার্মিনালে প্রবেশ করে আমাদের দুজনের হাতে ধরিয়ে দিল গতবার আমাদেরই রেখে যাওয়া দুটো জ্যাকেট। হ্যাঁ, ততক্ষণে আমরা ঢাকা শহরের প্রায় মধ্যপ্রাচ্য বনে যাওয়া আবহাওয়া থেকে বেরিয়ে এসেছি। বুঝতে পারছি, একই পৃথিবীতে বসবাস করলেও প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়েছে কত না বৈচিত্র্যময় করে। এক জায়গায় মানুষের যখন গরমে ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা, অন্য এক জায়গার মানুষ তখন শীতে কাঁপছে!

বৈচিত্র্যের কথা বললে আবার নিউইয়র্কের কথাই বলতে হয়। এ শহর প্রত্যেক মানুষকে যেন জড়িয়ে রেখেছে পরম আদরে। অকারণে এই শহরকে নানা নামে ডাকা হয় না। সম্ভবত বাংলা ভাষায়ই সোভিয়েত সাহিত্যিক মাক্সিম গোর্কির একটা বই পড়েছিলাম, ‘পীতদানবের দেশে’ নামে যার অনুবাদ হয়েছিল। নিউইয়র্ককে পীতদানবের দেশ নামেও ডাকা হয়। বলা হয় ‘বিশালাকার আপেল’। আর হ্যাঁ, যে ডাকটির সঙ্গে সত্যের মাখামাখি আছে, সেটি হলো ‘বিশ্বের রাজধানী।’ এই শেষ দুটি শব্দে একটু থামুন। ‘বিশ্বের রাজধানী’ বলতে হলে একটি শহরকে কেমন হতে হবে, সেটা ভেবে নিন। 

 আদুরে শহর
বলা হয়, নিউইয়র্ক যেন মানুষকে আদর করে ধরে রাখে। এ শহর কোটিপতি আর উন্মাদের শহর। এ শহর দরিদ্র আর অভিজাত মানুষের শহর। পৃথিবীর সব রং ধরা আছে এ শহরে। পৃথিবীর যেকোনো নৃতাত্ত্বিক উত্তরাধিকারকে পাওয়া যাবে এখানে। শুধু কি তাই? চীনের মানুষেরা এসে এখানে গড়ে তুলেছে তাদের পাড়া, সেখানে ইংরেজির পাশে চৈনিক ভাষায় লেখা সাইনবোর্ড। নিউইয়র্কের কুইনসের ফ্লাশিংয়ে গেলে কিংবা ম্যানহাটানের চায়না টাউনে গেলে বোঁচা নাকের মানুষের ভিড় দেখে বোঝাই যাবে না, এটা আমেরিকা। মনে হবে, এখন বুঝি চীনেই আছি আমরা। 

রুশ জাতি এসে আস্তানা গেড়েছে নিউইয়র্কের যেসব জায়গায়, সেগুলোতেও মানুষ ইংরেজির চেয়ে রুশ ভাষায় কথা বলতে বেশি ভালোবাসে। বিশেষ করে ব্রাইটন বিচ কিংবা ফরেস্ট হিলসে গেলে রুশ ভাষাটাই যেন হয়ে যায় সেই এলাকার ভাষা। কোনো বাঙালিও যদি রুশ ভাষায় কথা বলে, এসব এলাকায় কেউ অবাক হবে না। রুশ ভাষায় কথা না বললেই বরং ভাববে—‘মালটা নতুন আমদানি’। আফ্রিকার মানুষের জন্য ম্যানহাটানের ‘হারলেম’ একসময় বিখ্যাত ছিল। এখানকার অধিকাংশ মানুষই ছিল কৃষ্ণবর্ণের। খুনোখুনিও বেশি হতো। অপরাধজগৎ বলে নাম ছিল হারলেমের। এখন অবশ্য অবস্থা পাল্টেছে। সংখ্যায় কমে গিয়ে শতকরা চল্লিশের মতো হয়েছে আফ্রিকান আমেরিকান। তবে কুইনসের জ্যামাইকায় গেলেও এখন দেখা যাবে আফ্রিকান আমেরিকানদের জয়জয়কার। 

আর বাঙালি? জি হ্যাঁ, গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, জ্যাকসন হাইটসে দু-তিনটি রাস্তাই আছে, যেখানে দোকানগুলোয় কর্মরত প্রায় সবাই বাঙালি। এখানকার দোকানপাটের সাইনবোর্ডে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলার অবস্থান। এমন মানুষকেও জ্যাকসন হাইটসে পাওয়া যাবে, যিনি এক বর্ণ ইংরেজি জানেন না। কোনো না কোনোভাবে নিউইয়র্কে এসে সেই যে কাজে ঢুকে গেছেন, সেটাই হয়ে গেছে তাঁর জগৎ। আর এখান থেকে কোথাও যাননি। মুখস্থ জায়গায় নেমে কাজ করে আবার মুখস্থ জায়গায় ফিরে যান তাঁরা। ব্রুকলিন, ব্রংকসেও কত যে বাঙালির বসবাস! ইদানীং কুইনসের পারসনস বুলভার্ড থেকে ১৭৯ স্ট্রিট পর্যন্ত গেলেও মনে হবে, মিনি বাংলাদেশেই বুঝি এসে পড়েছি।

আমরা জার্নি করেছি চব্বিশ ঘণ্টার কাছাকাছি। সব মিলিয়ে তা বড়ই ক্লান্তিকর। প্লেনেই বসে থাকতে হয়েছে কম করে হলেও আঠারো ঘণ্টা। ফলে এ রকম একটি ভ্রমণের পর দিন-রাতের ব্যবধান ঘুচে যায়। সময় পরিবর্তন হয়েছে বলে কারও কারও রাতের ঘুম দিনে হয়, রাতে চোখ মেলে বসে থাকতে হয়। কেউ সারা দিন মড়ার মতো ঘুমায়, কারও চোখে ঘুম আসে না। 

বইয়ের মধ্যে নিউইয়র্কের খোঁজ
যাদের ঘুম আসে না, তাদের কেউ কেউ কিছু পড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এ মুহূর্তে রাত দুটো বাজতে দশ মিনিট বাকি যখন, তখন তেমনই এক রাতজাগা মানুষের ইচ্ছে হলো বইপত্তরের খোঁজ নেবে। এবং অবধারিতভাবে নিউইয়র্কবিষয়ক ভালো বইয়ের দিকেই রাখতে হবে দৃষ্টি। 

কেন এই বইগুলোর কথা জানতে চাইছি? এর কারণ হলো, সব তো নিজের চোখে দেখা সম্ভব নয়। এসব উপন্যাসের মাধ্যমে নিউইয়র্কের জীবনটা যেন পরিষ্কার হয়ে উঠে আসে পাঠকের মনে। পাঠকের জন্য এই বই-ভ্রমণটাও খুব সস্তা কিছু নয়। বাস্তবে দেশ দেখা হোক আর না হোক, বইয়ের পৃষ্ঠায় সেই দেশকে দেখে ফেলার সুযোগ পাওয়া বিরল সৌভাগ্য।

গিওম ম্যুসো লিখেছেন ‘সেন্ট্রাল পার্ক’ উপন্যাসটি। সেন্ট্রাল পার্ক কিন্তু নিউইয়র্কের কেন্দ্র। বিশাল এ সবুজ পার্কে অবকাশ কাটাতে ভালো লাগে। স্বাস্থ্য উদ্ধার করতে চান যাঁরা, তাঁরা এখানে চলে আসেন সকাল-বিকেলে। রয়েছে রিকশা। চড়া ভাড়ায় তা পার্কের কিছু অংশ ঘুরিয়ে আনে পর্যটককে। সেই পার্ক নিয়েই গিওমের উপন্যাসটি। সেন্ট্রাল পার্কের এক বেঞ্চিতে হঠাৎ ঘুম ভাঙল এলিসের। এলিস দেখল, তার হাতে হাতকড়া। সেই হাতকড়ায় বাঁধা আছে অন্য এক অজানা পুরুষের হাত। একটু পর মেয়েটা জানতে পারে, একটি জাজ দলের সদস্য এই লোকটি। এলিস কিছুতেই বুঝতে পারে না, নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কের এক বেঞ্চিতে কী করে এ রকম একজন অচেনা মানুষের সঙ্গে হাতকড়া পরা অবস্থায় সে বসে আছে। এলিসের হঠাৎ তার পেশার কথা মনে হয়। পুলিশে চাকরি করে মেয়েটি। বছর দুয়েক আগে ইরিক বোগ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করেছিল সে। এমন কি হতে পারে, সেই ইরিক বোগ এখনো জীবিত আর এখন সে এলিসের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে? প্রশ্নের জন্ম হয় অনেক বেশি, উত্তর আসে অনেক কম। এলিস অবশ্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সে মনে করে, এই রহস্যের সমাধান তাকেই করতে হবে। 

কে এই অচেনা মানুষটি, কী তার পরিচয়, এ প্রশ্নও তো এড়ানো যায় না। এভাবেই এগিয়ে চলে উপন্যাসটি। 

নিউইয়র্ক শহরের নিশ্বাস শোনা যায় এই উপন্যাসে। 

সেন্ট্রাল পার্কের কথা উঠলেই অনেকের মনে পড়ে যায় ‘হোম অ্যালোন’ সিরিজের ‘লস্ট ইন নিউইয়র্ক’ ছবিটির কথা। যে হোটেলে এসে উঠেছিল কেভিন, তার পাশেই ছিল সেন্ট্রাল পার্ক। আর সেই সেন্ট্রাল পার্কে ‘ভেজা দস্যু’রা প্রায় ধরে ফেলেছিল কেভিনকে! সেই সিনেমায় এক পলকের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও দেখা গিয়েছিল, পরবর্তীকালে যিনি হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। 

সেন্ট্রাল পার্কের একটা জায়গা আছে, যা জন লেননের প্রতি উৎসর্গীকৃত। স্ট্রবেরি ফিল্ডস তার নাম। সেখানে অনেকেই আসে। কেউ আসে গিটার হাতে। লেননের গান পরিবেশন করে। অনেকে সেখানে দাঁড়িয়ে বা বসে ছবি তোলে। পার্ক পার হলেই ড্যাকোটা অ্যাপার্টমেন্ট। এইন অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের একটি ফ্ল্যাটেই থাকতেন লেনন। চ্যাপম্যান নামে এক ভক্তকে যখন অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের সামনে, তখনই সেই ভক্ত গুলি ছুড়েছিল জন লেননের শরীরে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরও তিনি বাঁচেননি। সেন্ট্রাল পার্কের কাছে এলে লেননের কথা মনে পড়ে। 

সোফি কিনসেলার উপন্যাসটার নাম ‘শপাহোলিক টেকস ম্যানহাটান’। উপন্যাসটির কথা বলার আগে ম্যানহাটানের কথা একটু বলে নিই। তারও আগে নিউইয়র্ক রাজ্যটির কথা। এ কথা সবাই জানেন, নিউইয়র্ক যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি অঙ্গরাজ্য। এই রাজ্যেরই রাজধানী নিউইয়র্ক সিটি। রাজ্যের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে এলে এই ম্যানহাটানের দেখা পাওয়া যাবে। 

‘শপাহোলিক টেকস ম্যানহাটান’-এর গল্প বলতে গেলে কেন নিউইয়র্ক শহর সম্পর্কে জানার প্রয়োজন পড়ে, তা পরিষ্কার করব এবার। আসলে ‘ম্যানহাটান’ শব্দটি যুক্তরাষ্ট্রে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মন দুলিয়ে দেয়। নিউইয়র্ক সিটি যে পাঁচটি প্রশাসনিক অঞ্চল বা বরো নিয়ে তৈরি, তার একটি হচ্ছে ম্যানহাটান। বাকিগুলোর নাম হলো ব্রুকলিন, ব্রংকস, কুইনস আর স্ট্যাটেন আইল্যান্ড। ঘটনাচক্রে আমি যখন নিউইয়র্কে আসি, তখন কুইনস ভিলেজে থাকি। অতি ব্যস্ত ম্যানহাটানের তুলনায় কুইনস ভিলেজ কিছুটা নীরব। 

নিউইয়র্ক সিটির সবচেয়ে বড় বরো হলো কুইনস। আর সবচেয়ে ছোট কিন্তু সবচেয়ে প্রভাবশালী বরোর নাম ম্যানহাটান। ম্যানহাটানকে নিউইয়র্ক সিটির প্রাণ বললে একেবারেই বাড়িয়ে বলা হবে না। এখানকার গগনচুম্বী ভবনগুলো এবং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জাদুঘর, খাবারের দোকান কিংবা শপিং মল মন কেড়ে নেয় পর্যটকদের। এমপায়ার স্টেট বিল্ডিং, ক্রিসলার বিল্ডিং, সিটিকর্প সেন্টারসহ বড় বড় প্রাসাদসম ভবন এই ম্যানহাটানেই অবস্থিত। আর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কথা তো আলাদাভাবে বলতে হবে। ম্যানহাটান ভ্রমণের কথা হবে পরে। আগে এটুকু শুধু বলে নিই, শুরুতেই যে ব্রডওয়ে থিয়েটারের কথা বলেছিলাম, তা দেখতে হলে আসতে হবে এই ম্যানহাটানেই। নিউইয়র্কের দুই বিখ্যাত নদী হাডসন আর ইস্ট রিভারের কথাও পরে বলা হবে। আটলান্টিকের কথাও আসবে পরে।

সোফি কিনসেলার বইটির কথা এবার বলা যায়। এখন বলা হবে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের শপিং মল আর দোকানপাটের কথা। কেন বলা হবে? বলা হবে, কারণ, এই বিষয়টিই তো কিনসেলার বইয়ের মূল প্রতিপাদ্য। কীভাবে এই দোকানগুলো মোহগ্রস্ত করে ফেলে মানুষকে, তারই আঁচ পাওয়া যাবে বইয়ের ভেতর ঢুকলে। ম্যানহাটান বদলে দেয় মানুষের ভাবনাকে। তছনছ করে দেয় হৃদয়ের যৌক্তিক ভাবনার চলাচলকে। বেকি বলে যে মেয়েটির কথা বলা হচ্ছে উপন্যাসে, তার জীবনে এ রকম বড় বড় ঢেউ এসে লাগবে, সে কথা আগে থেকে কে জানত? ম্যানহাটান তাকে তার জীবন এবং ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ভাবনার মধ্যে আমূল পরিবর্তন নিয়ে এল। গুগেনহেইম জাদুঘরে তো বেকিকে যেতেই হবে, কিন্তু লোভনীয় দোকানগুলোর কাচের বিভিন্ন জানালা মোহিত করে ফেলে বেকিকে, এরপর সে শুধু কিনতে থাকে, কিনতে থাকে, কিনতে থাকে…।

নাহ্‌! উপন্যাসগুলো নিয়ে পরে কথা হবে। শুধু এ কথাই বলার চেষ্টা করলাম যে আদতে নিউইয়র্ককে চিনতে হলে এর প্রাণকেন্দ্রে যেতে হয় বারবার। ওই যে, ম্যানহাটানের টাইমস স্কয়ারের পাশেই যেখানে একটি দোকানের ভেতর ছোট্ট মিউজিয়ামের মতো করে স্বনামধন্য শিল্পীদের ব্যবহৃত পোশাক-আশাক আর বাদ্যযন্ত্রের দেখা মেলে, সেখানেই হঠাৎ করে কনসার্ট ফর বাংলাদেশে ব্যবহার করা জর্জ হ্যারিসনের গিটারটি দেখলে কেমন লাগবে আপনার? কিংবা ঘুরতে ঘুরতে মোমায় এসে ভ্যান গঘের ‘স্টারি নাইট’ দেখে ফেললে কি আপনি আর আগের মানুষটা থেকে যেতে পারবেন? আর পিকাসোর সেই বিখ্যাত ছাগলটি কি আপনাকে অনেকখানি বদলে ফেলবে না? 

travel-ny-03দরদাম
নাহ্‌! নিউইয়র্ক নিয়ে এত কিছু বলার আছে, যা এক বসায় লিখে যাওয়া সম্ভব নয়। ঘুম থেকে উঠে প্রথম দিন যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে দোকানে গেলাম, তখন বুঝতে পারলাম, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘ ছায়া পড়েছে পণ্যের দামে।

সবচেয়ে অবাক করেছে ডিমের দাম। যুদ্ধের আগে ডিম ছিল স্বাভাবিক দামে। যদি ভুল করে না থাকি, তাহলে ডিমের ডজন ছিল ২ ডলার। এখানে অবশ্য তিন আকারের ডিম আছে। খুব বড়, বড় আর মাঝারি। ‘ছোট ডিম’ বলে কোনো লেবেল দেখিনি কখনো। ছোটটাকেই বুঝি ‘মেজ’ নামে চালিয়ে দেওয়া হয়। 

পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ধাই ধাই করে ডিমের দাম কেন বেড়ে গেল, সেটা কে বলতে পারবে কে জানে। সে সময় দোকানগুলোয় লেখা থাকত, ‘এই দাম সাময়িক। কিছুদিন পর আবার সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে।’ সে সময় ১২টা ডিমের দাম কখনো কখনো ৫ ডলারও হয়েছিল। এবার ডিম কিনলাম প্রথমে সাড়ে চার ডলার, পরে সাড়ে তিন ডলার ডজন। একটু তো কমেছে দাম, কিন্তু আগের জায়গায় তা ফেরেনি।

রেস্তোরাঁয় খাবারদাবারের দাম বেড়েছে। বাইরের স্ট্রিট ফুডের ক্ষেত্রেও চড়া দামের আভাস। গাড়ির তেলের দামও আগের তুলনায় বেশি। 

আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘সুন্দরী’ সিনেমায় ববিতার ঠোঁটে একটা সংলাপ ছিল, ‘বাপ মরছে আমার আর দাড়ি রাখছে কাঞ্চন’। সংলাপটা একটু ঘুরিয়ে বলি, ‘যুদ্ধ করে রাশিয়া-ইউক্রেন, আর খাবারের দাম বাড়ে যুক্তরাষ্ট্রে।’ না, কথাটা খুব একটা ঠিক বলা হলো না। এই যুদ্ধে বিশ্বমোড়লদের কাউকেই ধোয়া তুলসীপাতা বলা যাবে না। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসা দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাধার ক্ষেত্রে বাইরের দেশগুলোর ইন্ধন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বারবার রাশিয়াকে উসকে দিয়েছে। রাশিয়াও সেই উসকানিতে সায় দিয়ে যুদ্ধ বাধিয়েছে। 

তাতে লাভ হয়েছে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা অস্ত্র ব্যবসায়ীদের; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু সেই চাপ এসে লেগেছে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের বুকে। তবে চাপ কতটা গভীর, সেটা বোঝার জন্য যেতে হবে বাজারে, শপিং মলে, রাজপথে। কান পাততে হবে মানুষের সংলাপে। 

তারই অপেক্ষায় রয়েছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এই ডিসেম্বরে যা কিছু করতে পারেন

ফারিয়া রহমান খান 
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৯
ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

ডিসেম্বর মানেই অন্য রকম অনুভূতি। একদিকে বছর শেষের সব হিসাবনিকাশ, নতুন বছরের আগমনী বার্তা; অন্যদিকে বিজয়ের আনন্দ আর পিঠা-পার্বণের আমেজ। সব মিলিয়ে এই মাসটি যেন সত্যিই বিশেষ। ডিসেম্বরে, বছরের শেষ সময়গুলো কীভাবে একটু অর্থবহ করা যায়, তা জেনে নিন।

উদ্দেশ্য স্থির করুন

নতুন বছরে আপনি কী কী করতে চান, তা এখনই ভেবে ফেলুন। একটু স্থির হয়ে বসে খাতা-কলমে লিখে আপনার নতুন বছরের উদ্দেশ্য স্থির করে নিন। লিখে রাখলে তা বিভিন্নভাবে উদ্দেশ্য পূরণে সহায়তা করবে।

ঘর সাজান

পুরোনো বছরকে সুন্দর করে বিদায় দিতেই হোক বা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে—ঘর সাজান সুন্দর করে। কিছু ওয়ার্ম লাইট ও জানালা বা টেবিলে কিছু গাছ রেখে ঘরে দিন একটু উষ্ণতার ছোঁয়া। সঙ্গে পুরোনো অপ্রয়োজনীয় জিনিস অন্য কাউকে দিয়ে দিন। দেখবেন বাসায় একটা শান্ত ও পরিচ্ছন্ন ভাব আসবে।

পিঠা-পার্বণের আমেজ ও আড্ডা

পিঠা সংস্কৃতির অংশ। তাই ঐতিহ্য ধরে রাখাতে পরিবার ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে সময় করে একদিন বিভিন্ন রকম পিঠা বানাতে পারেন। বড় আয়োজন নয়, বরং চা-বিস্কুট আর পিঠা নিয়ে একটি ঘরোয়া আড্ডা জমান। পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণা করুন। দেখবেন, মন থেকে অনেকখানি ভার নেমে গেছে।

বই পড়ুন

ডিসেম্বরের আবহাওয়া বই পড়ার জন্য উপযুক্ত। ছুটির দিনে দুপুরগুলো কাজে লাগান। গায়ে হালকা কাঁথা জড়িয়ে একটা অলস দুপুর বই পড়ে দেখুন। অথবা একটা ভালো উপন্যাস নিয়ে শীতের মিষ্টি রোদে বসে পড়ুন। সঙ্গে রাখুন এক কাপ চা। দেখবেন, খুব ভালো লাগবে।

নিজেকে সময় দিন

বছরের এই শেষ সময় এসেও নিজের জন্য সময় বের করুন। নিজের যত্ন নিন, নিজেকে নিজেই কিছু উপহার দিন। দেখবেন নিজেকে মূল্যবান ও যোগ্য মনে হবে। তা ছাড়া কাউকে কিছু উপহার দিতে চাইলেও দিতে পারেন। সেটাও কিন্তু নিজেকে সময় দেওয়ার কাজ করবে।

ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সহায়তা করুন

শীতকালে অনেক জায়গায় পিঠা মেলা বা হস্তশিল্প মেলা বসে। এই মেলাগুলোতে ঘুরে বেড়ান। উৎসবের কেনাকাটায় বড় শপিং মল এড়িয়ে স্থানীয় কারিগরদের কাছ থেকে কিছু কিনুন এবং শীতের খাবার চেখে দেখুন। এতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন। মনে রাখবেন, উদ্যোক্তাদের সহায়তা না করলে তারা বড় হতে পারবে না। তাদের বড় করতে সহায়তা করাও একটা উদ্যোগ বটে।

সহায়তার হাত বাড়ান

শীতকালে অসহায় মানুষদের কষ্ট কমাতে গরম কাপড় ও কম্বল দান করুন। ছোট ছোট কাজ করে অন্যের মুখে হাসি ফোটান; যেমন কাউকে চা বা কফি খাওয়ান, বাসে বয়স্ক কারও জন্য আসন ছেড়ে দিন, কাউকে রাস্তা পার করিয়ে দিন। ছোট একটি মানবিক কাজ আপনার জীবনকে অর্থবহ করে তুলবে।

ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

বছরের প্রতিফলন

পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বসে অথবা একা বসে এই বছর কী কী ভালো ও খারাপ হয়েছে, তা নিয়ে ভাবুন। কী কী ভুল করেছেন, সেগুলো ভেবে দেখুন। সামনের বছরগুলোতে এসব ভুল যেন না হয়, সে জন্য সতর্ক হোন। এই বছর যা কিছু ইতিবাচক হয়েছে, সেগুলো একটি ডায়েরিতে লিখে সৃষ্টিকর্তাকে কৃতজ্ঞতা জানান। কারও সঙ্গে মনোমালিন্য হয়ে থাকলে তা মিটিয়ে নিন। অযথা মনে রাগ পুষে রেখে নিজেকে কষ্ট দেবেন না।

পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করুন

পুরোনো বন্ধুরা আসলে মানুষের ব্রিদিং স্পেস বা নিশ্বাস ফেলার জায়গা। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সবার সঙ্গে সম্ভব না হলেও যাঁদের বা যাঁর সঙ্গে সম্ভব, তাঁদের বা তাঁর সঙ্গে দেখা করে কিছু সময় কাটিয়ে আসুন। মন খুলে হাসুন। স্মৃতিচারণা করুন। অন্তত এক বেলা একসঙ্গে বসে খেয়ে ফেলুন মনের মতো কোনো খাবার। দেখবেন নতুন বছর অন্য রকমভাবে শুরু হবে।

সূত্র: ক্যামিলিস্টাইল ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতের রোদে ত্বক পুড়েছে? গোসলের সময় এই প্যাকগুলো ব্যবহারে মিলবে উপকার

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
দীর্ঘক্ষণ রোদে বসে থাকলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিতে পাতলা ত্বকের মানুষদের ত্বক দ্রুত পুড়ে যায়। ফলে গায়ের রং তামাটে হয়ে যায়। প্রতীকী ছবি: পেক্সেলস
দীর্ঘক্ষণ রোদে বসে থাকলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিতে পাতলা ত্বকের মানুষদের ত্বক দ্রুত পুড়ে যায়। ফলে গায়ের রং তামাটে হয়ে যায়। প্রতীকী ছবি: পেক্সেলস

বলতে দ্বিধা নেই, গরমের দিনে রোদ গায়ে লাগিয়ে ভিটামিন ডি নেওয়ার কথা ভুলে গেলেও শীতে যেন তা বেশি বেশি মনে পড়ে। হিম সকালে রোদ গায়ে মাখতে কারো মন্দ লাগে না। ফলে এই মৌসুমে গায়ে রোদ লাগানোও হয় বেশি। আর এতে অতিরিক্ত পাতলা ত্বকের মানুষেরা একটু ঝামেলায় পড়েন। দীর্ঘক্ষণ রোদে বসে থাকলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিতে পাতলা ত্বকের মানুষদের ত্বক দ্রুত পুড়ে যায়। ফলে গায়ের রং তামাটে হয়ে যায়। তাই এ সময় নিয়মিত যাঁরা রোদ পোহাচ্ছেন, তাঁদের ত্বক যদি এ রকম রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে যায়, তাঁরা গোসলের সময় কিছু ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। তাতে সুবিধা পাবেন।

লেবুর রস, মধু ও গোলাপজলের ফেসপ্যাক

লেবুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে মধু ত্বক আর্দ্র রাখে, যা শীতকালের রুক্ষ আবহাওয়ায় জরুরি। ১ চা-চামচ করে লেবুর রস, শসার রস, মধুর সঙ্গে আধা চা-চামচ গোলাপজল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। প্যাকটি মুখে লাগিয়ে রাখুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তবে এই প্যাক ব্যবহার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরাসরি রোদে না বের হওয়াই ভালো। বের হলেও ছাতা ব্যবহার করুন।

দই, বেসন ও হলুদের ফেসপ্যাক

এই প্যাক একই সঙ্গে ট্যান দূর করতে, মৃত কোষ ঝরাতে এবং ত্বক উজ্জ্বল করতে খুব ভালো কাজ করে। ২ চা-চামচ টক দই, ১ চা-চামচ বেসন, এক চিমটি হলুদবাটা মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই প্যাক মুখে ও গলায় ভালো করে লাগিয়ে নিন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে এই প্যাক শরীরের অন্য অংশের রোদে পোড়া দাগের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে।

লেবুর রস ও চিনির মিশ্রণ

ঘরে বসে ট্যান অপসারণের জন্য ফেসপ্যাকে যোগ করতে পারেন লেবুর রস। প্রাকৃতিক ব্লিচিং ক্ষমতার কারণে এটি ত্বকের যেকোনো দাগ দূর করতে খুব ভালো কাজ করে। এ ছাড়া এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ত্বকের দূষণ দূরে সহায়ক। সানট্যান দূর করতে লেবুর রস মধু বা চিনির সঙ্গে মিশিয়ে আক্রান্ত জায়গাগুলোয় স্ক্র‍্যাব করুন। ১৫ মিনিট আলতো করে ঘষে ধুয়ে নিন। তবে লেবু মিশ্রিত প্যাক বা স্ক্র‍্যাব ত্বকে ব্যবহার করলে ধোয়ার পর অবশ্যই ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। নয়তো ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে উঠতে পারে।

আলুর রস ও মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক

আলুর রসে মৃদু ব্লিচিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা সানট্যান হালকা করতে পারে। অন্যদিকে মুলতানি মাটি ত্বক পরিষ্কার করে। ২ চা-চামচ আলুর রস, ১ চা-চামচ মুলতানি মাটি, অল্প পরিমাণে গোলাপজল বা পানি মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই প্যাক মুখে লাগান এবং ২০ মিনিট বা পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে পানি ও স্ক্র‍্যাবার দিয়ে ম্যাসাজ করে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।

নারকেলের দুধেও মিলবে উপকার

ট্যান দূর করার পাশাপাশি নারকেল দুধ ত্বকের অন্যান্য উপকারও করে। মুখ ও হাতে ট্যান পড়ে থাকলে নারকেলের দুধকেই সমাধান হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। রোদে পোড়া ত্বকে তাজা নারকেল দুধ লাগিয়ে রাখুন আধা ঘণ্টা। এরপর ধুয়ে নিন। ত্বক ধীরে ধীরে উজ্জ্বলতা ছড়াবে।

শসা ও লেবুর রসের মিশ্রণ

শসা ত্বক আর্দ্র রাখে এবং পোড়া ত্বকে আরাম দেয়। অন্যদিকে লেবুর রস ত্বকের রং হালকা করতে সহায়ক। শসা দিয়ে মুখ, ঘাড় ও হাতের ট্যান দূর করার ভালো উপায় হলো, খোসা ছাড়িয়ে থেঁতো করে রস বের করে নিয়ে তাতে সমপরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে তুলার বল দিয়ে সেই রস আক্রান্ত জায়গায় লাগানো। এরপর সেই রস ত্বকে পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

সূত্র: ফেমিনা ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৫৫
আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

মেষ

আজ এক প্রকার ‘অটো-মোডে’ থাকবেন। সকালে উঠেই মনে হবে, ‘আমি কি ঘুমিয়েও কাজ করে ফেলতে পারি?’ বসের সামনে আপনার একটি ভুল আইডিয়া আজ এমনভাবে হিট করবে যে তিনি ভাববেন, আপনি হয়তো রাতের বেলা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কোনো বিশ্বমানের কোর্স করেছেন। সাবধান; পুরোনো প্রেমিকার হঠাৎ ফোন আসতে পারে। ফোনটা ধরবেন নাকি বলবেন ‘নেটওয়ার্কের বাইরে আছি’, সেটা আপনার কর্মফল! প্রেমের ক্ষেত্রে বিরক্তি বা অনাগ্রহ না দেখানোই ভালো।

বৃষ

আজ আপনার ব্যাংক ব্যালেন্সের দিকে নজর দিতে হবে। না, অর্থ আসবে না; বরং অর্থ যাওয়ার পথ তৈরি হবে! বিশেষত অনলাইন শপিংয়ের দিকে মন ঝুঁকতে পারে। এমন কিছু অর্ডার করে ফেলবেন, যেটা হাতে আসার পর মনে হবে—‘এটার আসল প্রয়োজন কী ছিল?’ স্ত্রীর কাছ থেকে উপহার চেয়ে বসলে এমন কিছু পাবেন, যা দেখে হাসবেন নাকি কাঁদবেন, তা ঠিক করতে পারবেন না। ফাস্ট ফুডের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিন। একটু কম তেল-ঝাল খান, নইলে গ্যাসের চোটে মহাকাশে যাত্রা শুরু করতে পারেন।

মিথুন

মিথুন রাশির দ্বৈত সত্তা আজ দ্বিগুণ সক্রিয়। এক মন বলবে, ‘কাজটা করে ফেলি,’ আর অন্য মন বলবে, ‘আরে বাবা! নেটফ্লিক্সের সিরিজটা আগে শেষ করা যাক!’ এই দোটানার জন্য দিনের শেষে আপনার কাজও হবে না, আবার সিরিজটাও শেষও হবে না। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী আজ আপনার সাফল্যের গল্পে এত বেশি রং মেশাবেন যে আসল গল্পের চেয়ে সেটা শুনেই বসের বেশি হাসি পাবে। সন্ধ্যায় পরিচিত কাউকে এমন একটি উপদেশ দেবেন, যা আপনি নিজে জীবনে কখনো মেনে চলেননি।

কর্কট

কর্কট রাশির জাতক-জাতিকারা সাধারণত ঘরকুনো হন। কিন্তু আজ গ্রহরা আপনাকে ঘরের বাইরে ঠেলে দেবে। অপ্রত্যাশিতভাবে বন্ধু বা আত্মীয়ের দল বাড়িতে এসে আপনার শান্তি ভঙ্গ করতে পারে। তাদের আপ্যায়ন করতে গিয়ে পকেটের দফারফা হবে। তবে চিন্তা নেই, এই বিড়ম্বনার মধ্যেই লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের কোনো শুভ ইঙ্গিত। প্রেমিক/প্রেমিকা আজ আপনাকে ‘ডায়েট কন্ট্রোল’ করতে বলবে। আপনি গোপনে লুকিয়ে ফ্রিজের দিকে এগোনোর সময় ধরা পড়তে পারেন।

সিংহ

সিংহ রাশি, আজ আপনার ব্যক্তিত্বের তেজ এতটা বেশি থাকবে যে ঘরে ঢুকে লাইট না জ্বাললেও চলবে। সবাই আজ আপনার কথা শুনতে চাইবে, কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো—আপনার বলার মতো বিশেষ কোনো কথা আজ থাকবে না। বসের চোখে পড়তে চাচ্ছেন? যান, একটু উল্টাপাল্টা কিছু করুন। আপনার ভুল করার স্টাইল দেখেও তারা মুগ্ধ হতে পারে। অপ্রয়োজনীয় জিনিসে প্রচুর টাকা খরচ হতে পারে, যেমন চতুর্থ কফির কাপ অথবা একটি লাল রঙের ক্যাপ যা আপনার মোটেই প্রয়োজন নেই।

কন্যা

আজ আপনার ভেতরের ‘পারফেকশনিস্ট’ সত্তাটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাবে। সহকর্মীর ফাইলে সামান্য একটি বানান ভুল পেলেও এমন রিঅ্যাক্ট করবেন যেন তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপরাধটি করে ফেলেছেন। এই বাড়তি খুঁতখুঁতে স্বভাবের জন্য কিছু মানুষ আপনাকে এড়িয়ে যেতে পারে। নিজেকে নিয়ে একটু হাসিঠাট্টা করুন। সবকিছু সিরিয়াসলি নেবেন না। যদি দেখেন জুতা উল্টো পরে ফেলেছেন, তা নিয়ে একটা সেলফি তুলে পোস্ট করে দিন! দেখবেন দিনটি হালকা হয়ে গেছে।

তুলা

গ্রহদের মতে, আজ আপনার ‘ব্যালেন্সিং অ্যাক্ট’ সফল হবে। তবে এই ব্যালেন্স কর্মক্ষেত্র বা ব্যক্তিগত জীবনে নয়, হবে আপনার ফ্রিজের খাবার আর আপনার ডায়েটের মধ্যে! আপনি দুই দিকেই সামঞ্জস্য রক্ষা করবেন; অর্থাৎ ডায়েটও ভাঙবেন, আবার রাতে আফসোসও করবেন। আজ আপনার সঙ্গী এমন একটি অদ্ভুত প্রশ্ন করতে পারে, যার উত্তর দিতে গিয়ে আপনার মাথা পুরোপুরি ঘুরে যাবে; যেমন ‘বিয়ে না হলে আমাদের জীবনটা কেমন হতো?’ শান্ত থাকুন এবং হাসতে শিখুন।

বৃশ্চিক

বৃশ্চিক, আপনার রহস্যময় স্বভাব আজ কারও কাছে ধরা পড়বে না। কারণ, নিজেই আজ আপনার রহস্য ভুলে যাবেন! পুরোনো একটি ভুলে যাওয়া ঋণ বা পাওনা টাকা আজ হুট করে মনে পড়তে পারে। তবে যখন সেটি দাবি করতে যাবেন, তখন অন্য পক্ষ এমন এক গল্প শোনাবে যে আপনি উল্টো তাকেই সহানুভূতি দেখিয়ে টাকা দিয়ে আসতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে আজ এমন একজনের সঙ্গে দেখা হবে, যিনি আপনার চেয়েও বেশি গম্ভীর। দুজন মিলে এমন একটি হাসির মুহূর্ত তৈরি করবেন, যা কেউ কল্পনাও করেনি।

ধনু

ধনু রাশির জাতক-জাতিকারা সাধারণত অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন। কিন্তু আজকের অ্যাডভেঞ্চারটি হবে আলমারি গোছানো! ভাবতেও পারেননি, আপনার আলমারির ভেতরে এত অদ্ভুত জিনিস লুকিয়ে ছিল। পুরোনো প্রেমের চিঠি থেকে শুরু করে ছেঁড়া মোজা পর্যন্ত সবই পেয়ে যাবেন। যদি আজ কোথাও যাওয়ার প্ল্যান থাকে, তবে সাবধানে যান। মানিব্যাগটি ভুল করে রান্নাঘরে রেখে আসতে পারেন। এই ভুলে যাওয়াটাই আজ আপনার সবচেয়ে বড় কৌতুক হতে চলেছে।

মকর

মকর, আপনি সাধারণত খুব শৃঙ্খলাপরায়ণ। কিন্তু আজ গ্রহরা আপনাকে একটু ডিসকোয়ালিফাই করবে। দিনের শুরুতেই গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের আগে মোবাইল ফোন খুঁজে পাবেন না। পরে দেখবেন, ফোনটি প্যান্টের পকেটেই ছিল। আপনার কঠোর পরিশ্রমের ফল আজ মিষ্টি হবে, তবে মিষ্টির সঙ্গে সামান্য তেতো অভিজ্ঞতাও আসতে পারে। বিনিয়োগের আগে দুবার চিন্তা করুন। এমন কাউকে বিশ্বাস করবেন না, যিনি আপনাকে ‘এক মাসে দ্বিগুণ লাভ’ করার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।

কুম্ভ

কুম্ভ, আজ আপনার বুদ্ধি আকাশ ছুঁয়ে যাবে। এমন একটি সমস্যার সমাধান করবেন, যা কেউ ভাবতেও পারেনি। কিন্তু আফসোস! সেই সমস্যাটি হয়তো একেবারেই গুরুত্বহীন ছিল, যেমন ‘কে আগে রিমোট নেবে’ বা ‘চায়ের কাপের দাগটা কীভাবে তোলা যায়।’ বন্ধুদের মধ্যে কেউ আজ এমন একটি বড় দাবি করবে, যা শুনে আপনি প্রথমে অবাক হবেন, পরে হো হো করে হেসে উঠবেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করলে তাতে অপ্রত্যাশিতভাবে প্রচুর লাইক ও কমেন্ট পাবেন।

মীন

মীন রাশির জাতক-জাতিকারা স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন। আজ সেই স্বপ্নময় জগৎটি আপনার কর্মক্ষেত্রে এসে পড়তে পারে। কাজের মধ্যে হঠাৎ কল্পনায় ডুবে যাবেন এবং বসকে ভুল করে অন্য কারও নাম ধরে ডেকে ফেলতে পারেন। প্রেমের ক্ষেত্রে আবেগপ্রবণতা আজ অতিরিক্ত বাড়বে। নিজের হাতে লেখা একটি কবিতা বা চিঠি প্রিয়জনকে দিলে তারা হয়তো হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়বে। কারণ, আবেগ দেখানোর জন্য আপনার শব্দচয়ন হয়তো আজ খুব একটা সিরিয়াস হবে না। তবে মনে রাখবেন, হাসিই সম্পর্কের সেরা মসলা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতকালে কলা খাবেন কি না

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ২৭
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ কলাকে স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে সব ঋতুতে খাওয়ার সুপারিশ করেছে। ছবি: ফ্রিপিক
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ কলাকে স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে সব ঋতুতে খাওয়ার সুপারিশ করেছে। ছবি: ফ্রিপিক

শীতকালে কলা খাওয়া যাবে কি না, এ বিষয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। কারণ আমাদের দেশে বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন, কলা একটি ঠান্ডা ফল। এটি খেলা সর্দি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া শীতকালে কলা খেলে ‘বুক দেবে যাওয়া’র মতো ঘটনা ঘটতে পারে। অর্থাৎ কফ বসে যেতে পারে। এ জন্য শীতকালে আমাদের দেশে সাধারণত কলা খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। সেগুলোতে শীতকালে কলা খাওয়ার ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি। তাই বলাই যায়, শীতকালে কলা খাওয়া নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, খাবার খাওয়া এবং তা থেকে শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে ব্যক্তিগত সংবেদনশীলতা থেকে। যেসব খাবারে অ্যালার্জি আছে, সেসব খাবার না খাওয়া ভালো। তাতে শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ কলাকে স্বাস্থ্যকর ফল হিসেবে সব ঋতুতে খাওয়ার সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিনে কলাসহ ৪০০ গ্রাম ফল ও সবজি খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা এবং তার সঠিক বৈজ্ঞানিক তথ্য জেনে নিন।

শীতে কলার পুষ্টিগুণ বদলে যায়

এ ধারণা ঠিক নয়। কলার পুষ্টিগুণ অর্থাৎ পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬, আঁশ ইত্যাদি ঋতুভেদে একই থাকে। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন কলাকে একটি পুষ্টিকর স্ন্যাক্স বা হালকা নাশতা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

শীতে কলার পুষ্টিগুণ বদলে যায়, এ ধারণা ঠিক নয়। ছবি: ফ্রিপিক
শীতে কলার পুষ্টিগুণ বদলে যায়, এ ধারণা ঠিক নয়। ছবি: ফ্রিপিক

হজমে সমস্যা ও সর্দি-কাশি

আমাদের দেশেই শুধু নয়, পৃথিবীতে এমন বহু মানুষ আছেন যাঁরা বিশ্বাস করেন, কলা ঠান্ডা প্রকৃতির বলে শীতকালে খেলে সর্দি-কাশি বা হজমে সমস্যা করতে পারে। এটি আজ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়নি। স্বাভাবিকভাবে যেকোনো ব্যক্তি শীতকালে কলা খেতে পারেন। বরং কলা দ্রুত শক্তি দেয় বলে শীতকালে এটি শরীরের উষ্ণতা বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে। তবে কলায় কারও অ্যালার্জি থাকলে খাওয়া ঠিক হবে না।

আয়ুর্বেদিক ধারণা

আয়ুর্বেদের মতো কিছু প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতি কলাকে ‘শীতল’ প্রকৃতির বলে বিবেচনা করে। সে জন্য রাতে বা শীতে বেশি পরিমাণে না খাওয়ার পরামর্শ দেয়। তবে এ পরামর্শ সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

বিশেষ পরিস্থিতিতে সতর্কতা

অ্যালার্জি ও কফ: যাঁদের কলায় অ্যালার্জি আছে এবং যাঁদের শীতকালে কফ জমে থাকা বা অ্যাজমার সমস্যা আছে, তাঁদের শীতকালে কলা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কলায় কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া নেই। তবে যাঁদের আগে থেকে অ্যালার্জি বা অ্যাজমার সমস্যা আছে, তাঁদের অত্যধিক মিউকাস উৎপাদনে এটি কিছু ভূমিকা রাখতে পারে। সে জন্য যাঁদের আগে থেকে এসব সমস্যা আছে, তাঁদের শীতকালে কলা খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

ডায়াবেটিস: কলায় প্রাকৃতিক শর্করা থাকে, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এটি পরিমিত খাওয়া উচিত।

কলা কলা প্রাকৃতিক এনার্জি বার ও ইমিউনিটি বুস্টার হিসেবে পরিচিত। ছবি: ফ্রিপিক
কলা কলা প্রাকৃতিক এনার্জি বার ও ইমিউনিটি বুস্টার হিসেবে পরিচিত। ছবি: ফ্রিপিক

শীতকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলা প্রাকৃতিক এনার্জি বার: কলায় থাকে ফ্রুকটোজ ও গ্লুকোজের মতো প্রাকৃতিক চিনি। এটি দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে, যা শীতকালে শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ইমিউনিটি বুস্টার: ভিটামিন ‘সি’ এবং ‘বি৬’ রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় কলা। এতে শীতকালীন সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

সেরোটোনিন উৎপাদন: কলায় ট্রিপটোফ্যান নামে একটি অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিন (মুড-রেগুলেটর) উৎপাদনে সাহায্য করে, শীতকালীন বিষণ্নতা মোকাবিলায় সহায়ক।

শীতকালে কলা খাওয়ার টিপস

রাতের বদলে সকাল বা দুপুরে খাওয়া ভালো। এ ছাড়া কলা বিভিন্ন জিনিসের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। যেমন ওটমিল ও দারুচিনির সঙ্গে কলা মিশিয়ে খেলে উষ্ণতা বাড়বে। কলার স্মুদির সঙ্গে আদা ও কাঁচা হলুদ যোগ করে খাওয়া যেতে পারে। সম্পূর্ণ পাকা কলায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বেশি থাকে। এ ধরনের কলা দিনে ১ থেকে ২টি খান।

শীতকালে কলা খাওয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর, যদি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য অবস্থা ও পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। তাই নিয়মিত কলা খেতে কোনো বৈজ্ঞানিক নিষেধ নেই। তবে অ্যাজমা, দীর্ঘস্থায়ী কফ, কিডনি রোগী ইত্যাদি সংবেদনশীল গ্রুপের মানুষেরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কলা খাবেন। এ ছাড়া কলাকে শীতের খাদ্যতালিকার একটি উপাদান হিসেবে দেখুন, একমাত্র উৎস হিসেবে নয়। অন্যান্য শীতকালীন ফলের সঙ্গে এর ভারসাম্য বজায় রাখুন।

তথ্যসূত্র

  • ইউএসডিএ জাতীয় পুষ্টি ডেটাবেইস: কলার পুষ্টি উপাদানের প্রামাণিক তথ্য
  • জার্নাল অব মেডিকেল ফুড (২০১৬)
  • আয়ুর্বেদিক ফারমাকোপিয়া অব ইন্ডিয়া (ভোল.১)
  • অন্যান্য
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত