Ajker Patrika

রহমতের রমজান: সুরা রহমানে আল্লাহ যেসব নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন

আমিনুল ইসলাম হুসাইনী
রহমতের রমজান: সুরা রহমানে আল্লাহ যেসব নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন

মানুষ আগমনের বহু আগ থেকেই করুণাময় আল্লাহ তাঁর অনুপম নেয়ামতধারায় এই পৃথিবীকে সুসজ্জিত করে রেখেছেন। মানুষের বাসযোগ্য করার জন্য যা কিছুর প্রয়োজন, তাঁর সবকিছুই এই নিখিল জাহানের পরতে পরতে বিছিয়ে রেখেছেন। কিন্তু মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ। যে মহান রব এত এত নেয়ামতে সিক্ত করলেন, মানুষ সে রবেরই বিরুদ্ধাচরণ শুরু করল। তাই রাব্বুল আলামিন সুরা রহমানে জানতে চান, ‘তোমরা উভয়ে কোন নেয়ামত অস্বীকার করবে?’ 

এখানে ‘উভয়ে’ বলতে ‘মানুষ’ ও ‘জিন’ জাতিকে বোঝানো হয়েছে। কেননা এই দুই জাতির কল্যাণার্থেই আল্লাহ তাআলা আলো–ছায়া, সাগর-নদী, পাহাড়-পর্বত, ঝরণাধারা ও নির্মল বাতাস যেমন সৃজন করেছেন, তেমনি ফুল-ফসল পত্র-পল্লবে প্রকৃতিকে করেছেন নয়নাভিরাম। আর সুপথে চলার জন্য দিয়েছেন পবিত্র কোরআন। তার এই অগণিত নেয়ামতের কিঞ্চিৎ তুলে ধরা হয়েছে সুরা রহমানে। এরশাদ হয়েছে, ‘পরম করুণাময়। তিনি শিখিয়েছেন কোরআন।’ (সুরা রহমান: ১-২) 

কোরআন বড় নেয়ামত
রাব্বুল আলামিন দয়াপরবশ হয়ে মানুষকে কোরআন শিখিয়েছেন। জীবনে চলার পথে ছোট-বড় সব সমস্যার সমাধান যেমন এই কোরআন থেকে সহজেই পাওয়া যায়, তেমনি পৃথিবী ও মহাবিশ্বের নানা রহস্য উন্মোচনে আহরণ করা যায় তথ্য-উপাত্ত। কোরআন সন্ধান দেয় নতুন দিগন্তের। আল্লাহ তাআলা এই রত্নভান্ডার আমাদের হাতের মুঠোয় দিয়ে বলেন, ‘আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্য। অতএব, কোনো চিন্তাশীল আছে কি।’ (সুরা ক্বামার: ১৭) 

ভাষাই মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ
আল্লাহ তাআলা কোরআন যেমন শিখিয়েছেন, তেমনি শিখিয়েছেন ভাষা। মানবজীবনকে পূর্ণতা দান ও শ্রেষ্ঠ জাতিতে উন্নীত করার জন্য ভাষার বিকল্প নেই। যার মুখে ভাষা নেই, সেই কেবল ভাষার প্রকৃত গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে। ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে জীবন্ত ভাষা আছে ৬ হাজারেরও অধিক। পৃথিবীতে এই যে এতো ভাষা, এই ভাষার উচ্চারণগত ভিন্নতাও অসংখ্য রকমের। বৈচিত্র্যময় এ ভাষা মানুষের জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ধ ও গতিশীল করে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তাঁর আরও এক নিদর্শন হচ্ছে—ভাষা ও বর্ণের বিচিত্রতা। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নিদর্শনাবলি।’ (সুরা রুম: ২২) 

কোরআন ও ভাষার মতো এমন বিস্ময়কর নেয়ামত পেয়েও যারা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না, তাঁর একাত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করে না, সেই অবিশ্বাসীদের চারপাশের নেয়ামতরাজির প্রতি ইঙ্গিত করে মহান রব জানতে চান, ‘এই নেয়ামতসমূহ তাদের কে দিয়েছেন?’ 

আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘সূর্য ও চাঁদ (নির্ধারিত) হিসাব অনুযায়ী চলে। আর তারকা ও গাছপালা সিজদা করে।’ (সুরা রহমান: ৫-৬) 

চাঁদ-সূর্য নেয়ামত
আল্লাহ তাআলা মানুষ ও জিনের প্রয়োজনেই চন্দ্র ও সূর্য সৃষ্টি করেছেন। যেন তা দিয়ে তারা দিনের বেলায় নিজেদের কাজ-কর্ম সহজ ও নির্বিঘ্নে করতে পারে। ভাবুন তো, যদি না থাকত এই রুপালি চাঁদটা, তাহলে আমাদের চারপাশের পরিবেশ কেমন হতো? ২৪ ঘণ্টার দিন শেষ হয়ে যেত মাত্র ৬ ঘণ্টায়। সমুদ্রে থাকত না জোয়ার-ভাটা। জমিতে ফলত না সোনার ফসল। আল্লাহ তাআলা আরও অনেক প্রয়োজনে এই চাঁদ-সূর্য সৃষ্টি করেছেন। এরশাদ হয়েছে, ‘মহিমাময় সেই রব, যিনি আকাশে কক্ষপথ বানিয়েছেন এবং তাতে এক উজ্জ্বল প্রদীপ ও আলোকিত চাঁদ সৃষ্টি করেছেন সেই ব্যক্তির জন্য, যে উপদেশ গ্রহণের ইচ্ছা রাখে কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে চায়।’ (সুরা ফুরকান: ২৫-৬১) 

আকাশে নেয়ামতের মেলা
আবার রাতের অন্ধকারে মানুষ যেন পথ না ভোলে, তার জন্য আকাশে বসালেন তারার মেলা। মানুষ অন্তত এই সুদৃশ্য আকাশ দেখে আল্লাহ তাআলার তারিফ করতে পারত। কিন্তু তা না করে উল্টো এই চন্দ্র-সূর্য, তারকারাজিকে ‘রব’ বলে ডাকতে শুরু করল। সুরা রহমানে আল্লাহ তাআলা তাঁর আরেক নেয়ামত ‘আকাশ’–এর কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, ‘আর তিনি আকাশকে সমুন্নত করেছেন এবং দাঁড়িপাল্লা (ন্যায়নীতি) স্থাপন করেছেন।’ (সুরা রহমান: ০৭) 

মহান আল্লাহর অজস্র সৃষ্টিকর্মের মধ্যে এক রহস্যময় সৃষ্টির নাম হলো আকাশ। বিশাল এই আকাশের নান্দনিকতা, নিপুণতা, সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তাভাবনা করলে মনের পর্দায় ভেসে ওঠে আল্লাহ তাআলার অসীম কুদরতের অসংখ্য নিদর্শন। এরশাদ হয়েছে, ‘আমি নির্মাণ করেছি তোমাদের ওপর মজবুত সপ্ত আকাশ।’ (সুরা নাবা: ১২) 

বৃক্ষ, ফল, ফুল—আরও কত কী! 
সুরা রহমানে আল্লাহ তাআলা আকাশ, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্রের মতো নেয়ামতের বর্ণনা যেমন দিয়েছেন, তেমনি জমিন, গাছপালা, সুগন্ধি ফুল, ফলমূল ও খোসাযুক্ত খেজুরের কথা বলেছেন। এরশাদ হয়েছে, ‘আর জমিনকে বিছিয়ে দিয়েছেন সৃষ্ট জীবের জন্য। তাতে রয়েছে ফলমূল ও খেজুরগাছ। যার খেজুর আবরণযুক্ত। আর আছে খোসাযুক্ত দানা (শস্য) ও সুগন্ধিযুক্ত ফুল।’ (সুরা রহমান: ১১, ১২ ও ১৩) 

নেয়ামতের ভান্ডার সাগর
আল্লাহর নেয়ামতের মধ্যে সাগর অন্যতম। সাগর যেন এক রহস্যপুরী। এ রহস্যপুরীর তলদেশে রক্ষিত গ্যাস, কয়লা, মনোমুগ্ধকর প্রবাল ও মণিমুক্তার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে সুরা রহমানে। তিনি বলেছেন, ‘উভয় সমুদ্র থেকে উৎপন্ন হয় মণিমুক্তা ও প্রবাল।’ (সুরা রহমান: ২২) 

সাগরের আরেক রহস্য তুলে ধরা হয়েছে এই সুরায়। এরশাদ হয়েছে, ‘তিনি দুই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেন, যারা পরস্পর মিলিত হয়। উভয়ের মধ্যে রয়েছে এক আড়াল। যা তারা অতিক্রম করতে পারে না।’ (সুরা রহমান: ১৯-২০) 

পর্বতসম জলযান আল্লাহর নেয়ামত
সুরা রহমানে আল্লাহ তাআলা পাহাড়সম জাহাজের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘সমুদ্রে বিচরণশীল পর্বতসম জাহাজগুলো তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন।’ (সুরা রহমান: ২৪) 

নেয়ামত পূর্ণতা পাবে জান্নাতে
জান্নাতের অনুপম সৌন্দর্যের চিত্রও তুলে ধরেছেন আল্লাহ তাআলা। যেখানে ‘তাসনিম’ ও ‘সালসাবিল’ নামের দুটি ঝরণাধারা থাকবে। দুই ঝরণার চারপাশে চমৎকার ও সুস্বাদু ফুল-ফলের বৃক্ষ থাকবে। যেখানে জান্নাতিরা রেশমের বিছানায় হেলান দিয়ে বসবে, তাদের নাগালেই ঝুলবে জান্নাতি ফল। আর থাকবে তিলোত্তমা হুর।

যে মহান আল্লাহ আমাদের এত সব নেয়ামতে সিক্ত করলেন, আমরা কী করে তাঁর প্রতি অকৃতজ্ঞ হই, অবাধ্য হই, লঙ্ঘন করি তাঁর দেওয়া বিধান! আমাদের উচিত—তওবা করে তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করা। তাঁর অগণিত নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করা। তাহলে আল্লাহ তাআলা নেয়ামত আরও বাড়িয়ে দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তোমরা আমার নিয়ামতপ্রাপ্তির শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, তবে তোমাদের নেয়ামত আরও বাড়িয়ে দেওয়া হবে, আর অকৃতজ্ঞ হলে কঠিন আজাবে নিপতিত করা হবে।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭) 

লেখক: ইমাম ও খতিব, কসবা জামে মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

ইসলাম ডেস্ক 
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত
আজকের নামাজের সময়সূচি। ছবি: সংগৃহীত

জীবনকে সুশৃঙ্খল করতে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে নামাজের কোনো বিকল্প নেই। একজন মুমিনের জন্য নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যম। এটি এমন এক ইবাদত—যা আমাদের মনে আধ্যাত্মিক প্রশান্তি আনে, জীবনের প্রতিটি কাজে আনে বরকত।

প্রতিদিন সময় মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর আবশ্যক। তাই জেনে নেওয়া যাক আজ কোন ওয়াক্তের নামাজ কখন আদায় করতে হবে।

আজ শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ইংরেজি, ০৫ পৌষ ১৪৩২ বাংলা, ২৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার নামাজের সময়সূচি তুলে ধরা হলো—

আজকের নামাজের সময়সূচি
নামাজ ওয়াক্ত শুরুওয়াক্ত শেষ
তাহাজ্জুদ ও সেহরির শেষ সময়০০: ০০০৫: ১৪ মিনিট
ফজর০৫: ১৫ মিনিট০৬: ৩৫ মিনিট
জোহর১১: ৫৭ মিনিট০৩: ৩৯ মিনিট
আসর০৩: ৪০ মিনিট০৫: ১৫ মিনিট
মাগরিব০৫: ১৭ মিনিট০৬: ৩৬ মিনিট
এশা০৬: ৩৭ মিনিট০৫: ১৪ মিনিট

উল্লিখিত সময়ের সঙ্গে যেসব বিভাগের সময় যোগ-বিয়োগ করতে হবে, সেগুলো হলো:

বিয়োগ করতে হবে—
চট্টগ্রাম: ০৫ মিনিট
সিলেট: ০৬ মিনিট

যোগ করতে হবে—
খুলনা: ০৩ মিনিট
রাজশাহী: ০৭ মিনিট
রংপুর: ০৮ মিনিট
বরিশাল: ০১ মিনিট

নামাজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি যেমন আমাদের দৈহিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে, তেমনই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। আজকের এই নামাজের সময়সূচি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, আল্লাহর জন্য সময় বের করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব।

আসুন, নামাজের মাধ্যমে আমরা নিজেদেরকে তাঁর আরও কাছে নিয়ে যাই। জীবনে নিয়ে আসি ইমানের নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মৃত ব্যক্তিকে দেখে যে দোয়া পড়তে হয়

ইসলাম ডেস্ক 
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত

মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আমলের দুয়ার বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় বিলাপ কিংবা উচ্চ স্বরে কান্নাকাটি মৃত ব্যক্তির কোনো উপকারে আসে না; বরং তাঁর জন্য মাগফিরাতের দোয়া এবং তাঁর ভালো গুণগুলো স্মরণ করাই প্রকৃত কল্যাণকর।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন—‘তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কাজগুলোর আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০০)

কারও মৃত্যুর পর তাঁর পাশে উপস্থিত হলে লাশ দেখার সময় দোয়ার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হজরত উম্মে সালামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রোগী কিংবা মৃতের কাছে উপস্থিত হলে ভালো কথা বলবে। কেননা তোমরা যা বলবে, ফেরেশতারা তার ওপর আমিন বলবেন।’

এই অবস্থায় এই দোয়া পড়া সুন্নত—‘আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়া লাহু ওয়া আকিবনি মিনহু উকবান হাসানাহ।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাকে ও তাকে ক্ষমা করো এবং আমাকে তার চেয়েও উত্তম প্রতিদান দাও।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৪৭)

পবিত্র কোরআনে পূর্ববর্তী নবীগণ নিজেদের এবং সমস্ত মুমিনের জন্য যেভাবে দোয়া করেছেন, তা আমাদের জন্য বড় শিক্ষা।

হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া—‘রব্বানাগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়া ওয়ালিল মুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’

অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক, যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সব ইমানদারকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪১)

হজরত নুহ (আ.)-এর দোয়া—‘রব্বিগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়া ওয়ালিমান দাখালা বাইতিয়া মুমিনাও-ওয়ালিল মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত।’

অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার পিতা-মাতাকেও; আর যে ইমান অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করেছে এবং সমস্ত মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকেও।’ (সুরা নুহ: ২৮)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মৃত ব্যক্তির জন্য যেভাবে দোয়া করবেন

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে প্রতিটি মানুষের জন্য একটি বিষয় নিশ্চিত ও অলঙ্ঘনীয়—তা হলো মৃত্যু। মানবজীবনের এই অনিবার্য পরিণতি সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। এই চিরন্তন বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার শিক্ষাই পবিত্র কোরআন আমাদের দিয়েছে।

মহান আল্লাহ তাআলা এই দুনিয়াবি জীবনকে শুধু পরীক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে প্রেরণ করেছেন, যেখানে মৃত্যুই হচ্ছে এই পরীক্ষার অবসান এবং পরকালীন জীবনের সূচনা।

মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর কেয়ামতের দিন তোমাদের পরিপূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে। তারপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ধোঁকার বস্তু ছাড়া কিছুই নয়।’ (সুরা আলে ইমান: ১৮৫)

তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরেও অবস্থান করো, তবুও।’ (সুরা নিন্দা: ৭৮)

মৃতদের জন্য দোয়া ও মাগফিরাত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে মানুষের হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। এই বিচ্ছেদ-কষ্টে ব্যথিত মন থেকে তাদের জন্য কল্যাণ কামনার অনুভূতি জাগা স্বাভাবিক। মৃতদের জন্য দোয়া ও মাগফিরাত কামনা করা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ আমল।

রাসুলুল্লাহ (সাধারণ) বলেছেন, ‘যখন মানুষ মারা যায়, তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমল অব্যাহত থাকে—সাদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং ওই সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ্ মুসলিম: ১৬৩১)

রাসুল (সা.)-এর শেখানো দোয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) মৃতদের জন্য যে দোয়া করতেন। দোয়াটি হলো—‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলাহু ওয়ারহামহু, ওয়া আফিহি ওয়া ফু আনহু; ওয়া আকরিম নুজুলাহু, ওয়া ওয়াসসি মাদখালাহু; ওয়াগসিলহু বিল মায়ি ওয়াস সালজি ওয়াল বারাদি, ওয়ানাক্কিহি মিনাল খাতা-ইয়া কামা ইউননাককাস সাওবুল আব ইয়াযু মিনাদদানাসি; ওয়াবদিলহু দা-রান খায়রান মিন দারিহি, ওয়া আহলান খাইরান মিন আহলিহি; ওয়া যাওজান খাইরান মিন যাওজিহি। ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা, ওয়া আইজহু মিন আজাবিল কাবরি ওয়ামিন আজাবিন নার।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন এবং দয়া করুন। শান্তিতে রাখুন এবং তার থাকার স্থানটিকে মর্যাদাশীল করুন। তার কবর প্রশস্ত করে দিন। বরফ ও তুষারের শুভ্রতা দিয়ে তাকে গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিচ্ছন্ন করে দিন—যেমন ময়লা থেকে সাদা কাপড় পরিষ্কার হয়। তাকে দুনিয়ার বাসস্থানের চেয়ে উত্তম বাসস্থান, পরিবার ও সঙ্গী দান করুন। হে মাবুদ, তাকে জান্নাতে দাখিল করুন এবং কবর ও দোজখের আজাব থেকে রক্ষা করুন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুমার দিনে আত্মশুদ্ধির ১০ নির্দেশনা

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ 
ইবাদতে মগ্ন কয়েকজন তরুণ। ছবি: সংগৃহীত
ইবাদতে মগ্ন কয়েকজন তরুণ। ছবি: সংগৃহীত

আজ জমাদিউস সানি মাসের চতুর্থ জুমা। এদিনটি একজন মুমিনের জীবনে আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির এক বিশেষ সুযোগ। এ বরকতময় দিনে নিজের ইমান, আমল ও চরিত্রকে নতুন করে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। আজকের জুমার বিশেষ আমলি দিকনির্দেশনাগুলো নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

১. জুমার দিনের মর্যাদা অনুধাবন: জুমা মুমিনের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন। এদিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ, দীর্ঘ দোয়ায় মগ্ন হওয়া এবং জুমার খুতবা গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনা প্রতিটি মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব।

২. সালাতে খুশু-খুজু অর্জন: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মতো আদায়ের পাশাপাশি জুমার নামাজে আগেভাগে মসজিদে উপস্থিত হওয়া জরুরি। নামাজকে কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং আল্লাহর সঙ্গে আত্মিক সংযোগের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

৩. কোরআনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক: নিয়মিত তিলাওয়াতের পাশাপাশি কোরআনের অর্থ ও শিক্ষা বোঝার চেষ্টা করা উচিত। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে কোরআনের নির্দেশনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি সন্তানদের কোরআন শিক্ষায় আগ্রহী করে তোলা আমাদের কর্তব্য।

৪. তাওবা ও আত্মপর্যালোচনা: অতীতের গুনাহের জন্য আন্তরিক অনুতাপ এবং প্রকাশ্য-গোপন সব পাপ থেকে ফিরে আসার দৃঢ়সংকল্প করতে হবে। প্রতিদিনের আমল নিজে নিজে মূল্যায়নের অভ্যাস গড়ে তোলা আত্মশুদ্ধির মূল চাবিকাঠি।

৫. সবর, তাওয়াক্কুল ও তাকওয়া চর্চা: বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা ইমানের দাবি। নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করে ফলাফলের জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে এবং সর্বদা আল্লাহভীতি (তাকওয়া) বজায় রাখতে হবে।

৬. পরিবারে ইসলামি পরিবেশ প্রতিষ্ঠা: পরিবারে ন্যায় ও ইনসাফ কায়েম করা এবং স্ত্রী-সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করা অত্যন্ত জরুরি। পারিবারিকভাবে নামাজ ও নিয়মিত দ্বীনি আলোচনার চর্চা করা একজন মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

৭. সামাজিক দায়িত্ব ও মানবিকতা: প্রতিবেশীর হক আদায় করা, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং সমাজে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা।

৮. দুনিয়াবিমুখতা ও আত্মসংযম: অতিরিক্ত ভোগবিলাস ও অপচয় পরিহার করে সহজ-সরল ও সংযত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টিকেই জীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্য হিসেবে স্থির করতে হবে।

৯. ইসলামের মহান মনীষীদের অনুসরণ: ইসলামের মহান মনীষী ও সালাফদের জীবন থেকে সংযম, ত্যাগ ও পবিত্রতার শিক্ষা গ্রহণ করে জীবনের মূল্যবোধ ও ইমান রক্ষায় সচেতন থাকা প্রয়োজন।

১০. নতুন আমলি অঙ্গীকার: প্রতিটি জুমাকে আত্মশুদ্ধির একটি মাইলফলক হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। ছোট হলেও নিয়মিত ভালো আমলের অভ্যাস গড়ে তোলা এবং গুনাহমুক্ত জীবনের পথে অবিচল থাকার প্রতিজ্ঞাই হোক আজকের জুমার শিক্ষা।

হে আল্লাহ, আপনি আমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে দিন। আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের আমলগুলো কবুল করুন। জমাদিউস সানি মাসের এই বরকতময় চতুর্থ জুমাকে আমাদের জীবনে হেদায়েত ও কল্যাণের মাধ্যম হিসেবে কবুল করুন।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগীকল্যাণ সোসাইটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত