সোমবার, ২৯ মে ২০২৩

সেকশন

 

রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রাগার কত বড়, নিয়ন্ত্রণ করে কে

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩, ১৫:০৮

বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক ওয়ারহেডের মজুত রয়েছে রাশিয়ার কাছে। ছবি: এএফপি প্রতিবেশী দেশ বেলারুশের ভূখণ্ডে পারমাণবিক অস্ত্রাগার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। স্থানীয় সময় শনিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তিনি বলেছেন, কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের জন্য প্রতিবেশী বেলারুশের সঙ্গে মস্কোর একটি চুক্তি হয়েছে।

তবে বেলারুশের সঙ্গে চুক্তিটি পরমাণু বিস্তার রোধকরণ চুক্তি লঙ্ঘন করবে না বলেও মন্তব্য করেছেন পুতিন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক ধরে ইউরোপীয় মিত্রদের ভূখণ্ডে পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করেছে। আমরাও একই ধরনের কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরমাণু বিস্তার রোধকরণের কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক নিয়ম লঙ্ঘন না করে আমরাও আমাদের মিত্রদের ভূখণ্ডে পরমাণু অস্ত্র মোতায়েনে জোর দিয়েছি।’

পুতিন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, ‘বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেংকো দীর্ঘদিন ধরে তাঁর দেশে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের বিষয়টি উত্থাপন করে আসছিলেন। কারণ দেশটির সঙ্গে ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডের সীমান্ত রয়েছে।’

আগামী ১ জুলাইয়ের মধ্যে রাশিয়া বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্রাগার নির্মাণ শেষ করবে বলেও জানিয়েছেন পুতিন। তিনি আরও বলেন, ‘পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম এমন ১০টি উড়োজাহাজ ইতিমধ্যে বেলারুশে মোতায়েন করেছে রাশিয়া। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা স্থানান্তর করা হয়েছে।’ 

পুতিনের এ ঘোষণার পর রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই অস্ত্রভান্ডার আসলে কত বড়? কারাই বা এটি নিয়ন্ত্রণ করে? 

ভ্লাদিমির পুতিন ও জো বাইডেনের কাছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক ওয়ারহেডের মজুত রয়েছে। ছবি: এএফপি পারমাণবিক পরাশক্তি
উত্তরাধিকার সূত্রে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে পারমাণবিক অস্ত্র পেয়েছে রাশিয়া। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক ওয়ারহেডের মজুত রয়েছে দেশটির কাছে।

ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্ট জানিয়েছে, গত বছর পর্যন্ত পুতিনের কাছে ৫ হাজার ৯৭৭টি পারমাণবিক ওয়ারহেড ছিল বলে জানা গেছে। চলতি বছরের হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। পুতিন এ বছর নতুন করে ওয়ারহেড তৈরি করেছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে রয়েছে ৫ হাজার ৪২৮টি পারমাণবিক ওয়ারহেড। 

রাশিয়ার কাছে থাকা ওয়ারহেডের মধ্যে আনুমানিক ১ হাজার ৫০০টি অব্যবহৃত (সম্ভবত এখনো অক্ষত), ২ হাজার ৮৮৯টি রিজার্ভ এবং ১ হাজার ৫৮৮টি বিভিন্ন স্থানে কৌশলগত কারণে মোতায়েন রয়েছে। 

বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টস বলেছে, রাশিয়া ৮১২টি ওয়ারহেড স্থলভিত্তিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে, ৫৭৬টি সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে এবং প্রায় ২০০টি ভারী বোমারু ঘাঁটিতে মোতায়েন করে রেখেছে। 

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ১ হাজার ৬৪৪টি কৌশলগত পারমাণবিক ওয়ারহেড মোতায়েন রয়েছে। চীনের কাছে রয়েছে ৩৫০টি, ফ্রান্সের ২৯০টি এবং যুক্তরাজ্যের কাছে ২২৫টি ওয়ারহেড রয়েছে। 

এই পরিসংখ্যানগুলো থেকে সহজেই বোঝা যায়, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই বহুবার বিশ্বকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। 

১৯৪৭ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল। ওই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্ত্রাগারে প্রায় ৪০ হাজার পারমাণবিক ওয়ারহেড ছিল। আর যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ছিল প্রায় ৩০ হাজার ওয়ারহেড। 

বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টসের ধারণা, রাশিয়ার কাছে অন্তত ৪০০টি পরমাণু সমৃদ্ধ আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ১ হাজার ১৮৫টি ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম।

এ ছাড়া রাশিয়ার ১০টি পারমাণবিক সাবমেরিন রয়েছে, যেগুলো সর্বোচ্চ ৮০০ ওয়ারহেড বহন করতে পারে। এতে ৬০ থেকে ৭০টি পারমাণবিক বোমারু বিমান রয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রয়েছে ৫ হাজার ৪২৮টি পারমাণবিক ওয়ারহেড। ছবি: এএফপি নতুন পরমাণু
যুক্তরাষ্ট্র ২০২২ সালের পারমাণবিক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলেছে, রাশিয়া ও চীন পারমাণবিক শক্তি সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ করছে। তবে ওয়াশিংটন ব্যয়বহুল অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে চায়। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র নিয়ন্ত্রণমূলক পদ্ধতি অনুসরণ করতে আগ্রহী। 

তবে পুতিন বলছেন অন্য কথা। তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র নতুন ধরনের পরমাণু অস্ত্র মোতায়েন করছে। এ ধরনের তথ্য আমার কাছে রয়েছে।’ 

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মতে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর অল্প কয়েকটি দেশই পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯২ সালে, চীন ও ফ্রান্স ১৯৯৬ সালে, ভারত ও পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে এবং উত্তর কোরিয়া ২০১৭ সালে সর্বশেষ পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। 

কে দিতে পারেন পরমাণু হামলার নির্দেশ
রাশিয়ার পরমাণুনীতি বলছে, পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে কৌশলগত ও অকৌশলগত—উভয় ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন একমাত্র পুতিন।

তবে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের হাতেও সিদ্ধান্ত গ্রহণের কিছুটা ক্ষমতা রয়েছে বলে মনে করা হয়।

বলা হয়ে থাকে, রুশ প্রেসিডেন্টের হাতে সব সময় একটি ‘পারমাণবিক ব্রিফকেস’ থাকে। এটি ‘চ্যাগেট’ নামেও পরিচিত। এই ব্রিফকেসের মাধ্যমে তিনি তাঁর শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ করতে পারেন। যোগাযোগের এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘কাভকাজ’।

পুতিনের নিউক্লিয়ার ব্রিফকেস। ব্রিফকেসের ভেতরে বেশ কয়েকটি বোতাম রয়েছে। ছবি: টুইটার ২০১৯ সালে রুশ টেলিভিশন জেভেজদার এক ফুটেজে দেখা গেছে, ব্রিফকেসের ভেতরে বেশ কয়েকটি বোতাম রয়েছে। সেখানে ‘কমান্ড’ নামের একটি বিভাগে দুটি বোতাম রয়েছে। একটি সাদা, অপরটি লাল। একটি বিশেষ ফ্ল্যাশ কার্ডের মাধ্যমে ব্রিফকেসটি সচল করা হয়।

পুতিন যদি কখনো মনে করেন রাশিয়া পারমাণবিক হামলার সম্মুখীন হয়েছে, তাহলে এই ব্রিফকেসের মাধ্যমে সাধারণ স্টাফ কমান্ড এবং রিজার্ভ কমান্ড ইউনিটগুলোতে সরাসরি নির্দেশনা পাঠাবেন।

এ ছাড়া পুতিন যদি সুনির্দিষ্টভাবে পরমাণু হামলার ব্যাপারে নিশ্চিত হন, তাহলে সর্বশেষ অবলম্বন হিসেবে ‘ডেড হ্যান্ড’ পদ্ধতি ব্যবহার করবেন। এটি একটি কম্পিউটারাইজড পদ্ধতি। এর অর্থ হচ্ছে, কম্পিউটারই চূড়ান্ত ধ্বংসলীলার সিদ্ধান্ত নেবে। তখন একটি নিয়ন্ত্রিত রকেট রাশিয়ার বিশাল অস্ত্রাগারজুড়ে পারমাণবিক হামলার নির্দেশ দেবে। 

সূত্র: রয়টার্স, আল জাজিরা, বিবিসি ও মিলিটারি ডটকম

মন্তব্য

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।
Show
 
    সব মন্তব্য

    ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

    এলাকার খবর

     
     

    এরদোয়ানের জয়ে বিভক্ত তুরস্ক

    অপ্রতিরোধ্য এরদোয়ান: অন্তর্ভুক্তিমূলক নাকি আরও কঠোরতার পথে তুরস্ক

    মার্কিন ঋণ খেলাপে চীন ও জাপানের মাথাব্যথা কেন

    চীন-রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ হতে গিয়েই খাদের কিনারায় ইমরান খান

    আসাদের সঙ্গে সৌদি যুবরাজের হ্যান্ডশেক কী বার্তা দিল যুক্তরাষ্ট্রকে

    চীনের বিরুদ্ধে সোচ্চার জি-৭, উদীয়মান বিশ্বকে হাত করার কৌশল

    স্ত্রীকে নির্যাতন ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে যুবক গ্রেপ্তার

    নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথম এসএসসি পরীক্ষা ২০২৬ সালে 

    ৩ দিন অসুস্থ থাকার পর চিকিৎসা পেয়ে বনে ফিরল বন্য হাতি

    গুচ্ছের ‘সি’ ইউনিটের ফল প্রকাশ, পাশের হার ৬৩ শতাংশ

    জাতিসংঘের আমন্ত্রণ পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিতে গিয়ে গ্রেপ্তার ৫ 

    আপনি আমাদের লোক নন, ব্যারিস্টার আমীর–উল ইসলামকে দুলাল