নিজের বসতভিটা সন্তানদের নামে লিখে দিয়েছেন লিয়াকত আলী (৭৫)। চেয়েছিলেন জীবনের শেষ বয়সে সন্তানদের সঙ্গে থেকেই মরবেন। এই সামান্য চাওয়া পূরণ হওয়া তো দূরের কথা, ওই বাড়িতে আর জায়গা হয়নি লিয়াকত আলীর।
সেখানেই শেষ নয়, লিয়াকত আলী উঠেছিলেন ভাড়াবাড়িতে। কিন্তু ভাড়ার টাকা দিতে না পারায় বাড়ির মালিক তাঁর এক ছেলেকে ডেকে তাঁকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন। সেখান থেকে ওই সন্তান লিয়াকত আলীকে নিয়ে গেলেন ঠিকই কিন্তু বাড়িতে নয়, বাবাকে রাখলেন একটি গণশৌচাগারে।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ বৃদ্ধ লিয়াকত আলীকে গণশৌচাগার থেকে উদ্ধার করে। পরে তিন ছেলেকে ডেকে এনে বাবাকে তুলে দিয়েছেন তাঁদের হাতে। সেই সঙ্গে লিয়াকত আলীকে বাড়িতে রাখতে তাঁর সন্তানদের বাধ্য করেছেন নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন।
স্থানীয়রা বলছেন, লিয়াকত আলীর তিন ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলেরাও আলাদা আলাদা সংসার করেন। লিয়াকত আলী তাঁর বসতভিটা সন্তানদের নামে লিখে দেন। এদিকে স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর জায়গা হয়নি নিজের বাড়িতে। বাধ্য হয়ে তিনি ভাড়া থাকতেন নগরীর কাজলা এলাকার এক বাড়িতে।
বৃদ্ধ লিয়াকত বাড়ির ভাড়া দিতে পারতেন না বলে মালিক তাঁর ছোট ছেলে সুমন আলীকে ডেকে নিয়ে যেতে বলেন। গতকাল সকালে সুমন তাঁর বাবাকে ভাড়া বাড়ি থেকে নিয়ে যান। কিন্তু নিজের বাড়ি না নিয়ে তালাইমারী এলাকার একটি গণশৌচাগারে রেখে চলে যান। খবর পেয়ে বিকেলে সেখানে যান বোয়ালিয়া থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন। তিনি লিয়াকত আলীর তিন ছেলেকে ডেকে তাঁদের বাবাকে বাড়ি নিয়ে যেতে বাধ্য করেন।
এদিকে ঘটনাস্থলে যাওয়া তিন ছেলের কেউই এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। এটি তাঁদের পারিবারিক সমস্যা বলে এড়িয়ে গেছেন।
ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লিয়াকত আলীর ছেলেরা মোটামুটি সচ্ছল। তাঁরা বাবার দেখাশোনা করতে পারবেন। তাঁদের বলা হয়েছে পালাক্রমে প্রতি মাসেই তাঁরা নিজ নিজ বাড়িতে বাবাকে রাখবেন। এর ব্যতিক্রম হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পিতামাতার ভরণ-পোষণ না করলে শাস্তির বিধানও আছে।’
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে