Ajker Patrika

শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে ক্রমাগত অবহেলা

মামুনুর রশীদ
শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে ক্রমাগত অবহেলা

প্রতিনিয়ত সংবাদপত্রে বিদেশে টাকা পাচার করার সব আশ্চর্য ঘটনা প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু এর বিহিত হিসেবে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। রাজনৈতিক নেতা, আমলা, ব্যবসায়ী বিদেশে নিজেদের সন্তানসন্ততিদের লেখাপড়া ছাড়াও অনেক ধরনের বেআইনি কাজের সঙ্গে যুক্ত।

শিক্ষার প্রতি প্রথম থেকেই একটা সামাজিক অবহেলা লক্ষ করা যায়। সাতচল্লিশে দেশভাগের পর দেখা যায় বছরের পর বছর স্কুলের শিক্ষকেরা বেতন পাননি এবং ভাষার প্রশ্নে যখন আন্দোলন শুরু হয়, তখন ব্যাপকসংখ্যক শিক্ষক এই আন্দোলনে যুক্ত হন। তখন মুসলিম লীগের রাজনীতিতে সামন্তবাদী চিন্তায় দেখা যায় শিক্ষাকে সংকোচন করার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইসলামি শিক্ষা এবং সেই সঙ্গে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ষড়যন্ত্রে মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করার একটা ভাবনা দেখা যায়।

আটচল্লিশ সালে এই চিন্তা বাস্তবে রূপ পায়। সেই বাস্তবতায় পাকিস্তানের একনায়কতান্ত্রিক নির্দেশাবলি শিক্ষাকে আরও সংকুচিত করে ফেলে। ষাটের দশকের শরীফ কমিশন এবং হামুদুর রহমান কমিশনে তার আরও জোরালো প্রতিফলন ঘটে। ভাষা আন্দোলন সফল হলেও পাকিস্তানি শাসকেরা শিক্ষাকে সংকুচিত করার নীতি প্রবলভাবে গ্রহণ করেন। ভাষা আন্দোলনের পরে পরে স্কুলগুলো কোনো সরকারি সাহায্য ছাড়া জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে চলছিল। শুধু সরকারি স্কুলগুলো খুব অল্প বেতনে চালানো হচ্ছিল, কিন্তু সামাজিক প্রণোদনায় যে স্কুলগুলো চলছিল, সেগুলোতে শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতির চর্চাও চলতে থাকে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষকদের ভাগ্যের তেমন একটা উন্নতি দেখা যায় না। তবে এ সময়ে কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন বাংলা ভাষায় শিক্ষাদানের প্রশ্নে ব্যাপক কার্যক্রমের সূচনা করার প্রস্তাব দেয়। যদিও এ সময়ে পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক শাসন এসে শিক্ষাকে বহুমুখী করে একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। সামরিক শাসক এরশাদের আমলে শিক্ষার এই বিশৃঙ্খলা মজিদ খান শিক্ষানীতির মাধ্যমে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ সময়ে বিভিন্ন দাতা সংস্থা শিক্ষার ক্ষেত্রে নানা ধরনের সংস্কারের কথা বলে। সরকার সেই সংস্কারগুলো মেনেও নেয়। কারণ, বিনিময়ে সামান্য কিছু অর্থেরও জোগান হয়।

সবচেয়ে বেশি অবহেলার স্বীকার হয় প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষা একজন মানুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একসময় হাতেখড়ি নেওয়ার বিষয়টি প্রাচীন সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা হতো। সে সময়ে সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে সমাজনেতারা শিক্ষক ও ছাত্রদের প্রতি একটা গভীর যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করতেন।

সামরিক শাসন ও তার পরবর্তী সময়ে স্কুলগুলোতে অবকাঠামো গড়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়, ঠিকাদারি সংস্থা এবং প্রকৌশলীরা মিলে অত্যন্ত নিম্নমানের পরিকল্পনা ও নির্মাণকাজ করে খুব অল্পদিনের মধ্যেই তা ধ্বংসের সম্মুখীন করেছেন। সামাজিক উদ্যোগে যে স্কুল-কলেজগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার মধ্যে একটা পরিবেশচেতনাও ছিল।

সেই পরিবেশকে ভেঙে দিয়ে নতুন যে ব্যবস্থা আনা হয়েছিল, তা একেবারেই শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী ছিল না। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের বেতনকাঠামো একেবারেই এত নিচুতে ছিল যে একজন শিক্ষকের বেতন সরকারি অফিসের পিয়নের সমান করা হয়েছিল। ফলে নিম্নমানের একজন মেধাবী ছাত্র প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকের চাকরিতে আসত না। এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষার মান ধসে যেতে থাকল। শিক্ষকদের চাকরি সার্বক্ষণিক হলেও যেহেতু তাঁর বেতন জীবনধারণের জন্য একেবারেই অপ্রতুল, তাই অন্য কোনো কাজ করে তাঁরা মূল কাজ শিক্ষাকে অবহেলাই করতেন। কালক্রমে শ্রেণিকক্ষে পড়ানোর চেয়ে জীবনধারণের জন্য কোচিং সেন্টারগুলো প্রতিষ্ঠা পেতে থাকে। এ নিয়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকেরা বারবার রাজপথে আন্দোলনও করতে থাকেন। কিন্তু কোনো সরকারই বিষয়টির গুরুত্ব দেয় না। বর্তমানে বেকারত্ব নিরসনের কারণে মাস্টার্স পাস করা ব্যাপকসংখ্যক তরুণ-তরুণী প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকতার জন্য প্রতিযোগিতা করতে শুরু করে। অনেক দেনদরবার ও আন্দোলনের পর বর্তমানে যে বেতনকাঠামো দাঁড়িয়েছে, তাতে এসএসসি পাস করা এবং তার আগে অষ্টম শ্রেণি পাস পিয়নের তুলনায় তার বেতনকাঠামোর সামান্য উন্নতি দেখা যায়। বর্তমান যুগে তা মাত্র তিন হাজার টাকা। আবার এই চাকরি পেতে হলে প্রবল দুর্নীতির মুখোমুখি হতে হয়। লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে দালালদের মাধ্যমে এই চাকরি নিয়ে শিক্ষকেরা নানা ধরনের অবৈধ পন্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হন। কোচিং-ব্যবসা, দোকানদারি, ঠিকাদারি, স্থানীয় প্রভাবশালী লোকের উমেদারি, নির্বাচনে টুকটাক কাজকর্ম করে কিছু অর্থ রোজগার ইত্যাদিতে তাঁরা নিয়োজিত হতে থাকেন।

সাম্প্রতিককালে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, নকল সরবরাহ—এমনকি সাদা খাতায় পুরোপুরি পরীক্ষা দিয়ে ছাত্রদের পাস করার কাজটিও করে থাকেন তাঁরা। এর মধ্যে যেটি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা হলো—সংস্কৃতি। সুস্থ, বৈধ এবং মূল্যবোধ নিয়ে যে জীবনযাপন, তা অতীতের মতোই দুরূহ হয়ে ওঠে। একসময় শিক্ষকেরা খেয়ে না খেয়ে মূল্যবোধটাকে বুকে সম্বল করে এই পবিত্র কাজটি করে যেতেন। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের প্রবল চাপে সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না। তাই অবৈধ পথ খোলা থাকলে তাকেই আঁকড়ে ধরছেন তাঁরা। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে শিক্ষার প্রতি বাংলায় একটা গুরুত্ব দেওয়ার সামাজিক তাগিদ আমরা অনুভব করতে দেখি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কালে শিক্ষা ও সংস্কৃতি একাকার হয়ে নতুন নতুন সংস্কারকাজে শিক্ষক ও ছাত্রদের ধাবিত হতে দেখা যায়। এই সময়ে বেশ কিছু নিয়মকানুন, আচার-আচরণে সংস্কারও দেখা যায়। আদর্শবান শিক্ষকের প্রেরণায় ছাত্ররাও মূল্যবোধ এবং আদর্শকে আঁকড়ে ধরে দেশপ্রেমের দিকে এগিয়ে যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে শিক্ষাকে দেশপ্রেমের সমার্থক বলে বিবেচনা করতে দেখা যায়। কোনো শিক্ষার্থীকে যদি শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হতো তাহলে সে উত্তরে বলত, শিক্ষা হচ্ছে দেশের কাজ করার জন্য। সত্যবাদিতা, ন্যায়নিষ্ঠতা, বিজ্ঞানচিন্তা এবং মানুষের প্রতি গভীর মমতাবোধই শিক্ষার উদ্দেশ্য। ভারতের স্বাধীনতার প্রশ্নেও অনেক বড় বড় ত্যাগ স্বীকার করতে তরুণেরা উদ্বুদ্ধ হয়। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এই ব্যবস্থা ক্রমাগত ভেঙে যেতে থাকে। পাকিস্তানে বিষয়টি গুরুতর সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়। কিন্তু ভারতবর্ষে শিক্ষার গুরুত্বকে নতুনভাবে বিন্যাস করার প্রচেষ্টা দেখা দেয়। যে প্রচেষ্টা আজ পর্যন্ত অব্যাহত আছে। শিক্ষায় কোনো দুর্নীতি সেখানে এখনো সহ্য করা হয় না। বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীরা দুর্নীতির কারণে কারাবাস করে থাকেন। পশ্চিমবঙ্গের একজন মন্ত্রী এখনো জেলে অবস্থান করছেন। অবৈধভাবে শিক্ষকের চাকরি নেওয়ার পর তাঁকে বিপুল পরিমাণ অর্থ জরিমানা হিসেবে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে সেখান থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে। একজন শিক্ষক যদি দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে শিক্ষকতার কাজে যুক্ত হন, তাহলে তা শিক্ষার্থীদের মাঝেও সংক্রমিত হবে—এটাই স্বাভাবিক। যেহেতু বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী নিজেদের সন্তানদের সাধারণ স্কুলে পড়ান না এবং অভিবাসনমুখী, তাই এর গুরুত্ব তাঁদের কাছে খুব সামান্যই। যে রাষ্ট্রব্যবস্থা শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয় না, অর্থ পাচারকে নানাভাবে প্রশ্রয় দেয়, সেখানে শিক্ষার বিষয়টি একেবারেই গৌণ হয়ে যায়। এ কথা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে এই শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আসা শিক্ষার্থীরাই দেশের প্রশাসনে ও শিক্ষায় যুক্ত হয়। ফলে প্রশাসনও দুর্নীতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

বর্তমানে সরকারি অফিসগুলোতে উৎকোচ ছাড়া কোনো কাজ হয় না এবং সেই উৎকোচের পরিমাণও লক্ষকোটি টাকা। প্রতিনিয়ত সংবাদপত্রে বিদেশে টাকা পাচার করার সব আশ্চর্য ঘটনা প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু এর বিহিত হিসেবে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। রাজনৈতিক নেতা, আমলা, ব্যবসায়ী বিদেশে নিজেদের সন্তানসন্ততিদের লেখাপড়া ছাড়াও অনেক ধরনের বেআইনি কাজের সঙ্গে যুক্ত। এসবের উৎসই হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থার বড় ধরনের ত্রুটি। এ কথা কেউ অস্বীকার করবে না যে শিক্ষায় একটা ধস নেমেছে। পাশের দেশ পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষকদের যে বেতনকাঠামো, তার অর্ধেক অর্থও আমাদের শিক্ষকেরা পান না। বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতনকাঠামোতে এত বড় অসাম্য পৃথিবীর আর কোথাও নেই। আমাদের দেশের মন্ত্রী-আমলাদের আচরণ দেখে মনে হয় তাঁরা কখনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেননি। তাঁরা দেশের ভবিষ্যৎ চিন্তার কথা ভাবার কোনো সময় পান না। সারা দিন অফিস-আদালতের ফাইলপত্রে এবং মিটিংয়ে তাঁদের সময় কাটে। এই মিটিংগুলোতে সাধারণ মানুষের স্বপ্নের কতটা প্রতিফলন হয়, তা একেবারেই স্পষ্ট নয়। কিন্তু কিছু মানুষ যে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয় তার প্রমাণ সর্বত্র পাওয়া যায়। তার পরও একটা বিদ্যোৎ, হিতকরী এবং স্বপ্ন দেখা মানুষের সমাজ আছে, তাঁদের সচেতনতার ওপরই আমাদের ভরসা রাখতে হচ্ছে।

লেখক: মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা, গৃহকর্মী পলাতক

আনিসুলের জাপা ও মঞ্জুর জেপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ঘোষণা

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লিব লিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি: আসিফ

আজকের রাশিফল: অনলাইনে বিতর্কে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না, অতি উত্তেজনা পেটে গ্যাস বাড়াবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা, গৃহকর্মী পলাতক

আনিসুলের জাপা ও মঞ্জুর জেপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ঘোষণা

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লিব লিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি: আসিফ

আজকের রাশিফল: অনলাইনে বিতর্কে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না, অতি উত্তেজনা পেটে গ্যাস বাড়াবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা, গৃহকর্মী পলাতক

আনিসুলের জাপা ও মঞ্জুর জেপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ঘোষণা

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লিব লিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি: আসিফ

আজকের রাশিফল: অনলাইনে বিতর্কে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না, অতি উত্তেজনা পেটে গ্যাস বাড়াবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা, গৃহকর্মী পলাতক

আনিসুলের জাপা ও মঞ্জুর জেপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ঘোষণা

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লিব লিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি: আসিফ

আজকের রাশিফল: অনলাইনে বিতর্কে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না, অতি উত্তেজনা পেটে গ্যাস বাড়াবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা, গৃহকর্মী পলাতক

আনিসুলের জাপা ও মঞ্জুর জেপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ঘোষণা

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লিব লিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি: আসিফ

আজকের রাশিফল: অনলাইনে বিতর্কে ঝাঁপিয়ে পড়বেন না, অতি উত্তেজনা পেটে গ্যাস বাড়াবে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত