Ajker Patrika

কোরআনের বর্ণনায় সোলায়মান (আ.)-এর কাছে সাবার রানি বিলকিসের আত্মসমর্পণ

ইসলাম ডেস্ক
কোরআনের বর্ণনায় সোলায়মান (আ.)-এর কাছে সাবার রানি বিলকিসের আত্মসমর্পণ

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইয়েমেনের এক ক্ষমতাধর নারীর গল্প বলেছেন। বিলকিস নামের এই নারী আল্লাহর নবী হজরত সোলায়মান (আ.)-এর যুগে ইয়েমেন ও আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল শাসন করতেন। 

আল্লাহ তাআলা বিলকিসের সাম্রাজ্যের কথা সোলায়মান (আ.)-এর অগোচরে রেখেছিলেন। পরে তাঁর গোয়েন্দা পাখি হুদহুদের মাধ্যমে যখন জানলেন, আল্লাহর অবাধ্য এক সম্রাজ্ঞী পৃথিবীর একটি বড় অঞ্চল শাসন করছেন—তখন তাঁকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিলেন। পবিত্র কোরআনের সুরা নামলের ২৪টি আয়াতে আল্লাহ তাআলা সেই ঘটনা তুলে ধরেছেন। চলুন, কোরআনের ভাষ্যেই ঘটনাটির বিস্তারিত জানা যাক—

যেভাবে খোঁজ মেলে বিলকিসের সাম্রাজ্যের

জিন, পশুপাখি, মানুষসহ সব সৃষ্টিকেই আল্লাহ তাআলা হজরত সোলায়মান (আ.)-এর অনুগত করে দিয়েছিলেন। একদিন তিনি বিশাল বাহিনী নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিল সোলায়মান (আ.)-এর গোয়েন্দার কাজ আঞ্জাম দেওয়া হুদহুদ পাখিও। পথে সোলায়মান (আ.) পাখিদের খোঁজ নিতে গেলে হুদহুদকে অনুপস্থিত দেখলেন। অন্যদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী ব্যাপার, হুদহুদকে দেখছি না, নাকি সে নাই?’ 

অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত থাকা অপরাধের অন্তর্ভুক্ত। তাই সোলায়মান (আ.) বললেন, ‘তাকে কঠিনতম শাস্তি দেব অথবা তাকে হত্যাই করব অথবা সে অবশ্যই আমাকে (অনুপস্থিতির) উপযুক্ত কারণ দেখাবে।’ 

একটু পরেই হুদহুদ ফিরে এল। এসে বলল, ‘আমি এমন কিছু তথ্য পেয়েছি, যা আপনার কাছে নেই। (ইয়েমেনের) সাবা থেকে আমি নিশ্চিত খবর নিয়ে এসেছি। সেখানে দেখলাম—এক নারী রাজত্ব করছেন এবং তাঁকে সবই দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরাট সিংহাসন রয়েছে।’ 

হুদহুদ আরও বলে, ‘এটুকুই নয়, আরও দেখলাম, তিনি ও তাঁর প্রজারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে সূর্যকে সেজদা করছেন। শয়তান এ কাজকে তাদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছে এবং হেদায়েতের পথ থেকে বিরত রেখেছে। ফলে তারা হেদায়েত পায়নি।’ 

এমন তথ্য শুনে সোলায়মান (আ.) বিস্মিত হলেন এবং বললেন, ‘দেখি, তুমি সত্য বলেছ, না মিথ্যা বলছ।’ 

রানি বিলকিসকে আল্লাহর বিধানের কাছে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে সোলায়মান (আ.) একটি চিঠি লিখলেন। 

চিঠি পাওয়ার পর বিলকিসের প্রতিক্রিয়া

হুদহুদকে সোলায়মান (আ.) বললেন, ‘আমার এই চিঠি নিয়ে গিয়ে তাদের দাও। এরপর তাদের কাছ থেকে একটু দূরে সরে দেখো—তাদের প্রতিক্রিয়া কী?’ 

হুদহুদ গিয়ে তা–ই করল। চিঠি পেয়ে বিলকিস মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকলেন এবং চিঠির ভাষ্য তাঁদের সামনে তুলে ধরলেন। বললেন, ‘সভাসদগণ, এই দেখেন, আমাকে সোলায়মানের পক্ষ থেকে মোহরাঙ্কিত পত্র দেওয়া হয়েছে। (তাতে লেখা আছে) অসীম দাতা অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। আমার প্রতি উদ্ধত হইও না, অনুগত হয়ে আমার কাছে হাজির হও।’ 

মন্ত্রীদের কাছে পরামর্শ চেয়ে বিলকিস বললেন, ‘হে সভাসদগণ, আমার কর্তব্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিন। আপনাদের ছাড়া আমি কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিইনি।’ 

মন্ত্রীরা বললেন, ‘আমাদের শক্তি আছে এবং আমরা কঠোর যোদ্ধাও; তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আপনারই। কাজেই আপনি কী আদেশ করবেন, ভেবে দেখুন।’ 

বিলকিস হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করে বললেন, ‘রাজারা যখন কোনো জনপদে ঢোকে, তখন বিপর্যয় ডেকে আনে এবং সেখানকার সম্মানিত ব্যক্তিদের অপমান করে ছাড়ে। এরাও তাই করবে।’ 

শান্তিচুক্তি করে আত্মসমর্পণ এড়ানোর ফন্দি আঁটেন বিলকিস। সোলায়মান (আ.)-এর কাছে উপহার পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। মন্ত্রীদের বললেন, ‘আমি তাঁর কাছে উপহার পাঠাচ্ছি। দেখি, দূতেরা কী জবাব নিয়ে আসে।’ 

ইয়েমেনের মাআরিবের এই ধ্বংসাবশেষকে বিলকিসের প্রাসাদ বলে মনে করা হয়বিলকিসের সিংহাসন তুলে আনার বিস্ময়কর ঘটনা
বিলকিসের প্রতিনিধি দল সোলায়মান (আ.)-এর দরবারে এলে তিনি বললেন, ‘তোমরা কি আমাকে অর্থ-সম্পদ দিয়ে সাহায্য করতে এসেছ? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন, তা তোমাদের যা দিয়েছেন তার চেয়ে উত্তম। তোমরা বরং তোমাদের উপহার নিয়েই আনন্দ করো।’ 

কঠিন এক ধমক দিয়ে সোলায়মান (আ.) তাদের বললেন, ‘নিজ দেশে ফিরে যাও। আমি তাদের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য এক সেনাবাহিনী নিয়ে আসব। তাদের অপমানিত করে সেখান থেকে বের করে দেব। তারা লাঞ্ছিত হবেই।’ 

তারা ফিরে গেল এবং সোলায়মান (আ.) অহির মাধ্যমে জানতে পারলেন, হুঁশিয়ারি শুনে বিলকিস শিগগিরই তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। তাই তিনি যখন আসবেন, তখন তাঁকে আল্লাহর দেওয়া ক্ষমতা দেখানোর জন্য সোলায়মান (আ.) একটি পরিকল্পনা করলেন। সভাসদকে ডেকে বললেন, ‘হে সভাসদগণ, তারা আমার কাছে আত্মসমর্পণ করে আসার আগেই তোমাদের কে তার সিংহাসন আমার কাছে নিয়ে আসবে?’

 এক শক্তিশালী জিন বললেন, ‘আপনি আপনার জায়গা থেকে ওঠার আগেই আমি তা আপনার কাছে এনে দেব। এ কাজে আমি অবশ্যই ক্ষমতার অধিকারী ও আস্থাভাজন।’ 

ঐশী জ্ঞানের অধিকারী এক আলেম বললেন, ‘আপনার পলক ফেলার আগেই তা আপনার কাছে এনে দেব।’ 

যেই কথা সেই কাজ, মুহূর্তেই তিনি বিলকিসের বিরাট সিংহাসন সোলায়মান (আ.)-এর সামনে হাজির করে দিলেন এবং আল্লাহর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানালেন। 

বিলকিস যেভাবে আত্মসমর্পণ করেন
নিজের সিংহাসন সোলায়মান (আ.)-এর দরবারে দেখে বিলকিস নিশ্চয়ই অবাক হবেন এবং আল্লাহপ্রদত্ত ক্ষমতা দেখে তাঁকে নবী হিসেবে মেনে নিয়ে আনুগত্য করবেন, তাই তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য সোলায়মান (আ.) কিছু নির্দেশনা দিলেন। বললেন, ‘তাঁর সিংহাসনের ধরন পাল্টে দাও। এরপর দেখি, সে সত্য পথের দিশা পায়, নাকি যারা পথের দিশা পায় না তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়।’ 

বিলকিস আত্মসমর্পণের জন্যই এলেন। তাঁকে সিংহাসনটি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘এটি কি আপনার সিংহাসন?’ তিনি বললেন, ‘তাই তো মনে হয়। আপনার সম্পর্কে আগেই আমাদের জানানো হয়েছে এবং আমরা আত্মসমর্পণ করতেই এসেছি।’ 

রানি বিলকিসকে প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানিয়ে সোলায়মান (আ.) বললেন, ‘প্রাসাদে প্রবেশ করুন।’ 

প্রাসাদের মেঝে দেখে তিনি সেটিকে স্বচ্ছ পানির হ্রদ মনে করলেন। ফলে বিভ্রান্ত হয়ে পায়ের গোছা থেকে কাপড় উঁচু করেন। তখন সোলায়মান (আ.) বললেন, ‘এ স্বচ্ছ কাচের প্রাসাদ।’ 
 
রানি বিলকিস এসব পরীক্ষার মুখে পড়ে সোলায়মান (আ.)-এর অলৌকিক ক্ষমতা উপলব্ধি করলেন এবং আল্লাহর দরবারে চূড়ান্ত আত্মসমর্পণ করার ঘোষণা দিলেন। বললেন, ‘হে আমার প্রতিপালক, আমি অবশ্যই নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আমি সোলায়মানের সঙ্গে বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করছি।’ 

গল্পের শিক্ষা
এ গল্পের মূল শিক্ষা হলো, পৃথিবীতে আপনি যত ক্ষমতাধরই হোন, মহান আল্লাহর দরবারে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণই পারে আপনার পরকালীন সাফল্য নিশ্চিত করতে। সাবার রানি বিলকিস সোলায়মান (আ.)-এর হাত ধরে মহাবিশ্বের মহান অধিপতি আল্লাহ তাআলার কাছে আত্মসমর্পণ করে পরিণামদর্শী সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন। ক্ষমতার অহংকারের ফাঁদে পড়ে পরকালীন সাফল্যের কথা তিনি ভুলে যাননি। এ ছাড়া গল্পে রয়েছে শেখার অনেক উপকরণ। 

সূত্র: পবিত্র কোরআনের সুরা নামলের ২০ থেকে ৪৪ নম্বর আয়াত অবলম্বনে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মৃত ব্যক্তিকে দেখে যে দোয়া পড়তে হয়

ইসলাম ডেস্ক 
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত

মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আমলের দুয়ার বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় বিলাপ কিংবা উচ্চ স্বরে কান্নাকাটি মৃত ব্যক্তির কোনো উপকারে আসে না; বরং তাঁর জন্য মাগফিরাতের দোয়া এবং তাঁর ভালো গুণগুলো স্মরণ করাই প্রকৃত কল্যাণকর।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন—‘তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কাজগুলোর আলোচনা করো এবং মন্দ কাজের আলোচনা থেকে বিরত থাকো।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০০)

কারও মৃত্যুর পর তাঁর পাশে উপস্থিত হলে লাশ দেখার সময় দোয়ার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। হজরত উম্মে সালামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রোগী কিংবা মৃতের কাছে উপস্থিত হলে ভালো কথা বলবে। কেননা তোমরা যা বলবে, ফেরেশতারা তার ওপর আমিন বলবেন।’

এই অবস্থায় এই দোয়া পড়া সুন্নত—‘আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়া লাহু ওয়া আকিবনি মিনহু উকবান হাসানাহ।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাকে ও তাকে ক্ষমা করো এবং আমাকে তার চেয়েও উত্তম প্রতিদান দাও।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৪৭)

পবিত্র কোরআনে পূর্ববর্তী নবীগণ নিজেদের এবং সমস্ত মুমিনের জন্য যেভাবে দোয়া করেছেন, তা আমাদের জন্য বড় শিক্ষা।

হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া—‘রব্বানাগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়া ওয়ালিল মুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’

অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক, যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সব ইমানদারকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪১)

হজরত নুহ (আ.)-এর দোয়া—‘রব্বিগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়া ওয়ালিমান দাখালা বাইতিয়া মুমিনাও-ওয়ালিল মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত।’

অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার পিতা-মাতাকেও; আর যে ইমান অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করেছে এবং সমস্ত মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকেও।’ (সুরা নুহ: ২৮)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মৃত ব্যক্তির জন্য যেভাবে দোয়া করবেন

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে প্রতিটি মানুষের জন্য একটি বিষয় নিশ্চিত ও অলঙ্ঘনীয়—তা হলো মৃত্যু। মানবজীবনের এই অনিবার্য পরিণতি সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। এই চিরন্তন বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার শিক্ষাই পবিত্র কোরআন আমাদের দিয়েছে।

মহান আল্লাহ তাআলা এই দুনিয়াবি জীবনকে শুধু পরীক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে প্রেরণ করেছেন, যেখানে মৃত্যুই হচ্ছে এই পরীক্ষার অবসান এবং পরকালীন জীবনের সূচনা।

মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর কেয়ামতের দিন তোমাদের পরিপূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে। তারপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ধোঁকার বস্তু ছাড়া কিছুই নয়।’ (সুরা আলে ইমান: ১৮৫)

তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরেও অবস্থান করো, তবুও।’ (সুরা নিন্দা: ৭৮)

মৃতদের জন্য দোয়া ও মাগফিরাত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে মানুষের হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। এই বিচ্ছেদ-কষ্টে ব্যথিত মন থেকে তাদের জন্য কল্যাণ কামনার অনুভূতি জাগা স্বাভাবিক। মৃতদের জন্য দোয়া ও মাগফিরাত কামনা করা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ আমল।

রাসুলুল্লাহ (সাধারণ) বলেছেন, ‘যখন মানুষ মারা যায়, তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমল অব্যাহত থাকে—সাদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং ওই সুসন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ্ মুসলিম: ১৬৩১)

রাসুল (সা.)-এর শেখানো দোয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) মৃতদের জন্য যে দোয়া করতেন। দোয়াটি হলো—‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলাহু ওয়ারহামহু, ওয়া আফিহি ওয়া ফু আনহু; ওয়া আকরিম নুজুলাহু, ওয়া ওয়াসসি মাদখালাহু; ওয়াগসিলহু বিল মায়ি ওয়াস সালজি ওয়াল বারাদি, ওয়ানাক্কিহি মিনাল খাতা-ইয়া কামা ইউননাককাস সাওবুল আব ইয়াযু মিনাদদানাসি; ওয়াবদিলহু দা-রান খায়রান মিন দারিহি, ওয়া আহলান খাইরান মিন আহলিহি; ওয়া যাওজান খাইরান মিন যাওজিহি। ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা, ওয়া আইজহু মিন আজাবিল কাবরি ওয়ামিন আজাবিন নার।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন এবং দয়া করুন। শান্তিতে রাখুন এবং তার থাকার স্থানটিকে মর্যাদাশীল করুন। তার কবর প্রশস্ত করে দিন। বরফ ও তুষারের শুভ্রতা দিয়ে তাকে গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিচ্ছন্ন করে দিন—যেমন ময়লা থেকে সাদা কাপড় পরিষ্কার হয়। তাকে দুনিয়ার বাসস্থানের চেয়ে উত্তম বাসস্থান, পরিবার ও সঙ্গী দান করুন। হে মাবুদ, তাকে জান্নাতে দাখিল করুন এবং কবর ও দোজখের আজাব থেকে রক্ষা করুন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুমার দিনে আত্মশুদ্ধির ১০ নির্দেশনা

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ 
ইবাদতে মগ্ন কয়েকজন তরুণ। ছবি: সংগৃহীত
ইবাদতে মগ্ন কয়েকজন তরুণ। ছবি: সংগৃহীত

আজ জমাদিউস সানি মাসের চতুর্থ জুমা। এদিনটি একজন মুমিনের জীবনে আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির এক বিশেষ সুযোগ। এ বরকতময় দিনে নিজের ইমান, আমল ও চরিত্রকে নতুন করে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। আজকের জুমার বিশেষ আমলি দিকনির্দেশনাগুলো নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

১. জুমার দিনের মর্যাদা অনুধাবন: জুমা মুমিনের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন। এদিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ, দীর্ঘ দোয়ায় মগ্ন হওয়া এবং জুমার খুতবা গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনা প্রতিটি মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব।

২. সালাতে খুশু-খুজু অর্জন: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মতো আদায়ের পাশাপাশি জুমার নামাজে আগেভাগে মসজিদে উপস্থিত হওয়া জরুরি। নামাজকে কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং আল্লাহর সঙ্গে আত্মিক সংযোগের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

৩. কোরআনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক: নিয়মিত তিলাওয়াতের পাশাপাশি কোরআনের অর্থ ও শিক্ষা বোঝার চেষ্টা করা উচিত। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে কোরআনের নির্দেশনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি সন্তানদের কোরআন শিক্ষায় আগ্রহী করে তোলা আমাদের কর্তব্য।

৪. তাওবা ও আত্মপর্যালোচনা: অতীতের গুনাহের জন্য আন্তরিক অনুতাপ এবং প্রকাশ্য-গোপন সব পাপ থেকে ফিরে আসার দৃঢ়সংকল্প করতে হবে। প্রতিদিনের আমল নিজে নিজে মূল্যায়নের অভ্যাস গড়ে তোলা আত্মশুদ্ধির মূল চাবিকাঠি।

৫. সবর, তাওয়াক্কুল ও তাকওয়া চর্চা: বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা ইমানের দাবি। নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করে ফলাফলের জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করতে হবে এবং সর্বদা আল্লাহভীতি (তাকওয়া) বজায় রাখতে হবে।

৬. পরিবারে ইসলামি পরিবেশ প্রতিষ্ঠা: পরিবারে ন্যায় ও ইনসাফ কায়েম করা এবং স্ত্রী-সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করা অত্যন্ত জরুরি। পারিবারিকভাবে নামাজ ও নিয়মিত দ্বীনি আলোচনার চর্চা করা একজন মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

৭. সামাজিক দায়িত্ব ও মানবিকতা: প্রতিবেশীর হক আদায় করা, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং সমাজে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা।

৮. দুনিয়াবিমুখতা ও আত্মসংযম: অতিরিক্ত ভোগবিলাস ও অপচয় পরিহার করে সহজ-সরল ও সংযত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টিকেই জীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্য হিসেবে স্থির করতে হবে।

৯. ইসলামের মহান মনীষীদের অনুসরণ: ইসলামের মহান মনীষী ও সালাফদের জীবন থেকে সংযম, ত্যাগ ও পবিত্রতার শিক্ষা গ্রহণ করে জীবনের মূল্যবোধ ও ইমান রক্ষায় সচেতন থাকা প্রয়োজন।

১০. নতুন আমলি অঙ্গীকার: প্রতিটি জুমাকে আত্মশুদ্ধির একটি মাইলফলক হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। ছোট হলেও নিয়মিত ভালো আমলের অভ্যাস গড়ে তোলা এবং গুনাহমুক্ত জীবনের পথে অবিচল থাকার প্রতিজ্ঞাই হোক আজকের জুমার শিক্ষা।

হে আল্লাহ, আপনি আমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে দিন। আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের আমলগুলো কবুল করুন। জমাদিউস সানি মাসের এই বরকতময় চতুর্থ জুমাকে আমাদের জীবনে হেদায়েত ও কল্যাণের মাধ্যম হিসেবে কবুল করুন।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগীকল্যাণ সোসাইটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজ মক্কা-মদিনায় জুমা পড়াবেন যাঁরা

ইসলাম ডেস্ক 
শায়খ আহমাদ হুজাইফি ও শায়খ মাহের মুকাইলি। ছবি: সংগৃহীত
শায়খ আহমাদ হুজাইফি ও শায়খ মাহের মুকাইলি। ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মসজিদুল হারামে শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের ইমামতি করবেন প্রখ্যাত আলেম শায়খ মাহের মুকাইলি। একই দিনে মদিনায় অবস্থিত মসজিদে নববিতে জুমার নামাজ পড়াবেন খ্যাতনামা কারি শায়খ আহমাদ হুজাইফি। সংবাদমাধ্যম দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন এ তথ্য জানিয়েছে।

মসজিদুল হারামের এ সপ্তাহের জুমার ইমাম শায়খ মাহের মুকাইলি মুসলিম বিশ্বের একজন প্রখ্যাত আলেম ও কারি। তিনি মক্কার মসজিদুল হারামের একজন ইমাম ও খতিব।

আল-মুয়াইকিলি মদিনার টিচার্স কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন, যেখানে তিনি গণিত বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। এরপর তিনি শিক্ষক হিসেবে মক্কা আল-মুকাররমায় চলে আসেন। পরবর্তীকালে তিনি মক্কার প্রিন্স আবদুল মজিদ স্কুলে স্টুডেন্ট গাইড হিসেবে কাজ করেন।

তিনি ১৪২৫ হিজরিতে উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ ফ্যাকাল্টি থেকে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহ.)-এর ফিকহ শাস্ত্রের ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীকালে তিনি তাফসির বিষয়ে পিএইচডি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুডিশিয়াল স্টাডিজ বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত এবং উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা বিভাগের ভাইস ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি মক্কার আল-আওয়ালি এলাকার আল-সাদি মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পবিত্র রমজান মাসে মদিনার মসজিদে নববিতে তারাবিহতে ইমামতি করেন ১৪২৬ ও ১৪২৭ হিজরিতে। এরপর ১৪২৮ হিজরির রমজানে তিনি মসজিদুল হারামে তারাবিহ ও তাহাজ্জুদ নামাজের ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হন এবং সেই বছর থেকেই তিনি মসজিদুল হারামের স্থায়ী ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

অন্যদিকে, মসজিদে নববির এ সপ্তাহের জুমার ইমাম শায়খ আহমাদ হুজাইফি সুললিত কণ্ঠে কোরআন তিলাওয়াতের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিতি।

শায়খ ড. আহমাদ বিন আলি আল-হুজাইফি মসজিদে নববির প্রধান ইমাম ও খতিব শায়খ আলি বিন আবদুর রহমান আল-হুজাইফির সুযোগ্য সন্তান। বর্তমানে তিনি মদিনার মসজিদে নববিতে ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি মদিনার ঐতিহাসিক মসজিদে কুবার ইমাম ও খতিব ছিলেন।

তিনি মদিনার তাইবাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়েও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ফার্স্ট ক্লাস অনার্সসহ মাস্টার্স ও পিএইচডি (ডক্টরেট) ডিগ্রি অর্জন করেন। মদিনার ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সেমিনার, বক্তব্য ও গবেষণামূলক কাজে তাঁর ব্যাপক অংশগ্রহণ রয়েছে।

উল্লেখ্য, মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সম্মানিত ও পবিত্র স্থান। এই দুই মসজিদে নামাজ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মসজিদে হারামে এক (ওয়াক্ত) নামাজ এক লাখ নামাজের সমান, আমার মসজিদে (মসজিদে নববি) এক নামাজ এক হাজার (ওয়াক্ত) নামাজের সমান এবং বাইতুল মুকাদ্দাসে এক (ওয়াক্ত) নামাজ ৫০০ নামাজের সমান।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ: ৪ / ১১)

অন্য হাদিসে ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার এ মসজিদে এক ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার (ওয়াক্ত) নামাজ আদায় করার চেয়েও উত্তম। (সহিহ্ বুখারি: ১১৯০, সহিহ্ মুসলিম: ১৩৯৪)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত