Ajker Patrika

যুগপৎ আন্দোলনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা

ড. মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
যুগপৎ আন্দোলনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা

যুগপৎ আন্দোলনের তৃতীয় অভিজ্ঞতা বর্তমানে হতে যাচ্ছে। এবার জামায়াত যুগপৎ আন্দোলনে এত দিন লুকোচুরি খেললেও অঘোষিতভাবে বিএনপির ১০ 
ও ২৭ দফার সঙ্গেই আছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুগপৎ আন্দোলনের একটি ধারণা ও অভিজ্ঞতা এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে। এই রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কখন, কতটা সুফল দিয়েছে, কতটা হতাশার সৃষ্টি করেছে, তার কোনো পোস্টমর্টেম না করেই কিছু কিছু রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলনকে সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর উপায় হিসেবে বিবেচনা করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর বেশির ভাগের মধ্যেই অতীত অভিজ্ঞতাকে অনেক সময় সরলীকরণ করার প্রবণতা রয়েছে। আন্দোলনরত দলগুলোর নিজেদের জোট ও দলের সংখ্যাতাত্ত্বিক বিস্তৃতি দেখিয়ে ক্ষমতাসীনদের জনবিচ্ছিন্ন দেখানোর কৌশল হিসেবে এটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
 
বিদেশিদেরও এর মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। সে কারণে যুগপৎ আন্দোলনকে এখন বিরোধীপক্ষ সরকারবিরোধী যেকোনো আন্দোলনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কিংবা লাভজনক উপায় হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। কিন্তু রাজনীতিতে দেখার বিষয় হচ্ছে, সরকার পরিবর্তনের ফলাফল কতটা জনগণের কল্যাণে পরবর্তী সময়ে ভূমিকা রাখবে, তা বিবেচনা করা। রাজনীতিবিদেরা তা কতটা বিবেচনা করেন, সেটি ভিন্ন প্রশ্ন।
 
রাজনীতিসচেতন সবার মনে হয় এখন সময় এসেছে যুগপৎ আন্দোলনের অতীত অভিজ্ঞতার একটি পোস্টমর্টেম করে দেখার। তাহলেই এখন দেশে সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য নামসর্বস্ব নানা দলের জোট গঠন এবং সরকার পতনের আন্দোলনের ফলাফল সম্পর্কে একটি যথার্থ রাজনৈতিক ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
 
আশির দশকে সামরিক শাসক এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো ১৫ দলীয় ঐক্যজোট গঠন করে। এটিকে অনুসরণ করে বিএনপির নেতৃত্বে সাতদলীয় জোট গঠিত হয়। এই জোটের দলগুলো ছিল মূলত মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার পরিপন্থী এবং আওয়ামীবিরোধী। জামায়াতে ইসলামীও এর সঙ্গে ছিল। একটি পর্যায়ে এসে ১৫ দলীয় জোটের মধ্যে কয়েকটি বাম ঘরানার দল আলাদা হয়ে পাঁচদলীয় আরেকটি জোট গঠন করে, তবে সিপিবি ও ন্যাপ আওয়ামী লীগের সঙ্গেই ছিল। এর ফলে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তিনটি জোট প্রথমে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থেকে দাবি ও কর্মসূচি প্রদান করলেও একটি পর্যায়ে এসে তিন জোটের মধ্যে ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল যে এরশাদ সরকারের পতনের জন্য তাদের ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে। সেখান থেকেই যুগপৎ আন্দোলনের ধারণা তৈরি হয়। এই আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার জন্য তিন জোটের মধ্যে লিয়াজোঁ কমিটি নামক একটি ছোট সমন্বয়ক শক্তি তৈরি করা হয়। লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা রাজপথের কর্মসূচি প্রদানের ক্ষেত্রে নিজ নিজ জোটের মতামত ও কর্মসূচির সমন্বয় সাধন করতেন। এভাবেই যুগপৎ আন্দোলন একসময় রাজপথের কর্মসূচিতে তিন জোটকে প্রায় একই কাতারে নিয়ে আসে, যা সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর বিরোধী শক্তি হিসেবে মাঠে ভূমিকা রাখে। এরশাদ সরকার একপর্যায়ে বেশ একঘরে হয়ে পড়ে। এরশাদ সরকারের পতনের একটি মাত্র লক্ষ্যেই তিন জোট একমত হয়েছিল এবং ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগঠিত করছিল। কিন্তু তিন জোটের মধ্যে আদর্শগত অবস্থান ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। আট ও পাঁচ দলের মধ্যে আদর্শগত দূরত্বের চেয়ে ব্যক্তিত্বের বিরোধই ছিল প্রধান। এ দুই জোটই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ব্যাপারে একমত পোষণ করত। কিন্তু বিএনপির নেতৃত্বাধীন সাতদলীয় ঐক্যজোট ছিল আট ও পাঁচদলীয় জোটের সম্পূর্ণ বিপরীত মতাদর্শী। এ ধরনের পরস্পরবিরোধী মতাদর্শের রাজনৈতিক জোটের যুগপৎ আন্দোলনের ফলে সরকারের পতন ঘটলেও ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র ও রাজনীতির মৌলিক কোনো পরিবর্তন হবে কি না, তা নিয়ে গোড়াতে সুস্পষ্ট কোনো ভাবনা-চিন্তা ছিল বলে মনে হয় না।
 
অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সংখ্যাতত্ত্বের দিক থেকেই শুধু দুর্বল ছিল না, বিএনপির অনেক সাবেক নেতাই সে সময় জাতীয় পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিল, বিএনপির অনেক নেতার অবস্থানও ছিল দোদুল্যমান। ফলে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে বিএনপির অবস্থান আট ও পাঁচ দলের চেয়ে অনেক দুর্বল ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ যাতে এই আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে না পারে, সে ব্যাপারে তারাসহ সাতদলীয় জোটের দলগুলো ছিল সচেতন ও কৌশলী। তারা যুগপৎ আন্দোলনের সময়ই কর্মসূচির ক্ষেত্রে জনমত বিভ্রান্ত করার কৌশল নিয়েছিল, তার একটি হলো ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচন আকস্মিকভাবে বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া, যার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার ‘আপসহীন’ ভাবমূর্তি জনমানসে তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর ফলে যুগপৎ আন্দোলনে ছেদ পড়ে, মিডিয়া ক্যু ঘটিয়ে সংসদ নির্বাচনে এরশাদ সরকার তার আধিপত্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়। অথচ কমরেড ফরহাদের তত্ত্ব অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে ১৫০ ও খালেদা জিয়াকে ১৫০ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হলে বিএনপি তা লুফে নিয়েছিল। কিন্তু এরশাদ সরকার তাৎক্ষণিকভাবে সংবিধানের সেই বিধান সংশোধন করে একজন প্রার্থীর জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ আসনে নির্বাচনের বিধি সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করলে বিএনপি এরশাদের অধীনে নির্বাচন না করার ঘোষণা দেয়। বিএনপির এই দ্বৈত নীতি ছিল মূলতই তাদের সুদূরপ্রসারী গোপন পরিকল্পনার অংশবিশেষ। এর ফলে বিএনপি কর্তৃক খালেদা জিয়াকে ‘আপসহীন’ নেত্রী হিসেবে জনমনে প্রতিষ্ঠার গোপন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে জনগণকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ফিরিয়ে আনার জন্য আওয়ামী লীগসহ বিরোধীদলীয় সদস্যরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে ১৯৮৭ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সংসদ ভেঙে দেন। ফলে ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তিন জোট উক্ত দলগুলো নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচনে অংশ নিতে সরকার আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে সম্মিলিত বিরোধী জোট, নবগঠিত ২৩ দলীয় জোট, ফ্রিডম পার্টি, জাসদ (সিরাজ), খিলাফত আন্দোলন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সুযোগ করে দেয়। আ স ম আবদুর রব উক্ত সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হন। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০-এর সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তিনদলীয় জোটের যুগপৎ আন্দোলনে জোয়ার-ভাটা বিরাজ করে। সেপ্টেম্বরের পর থেকে আট ও পাঁচ দল তিন জোটের রূপরেখার ভিত্তিতে আন্দোলন পুনরায় সংগঠিত করার উদ্যোগ নিলে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ তাতে জোরালো সমর্থন জানায়। এর ধারাবাহিকতায় পান্থপথের জনসভায় শেখ হাসিনা তিন জোটের যৌথ রূপরেখা প্রথম প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন। তিন জোটের পক্ষ থেকে তাতে সম্মতি ও স্বাক্ষর দেওয়া হয়। এরপর আন্দোলন বেগবান হলে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকার পদত্যাগ করে এবং তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরেই তিন জোটের রূপরেখা লঙ্ঘিত হতে থাকে। নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক বিভেদ তৈরি, ভারতবিরোধিতা, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির গোপন আসন ভাগাভাগির প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সংসদে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে এবং জামায়াত বিএনপিকে সরকার গঠনে সমর্থন দেয়। এর মধ্য দিয়ে ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারক-বাহক বিএনপি-জামায়াত যুগপৎ আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলে নিতে সক্ষম হয়। এর প্রধান কারণসমূহ হচ্ছে—পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার, ভারত ও আওয়ামীবিরোধিতা, ’৭২-৭৫ নিয়ে অপপ্রচার, নির্বাচনে আট ও পাঁচদলীয় জোটের অতি আত্মবিশ্বাস এবং ঐকমত্যের প্রার্থী নির্বাচনে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত।
 
যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় অভিজ্ঞতা হয় ১৯৯৫-৯৬ সালে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সব বিরোধী দলের সদস্যরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এই ইস্যুতে রাজনৈতিক কৃতিত্বলাভের আশায় জামায়াতও পদত্যাগ করে বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। রাজপথে আন্দোলন শুরু হলে জামায়াতও যুগপৎ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। ফলে বিএনপি একঘরে হয়ে যায়। ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি শুধু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দ্বারা গঠিত ফ্রিডম পার্টিকে পাশে পায়। জামায়াত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে লাভবান হওয়ার আশা করেছিল। তবে এই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সচেতনভাবেই জামায়াত থেকে নিজেকে দূরে রেখে এককভাবে নির্বাচন করেছিল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।
 
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় ও সরকার গঠনের প্রধান কারণ ছিল যুগপৎ আন্দোলনে আওয়ামী লীগের প্রায় একক নেতৃত্ব প্রদানের প্রতি ব্যাপক মানুষের সমর্থন। অন্যদিকে মাগুরা থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন পর্যন্ত সচেতন ভোটারদের উল্লেখযোগ্য অংশ বিএনপির প্রতি আস্থা হারায়। জামায়াত যুগপৎ আন্দোলন করেও তাদের সাম্প্রদায়িক চরিত্র এবং বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্নতার কারণে নির্বাচনে ভরাডুবির শিকার হয়।
 
যুগপৎ আন্দোলনের তৃতীয় অভিজ্ঞতা বর্তমানে হতে যাচ্ছে। এবার জামায়াত যুগপৎ আন্দোলনে এত দিন লুকোচুরি খেললেও অঘোষিতভাবে বিএনপির ১০ ও ২৭ দফার সঙ্গেই আছে। জামায়াত ও বিএনপি এবার নতুন কৌশলে জোটের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, কিছু ভুঁইফোড়, নাম-পরিচয়হীন প্যাডসর্বস্ব দলের নাম ব্যবহার করে নতুন নতুন জোট তৈরি করে সংখ্যার প্রসার ও প্রচার চালানো হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দল ও জোটের সংখ্যার ব্যাপকতা দেখানো, বিদেশিদের সরকারবিরোধী জনমত ও জোটের বিশালতা দেখিয়ে বিভ্রান্ত করা। বেশির ভাগ নামসর্বস্ব দল ও ব্যক্তির নাম মানুষের কাছে অজানা, তাদের জোটসমূহের নামকরণে গণতান্ত্রিক, বাম গণতান্ত্রিক ইত্যাদি অসাম্প্রদায়িক পরিচয় ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু এসব জোট বা দলের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগকে সরানো, রাষ্ট্র মেরামত তত্ত্বের আড়ালে বাংলাদেশকে জামায়াত-বিএনপির সাম্প্রদায়িক আদর্শে ফিরিয়ে নেওয়া। এতে করে এবারের যুগপৎ আন্দোলন প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির দেশ গঠন ও উন্নয়নমূলক রাজনীতির বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতায় আচ্ছন্ন, জাতীয় বিভেদ সৃষ্টিকারী এবং নামসর্বস্ব কতিপয় ক্ষমতালোভী দলের রাজনৈতিক লড়াইয়ে পরিণত হতে যাচ্ছে।
 
লেখক: ড. মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত