Ajker Patrika

ফারদিন হত্যা: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যে ‘আস্থা’ রাখলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯: ৪২
ফারদিন হত্যা: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যে ‘আস্থা’ রাখলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নুর পরশ নিহতের ঘটনায় তদন্তে পাওয়া তথ্য-প্রমাণ নিয়ে সন্দেহ নেই বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে বুয়েট শহীদ মিনারের পাশে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তাঁরা।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার তদন্তের তথ্য-প্রমাণ দেখতে বুয়েটের ৩১ জন শিক্ষার্থী রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে এবং ২১ জন শিক্ষার্থী গতকাল শুক্রবার র‍্যাব সদর দপ্তরে যান।

আজ শনিবার সাংবাদিকদের শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘ফারদিনের লাশ উদ্ধারের পর থেকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি আমরা পালন করে আসছিলাম। ডিবি ও র‍্যাব থেকে ব্যাখ্যা পাওয়ার পর আমরা নতুন কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছি না। তবে ফারদিনের পরিবারের যেকোনো যৌক্তিক দাবির পক্ষে আমরা থাকব।’

গত বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের একটি দল ডিবি কার্যালয়ে তদন্তের তথ্যপ্রণালি দেখার জন্য যায়। সেখানে প্রায় তিন ঘণ্টা ডিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডিবির তদন্তের প্রচেষ্টায় আমরা সন্তুষ্ট। তবে কিছু গ্যাপ রয়েছে, সেই গ্যাপগুলো পরিষ্কার করার দাবি জানাই।’

গতকাল শুক্রবার র‍্যাব সদর দপ্তরে যান শিক্ষার্থীরা। প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক করেন। এরপর আজ শনিবার বুয়েট ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের বিষয়গুলো জানান। পরে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান জানালেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

প্রসঙ্গত, বুয়েট ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা বলে গত ৪ নভেম্বর ডেমরার কোনাপাড়ার বাসা থেকে বের হন ফারদিন। ৭ নভেম্বর বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। গত বুধবার র‍্যাব ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) দাবি করে, ফারদিনকে হত্যা করা হয়নি। তিনি ডেমরার সুলতানা কামাল সেতু থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার কারণ হিসেবে ডিবি পারিবারিক চাপ, দুই ভাইয়ের পড়াশোনার টাকা জোগানো, ধারাবাহিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফল খারাপ হওয়া এবং বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে স্পেনে যাওয়ার টাকা সংগ্রহ করতে না পারাকে উল্লেখ করে। যদিও ফারদিনের বাবা এই দাবি মানতে নারাজ। 

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা ডিবি ও র‍্যাবের কাছে জানতে চেয়েছিলাম ফারদিন ইস্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অনেক সন্দেহ তৈরি হয়েছে। গত ১৪ তারিখ যখন বলা হলো ফারদিন আত্মহত্যা করেছে, তখন আমরা মানববন্ধনের ডাক দিয়েছিলাম, কিন্তু ডিবি আমাদের তদন্তে পাওয়া প্রতিবেদন দেখতে আহ্বান জানায়। অন্য সবার মতো আমাদের মনেও সন্দেহ ছিল। যেহেতু ডিবি থেকে আমাদের সেই সন্দেহের প্রশ্ন করার সরাসরি সুযোগ দেওয়া হয়, তাই আমরা সেখানে যাই, যাতে আমাদের সন্দেহ দূর হয়।

ফারদিন ইস্যুতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যে সন্দেহ নেই বলে জানান শিক্ষার্থীরা‘শিক্ষার্থীরা ডিবি ও র‍্যাবের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ময়নাতদন্তের পর ডাক্তার বলেছিল তাঁর শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাহলে এখন কীভাবে আত্মহত্যার কথা বলা হলো? পরবর্তীতে র‍্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ ওই ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে আমাদের জানায়, ফারদিনের শরীরে থাকা আঘাতগুলো অনেকটা কিলঘুষির মতো। কাটা চিহ্ন ছিল না। বেশির ভাগ আঘাত রক্ত জমা ছিল। এটা ব্রিজ থেকে লাফ দেওয়া কিংবা পানির আঘাত ও স্প্যানের আঘাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ডাক্তার বলেছেন, এই আঘাতের ভিত্তিতে বলা সম্ভব না যে এটা হত্যা না আত্মহত্যা।’

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ‘আমরা আরও জানতে চেয়েছিলাম, যে সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়ে বলা হয়েছে ফারদিন ব্রিজ থেকে লাফ দিয়েছে। এর সত্যতা কোথায়? ফারদিনের শেষ লোকেশন দেখা গেছে যাত্রাবাড়ী থেকে একটি লেগুনায় উঠেছে। সেই লেগুনা তাকে সুলতানা কামাল ব্রিজের তারাব এলাকায় নামিয়ে দেয়। সেই লেগুনাচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া চালকের মোবাইল ফোনের লোকেশন ও ফারদিনের ইন্টারনেট ব্রাউজিং লোকেশন ভ্যারিফাই করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা নিশ্চিত হয়েছে, এই সময়ে সে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করছিল। এটা করতে করতে সে ব্রিজের মাঝামাঝি চলে আসে। পরে যে স্থান থেকে লাফ দেয়, সেখানে তাঁর মোবাইল ফোনের লোকেশন পাওয়া যায়। তাই তদন্তকারীদের ধারণা, এই একই সময়ে অন্য ব্যক্তির লাফ দেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ ছাড়া তারা আরও দেখেছে, ওই সময়ের পরপরই ফারদিনের মোবাইল ও ঘড়ি ওই লোকেশনে বন্ধ হয়ে যায়। তাই তাঁদের ধারণা, এটা ফারদিন ছিল।’

বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা জানতে চেয়েছিলাম ফারদিন যেসব স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছে, তার সঠিক প্রমাণ আছে কি না। এর ব্যাখ্যায় ডিবি ও র‍্যাব কর্মকর্তারা বলেছেন, সে রাত ১১টার দিকে বুয়েটের এক সহপাঠীর সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলেছে। ওই সময় ফারদিন স্বাভাবিক ছিল। সে স্পেন যাওয়া নিয়ে আলোচনা করেছে। রাত ১টা ৫৭ মিনিটে ফেসবুকের মেসেঞ্জারে এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে। সেই সময়েও স্বাভাবিক মনে হয়েছে তাদের। 

‘আমরা আরও জানতে চেয়েছিলাম, এক লেগুনাচালক কত দিন আগে ফারদিনকে কোথাও নামিয়ে দিয়েছে, এটা সে কীভাবে মনে রেখেছে? এর ব্যাখ্যায় ডিবি ও র‍্যাবের কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছেন, এ বিষয় লেগুনাচালক বলেছে, যাত্রাবাড়ী থেকে সুলতানা কামাল ব্রিজের তারাব এলাকায় অল্প দূরত্বে দুজনকে নামিয়েছে। ফারদিনের মোবাইল ফোনের লোকেশন অনুযায়ী দুই স্থানের কোনো একটিতে নেমেছে বলে পুলিশের ধারণা। আর লেগুনাচালকের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে ফারদিনের মোবাইল ফোনের তথ্য মিলেছে।’

বুয়েট শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ‘মাদক, চনপাড়া বস্তি, রায়হান গ্যাং, গাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ বেরিয়েছে। এসব প্রশ্নের যৌক্তিক একটি উত্তর পাওয়ার দরকার ছিল। আমরা বিভিন্ন মানববন্ধনেও এসব প্রশ্নের জবাব চেয়েছি। এই তথ্যগুলো যেহেতু র‍্যাবের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে, তাই আমরা এর উত্তর র‍্যাবের কাছে চেয়েছিলাম। কারণ মাদক, রায়হান গ্যাং ও চনপাড়া বস্তির বিষয়টি এসেছে র‍্যাবের মাধ্যমে। এর পরিপ্রেক্ষিতে র‍্যাব আমাদের বলেছে, তারা প্রথম তদন্ত শুরু করে তিনটা প্রশ্ন সামনে রেখে। এটা পরিকল্পিত হত্যা, দুর্ঘটনা কি না এবং আত্মহত্যা কি না। ফারদিনের রবি নম্বরের নেটওয়ার্ক ধরে তদন্ত শুরু হয়। আর ফারদিনের সর্বশেষ অবস্থান অনুযায়ী তারাব ও চনপাড়া বস্তি এলাকা দেখিয়েছে। যেহেতু চনপাড়া বস্তি একটি অপরাধপ্রবণ এলাকা, তাই র‍্যাব বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে। চানপাড়ার বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে। কিন্তু পরে তারা তথ্য যাচাই-বাছাই করে মিল পায়নি। এরপর তারা সুলতানা কামাল ব্রিজের দিকে নজর দিয়েছে। আর গাড়িতে তোলা বা সিএনজি অটোরিকশায় ওঠার বিষয়টি র‍্যাব জানত না। অটোরিকশার ফুটেজ তাদের কাছে আসেনি। এটা ভুল হওয়ার কারণ হলো, ফারদিনের শরীরে ছিল শার্ট, কিন্তু অটোরিকশায় ওঠা তরুণের গায়ে ছিল কালো গেঞ্জি। অটোরিকশার সঙ্গে ফারদিনের মোবাইলের লোকেশন মেলেনি।’

ফারদিন হত্যাকাণ্ড নিয়ে আরও সংবাদ পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির ওপর আক্রমণ নির্বাচনী পরিবেশ বানচালের নীলনকশা: বিএনপি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৬
ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে বিএনপি। তারা বলেছে, এই আক্রমণ সুদূরপ্রসারী অশুভ পরিকল্পনার অংশ। নিঃসন্দেহে এটি নির্বাচনী পরিবেশ বানচাল করার জন্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিস্তার করার নীলনকশা। দেশের একটি চক্র এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ শুক্রবার দুপুরে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন।

রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় আজ দুপুরে ইনকিলাব মঞ্চের নেতা হাদিকে গুলি করা হয়। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন। হামলায় গুরুতর আহত এই নেতার জন্য ‘বি নেগেটিভ’ গ্রুপের রক্তের দরকার বলে জানিয়েছেন তাঁর অনুসারীরা।

সংবাদমাধ্যমকে তাঁরা জানান, হাদির প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। চিকিৎসকেরা ‘বি নেগেটিভ’ রক্ত জোগাড় করতে বলেছেন।

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থীর ওপর হামলার পরপরই বিবৃতি আসে বিএনপির পক্ষ থেকে।

এতে বলা হয়, হাদি (৩৩) আজ দুপুরে বিপথগামী দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই আক্রমণ সুদুরপ্রসারী অশুভ পরিকল্পনার অংশ। নিঃসন্দেহে এটি নির্বাচনী পরিবেশ বানচাল করার জন্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিস্তার করার নীলনকশা। দেশের একটি চক্র এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে সমাজে ভয় আর আতঙ্ক ছড়িয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে হিংস্র সন্ত্রাসীরা পরিব্যাপ্ত রয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণতন্ত্রের বিজয়ের যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতেই একটি কুচক্রী মহল দেশকে নৈরাজ্যের অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা সেই অপতৎপরতারই নির্মম বহিঃপ্রকাশ। নাশকতাকারীদের অন্তর্ঘাতমূলক কাজের বিষয়ে জনগণকে সদা সতর্ক থাকতে হবে। গণতন্ত্রের পথচলাকে রুদ্ধ এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তাই এসব নাশকতাকারী সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমনের বিকল্প নেই। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় দলমত-নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নইলে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন করতে মরিয়া হয়ে উঠবে।

বিএনপি দুস্কৃতকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছে এবং গুলিতে গুরুতর আহত শরিফ ওসমান হাদির আশু সুস্থতা কামনা করছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির সবাই লাপাত্তা

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
মোহনগঞ্জ থানা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মোহনগঞ্জ থানা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে রাহিমা আক্তার (২৬) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গৃহবধূর স্বামী মুনসুর মিয়াসহ (৩২) পরিবারের সবাই পলাতক রয়েছেন। আজ শুক্রবার বিকেলে মোহনগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার জয়পুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত মুনসুর মিয়া উপজেলার জয়পুর গ্রামের রঙ্গ মিয়ার ছেলে।

আর নিহত রাহিমা আক্তার একই গ্রামের মো. আবুল হাশেমের মেয়ে।

১০ বছর আগে মুনসুর মিয়ার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় রাহিমার। তাঁদের সংসারে আট বছর ও তিন বছর বয়সী দুটি ছেলেসন্তান রয়েছে।

নিহত রাহিমার বাবা আবুল হাশেম বলেন, ‘মুনসুর মিয়ার জুয়া খেলার অভ্যাস রয়েছে। জুয়ায় হেরে বাসায় গিয়ে রাহিমাকে মারধর করত। গতকাল সন্ধ্যায় জুয়ায় হেরে বাসায় গিয়ে রাহিমাকে বেধড়ক মারধর করে মুনসুর। একপর্যায়ে রহিমা অচেতন হয়ে গেলে তাকে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় মুনসুর ও তার পরিবারের লোকজন। চিকিৎসক রাহিমাকে মৃত ঘোষণা করলে মুনসুর ও পরিবারের লোকজন লাশ রেখে পালিয়ে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘খবর পেয়ে দৌড়ে হাসপাতালে যাই। পরে রাতে লাশ বাড়িতে নিয়ে এসেছি। খবর পেয়ে পুলিশ এসে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছে। আজ সকালে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। লাশ নিয়ে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরব। রাতে এ ঘটনায় মামলা করা হবে। আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই।’

মোহনগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুজ্জামান বলেন, ‘রাহিমার মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে দেখা গেছে। তিনি বিষ পান করে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদি ‘লাইফ সাপোর্টে’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৭
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় ওসমান হাদি হামলার শিকার হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় ওসমান হাদি হামলার শিকার হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ‘লাইফ সাপোর্ট’ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’ বলে জানিয়েছে। তাঁর মাথার ভেতরে বুলেটটি আটকে আছে।

আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় ওসমান হাদি হামলার শিকার হন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, বেলা ২টা ২৫ মিনিটের দিকে একটি মোটরসাইকেলে করে দুজন দুর্বৃত্ত এসে হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে এবং দ্রুত পালিয়ে যায়।

গুরুতর আহত অবস্থায় শরিফ ওসমান হাদিকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঢামেক হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর থেকে জানানো হয়, হাদির অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন (ক্রিটিক্যাল) এবং বুলেটটি মাথার ভেতরে থাকায় তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় শরিফ ওসমান হাদির পেছনের রিকশায় ছিলেন মো. রাফি। তিনি হামলার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘জুমার নামাজ শেষে আমরা হাইকোর্টের দিকে আসছিলাম। রিকশায় ছিলাম। বিজয়নগর আসতেই একটা মোটরসাইকেলে করে দুজন এসে হাদি ভাইয়ের ওপর গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। আমি ভাইয়ের পেছনের রিকশায় ছিলাম।’

এদিকে, ঢাকা-৮ আসনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর দুর্বৃত্তদের এমন হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি অবিলম্বে এই ঘটনার দ্রুত ও ব্যাপক তদন্ত চালানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, যেন হামলায় জড়িত সবাইকে দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়।

এই ঘটনায় রাজনৈতিক নেতারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জনগণ যাদের সমর্থন দেবে, তারাই জিতবে: পঞ্চগড়ে সারজিস আলম

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘পেশিশক্তির প্রয়োগ, জোর করে ভোট নেওয়া, যেকোনো মূল্যে জিততে হবে—এই ধরনের মানসিকতা থেকে বের হয়ে এসে জনগণের কাছে আমরা যাই। জনগণ যাদের সমর্থন দিবে, তারাই জিতবে।’

আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে পঞ্চগড় প্রশাসক কার্যালয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী আচরণবিধি বিষয়ে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সারজিস এ কথা বলেন।

সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের (এনসিপি) জায়গা থেকে এখন পর্যন্ত ৩০০ আসনে আমরা মনোনয়ন দিয়ে আমাদের মতো করে নির্বাচনকালীন প্রস্তুতি এবং সামগ্রিকভাবে সাংগঠনিক অবস্থাকে শক্তিশালী করে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার দিকে মনোনিবেশ করছি। এর মধ্যবর্তী সময়ে যদি বাংলাদেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে আমাদের এই ধরনের সংস্কারের সামনে রেখে এবং বাংলাদেশের সার্বিক যে অবস্থা, সেই অবস্থাকে অগ্রগতির দিকে রেখে যদি কোনো একটি রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে, দলের সঙ্গে অ্যালায়েন্সের আলোচনা সামনে আসে, সেই আলোচনা হয়তো অগ্রসর হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি যে, কোন জোটে যাব কিংবা যাব না। আমরা আমাদের মতো করে নির্বাচনকেন্দ্রিক যে প্রস্তুতি, সেটি নিচ্ছি।’

দুই ছাত্র উপদেষ্টার এনসিপিতে আসার প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের অভ্যুত্থানে দুজন সহযোদ্ধা ছাত্র উপদেষ্টা ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন আসিফ মাহমুদ। আমরা ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি, তিনি ঢাকা-১০ আসনে তাঁর জায়গা থেকে নির্বাচন করবেন। আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে অবশ্যই স্বাগত জানাই। আমরা চাই যে তিনি আমাদের পূর্বের সহযোদ্ধা, তিনি আমাদের এনসিপিতে আসুক এবং এনসিপির পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। পাশাপাশি আমাদের আরেকজন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি তাঁর জায়গা থেকে এখনো কিন্তু নির্বাচন যে করবেন কিংবা কোন আসনে করবেন, এ বিষয়ে স্পষ্ট এখনো বক্তব্য দেননি। আমরা প্রত্যাশা করব, তিনিও এনসিপিতে আসবেন। এনসিপির হয়ে যেকোনো একটি আসনে নির্বাচন করে আগামী জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত