Ajker Patrika

হাঁটুভাঙা ও কোমরভাঙা নিয়ে দুই নেতার বাহাস

হাঁটুভাঙা ও কোমরভাঙা নিয়ে দুই নেতার বাহাস

দিন যত যাচ্ছে, রাজনীতির মাঠ যেন তত গরম হয়ে উঠছে। সাধারণ মানুষের মনোযোগ এখন সেভাবে রাজনীতির দিকে নেই। কারণ, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় মানুষ হিমশিম খাচ্ছে হিসাব মেলাতে। আয় বাড়ার কোনো লক্ষণ নেই, কিন্তু প্রতিদিনই ব্যয় বাড়ছে। শুধু চাল, ডাল, তেল নয়, যা কিনতে যাওয়া যায় সব জিনিসেরই দাম বেশি।

সাবান থেকে শুরু করে কাগজ-কলম—কিছুই মূল্যবৃদ্ধির বাইরে নেই। যাঁদের আয়-রোজগার অঢেল, যাঁরা বেতনের থেকেও উপরি আয় করেন অধিক, তাঁদের কোনো সমস্যা নেই। তাঁদের দেশের নামডাকওয়ালা শপিং মল কেন, কেনাকাটা করতে বিদেশে যেতেও দুবার ভাবতে হয় না। কিন্তু এমন মানুষের চেয়ে দেশে তো সেই সব মানুষের সংখ্যা বেশি, যাঁদের আয় সীমিত এবং খুবই কম। এমনকি কুড়ি হাজার টাকা মাইনে যাঁর, তাঁর পক্ষেও কি চারজনের পরিবার নিয়ে আরাম করে দিন যাপন সম্ভব হচ্ছে?

এমন অসংখ্য মানুষ আছেন যাঁরা বুঝতে পারছেন না, কোন খরচটা কমিয়ে সংসারের বেহাল অবস্থা সামাল দেবেন। একেবারে মোটা চালেরও যে দাম তাতে অনেক পরিবারই পেটপুরে ভাত কত দিন খেতে পারবেন, তা ভাবতে শুরু করেছে। শুধু ভাত তো আর খাওয়া যায় না। আগে যাঁদের প্রতি বেলায় ভাতের সঙ্গে ডাল, ভাজি ও একটি তরকারির পদ থাকত, তাঁরা এখন তরকারির পদ কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ডিমের দাম বেড়ে আবার কমতে শুরু করেছিল। এখন আবার বেড়েছে। সকালে নাশতার সঙ্গে ডিম খাওয়ার অভ্যাস যাঁদের ছিল, তাঁরা এটা আর বজায় রাখতে পারছেন না। মাছ-মাংস খাওয়া ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। শিক্ষার উপকরণ, যাতায়াত খরচসহ নানামুখী ব্যয় বাড়ার চাপে সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছে কত পরিবার, সে খবর কি কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের কাছে আছে?

সীমিত আয়ের মানুষ ও চাকরিজীবীরা বাজারের অস্থিরতায় এতটাই অসহায় অবস্থায় পড়েছেন যে চিকিৎসা কিংবা অন্য কোনো বিপদে পড়লে তাঁরা খরচ করতে পারছেন না। এমনকি বিয়েশাদির দাওয়াত পেলেও কেউ কেউ আতঙ্ক বোধ করেন। মূল্যবৃদ্ধির এই পরিস্থিতি কত দিন চলবে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে দীর্ঘদিন এমনটা চলতে থাকলে গণ-অসন্তোষ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এসব বিষয় আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর বিবেচনায় আছে কি?

দেশে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা অনেক, তবে প্রধান দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায়। দলটি মনে করে, তারা ক্ষমতায় থাকায় দেশের বিরাট উন্নতি হয়েছে। অনেক উন্নতি দৃশ্যমানও। মানুষের মাথাপিছু গড় আয় বেড়েছে। এসব যেমন অস্বীকার করা যাবে না, তেমনি এটাও ঠিক যে দেশে এই সময়কালে ধনী-গরিবের বৈষম্যও অনেক বেড়েছে। দেশে ‘মোটা আলী’ ও ‘চিকন আলী’দের পাশাপাশি অবস্থান বেমানান হলেও তা এড়ানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একই দলের সরকার বহু বছর টানা ক্ষমতায় থাকলে নানা ধরনের খারাপপ্রবণতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাম জোটের ৩৪ বছরের শাসন তার বড় উদাহরণ। ক্ষমতাসীনদের অনুগত সুবিধাভোগী শ্রেণি গড়ে ওঠে। ঘুষ-দুর্নীতির মাত্রাও বাড়ে। বাংলাদেশে এখন এ সবই হয়েছে। পাওয়ার দল ও না-পাওয়ার দল পরস্পর মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগের জন্য এখন বিরোধী দল যতটা না চাপের, তার চেয়ে বেশি চাপ তৈরি করছে নিজ দলের না-পাওয়া বা বঞ্চিত পক্ষ। যেকোনো নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি তার প্রমাণ।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাম্প্রতিক এক বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে দলের ভেতরে ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’ বাড়ছে।

আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক করে দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘যাঁরা যেখানে অপকর্ম করছেন, সব তথ্য কিন্তু নেত্রীর কাছে আছে। সবার এসিআর আছে।

সময়মতো টের পাবেন। কেউ কেউ টের পাচ্ছেন, বাকিরা সামনে পাবেন।’ কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে জমিদারি করছেন দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনাদের শেখ হাসিনা কোনো দিনই ক্ষমা করবেন না। জনপ্রতিনিধি জমিদারির মানসিকতা নিয়ে শেখ হাসিনার দলে থাকতে পারে না, বঙ্গবন্ধুর দলে থাকতে পারে না।’

সংগঠনের যাঁরাই অপকর্ম করে সরকারকে বিব্রত করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়ে কাদের বলেছেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ রইল, এত অর্জন, উন্নয়ন শেখ হাসিনার; দু-চারজনের অপকর্মের জন্য যেন ম্লান না হয়।’ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কোনো অপরাধীকে আওয়ামী লীগ ছাড় দেবে না। অপকর্মকারীদের জন্য সাফল্য ম্লান হতে পারে না। দোষ করে গুটিকয়েক, দোষ হয় পুরো সরকারের, এটা আমরা হতে দেব না।’

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য যতটা উৎসাহী বা আশাবাদী করে তোলে, বাস্তব পরিস্থিতি আসলে ততটাই হতাশাজনক।

সরকার কতটা দোষমুক্ত আছে, নির্বাচিত হয়ে যাঁরা জায়গায় জায়গায় জমিদারি কায়েম করেছেন এবং ইতিমধ্যেই যাঁরা ‘অপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা কিন্তু স্পষ্ট নয়।

দুই.মানুষের সমস্যা নিয়ে রাজনীতিবিদদের মুখে কোনো কথা নেই। তাঁরা কথা বলেন নিজেদের নিয়ে। যাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাঁরা কৌশল আঁটছেন কীভাবে আরও এক মেয়াদের জন্য ক্ষমতা নিশ্চিত করা যাবে। আর ক্ষমতার বাইরে যাঁরা, তাঁদের সব মনোযোগ কীভাবে ক্ষমতা ফিরে পাওয়া যাবে, তার কলাকৌশল নির্ধারণে। বাজারে পণ্যের মূল্য ক্রমাগত কেন বাড়ছে, এর কোনটা স্বাভাবিক, কোনটা কৃত্রিম—তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বড় নেতাদের মুখে তেমন কোনো কথা শোনা যায় কি?

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রতিদিন বিএনপির বিরুদ্ধে বলছেন। বিএনপির আন্দোলনের ক্ষমতা নেই, বিএনপি হাঁটুভাঙা দলে পরিণত হয়েছে, বিএনপির আন্দোলনের হুঁশিয়ারিকে আমলে নিচ্ছেন না। বিএনপিকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘সোজা কথা, সোজা পথে আসুন, নির্বাচনে আসুন। পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশেও নির্বাচন হবে। নির্বাচনের সময় সরকার রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। আর আইন প্রয়োগকারী সব সংস্থা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে। সরকার না থাকলে কারা চালাবে দেশ? আপনাদের হাতে দেব?’

কম যান না বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। তিনিও প্রতিদিন কথা বলেই যাচ্ছেন। যেমন গত ২৯ সেপ্টেম্বর এক সমাবেশে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন বিএনপির নাকি হাঁটু ভাঙা। বিএনপির যে হাঁটু ভাঙা নয়, সেটা তো টের পাচ্ছেন। লাঠিও আমরা নিইনি। কিন্তু আপনাদের ইতিমধ্যে কোমর ভেঙে গেছে। শুধু লাঠি নয়, রামদা, তলোয়ার এবং পুলিশের বন্দুকের ওপর আপনারা এখন আছেন। আপনারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন।’

সরকারকে পদত্যাগের পরামর্শ দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘এখনো সময় আছে, পদত্যাগ করুন, সেফ এক্সিট নিন এবং একটা নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।’

বিএনপি চাইলেই যে সরকার পদত্যাগ করবে না; বরং বিএনপিকে মোকাবিলা করার নতুন নতুন উপায় খুঁজবে, সেটাও স্পষ্ট হয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াশিংটনে দেওয়া এক বক্তব্য থেকে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিএনপি সরকারের দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিরোধীদের বিরুদ্ধে চালানো নৃশংসতার বর্ণনা তুলে ধরতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় থাকায় উন্নত দেশের মর্যাদা পেতে যাচ্ছে। আমরা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে একত্রে কাজ করে যাচ্ছি।’ নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাঁর দল দেশে নির্বাচনের নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। এর ফলে জনগণ এখন স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে।’

ভোট নিয়ে যেসব অভিযোগ বা বিতর্ক আছে, তা আমলে নিচ্ছেন না সরকারপ্রধান। অথচ শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বলে আন্দোলন করছে বিএনপি। সরকারের পদত্যাগের এই আন্দোলন সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সংশয় আছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যেও আন্দোলন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার বাধা দেবে না বললেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। কোনো কোনো সভা-সমাবেশ নির্বিঘ্নে হলেও অনেক ক্ষেত্রেই বাধা দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবেও বিএনপিকে মোকাবিলা করতে মাঠে নামছে, আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিএনপির মুখোমুখি হচ্ছে। বিএনপিকে বড় কোনো আন্দোলনের পরিস্থিতি তৈরি করার সুযোগ সরকার দেবে না বলেই মনে হয়। আন্দোলন যেমন কোনো দল বা নেতার নির্দেশে হয় না, তেমনি মানুষ যদি আন্দোলনে নেমে যায় তাহলে সরকার শক্তি প্রয়োগ করেও তা দমন করতে পারে না। কেবল দলীয় কর্মী-সমর্থকদের হাতে লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে মাঠে নামালেই গণ-অভ্যুত্থান তৈরি হয় না। মানুষ যখন পরিবর্তনটা জরুরি মনে করে এবং পরিবর্তন হলে তাদের জীবনে যে চাপ তৈরি হয়েছে, তার অবসান হবে মনে করবে, তখনই তাদের মধ্যে জাগরণ তৈরি হবে, মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে রাজপথ উত্তাল করে তুলবে। বিএনপি তেমন পরিস্থিতি তৈরির কাছাকাছি যেতে পেরেছে বলে মনে হয় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত