Ajker Patrika

ইভিএম বিতর্ক: আস্থা অর্জনে যাচাই-বাছাই প্রয়োজন

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪: ৫১
ইভিএম বিতর্ক: আস্থা অর্জনে যাচাই-বাছাই প্রয়োজন

আগামী নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ নিয়ে বিরোধিতা ও বিতর্ক লক্ষ করা যাচ্ছে। যাঁরা এই বিতর্ক ও বিরোধিতায় অংশ নিচ্ছেন, তাঁদের প্রায় সবাই ইভিএম বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নন। অল্প কিছুসংখ্যক কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ নির্বাচন কমিশনের ব্যবহৃত ইভিএমে কিছু ত্রুটি আছে বলে দাবি করছেন। অন্যদিকে যাঁরা এই ইভিএম তৈরি ও পর্যবেক্ষণ করেছেন, তেমন অনেক বিশেষজ্ঞ এই ইভিএমকে প্রায় ত্রুটিমুক্ত বলে অভিহিত করেছেন। অল্প কিছুসংখ্যক বিশেষজ্ঞ আঙুলের ছাপ মেলানোর ক্ষেত্রে ১ শতাংশ ভোটারের ভোটদানে সমস্যার কথা জানিয়েছেন। সে কারণে নির্বাচন কমিশন সেই সব ভোটারের ভোট গ্রহণের ব্যাপারে বিকল্প চিন্তা করছে বলে জানা গেছে।

ইভিএম নিয়ে সামগ্রিকভাবে বিএনপি ও এর জোট সদস্য দলগুলো বিরোধিতা করে আসছে। তারা নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টিকে কারচুপির আয়োজন বলে অভিহিত করছে। সুজনসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা ইভিএমের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তবে এটিও বিশেষজ্ঞদের ইভিএম যাচাই-বাছাইয়ের অভিজ্ঞতার ফলাফল কি না, তা স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সপক্ষে তাদের যুক্তি তুলে ধরে বলেছে, একদিকে প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে ভোট গ্রহণ ও ফলাফল প্রদানে সময় ও ঝামেলা কমে যাবে, অন্যদিকে ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ ও ফলাফলে যথেষ্ট সময় ও ঝুঁকি রয়েছে, ব্যালট পেপারের অতীত অভিজ্ঞতাও ভালো নয়।

ইভিএম বিশেষ প্রযুক্তি, যা নিজে কাউকে নির্বাচনে জিতিয়ে আনতে কিংবা পরাজিত হতে ভূমিকা রাখে না। তবে আমাদের দেশে উদ্ভাবিত ইভিএম যদি শতভাগের কাছাকাছি ত্রুটিমুক্ত রাখার নিশ্চয়তা দিতে পারে, তাহলে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচন করা অনেক বেশি শ্রেয় হতে পারে। কিন্তু সেটি অংশীজনদের আস্থা অর্জনের মাধ্যমেই কেবল হতে পারে। আস্থা অর্জনের জন্য প্রয়োজন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ইভিএম প্রযুক্তির সব কারিগরি দিক যাচাই-বাছাই করে নেওয়া। ১ শতাংশের নিচে ত্রুটিও সারিয়ে তোলার যদি সুযোগ থাকে, তাহলে সেই উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সেটি না করা গেলে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে অংশীজনদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য হলে নির্বাচন কমিশন বিবেচনায় নিতে পারে।

কিন্তু বাংলাদেশে ইভিএম নিয়ে যে ধরনের বিতর্ক চলছে, তাকে বিতর্ক না বলে বিরোধিতা এবং রাজনৈতিক মল্লযুদ্ধের কোনো কৌশল কি না, তেমন  প্রশ্ন  করা যেতেই পারে। ইভিএম একটি উচ্চতর প্রযুক্তি, যার সম্পর্কে একমাত্র এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান দ্বারা মতামত রাখার বিষয়। তাদের বাইরে গিয়ে আমরা যাঁরা ননটেকনিক্যাল, তাঁদের এ বিষয়ে মতামত দেওয়া, বিতর্কে জড়িয়ে পড়া, পক্ষে বা বিপক্ষে মত দেওয়া, বিরোধিতা করা কিংবা পক্ষে অবস্থান নেওয়া মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়। এটি চূড়ান্তভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করে টেকনিক্যাল ব্যক্তিরাই এর পক্ষে বা বিপক্ষে চূড়ান্ত মতামত দিতে পারেন। যদি টেকনিক্যাল ব্যক্তিরা এর পক্ষে মতামত দেন, তাহলে এ ব্যাপারে কারও কোনো দ্বিমত করা উচিত নয়। সেটি নির্বাচন কমিশন সব অংশীজনকে জানাতে পারে; তাহলেই ইভিএম সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।

কিন্তু এ পর্যন্ত ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক রশি টানাটানি বেশি হচ্ছে। একপক্ষ সর্বশক্তি দিয়ে ইভিএমের বিরোধিতা করছে; অপরপক্ষ নির্বাচন কমিশন যতসংখ্যক আসনে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন করা সম্ভব হবে, তাতে তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। অর্থাৎ, ইভিএম ও ব্যালট পেপার উভয় পন্থায়ই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের অবস্থানের পক্ষে তাদের মত দিয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন যদি সব আসনে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে নির্বাচন গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিত, তাহলে বিএনপি কিংবা অন্যান্য রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিত কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

 কারণ, তাদের আরও অনেক দাবি আছে, যেগুলো আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের রাজনৈতিকভাবে মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত আগামী নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ কিংবা অংশগ্রহণবিহীন অবস্থান হবে কি না, সেটিও এখনো অনিশ্চিত। কিন্তু ইভিএম নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, তা আগামী নির্বাচনে বিরোধিতাকারীদের অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে আদৌ কোনো ভূমিকা রাখবে কি না, সেটিও এখনো বলা যাচ্ছে না। অথচ বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের একটি অংশ ইভিএম নিয়ে যার যার অবস্থান থেকে কথা বলেই যাচ্ছে। তাদের এই বক্তব্য অনেকটাই যুক্তিকে অগ্রাহ্য করেও বলা হচ্ছে। ফলে নাগরিক সমাজের বক্তব্যও রাজনৈতিকভাবে ইভিএমের বিরোধিতাকারীদের অবস্থানের সঙ্গে একাকার হচ্ছে। এ কারণে অনেকেই তাদের সন্দেহ এবং অবিশ্বাস করছে। এর দায় তাদেরই নিতে হবে।

নাগরিক সমাজের সবারই অবস্থান ইভিএমের ত্রুটিহীনতা ও ত্রুটির সম্ভাব্যতা সম্পর্কে প্রযুক্তিবিদদের মতামত কিংবা পরামর্শ শোনা এবং তার ভিত্তিতে বক্তব্য দেওয়া। কিন্তু কোনো কোনো নাগরিক সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে যেসব কথা বলেন, তা কখনো কখনো শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সে কারণে ইভিএম নিয়ে অবিশেষজ্ঞ যেকোনো ব্যক্তি ও সংগঠনের বক্তব্য, বিবৃতি ও লেখালেখি দেশে বিভ্রান্তি ছড়াতে বেশি ভূমিকা রাখছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমাদের প্রতিবারের নির্বাচন উপলক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে এমন কারও কারও মতামত শুনতে হয়, যা শেষ বিচারে খুব কমই গুরুত্ব পায়।

আমাদের নিকট অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বর্তমান কমিশনের অধীন ৩১ জুলাই ২০২২ পর্যন্ত ২৩১টি নির্বাচন ইভিএমে সম্পন্ন হয়েছে। ২০১২ ও ২০১৭ সালের কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইভিএমের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সব নির্বাচনে কোনো ধরনের কারচুপির অভিযোগ ওঠেনি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিরোধী প্রার্থীরা বিজয়ীও হয়েছেন। ফলে ইভিএম নিয়ে বিতর্ক যাঁরা করছেন, তাঁদের বিরোধিতার যৌক্তিকতা স্পষ্ট নয়। বিগত নির্বাচন কমিশনগুলো যেসব ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচনের আয়োজন করেছেন, সেগুলোর চেয়ে সর্বশেষ ইভিএম নির্বাচন কমিশন বিশেষজ্ঞদের যাচাই-বাছাইয়ের জন্য উপস্থাপন করেছে। বিশেষজ্ঞরা প্রয়োজনে সেগুলো আরও যাচাই-বাছাই করে দেখতে পারেন।

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারীআমাদের জানামতে, জাতীয় সংসদের প্রায় ৭৫টি নির্বাচনী আসনে ভোট নেওয়ার মতো উচ্চতর প্রযুক্তিসম্পন্ন ইভিএম এখন নির্বাচন কমিশনের হাতে আছে। নির্বাচন কমিশন মোট দেড় শ আসনের নির্বাচন ইভিএমে করার জন্য যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, সেটার জন্য আরও ৭৫টি আসনের ইভিএম কেনার প্রয়োজন হবে। এর জন্য ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এই অর্থ বরাদ্দের জন্য নির্বাচন কমিশনের সুপারিশের কথা শুনে অনেকেই ইভিএম থেকে সরে যাওয়ার দাবি করছেন, কিন্তু ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন করতে গেলে নির্বাচন কমিশনের মোট বাজেট কত হতে পারে, সেটি বোধ হয় জানা দরকার ছিল। সম্ভবত নির্বাচনী ব্যালট পেপার, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, সিল, লোকবল ইত্যাদি মিলিয়ে খরচ অনেক বেশি হতে পারে। তার পরও ইভিএম নিয়ে যদি কোনো ত্রুটি থাকে, তাহলে ভিন্ন কথা।

কিন্তু ত্রুটি না থাকলে কিংবা ত্রুটি সারিয়ে শতভাগ ভোটারের ত্রুটিমুক্ত ভোটদান নিশ্চিত করা গেলে বাকি ৭০-৭৫টি আসনের ইভিএম কেনার ব্যাপারে খুব বেশি রক্ষণশীল হওয়ার যুক্তি থাকতে পারে না। তার পরও নির্বাচন কমিশন যদি প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পায়, তাহলে মোট ১০০ আসনের জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ইভিএম সংগ্রহ করতে পারে। একই সঙ্গে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত কেবল শহরগুলোর জন্যই নির্ধারণ করা যেতে পারে। শহরের ভোটাররা ইভিএমে ভোটদানে এরই মধ্যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তার পরও ইভিএমের পাশাপাশি ২-৩ শতাংশ ভোটার, যাঁদের আঙুলের ছাপ না মেলার কারণে ভোটদানে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে তাঁদের উপস্থিত পোলিং এজেন্ট ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সম্মতিতে বিশেষ ব্যালটে ভোটদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এর জন্য ইভিএমের আসনগুলোতে ১-২ শতাংশ ব্যালট পেপার ও ব্যালট বক্স রাখা যেতে পারে। এই ব্যালট পেপারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, ভোটদান ও পরবর্তী গণনায় মিলিয়ে দেখার ব্যবস্থা থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই অন্য কোনো ভোটারকে এ ধরনের ব্যালট পেপারে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া যাবে না। সে ধরনের পরিস্থিতিতে যে কয়টি আসনে ইভিএমের মাধ্যমে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেগুলোর ভোটার উপস্থিতি, ভোটদান, ভোটের পরিবেশ, ইভিএমের কার্যকারিতা ইত্যাদির সঙ্গে বাকি ব্যালট পেপারে অনুষ্ঠিত ভোটকেন্দ্রে তুলনামূলক একটি বাস্তবতার চিত্র পাওয়া যাবে। তখনই ইভিএম নাকি ব্যালট পেপারের নির্বাচন আমাদের দেশে অধিকতর সুষ্ঠু ও ত্রুটিমুক্তভাবে অনুষ্ঠিত করা যাবে, সেটি প্রমাণিত বা নিশ্চিত হওয়া যাবে।

আমরা প্রযুক্তির যুগে বসবাস করছি, কিন্তু প্রযুক্তি ব্যবহারের বিরোধিতা করে। কতটা নির্ভুল বা ভুল করছি, তখনই সেটি প্রমাণিত হবে। আমার ধারণা, ব্যালট পেপারের চেয়ে ত্রুটিহীন ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচন অধিকতর গ্রহণযোগ্য করা সম্ভব হতে পারে।বিষয়গুলো অংশীজনদের গভীরভাবে যাচাই-বাছাই এবং আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন। নিজেদের ঢালাওভাবে অভিযোগকারী হিসেবে চিহ্নিত করা বর্তমান আধুনিক বিশ্বের কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য হবে না।

লেখক: অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত