Ajker Patrika

রাজনীতির প্রতি তরুণ প্রজন্মের ঘৃণা কি অহেতুক?

রাজনীতির প্রতি তরুণ প্রজন্মের ঘৃণা কি অহেতুক?

নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। আমরা প্রায়ই বলি, মানুষের ব্যয় বাড়ছে, কিন্তু আয় বাড়ছে না। সমস্যার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। সবারই নিজ নিজ অভিজ্ঞতার ভান্ডার এ ব্যাপারে সমৃদ্ধ। সমস্যা সমাধানের উপায় কী, সে বিষয়ে ভাবা দরকার। সমাধানের পথ না দেখিয়ে শুধু সমস্যার কথা বলে আর কারও মনোযোগ আকর্ষণ করা যাচ্ছে না, যাবেও না। তাই আর সমস্যার কথা নয়, বলতে হবে সমাধানের কথা। কেউ কি তা বলছেন?

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে দেশের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে—বিএনপিসহ আওয়ামী লীগবিরোধী সবাই বছরের পর বছর এ কথা বলছে। প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগ যদি বারোটা বাজিয়েই থাকে তাহলে মানুষ কেন সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে না?

এই প্রশ্নেরও গৎবাঁধা উত্তর আছে। সেটা হলো, অত্যাচার-নির্যাতন-মামলা-হামলা চালিয়ে সরকার দেশে ভয়ের সংস্কৃতির বিস্তার ঘটিয়েছে। মানুষ অসহায়-দিশেহারা।
আত্মরক্ষা বা নিজ নিজ সুবিধা অনুযায়ী, কারণে-অকারণে যেসব দেশ থেকে উদাহরণ খুঁজে এনে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা করি, সেই সব দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতির বাস্তবতা সম্পর্কে আমরা অবহিত না হয়েই সচরাচর ওই সব উদাহরণ দিয়ে থাকি। আমরা আমাদের দেশের রাজনীতির ইতিহাস, বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি কোন পটভূমিতে স্বাধীন হলো, তারপর নানা সময়ে দেশের অভ্যন্তীরণ রাজনীতির বাঁকবদলের কাহিনিও পুরোপুরি না জেনে-বুঝে নানা রকম মন্তব্য করে সস্তা বাহবা পাওয়ার চেষ্টা করে থাকি।

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে লিখতে বা বলতে গেলে সবার আগে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পটভূমিটা মনে রাখতে হবে। আমরা অনেক দাম দিয়ে এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। দেশের সব মানুষ পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হোক—সেটা চায়নি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিঃসন্দেহে গৌরবোজ্জ্বল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে যেমন বেশির ভাগ মানুষ ছিল, তেমনি বিরোধিতা করার মতো মানুষও ছিল। সেটা দেশের ভেতরে ও বাইরেও। পক্ষের শক্তি প্রবল হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ সম্ভব হয়েছে। কিন্তু যারা চায়নি বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক, তারা নিষ্ক্রিয় হয়নি কখনো। দুঃখের বিষয় হলো, ওই বিরোধিতাকারীর সংখ্যা না কমে; বরং দিন দিন বেড়েছে এবং বাড়ছে। কাজেই আমাদের দেশের রাজনীতির একটি দুর্বলতা হলো, বৃহত্তর জাতীয় ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারা। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বিদ্বেষ ও বিরোধিতা স্থায়ী রূপ নিয়েছে।  

দুই. 
জ্বালানি তেল, ইউরিয়া সার, নিত্যপণ্যের দাম ও পরিবহনভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে ২৫ আগস্ট অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছিল বাম গণতান্ত্রিক জোট। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হরতালের কর্মসূচিতে পথে নামেন জোটের নেতা-কর্মীরা। হরতাল পালনে পুলিশ ও সরকারদলীয় সংগঠন বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করে দলটির নেতারা বলেছেন, দুর্নীতি, লুটপাট বন্ধ না হওয়া এবং নিত্যপণ্যের দাম না কমা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দাবি মানা না হলে সামনে অবরোধ, ঘেরাওসহ আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেওয়া হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির জ্বালায় মানুষ অতিষ্ঠ।

কিন্তু তার প্রতিবাদে ডাকা হরতালে কেমন সাড়া পাওয়া গেছে? সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর: হরতালে সকাল থেকেই রাজধানীতে যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। রাজধানীর 
সব সড়কেই দেখা গেছে অফিসগামী যাত্রীদের চাপ। সংখ্যায় কিছুটা কম হলেও গণপরিবহনের পাশাপাশি চলেছে ব্যক্তিগত গাড়িও। পল্টনে কিছুটা যানজট থাকলেও বেলা ১১টার পর থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

অর্থাৎ দু-একটি পকেট এলাকা ছাড়া হরতালের প্রভাব তেমন লক্ষ করা যায়নি। অথচ বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা হরতালের পর দাবি করেছেন, সাধারণ মানুষ রাস্তায় না নামলেও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানিয়েছে। প্রশ্ন হলো এই স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনের বিষয়টি কীভাবে জানলেন বা বুঝলেন তাঁরা?

এবার দেখা যাক, নতুন প্রজন্মের একজন সচেতন তরুণীর হরতাল নিয়ে প্রতিক্রিয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এভাবে: ‘রাজপথ দখল করে হরতাল করার পদ্ধতিটা আমার ভীষণ অপছন্দের। যে বিষয়ে প্রতিবাদ, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট  দপ্তর-অধিদপ্তরের সামনে গিয়ে অবস্থান করা যেতে পারে, কর্মকর্তাদেরও ঘেরাও করা যেতে পারে। কিন্তু সড়ক অবরোধ করে, খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে, মানুষের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যাওয়া বন্ধ করে, হাসপাতালে রোগীদের ভোগান্তির শিকার করে (সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পেরে রোগীর মৃত্যু ঘটিয়ে), রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করে—এ কোন ধরনের প্রতিবাদ বুঝি না। অন্যায় উপায়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা তো একটি হাস্যকর বিষয়। কচু পোড়া দিতে অভ্যস্ত বাম দলগুলো (বাংলাদেশের বাম দলগুলোকে আমার কাছে লোকদেখানো উটকো ঝামেলাবাজ বলে মনে হয়) পল্টন, শাহবাগসহ কয়েকটি স্থানে যানবাহন চলাচলে বাধা দিয়ে কী অর্জন করল?’

 হরতাল যে আর আন্দোলনের কার্যকর হাতিয়ার নেই, সেটা বোঝার ক্ষমতা যাদের নেই, তারা কীভাবে রাজনীতির বিকল্প শক্তি হবে, সেটা ভাবার বিষয় বৈকি!

তিন. 
সরকার বদলের গণতান্ত্রিক পথ হলো নির্বাচন। বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আর বছরখানেকের কিছু বেশি সময় বাকি। আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বিএনপির। কিন্তু বিএনপি গোঁ ধরে আছে, তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। বিএনপির এই দাবির সঙ্গে কোরাসে শামিল আছে আরও কিছু দল। এই দলগুলোর নেতাদের সম্পর্কে অনেকের মন্তব্য, তাঁরা সবাই ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’। ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, মেজর জেনারেল (অব.) ইবরাহিম কিংবা নতুন গজিয়ে ওঠা নেতা রেজা কিবরিয়া-নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে মানুষ সরকার পতনের আন্দোলনে নামবে, এটা আহাম্মক ছাড়া কেউ বিশ্বাস করে?

মানুষ তো বরং মনে করে পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, বিএনপির উচিত হবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া। শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করলে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে বিএনপির জন্য আত্মঘাতী। তাহলে বিএনপি আরেক দফা ভাঙবে। সরকারের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগের খবর গোপন নেই। আজকের পত্রিকায় ২৬ আগস্টের প্রধান শিরোনাম ‘বিএনপির একাংশকে ভোটে আনার চেষ্টা’।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন যে প্রক্রিয়া বা কৌশলে হয়েছে, আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ একই কৌশল অনুসরণ করবে মনে করার কোনো কারণ নেই। নির্বাচন ও নির্বাচন-পরবর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি বিবেচনায় না নিলে চরম ভুল করা হবে। এত বছর আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থেকে দেশের প্রকৃত লাভ কী হলো—এ প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের ‘উন্নয়ন’ মানুষের মনে স্থায়ী দাগ না কেটে, প্রতিদিনের ঘটনার ধাক্কা বেশি দাগ কাটছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ শক্তির ঔদ্ধত্য বাড়ছে, সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার কমছে না, প্রশাসনে জামায়াতি রাজনীতির প্রতিনিধিদের তৎপরতা স্পষ্ট হচ্ছে, আওয়ামী পরিবারের কিছু সদস্যের নীতিহীনতার গল্প মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ছে—এগুলো কোনোটাই ভালো লক্ষণ নয়। 

চার.
শঙ্কার কথা এটাই, দেশের নতুন প্রজন্ম যে রাজনীতিবিমুখ কিংবা প্রকাশ্যে বলছে তারা রাজনীতিকে ঘৃণা করে, তাদের মনমানসিকতায় পরিবর্তন আনার কথা কি আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা বাম দলগুলোর চিন্তায় আছে? কেন তরুণদের মধ্যে এত হতাশা, রাজনীতির প্রতি বিদ্বেষী মনোভাব, তার কারণ জানার চেষ্টা কি রাজনৈতিক নেতারা করেছেন? ক্ষমতায় যেতে চান, ক্ষমতায় থাকতে চান কিন্তু ভালোকে ‘হ্যাঁ’ আর মন্দকে ‘না’ বলার অভ্যাস রপ্ত করতে চান না—এভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও মানুষের জীবনের শান্তি-স্বস্তির পথ প্রশস্ত হবে না।

বিএনপি এককভাবে বা মিত্রদের নিয়ে ক্ষমতায় এলে দেশে কী অবস্থা হবে, তা অনেকেই বোঝেন। আর বোঝেন বলেই বিএনপির ডাকে সাড়া দেন না। কিন্তু আওয়ামী লীগের নামে যদি দেশে কার্যত জামায়াতি নীতি-আদর্শের শাসন চালু হয়, সেটা কি মানুষকে খুশি করবে?

এখনকার আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গে একজন তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতার বক্তব্য, ‘এরা বঙ্গবন্ধুকে বিরিয়ানির প্যাকেটে বন্দী করে রেখেছে। তাদের বেশির ভাগের সাধনা পদ-পদবি বাগানোর। কোনো পদ-পদবি পেলেই মেওয়া ফলবে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের জ্ঞান আহরণের চেয়ে দাপট দেখানোর জন্য আগ্রহ সীমাহীন। এরা ক্ষমতার লোভে মুখে “জয় বাংলা” বলে, কিন্তু মনে মনে তারাও চায় না বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হোক! কারণ তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে সবার আগে তারা মুসলমান!’

বাংলাদেশটাকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বা সব মানুষের দেশ বানাতে হলে দেশে একটি সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রয়োজন। এই জাগরণের সঙ্গে একাত্ম করে তুলতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। এটাই এখনকার বিকল্প।

বিভুরঞ্জন সরকার , সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় গেজেট

ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলির ভিডিও ভাইরাল, ব্যাখ্যা দিলেন ইশরাক

হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-গোলাগুলি, নিহত ৫

ভারতে নারী সরকারি কর্মকর্তাকে ‘রিল তারকা’ বলায় ৪ কলেজশিক্ষার্থী আটক

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত