Ajker Patrika

আমাদের উপাচার্যরা: শ্রদ্ধায় ও লজ্জায়

আবু তাহের খান
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৫৮
আমাদের উপাচার্যরা: শ্রদ্ধায় ও লজ্জায়

জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনের আলোচনায় অংশ নিয়ে গত ২৯ মার্চ জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সাংসদ মুজিবুল হক বলেছেন, ‘আগে উপাচার্যদের কথা শুনলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসত। এখন তাঁদের দুর্নীতির খবর শুনে লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে।’ তাঁর এই বক্তব্য বস্তুত দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চলমান দুরবস্থারই বহিঃপ্রকাশ। এই অভিযোগ শিক্ষামন্ত্রীও সংসদে প্রদত্ত তাঁর জবাবে অস্বীকার করেননি বা করতে পারেননি। তবে এ বিষয়ে যুক্তি দাঁড় করাতে গিয়ে তিনি যা বলেছেন তা আরও এক দফা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে, যা বরেণ্য শিক্ষাবিদদের মর্যাদা ও অবস্থানকে হেয়প্রতিপন্ন করারই শামিল। তিনি বলেছেন, ‘বরেণ্য শিক্ষাবিদদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী হন না।’ কিন্তু তিনি কি দয়া করে সুনির্দিষ্টভাবে বলবেন, কোন বরেণ্য শিক্ষাবিদকে উপাচার্য হওয়ার অনুরোধ জানানোর পরও এ বিষয়ে তিনি তাঁর অপারগতা প্রকাশ করেছেন? এটি জানতে পারলে সাধারণ মানুষের কাছে পুরো বিষয়টিই আরও স্পষ্ট হবে।

আসলে এসব আত্মরক্ষামূলক বক্তব্যের অনেকটাই অন্যায্যতাকে জায়েজ করার শামিল বলেই সাধারণ মানুষ মনে করে। তা ছাড়া, এসব বক্তব্যের বড় অংশ তথ্যভিত্তিক নয় বলেও অভিমত রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট কর্তৃক সুপারিশকৃত তিন সদস্যের উপাচার্য প্যানেলে একাধিকবার অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর নাম থাকা সত্ত্বেও ওই পদে তাঁকে নিয়োগ না করায় তিনি এবং অন্য সবাই বুঝে গিয়েছিলেন যে তাঁর মতো স্বাধীনচেতা নিরাপস ব্যক্তিত্বকে শাসকমহলের পছন্দ নয়। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে গভীর আত্মমর্যাদা বোধসম্পন্ন এই পণ্ডিত পরবর্তীকালে এ পদের ব্যাপারে তাঁর অনাগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন। আর ওই ঘটনার পূর্বাপর উল্লেখ না করে সেটাকেই সূত্র মেনে সাম্প্রতিক কালে অনেককেই বলতে শোনা গেছে যে পণ্ডিতজনেরা উপাচার্য পদে আসতে চান না, যেমনটি শিক্ষামন্ত্রীও বলেছেন। শিক্ষামন্ত্রী তো তা-ও শুধু এটুকু বলেছেন। অনেকে এ বিষয়ে কিছুই না জেনেও নিছক কথার কথা হিসেবে বলে দিচ্ছেন যে বরেণ্য শিক্ষকেরা উপাচার্য পদে আসতে চান না। আসলে উল্লিখিত যৌক্তিক অনাগ্রহমূলক ঘটনার বাইরে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এমন কোনো নজির নেই যে সিনেট কর্তৃক উপাচার্য নিয়োগের জন্য নাম প্রস্তাব করার পর কেউ তা গ্রহণে অস্বীকার করেছেন। ফলে এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্ডিতজনদের বস্তুতই এ মর্মে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে যে তাঁরা বোধ হয় আসলেই দায়িত্ব এড়িয়ে চলতে চান, যা মোটেও সঠিক নয়; বরং সম্মানের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের সুযোগ থাকলে তাঁদের অনেকেই অত্যন্ত আনন্দ ও উৎসাহের সঙ্গে এ পদে যোগদানে আগ্রহী।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আরেকটি কথা বলেছেন, ‘উপাচার্য শুধু একাডেমিক দিক দেখেন না, নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলিও জরুরি।’ তাঁর এ কথায় সায় দিতে গেলে তো মানতেই হবে যে বরেণ্য পণ্ডিতদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি নেই বলেই যাঁদের মধ্যে সেসব গুণ আছে তাঁদেরই বাছাই করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ১৯৯০ সালের পর থেকে উপাচার্য পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, যাঁদের কেউ কেউ এখন দুর্নীতি, অদক্ষতা ও স্বজনপ্রীতির ‘রোল মডেল’ হয়ে আলোচনায় এসেছেন। কিন্তু নেতৃত্বের গুণাবলিসংক্রান্ত তালিকার কোন অংশের জন্য তাঁরা উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তা কি জানা সম্ভব?

এবার আসা যাক উপাচার্যদের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ ও তাঁদের আচরণের কারণে লজ্জায় মাথা অবনত হওয়ার বিষয়ে। স্বাধীনতা-উত্তরকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য নিযুক্ত হয়েছিলেন অধ্যাপক ড. মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী, যিনি ১৯৬৯-৭১ সময়কালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। শেষোক্ত ওই পদে তিনি নিযুক্ত হয়েছিলেন ১৯৬৯-এর ফেব্রুয়ারিতে। অর্থাৎ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও উত্তাল দিনগুলোতে তিনি ওই পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু কেউ কি বলতে পারবেন, ১৯৭২-৭৩ সময়কালে উপাচার্যের দায়িত্ব পালনকালে কখনো তিনি ক্ষমতাসীন দলের প্রতি রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বমূলক কোনো আচরণ করেছিলেন? যদি করতেন তাহলে ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যথাক্রমে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মাহবুব জামান নির্বাচিত হতে পারতেন না। সদ্য স্বাধীন দেশের ওই পরিবেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যদের মধ্যকার কেউ সেদিন দায়িত্বে থাকলে এটি ঘটতে পারত বলে মনে হয় না। দেশ পুনর্গঠনের অজুহাত দিয়ে ছাত্রলীগের প্রার্থীদেরই হয়তো তাঁরা কোনো না কোনো কৌশলে জিতিয়ে আনতেন। কিন্তু উপাচার্যের পদকে অধ্যাপক ড. মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী কখনো দলীয় ভিত্তিতে দেখেননি—দেখেছেন শুদ্ধ জ্ঞানচর্চা ও গবেষণাকাজে নেতৃত্বদানের সুযোগ হিসেবে।

একইভাবে ১৯৭৩-৭৫ সময়কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. আবদুল মতিন চৌধুরী (বোস অধ্যাপক নামে খ্যাত)। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর যিনি ‘আমার নেতাকে ওরা মেরে ফেলল’ বলে শিশুর মতো হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন। কিন্তু তাঁর উপাচার্যত্বেরকালে ছাত্রলীগকে তিনি কোনোরূপ বিশেষ সুবিধা দিয়েছিলেন, ইতিহাসে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। আমাদের এ সময়ের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা কি ঘুণাক্ষরেও এরূপ দৃঢ়চিত্ত প্রদর্শনের মানসিক সামর্থ্য রাখেন? স্বাধীনতা-উত্তরকালের এই দুই উপাচার্যসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ববর্তী উপাচার্যদের দিকে তাকালে বস্তুতই শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও মমতায় মানুষের মাথা অবনত হয়ে আসে। সেই সময়কার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও কমবেশি এ রকমই ছিল।

কিন্তু এখন? এখন কারা নিযুক্ত হচ্ছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে? তাঁরা কি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেরা শিক্ষাবিদ, দক্ষ প্রশাসক—নাকি সরকারি দলের একনিষ্ঠ সমর্থক? জবাব হচ্ছে, তাঁদের অধিকাংশ এর কোনোটিই নন। তাঁরা শিক্ষক হিসেবে যেমন অগ্রবর্তী সারির নন, তেমনি দক্ষ নন প্রশাসক হিসেবেও। এমনকি তাঁদের কারও কারও অতীত ইতিহাস, তাঁরা যে সরকারি দলের একনিষ্ঠ সমর্থক, সেই প্রমাণও বহন করে না। তাহলে তাঁরা কারা? আসলে তাঁদের অধিকাংশই হচ্ছেন তোষামোদে ও চাটুকার এবং বিশেষ সুবিধা হাসিলের উদ্দেশ্যে সরকারি দলের ছত্রচ্ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণকারী ব্যক্তি, যাঁরা উপাচার্যের মতো একটি সম্মানজনক পদ দখল করে উচ্চতর সামাজিক মর্যাদা অর্জনের পাশাপাশি বৈষয়িক সুবিধা অর্জনের হীন চেষ্টায় লিপ্ত। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, তাঁদের মধ্যকার একটি বড় অংশই আদর্শিকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক নন। নিছক উপাচার্য হওয়ার জন্যই তাঁরা রাতারাতি রাজনৈতিক পরিচয় পাল্টে সরকারি দলের খাতায় নাম লিখিয়েছেন এবং সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ করে’ উপাচার্যের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন।

প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে শুধু উপাচার্যই নয়, অন্যান্য প্রশাসনিক পদে বসার জন্যও রাতারাতি খোলস পাল্টানোর এ রীতি বেশ জোরেশোরেই চালু আছে।

বলা হচ্ছে, উপাচার্য হওয়ার জন্য শুধু পাণ্ডিত্য থাকলে হবে না, নেতৃত্বের গুণাবলিও থাকতে হবে। খুবই ন্যায্য কথা। কিন্তু বাস্তবে এখন নেতৃত্বের এমন সব গুণাবলিসম্পন্ন ব্যক্তিরাই উপাচার্য পদে নিয়োগ পাচ্ছেন, যাঁদের দু-একজন শুদ্ধ ও প্রমিত ভাষায় কথাও বলতে পারেন না। আর প্রায়ই এমন হালকা সব কথা তাঁরা বলেন, যেসব কথা শুনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তো বটেই, বাইরের সাধারণ মানুষও প্রকাশ্যে হাসিঠাট্টা করে। এই হচ্ছে তাঁদের নেতৃত্বের ‘গুণাবলি’। আর একাডেমিক যোগ্যতাতে তাঁরা শুধু পিছিয়েই নেই; বরং কারও কারও ব্যাপারে এমন প্রশ্নও উঠেছে যে প্রয়োজনীয় প্রকাশনা ও গবেষণাকর্ম ছাড়া এ পর্যন্ত তাঁরা এলেন কেমন করে? আসলে নেতৃত্বের গুণাবলি নয়; বরং শতভাগ স্তাবক, চাটুকার ও ব্যক্তিবিশেষের পছন্দের লোকদের, যাঁরা রাজনৈতিকভাবেও পরীক্ষিত নন, নিয়োগ দিতে গিয়েই এমনটি ঘটেছে। দল-সমর্থক লোকও যদি দায়িত্বশীল ও ব্যক্তিত্ববান হন, তাহলে দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় কোনোই সমস্যা হয় না, যদিও এ ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনা না থাকাটাই উত্তম।

উপরিউক্ত পরিস্থিতিতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের যাঁরা বাছাই করেন, তাঁদের বিনীতভাবে বলার কথা এটাই যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের জাতীয় সম্পদ। ফলে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে এমন শিক্ষকদেরই সেখানে উপাচার্য পদে নিয়োগ দিন, যাঁরা দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে যথাযথ নেতৃত্ব দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়টিকে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টির আলয় হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। জাতীয় সংসদের ২৯ মার্চের উল্লিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) উপাচার্য নিয়োগে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক ও সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান ইউজিসি যদি ৫০ বছর পরে এসে বলে এটি থাকা দরকার, তাহলে কাজটি হবে কবে? তারপরও তাদের ধন্যবাদ যে বিলম্বে হলেও তারা বিষয়টি উপলব্ধি করেছে।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যদের অধিকাংশের জন্য লজ্জায় মানুষের মাথা প্রকৃতপক্ষেই নত হয়ে আসছে। এমনিতেই দেশে শিক্ষার মানগত কোনো উন্নতি নেই। তার ওপর যেটুকু আছে, তা-ও যদি ওই উপাচার্যদের অযোগ্যতা, অদক্ষতা, দুর্নীতি ও নেতৃত্বহীনতার কারণে ধসে পড়ে, তাহলে বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ের একেবার তলানিতে থাকা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি উদ্ভাবনা ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টির ক্ষেত্রে আগামী দু-তিন দশকের মধ্যে আসলেই কোনো অবদান রাখতে পারবে?

আবু তাহের খান, পরিচালক, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সংস্থা (বিসিক) শিল্প মন্ত্রণালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত