Ajker Patrika

দুদকের কর্মকর্তাকে বরখাস্তের প্রতিবাদে সহকর্মীদের মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ৫৬
দুদকের কর্মকর্তাকে বরখাস্তের প্রতিবাদে সহকর্মীদের মানববন্ধন

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজ দুপুর ১২টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে তাঁরা মানববন্ধন করেন। এর আগে যে ধারায় শরীফকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, সেই বিতর্কিত ধারা বাতিলের দাবিতে দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেনের একটি স্মারকলিপি পেশ করেন তাঁরা। চাকরিচ্যুতির মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছে বলেও দাবি করা হয় সহকর্মীদের পক্ষ থেকে। 

মানববন্ধনে উপস্থিত দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘গতকাল ৫৪ (২) ধারা অনুযায়ী আমাদের এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা ইনভেস্টিগেশন-ইনকোয়ারি করতে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কাজ করতে গিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। আমাদের সম্মানিত কমিশন যৌক্তিকতাসহকারে আমাদের সমস্যাগুলো দেখবেন। আমরা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হই, সেগুলো সচিব স্যারের কাছে জানিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, খুব দ্রুত আমাদের বিষয়গুলো সমাধান করবেন।’ 

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘একটি ক্রিমিনাল প্রসিডিউর বেইসড অন ইনভিজিলেশন অ্যান্ড ইনকোয়ারি চাইলেই তাড়াহুড়া করে দেওয়া যাবে না। আমরা চাইছি এই জিনিসগুলো তারা বুঝে সমাধান দিক। আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধাসহ অন্যান্য বিষয়ে আমাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন।’ 

সচিবের কাছে পেশ করা স্মারকলিপিতে প্রধান বিষয় ছিল—অসাংবিধানিকভাবে ও মাননীয় বিজ্ঞ আদালতে বিবেচনাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন কর্মচারী (চাকরি) বিধিমালা, ২০০৮-এর বিতর্কিত ৫৪ (২) ধারায় উপসহকারী পরিচালক মো. শরিফ উদ্দীনকে চাকরি থেকে অপসারণের আদেশ বাতিল করার দাবি। 

স্মারকলিপিতে বলা হয়, আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মচারী হিসেবে দুর্নীত দমন কমিশনের ভিশন-মিশন বাস্তবায়নের জন্য দুর্নীতিবাজ নির্বিশেষে আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করি। যার নজির রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন ও তার পরিপ্রেক্ষিতে বিচার চলমান রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ এর ৫৪ (২) নম্বর বিধিতে বলা হয়েছে-“এই বিধিমালায় ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ না দর্শাইয়া কোনো কর্মচারীকে নব্বই দিনের নোটিশ প্রদান করিয়া অথবা নব্বই দিনের বেতন পরিশোধ করিয়া তাহাকে চাকরি হইতে অপসারণ করিতে পারবে। ” 

অন্যদিকে সংবিধানের ১৩৫ (২) নম্বর অনুচ্ছেদে লেখা আছে “অনুরূপ পদে (প্রজাতন্ত্রের অসামরিক পদে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে তাহার সম্পর্কে প্রস্তাবিত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাইবার যুক্তিসংগত সুযোগ দান না করা পর্যন্ত তাহাকে বরখাস্ত, অপসারিত বা পদাবনমিত করা যাইবে না। ” 

স্মারকলিপি আরও বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন কর্মচারী (চাকরি) বিধিমালা, ২০০৮ এর ৫৪ বিধিটি চ্যালেঞ্জ করে মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন নম্বর ১৪২৪ / ২০১১ দায়ের করা হলে গত ১৭ অক্টোবর, ২০১১ তারিখ হাইকোর্ট বিভাগ দুদক চাকরি বিধিমালার ৫৪ বিধিকে অসাংবিধানিক হিসেবে ঘোষণা করে। উক্ত রায়ের বিপক্ষে আপিলের পর আপিল আদালত ১০ নভেম্বর, ২০১৬ তারিখে আপিল খারিজ করে হাইকোর্ট বিভাগের ৫৪ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণাটি বহাল রাখে। অর্থাৎ ৫৪ বিধি অনুযায়ী দুদকের কোনো কর্মচারীকে সংবিধানের ২৭ / ২৯ / ২১ ও ৪০ অনুচ্ছেদ বলে প্রদত্ত মৌলিক অধিকার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হিসেবে ব্যাখ্যা প্রদানের সুযোগ না দিয়ে কাউকে ৯০ দিনের বেতন দিয়ে স্থায়ী রাজস্ব খাতভুক্ত চাকরি থেকে অপসারণের অবকাশ ছিল না। কিন্তু কমিশন আপিল বিভাগের উক্ত সিদ্ধান্তের বিপরীতে ৩২ / ২০১৭ সিভিল রিভিশন দায়ের করলে একতরফা (রিটকারীর প্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে) শুনানি করে গত ২৮ নভেম্বর, ২০২১ তারিখে হাইকোর্টের আদেশটি স্থগিত করে এবং বিষয়টি বিজ্ঞ উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন চাকরি বিধিমালা ২০০৮ এর ৫৪ বিধির কার্যকারিতার বিষয়টি উক্ত আদালতে বিচারাধীন থাকাবস্থায় দুদকে ২০১৪ সালে যোগদানকৃত একজন কর্মকর্তাকে কোনোরূপ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এবং সে কোনোরূপ অপরাধ করেছে কি-না সে বিষয়টি তাঁকে অবহিত না করে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখের স্মারক নম্বর: ৭৪৯০ মূলে ৫৪ (২) বিধি প্রয়োগের মাধ্যমে উপসহকারী পরিচালক মো. শরিফ উদ্দীনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়, যা অসাংবিধানিক, বেআইনি ও সাধারণ আইনের আওতায় মানবাধিকার পরিপন্থী। 

দুদক উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন অপসারণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাস্মারকলিপিতে বলা হয়, মো. শরিফ উদ্দীন চট্টগ্রামে দক্ষ ও পরিশ্রমী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তিনি তাঁর চট্টগ্রাম অফিসে কর্মরত থাকাকালীন ৫২টি মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়া তিনি বিজ্ঞ আদালতের বিচারার্থে ১৫টি চার্জশিট দাখিল করেন। তিনি কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা উদ্ঘাটনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। শরীফ উদ্দিনের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কারণে সংক্ষুব্ধ পক্ষসমূহ বিভিন্ন সময়ে তাঁকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। ৫৪ (২) বিধি প্রয়োগের মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তাঁকে চাকরি থেকে অপসারণ প্রকারান্তরে দুর্নীতিবাজদের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করার সমার্থক। 

মানববন্ধনে উপসহকারী পরিচালক মো. শরিফ উদ্দীনের দুর্নীতি দমন কমিশনের অসাংবিধানিক ও অমানবিক অপসারণ আদেশ প্রত্যাহার ও দুর্নীতি দমন কমিশন কর্মচারী (চাকরি) বিধিমালা, ২০০৮ এর ৫৪ (২) বিধি বাতিলপূর্বক কমিশনের কর্মকর্তাদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণের অনুরোধ জানানো হয়। 

শরীফ পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম-২ এর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে ছিলেন। গত বছরের ১৬ জুন চট্টগ্রাম থেকে তাঁকে পটুয়াখালী বদলি করা হয়। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ সই করা এক প্রজ্ঞাপনে তাঁকে অপসারণ করা হয়। 

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ -এর বিধি ৫৪ (২) তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরি হতে অপসারণ করা হলো। তিনি বিধি মোতাবেক ৯০ দিনের বেতন এবং প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা (যদি থাকে) পাবেন। কমিশনের অনুমোদনক্রমে জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো। যা ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকে কার্যকর গণ্য হবে। 

চট্টগ্রাম কার্যালয়ে কর্মরত থাকাকালে বেশ কিছু বড় দুর্নীতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপরই একাধিক মহলের রোষানলে পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে।

সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি পরিবারসহ হত্যার হুমকি পান শরীফ। পরিবারসহ হত্যার হুমকি পাওয়ায় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আইয়ুব খান চৌধুরী ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে সিসিটিভির ফুটেজসহ চট্টগ্রামের খুলশী থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন।

কক্সবাজারে কয়েকটি মেগা প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ কয়েক শ কোটি টাকা আত্মসাৎ, চট্টগ্রাম মেডিকেলে অনিয়ম-দুর্নীতি, কর্ণফুলী গ্যাসে নিয়োগ দুর্নীতি, এনআইডি জালিয়াতি, রোহিঙ্গাদের ভোটার করা নিয়ে দুর্নীতি, ইয়াবা কারবারিদের সম্পদ গোপন ইত্যাদি। এসব মামলার সূত্র ধরেই আলোচিত-সমালোচিত হন শরীফ। অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নানামুখী চেষ্টায় তাঁকে চট্টগ্রাম থেকে বদলি করা হয় পটুয়াখালী। এরপর আটকে দেওয়া হয়েছিল পদোন্নতিও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাড়ির পাশে গর্তের পানিতে ডুবে প্রাণ গেল দুই শিশুর

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি 
এআই দিয়ে বানানো প্রতীকী ছবি
এআই দিয়ে বানানো প্রতীকী ছবি

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় বাড়ির পাশে গর্তে জমা থাকা পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত শিশুরা হলো মোহাম্মদ নোমান (৫) ও জান্নাতুল ফেরদৌস (৫)। নোমান ওই গ্রামের আব্দুল মাবুদের ছেলে ও জান্নাতুল বেলাল উদ্দিনের মেয়ে।

এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে সাহারবিল ইউপি সদস্য আজিজুল হক বলেন, আব্দুল মাবুদ কিছুদিন আগে বাড়ির পাশ থেকে গভীর গর্ত খুঁড়ে মাটি নেন। পরে গর্তে পানি জমে থাকে। আজ দুপুরে শিশু নোমান ও জান্নাতুল উঠানে খেলা করার সময় গর্তের পানিতে পড়ে যায়। পরে তাদের উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবরটি শুনে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। মৃত দুই শিশুর লাশ নিজেদের বাড়িতে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলি: ফয়সালকে ভারতে পালাতে সহায়তাকারী দুজন ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার সিবিয়ন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম। ঢাকার সিএমএম আদালত ভবনে। ছবি: সংগৃহীত
সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার সিবিয়ন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম। ঢাকার সিএমএম আদালত ভবনে। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান অভিযুক্ত ফয়সাল করিম মাসুদকে অবৈধ পথে ভারতে পালাতে সহায়তার অভিযোগে গ্রেপ্তার দুজনকে ৩ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম রিমান্ডে নেওয়ার এই নির্দেশ দেন।

দুই আদিবাসী হলেন সিবিউন দিউ ও সঞ্জয় চিসিম। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁদের আদালতে হাজির করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের ৩ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাট থেকে দুইজনকে আটক করে দিবি পুলিশ। আজ এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।

এর আগে বুধবার মাইক্রো বাসে করে ফয়সালকে পালাতে সহযোগিতা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার নুরুজ্জামানকে তিন দিন ও মঙ্গলবার ফয়সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবির ওরফে দাঁতভাঙা কবিরকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এ মামলায় ফয়সাল করিমের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপু এবং বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে গ্রেপ্তারের পর গত সোমবার রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তার আগের দিন একটি মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। বুধবার তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স-কালভার্ট রোডে বিজয়নগর এলাকায় শরিফ ওসমান বিন হাদি একটি রিকশায় যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল করে আসা দুজনের একজন তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলিতে হাদি মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। ঘটনার পরপর তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে এভার কেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়েছে।

এদিকে গত রোববার রাতে ফয়সালকে আসামি করে পল্টন থানায় মামলা দায়ের করেন ইনকিলাব মঞ্চের যুগ্ম সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের।

উল্লেখ্য, এ মামলায় ফয়সালের মা-বাবা গত বুধবার আদালতে জবানবন্দি দিয়ে ফয়সালকে পালাতে সহযোগিতার কথা স্বীকার করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঋত্বিক ঘটকের পৈতৃক ভিটা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের রাজশাহীর পৈতৃক বসতভিটা সংরক্ষণ ও ভাঙচুরের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের রাজশাহীর পৈতৃক বসতভিটা সংরক্ষণ ও ভাঙচুরের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের রাজশাহীর পৈতৃক বসতভিটা সংরক্ষণ ও ভাঙচুরের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। পরে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগরের সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে রাজশাহীর সচেতন নাগরিকদের উদ্যোগে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ঋত্বিক কুমার ঘটক ক্ষণজন্মা বাঙালি চলচ্চিত্রকারদের অন্যতম, যাঁর সৃষ্টিশীল হাত ধরে বাংলা চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্মানজনক অবস্থান লাভ করেছে। এমন একজন মহান চলচ্চিত্রকারের স্মৃতি বহনকারী বসতভিটা রাজশাহী শহরের মিঞাপাড়ায় অবস্থিত হলেও তা সংরক্ষণের পরিবর্তে ধ্বংসের মুখে। এটি জাতির জন্য লজ্জাজনক বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা।

বক্তারা জানান, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ঋত্বিক ঘটকের ওই বসতভিটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা ও আইসিটি) নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, বিষয়টির চূড়ান্ত সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বসতভিটাটি আগের অবস্থায় সংরক্ষিত থাকবে। অথচ সেই আশ্বাস উপেক্ষা করে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ পুনরায় সেখানে থাকা ঋত্বিক ঘটকের শেষ স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টা চালায়।

বক্তারা জানান, বসতভিটার ঐতিহ্যবাহী ইটগুলো শহরের অদূরে খড়খড়ি বাইপাস এলাকায় শাহ মখদুম নার্সিং কলেজের পাশে একটি পুকুর ভরাটের কাজে ফেলে দেওয়া হয়। বক্তারা বলেন, একই সঙ্গে এখানে দুটি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। একদিকে ঐতিহ্য ধ্বংস, অন্যদিকে পরিবেশবিরোধীভাবে পুকুর ভরাট। তাঁরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

মানববন্ধনে রাজশাহীর চলচ্চিত্র সংসদকর্মী এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও যুব সংগঠনের সদস্যরা বক্তব্য দেন। পরে পাঁচ দফা দাবি-সংবলিত স্মারকলিপি ও প্রস্তাবনা রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পাঠানো হয়। একই দাবিগুলো উল্লেখ করে আরেকটি স্মারকলিপি রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কাছেও দেওয়া হয়। পাশাপাশি স্মারকলিপির অনুলিপি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।

এর আগে ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির নির্বাহী সদস্য মো. আতিকুর রহমান আতিকের সঞ্চালনায় ও সভাপতি আহসান কবীর লিটনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদ হোসেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক নাদিম সিনা, আদিবাসী যুব পরিষদ রাজশাহীর সভাপতি উপেন রবিদাস প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আরাকান আর্মির জন্য নেওয়া হচ্ছিল ১৬০০ বাউন্ডলি, গ্রেপ্তার ৩

কক্সবাজার প্রতিনিধিনাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধি  
জব্দ বাউন্ডলিসহ গ্রেপ্তারকৃতরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জব্দ বাউন্ডলিসহ গ্রেপ্তারকৃতরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের রামুতে একটি মিনিট্রাকে তল্লাশি করে পুলিশ ১ হাজার ৬০০টি বাউন্ডলি (সামরিক পোশাকে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের ম্যাগাজিন রাখার বেল্ট) উদ্ধার করেছে। এসব বাউন্ডলি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির জন্য নেওয়া হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া এ তথ্য জানান।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের কম্বনিয়া এলাকার নুরুল আলমের ছেলে মো. শাহজাহান (২৫), একই ইউনিয়নের আশারতলী এলাকার মো. বদিউজ্জামানের ছেলে মো. ইলিয়াছ (১৯) ও ঘিলাতলী এলাকার এম এ সামাদের ছেলে আতিকুর রহমান (২৫)।

ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের চা-বাগান এলাকা দিয়ে যানবাহনে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছে সরবরাহের জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের সরঞ্জাম পাচার করা হবে বলে খবর পায় পুলিশ। পরে চা-বাগান এলাকায় একটি রেস্তোরাঁর সামনে রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কে পুলিশের একটি অস্থায়ী তল্লাশিচৌকি বসানো হয়। একপর্যায়ে চট্টগ্রাম দিক থেকে আসা নাইক্ষ্যংছড়িগামী একটি মিনিট্রাক সেখানে পৌঁছালে থামার সংকেত দেয় পুলিশ। এ সময় গাড়িতে থাকা সন্দেহজনক তিনজন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা চালান। ধাওয়া দিয়ে পুলিশ তাঁদের আটক করতে সক্ষম হয়। পরে মিনিট্রাকটি তল্লাশি করে প্লাস্টিকের সাদা চটের ৩২টি ছোট বস্তা পাওয়া যায়। বস্তাগুলো খুলে ভারী আগ্নেয়াস্ত্রের ম্যাগাজিন রাখার ১ হাজার ৬০০টি বাউন্ডলি পাওয়া যায়। মিনিট্রাকটি জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ওসি বলেন, উদ্ধার করা ম্যাগাজিন রাখার বাউন্ডলিগুলো নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির কাছে পৌঁছে দিতে নিয়ে যাচ্ছিল। আটকদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে রামু থানায় মামলা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত