শ্রীলঙ্কার শিক্ষাব্যবস্থা ও জীবনযাত্রার গড় মান এখনো দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় ভালো। কিন্তু দেশটির আর্থিক অবস্থা যে দ্রুতগতিতে খারাপ হচ্ছে, তাতে দেশটি ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কিনারে পৌঁছেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ এতটাই শুকিয়ে গেছে যে বিদেশি ঋণ পরিশোধ ও নিত্যপণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের সরকার।
আল জাজিরা জানায়, শ্রীলঙ্কার বর্তমান সমস্যার মূল কারণ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ। চলতি বছরের মধ্যেই দেশটিকে ৭৩০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এটা করলে বৈদেশিক আমদানি মেটানোর মতো পর্যাপ্ত ডলার থাকবে না দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। ফলে রান্নার গ্যাস, অন্য জ্বালানি, গুঁড়ো দুধ, ওষুধ ইত্যাদি আমদানিতে ভয়াবহ ঘাটতি দেখা দেবে, যা দেশটিকে সামাজিক বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিতে পারে। আর চলতি বছর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ না করলে, পরবর্তী সময়ে স্বল্প সুদে ঋণ পেতে সমস্যা হবে।
সর্বশেষ তথ্যমতে, গত ডিসেম্বরে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৬০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে, যা দেশটির ইতিহাসে সর্বনিম্ন। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশের অর্থনীতিকে সংকটমুক্ত বলার জন্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা জমা থাকতে হয়। কিন্তু শ্রীলঙ্কার যা, আছে তাতে ঠিকমতো এক মাস চলাও অসম্ভব।
সংকট মোকাবিলার নগদ সমাধান হিসেবে, ডিসেম্বরে চীনা মুদ্রা ইয়ুয়ানের সঙ্গে দেড় শ কোটি ডলার মূল্যের শ্রীলঙ্কান রুপি বিনিময় করেছে দেশটি। কিন্তু এটা তেমন একটা ফল দেবে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। কারণ, বিনিময়ে দেশটি চীন থেকে যে নগদ ইয়ুয়ান বা অন্য সম্পদ নিয়েছে, তা চাইলেই মার্কিন ডলারে রূপান্তরিত করা যাবে না। এতে অন্য জটিলতা আছে।
অন্যদিকে, ৫০ কোটি ডলারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের জন্য গত সপ্তাহে নিজেদের রিজার্ভ স্বর্ণের অর্ধেক ভেঙেছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তা ছাড়া গত ডিসেম্বর থেকে দেশটির যাবতীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকে প্রতি সপ্তাহে নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ২৫ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে দেশটির আমদানিকারকদের সক্ষমতা দিন দিন ফুরাচ্ছে।
বিশ্লেষণ সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
- কর্তৃত্ববাদী দেশের মানুষের মধ্যে কেন কৌতুকপ্রবণতা বাড়ে
- মোহাম্মদ বিন সালমানের সংস্কারে কী পাচ্ছে সৌদি আরব
- রাশিয়া-পশ্চিম দ্বন্দ্বে নতুন উপাদান কি কাজাখস্তান
- ট্রাম্প গেলেও ‘ট্রাম্পিজম’-এর খপ্পরে যুক্তরাষ্ট্র
- দিনে করোনায় গড় মৃত্যু ৩৮, আর সড়কেই ঝরছে ১৬ প্রাণ
- ওমিক্রনেই কি করোনার শেষ?
- পুতিনের ইউক্রেন অভিযান কি জানুয়ারিতেই
- নতুন কালা কানুনে উত্তাপহীন হংকংয়ের নির্বাচন
- সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে কী করেছিল জাপান
- নজরদারি সফটওয়্যার থেকে মুক্তির উপায় কী
- পরবর্তী আফগানিস্তান হতে চলেছে যে অঞ্চল
মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে