Ajker Patrika

সত্যি, বাঘ আছে পাহাড়ে

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২১, ১৯: ৫৮
সত্যি, বাঘ আছে পাহাড়ে

নভেম্বর, ২০২০। বান্দরবান। সন্ধ্যা নেমেছে দার্জিলিংপাড়ায়। সৌরবিদ্যুতে জ্বলা বাতির মিটমিটে আলোয় খাবারের ঘরটার অন্ধকার কাটেনি। অদ্ভুত এক আলো-আঁধারির খেলা কামরাজুড়ে। পাড়ার কারবারি গল্পের ঝাঁপি মেলে দিলেন। ঘটনাটা অন্তত তিন দশক আগের। রাত গভীর হয়েছে। ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেছে পাড়ার মানুষগুলো। হঠাৎ একটা শব্দে ঘুম টুটে যায় কারবারির। গোয়ালঘরের দিক থেকে আসছে আওয়াজটা। দৌড়ে ঘরের দরজা খুলে বের হলেন। দেরি হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় ষাঁড়টাকে নিয়ে গেছে, বাঘে।

তখন তরুণ বয়স কারবারির। রক্ত গরম। ভোরের দিকে বন্দুক নিয়ে বের হয়ে পড়লেন। রক্তের ছাপ অনুসরণ করে গরুটার মড়ির খোঁজ পেয়ে গেলেন। তারপর ওত পেতে থেকে ওখানেই গুলি করে মারলেন বিশাল মদ্দা বাঘটাকে। ভাবছেন এ তো বহু পুরোনো গল্প! এখনো কি বাঘ আছে পাহাড়ে? তাহলে পরের দিনের ঘটনাটি শুনতে হবে।

সকালের নাশতা শেষে কেওক্রাডংয়ে উঠেই দেখা পাহাড়টির মালিক লালবমের সঙ্গে। দার্জিলিংপাড়ায় জেনেছিলাম বাঘের নতুন খবর মিলবে তাঁর কাছে। জিজ্ঞেস করতেই ঝেড়ে কাশলেন। আগের বছর, মানে ২০১৯-এ তাঁর বিশাল একটা গরু মারা পড়েছিল বাঘের আক্রমণে। লালাবমের বর্ণনা ঠিক হলে দূরের পাহাড়ে থাকে বিশাল বেঙ্গল টাইগার। শিকারের জন্য হানা দেয় মাঝেমধ্যে এদিকে। হেলিপ্যাডের ঠিক নিচেই মেরে খেয়ে গিয়েছিল গরুটাকে।

বাঘের চর্বি ও ভালুকের থাবা হাতে নিয়ে বান্দরবানের দুর্গম অঞ্চলের এক বাসিন্দা

টাইম মেশিনে চেপে পঞ্চাশ-ষাট বছর পিছিয়ে যাই চলুন। বাংলাদেশের বহু বনেই এদের রাজত্বের খোঁজ মেলে তখন। ঢাকার ধারের মধুপুরের জঙ্গলের কথা ভাবতে পারেন। সুসংয়ের জমিদার ১৯৪৫-৪৬ সালের দিকেও শালবনে বাঘ মারেন। মধুপুরের শেষ বাঘটি দেখার রেকর্ড জলছত্র মিশনের ফাদার ইউজিন হোমরিকের। সেটা ১৯৫৫-৫৬ সালের ঘটনা।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেটে গেলে সবুজ অরণ্য লাউয়াছড়া মন কেড়ে নেবে আপনার; মানে এই ইট-পাথরের পৃথিবীতে থেকেও মন বলতে কিছু যদি অবশিষ্ট থাকে। এই লাউয়াছড়ায় বাঘেরা মহাদর্পে ঘুরে বেড়াত। প্রকৃতিবিদ নওয়াজেশ আহমদ রাতে অরণ্যটিতে জিপে করে ভ্রমণের সময় বাঘটা দেখেন, সেটি গত শতাব্দীর ষাটের দশকের ঘটনা। ১৯৬২ সালে লাউয়াছড়ায় বাঘ মারেন এক পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা।

সিলেটের জঙ্গলে বাঘ শিকারের বর্ণনা দিয়েছেন এনায়েত মওলা তাঁর বইয়েও। ঘটনাটি কানাইঘাটের আশপাশে, পরিত্যক্ত নুনছড়া ও লুভাছড়া চা-বাগানের ধারে। সিলেট বিভাগের চুনারুঘাটের রেমা-কালেঙ্গার বনে গিয়েছি বেশ কয়েকবার। অভিজ্ঞ গাইড রুহুল আমিন ভাইকে নিয়ে বারবার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি বাঘ-চিতা বাঘেদের। বনের পুরোনো বাসিন্দা প্রবীণ ত্রিপুরাদের সঙ্গে কথা বলে যতটুকু মনে হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের পর আর বড় বাঘ দেখা যায়নি এই বনে। ওই সময় বড় একটা যুদ্ধ হয় কালেঙ্গার বনে। গোলাগুলির শব্দে বিরক্ত হয়েই কিনা কে জানে জঙ্গল ছাড়ে বাঘেরা, সীমান্ত পেরিয়ে চলে যায় কালা পাহাড়ের দিকে। আবদুর রহমান চৌধুরীর তিনটি বই মুগ্ধ করেছে আমাকে। সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের লাউর ও আশপাশের এলাকায় ১৯৩০-৪০ সালের দিকে মানুষখেকো বা গরুখেকো বাঘ ছিল তখন খুব সাধারণ ঘটনা।

এ ধরনের ফাঁদে ব্যবহার হয় বাঘসহ বড় জন্তু শিকারে

২০০৬-০৭ সালের ঘটনা। ভোরের কুয়াশা গায়ে মেখে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে তবেই পৌঁছাই মৌলভীবাজারের ফুলতলা চা-বাগান ও রাগনার জঙ্গলে। ওখানেই দেখা পাই আশি পেরোনো এক বৃদ্ধের। আগ্রহী শ্রোতা পেয়ে আলাপ শুরু করলেন স্মৃতিকাতরতা পেয়ে বসা ফোকলা দাঁতের বুড়ো। যুবা বয়সে তাঁর গরুর পালে বিশাল এক বাঘের আক্রমণের রোমহর্ষক বর্ণনা শুনলাম মুগ্ধ হয়ে। তাঁর সঙ্গে আমিও যেন হাজির হয়ে গিয়েছিলাম সেখানে। বাধা পেয়ে ক্রুদ্ধ বাঘটা পালের চার-পাঁচটা গরুকে মেরে রেখে যায়। ভাগ্যগুণে বেঁচে যান গল্প বয়ানকারী।

এবার একটু চট্টগ্রামের দিকে যাওয়া যাক। বাঘ বিশেষজ্ঞ খসরু চৌধুরীর এক লেখায় ১৯৫৯ সালে কাপ্তাইয়ের বনে শিকার করা একটা বাঘের ছবি দেখেছিলাম। শিকার করেছিলেন একজন মারমা। কাপ্তাইয়ে গিয়ে খুঁজে বের করি শিলছড়ি মারমাপাড়ায় ওই শিকারির ছেলেকে। ছবিটা দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন পাড়ার মানুষেরা। এখনো কাপ্তাইয়ের গভীর জঙ্গলে কাঠ কাটতে যাওয়া কাঠুরেরা হঠাৎ বড় বাঘের মুখোমুখি হয়ে যাওয়ার কথা বলেন। তবে এতে তিলকে তাল বানানোর সম্ভাবনাই বেশি।

চট্টগ্রামের বাঘের অবস্থার কিছুটা চিত্র পেয়েছি এরশাদ উল্লা খানের ‘চট্টগ্রামের শিকার কাহিনী’ বইয়ে। ১৯৫৫ সালে চুনতির ওহাইদ্যাঘোনায় বাঘ শিকারের বর্ণনা করেছেন লেখক। কক্সবাজারের হিমছড়িতে আস্তানা গাড়া বিশাল আকারের এক বাঘের কাহিনিও শুনিয়েছেন। ‘বড় বাইঘ্যা’ নামে পরিচিত ছিল ওটা। ঘটনাটা গত শতকের পঞ্চাশের দশকের। ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে রাঙামাটির নানিয়ারচরে মরাচেঙ্গির ধূর্ত এক বাঘের গল্পও আছে বইটিতে।

২০১৬ সালে মাতামুহুরি রিজার্ভ থেকে তোলা বাঘের পায়ের ছাপের ছবি

ড. রেজা খানের ‘বাংলাদেশের বন্য প্রাণী’ (প্রথম খণ্ড) পড়ে জানতে পেরেছি, ১৯৮১ সালে গারো পাহাড়ে, নেত্রকোনা ও কক্সবাজারের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জে তিনটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মারা পড়েছে। মাঝখানে এক বন কর্মকর্তা ফেসবুকে লিখেছিলেন, ১৯৯১-৯২ সালের দিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিশক রেঞ্জে বাচ্চাসহ বাঘিনী দেখেছেন। শুনেছি শিশকে এখনো গভীর জঙ্গল আছে বেশ।

অরণ্য নিয়ে পড়া স্মৃতিচারণামূলক বইগুলোর মধ্যে আমার পছন্দের তালিকায় ওপরের দিকে আছে এনায়েত মওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’। কাপ্তাই বাঁধ তৈরির জন্য কাসালং রিজার্ভ ফরেস্টের গাছপালা কাটার মহাযজ্ঞের বর্ণনা পড়ে মনটা হু হু করে ওঠে। কাসালং রিজার্ভের মাইনি, মাহিল্লা—এসব এলাকায় বাঘ মারার কাহিনিগুলো পড়েও পুরো দিন মন খারাপ করে বসে থেকেছি। ১৯৫৭-৫৮ সালের দিকে বাঘগুলো মারা হয়।

বইটি আমাকে এতটাই মন্ত্রমুগ্ধ করে যে পরে কয়েকবার মাইনি, পাবলাখালী গিয়েছি। পাবলাখালী থেকে নৌকা রিজার্ভ করে কাসালং নদী ধরে মাহিল্লা পেরিয়ে যাওয়ার সময় মনে হচ্ছিল যেন এনায়েত মওলার সময়কার পরিবেশটা কল্পনার চোখে দেখতে পাচ্ছি। মাইনি বন বাংলোয় উঠে অবশ্য আশপাশে বনের ছিটেফোঁটা দেখিনি ২০১১ সালে। কিন্তু বাংলোর দেয়ালে টানানো হাতি খেদার ছবিসহ পুরোনো কিছু ছবি দেখে শরীরের রোম দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।

সাজেক। দূরে মিজোরামের পাহাড় রাজ্য। বাঘের আনাগোনার খবর মেলে এখানে

রাতে পুরোনো ভিজিটরস বুকটা দেখতে গিয়ে চোখ কপালে। খুঁজতে খুঁজতে ১৯৫০-৬০ সালের মধ্যকার একটি এন্ট্রিতে চোখ আটকে যায়। এক ইংরেজ ভদ্রলোক লিখেছেন, ‘আজ একটা বাঘিনী মেরেছি।’ বাঘটার মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত মাপও দেওয়া ছিল। ১৯৫০ সালের অক্টোবরে কাসালং রিজার্ভে বাঘ দেখেছেন বন বিভাগের একসময়কার ইন্সপেক্টর জেনারেল ইউসুফ এস আহমেদ।

১৯৫৭ সালের দিকে কাসালংয়ে এক বাঘিনীর সঙ্গে দুটো মোটামুটি বড় বাঘের বাচ্চা দেখেছিলেন এনায়েত মওলা। এর একটির লেজ ছিল কাটা। এর ঠিক দেড় বছরের মাথায় পার্বত্য চট্টগ্রামের তখনকার ডেপুটি কমিশনার আফজাল আগা একটি বড় বাঘ মারেন। পরে পরীক্ষা করতেই দেখা গেল ওটার লেজ কাটা। কিশোর বয়সী সেই লেজ কাটা বাঘটা বড় হয়ে মারা পড়েছে শিকারির হাতে, সন্দেহ নেই।

পুরোনো কাসুন্দি ঘাঁটা বাদ দিয়ে আবার একটু সাম্প্রতিক ইতিহাস ঘাঁটা যাক। দু-চারটা তথ্য-প্রমাণও হাজির করা যাক।

২০১১ সালে মৌলভীবাজারের জুড়ীর লাঠিটিলা জঙ্গলে গিয়েছিলাম ওই ভ্রমণের শেষপর্যায়। একজনের পর একজন হাঁটছে। আমি, দুই বন্ধু মিশুক, মেহেদী ও স্থানীয় দুই তরুণ। ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছে। পথ পিছল, তাই হুঁশিয়ার। হঠাৎ পথের বাঁক। ওপাশ থেকে কথাবার্তা কানে এল। দুই কদম এগোতেই তিনজন মানুষের মুখোমুখি। তাঁদের মাঝে মধ্যবয়সী একজনকে দেখিয়ে সঙ্গী এক তরুণ বললেন, ‘ইনি সফিক ভাই, শিকারি। জঙ্গলের খবর পাইবেন তাঁর কাছে।’

শক্তপোক্ত গড়ন। উচ্চতা মাঝারি, দুই চোখে ধারালো দৃষ্টি। শুরুতে সরকারি লোক মনে করে কথা বলতে চাইছিলেন না। তবে একটু পর আশ্বস্ত হয়ে মন খুলে বললেন। তারপরই বোমাটা ফাটালেন। গত বছরও (২০১০) বড় ডোরা বাঘ দেখেছেন। একটা ঝোপের মধ্যে বসে ছিল। তাড়াহুড়া করে সরে আসেন। সঙ্গে বন্দুক ছিল, ঝুঁকি নেননি এরপরও।

সাজেক এলাকার অরণ্যে জুমঘর

আমার দেখা সিলেট বিভাগের সেরা জঙ্গল লাঠিটিলা। তাই বলে ২০১০ সালে লাঠিটিলায় বেঙ্গল টাইগার? আরও কিছুক্ষণ জেরা করেও শিকারি সফিককে টলাতে পারলাম না। ততক্ষণে বুঝে গেছি, তাঁর ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম।

লাঠিটিলার বাঘের ব্যাপারটা আরও নিশ্চিত হই পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক মৃদুল ভাইয়ের (মনিরুল খান) সঙ্গে কথা বলে। তিনিও সেখানে ২০০৮ সালের বর্ষায় বাঘ দেখা যাওয়ার খবর পেয়েছিলেন স্থানীয় এক অভিজ্ঞ শিকারির কাছ থেকে। তবে তিনি সফিক নন। কীভাবে সম্ভব?

লাঠিটিলা পড়েছে পাথারিয়া হিল রিজার্ভের মধ্যে, যার বড় একটা অংশ ভারতের করিমগঞ্জে। ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করে যা দেখলাম, ভারতের পাথারিয়া অংশে বন্য হাতির পাল বিচরণ করলেও বাঘ সেখান থেকে হারিয়ে গেছে বলে মত গবেষকদেরও। তবে লাঠিটিলার সঙ্গে কিন্তু বাংলাদেশ অংশে পাথারিয়া পাহাড়ের আরও ছোট ছোট বনের সংযোগ আছে। যদ্দুর জানি লাঠিটিলা ধরে ধরে পৌঁছা যায় একেবারে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত লাগোয়া জঙ্গলেও। গোটা এলাকায় দু-একটা হলেও বাঘ বাসের মতো পরিবেশ ও খাবার কি নেই?

 

২০১১ সালের গ্রীষ্ম। বহুদিন পর কলেজজীবনের দুই জিগির দোস্ত মিশুক-মেহেদির সঙ্গে আবার দেখা। ঠিক করলাম সাজেক ভ্রমণের মাধ্যমে উদ্‌যাপন করব। শুনেছিলাম, ভারতের সেভেন সিস্টারের অন্তর্গত দুই রাজ্য মিজোরাম ও ত্রিপুরার সীমান্তের এই জনপদে না চাইলেই মেঘেরা এসে ধরা দেয়। তবে বর্ষা আর শরতে মেঘের দাপট বেশি। পল্লব ভাই ঘুরে গিয়েছিলেন। বললেন, সুযোগ পেলে সাজেকের কংলাকের কারবারির বাড়িতে ঢুঁ মারতে।

গ্রীষ্মের দাবদাহে পাহাড় বেয়ে কংলাকে উঠে হাঁপাতে লাগলাম। সবুজের একটু ঘাটতি আছে। তবে দূরে মিজোরামের লুসাই পাহাড়। পাহাড় রাজ্যে এখানে-সেখানে নীল ধোঁয়াদের বিস্তার, হালকা মেঘের জেঁকে বসার চেষ্টা দেখে শরীরটা জুড়িয়ে দিল।

সাজেকের পাহাড় রাজ্য

একটু পর পল্লব ভাইয়ের নির্দেশিত সেই কারবারির বাড়িতে গিয়ে শরবত জুটল। তাঁর বান্ধবীর মিজোরাম নিবাসী জামাইয়ের দর্শনও লাভ করি। ভাঙা ভাঙা বাংলায় গল্প করল আমার সঙ্গে। যখন জিজ্ঞেস করলাম বাঘ আছে? সে হাত দিয়ে মিজোরামের পাহাড় দেখিয়ে ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলল, ‘ওখানে অত্ত বড় বাঘ আছে।’ শুনেই অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল শরীরে।

পরে ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখলাম, ঠিক সাজেকের সীমান্তে ভারতের ব্যাঘ্র প্রকল্প ‘ডামপা রিজার্ভ’। একেবারে সীমান্ত বিন্দুতেই এর অবস্থান দেখাচ্ছে গুগল আর্থ। তখনই আমার প্রত্যাশা আকাশ ছুঁল। ভাবলাম বাঘ যে শুধু ভারতের বনেই নিজেকে আটকে রাখবে, এটা ভাবাটা একটু বাড়াবাড়িই হয়ে যাবে। ডামপার জঙ্গলের কোনো কোনো বাঘের টেরিটোরি বাংলাদেশ-ভারত মিলিয়ে হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। আবার আমাদের অংশেও দু-চারটির স্থায়ী আস্তানা থাকতে পারে।

তবে ২০১৮ সালে ভারতের বাঘ জরিপের ফলাফল মনটা একটু ভার করে দিল। ওই জরিপে মিজোরামের ডামপা টাইগার রিজার্ভে বাঘের অস্তিত্বের প্রমাণ মেলেনি। তবে একেবারে আশাহত হই না! ডামপায় না থাকলেই এ পাশের কাসালং-সাজেক রাজ্যে থাকবে না—এটা কীভাবে ধরে নিই? আশার সলতেটা দপ দপ করে জ্বলতে থাকে, যখন সাজেকে এই ২০২০ সালেও শুনি বাঘের তাজা কাহিনি। সেপ্টেম্বরে সাজেকের পাহাড় রাজ্য ভ্রমণের তৃতীয় রাতে কাশবন রেস্তোরাঁর ছাদে গেলাম খালাতো ভাই জাহিদের সঙ্গে। ওখান থেকে নাকি দিনের বেলা বাংলাদেশের পাহাড়গুলোর অসাধারণ ভিউ পাওয়া যায়। সাজেক সফরে আমাদের সঙ্গী শাওনের স্ত্রী নীরার পরিচিত এক রিসোর্ট মালিকের সঙ্গে আলাপ তখন। একাধিক রিসোর্ট আছে তাঁর।

লাঠিটিলার অরণ্য

রাতে পাহাড় কেবল আবছা চোখে পড়ছিল। অদ্ভুত এক আলো-আঁধারি। এর মধ্যে ওই রিসোর্ট মালিক ভদ্রলোক গল্প বলা শুরু করলেন। ‘এখন তো জন্তুরা এদিকে আসে না। দূরের পাহাড়ে আছে। কখনো কখনো শিকারিরা পাহাড়ের ভেতর থেকে বন্য জন্তু মেরে আনে। ওই তো কয়েক বছর আগেই একটা বাঘ শিকার হইছিল।’

‘বাঘ নাকি চিতা?’ কোনোভাবে ঢোক গিলে প্রশ্ন করলাম।

‘কী বলেন! রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। একটা দাঁতও আছে আমার কাছে।’ রীতিমতো চটে গেলেন হাসিখুশি ভদ্রলোকটি।

রিসোর্ট মালিক শিক্ষিত, বিদেশি সংস্থায়ও চাকরি করার অভিজ্ঞতা আছে। তাঁর ভুল হওয়ার কথা নয়। কষ্টের মধ্যেও এক চিলতে আশার আলো দেখলাম। কয়েক বছর আগে যেহেতু ছিল, এখনো নিশ্চয় দু-একটা আছে।

তবে জুনেই খুশির খবর মিলল। ডামপায় ক্যামেরা ট্র্যাপে বাঘের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে আবার। মে মাসে বাঘ ধরা দিয়েছে জাখুমা ডন নামের এক বন্য প্রাণীপ্রেমী এবং বন প্রহরীর ক্যামেরা ট্র্যাপে। ২০১৪ সালের পর আবার ডামপায় ক্যামেরা ফাঁদে বন্দী হলেন মহারাজা। এতে আরও নিশ্চিত হলাম কাসালং-সাজেক রাজ্যে বাঘের উপস্থিতির ব্যাপারে।

কাপ্তাই লেক। তারপরে পাহাড়, অরণ্য

২০১১ সালে মিশুক-মেহেদীসহ বড় মোদকের দিকে গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল সাঙ্গু রিজার্ভের গহিনে ঢুকে বাঘের খোঁজ করা। তিন্দু পেরিয়েছি তখন। রেমাক্রির ধারে। হঠাৎ কোনো এক পাহাড় দেখিয়ে আমাদের মারমা গাইড জানান, এখানে বাঘের সঙ্গে লুকোচুরি খেলেছিলেন। মানে একটা পাথরের ওপাশে লুকিয়ে বাঘকে আয়েশ করে গড়াগড়ি খেতে দেখেছিলেন ঘাসে। তাঁর অভিজ্ঞতা ১৯৮০-৮২ সালের।

এবার সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে বাঘ দেখার কিংবা বাঘের উপস্থিতির কিছু তথ্য-প্রমাণ হাজির করার চেষ্টা করছি। ২০১১ সালে বান্দরবানের তাজিংডং পাহাড়ের স্থানীয় এক শিকারির কাছে বাঘের চর্বি আবিষ্কার করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক মনিরুল খান। তাজিংডংয়ের আশপাশেই ওই বছর বাঘটি শিকার করা হয়। ওটার হাড়-চামড়া কিনে নিয়ে যান মিয়ানমারের শিকারিরা। ওই শিকারিই জানান, তারের শক্তিশালী এক ধরনের ফাঁদ পাতা হয় বাঘের জন্য। ওই ফাঁদে বাঘের পা আটকে যায়। তারপর অনাহারে সেখানে মারা পড়ে বিশাল জন্তুটি।

বড় মোদক এলাকায়ও ২০১০ ও এর আগে এক ত্রিপুরা শিকারি দুটি বাঘ মারার ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন। ওই সব বাঘের চামড়া-হাড়ও মিয়ানমার থেকে আসা শিকারিরা কিনে নিয়ে যান। ২০১০ সালে বাঘের দেখা মিলেছে কাসালং-সাজেকের জঙ্গলেও। তবে বাঘের ব্যাপারে প্রথম মোটামুটি নিশ্চিত প্রমাণ হাজির করে বন্য প্রাণী নিয়ে কাজ করা ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স। ২০১৬ সালে বান্দরবানের মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনে বাঘের পায়ের ছাপের ছবি তোলেন তাঁদের প্যারা বায়োলজিস্টরা। ছাপটি বেঙ্গল টাইগারের বলে নিশ্চিত করেন বিশেষজ্ঞরা।

মনিরুল ভাইয়ের সঙ্গে আলাপের সময় বলেন, সাঙ্গু-মাতামুহুরী সংরক্ষিত অরণ্য এবং সাজেক-কাসালংয়ে এখনো বাঘ থাকাটা খুব সম্ভব। খবর মেলে দুর্গম পাহাড়ের বাসিন্দাদের থেকে।

বান্দরবানের রেমাক্রি থেকে বড় মোদক যাওয়ার পথে মিলেমিশে সাঙ্গু নদী ও পাহাড়–জঙ্গলদীর্ঘদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের বন্য প্রাণী নিয়ে কাজ করছেন রাঙামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সুপ্রিয় চাকমা। তাঁর থেকেই জানতে পারি ২০০৫-০৬ সালের দিকে কাসালং সংরক্ষিত অরণ্যে পাহাড়ের দুর্গমের বাসিন্দাদের হাতে দুটি বাঘ মারা পড়ার কাহিনি। ২০১০-১১ সালে রাঙামাটির রাইংক্ষ্যং অরণ্যেও পেয়েছিলেন বাঘের খোঁজ।

আলীকদমের ভারত সীমান্তঘেঁষা এক পাড়ার বাসিন্দার সঙ্গে আলাপ হয় কিছুদিন আগে। আশপাশের বন-পাহাড় আর বুনো জন্তুদের খবর নিলাম। একপর্যায়ে বললেন, তাঁদের দুই পাড়ার মাঝখানে বিশাল এক জঙ্গল। দিনের বেলায়ও ওই অরণ্য পাড়ি দিতে ভয় হয়। সেখানেই আস্তানা বড় এক বাঘের। হঠাৎ হঠাৎ ডাক শোনা যায়। গত বছর পাড়ার দু-একজন দেখাও পেয়েছিল ভয়ংকর সুন্দর এই জন্তুর। তবে বাঘের সর্বশেষ খবরটা পাই সুপ্রিয় চাকমার কাছ থেকে। গত মাসেই কাসালং রিজার্ভে বাঘ দেখার খবর দিয়েছেন তাঁকে দুর্গম পাহাড়ে বাস করা মানুষেরা।

আজ বিশ্ব বাঘ দিবস। সবার নজরটা সুন্দরবনের বাঘেদের দিকেই। কিন্তু আমাকে টানে পাহাড়ের রহস্যময়, আধা বাস্তব-আধা কিংবদন্তির সেই বাঘেরাই। আমার বিশ্বাস, এখনো বাংলাদেশের একাধিক অরণ্য বাঘের ঠিকানা। হয়তো ওপাশের ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বন-পাহাড় মিলিয়ে কোনো কোনো বাঘ কিংবা বাঘিনীর রাজ্য! বেঁচে থাকুক পাহাড়ের বাঘ! যখন আমরা থাকব না পৃথিবীতে, তখনো দাপিয়ে বেড়াক ওরা রাঙামাটি-বান্দরবানের বন-পাহাড়ে। পাহাড়ের বাঘ, সুন্দরবনের বাঘসহ পৃথিবীর সব বাঘের জন্য ভালোবাসা।

আরও পড়ুন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দিল্লির বাতাসে দুর্যোগপূর্ণ দূষণ, ঢাকার বায়ুমান সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দিল্লির বাতাসের অবস্থা আবারও দুর্যোগপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আজ রোববার দূষিত শহর তালিকার শীর্ষে রয়েছে শহরটি। অন্যদিকে ঢাকার বায়ুমান আজ সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ বিশ্বের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে ৭ম স্থানে রয়েছে ঢাকা। আইকিউএয়ারের সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী, ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ১৫৪। যা নির্দেশ করে, ঢাকার বাতাসের অবস্থা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।

আজ ঢাকার যেসব এলাকায় বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি— গোড়ান, পেয়ারাবাগ রেল লাইন, বেচারাম দেউরি, কল্যাণপুর, দক্ষিণ পল্লবী, শান্তা ফোরাম, বেজ এজওয়াটার আউটডোর, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোকাররম বিল্ডিং।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

দীর্ঘদিন ধরেই দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে থাকা দিল্লির একিউআই স্কোর ৫০৭। যা এই শহরের বাতাসকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো মিশরের কায়রো (১৯১), পাকিস্তানের লাহোর (১৯১), ভারতের কলকাতা (১৮১) ও মুম্বাই (১৬৫)।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রৌদ্রোজ্জ্বল ঢাকায় তাপমাত্রা ১৬.৫

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৬
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে সকালবেলা রাজধানী ঢাকার আকাশ ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল। তাপমাত্রাও গতকাল শনিবারের চেয়ে বেড়েছে। আগের দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৯ থেকে সামান্য বেড়ে আজ সকাল ৬টায় ছিল ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৩ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১৪ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৪ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত
‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’—ধরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে আগামী ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন, শেরেবাংলা নগর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৩য় ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’ (Climate Justice Assembly 2025)।

বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক মোট ১৪টি দেশের প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, গবেষক, নীতিনির্ধারক ও সামাজিক আন্দোলনের নেতাদের উপস্থিতিতে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই জলবায়ু অধিকারভিত্তিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

সম্মেলনের আগে আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সমাবেশের ঘোষণা দেন অ্যাসেম্বলি কমিটির সদস্যসচিব শরীফ জামিল।

‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর লক্ষ্য, প্রস্তুতি, অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি অতিথিসহ দুই দিনের সেশন পরিকল্পনা, র‌্যালি এবং অন্যান্য আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুই দিনব্যাপী এই সমাবেশের প্রথম দিন ১৩ ডিসেম্বর সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ক্লাইমেট র‌্যালিতে অংশগ্রহণ এবং র‌্যালি শেষে ক্লাইমেট জাস্টিজ এসেম্বলি ২০২৫ উদ্বোধন করবেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও ধরার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এই উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

দিনব্যাপী প্রোগ্রামে ৩টি প্লান্যারি সেশন থাকবে। বাংলাদেশে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল থেকে আসা ভুক্তভোগীরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য দেবেন।

দ্বিতীয় দিনে ১৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় সমাবেশের প্রথম দিনের আলোচনার সারসংক্ষেপ, সুপারিশ ও করণীয় নিয়ে উপস্থাপন করা হবে ‘ড্রাফট অ্যাসেম্বলি ডিক্লারেশন’।

শরীফ জামিল বলেন, ‘প্রান্তিক এবং অপ্রান্তিক সকল মানুষের সচেতনতার মধ্য দিয়েই রূপান্তরের বাস্তবতার ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সেই লক্ষ্যে এই জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫।’

ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর আহ্বায়ক ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘পরিবেশ ও জলবায়ু বিশ্বব্যাপী হুমকির মুখে, ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের পরিবেশকর্মীরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছে; যা একটি মহৎ কাজ। কোনো কিছুর বিনিময়ে এ কাজের মূল্যায়ন সম্ভব নয়। কিন্তু এই ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থায়ন প্রয়োজন। আমার যে জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ করতে যাচ্ছি, তাতে অনেক সহযোগীর সহযোগিতা প্রয়োজন রয়েছে, তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সঠিক রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে জলবায়ু ন্যায্যতার ন্যায্য প্রতিফলন পাওয়া সম্ভব।

এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন কো-কনভেনর, ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর কো-কনভেনর এম এস সিদ্দিকি, সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল হক, শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিলা আজিজ এবং জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫ এর সমন্বয়ক এবং সহযোগী সমন্বয়কেরা।

জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫-এর আয়োজক ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা)। সহযোগী আয়োজক সিপিআরডি, কোস্ট ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিসেস, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, মিশনগ্রিন বাংলাদেশ, ব্রাইটার্স, ওএবি ফাউন্ডেশন, এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেবট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, অলটারনেটিভ ল কালেকটিভ, আর্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক, ফসিল ফুয়েল নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি ইনিশিয়েটিভ, ফসিল ফ্রি জাপান, গ্রিন কাউন্সিল, জাপান সেন্টার ফর আ সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি, এলডিসি ওয়াচ, মাইনস, মিনারেলস অ্যান্ড পিপল, নেটজভের্ক এনার্জিভেন্ডে, ফিলিপাইন মুভমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট ফর ইকুটেবল ডেভেলপমেন্ট, রিভারফক্স, সিডব্লিউটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল উত্তর-পূর্ব জাপান, সুনামি সতর্কতা জারি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাপানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আঘাত হেনেছে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। জাপান আবহাওয়া সংস্থার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৪ মিনিট (গ্রিনিচ মান সময় ২টা ৪৪ মিনিট) নাগাদ এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০ কিলোমিটার গভীরে। মূল কম্পনের পর বেশ কয়েকটি ছোট আফটারশকও অনুভূত হয়েছে।

ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে জাপানের পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাগুলোর জন্য সতর্কতা হিসেবে ‘সুনামি অ্যাডভাইজরি’ জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া সংস্থা সতর্ক করে জানিয়েছে, ঢেউগুলো প্রায় এক মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে, তাই উপকূলবাসীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে একই অঞ্চলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। এতে বহু বাসিন্দা আহত হয়েছেন। সর্বশেষ পরিস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে গুলি, নিহত অন্তত ১০

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত