ইশতিয়াক হাসান

কালাধুঙ্গির বোর নদীর তীরে বহু পুরনো এক কাঠের সেতু। এর এক কোণে দেয়ালে হেলান দিয়ে গল্প শুনছে আট থেকে আঠারো বছরের চৌদ্দজন ছেলে-মেয়ে। গল্পের বক্তা ড্যানশি নামের এক আইরিশ। সময়টা রাত। তাই চৌহদ্দির জঙ্গল থেকে কাঠকুটো এনে আগুন জ্বেলেছিল খুদে শ্রোতারা।
আগুন নিভে গেছে বহু আগে। সামান্য লালচে আঁচ আছে এখনো। তবে চারধারের ঘন অন্ধকারের ওপর এর কোনো প্রভাবই নেই। এই পরিবেশে যে গল্প জমে, তাই বলছে ড্যানশি। ভূতের গল্প। অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যে ভূত থেকে বানশিতে চলে যায় ড্যানশি। আয়ারল্যান্ডের বানশি। ড্যানশির মতে যা ভূত থেকেও ভয়ংকর। যে চৌদ্দটি ছেলে-মেয়ে গল্প শুনছিল, তাদের একজন ছোট্ট করবেট। পুরো নাম জিম করবেট।
কালাধুঙ্গি ছিল জিম করবেটদের শীতকালীন নিবাস। ওখানে রাতে বানশি, ভারতীয় গ্রামের ডাইনি চুরাইলের গল্প শুনে রোমাঞ্চিত হতো বালক করবেট।
করবেটের পরিবারের গ্রীষ্মকালীন নিবাস ছিল নৈনিতাল। কালাধুঙ্গি থেকে দূরত্ব মেরেকেটে পনেরো মাইল। নৈনিতালের কথা বললেই অবধারিতভাবে চলে আসে বিখ্যাত নৈনিতাল বা তাল হ্রদের কথা। হ্রদের পাশেই নৈনী দেবীর মন্দির। করবেট লিখে গেছেন মন্দিরের চার মাইলের মধ্যে বাঘ, চিতা বাঘ, সম্বার, ভাল্লুক সবই দেখেছেন। শুধু তাই নয়, এতটুকুন জায়গার মধ্যে এক শ আটাশ জাতের পাখি চিনেছেন তিনি।
২.
করবটে ও অ্যান্ডারসনের সঙ্গে পরিচয় আমার বলা চলে একইসঙ্গে। ক্লাস থ্রি কিংবা ফোরে পড়ি তখন। আব্বুর আলমারির নিচের অংশটা বইয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল। মানে, আমাদের কোনো বইয়ের আলমারি ছিল না। তো ওই আলমারিতেই খুঁজে পাই সেবা প্রকাশনি থেকে বের হওয়া শিকার ১, শিকার ২, শিকার ৩ ও জঙ্গল বইগুলো। স্বীকার করতেই হবে অদ্ভুত সুন্দর অনুবাদ করেছিলেন রকিব হাসান। সে হিসেবে আমার জঙ্গলপ্রেমের সূচনায় তাঁরও ভূমিকা আছে।
আমার বালক মনে তখনই শিকারিটির পাকাপোক্ত জায়গা হয়ে যায়। এই মুহূর্তে লিখতে বসে, মাথায় টুপি, রাইফেল হাতে সাদা চামড়ার একজন মানুষকে দেখতে পাচ্ছি মনের চোখে হিমালয় অঞ্চলের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে। তবে আশ্চর্য ব্যাপার, বই পড়তে পড়তে মানুষখেকো কিংবা গোখাদক বাঘ-চিতা বাঘগুলোর প্রতিও আশ্চর্য এক মায়া, ভালোবাসা জন্মায়। বলা চলে করবেটের পাশাপাশি তাঁর প্রতিপক্ষ বুনো প্রাণদেরও ভালোবেসে ফেলি।
বিশালাকার ওই বাঘটার কথা মনে পড়ছে সবার আগে। যেটাকে পুরোহিত পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মন্দিরের আশ্রিত বাঘ হিসেবে। করবেট কোনোদিনই ওটাকে মারতে পারবেন না চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন পুরোহিত। সত্যি করবেট ওটাকে মারতে না পারায় যে স্বস্তির অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে শরীরে মনে, তা এখনো অনুভব করতে পারছি যেন।
রুদ্রপ্রয়াগের চিতাটার কথা কীভাবে ভুলি! মানুষের আশপাশে থাকতে থাকতে মানুষের মতো কখনো আরও বেশি বুদ্ধিমান হয়ে উঠেছিল। ধূর্ততা ও ভীতিকর কাহিনি পড়তে পড়তে শিউরে উঠছি বারবার। কিন্তু করবেট যখন সত্যি মেরে ফেললেন চিতাটাকে, মনটা কেঁদে উঠেছিল। কেন কে জানে?
৩.
কেনেথ অ্যান্ডারসন আমাকে মুগ্ধ করেছেনে অরণ্য ও এর বুনো বাসিন্দাদের অদ্ভুত সুন্দর বর্ণনা দিয়ে। অন্যদিকে জিম করবেটের বইয়ে জীবন্ত হয়ে উঠেছিল অরণ্য এলাকার মানুষ। ছোট্ট একটি মেয়ের কথা মনে পড়ছে এখন। ওই যে মানুষখেকো বাঘের এলাকায় গরু নিয়ে অবলীলায় হেঁটে চলেছিল। বাবা তাকে একাকী পাঠিয়েছিলেন গরুটা চাচার কাছে দিয়ে আসতে। দুষ্টু গরুটাকে কীভাবে সামলাবে, তাই ছিল মেয়েটার একমাত্র চিন্তা, বাঘ মোটেই ছিল না তার মনে। নিরাপদে পৌঁছে দিতে করবেট ওর সঙ্গী হয়েছিলেন।
কানওয়ার সিং, বালা সিং, মোতির মতো চরিত্রগুলোও যেন করবেটের বর্ণনায় এখনো জীবন্ত আমার কাছে। তাঁর কারণেই গাড়োয়াল, হিমালয় অঞ্চলের মানুষ যেন বড় আপন হয়ে গিয়েছিল আমার।
৪.
পাহাড়ের মধ্যে একটা গভীর গর্ত। ওটায় বসে দুদিন আগে শিকার করা জানোয়ারটার মাংস খাচ্ছে জানোয়ারটা। একটা বাঘিনী। শিকারি বসে আছেন একটা জংলার মধ্যে। বাঘিনীর হাড় চিবোনোর শব্দ শোনা যাচ্ছে স্পষ্ট। তারপরই খাওয়া বন্ধ করল সে। হয়তো শিকারির নড়াচড়া নজর কেড়েছে। তবে তার চেয়ে বেশি সম্ভাবনা—পুরনো মড়িটা আর খেতে ভালো লাগছে না তার। পরের এক মিনিট কোনো নড়াচড়া নেই, নেই শব্দ। তারপরই ওটাকে দেখলেন শিকারি। গুহার পাড় বেয়ে উঠছে পাহাড়ে। কয়েকটি চারা গাছের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। তাই শরীর ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না। রাইফেল তুলে দুম করে গুলি করলেন। গুলি খেয়েই ঘুরে দাঁড়াল বাঘিনী। পাড় ধরে নেমে গুহা পেরোল। তারপর প্রচণ্ড গতিতে ছুটে আসতে লাগল শিকারির দিকে। গুলিটা গায়ে লাগেনি, লেগেছে একটা চারা গাছে। রাইফেলে আর আছে কেবল একটা বুলেট। তারপর? কাহিনির বাকি অংশটা বললাম না। মুক্তেশ্বরের কুখ্যাত বাঘিনীর সঙ্গে করবেটের দ্বৈরথের কাহিনিটি নিজেই পড়ে দেখুন না।
৫.
ভারতের হিমালয় এলাকার এক শহর নৈনিতাল। শহরের আকাশ সবসময় থাকে মেঘে ঢাকা। জঙ্গলে নানা বন্যপ্রাণীর আনাগোনা। পাখির কিচিরমিচির। নৈনিতালের উত্তরে তাকালে দেখা যায় হিমালয়ের বরফাবৃত চূড়া। এখানেই জন্ম এডওয়ার্ড জেমস করবেট বা জিম করবেটের, ১৮৭৫ সালের ২৫ জুলাই। এমন জঙ্গুলে এলাকায় যাঁর জন্ম, ছোটকাল থেকেই সে বন ভালোবাসবে—তাতে আর অবাক হওয়ার কী?
বড় ভাই টমের উৎসাহে শিকারে আগ্রহ হয় জিম করবেটের। দুই ভাই একসঙ্গে বের হয়ে পড়তেন শিকারে; কালাধুঙ্গির জঙ্গলে। কিশোর বয়সে একাই ফাটা নলের বন্দুক নিয়ে বনে ঘুরে বেড়াতেন জিম। নকল করতেন পশু-পাখির ডাক। আয়া খানসামাদের থেকে শেখেন হিন্দুস্তানি ও স্থানীয় পাহাড়ি ভাষা। এসব করতে করতে একসময় জাত শিকারি বনে গেলেন জিম করবেট।
৬.
ভারতের গাড়োয়াল, আর কুমায়ূন এলাকায় মানুষখেকোর উপদ্রব ছিল তখন খুব সাধারণ ঘটনা। কখনো চিতা বাঘ মানুষখেকো হতো, কখনো–বা বাঘ। কোনো কোনাটার হাতে এমনকি প্রাণ হারাত শত শত মানুষ। এসব মানুষখেকোর পিছু নিতেন জিম করবেট। দিনের পর দিন লেগে থেকে শেষ পর্যন্ত মারতেন মানুষখেকোটাকে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচত গ্রামবাসীরা। তাই কোনো এলাকায় মানুষখেকোর উৎপাত হলে গ্রামের লোকেরা ছুটে আসত করবেটের কাছে।
করবেট ১৯০৭ সালে প্রথম মানুষখেকো বাঘ মারেন। ওটা চম্পাবতের মানুষখেকো। নেপাল ও ভারতের সীমানা ছিল এর রাজত্ব। তারপর মারেন রুদ্রপ্রয়াগের চিতাটাকে। রুদ্রপ্রয়াগ এলাকা হিন্দুদের তীর্থস্থান হিসেবে বিখ্যাত। একজনের পর একজন তীর্থযাত্রী মেরে ভয়ানক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল একটা চিতা বাঘ। ৪০০-এর বেশি মানুষ যায় ওটার পেটে। পানারের মানুষখেকো, মোহন, চুকা ও থকের মানুষখেকো বাঘসহ অনেকগুলো বাঘ, আর চিতা বাঘ মারেন একে একে।
করবেটের কথা গোটা পৃথিবীর মানুষ জানতে পারে ১৯৪৪ সালের পর, যখন বই লেখা শুরু করেন তিনি। তবে অনেক বাঘ মারলেও নিজে বাঘ ভালোবাসতেন করবেট। শুধু তাই না বাঘকে তিনি বলেছেন, ‘বিশিষ্ট ভদ্রলোক’।
৭.
নভেম্বরের শেষ। নৈনিতালে হিম ঠান্ডা কামড় বসাচ্ছে শরীরে। বহু দিনের সঙ্গী রাম সিংহকে তৈরি থাকতে বলেছিলেন করবেট। সময়মতো হাজির সে। দেখে, সাহেব বারান্দায় পায়চারি করছেন। হাতের টর্চের আলো ফেললেন একটা বস্তার ওপর। ইঙ্গিত পেয়ে রাম সিংহ কাঁধে তুলি নিল ওটা। অবাক হলো রাম সিংহ, বেশ ভারি বস্তা। তবে ওটায় কী আছে জানতে চাইল না একবারও। সঙ্গে আসা একজন লোকসহ অপেক্ষা করতে লাগল, পরের নির্দেশের। জঙ্গলের দিকে ইশারা করলেন সাহেব। তারপর তিন জোড়া পা দ্রুত বেগে চলল বনের গভীরে। সূর্যের আলোয় আকাশ হেসে উঠতে কখনো অনেকই দেরি।
মিনিট চল্লিশেক হাঁটার পর দাঁড়ানোর নির্দেশ এল। বন এখানে অনেক গভীর। আরও ভেতরে একটা ঝোপের মধ্যে আলো ফেললেন। বস্তা খুললেন সাহেব। শাবল, কোদাল, তিনটি রাইফেল, আর দুটো শটগান বেরোল ভেতর থেকে। এরই একটা ১৯২৬ সালে মৃত্যু ডেকে এনেছিল রুদ্রপ্রয়াগের চিতা বাঘটার। তাঁর নির্দেশে রাম সিংহরা গর্ত খুঁড়তে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। বেশ গভীর হলে একটা একটা করে অস্ত্র নামিয়ে রাখতে লাগলেন সেখানে। তবে নামানোর আগে পরম ভালবাসায় চুমু খেলেন প্রতিটি অস্ত্রে। হাউমাউ করে কাঁদছে রাম সিংহ। তার মাথায় হাত রাখলেন সাহেব। সালটা ছিল ১৯৪৭। আর নিজের সব অস্ত্র মাটি চাপা দেওয়ার কয়েক দিন পরই প্রিয় ভারত ছাড়েন করবেট। বড় বোন ম্যাগিসহ চলে যান কেনিয়ায় নিয়েরিতে। সেখানেই মারা যান, ১৯৫৫ সালে।
৮.
জীবনের একপর্যায়ে বন্যপ্রাণী শিকার ছেড়ে আগাগোড়া সংরক্ষক বনে যান করবেট। শেষ মানুষখেকো শিকার করেন ১৯৩৮ সালে, ওটা ছিল থাকের কুখ্যাত বাঘটা। এর পর আর কোনো বাঘ বা চিতা মেরেছেন, তেমন খবর নেই। জীবনের বাকি সময়টা কাটিয়েছেন বন্যপ্রাণী রক্ষায়। উত্তরাখণ্ডে ভারতের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় বন্যপ্রাণী অভয়ারন্যটির নাম বদলে ১৯৫৭ সালে রাখা হয় জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক। ১৯৩০ সালের দিকে এই অভায়রণ্য স্থাপনে ভূমিকা ছিল করবেটের। ১৯৬৮ সালে বাঘের টিকে থাকা পাঁচটি উপ-প্রজাতির একটির নাম রাখা হয়েছে তাঁর প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্যানথেরা ট্রাইগ্রেস করবেটি।
আজ থেকে ৬৬ বছর আগে এই দিনে (১৯৫৫ সালের ১৯ এপ্রিল) পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন এই শিকারি ও সংরক্ষক। তাই আজ আমার মনটাও ভার। পুরোনো প্রশ্নটা ঘুরেফিরে আসছে মনে—যে ভারতবর্ষকে এত ভালোবাসতেন করবেট, সেখান থেকে কেন চলে গেলেন বহু দূর দেশ কেনিয়ায়?
এই সুযোগে একটা কথা বলে রাখছি কেনিয়ায় রানি এলিজাবথকে নিয়ে তাঁর চমৎকার একটি ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আছে। ট্রি টপস নামে প্রকাশিত হয় সেটি। পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেওয়ার অল্প ক’দিন আগেই মাত্র এটি লেখা শেষ করেছিলেন। চাইলে পড়ে দেখতে পারেন।
৯.
করবেটের শিকার এলাকা হিমালয় অঞ্চল, করবেট ন্যাশনাল পার্ক, কালাধুঙ্গি, নৈনিতাল কোথাও যাওয়া হয়নি। যাওয়া হয়নি করবেট মিউজিয়ামেও। বন্যপ্রাণীদের হাত থেকে গ্রামবাসীদের ফসল বাঁচাতে কালাধুঙ্গিতে সাড়ে চার মাইল লম্বা একটি দেয়াল তুলেছিলেন করবেট। ওটাও যে দেখা হয়নি।
বছর দুয়েক আগে হিমালয়ের ওই দিকটার প্রবেশদ্বার দেরাদুন পর্যন্ত গিয়েই ফিরে এসেছি। হয়তো যাব কখনো। তখনকার অরণ্য পাব না জানি। তারপরও আমাদের দেশের বন-পাহাড় থেকে অনেকই ভালো আছে সেখানকার অরণ্য-বন্যপ্রাণীরা। করবেটের কথা ভাবতে ভাবতে হয়তো ঘুরে বেড়াব হিমালয় অঞ্চলের জঙ্গল-পাহাড়ে।
সূত্র: জিম করবেটের বই, আশাপূর্ণা দেবীর জিম করবেট সমগ্র, আনন্দবাজার পত্রিকা ও ইন্টারনেট।
আরও পড়ুন

কালাধুঙ্গির বোর নদীর তীরে বহু পুরনো এক কাঠের সেতু। এর এক কোণে দেয়ালে হেলান দিয়ে গল্প শুনছে আট থেকে আঠারো বছরের চৌদ্দজন ছেলে-মেয়ে। গল্পের বক্তা ড্যানশি নামের এক আইরিশ। সময়টা রাত। তাই চৌহদ্দির জঙ্গল থেকে কাঠকুটো এনে আগুন জ্বেলেছিল খুদে শ্রোতারা।
আগুন নিভে গেছে বহু আগে। সামান্য লালচে আঁচ আছে এখনো। তবে চারধারের ঘন অন্ধকারের ওপর এর কোনো প্রভাবই নেই। এই পরিবেশে যে গল্প জমে, তাই বলছে ড্যানশি। ভূতের গল্প। অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যে ভূত থেকে বানশিতে চলে যায় ড্যানশি। আয়ারল্যান্ডের বানশি। ড্যানশির মতে যা ভূত থেকেও ভয়ংকর। যে চৌদ্দটি ছেলে-মেয়ে গল্প শুনছিল, তাদের একজন ছোট্ট করবেট। পুরো নাম জিম করবেট।
কালাধুঙ্গি ছিল জিম করবেটদের শীতকালীন নিবাস। ওখানে রাতে বানশি, ভারতীয় গ্রামের ডাইনি চুরাইলের গল্প শুনে রোমাঞ্চিত হতো বালক করবেট।
করবেটের পরিবারের গ্রীষ্মকালীন নিবাস ছিল নৈনিতাল। কালাধুঙ্গি থেকে দূরত্ব মেরেকেটে পনেরো মাইল। নৈনিতালের কথা বললেই অবধারিতভাবে চলে আসে বিখ্যাত নৈনিতাল বা তাল হ্রদের কথা। হ্রদের পাশেই নৈনী দেবীর মন্দির। করবেট লিখে গেছেন মন্দিরের চার মাইলের মধ্যে বাঘ, চিতা বাঘ, সম্বার, ভাল্লুক সবই দেখেছেন। শুধু তাই নয়, এতটুকুন জায়গার মধ্যে এক শ আটাশ জাতের পাখি চিনেছেন তিনি।
২.
করবটে ও অ্যান্ডারসনের সঙ্গে পরিচয় আমার বলা চলে একইসঙ্গে। ক্লাস থ্রি কিংবা ফোরে পড়ি তখন। আব্বুর আলমারির নিচের অংশটা বইয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল। মানে, আমাদের কোনো বইয়ের আলমারি ছিল না। তো ওই আলমারিতেই খুঁজে পাই সেবা প্রকাশনি থেকে বের হওয়া শিকার ১, শিকার ২, শিকার ৩ ও জঙ্গল বইগুলো। স্বীকার করতেই হবে অদ্ভুত সুন্দর অনুবাদ করেছিলেন রকিব হাসান। সে হিসেবে আমার জঙ্গলপ্রেমের সূচনায় তাঁরও ভূমিকা আছে।
আমার বালক মনে তখনই শিকারিটির পাকাপোক্ত জায়গা হয়ে যায়। এই মুহূর্তে লিখতে বসে, মাথায় টুপি, রাইফেল হাতে সাদা চামড়ার একজন মানুষকে দেখতে পাচ্ছি মনের চোখে হিমালয় অঞ্চলের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে। তবে আশ্চর্য ব্যাপার, বই পড়তে পড়তে মানুষখেকো কিংবা গোখাদক বাঘ-চিতা বাঘগুলোর প্রতিও আশ্চর্য এক মায়া, ভালোবাসা জন্মায়। বলা চলে করবেটের পাশাপাশি তাঁর প্রতিপক্ষ বুনো প্রাণদেরও ভালোবেসে ফেলি।
বিশালাকার ওই বাঘটার কথা মনে পড়ছে সবার আগে। যেটাকে পুরোহিত পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মন্দিরের আশ্রিত বাঘ হিসেবে। করবেট কোনোদিনই ওটাকে মারতে পারবেন না চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন পুরোহিত। সত্যি করবেট ওটাকে মারতে না পারায় যে স্বস্তির অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে শরীরে মনে, তা এখনো অনুভব করতে পারছি যেন।
রুদ্রপ্রয়াগের চিতাটার কথা কীভাবে ভুলি! মানুষের আশপাশে থাকতে থাকতে মানুষের মতো কখনো আরও বেশি বুদ্ধিমান হয়ে উঠেছিল। ধূর্ততা ও ভীতিকর কাহিনি পড়তে পড়তে শিউরে উঠছি বারবার। কিন্তু করবেট যখন সত্যি মেরে ফেললেন চিতাটাকে, মনটা কেঁদে উঠেছিল। কেন কে জানে?
৩.
কেনেথ অ্যান্ডারসন আমাকে মুগ্ধ করেছেনে অরণ্য ও এর বুনো বাসিন্দাদের অদ্ভুত সুন্দর বর্ণনা দিয়ে। অন্যদিকে জিম করবেটের বইয়ে জীবন্ত হয়ে উঠেছিল অরণ্য এলাকার মানুষ। ছোট্ট একটি মেয়ের কথা মনে পড়ছে এখন। ওই যে মানুষখেকো বাঘের এলাকায় গরু নিয়ে অবলীলায় হেঁটে চলেছিল। বাবা তাকে একাকী পাঠিয়েছিলেন গরুটা চাচার কাছে দিয়ে আসতে। দুষ্টু গরুটাকে কীভাবে সামলাবে, তাই ছিল মেয়েটার একমাত্র চিন্তা, বাঘ মোটেই ছিল না তার মনে। নিরাপদে পৌঁছে দিতে করবেট ওর সঙ্গী হয়েছিলেন।
কানওয়ার সিং, বালা সিং, মোতির মতো চরিত্রগুলোও যেন করবেটের বর্ণনায় এখনো জীবন্ত আমার কাছে। তাঁর কারণেই গাড়োয়াল, হিমালয় অঞ্চলের মানুষ যেন বড় আপন হয়ে গিয়েছিল আমার।
৪.
পাহাড়ের মধ্যে একটা গভীর গর্ত। ওটায় বসে দুদিন আগে শিকার করা জানোয়ারটার মাংস খাচ্ছে জানোয়ারটা। একটা বাঘিনী। শিকারি বসে আছেন একটা জংলার মধ্যে। বাঘিনীর হাড় চিবোনোর শব্দ শোনা যাচ্ছে স্পষ্ট। তারপরই খাওয়া বন্ধ করল সে। হয়তো শিকারির নড়াচড়া নজর কেড়েছে। তবে তার চেয়ে বেশি সম্ভাবনা—পুরনো মড়িটা আর খেতে ভালো লাগছে না তার। পরের এক মিনিট কোনো নড়াচড়া নেই, নেই শব্দ। তারপরই ওটাকে দেখলেন শিকারি। গুহার পাড় বেয়ে উঠছে পাহাড়ে। কয়েকটি চারা গাছের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। তাই শরীর ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না। রাইফেল তুলে দুম করে গুলি করলেন। গুলি খেয়েই ঘুরে দাঁড়াল বাঘিনী। পাড় ধরে নেমে গুহা পেরোল। তারপর প্রচণ্ড গতিতে ছুটে আসতে লাগল শিকারির দিকে। গুলিটা গায়ে লাগেনি, লেগেছে একটা চারা গাছে। রাইফেলে আর আছে কেবল একটা বুলেট। তারপর? কাহিনির বাকি অংশটা বললাম না। মুক্তেশ্বরের কুখ্যাত বাঘিনীর সঙ্গে করবেটের দ্বৈরথের কাহিনিটি নিজেই পড়ে দেখুন না।
৫.
ভারতের হিমালয় এলাকার এক শহর নৈনিতাল। শহরের আকাশ সবসময় থাকে মেঘে ঢাকা। জঙ্গলে নানা বন্যপ্রাণীর আনাগোনা। পাখির কিচিরমিচির। নৈনিতালের উত্তরে তাকালে দেখা যায় হিমালয়ের বরফাবৃত চূড়া। এখানেই জন্ম এডওয়ার্ড জেমস করবেট বা জিম করবেটের, ১৮৭৫ সালের ২৫ জুলাই। এমন জঙ্গুলে এলাকায় যাঁর জন্ম, ছোটকাল থেকেই সে বন ভালোবাসবে—তাতে আর অবাক হওয়ার কী?
বড় ভাই টমের উৎসাহে শিকারে আগ্রহ হয় জিম করবেটের। দুই ভাই একসঙ্গে বের হয়ে পড়তেন শিকারে; কালাধুঙ্গির জঙ্গলে। কিশোর বয়সে একাই ফাটা নলের বন্দুক নিয়ে বনে ঘুরে বেড়াতেন জিম। নকল করতেন পশু-পাখির ডাক। আয়া খানসামাদের থেকে শেখেন হিন্দুস্তানি ও স্থানীয় পাহাড়ি ভাষা। এসব করতে করতে একসময় জাত শিকারি বনে গেলেন জিম করবেট।
৬.
ভারতের গাড়োয়াল, আর কুমায়ূন এলাকায় মানুষখেকোর উপদ্রব ছিল তখন খুব সাধারণ ঘটনা। কখনো চিতা বাঘ মানুষখেকো হতো, কখনো–বা বাঘ। কোনো কোনাটার হাতে এমনকি প্রাণ হারাত শত শত মানুষ। এসব মানুষখেকোর পিছু নিতেন জিম করবেট। দিনের পর দিন লেগে থেকে শেষ পর্যন্ত মারতেন মানুষখেকোটাকে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচত গ্রামবাসীরা। তাই কোনো এলাকায় মানুষখেকোর উৎপাত হলে গ্রামের লোকেরা ছুটে আসত করবেটের কাছে।
করবেট ১৯০৭ সালে প্রথম মানুষখেকো বাঘ মারেন। ওটা চম্পাবতের মানুষখেকো। নেপাল ও ভারতের সীমানা ছিল এর রাজত্ব। তারপর মারেন রুদ্রপ্রয়াগের চিতাটাকে। রুদ্রপ্রয়াগ এলাকা হিন্দুদের তীর্থস্থান হিসেবে বিখ্যাত। একজনের পর একজন তীর্থযাত্রী মেরে ভয়ানক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল একটা চিতা বাঘ। ৪০০-এর বেশি মানুষ যায় ওটার পেটে। পানারের মানুষখেকো, মোহন, চুকা ও থকের মানুষখেকো বাঘসহ অনেকগুলো বাঘ, আর চিতা বাঘ মারেন একে একে।
করবেটের কথা গোটা পৃথিবীর মানুষ জানতে পারে ১৯৪৪ সালের পর, যখন বই লেখা শুরু করেন তিনি। তবে অনেক বাঘ মারলেও নিজে বাঘ ভালোবাসতেন করবেট। শুধু তাই না বাঘকে তিনি বলেছেন, ‘বিশিষ্ট ভদ্রলোক’।
৭.
নভেম্বরের শেষ। নৈনিতালে হিম ঠান্ডা কামড় বসাচ্ছে শরীরে। বহু দিনের সঙ্গী রাম সিংহকে তৈরি থাকতে বলেছিলেন করবেট। সময়মতো হাজির সে। দেখে, সাহেব বারান্দায় পায়চারি করছেন। হাতের টর্চের আলো ফেললেন একটা বস্তার ওপর। ইঙ্গিত পেয়ে রাম সিংহ কাঁধে তুলি নিল ওটা। অবাক হলো রাম সিংহ, বেশ ভারি বস্তা। তবে ওটায় কী আছে জানতে চাইল না একবারও। সঙ্গে আসা একজন লোকসহ অপেক্ষা করতে লাগল, পরের নির্দেশের। জঙ্গলের দিকে ইশারা করলেন সাহেব। তারপর তিন জোড়া পা দ্রুত বেগে চলল বনের গভীরে। সূর্যের আলোয় আকাশ হেসে উঠতে কখনো অনেকই দেরি।
মিনিট চল্লিশেক হাঁটার পর দাঁড়ানোর নির্দেশ এল। বন এখানে অনেক গভীর। আরও ভেতরে একটা ঝোপের মধ্যে আলো ফেললেন। বস্তা খুললেন সাহেব। শাবল, কোদাল, তিনটি রাইফেল, আর দুটো শটগান বেরোল ভেতর থেকে। এরই একটা ১৯২৬ সালে মৃত্যু ডেকে এনেছিল রুদ্রপ্রয়াগের চিতা বাঘটার। তাঁর নির্দেশে রাম সিংহরা গর্ত খুঁড়তে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। বেশ গভীর হলে একটা একটা করে অস্ত্র নামিয়ে রাখতে লাগলেন সেখানে। তবে নামানোর আগে পরম ভালবাসায় চুমু খেলেন প্রতিটি অস্ত্রে। হাউমাউ করে কাঁদছে রাম সিংহ। তার মাথায় হাত রাখলেন সাহেব। সালটা ছিল ১৯৪৭। আর নিজের সব অস্ত্র মাটি চাপা দেওয়ার কয়েক দিন পরই প্রিয় ভারত ছাড়েন করবেট। বড় বোন ম্যাগিসহ চলে যান কেনিয়ায় নিয়েরিতে। সেখানেই মারা যান, ১৯৫৫ সালে।
৮.
জীবনের একপর্যায়ে বন্যপ্রাণী শিকার ছেড়ে আগাগোড়া সংরক্ষক বনে যান করবেট। শেষ মানুষখেকো শিকার করেন ১৯৩৮ সালে, ওটা ছিল থাকের কুখ্যাত বাঘটা। এর পর আর কোনো বাঘ বা চিতা মেরেছেন, তেমন খবর নেই। জীবনের বাকি সময়টা কাটিয়েছেন বন্যপ্রাণী রক্ষায়। উত্তরাখণ্ডে ভারতের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় বন্যপ্রাণী অভয়ারন্যটির নাম বদলে ১৯৫৭ সালে রাখা হয় জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক। ১৯৩০ সালের দিকে এই অভায়রণ্য স্থাপনে ভূমিকা ছিল করবেটের। ১৯৬৮ সালে বাঘের টিকে থাকা পাঁচটি উপ-প্রজাতির একটির নাম রাখা হয়েছে তাঁর প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্যানথেরা ট্রাইগ্রেস করবেটি।
আজ থেকে ৬৬ বছর আগে এই দিনে (১৯৫৫ সালের ১৯ এপ্রিল) পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন এই শিকারি ও সংরক্ষক। তাই আজ আমার মনটাও ভার। পুরোনো প্রশ্নটা ঘুরেফিরে আসছে মনে—যে ভারতবর্ষকে এত ভালোবাসতেন করবেট, সেখান থেকে কেন চলে গেলেন বহু দূর দেশ কেনিয়ায়?
এই সুযোগে একটা কথা বলে রাখছি কেনিয়ায় রানি এলিজাবথকে নিয়ে তাঁর চমৎকার একটি ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আছে। ট্রি টপস নামে প্রকাশিত হয় সেটি। পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেওয়ার অল্প ক’দিন আগেই মাত্র এটি লেখা শেষ করেছিলেন। চাইলে পড়ে দেখতে পারেন।
৯.
করবেটের শিকার এলাকা হিমালয় অঞ্চল, করবেট ন্যাশনাল পার্ক, কালাধুঙ্গি, নৈনিতাল কোথাও যাওয়া হয়নি। যাওয়া হয়নি করবেট মিউজিয়ামেও। বন্যপ্রাণীদের হাত থেকে গ্রামবাসীদের ফসল বাঁচাতে কালাধুঙ্গিতে সাড়ে চার মাইল লম্বা একটি দেয়াল তুলেছিলেন করবেট। ওটাও যে দেখা হয়নি।
বছর দুয়েক আগে হিমালয়ের ওই দিকটার প্রবেশদ্বার দেরাদুন পর্যন্ত গিয়েই ফিরে এসেছি। হয়তো যাব কখনো। তখনকার অরণ্য পাব না জানি। তারপরও আমাদের দেশের বন-পাহাড় থেকে অনেকই ভালো আছে সেখানকার অরণ্য-বন্যপ্রাণীরা। করবেটের কথা ভাবতে ভাবতে হয়তো ঘুরে বেড়াব হিমালয় অঞ্চলের জঙ্গল-পাহাড়ে।
সূত্র: জিম করবেটের বই, আশাপূর্ণা দেবীর জিম করবেট সমগ্র, আনন্দবাজার পত্রিকা ও ইন্টারনেট।
আরও পড়ুন
ইশতিয়াক হাসান

কালাধুঙ্গির বোর নদীর তীরে বহু পুরনো এক কাঠের সেতু। এর এক কোণে দেয়ালে হেলান দিয়ে গল্প শুনছে আট থেকে আঠারো বছরের চৌদ্দজন ছেলে-মেয়ে। গল্পের বক্তা ড্যানশি নামের এক আইরিশ। সময়টা রাত। তাই চৌহদ্দির জঙ্গল থেকে কাঠকুটো এনে আগুন জ্বেলেছিল খুদে শ্রোতারা।
আগুন নিভে গেছে বহু আগে। সামান্য লালচে আঁচ আছে এখনো। তবে চারধারের ঘন অন্ধকারের ওপর এর কোনো প্রভাবই নেই। এই পরিবেশে যে গল্প জমে, তাই বলছে ড্যানশি। ভূতের গল্প। অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যে ভূত থেকে বানশিতে চলে যায় ড্যানশি। আয়ারল্যান্ডের বানশি। ড্যানশির মতে যা ভূত থেকেও ভয়ংকর। যে চৌদ্দটি ছেলে-মেয়ে গল্প শুনছিল, তাদের একজন ছোট্ট করবেট। পুরো নাম জিম করবেট।
কালাধুঙ্গি ছিল জিম করবেটদের শীতকালীন নিবাস। ওখানে রাতে বানশি, ভারতীয় গ্রামের ডাইনি চুরাইলের গল্প শুনে রোমাঞ্চিত হতো বালক করবেট।
করবেটের পরিবারের গ্রীষ্মকালীন নিবাস ছিল নৈনিতাল। কালাধুঙ্গি থেকে দূরত্ব মেরেকেটে পনেরো মাইল। নৈনিতালের কথা বললেই অবধারিতভাবে চলে আসে বিখ্যাত নৈনিতাল বা তাল হ্রদের কথা। হ্রদের পাশেই নৈনী দেবীর মন্দির। করবেট লিখে গেছেন মন্দিরের চার মাইলের মধ্যে বাঘ, চিতা বাঘ, সম্বার, ভাল্লুক সবই দেখেছেন। শুধু তাই নয়, এতটুকুন জায়গার মধ্যে এক শ আটাশ জাতের পাখি চিনেছেন তিনি।
২.
করবটে ও অ্যান্ডারসনের সঙ্গে পরিচয় আমার বলা চলে একইসঙ্গে। ক্লাস থ্রি কিংবা ফোরে পড়ি তখন। আব্বুর আলমারির নিচের অংশটা বইয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল। মানে, আমাদের কোনো বইয়ের আলমারি ছিল না। তো ওই আলমারিতেই খুঁজে পাই সেবা প্রকাশনি থেকে বের হওয়া শিকার ১, শিকার ২, শিকার ৩ ও জঙ্গল বইগুলো। স্বীকার করতেই হবে অদ্ভুত সুন্দর অনুবাদ করেছিলেন রকিব হাসান। সে হিসেবে আমার জঙ্গলপ্রেমের সূচনায় তাঁরও ভূমিকা আছে।
আমার বালক মনে তখনই শিকারিটির পাকাপোক্ত জায়গা হয়ে যায়। এই মুহূর্তে লিখতে বসে, মাথায় টুপি, রাইফেল হাতে সাদা চামড়ার একজন মানুষকে দেখতে পাচ্ছি মনের চোখে হিমালয় অঞ্চলের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে। তবে আশ্চর্য ব্যাপার, বই পড়তে পড়তে মানুষখেকো কিংবা গোখাদক বাঘ-চিতা বাঘগুলোর প্রতিও আশ্চর্য এক মায়া, ভালোবাসা জন্মায়। বলা চলে করবেটের পাশাপাশি তাঁর প্রতিপক্ষ বুনো প্রাণদেরও ভালোবেসে ফেলি।
বিশালাকার ওই বাঘটার কথা মনে পড়ছে সবার আগে। যেটাকে পুরোহিত পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মন্দিরের আশ্রিত বাঘ হিসেবে। করবেট কোনোদিনই ওটাকে মারতে পারবেন না চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন পুরোহিত। সত্যি করবেট ওটাকে মারতে না পারায় যে স্বস্তির অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে শরীরে মনে, তা এখনো অনুভব করতে পারছি যেন।
রুদ্রপ্রয়াগের চিতাটার কথা কীভাবে ভুলি! মানুষের আশপাশে থাকতে থাকতে মানুষের মতো কখনো আরও বেশি বুদ্ধিমান হয়ে উঠেছিল। ধূর্ততা ও ভীতিকর কাহিনি পড়তে পড়তে শিউরে উঠছি বারবার। কিন্তু করবেট যখন সত্যি মেরে ফেললেন চিতাটাকে, মনটা কেঁদে উঠেছিল। কেন কে জানে?
৩.
কেনেথ অ্যান্ডারসন আমাকে মুগ্ধ করেছেনে অরণ্য ও এর বুনো বাসিন্দাদের অদ্ভুত সুন্দর বর্ণনা দিয়ে। অন্যদিকে জিম করবেটের বইয়ে জীবন্ত হয়ে উঠেছিল অরণ্য এলাকার মানুষ। ছোট্ট একটি মেয়ের কথা মনে পড়ছে এখন। ওই যে মানুষখেকো বাঘের এলাকায় গরু নিয়ে অবলীলায় হেঁটে চলেছিল। বাবা তাকে একাকী পাঠিয়েছিলেন গরুটা চাচার কাছে দিয়ে আসতে। দুষ্টু গরুটাকে কীভাবে সামলাবে, তাই ছিল মেয়েটার একমাত্র চিন্তা, বাঘ মোটেই ছিল না তার মনে। নিরাপদে পৌঁছে দিতে করবেট ওর সঙ্গী হয়েছিলেন।
কানওয়ার সিং, বালা সিং, মোতির মতো চরিত্রগুলোও যেন করবেটের বর্ণনায় এখনো জীবন্ত আমার কাছে। তাঁর কারণেই গাড়োয়াল, হিমালয় অঞ্চলের মানুষ যেন বড় আপন হয়ে গিয়েছিল আমার।
৪.
পাহাড়ের মধ্যে একটা গভীর গর্ত। ওটায় বসে দুদিন আগে শিকার করা জানোয়ারটার মাংস খাচ্ছে জানোয়ারটা। একটা বাঘিনী। শিকারি বসে আছেন একটা জংলার মধ্যে। বাঘিনীর হাড় চিবোনোর শব্দ শোনা যাচ্ছে স্পষ্ট। তারপরই খাওয়া বন্ধ করল সে। হয়তো শিকারির নড়াচড়া নজর কেড়েছে। তবে তার চেয়ে বেশি সম্ভাবনা—পুরনো মড়িটা আর খেতে ভালো লাগছে না তার। পরের এক মিনিট কোনো নড়াচড়া নেই, নেই শব্দ। তারপরই ওটাকে দেখলেন শিকারি। গুহার পাড় বেয়ে উঠছে পাহাড়ে। কয়েকটি চারা গাছের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। তাই শরীর ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না। রাইফেল তুলে দুম করে গুলি করলেন। গুলি খেয়েই ঘুরে দাঁড়াল বাঘিনী। পাড় ধরে নেমে গুহা পেরোল। তারপর প্রচণ্ড গতিতে ছুটে আসতে লাগল শিকারির দিকে। গুলিটা গায়ে লাগেনি, লেগেছে একটা চারা গাছে। রাইফেলে আর আছে কেবল একটা বুলেট। তারপর? কাহিনির বাকি অংশটা বললাম না। মুক্তেশ্বরের কুখ্যাত বাঘিনীর সঙ্গে করবেটের দ্বৈরথের কাহিনিটি নিজেই পড়ে দেখুন না।
৫.
ভারতের হিমালয় এলাকার এক শহর নৈনিতাল। শহরের আকাশ সবসময় থাকে মেঘে ঢাকা। জঙ্গলে নানা বন্যপ্রাণীর আনাগোনা। পাখির কিচিরমিচির। নৈনিতালের উত্তরে তাকালে দেখা যায় হিমালয়ের বরফাবৃত চূড়া। এখানেই জন্ম এডওয়ার্ড জেমস করবেট বা জিম করবেটের, ১৮৭৫ সালের ২৫ জুলাই। এমন জঙ্গুলে এলাকায় যাঁর জন্ম, ছোটকাল থেকেই সে বন ভালোবাসবে—তাতে আর অবাক হওয়ার কী?
বড় ভাই টমের উৎসাহে শিকারে আগ্রহ হয় জিম করবেটের। দুই ভাই একসঙ্গে বের হয়ে পড়তেন শিকারে; কালাধুঙ্গির জঙ্গলে। কিশোর বয়সে একাই ফাটা নলের বন্দুক নিয়ে বনে ঘুরে বেড়াতেন জিম। নকল করতেন পশু-পাখির ডাক। আয়া খানসামাদের থেকে শেখেন হিন্দুস্তানি ও স্থানীয় পাহাড়ি ভাষা। এসব করতে করতে একসময় জাত শিকারি বনে গেলেন জিম করবেট।
৬.
ভারতের গাড়োয়াল, আর কুমায়ূন এলাকায় মানুষখেকোর উপদ্রব ছিল তখন খুব সাধারণ ঘটনা। কখনো চিতা বাঘ মানুষখেকো হতো, কখনো–বা বাঘ। কোনো কোনাটার হাতে এমনকি প্রাণ হারাত শত শত মানুষ। এসব মানুষখেকোর পিছু নিতেন জিম করবেট। দিনের পর দিন লেগে থেকে শেষ পর্যন্ত মারতেন মানুষখেকোটাকে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচত গ্রামবাসীরা। তাই কোনো এলাকায় মানুষখেকোর উৎপাত হলে গ্রামের লোকেরা ছুটে আসত করবেটের কাছে।
করবেট ১৯০৭ সালে প্রথম মানুষখেকো বাঘ মারেন। ওটা চম্পাবতের মানুষখেকো। নেপাল ও ভারতের সীমানা ছিল এর রাজত্ব। তারপর মারেন রুদ্রপ্রয়াগের চিতাটাকে। রুদ্রপ্রয়াগ এলাকা হিন্দুদের তীর্থস্থান হিসেবে বিখ্যাত। একজনের পর একজন তীর্থযাত্রী মেরে ভয়ানক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল একটা চিতা বাঘ। ৪০০-এর বেশি মানুষ যায় ওটার পেটে। পানারের মানুষখেকো, মোহন, চুকা ও থকের মানুষখেকো বাঘসহ অনেকগুলো বাঘ, আর চিতা বাঘ মারেন একে একে।
করবেটের কথা গোটা পৃথিবীর মানুষ জানতে পারে ১৯৪৪ সালের পর, যখন বই লেখা শুরু করেন তিনি। তবে অনেক বাঘ মারলেও নিজে বাঘ ভালোবাসতেন করবেট। শুধু তাই না বাঘকে তিনি বলেছেন, ‘বিশিষ্ট ভদ্রলোক’।
৭.
নভেম্বরের শেষ। নৈনিতালে হিম ঠান্ডা কামড় বসাচ্ছে শরীরে। বহু দিনের সঙ্গী রাম সিংহকে তৈরি থাকতে বলেছিলেন করবেট। সময়মতো হাজির সে। দেখে, সাহেব বারান্দায় পায়চারি করছেন। হাতের টর্চের আলো ফেললেন একটা বস্তার ওপর। ইঙ্গিত পেয়ে রাম সিংহ কাঁধে তুলি নিল ওটা। অবাক হলো রাম সিংহ, বেশ ভারি বস্তা। তবে ওটায় কী আছে জানতে চাইল না একবারও। সঙ্গে আসা একজন লোকসহ অপেক্ষা করতে লাগল, পরের নির্দেশের। জঙ্গলের দিকে ইশারা করলেন সাহেব। তারপর তিন জোড়া পা দ্রুত বেগে চলল বনের গভীরে। সূর্যের আলোয় আকাশ হেসে উঠতে কখনো অনেকই দেরি।
মিনিট চল্লিশেক হাঁটার পর দাঁড়ানোর নির্দেশ এল। বন এখানে অনেক গভীর। আরও ভেতরে একটা ঝোপের মধ্যে আলো ফেললেন। বস্তা খুললেন সাহেব। শাবল, কোদাল, তিনটি রাইফেল, আর দুটো শটগান বেরোল ভেতর থেকে। এরই একটা ১৯২৬ সালে মৃত্যু ডেকে এনেছিল রুদ্রপ্রয়াগের চিতা বাঘটার। তাঁর নির্দেশে রাম সিংহরা গর্ত খুঁড়তে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। বেশ গভীর হলে একটা একটা করে অস্ত্র নামিয়ে রাখতে লাগলেন সেখানে। তবে নামানোর আগে পরম ভালবাসায় চুমু খেলেন প্রতিটি অস্ত্রে। হাউমাউ করে কাঁদছে রাম সিংহ। তার মাথায় হাত রাখলেন সাহেব। সালটা ছিল ১৯৪৭। আর নিজের সব অস্ত্র মাটি চাপা দেওয়ার কয়েক দিন পরই প্রিয় ভারত ছাড়েন করবেট। বড় বোন ম্যাগিসহ চলে যান কেনিয়ায় নিয়েরিতে। সেখানেই মারা যান, ১৯৫৫ সালে।
৮.
জীবনের একপর্যায়ে বন্যপ্রাণী শিকার ছেড়ে আগাগোড়া সংরক্ষক বনে যান করবেট। শেষ মানুষখেকো শিকার করেন ১৯৩৮ সালে, ওটা ছিল থাকের কুখ্যাত বাঘটা। এর পর আর কোনো বাঘ বা চিতা মেরেছেন, তেমন খবর নেই। জীবনের বাকি সময়টা কাটিয়েছেন বন্যপ্রাণী রক্ষায়। উত্তরাখণ্ডে ভারতের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় বন্যপ্রাণী অভয়ারন্যটির নাম বদলে ১৯৫৭ সালে রাখা হয় জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক। ১৯৩০ সালের দিকে এই অভায়রণ্য স্থাপনে ভূমিকা ছিল করবেটের। ১৯৬৮ সালে বাঘের টিকে থাকা পাঁচটি উপ-প্রজাতির একটির নাম রাখা হয়েছে তাঁর প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্যানথেরা ট্রাইগ্রেস করবেটি।
আজ থেকে ৬৬ বছর আগে এই দিনে (১৯৫৫ সালের ১৯ এপ্রিল) পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন এই শিকারি ও সংরক্ষক। তাই আজ আমার মনটাও ভার। পুরোনো প্রশ্নটা ঘুরেফিরে আসছে মনে—যে ভারতবর্ষকে এত ভালোবাসতেন করবেট, সেখান থেকে কেন চলে গেলেন বহু দূর দেশ কেনিয়ায়?
এই সুযোগে একটা কথা বলে রাখছি কেনিয়ায় রানি এলিজাবথকে নিয়ে তাঁর চমৎকার একটি ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আছে। ট্রি টপস নামে প্রকাশিত হয় সেটি। পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেওয়ার অল্প ক’দিন আগেই মাত্র এটি লেখা শেষ করেছিলেন। চাইলে পড়ে দেখতে পারেন।
৯.
করবেটের শিকার এলাকা হিমালয় অঞ্চল, করবেট ন্যাশনাল পার্ক, কালাধুঙ্গি, নৈনিতাল কোথাও যাওয়া হয়নি। যাওয়া হয়নি করবেট মিউজিয়ামেও। বন্যপ্রাণীদের হাত থেকে গ্রামবাসীদের ফসল বাঁচাতে কালাধুঙ্গিতে সাড়ে চার মাইল লম্বা একটি দেয়াল তুলেছিলেন করবেট। ওটাও যে দেখা হয়নি।
বছর দুয়েক আগে হিমালয়ের ওই দিকটার প্রবেশদ্বার দেরাদুন পর্যন্ত গিয়েই ফিরে এসেছি। হয়তো যাব কখনো। তখনকার অরণ্য পাব না জানি। তারপরও আমাদের দেশের বন-পাহাড় থেকে অনেকই ভালো আছে সেখানকার অরণ্য-বন্যপ্রাণীরা। করবেটের কথা ভাবতে ভাবতে হয়তো ঘুরে বেড়াব হিমালয় অঞ্চলের জঙ্গল-পাহাড়ে।
সূত্র: জিম করবেটের বই, আশাপূর্ণা দেবীর জিম করবেট সমগ্র, আনন্দবাজার পত্রিকা ও ইন্টারনেট।
আরও পড়ুন

কালাধুঙ্গির বোর নদীর তীরে বহু পুরনো এক কাঠের সেতু। এর এক কোণে দেয়ালে হেলান দিয়ে গল্প শুনছে আট থেকে আঠারো বছরের চৌদ্দজন ছেলে-মেয়ে। গল্পের বক্তা ড্যানশি নামের এক আইরিশ। সময়টা রাত। তাই চৌহদ্দির জঙ্গল থেকে কাঠকুটো এনে আগুন জ্বেলেছিল খুদে শ্রোতারা।
আগুন নিভে গেছে বহু আগে। সামান্য লালচে আঁচ আছে এখনো। তবে চারধারের ঘন অন্ধকারের ওপর এর কোনো প্রভাবই নেই। এই পরিবেশে যে গল্প জমে, তাই বলছে ড্যানশি। ভূতের গল্প। অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যে ভূত থেকে বানশিতে চলে যায় ড্যানশি। আয়ারল্যান্ডের বানশি। ড্যানশির মতে যা ভূত থেকেও ভয়ংকর। যে চৌদ্দটি ছেলে-মেয়ে গল্প শুনছিল, তাদের একজন ছোট্ট করবেট। পুরো নাম জিম করবেট।
কালাধুঙ্গি ছিল জিম করবেটদের শীতকালীন নিবাস। ওখানে রাতে বানশি, ভারতীয় গ্রামের ডাইনি চুরাইলের গল্প শুনে রোমাঞ্চিত হতো বালক করবেট।
করবেটের পরিবারের গ্রীষ্মকালীন নিবাস ছিল নৈনিতাল। কালাধুঙ্গি থেকে দূরত্ব মেরেকেটে পনেরো মাইল। নৈনিতালের কথা বললেই অবধারিতভাবে চলে আসে বিখ্যাত নৈনিতাল বা তাল হ্রদের কথা। হ্রদের পাশেই নৈনী দেবীর মন্দির। করবেট লিখে গেছেন মন্দিরের চার মাইলের মধ্যে বাঘ, চিতা বাঘ, সম্বার, ভাল্লুক সবই দেখেছেন। শুধু তাই নয়, এতটুকুন জায়গার মধ্যে এক শ আটাশ জাতের পাখি চিনেছেন তিনি।
২.
করবটে ও অ্যান্ডারসনের সঙ্গে পরিচয় আমার বলা চলে একইসঙ্গে। ক্লাস থ্রি কিংবা ফোরে পড়ি তখন। আব্বুর আলমারির নিচের অংশটা বইয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল। মানে, আমাদের কোনো বইয়ের আলমারি ছিল না। তো ওই আলমারিতেই খুঁজে পাই সেবা প্রকাশনি থেকে বের হওয়া শিকার ১, শিকার ২, শিকার ৩ ও জঙ্গল বইগুলো। স্বীকার করতেই হবে অদ্ভুত সুন্দর অনুবাদ করেছিলেন রকিব হাসান। সে হিসেবে আমার জঙ্গলপ্রেমের সূচনায় তাঁরও ভূমিকা আছে।
আমার বালক মনে তখনই শিকারিটির পাকাপোক্ত জায়গা হয়ে যায়। এই মুহূর্তে লিখতে বসে, মাথায় টুপি, রাইফেল হাতে সাদা চামড়ার একজন মানুষকে দেখতে পাচ্ছি মনের চোখে হিমালয় অঞ্চলের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে। তবে আশ্চর্য ব্যাপার, বই পড়তে পড়তে মানুষখেকো কিংবা গোখাদক বাঘ-চিতা বাঘগুলোর প্রতিও আশ্চর্য এক মায়া, ভালোবাসা জন্মায়। বলা চলে করবেটের পাশাপাশি তাঁর প্রতিপক্ষ বুনো প্রাণদেরও ভালোবেসে ফেলি।
বিশালাকার ওই বাঘটার কথা মনে পড়ছে সবার আগে। যেটাকে পুরোহিত পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মন্দিরের আশ্রিত বাঘ হিসেবে। করবেট কোনোদিনই ওটাকে মারতে পারবেন না চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন পুরোহিত। সত্যি করবেট ওটাকে মারতে না পারায় যে স্বস্তির অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে শরীরে মনে, তা এখনো অনুভব করতে পারছি যেন।
রুদ্রপ্রয়াগের চিতাটার কথা কীভাবে ভুলি! মানুষের আশপাশে থাকতে থাকতে মানুষের মতো কখনো আরও বেশি বুদ্ধিমান হয়ে উঠেছিল। ধূর্ততা ও ভীতিকর কাহিনি পড়তে পড়তে শিউরে উঠছি বারবার। কিন্তু করবেট যখন সত্যি মেরে ফেললেন চিতাটাকে, মনটা কেঁদে উঠেছিল। কেন কে জানে?
৩.
কেনেথ অ্যান্ডারসন আমাকে মুগ্ধ করেছেনে অরণ্য ও এর বুনো বাসিন্দাদের অদ্ভুত সুন্দর বর্ণনা দিয়ে। অন্যদিকে জিম করবেটের বইয়ে জীবন্ত হয়ে উঠেছিল অরণ্য এলাকার মানুষ। ছোট্ট একটি মেয়ের কথা মনে পড়ছে এখন। ওই যে মানুষখেকো বাঘের এলাকায় গরু নিয়ে অবলীলায় হেঁটে চলেছিল। বাবা তাকে একাকী পাঠিয়েছিলেন গরুটা চাচার কাছে দিয়ে আসতে। দুষ্টু গরুটাকে কীভাবে সামলাবে, তাই ছিল মেয়েটার একমাত্র চিন্তা, বাঘ মোটেই ছিল না তার মনে। নিরাপদে পৌঁছে দিতে করবেট ওর সঙ্গী হয়েছিলেন।
কানওয়ার সিং, বালা সিং, মোতির মতো চরিত্রগুলোও যেন করবেটের বর্ণনায় এখনো জীবন্ত আমার কাছে। তাঁর কারণেই গাড়োয়াল, হিমালয় অঞ্চলের মানুষ যেন বড় আপন হয়ে গিয়েছিল আমার।
৪.
পাহাড়ের মধ্যে একটা গভীর গর্ত। ওটায় বসে দুদিন আগে শিকার করা জানোয়ারটার মাংস খাচ্ছে জানোয়ারটা। একটা বাঘিনী। শিকারি বসে আছেন একটা জংলার মধ্যে। বাঘিনীর হাড় চিবোনোর শব্দ শোনা যাচ্ছে স্পষ্ট। তারপরই খাওয়া বন্ধ করল সে। হয়তো শিকারির নড়াচড়া নজর কেড়েছে। তবে তার চেয়ে বেশি সম্ভাবনা—পুরনো মড়িটা আর খেতে ভালো লাগছে না তার। পরের এক মিনিট কোনো নড়াচড়া নেই, নেই শব্দ। তারপরই ওটাকে দেখলেন শিকারি। গুহার পাড় বেয়ে উঠছে পাহাড়ে। কয়েকটি চারা গাছের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। তাই শরীর ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে না। রাইফেল তুলে দুম করে গুলি করলেন। গুলি খেয়েই ঘুরে দাঁড়াল বাঘিনী। পাড় ধরে নেমে গুহা পেরোল। তারপর প্রচণ্ড গতিতে ছুটে আসতে লাগল শিকারির দিকে। গুলিটা গায়ে লাগেনি, লেগেছে একটা চারা গাছে। রাইফেলে আর আছে কেবল একটা বুলেট। তারপর? কাহিনির বাকি অংশটা বললাম না। মুক্তেশ্বরের কুখ্যাত বাঘিনীর সঙ্গে করবেটের দ্বৈরথের কাহিনিটি নিজেই পড়ে দেখুন না।
৫.
ভারতের হিমালয় এলাকার এক শহর নৈনিতাল। শহরের আকাশ সবসময় থাকে মেঘে ঢাকা। জঙ্গলে নানা বন্যপ্রাণীর আনাগোনা। পাখির কিচিরমিচির। নৈনিতালের উত্তরে তাকালে দেখা যায় হিমালয়ের বরফাবৃত চূড়া। এখানেই জন্ম এডওয়ার্ড জেমস করবেট বা জিম করবেটের, ১৮৭৫ সালের ২৫ জুলাই। এমন জঙ্গুলে এলাকায় যাঁর জন্ম, ছোটকাল থেকেই সে বন ভালোবাসবে—তাতে আর অবাক হওয়ার কী?
বড় ভাই টমের উৎসাহে শিকারে আগ্রহ হয় জিম করবেটের। দুই ভাই একসঙ্গে বের হয়ে পড়তেন শিকারে; কালাধুঙ্গির জঙ্গলে। কিশোর বয়সে একাই ফাটা নলের বন্দুক নিয়ে বনে ঘুরে বেড়াতেন জিম। নকল করতেন পশু-পাখির ডাক। আয়া খানসামাদের থেকে শেখেন হিন্দুস্তানি ও স্থানীয় পাহাড়ি ভাষা। এসব করতে করতে একসময় জাত শিকারি বনে গেলেন জিম করবেট।
৬.
ভারতের গাড়োয়াল, আর কুমায়ূন এলাকায় মানুষখেকোর উপদ্রব ছিল তখন খুব সাধারণ ঘটনা। কখনো চিতা বাঘ মানুষখেকো হতো, কখনো–বা বাঘ। কোনো কোনাটার হাতে এমনকি প্রাণ হারাত শত শত মানুষ। এসব মানুষখেকোর পিছু নিতেন জিম করবেট। দিনের পর দিন লেগে থেকে শেষ পর্যন্ত মারতেন মানুষখেকোটাকে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচত গ্রামবাসীরা। তাই কোনো এলাকায় মানুষখেকোর উৎপাত হলে গ্রামের লোকেরা ছুটে আসত করবেটের কাছে।
করবেট ১৯০৭ সালে প্রথম মানুষখেকো বাঘ মারেন। ওটা চম্পাবতের মানুষখেকো। নেপাল ও ভারতের সীমানা ছিল এর রাজত্ব। তারপর মারেন রুদ্রপ্রয়াগের চিতাটাকে। রুদ্রপ্রয়াগ এলাকা হিন্দুদের তীর্থস্থান হিসেবে বিখ্যাত। একজনের পর একজন তীর্থযাত্রী মেরে ভয়ানক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল একটা চিতা বাঘ। ৪০০-এর বেশি মানুষ যায় ওটার পেটে। পানারের মানুষখেকো, মোহন, চুকা ও থকের মানুষখেকো বাঘসহ অনেকগুলো বাঘ, আর চিতা বাঘ মারেন একে একে।
করবেটের কথা গোটা পৃথিবীর মানুষ জানতে পারে ১৯৪৪ সালের পর, যখন বই লেখা শুরু করেন তিনি। তবে অনেক বাঘ মারলেও নিজে বাঘ ভালোবাসতেন করবেট। শুধু তাই না বাঘকে তিনি বলেছেন, ‘বিশিষ্ট ভদ্রলোক’।
৭.
নভেম্বরের শেষ। নৈনিতালে হিম ঠান্ডা কামড় বসাচ্ছে শরীরে। বহু দিনের সঙ্গী রাম সিংহকে তৈরি থাকতে বলেছিলেন করবেট। সময়মতো হাজির সে। দেখে, সাহেব বারান্দায় পায়চারি করছেন। হাতের টর্চের আলো ফেললেন একটা বস্তার ওপর। ইঙ্গিত পেয়ে রাম সিংহ কাঁধে তুলি নিল ওটা। অবাক হলো রাম সিংহ, বেশ ভারি বস্তা। তবে ওটায় কী আছে জানতে চাইল না একবারও। সঙ্গে আসা একজন লোকসহ অপেক্ষা করতে লাগল, পরের নির্দেশের। জঙ্গলের দিকে ইশারা করলেন সাহেব। তারপর তিন জোড়া পা দ্রুত বেগে চলল বনের গভীরে। সূর্যের আলোয় আকাশ হেসে উঠতে কখনো অনেকই দেরি।
মিনিট চল্লিশেক হাঁটার পর দাঁড়ানোর নির্দেশ এল। বন এখানে অনেক গভীর। আরও ভেতরে একটা ঝোপের মধ্যে আলো ফেললেন। বস্তা খুললেন সাহেব। শাবল, কোদাল, তিনটি রাইফেল, আর দুটো শটগান বেরোল ভেতর থেকে। এরই একটা ১৯২৬ সালে মৃত্যু ডেকে এনেছিল রুদ্রপ্রয়াগের চিতা বাঘটার। তাঁর নির্দেশে রাম সিংহরা গর্ত খুঁড়তে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। বেশ গভীর হলে একটা একটা করে অস্ত্র নামিয়ে রাখতে লাগলেন সেখানে। তবে নামানোর আগে পরম ভালবাসায় চুমু খেলেন প্রতিটি অস্ত্রে। হাউমাউ করে কাঁদছে রাম সিংহ। তার মাথায় হাত রাখলেন সাহেব। সালটা ছিল ১৯৪৭। আর নিজের সব অস্ত্র মাটি চাপা দেওয়ার কয়েক দিন পরই প্রিয় ভারত ছাড়েন করবেট। বড় বোন ম্যাগিসহ চলে যান কেনিয়ায় নিয়েরিতে। সেখানেই মারা যান, ১৯৫৫ সালে।
৮.
জীবনের একপর্যায়ে বন্যপ্রাণী শিকার ছেড়ে আগাগোড়া সংরক্ষক বনে যান করবেট। শেষ মানুষখেকো শিকার করেন ১৯৩৮ সালে, ওটা ছিল থাকের কুখ্যাত বাঘটা। এর পর আর কোনো বাঘ বা চিতা মেরেছেন, তেমন খবর নেই। জীবনের বাকি সময়টা কাটিয়েছেন বন্যপ্রাণী রক্ষায়। উত্তরাখণ্ডে ভারতের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় বন্যপ্রাণী অভয়ারন্যটির নাম বদলে ১৯৫৭ সালে রাখা হয় জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক। ১৯৩০ সালের দিকে এই অভায়রণ্য স্থাপনে ভূমিকা ছিল করবেটের। ১৯৬৮ সালে বাঘের টিকে থাকা পাঁচটি উপ-প্রজাতির একটির নাম রাখা হয়েছে তাঁর প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্যানথেরা ট্রাইগ্রেস করবেটি।
আজ থেকে ৬৬ বছর আগে এই দিনে (১৯৫৫ সালের ১৯ এপ্রিল) পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন এই শিকারি ও সংরক্ষক। তাই আজ আমার মনটাও ভার। পুরোনো প্রশ্নটা ঘুরেফিরে আসছে মনে—যে ভারতবর্ষকে এত ভালোবাসতেন করবেট, সেখান থেকে কেন চলে গেলেন বহু দূর দেশ কেনিয়ায়?
এই সুযোগে একটা কথা বলে রাখছি কেনিয়ায় রানি এলিজাবথকে নিয়ে তাঁর চমৎকার একটি ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আছে। ট্রি টপস নামে প্রকাশিত হয় সেটি। পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেওয়ার অল্প ক’দিন আগেই মাত্র এটি লেখা শেষ করেছিলেন। চাইলে পড়ে দেখতে পারেন।
৯.
করবেটের শিকার এলাকা হিমালয় অঞ্চল, করবেট ন্যাশনাল পার্ক, কালাধুঙ্গি, নৈনিতাল কোথাও যাওয়া হয়নি। যাওয়া হয়নি করবেট মিউজিয়ামেও। বন্যপ্রাণীদের হাত থেকে গ্রামবাসীদের ফসল বাঁচাতে কালাধুঙ্গিতে সাড়ে চার মাইল লম্বা একটি দেয়াল তুলেছিলেন করবেট। ওটাও যে দেখা হয়নি।
বছর দুয়েক আগে হিমালয়ের ওই দিকটার প্রবেশদ্বার দেরাদুন পর্যন্ত গিয়েই ফিরে এসেছি। হয়তো যাব কখনো। তখনকার অরণ্য পাব না জানি। তারপরও আমাদের দেশের বন-পাহাড় থেকে অনেকই ভালো আছে সেখানকার অরণ্য-বন্যপ্রাণীরা। করবেটের কথা ভাবতে ভাবতে হয়তো ঘুরে বেড়াব হিমালয় অঞ্চলের জঙ্গল-পাহাড়ে।
সূত্র: জিম করবেটের বই, আশাপূর্ণা দেবীর জিম করবেট সমগ্র, আনন্দবাজার পত্রিকা ও ইন্টারনেট।
আরও পড়ুন

আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৩ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।
২ ঘণ্টা আগে
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’—ধরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন, শেরেবাংলা নগর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৩য় ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’ (Climate Justice Assembly 2025)।
১ দিন আগে
জাপানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আঘাত হেনেছে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। জাপান আবহাওয়া সংস্থার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৪ মিনিট (গ্রিনিচ মান সময় ২টা ৪৪ মিনিট) নাগাদ এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
২ দিন আগে
বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ শুক্রবার ঢাকার অবস্থান ১০ম। অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি। আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৬৭, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

আজ রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে সকালবেলা রাজধানী ঢাকার আকাশ ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল। তাপমাত্রাও গতকাল শনিবারের চেয়ে বেড়েছে। আগের দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৯ থেকে সামান্য বেড়ে আজ সকাল ৬টায় ছিল ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৩ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১৪ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৪ মিনিটে।

আজ রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে সকালবেলা রাজধানী ঢাকার আকাশ ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল। তাপমাত্রাও গতকাল শনিবারের চেয়ে বেড়েছে। আগের দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৯ থেকে সামান্য বেড়ে আজ সকাল ৬টায় ছিল ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৩ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১৪ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৪ মিনিটে।

কালাধুঙ্গির বোর নদীর তীরে বহু পুরনো এক কাঠের সেতু। এর এক কোনে দেয়ালে হেলান দিয়ে গল্প শুনছে আট থেকে আঠারো বছরের চৌদ্দজন ছেলে-মেয়ে। গল্পের বক্তা ড্যানশি নামের এক আইরিশ। সময়টা রাত। তাই চৌহদ্দির জঙ্গল থেকে কাঠকুটো এনে আগুন জ্বেলেছিল খুদে শ্রোতারা।
১৯ এপ্রিল ২০২১
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’—ধরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন, শেরেবাংলা নগর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৩য় ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’ (Climate Justice Assembly 2025)।
১ দিন আগে
জাপানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আঘাত হেনেছে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। জাপান আবহাওয়া সংস্থার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৪ মিনিট (গ্রিনিচ মান সময় ২টা ৪৪ মিনিট) নাগাদ এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
২ দিন আগে
বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ শুক্রবার ঢাকার অবস্থান ১০ম। অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি। আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৬৭, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।
২ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’—ধরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে আগামী ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন, শেরেবাংলা নগর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৩য় ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’ (Climate Justice Assembly 2025)।
বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক মোট ১৪টি দেশের প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, গবেষক, নীতিনির্ধারক ও সামাজিক আন্দোলনের নেতাদের উপস্থিতিতে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই জলবায়ু অধিকারভিত্তিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
সম্মেলনের আগে আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সমাবেশের ঘোষণা দেন অ্যাসেম্বলি কমিটির সদস্যসচিব শরীফ জামিল।
‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর লক্ষ্য, প্রস্তুতি, অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি অতিথিসহ দুই দিনের সেশন পরিকল্পনা, র্যালি এবং অন্যান্য আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুই দিনব্যাপী এই সমাবেশের প্রথম দিন ১৩ ডিসেম্বর সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ক্লাইমেট র্যালিতে অংশগ্রহণ এবং র্যালি শেষে ক্লাইমেট জাস্টিজ এসেম্বলি ২০২৫ উদ্বোধন করবেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও ধরার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এই উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
দিনব্যাপী প্রোগ্রামে ৩টি প্লান্যারি সেশন থাকবে। বাংলাদেশে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল থেকে আসা ভুক্তভোগীরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য দেবেন।
দ্বিতীয় দিনে ১৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় সমাবেশের প্রথম দিনের আলোচনার সারসংক্ষেপ, সুপারিশ ও করণীয় নিয়ে উপস্থাপন করা হবে ‘ড্রাফট অ্যাসেম্বলি ডিক্লারেশন’।
শরীফ জামিল বলেন, ‘প্রান্তিক এবং অপ্রান্তিক সকল মানুষের সচেতনতার মধ্য দিয়েই রূপান্তরের বাস্তবতার ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সেই লক্ষ্যে এই জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫।’
ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর আহ্বায়ক ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘পরিবেশ ও জলবায়ু বিশ্বব্যাপী হুমকির মুখে, ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের পরিবেশকর্মীরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছে; যা একটি মহৎ কাজ। কোনো কিছুর বিনিময়ে এ কাজের মূল্যায়ন সম্ভব নয়। কিন্তু এই ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থায়ন প্রয়োজন। আমার যে জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ করতে যাচ্ছি, তাতে অনেক সহযোগীর সহযোগিতা প্রয়োজন রয়েছে, তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সঠিক রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে জলবায়ু ন্যায্যতার ন্যায্য প্রতিফলন পাওয়া সম্ভব।
এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন কো-কনভেনর, ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর কো-কনভেনর এম এস সিদ্দিকি, সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল হক, শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিলা আজিজ এবং জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫ এর সমন্বয়ক এবং সহযোগী সমন্বয়কেরা।
জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫-এর আয়োজক ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা)। সহযোগী আয়োজক সিপিআরডি, কোস্ট ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিসেস, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, মিশনগ্রিন বাংলাদেশ, ব্রাইটার্স, ওএবি ফাউন্ডেশন, এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেবট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, অলটারনেটিভ ল কালেকটিভ, আর্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক, ফসিল ফুয়েল নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি ইনিশিয়েটিভ, ফসিল ফ্রি জাপান, গ্রিন কাউন্সিল, জাপান সেন্টার ফর আ সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি, এলডিসি ওয়াচ, মাইনস, মিনারেলস অ্যান্ড পিপল, নেটজভের্ক এনার্জিভেন্ডে, ফিলিপাইন মুভমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট ফর ইকুটেবল ডেভেলপমেন্ট, রিভারফক্স, সিডব্লিউটি।

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’—ধরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে আগামী ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন, শেরেবাংলা নগর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৩য় ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’ (Climate Justice Assembly 2025)।
বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক মোট ১৪টি দেশের প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, গবেষক, নীতিনির্ধারক ও সামাজিক আন্দোলনের নেতাদের উপস্থিতিতে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই জলবায়ু অধিকারভিত্তিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
সম্মেলনের আগে আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সমাবেশের ঘোষণা দেন অ্যাসেম্বলি কমিটির সদস্যসচিব শরীফ জামিল।
‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর লক্ষ্য, প্রস্তুতি, অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি অতিথিসহ দুই দিনের সেশন পরিকল্পনা, র্যালি এবং অন্যান্য আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুই দিনব্যাপী এই সমাবেশের প্রথম দিন ১৩ ডিসেম্বর সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ক্লাইমেট র্যালিতে অংশগ্রহণ এবং র্যালি শেষে ক্লাইমেট জাস্টিজ এসেম্বলি ২০২৫ উদ্বোধন করবেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও ধরার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এই উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
দিনব্যাপী প্রোগ্রামে ৩টি প্লান্যারি সেশন থাকবে। বাংলাদেশে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল থেকে আসা ভুক্তভোগীরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য দেবেন।
দ্বিতীয় দিনে ১৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় সমাবেশের প্রথম দিনের আলোচনার সারসংক্ষেপ, সুপারিশ ও করণীয় নিয়ে উপস্থাপন করা হবে ‘ড্রাফট অ্যাসেম্বলি ডিক্লারেশন’।
শরীফ জামিল বলেন, ‘প্রান্তিক এবং অপ্রান্তিক সকল মানুষের সচেতনতার মধ্য দিয়েই রূপান্তরের বাস্তবতার ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সেই লক্ষ্যে এই জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫।’
ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর আহ্বায়ক ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘পরিবেশ ও জলবায়ু বিশ্বব্যাপী হুমকির মুখে, ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের পরিবেশকর্মীরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছে; যা একটি মহৎ কাজ। কোনো কিছুর বিনিময়ে এ কাজের মূল্যায়ন সম্ভব নয়। কিন্তু এই ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থায়ন প্রয়োজন। আমার যে জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ করতে যাচ্ছি, তাতে অনেক সহযোগীর সহযোগিতা প্রয়োজন রয়েছে, তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সঠিক রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে জলবায়ু ন্যায্যতার ন্যায্য প্রতিফলন পাওয়া সম্ভব।
এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন কো-কনভেনর, ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর কো-কনভেনর এম এস সিদ্দিকি, সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল হক, শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিলা আজিজ এবং জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫ এর সমন্বয়ক এবং সহযোগী সমন্বয়কেরা।
জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫-এর আয়োজক ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা)। সহযোগী আয়োজক সিপিআরডি, কোস্ট ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিসেস, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, মিশনগ্রিন বাংলাদেশ, ব্রাইটার্স, ওএবি ফাউন্ডেশন, এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেবট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, অলটারনেটিভ ল কালেকটিভ, আর্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক, ফসিল ফুয়েল নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি ইনিশিয়েটিভ, ফসিল ফ্রি জাপান, গ্রিন কাউন্সিল, জাপান সেন্টার ফর আ সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি, এলডিসি ওয়াচ, মাইনস, মিনারেলস অ্যান্ড পিপল, নেটজভের্ক এনার্জিভেন্ডে, ফিলিপাইন মুভমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট ফর ইকুটেবল ডেভেলপমেন্ট, রিভারফক্স, সিডব্লিউটি।

কালাধুঙ্গির বোর নদীর তীরে বহু পুরনো এক কাঠের সেতু। এর এক কোনে দেয়ালে হেলান দিয়ে গল্প শুনছে আট থেকে আঠারো বছরের চৌদ্দজন ছেলে-মেয়ে। গল্পের বক্তা ড্যানশি নামের এক আইরিশ। সময়টা রাত। তাই চৌহদ্দির জঙ্গল থেকে কাঠকুটো এনে আগুন জ্বেলেছিল খুদে শ্রোতারা।
১৯ এপ্রিল ২০২১
আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৩ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।
২ ঘণ্টা আগে
জাপানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আঘাত হেনেছে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। জাপান আবহাওয়া সংস্থার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৪ মিনিট (গ্রিনিচ মান সময় ২টা ৪৪ মিনিট) নাগাদ এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
২ দিন আগে
বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ শুক্রবার ঢাকার অবস্থান ১০ম। অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি। আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৬৭, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আঘাত হেনেছে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। জাপান আবহাওয়া সংস্থার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৪ মিনিট (গ্রিনিচ মান সময় ২টা ৪৪ মিনিট) নাগাদ এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০ কিলোমিটার গভীরে। মূল কম্পনের পর বেশ কয়েকটি ছোট আফটারশকও অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে জাপানের পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাগুলোর জন্য সতর্কতা হিসেবে ‘সুনামি অ্যাডভাইজরি’ জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া সংস্থা সতর্ক করে জানিয়েছে, ঢেউগুলো প্রায় এক মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে, তাই উপকূলবাসীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে একই অঞ্চলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। এতে বহু বাসিন্দা আহত হয়েছেন। সর্বশেষ পরিস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি।

জাপানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আঘাত হেনেছে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। জাপান আবহাওয়া সংস্থার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৪ মিনিট (গ্রিনিচ মান সময় ২টা ৪৪ মিনিট) নাগাদ এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০ কিলোমিটার গভীরে। মূল কম্পনের পর বেশ কয়েকটি ছোট আফটারশকও অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে জাপানের পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাগুলোর জন্য সতর্কতা হিসেবে ‘সুনামি অ্যাডভাইজরি’ জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া সংস্থা সতর্ক করে জানিয়েছে, ঢেউগুলো প্রায় এক মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে, তাই উপকূলবাসীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে একই অঞ্চলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। এতে বহু বাসিন্দা আহত হয়েছেন। সর্বশেষ পরিস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি।

কালাধুঙ্গির বোর নদীর তীরে বহু পুরনো এক কাঠের সেতু। এর এক কোনে দেয়ালে হেলান দিয়ে গল্প শুনছে আট থেকে আঠারো বছরের চৌদ্দজন ছেলে-মেয়ে। গল্পের বক্তা ড্যানশি নামের এক আইরিশ। সময়টা রাত। তাই চৌহদ্দির জঙ্গল থেকে কাঠকুটো এনে আগুন জ্বেলেছিল খুদে শ্রোতারা।
১৯ এপ্রিল ২০২১
আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৩ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।
২ ঘণ্টা আগে
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’—ধরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন, শেরেবাংলা নগর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৩য় ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’ (Climate Justice Assembly 2025)।
১ দিন আগে
বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ শুক্রবার ঢাকার অবস্থান ১০ম। অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি। আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৬৭, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ শুক্রবার ঢাকার অবস্থান ১০ম। অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি।
আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৬৭, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। আর শীর্ষে থাকা দিল্লির বায়ুমান ৩৮৫, যা বিপজ্জনক বাতাসের নির্দেশক।
শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভিয়েতনামের হ্যানয়, ভারতের কলকাতা, কুয়েতের কুয়েত সিটি ও পাকিস্তানের লাহোর। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৫৫, ২৪৬, ২১৭ ও ২১১।
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ শুক্রবার ঢাকার অবস্থান ১০ম। অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি।
আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৬৭, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। আর শীর্ষে থাকা দিল্লির বায়ুমান ৩৮৫, যা বিপজ্জনক বাতাসের নির্দেশক।
শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভিয়েতনামের হ্যানয়, ভারতের কলকাতা, কুয়েতের কুয়েত সিটি ও পাকিস্তানের লাহোর। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৫৫, ২৪৬, ২১৭ ও ২১১।
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

কালাধুঙ্গির বোর নদীর তীরে বহু পুরনো এক কাঠের সেতু। এর এক কোনে দেয়ালে হেলান দিয়ে গল্প শুনছে আট থেকে আঠারো বছরের চৌদ্দজন ছেলে-মেয়ে। গল্পের বক্তা ড্যানশি নামের এক আইরিশ। সময়টা রাত। তাই চৌহদ্দির জঙ্গল থেকে কাঠকুটো এনে আগুন জ্বেলেছিল খুদে শ্রোতারা।
১৯ এপ্রিল ২০২১
আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৩ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।
২ ঘণ্টা আগে
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’—ধরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন, শেরেবাংলা নগর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৩য় ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’ (Climate Justice Assembly 2025)।
১ দিন আগে
জাপানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আঘাত হেনেছে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। জাপান আবহাওয়া সংস্থার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৪ মিনিট (গ্রিনিচ মান সময় ২টা ৪৪ মিনিট) নাগাদ এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
২ দিন আগে