Ajker Patrika

জীবনের নতুন পাঠ

ফজলুল কবির
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২১, ২০: ৩০
জীবনের নতুন পাঠ

মুখ ভার করা আকাশের নিচে এ যেন এক বিজন শহর। বাস–গাড়ির হর্নের যন্ত্রণায় যে শহর মুখ ব্যাদান করে থাকে, সে শহরে কী ভয়ানক কবরের নিস্তব্ধতা! আরেকটু হলেই বলা যেত—কোথাও কেউ নেই। কিন্তু বলা যাচ্ছে না। কারণ, জনশূন্য এই শহরের প্রতিটি পথেই একটু পরপর সজাগ চোখ মেলে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। চোখে পড়ছে সেনাবাহিনীর গাড়ির টহল। সবাই সতর্ক–সজাগ।

না, কোনো জটিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে নয়। কোথাও কোনো বোমা ফোটেনি। নতুন কোনো জঙ্গি হামলা বা এমন কোনো ছকের কথাও শোনা যায়নি। তবে? করোনা। হ্যাঁ, করোনার কারণেই শহরের পথগুলো আর প্রিয় চেনারূপে ফিরছে না। বারবার আশা জাগছে, এবার বুঝি হবে। তারপর আবার সেই আগের মতো আগল তুলে দিতে হয় দরজায়। সরকার থেকে শুরু করে সুধীজন—সবাইকে বাধ্য হয়ে অনুরোধ করতে হয়, ‘ঘরে থাকুন’ বলে।

করোনার কারণেই কাঁচাবাজার বা মাছবাজারে নোংরা পানি ছলকে দিয়ে অসাবধানে কেউ হেঁটে যাচ্ছে না গটগট করে। চরম বিরক্তিতে ভ্রু কুঞ্চিত হচ্ছে না আর। পথে দীর্ঘ জ্যামের দেখা নেই। জ্যামহীন রাস্তাও যে একটা হাহাকারের জন্ম দিতে পারে, তা এখনকার এই শহর না দেখলে বোঝার উপায় নেই।

এই শহরের মানুষ রাস্তায় বা ফুটপাতে হাজারটা কসরত করে চলতে অভ্যস্ত। একে পাশ কাটিয়ে, তাকে ডিঙিয়ে কায়দা করে চলাটা এখানে রপ্ত করতে হয়। বর্ষায় বা শীত—একেক মৌসুমে চলার ধারায় আনতে হয় নানা পরিবর্তন। অথচ, এই করোনাকাল সবই সমতলে নিয়ে এসেছে। না, ঋতুবদল এখন আগের চেয়ে ভালো বোঝা যাচ্ছে। প্রকৃতি জেগে উঠেছে নবযৌবনে—এসবই সত্য। কিন্তু এই ঋতুবদলের কারণে জীবনের নানা ভাঁজে যে বদল আসে বা আসার কথা, তেমনটি ঠিক আসছে না। গত শীতে যেমন লকডাউন ছিল, এই বর্ষায়ও তেমনি। 

করোনা মোকাবিলার অংশ হিসেবে কঠোর বিধিনিষেধ মানতে হচ্ছে মানুষকে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বেরোনো বারণ। মানুষকে দরজায় খিল দিয়ে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বসে থাকতে হচ্ছে। ফলে বাইরে ধুলা নাকি বৃষ্টি, কাদার সাম্রাজ্য, তা ঘরে বসে টের পাওয়া মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। একটা আস্ত জগৎ হাত-পা গুটিয়ে যেন ঢুকে পড়েছে কোনো এক গোপন গুহায়। রাস্তা থেকে শিশুরা তো সেই কবেই উধাও হয়ে গেছে। এই কদমকালেও পথে পথে থোকা থোকা কদম হাতে তাদের ছুটে আসা আর দেখা যাচ্ছে না। তারা তবে সব গেল কই?

ঈদ গেল। কোরবানি নাকি মানুষ এবার কম দিয়েছে। করোনায় অর্থনীতির ওপর যে প্রভাব পড়েছে, তাতে তো এটাই স্বাভাবিক। ঈদের আগে মানুষের চলাচল সহজ করতে কিছুদিনের জন্য যে লকডাউন শিথিল করা হয়েছিল, তার মেয়াদও শেষ হয়েছে ২৩ জুলাই থেকে। ফলে অল্প কয়েক দিনের জন্য খোলা জানালা দিয়ে ঢোকা স্বস্তির হাওয়া গায়ে মেখে রাস্তায় বেরিয়ে পড়া গণপরিবহন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে শুরু করে বিভিন্ন যানবাহন আবার উধাও হয়ে গেছে। যেন কোনো এক জাদুকর আলগোছে তার রুমালটি ঝেড়ে গেছে। আর সব উধাও হয়ে গেছে পথ থেকে।

এই শূন্য পথে পাহারা দিয়ে দিয়ে ক্লান্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। কত দিন ছুটি পান না তাঁরা? কত দিন এই নির্জীব, নীরব শহর পাহারা দেবেন তাঁরা? ছুটি পাননি বলে যে পুলিশ সদস্যের আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেল ঈদের সময়টাতে, তা তো এ বিষয়টি নিয়ে জরুরিভাবে ভাবার দাবি নিয়ে হাজির। কিন্তু উপায় কী? এদিকে মানুষ তো পারছে না আর। বিশেষত, নিম্ন আয়ের মানুষেরা বাঁচার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছেন না। বিভিন্ন ব্যক্তিপর্যায়ের সহযোগিতাও ফুরিয়ে এসেছে। এখনো যাঁরা টিকে আছেন, তাঁরাও এই কর্মসূচি কত দিন চালাতে পারবেন, বলা মুশকিল। 

বহু মানুষ শহর ছেড়ে গেছে আগেই। সুযোগের শহর ঢাকা, দুর্বার আকর্ষণের ঢাকা এখন আর মানুষকে আশ্রয় দিতে পারছে না। কারণ, এই শহরের ফুটপাতে থাকতে হলেও কড়ি গুনতে হয়। ফলে শহরের সবচেয়ে মুখর অঞ্চল ফুটপাতগুলোও ফাঁকা হয়ে গেছে। চলতি পথে যে ফুটপাতের মানুষগুলোকে উপদ্রব বলে মনে হতো, এখন তাদের অনুপস্থিতি যে কী বিষণ্নতা টেনে আনছে, তা বলবার নয়। রাতের ঢাকা আরও বুক ভার করা। পথে পথে শিশুদের দেখা মেলে তখন। রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া বিভিন্ন সরঞ্জাম বহুমূল্য ধনের মতো ধরে হাঁটে তারা। তাদের চোখ ঘোলাটে। হাতে ধরে থাকা পলিথিনে নতুন করে সয়লাব হওয়া নেশার আকর। সেই পলিথিনে একটু পরপর দম নিয়ে তারা কী যেন ভুলতে চায়। কী ভুলতে চায়? এই নীরব বিষণ্ন শহর, মানুষের পীড়ন, নাকি নিজেকেই? সব সজাগ প্রহরার চোখ এড়িয়ে তারা ঠিক জেগে থাকে রাতে শহরে ঢুলুঢুলু ঘোলাটে চোখে, অন্যদের দিকে ছুড়ে দিয়ে ভীষণ তির্যক প্রশ্নমালা।

আরও পড়ুন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাবিতে শেখ পরিবারের নামে থাকা ৪ হলের নাম পরিবর্তন

জাবি প্রতিনিধি 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শেখ হাসিনা ও তাঁর স্বজনদের নামে থাকা চারটি আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আজ শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আজিজুর রহমান বলেন, ‘গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় শেখ পরিবারের নামে থাকা চারটি হলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

এসব হলের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে রাখ হয়েছে ‘শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক হল’, শেখ রাসেল হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘নবাব সলিমুল্লাহ হল’। এ ছাড়া শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন করে ‘জুলাই চব্বিশ জাগরণী হল’ এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ ফেলানী খাতুন হল’ নাম রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে রত্না বেইলি সেতু ভেঙে ট্রাক আটকা, দুর্ভোগে যাত্রীরা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকাল ৯টার দিকে রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের রত্না বেইলি সেতুর দুটি পাটাতন ভেঙে পাথরবোঝাই ট্রাক আটকে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই পথে সব ধরনের যান চলাচল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক যাত্রী ও ওই পথে চলাচলকারীরা। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জাফলং থেকে ছেড়ে আসা বানিয়াচংগামী পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ব্রিজের ওপর ওঠামাত্রই ব্রিজের দুটি পাটাতন ভেঙে যায়। মুহূর্তেই ট্রাকের পেছনের দুটি চাকা ধসে পড়ে এবং পুরো ট্রাকটি ব্রিজে আটকে যায়।

এতে দীর্ঘ লাইনে আটকা পড়ে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, টমটম, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রোগী এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যবসায়ীরা।

দুর্ঘটনার পর ব্রিজের একপাশ থেকে অন্যপাশে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে ভাঙা অংশ অতিক্রম করছে। এতে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ট্রাকটি ব্রিজে উঠতেই জোরে শব্দ হয়। একটু পরই দেখি পাটাতন নিচে ধসে গেছে। ভাগ্য ভালো যে ট্রাকটি পুরোপুরি নিচে পড়ে যায়নি। তবে এখন তো ও পথে চলাচলকারীরা আটকা পড়ে আছে।’

যাত্রীরা জানান, রত্না বেইলি ব্রিজটি বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে—এমন আশঙ্কা দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এদিকে যাত্রীদের দাবি, এখানে যেন বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে দ্রুত স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হয়, যাতে প্রতিদিনের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করার কাজ চলছে। পাথরবোঝাই ট্রাকটিতে বেশি লোড থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর বেলাব উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদের তীর থেকে আব্দুর রশিদ (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর তীর থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

আব্দুর রশিদ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুরী গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন অটোরিকশাচালক; তবে নিয়মিত আড়িয়াল খাঁ নদে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা ছিল তাঁর নেশা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৬টার দিকে ভাওয়ালেরচর এলাকায় নদীর পাড়ে রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশে খবর দেন। লাশের পাশেই মোবাইল ফোন ও অটোরিকশাটি ছিল। পরে স্বজনেরা এসে লাশ শনাক্ত করেন। আব্দুর রশিদের মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ মনে করছে, তিনি দুষ্কৃতকারীর হামলার শিকার হয়েছেন।

নিহত ব্যক্তির ভাই কাজল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত অটোরিকশা চালিয়ে তারপর নদীর পাড়ে বসে মাছ শিকার করে বাড়ি ফিরত ভাই। কিন্তু গতকাল রাতে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে খবর পেয়ে নদীর পাড়ে এসে ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পাই।’

নিহত ব্যক্তির ছেলে হৃদয় বলেন, ‘রাতে বাড়ি না ফেরায় কল দিলে ফোন বন্ধ পাই। সকালে খবর শুনে নদীর পাড়ে এসে বাবার মরদেহ, মোবাইল ও অটোরিকশা পড়ে থাকতে দেখি।’

বেলাব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি পিবিআইকে জানানো হয়েছে। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬৭ বছর পর রামেক হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অবশেষে ৬৮ বছরে পা দিতে চলা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মানসিক রোগীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মনোরোগ ওয়ার্ড চালু হলো। হাসপাতালটির বহির্বিভাগে প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানসিক রোগী চিকিৎসা নিতে এলেও ভর্তির সুযোগ ছিল না। গুরুতর রোগীদের কিছু ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগে রাখা হলেও, পূর্ণাঙ্গ ওয়ার্ডের অভাবে এতদিন অনেককেই ফিরিয়ে দিতে হতো।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পর এই প্রথম ২৫ শয্যার একটি সুসজ্জিত মনোরোগ ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। হাসপাতালটির পুরাতন আইসিইউ ভবনে এই নতুন ওয়ার্ডটি গড়ে তোলা হয়েছে।

এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট বিন্যাস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১০টি, নারীদের জন্য ৭ টি, শিশু-কিশোরদের জন্য ৫টি এবং উচ্চ পর্যবেক্ষণের জন্য ৩টি শয্যা সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার জন্য থেরাপি ও কাউন্সেলিং রুমসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওয়ার্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা আলী।

এই ওয়ার্ডটি চালুর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল কলেজের স্বীকৃতি বজায় রাখা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী মার্চ মাসেই ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশন (ডব্লিউএফএমই) থেকে একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে আসবে। পরিদর্শনকালে মনোরোগ বিভাগের ওয়ার্ড না পেলে কলেজের পয়েন্ট কমে যাওয়ার এবং অ্যাক্রিডিটেশনে বড় ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা ছিল। এতে করে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা বা পড়াশোনা করার সুযোগ কমে যেত। এ ছাড়া এফসিপিএস এবং ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্যও এমন একটি ওয়ার্ড জরুরি ছিল।

কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ শুনে সদ্যবিদায়ী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ দ্রুত এই ওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ নেন এবং গত বুধবার এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময় তাঁর সঙ্গে নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামসহ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে যে ৬৭ বছরেও মানসিক রোগীদের জন্য ওয়ার্ড চালু হয়নি, এটি সত্যিই অবাক হওয়ার মতো বিষয়। আমরা প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি চালু করেছি। এখন থেকে এ অঞ্চলের মানসিক রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি থেকেও উন্নত চিকিৎসা নিতে পারবেন।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি রামেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর উদ্যোগেগত ২৩ অক্টোবর শুধু সাপে কাটা রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালু করা হয়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বিশেষায়িত ওয়ার্ড চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে একজনও সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়নি, যেখানে আগে প্রায় প্রতিদিনই এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতো। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নতুন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পি কে এম মাসুদ-উল-ইসলামের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত