Ajker Patrika

নাসিক নির্বাচন: পরিবর্তন না প্রত্যাবর্তন?

আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ১৯
নাসিক নির্বাচন: পরিবর্তন না প্রত্যাবর্তন?

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন জমে উঠেছে। আগামী ১৬ জানুয়ারি এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে না থাকলেও দলের একজন সিনিয়র নেতা সম্মিলিত নাগরিক জোটের ব্যানারে প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে কিছুটা ভিন্ন মেজাজ ও মাত্রা এনে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি আগেও মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে বিরোধ আছে। পুরো দল এককাট্টা হয়ে আইভীর পক্ষে ভোটের লড়াইয়ে না থাকার আশঙ্কা আছে। স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমান বরাবরই আইভীর বিরুদ্ধে। তাঁদের এই বিরোধ কোনো গোপন বিষয় নয়। সবাই জানেন। দলের হাইকমান্ডের কাছেও বিষয়টি অজানা নয়। আগের দুই নির্বাচনেও শামীম ওসমানের বিরোধিতা মোকাবিলা করেই জয়ী হয়েছিলেন আইভী। নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের যেমন প্রভাব আছে, তেমনি আইভীও উড়ে এসে জুড়ে বসা কেউ নন। আইভীর বাবা আলী আহমেদ চুনকাও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতা ছিলেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদ আইভী বঞ্চিত হননি। এবারও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বিজয়ী করতে নেতা–কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘প্রার্থী অনেকেই ছিলেন, কিন্তু একজনকে যেহেতু মনোনয়ন দিতে হয়, তাই আমি আইভীকে দিয়েছি। আইভী নৌকার প্রার্থী, সবাই নৌকার বিজয়ে কাজ করবেন, এটাই আমি চাই।’ দলীয় প্রধানের এই আকাঙ্ক্ষা পূরণে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ এক হয়ে কাজ করবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে শামীম ওসমানকে এখনো আইভীর পাশে দেখা যায়নি। শামীম তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করবেন, তেমন কোনো আলামত এখনো নারায়ণগঞ্জে ভোটারদের সামনে দৃশ্যমান হয়নি।

আওয়ামী লীগ ও নৌকার প্রধান প্রতিপক্ষ সাধারণত ভাবা হয় বা ধরা হয় বিএনপি বা ধানের শীষকে। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে বেনামে বিএনপি আছে, কিন্তু ধানের শীষ নেই। তবে আওয়ামী লীগবিরোধী সব শক্তি এক হয়ে নারায়ণগঞ্জে আইভী তথা নৌকার জয় আটকে দিতে চাইছে বলে একধরনের প্রচারণা চলছে। নারায়ণগঞ্জের ভোটাররা পরিবর্তন চান, নাকি আইভীর প্রতি তাদের আস্থা-বিশ্বাস অটুট আছে, তা প্রমাণ হবে ভোটের দিন। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ ও কৌতূহল বেড়েছে। এমনও মনে করা হচ্ছে, নাসিক নির্বাচন পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের একটি মহড়া হিসেবে গণ্য হতে পারে। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে যাঁরা লড়ছেন, তাঁদের সবাই জয় পাচ্ছেন না। অনেক জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ। নারায়ণগঞ্জে যদি নৌকার প্রতিপক্ষ বিজয়ী হয়, তাহলে সেটা আওয়ামী লীগের জন্য ভালো বার্তা দেবে না, কিন্তু আওয়ামী লীগবিরোধীদের নৈতিক শক্তি বাড়াতে সহযোগিতা করবে।

আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকে প্রার্থী নিয়ে ভোটের মাঠে থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নেই বিএনপি। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে কেন্দ্র থেকে স্পষ্ট ঘোষণা দিলেও দলটির স্থানীয় নেতারা নেমেছেন ভোটযুদ্ধে। মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বিএনপির পরিচিত মুখ তৈমূর আলম খন্দকার। বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত অনেকেই কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে তাঁরা সবাই যদি শক্তভাবে মাঠে থাকেন, তবে মেয়র পদে আইভীর সঙ্গে তৈমূর আলমের লড়াই শেষ মুহূর্তে জমে উঠবে। নাসিক নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ পোষণ করে ফরম তুলেও শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল। গত বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন তাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দেননি।

সে ক্ষেত্রে নাসিক নির্বাচনে একক প্রার্থী (স্বতন্ত্র) হিসেবে মাঠে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার। সম্মিলিত নাগরিক জোটের মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন এমন আভাস দিয়ে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ২৭ ডিসেম্বর প্রতীক পাওয়ার পর সবকিছু দেখতে পাবেন। তাঁর দাবি, ‘আমি শুধু বিএনপির প্রার্থী না, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ সব দলের সমর্থন রয়েছে আমার প্রতি।’ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতা এস এম আকরাম এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারকে সমর্থন দেওয়ায় ভোটের মাঠে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির একাংশের প্রকাশ্য ও গোপন ভূমিকা ভোটের অঙ্কে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বর্তমান মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারসহ ছয়জনের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে দুজনের প্রার্থিতা। জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত বাছাই অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। অন্যান্য বৈধ প্রার্থীর মধ্যে আছেন খেলাফত মজলিসের মেয়র প্রার্থী এ বি এম সিরাজুল মামুন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী জসিম উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা মাসুম বিল্লাহ ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির প্রার্থী রাশেদ ফেরদৌস।

বিভুরঞ্জন সরকার,সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা খেলাফত মসলিস, খেলাফত আন্দোলন ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা যদি শেষ পর্যন্ত ভোটযুদ্ধে থাকেন এবং তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গে তাঁদের কোনো গোপন বা প্রকাশ্য সমঝোতা না হয়, তাহলে সেলিনা হায়াৎ আইভীর জন্য বড় সমস্যা হবে না বলে কোনো কোনো রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করছেন। তবে হেফাজতে ইসলাম তৈমূর আলম খন্দকারকে সমর্থন করায় নির্বাচনে ফলাফলে কোনো প্রভাব পড়বে কি না, সেটা এখনই বলা যাবে না। লক্ষণীয় যে হেফাজত সরকারকে চাপে রাখার কোনো সুযোগই হাতছাড়া করছে না।

আওয়ামী লীগ এবং নৌকার নিজস্ব ভোটব্যাংক যেমন আছে, তেমনি আইভীরও নিজের জনপ্রিয়তা আছে। আইভী মানুষের মধ্যে থেকে কাজ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের বড় কোনো অভিযোগের কথাও শোনা যায় না। অন্যদিকে বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েও মানুষের মধ্যে উৎসাহ আছে, তেমন শোনা যায় না। তৈমূর আলম খন্দকার দলের অপ্রকাশ্য সমর্থন নিয়ে কতটা অগ্রসর হতে পারবেন, দেখার বিষয় সেটাও।

১৯ ডিসেম্বর বিকেলে বন্দরের কদমরসুল দরগায় জিয়ারতে গিয়ে তৈমূর আলম খন্দকার নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, এই সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে এই নির্বাচন। যদি এই নির্বাচনে সরকার কারচুপি করে তাহলে এই নারায়ণগঞ্জ থেকেই শুরু হবে সরকার পতনের আন্দোলন। সরকার পতনের এমন আন্দোলনের কথা বিএনপির শীর্ষ নেতারাও অনেক বলেছেন, মানুষ এসব কথায় খুব গুরুত্ব দেয় বলে মনে হয় না। এদিকে আচরণবিধি ভঙ্গ করে প্রতিদিনই তৈমূর আলম ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠছে। প্রতীক পাওয়ার পর নির্বাচনী প্রচারণা আরও জমজমাট হয়ে উঠলে স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার সব দিক সামাল দিয়ে পরিস্থিতি তাঁর অনুকূলে রাখতে পারেন কি না, দেখতে হবে সেটাও। যেহেতু দলীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচন করছে না, সেহেতু দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত হয়ে তৈমূর আলম খন্দকারের পক্ষে ভোট চাইলে সেটা নীতিগতভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

নাসিকের টানা দুবারের মেয়র আইভীও এই নির্বাচনকে সহজভাবে নিচ্ছেন বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। বাইরের প্ররোচনার বিষয়ে তৈমূরকে সতর্ক করে আইভী বলেছেন, ‘আপনি আমার বাবার শিষ্য ছিলেন, এখন চাচা-ভাতিজি নির্বাচন করব, তাতে অসুবিধা কোথায়। ১৬ জানুয়ারি জনগণ রায় দিয়ে তাঁদের মেয়র নির্বাচন করবেন।’ তিনি বলেছেন, ‘২০০৩, ২০১১, ২০১৬ সালে নির্বাচন যেভাবে সুষ্ঠু হয়েছে, আশা করি আগামী ১৬ জানুয়ারির নির্বাচনও নিরপেক্ষ হবে।’

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, নারায়ণগঞ্জে বিএনপির তৈমূর আলমের নিজস্ব ইমেজ রয়েছে। আছে দলীয় ভোটও। কিন্তু ধানের শীষ প্রতীকবিহীন তৈমূর ভোটের মাঠে কতটা শক্ত প্রার্থী—সময় গড়ালে তা বোঝা যাবে। আবার নাসিকের প্রথম নির্বাচনে ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে নীরব আত্মসমর্পণের ঘটনায় ভোটের মাঠে তাঁর প্রতি আস্থা-অনাস্থার হিসাব রয়েছে।

নাসিক নির্বাচনের ফলাফল রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দিতে পারে বলে যাঁরা আশা করছেন, তাঁদের জন্য কোনো সুখবর অপেক্ষা থাকতে পারে–এমন ভবিষ্যদ্বাণী দেওয়ার মতো রাজনৈতিক গণক কেউ আছেন বলে মনে হয় না। 

বিভুরঞ্জন সরকার,সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত