জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ

বয়স, পেশা ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বয়োজ্যেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ বাংলা সিনেমার অভিনয়ের সম্রাট, মহানায়ক উত্তম কুমারের একনিষ্ঠ অনুরাগী। তারা একান্তে উত্তমকে বাঁচিয়ে রেখেছেন স্মৃতির মণিকোঠায়। তারা উপলব্ধি করেছেন, সংবেদনশীল ও মানব দরদি উত্তম কুমার তাঁর সিনেমায় জীবনের থেকেও বড়, চিরন্তন এক প্রেমিক-প্রতিমূর্তি গড়েছিলেন অভিনয়ের মাধ্যমে এবং তিনি তা করেছিলেন জেনে-বুঝেই। দেখে মনে হয়, একাডেমিশিয়ানরা সিনেমায় উত্তম কুমারের অভিনয়ের ব্যাপারটা পূর্বধারণা বা ঘরানার নিরিখে দেখলেও দর্শক তা দেখেছে হৃদয় দিয়ে। তাই আমাদের সিনেমা পণ্ডিতেরা উত্তম কুমারকে বুঝে উঠতে পারেননি, বোঝার চেষ্টাও করেননি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংগঠক ও চলচ্চিত্র আন্দোলনের নেতাদের মনে এ বিষয়ে সচেতনতা ও সুস্পষ্ট বোঝাপড়া সৃষ্টি না হওয়ার কারণেই সম্ভবত পাশের বাড়ির অভিনয় শিল্পীর বিরাটত্বের বিষয়টি তাদের কাছে যোগ্য মর্যাদা পায়নি বা অবহেলিতই থেকে গেছে।
অভিনয়ের বরপুত্র উত্তম কুমারের ৪১ তম প্রয়াণবার্ষিকীতে এ কথা বলতেই হচ্ছে, কালেভদ্রে সংবাদপত্রের বিনোদন পাতা ছাড়া, বাংলাদেশের একাডেমিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিমণ্ডলে বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মহানায়ক’ উত্তম কুমারকে নিয়ে তেমন একটা আলোচনা হয় না বললেই চলে। অনলাইনে কিছু গ্রুপ অ্যাকটিভিটি থাকলেও উত্তম-চর্চার কোনো সাংগঠনিক কাঠামোর ভিত্তি বা তৎপরতা বাংলাদেশে এখনো দৃশ্যমান নয়। এর কারণ হতে পারে ঐতিহাসিক ও খণ্ডিত ভৌগোলিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপট, বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যক্ষভাবে উত্তম কুমার সম্পর্কে জানাশোনার সুযোগ ও সময় দুটোই কম পেয়েছে।
এখানকার চলচ্চিত্রের অভিনয়ের মান এখনো অপরিপক্ব অবস্থায় রয়েছে। তা ছাড়া যাত্রা, পালাগান ও মঞ্চ অধ্যুষিত বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের অভিনয়ের স্বাতন্ত্র্যের বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত। এমনকি সম্প্রতি যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিভাগ খোলা হয়েছে এবং সরকারিভাবে যে ‘বাংলাদেশ সিনেমা ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট’ (বিসিটিআই) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর কারিকুলামেও অভিনয়ের বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব পায়নি এখনো। একদল একাডেমিশিয়ানের মনে এ ধারণাও বদ্ধমূল হয়তো—উত্তম কুমার বাণিজ্যিক সিনেমার অভিনেতা, তিনি ইউরোপীয় সিনেমার কেউ নন, তাঁকে নিয়ে এত মাতামাতির কী আছে? তাঁরা উপমহাদেশের চলচ্চিত্র আলোচনার ক্ষেত্রে সত্যজিৎ-মৃণাল-ঋত্বিক–এর বাইরে ইদানীং অপর্ণা সেন-ঋতুপর্ণ ঘোষ-মণিকাউল-মীরা নায়ার, আর নানামুখী আলোচনায় স্মিতা পাতিল-সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-শাবানা আজমি পর্যন্ত আলোচনা করতে রাজি আছেন, এর বাইরে একদম নয়।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমণ্ডলের যখন এই ঘোর অমানিশা, তখন প্রশ্ন হলো এ দেশের মানুষের কাছে উত্তম কুমার এত জনপ্রিয় হলেন কীভাবে? বিশেষত, মৃত্যুর চার দশক পরও কীভাবে তিনি দর্শক হৃদয়ে অক্ষয়–অব্যয় আসন ধরে রাখতে পারলেন? মনে রাখা প্রয়োজন, বাংলাদেশের উত্তম কুমার দেশভাগ-পরবর্তী সময়ের চলচ্চিত্রের প্রতিনিধি। তখন সার্বিকভাবে দেশভাগের পর বেদনা-জর্জরিত ছিল বাংলার উভয় অংশের মানুষের মন। দেশভাগের দগদগে ক্ষত এবং আর্থিক সমস্যা তখন বিভক্ত দুই বাংলার ঘরে ঘরে। সাধারণ দর্শক এই দৈন্য ও দুর্দশার বিপরীতে বাংলা ছবির পর্দায় তাদেরই জীবনের ছোট ছোট সাফল্য ও অবদমিত আকাঙ্ক্ষার চিত্রায়ণ দেখতে পায়। বিগত শতাব্দীর সেই পঞ্চাশের দশক থেকেই এমন সব চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল অভিনয় করতে শুরু করেন উত্তম কুমার। পশ্চিমবঙ্গের মতো পূর্ববঙ্গের দর্শকেরও তখন মনে হয়, ছেলেটা তাদের মনের কথা বলছে। যুবক-যুবতীরা ভাবত উত্তমের ফ্যাশনের কথা। পত্রিকার কাটতি হতো উত্তম কুমার কী খাচ্ছেন, কার সঙ্গে প্রেম করছেন—এসব খবর ছেপে! তা নিয়ে তুমুল তর্ক হতো চায়ের স্টলে, বাঙালির আড্ডায়। নরসুন্দরের দোকানের দেয়ালে টানানো থাকত খবরের কাগজে ছাপা উত্তম কুমারের ছবি। স্কুল–কলেজে, বাজারে–খেয়াঘাটে, রান্নাঘরে, ড্রয়িংরুমে—সর্বত্র সবারই মনে হতো, যদি উত্তম হতে পারতাম! এভাবেই উত্তম কুমার চলচ্চিত্র তারকার গণ্ডি টপকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ঘরে ঢোকেন এবং হয়ে ওঠেন মধ্যবিত্ত বাঙালির স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিরূপ। এভাবেই বাঙালি দর্শকের মনে রোমান্টিক শিল্পী উত্তম কুমারের জাদুকরী প্রভাব বলয়ের সৃষ্টি হয়।
সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উত্তমের উত্থান হলেও চেনা উত্তম কুমারকে পাড়ার অভিনেতা থেকে ‘মহানায়ক উত্তম কুমার’ হয়ে উঠতে কিন্তু বিপুল পরিশ্রম করতে হয়েছে! ছোটবেলার খেলার সাথি ও প্রাণাধিক প্রিয় দিদির মৃত্যুর নিদারুণ শোক আজীবন বয়ে বেড়ানো ছাড়াও তাঁকে দীর্ঘ স্নায়ুক্ষয়ী সংগ্রামের দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়। সংগীত রচনা থেকে অশ্বারোহণ, ঘরের বেড়া দেওয়া থেকে সাঁতার কাটা, জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ—সবই শিখতে হয়েছিল জীবন থেকে। এই পরিক্রমায় তাঁকে সময়ের অভিঘাত পর্যবেক্ষণ ও মর্মস্থ করতে হয়, মাতৃভাষা ছাড়াও হিন্দি ও ইংরেজিসহ অনেক ভাষাও মজ্জাগত করতে হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, অনেকের চক্রান্তে তাঁর প্রযোজনায় নির্মিত হিন্দি ছবি ছোটিসি মুলাকাত (১৯৬৭)–এ অপরিমেয় ব্যয়ের পরও ছবিটি ফ্লপ হয়। তিনি প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে যান। টাকার জন্য তিনি তখন বিভিন্ন মঞ্চেও গান গেয়েছেন।
বিশেষত সংগীতের প্রতি উত্তমের ছিল অসীম একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও ভালোবাসা। প্রাথমিক জীবনে গানের শিক্ষক হিসেবেই কিন্তু তিনি টিকে থাকার চেষ্টা করেছিলেন। স্ত্রী গৌরী দেবীর সঙ্গে তাঁর পরিচয়ও হয়েছিল এই গান শেখানোর মধ্য দিয়ে। অসামান্য গলা আর অসাধারণ গায়ন রীতির অধিকারী ছিলেন তিনি। অভিনয় যদি তিনি না করতেন, তাহলে উত্তম কুমার হয়তো হতেন উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী। উত্তম গান শিখেছিলেন ক্ল্যাসিক সংগীত শিল্পী নিদান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। প্রায় ৩০টি রাগের ওপর তিনি দীক্ষা দিয়েছিলেন উত্তম কুমারকে। উত্তমকে তিনি স্পেশাল সারগাম প্র্যাকটিস করাতেন, যাতে সুরের ওপর তিনি স্পষ্ট দখল প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। শৈশব থেকেই মঞ্চনাটক, গান, আর যাত্রাপালার ভক্ত ছিলেন; ছিলেন সম্পৃক্তও। উত্তম কুমার একসময় স্টার থিয়েটারে নিয়মিত অভিনয় করতেন। তাঁর অভিনীত শ্যামলী (১৯৫৩) নাটকটিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। যৌবনে ভারতবর্ষ পরাধীন থাকাকালের উন্মাতাল বৈশ্বিক রাজনীতি এবং আর্থিক ও সামাজিক পরিস্থিতি তাঁর মনে স্বাজাত্যবোধ, সাম্য ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা উসকে দিয়েছিল। তাই পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও মাতৃভূমির স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিতে শুরু করেন উত্তম কুমার। তরুণ বয়স থেকেই রচনা করতে শুরু করেন দেশাত্মবোধক গান ও বিপ্লবী গণসংগীত। এসব গানে সুর দিয়ে স্বকণ্ঠে ও সদলবলে গাইতেন সভা-সমিতিতে, সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী মিছিলেও অংশ নিতেন। স্বদেশি ও স্বাধীনতা আন্দোলন এবং কুৎসিত সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে গিয়ে আত্মগোপনে থাকতে এমনকি জীবনের ঝুঁকি নিতেও দেখা গেছে তাঁকে। দেশের মানুষ এই রোমান্টিক-বিপ্লবী ও সংগ্রামী উত্তমকে ভালোবাসত।
ভাবলে অবাক লাগে ১৯৪৭ সালে মুক্তি না-পাওয়া হিন্দি সিনেমা মায়াডোর-এ মাত্র পাঁচ-সিকা পারিশ্রমিকে মূকাভিনয়ের মাধ্যমে একস্ট্রা শিল্পী হিসেবে অভিনয় জীবন শুরু করেন উত্তম কুমার। সে ছবি কখনো আলোর মুখ দেখেনি। এরই মধ্যে সাহসী ছেলেটি বাড়ি থেকে পালিয়ে পাড়ার মেয়ে ও নিজের গানের ছাত্রী গৌরী দেবীকে বিয়ে করে ফেললেন। সিনেমাপাড়ার ‘ফ্লপ মাস্টার জেনারেল’ (এফএমজি) তখনো অসফলতার ধারাবাহিকতায় ছবিতে নাম পাল্টাচ্ছেন একের পর এক। প্রথমে অরুণ কুমার থেকে অরূপ কুমার, তারপর অরূপ কুমার থেকে উত্তম কুমার। অতঃপর পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করলেন বসু পরিবার (১৯৫২) ছবিতে। অভিনয়ের জন্য এবার প্রশংসিত হলেন। ভাগ্যদেবী তাঁর প্রতি সুপ্রসন্ন হলেন প্রথমবারের মতো। সেখান থেকেই একটু একটু করে জনপ্রিয়তার শিখরে ওঠার শুরু। ক্যারিয়ারের ৩৩ বছরে অন্তত ৫০টি অসাধারণ মানের ছবিসহ বাংলা-হিন্দি মিলিয়ে প্রায় আড়াই শ ছবি উপহার দিয়ে হয়ে উঠলেন একাধারে চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনয় শিল্পী, প্রযোজক, পরিচালক, সংগীত পরিচালক ও সংগঠক। এভাবে নিজেই বাংলা চলচ্চিত্রের এক ইন্ডাস্ট্রিতে রূপান্তরিত হলেন।
উত্তম কুমার তাঁর যুগের এবং বাংলা সিনেমার সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক। মঞ্চ ও যাত্রার ফর্ম ভেঙে দিয়ে, তিনিই প্রথম বাংলা চলচ্চিত্রে পরিশীলিত অভিনয় রীতির প্রবর্তন করেন। বিচিত্র ছিল তাঁর অভিনয় প্রতিভা। সিনেমার চিত্রভাষা বুঝতেন তিনি। বাঙালির মন ও রুচি ভালো করেই বুঝতেন। তিনি জানতেন বাঙালি-মানস প্রেমের জলে হাবুডুবু খায় ঠিকই, কিন্তু প্রকাশ্যে বিবাহপূর্ব মেলামেশা অনুমোদন করে না কিছুতেই। দৈহিক সম্পর্ক দেখালে ‘ভদ্র-বাঙালি’ পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখতে আসে না। কিন্তু লুকিয়ে বাইজি নাচের আসরে তার নিত্য আসা যাওয়া। তিনি আরও জানতেন, বাঙালি মধ্যবিত্তের কাছে প্রেমিকের বাহ্যিক আচরণ অভিভাবকসুলভ। তাই শারীরিক সান্নিধ্য ছাড়াই তিনি প্রেমের রসায়ন জমিয়ে দিলেন বাংলা সিনেমার পর্দায়। আর মধ্যবিত্তের অবদমিত আকাঙ্ক্ষা, বেদনা ও সংযম পরিশীলন; শিক্ষা ও রুচিশীলতার চর্চা; ইতিহাস, দেশাত্মবোধ ও রাজনৈতিক চেতনার পরিচর্যা ও পরিমিতিবোধের লালন—এসবই ছিল উত্তম কুমারের অভিনয়ের মৌলিক উপাদান! তাই তো তাঁর অভিনয়ে প্রতিফলন ঘটল বাঙালির ভদ্রতার মুখোশ ও আদর্শ—দুটোরই।
উত্তম কুমার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে ও শ্যামল মিত্রের গানে অবলীলায় ঠোঁট মিলিয়েছেন। কারণ, গানটা তিনি বুঝতেন। জীবনের শুরুতেই গানের সঙ্গে বোঝা-পড়াটা তাঁর হয়েছিল একবারে অন্তর্গতভাবেই। আর এসব অমর গান বাংলাদেশের মানুষের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া করে তোলে। রোমান্টিক প্রেমের ছবির পাশাপাশি প্রচুর ভিন্ন স্বাদের ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি। কমেডি ও ট্র্যাজেডিতেও ছিলেন সমান পারদর্শী। মানুষের সঙ্গে একদম তার মতো মিশে যেতে পারতেন। যে চরিত্রে অভিনয় করতেন, মনে হতো তিনি সেই মানুষটাই। প্রতিটি চরিত্রের জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতেন। চরিত্রটির মতো হয়ে ওঠার জন্য আর তাঁর সেন্স অব টাইমিং ছিল অসাধারণ। অভিনয়ের এই নিষ্ঠার জন্য মূল্য দিতে গিয়ে ১৯৭১ সালে নকশালদের হাতে খুন হতে হতেও বেঁচে যান। কিন্তু এ জন্য তিনি ভয় পেয়ে অভিনয় ছেড়ে দেননি। কিছুদিন লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে বিপুল সাহসের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসেন। বন্যা-ঝঞ্ঝা-খরা ও নিপীড়িত বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের কাছে তাই এই হার না-মানা সংগ্রামী উত্তম কুমার ভীষণ পছন্দের; একান্ত আপনার।
বাংলাদেশের পাবনার মেয়ে সুচিত্রা সেন এবং ঢাকার মেয়ে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়সহ সিনেমায় উত্তমের নায়িকা হয়েছিলেন সর্বমোট ৪৬ জন। প্রথম ছয় বছরে নয়জন বয়োজ্যেষ্ঠ নায়িকার সঙ্গে উত্তমের অভিনয় তাঁর ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও এরপরই শুরু হয় কিংবদন্তি উত্তম-সুচিত্রা যুগের। তরুণী নায়িকা সুচিত্রা সেনকে পাশে পেয়ে অভিনয়ে মনপ্রাণ ঢেলে দেন উত্তম। তিনি নিজেই বলেন—‘সুচিত্রা পাশে না থাকলে আমি কখনোই উত্তম কুমার হতে পারতাম না।’ বাংলাদেশের মানুষ এ জন্য এখনো গর্ববোধ করে এবং তারা কথাটা বিশ্বাসও করে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই উত্তম-সুচিত্রা জুটি এক অপার বিস্ময়ের নাম।
তাঁদের প্রথম ছবি সাড়ে চুয়াত্তর (১৯৫৩)-এর পর থেকেই বাংলা চলচ্চিত্রের এক জাদুকরী রসায়নের নাম হয়ে ওঠেন উত্তম-সুচিত্রা। এ যেন প্রেমিক-প্রেমিকা দুজনের একসঙ্গে স্ট্রাগল করা, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাপোষণ করা, দুজন দুজনার আশ্রয় হয়ে ওঠা—বাঙালি রুচির এমন ধারণার সমার্থক চিরকালীন রোমান্টিক তারকা জুটি! বাংলা সিনেমায় রোমান্টিসিজমের ধারাই পাল্টে দেন তাঁরা। অগ্নিপরীক্ষা (১৯৫৪), সবার উপরে (১৯৫৫), শাপ মোচন (১৯৫৫), শিল্পী (১৯৫৬), সাগরিকা (১৯৫৬), পথে হলো দেরী (১৯৫৭), হারানো সুর (১৯৫৭), রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত (১৯৫৮), সপ্তপদী (১৯৬১), আলো আমার আলো (১৯৭১)-সহ একে একে ৩১টি ছবিতে অভিনয় করে তাঁরা হয়ে যান বাংলা চলচ্চিত্রের চিরকালীন রোমান্টিক আইকন। বাংলাদেশের দর্শকের কাছে উত্তম-সুচিত্রা তাই এক ও অদ্বিতীয়, অবিচ্ছেদ্য, চিরসবুজ ও চিরতরুণ জুটির নাম। উত্তমকে ছাড়া সুচিত্রাকে কিংবা সুচিত্রাকে ছাড়া উত্তমকে বাঙালি দর্শক একেবারেই দেখতে চান না। কারণ, দুর্দিনে বাঙালিকে যে হাসিয়ে-কাঁদিয়ে উত্তেজনায় কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন এঁরা! তাই তো উত্তমের মৃত্যুর দীর্ঘ চার দশক পর এখনো কান পাতলে শোনা যায় পর্দায় উত্তম-সুচিত্রা জুটির বিচ্ছেদ-ব্যথায় কাতর প্রৌঢ় বাঙালির দীর্ঘশ্বাস।
সমকালীন অন্য ডাকসাইটে নায়িকাদের মধ্যে উত্তম কুমারের হৃদয়ের রানি ছিলেন আরেক কিংবদন্তিতুল্য নায়িকা সুপ্রিয়া দেবী। সাজগোজ নিয়ে আধুনিকা সুপ্রিয়ার ছিল না কোনো মাথাব্যথা, ছিল পড়াশোনার নেশা। উত্তম কুমারকে সাম্প্রতিক সাহিত্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতেন তিনি। নির্মল দের বসু পরিবার (১৯৫২) ছবিতে উত্তম তাঁর বন্ধুর বোন বেণু ওরফে সুপ্রিয়া দেবীকে পেয়েছিলেন সহ–অভিনেত্রী হিসেবে। পরে তিনিই পর্দায় উত্তমের অন্যতম সফল সিনেমা-জুটি এবং ব্যক্তি ও দাম্পত্যজীবনে প্রেরণাদাত্রী হয়ে ওঠেন। বাস্তব জীবনেও তাঁরা ছিলেন সত্যিকারের জুটি। উত্তম-সুপ্রিয়া উত্তরায়ণ (১৯৬৩), কাল তুমি আলেয়া (১৯৬৬), বন পলাশীর পদাবলী (১৯৭৩), বাঘ বন্দীর খেলা (১৯৭৫), সন্ন্যাসী রাজা (১৯৭৫) প্রভৃতি তুমুল জনপ্রিয় ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে উত্তম কুমারের সঙ্গে ঢাকার মেয়ে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের জুটিও জনপ্রিয় হয়। তাঁর অভিনয়গুণে মুগ্ধ ছিলেন মহানায়ক। হাত বাড়ালেই বন্ধু (১৯৬০), দুই ভাই (১৯৬১), মোমের আলো (১৯৬৮), নিশি পদ্ম (১৯৭০) ইত্যাদি সিনেমায় তাঁদের জুটিও প্রশংসিত হয়। ধন্যি মেয়ে (১৯৭১), মৌচাক (১৯৭৫)-এর মত কমেডি ছবিতে সাবিত্রী-উত্তম জুটির অভিনয় রীতিমতো কিংবদন্তি হয়ে আছে।
পঞ্চাশের দশকে যখন চলচ্চিত্রের আকাশ রাঙিয়ে দিতে শুরু করেন, তখন থেকেই বাংলাদেশের মানুষের কাছেও আপন হয়ে আছেন উত্তম কুমার। কারণ, ১৯৪৭-এ দেশভাগ হলেও এ দেশের সিনেমা হলগুলোতে তখনো ভারতীয় বাংলা সিনেমা প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল না। পরে পাকিস্তানে ভারত-বিদ্বেষ প্রকট ও নিষেধাজ্ঞা জারি হলে সেই সুযোগ সীমিত হয়ে হয়ে পড়ে। কিন্তু তত দিনে উত্তম-সুচিত্রা জুটির স্থায়ী আসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে বাঙালি দর্শকের ঘরে ঘরে, অন্দর মহলে। উত্তমের সাবলীল অভিনয়ই তাঁর প্রতি মানুষের এই আকর্ষণের চুম্বকশক্তি। এখনো বাংলা সিনেমার পুরোনো দর্শকেরা তাই উত্তম কুমারকেই খুঁজে ফেরে। সিনেমা হলে ভিএইচএস ক্যাসেটে, সিডি/ডিভিডিতে, ইন্টারনেটে যে ফর্মেই হোক, বাংলাদেশে ‘উত্তমকুমারের সিনেমা’ দেখার জোয়ার কমেনি কখনো। এমনকি করোনাকালীন লকডাউনের সময়েও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে উত্তম কুমারের দর্শক বেড়েছে; তারা ঘুরেফিরে বারবারই দেখছেন উত্তম কুমার অভিনীত ছবি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও চলচ্চিত্রের বন্দিদশা কিন্তু রয়ে গেছে আগের মতোই। ছিটেফোঁটা ছাড়া ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অবাধ চলচ্চিত্র বিনিময় বন্ধ রয়েছে যথারীতি আগের মতোই। বাণিজ্যিক স্বার্থের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের সিনেমা হলে ভারতীয় বাংলা ছবিই প্রদর্শিত হচ্ছে না, আর পুরোনো দিনের সিনেমা তো একদমই নিষিদ্ধ বস্তু। কিন্তু ওই বস্তুর প্রতিই বাঙালির অমোঘ আকর্ষণের পেছনের কারণ সেই উত্তম কুমারই। আকাশ সংস্কৃতি আর অন্তর্জালের দুনিয়া আজ সব বাধা-বিপত্তি বানের জলের মতো ঘুচিয়ে দিয়েছে। রাত জেগে, নিজের ঘরে বসে অথবা হাতের তালুতে অবাধে উত্তম কুমারের সংবর্ধনা রচনা করছে বাংলাদেশের মানুষ। তাঁর ছবি গোগ্রাসে গিলছে মধ্যবয়সী নারী ও পুরুষ থেকে নতুন প্রজন্ম পর্যন্ত সবাই। শুনেছি বাংলাদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও এখন ‘টেলিভিশনের খবরে, সিনেমার পর্দায়, বাস্তবে—সর্বত্রই মানুষ প্রতিনিয়ত জটিল ও নিম্ন রুচির কনটেন্ট আর অশ্লীলতা ও ভায়োলেন্স দেখানো হয়, যা দর্শকের মনে স্বস্তি দিতে পারে না। বিশেষ করে, মানুষ যখন দৈনন্দিন জীবনের জটিলতায় বিধ্বস্ত, তখন সে রূঢ়-বাস্তবতা থেকে পালিয়ে মুক্তি পেতে চায়। উত্তমের ছবিতে সেই স্বস্তির সন্ধান আছে, আজকের বাঙালি নির্বিশেষে তাই ফিরে যেতে চায় সেই রোমান্টিকতার জগতে! বাংলা সিনেমার রোমান্টিক নায়ক হিসেবে তাই এখনো উত্তম কুমারই সবার পছন্দ। প্রয়াণ দিবসে তাই আমিও মহানায়ক উত্তম কুমারকে জানাই প্রাণের প্রণতি।
জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ: কবি, গবেষক ও চলচ্চিত্রকার
আরও পড়ুন

বয়স, পেশা ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বয়োজ্যেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ বাংলা সিনেমার অভিনয়ের সম্রাট, মহানায়ক উত্তম কুমারের একনিষ্ঠ অনুরাগী। তারা একান্তে উত্তমকে বাঁচিয়ে রেখেছেন স্মৃতির মণিকোঠায়। তারা উপলব্ধি করেছেন, সংবেদনশীল ও মানব দরদি উত্তম কুমার তাঁর সিনেমায় জীবনের থেকেও বড়, চিরন্তন এক প্রেমিক-প্রতিমূর্তি গড়েছিলেন অভিনয়ের মাধ্যমে এবং তিনি তা করেছিলেন জেনে-বুঝেই। দেখে মনে হয়, একাডেমিশিয়ানরা সিনেমায় উত্তম কুমারের অভিনয়ের ব্যাপারটা পূর্বধারণা বা ঘরানার নিরিখে দেখলেও দর্শক তা দেখেছে হৃদয় দিয়ে। তাই আমাদের সিনেমা পণ্ডিতেরা উত্তম কুমারকে বুঝে উঠতে পারেননি, বোঝার চেষ্টাও করেননি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংগঠক ও চলচ্চিত্র আন্দোলনের নেতাদের মনে এ বিষয়ে সচেতনতা ও সুস্পষ্ট বোঝাপড়া সৃষ্টি না হওয়ার কারণেই সম্ভবত পাশের বাড়ির অভিনয় শিল্পীর বিরাটত্বের বিষয়টি তাদের কাছে যোগ্য মর্যাদা পায়নি বা অবহেলিতই থেকে গেছে।
অভিনয়ের বরপুত্র উত্তম কুমারের ৪১ তম প্রয়াণবার্ষিকীতে এ কথা বলতেই হচ্ছে, কালেভদ্রে সংবাদপত্রের বিনোদন পাতা ছাড়া, বাংলাদেশের একাডেমিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিমণ্ডলে বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মহানায়ক’ উত্তম কুমারকে নিয়ে তেমন একটা আলোচনা হয় না বললেই চলে। অনলাইনে কিছু গ্রুপ অ্যাকটিভিটি থাকলেও উত্তম-চর্চার কোনো সাংগঠনিক কাঠামোর ভিত্তি বা তৎপরতা বাংলাদেশে এখনো দৃশ্যমান নয়। এর কারণ হতে পারে ঐতিহাসিক ও খণ্ডিত ভৌগোলিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপট, বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যক্ষভাবে উত্তম কুমার সম্পর্কে জানাশোনার সুযোগ ও সময় দুটোই কম পেয়েছে।
এখানকার চলচ্চিত্রের অভিনয়ের মান এখনো অপরিপক্ব অবস্থায় রয়েছে। তা ছাড়া যাত্রা, পালাগান ও মঞ্চ অধ্যুষিত বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের অভিনয়ের স্বাতন্ত্র্যের বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত। এমনকি সম্প্রতি যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিভাগ খোলা হয়েছে এবং সরকারিভাবে যে ‘বাংলাদেশ সিনেমা ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট’ (বিসিটিআই) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর কারিকুলামেও অভিনয়ের বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব পায়নি এখনো। একদল একাডেমিশিয়ানের মনে এ ধারণাও বদ্ধমূল হয়তো—উত্তম কুমার বাণিজ্যিক সিনেমার অভিনেতা, তিনি ইউরোপীয় সিনেমার কেউ নন, তাঁকে নিয়ে এত মাতামাতির কী আছে? তাঁরা উপমহাদেশের চলচ্চিত্র আলোচনার ক্ষেত্রে সত্যজিৎ-মৃণাল-ঋত্বিক–এর বাইরে ইদানীং অপর্ণা সেন-ঋতুপর্ণ ঘোষ-মণিকাউল-মীরা নায়ার, আর নানামুখী আলোচনায় স্মিতা পাতিল-সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-শাবানা আজমি পর্যন্ত আলোচনা করতে রাজি আছেন, এর বাইরে একদম নয়।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমণ্ডলের যখন এই ঘোর অমানিশা, তখন প্রশ্ন হলো এ দেশের মানুষের কাছে উত্তম কুমার এত জনপ্রিয় হলেন কীভাবে? বিশেষত, মৃত্যুর চার দশক পরও কীভাবে তিনি দর্শক হৃদয়ে অক্ষয়–অব্যয় আসন ধরে রাখতে পারলেন? মনে রাখা প্রয়োজন, বাংলাদেশের উত্তম কুমার দেশভাগ-পরবর্তী সময়ের চলচ্চিত্রের প্রতিনিধি। তখন সার্বিকভাবে দেশভাগের পর বেদনা-জর্জরিত ছিল বাংলার উভয় অংশের মানুষের মন। দেশভাগের দগদগে ক্ষত এবং আর্থিক সমস্যা তখন বিভক্ত দুই বাংলার ঘরে ঘরে। সাধারণ দর্শক এই দৈন্য ও দুর্দশার বিপরীতে বাংলা ছবির পর্দায় তাদেরই জীবনের ছোট ছোট সাফল্য ও অবদমিত আকাঙ্ক্ষার চিত্রায়ণ দেখতে পায়। বিগত শতাব্দীর সেই পঞ্চাশের দশক থেকেই এমন সব চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল অভিনয় করতে শুরু করেন উত্তম কুমার। পশ্চিমবঙ্গের মতো পূর্ববঙ্গের দর্শকেরও তখন মনে হয়, ছেলেটা তাদের মনের কথা বলছে। যুবক-যুবতীরা ভাবত উত্তমের ফ্যাশনের কথা। পত্রিকার কাটতি হতো উত্তম কুমার কী খাচ্ছেন, কার সঙ্গে প্রেম করছেন—এসব খবর ছেপে! তা নিয়ে তুমুল তর্ক হতো চায়ের স্টলে, বাঙালির আড্ডায়। নরসুন্দরের দোকানের দেয়ালে টানানো থাকত খবরের কাগজে ছাপা উত্তম কুমারের ছবি। স্কুল–কলেজে, বাজারে–খেয়াঘাটে, রান্নাঘরে, ড্রয়িংরুমে—সর্বত্র সবারই মনে হতো, যদি উত্তম হতে পারতাম! এভাবেই উত্তম কুমার চলচ্চিত্র তারকার গণ্ডি টপকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ঘরে ঢোকেন এবং হয়ে ওঠেন মধ্যবিত্ত বাঙালির স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিরূপ। এভাবেই বাঙালি দর্শকের মনে রোমান্টিক শিল্পী উত্তম কুমারের জাদুকরী প্রভাব বলয়ের সৃষ্টি হয়।
সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উত্তমের উত্থান হলেও চেনা উত্তম কুমারকে পাড়ার অভিনেতা থেকে ‘মহানায়ক উত্তম কুমার’ হয়ে উঠতে কিন্তু বিপুল পরিশ্রম করতে হয়েছে! ছোটবেলার খেলার সাথি ও প্রাণাধিক প্রিয় দিদির মৃত্যুর নিদারুণ শোক আজীবন বয়ে বেড়ানো ছাড়াও তাঁকে দীর্ঘ স্নায়ুক্ষয়ী সংগ্রামের দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়। সংগীত রচনা থেকে অশ্বারোহণ, ঘরের বেড়া দেওয়া থেকে সাঁতার কাটা, জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ—সবই শিখতে হয়েছিল জীবন থেকে। এই পরিক্রমায় তাঁকে সময়ের অভিঘাত পর্যবেক্ষণ ও মর্মস্থ করতে হয়, মাতৃভাষা ছাড়াও হিন্দি ও ইংরেজিসহ অনেক ভাষাও মজ্জাগত করতে হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, অনেকের চক্রান্তে তাঁর প্রযোজনায় নির্মিত হিন্দি ছবি ছোটিসি মুলাকাত (১৯৬৭)–এ অপরিমেয় ব্যয়ের পরও ছবিটি ফ্লপ হয়। তিনি প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে যান। টাকার জন্য তিনি তখন বিভিন্ন মঞ্চেও গান গেয়েছেন।
বিশেষত সংগীতের প্রতি উত্তমের ছিল অসীম একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও ভালোবাসা। প্রাথমিক জীবনে গানের শিক্ষক হিসেবেই কিন্তু তিনি টিকে থাকার চেষ্টা করেছিলেন। স্ত্রী গৌরী দেবীর সঙ্গে তাঁর পরিচয়ও হয়েছিল এই গান শেখানোর মধ্য দিয়ে। অসামান্য গলা আর অসাধারণ গায়ন রীতির অধিকারী ছিলেন তিনি। অভিনয় যদি তিনি না করতেন, তাহলে উত্তম কুমার হয়তো হতেন উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী। উত্তম গান শিখেছিলেন ক্ল্যাসিক সংগীত শিল্পী নিদান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। প্রায় ৩০টি রাগের ওপর তিনি দীক্ষা দিয়েছিলেন উত্তম কুমারকে। উত্তমকে তিনি স্পেশাল সারগাম প্র্যাকটিস করাতেন, যাতে সুরের ওপর তিনি স্পষ্ট দখল প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। শৈশব থেকেই মঞ্চনাটক, গান, আর যাত্রাপালার ভক্ত ছিলেন; ছিলেন সম্পৃক্তও। উত্তম কুমার একসময় স্টার থিয়েটারে নিয়মিত অভিনয় করতেন। তাঁর অভিনীত শ্যামলী (১৯৫৩) নাটকটিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। যৌবনে ভারতবর্ষ পরাধীন থাকাকালের উন্মাতাল বৈশ্বিক রাজনীতি এবং আর্থিক ও সামাজিক পরিস্থিতি তাঁর মনে স্বাজাত্যবোধ, সাম্য ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা উসকে দিয়েছিল। তাই পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও মাতৃভূমির স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিতে শুরু করেন উত্তম কুমার। তরুণ বয়স থেকেই রচনা করতে শুরু করেন দেশাত্মবোধক গান ও বিপ্লবী গণসংগীত। এসব গানে সুর দিয়ে স্বকণ্ঠে ও সদলবলে গাইতেন সভা-সমিতিতে, সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী মিছিলেও অংশ নিতেন। স্বদেশি ও স্বাধীনতা আন্দোলন এবং কুৎসিত সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে গিয়ে আত্মগোপনে থাকতে এমনকি জীবনের ঝুঁকি নিতেও দেখা গেছে তাঁকে। দেশের মানুষ এই রোমান্টিক-বিপ্লবী ও সংগ্রামী উত্তমকে ভালোবাসত।
ভাবলে অবাক লাগে ১৯৪৭ সালে মুক্তি না-পাওয়া হিন্দি সিনেমা মায়াডোর-এ মাত্র পাঁচ-সিকা পারিশ্রমিকে মূকাভিনয়ের মাধ্যমে একস্ট্রা শিল্পী হিসেবে অভিনয় জীবন শুরু করেন উত্তম কুমার। সে ছবি কখনো আলোর মুখ দেখেনি। এরই মধ্যে সাহসী ছেলেটি বাড়ি থেকে পালিয়ে পাড়ার মেয়ে ও নিজের গানের ছাত্রী গৌরী দেবীকে বিয়ে করে ফেললেন। সিনেমাপাড়ার ‘ফ্লপ মাস্টার জেনারেল’ (এফএমজি) তখনো অসফলতার ধারাবাহিকতায় ছবিতে নাম পাল্টাচ্ছেন একের পর এক। প্রথমে অরুণ কুমার থেকে অরূপ কুমার, তারপর অরূপ কুমার থেকে উত্তম কুমার। অতঃপর পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করলেন বসু পরিবার (১৯৫২) ছবিতে। অভিনয়ের জন্য এবার প্রশংসিত হলেন। ভাগ্যদেবী তাঁর প্রতি সুপ্রসন্ন হলেন প্রথমবারের মতো। সেখান থেকেই একটু একটু করে জনপ্রিয়তার শিখরে ওঠার শুরু। ক্যারিয়ারের ৩৩ বছরে অন্তত ৫০টি অসাধারণ মানের ছবিসহ বাংলা-হিন্দি মিলিয়ে প্রায় আড়াই শ ছবি উপহার দিয়ে হয়ে উঠলেন একাধারে চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনয় শিল্পী, প্রযোজক, পরিচালক, সংগীত পরিচালক ও সংগঠক। এভাবে নিজেই বাংলা চলচ্চিত্রের এক ইন্ডাস্ট্রিতে রূপান্তরিত হলেন।
উত্তম কুমার তাঁর যুগের এবং বাংলা সিনেমার সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক। মঞ্চ ও যাত্রার ফর্ম ভেঙে দিয়ে, তিনিই প্রথম বাংলা চলচ্চিত্রে পরিশীলিত অভিনয় রীতির প্রবর্তন করেন। বিচিত্র ছিল তাঁর অভিনয় প্রতিভা। সিনেমার চিত্রভাষা বুঝতেন তিনি। বাঙালির মন ও রুচি ভালো করেই বুঝতেন। তিনি জানতেন বাঙালি-মানস প্রেমের জলে হাবুডুবু খায় ঠিকই, কিন্তু প্রকাশ্যে বিবাহপূর্ব মেলামেশা অনুমোদন করে না কিছুতেই। দৈহিক সম্পর্ক দেখালে ‘ভদ্র-বাঙালি’ পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখতে আসে না। কিন্তু লুকিয়ে বাইজি নাচের আসরে তার নিত্য আসা যাওয়া। তিনি আরও জানতেন, বাঙালি মধ্যবিত্তের কাছে প্রেমিকের বাহ্যিক আচরণ অভিভাবকসুলভ। তাই শারীরিক সান্নিধ্য ছাড়াই তিনি প্রেমের রসায়ন জমিয়ে দিলেন বাংলা সিনেমার পর্দায়। আর মধ্যবিত্তের অবদমিত আকাঙ্ক্ষা, বেদনা ও সংযম পরিশীলন; শিক্ষা ও রুচিশীলতার চর্চা; ইতিহাস, দেশাত্মবোধ ও রাজনৈতিক চেতনার পরিচর্যা ও পরিমিতিবোধের লালন—এসবই ছিল উত্তম কুমারের অভিনয়ের মৌলিক উপাদান! তাই তো তাঁর অভিনয়ে প্রতিফলন ঘটল বাঙালির ভদ্রতার মুখোশ ও আদর্শ—দুটোরই।
উত্তম কুমার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে ও শ্যামল মিত্রের গানে অবলীলায় ঠোঁট মিলিয়েছেন। কারণ, গানটা তিনি বুঝতেন। জীবনের শুরুতেই গানের সঙ্গে বোঝা-পড়াটা তাঁর হয়েছিল একবারে অন্তর্গতভাবেই। আর এসব অমর গান বাংলাদেশের মানুষের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া করে তোলে। রোমান্টিক প্রেমের ছবির পাশাপাশি প্রচুর ভিন্ন স্বাদের ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি। কমেডি ও ট্র্যাজেডিতেও ছিলেন সমান পারদর্শী। মানুষের সঙ্গে একদম তার মতো মিশে যেতে পারতেন। যে চরিত্রে অভিনয় করতেন, মনে হতো তিনি সেই মানুষটাই। প্রতিটি চরিত্রের জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতেন। চরিত্রটির মতো হয়ে ওঠার জন্য আর তাঁর সেন্স অব টাইমিং ছিল অসাধারণ। অভিনয়ের এই নিষ্ঠার জন্য মূল্য দিতে গিয়ে ১৯৭১ সালে নকশালদের হাতে খুন হতে হতেও বেঁচে যান। কিন্তু এ জন্য তিনি ভয় পেয়ে অভিনয় ছেড়ে দেননি। কিছুদিন লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে বিপুল সাহসের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসেন। বন্যা-ঝঞ্ঝা-খরা ও নিপীড়িত বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের কাছে তাই এই হার না-মানা সংগ্রামী উত্তম কুমার ভীষণ পছন্দের; একান্ত আপনার।
বাংলাদেশের পাবনার মেয়ে সুচিত্রা সেন এবং ঢাকার মেয়ে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়সহ সিনেমায় উত্তমের নায়িকা হয়েছিলেন সর্বমোট ৪৬ জন। প্রথম ছয় বছরে নয়জন বয়োজ্যেষ্ঠ নায়িকার সঙ্গে উত্তমের অভিনয় তাঁর ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও এরপরই শুরু হয় কিংবদন্তি উত্তম-সুচিত্রা যুগের। তরুণী নায়িকা সুচিত্রা সেনকে পাশে পেয়ে অভিনয়ে মনপ্রাণ ঢেলে দেন উত্তম। তিনি নিজেই বলেন—‘সুচিত্রা পাশে না থাকলে আমি কখনোই উত্তম কুমার হতে পারতাম না।’ বাংলাদেশের মানুষ এ জন্য এখনো গর্ববোধ করে এবং তারা কথাটা বিশ্বাসও করে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই উত্তম-সুচিত্রা জুটি এক অপার বিস্ময়ের নাম।
তাঁদের প্রথম ছবি সাড়ে চুয়াত্তর (১৯৫৩)-এর পর থেকেই বাংলা চলচ্চিত্রের এক জাদুকরী রসায়নের নাম হয়ে ওঠেন উত্তম-সুচিত্রা। এ যেন প্রেমিক-প্রেমিকা দুজনের একসঙ্গে স্ট্রাগল করা, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাপোষণ করা, দুজন দুজনার আশ্রয় হয়ে ওঠা—বাঙালি রুচির এমন ধারণার সমার্থক চিরকালীন রোমান্টিক তারকা জুটি! বাংলা সিনেমায় রোমান্টিসিজমের ধারাই পাল্টে দেন তাঁরা। অগ্নিপরীক্ষা (১৯৫৪), সবার উপরে (১৯৫৫), শাপ মোচন (১৯৫৫), শিল্পী (১৯৫৬), সাগরিকা (১৯৫৬), পথে হলো দেরী (১৯৫৭), হারানো সুর (১৯৫৭), রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত (১৯৫৮), সপ্তপদী (১৯৬১), আলো আমার আলো (১৯৭১)-সহ একে একে ৩১টি ছবিতে অভিনয় করে তাঁরা হয়ে যান বাংলা চলচ্চিত্রের চিরকালীন রোমান্টিক আইকন। বাংলাদেশের দর্শকের কাছে উত্তম-সুচিত্রা তাই এক ও অদ্বিতীয়, অবিচ্ছেদ্য, চিরসবুজ ও চিরতরুণ জুটির নাম। উত্তমকে ছাড়া সুচিত্রাকে কিংবা সুচিত্রাকে ছাড়া উত্তমকে বাঙালি দর্শক একেবারেই দেখতে চান না। কারণ, দুর্দিনে বাঙালিকে যে হাসিয়ে-কাঁদিয়ে উত্তেজনায় কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন এঁরা! তাই তো উত্তমের মৃত্যুর দীর্ঘ চার দশক পর এখনো কান পাতলে শোনা যায় পর্দায় উত্তম-সুচিত্রা জুটির বিচ্ছেদ-ব্যথায় কাতর প্রৌঢ় বাঙালির দীর্ঘশ্বাস।
সমকালীন অন্য ডাকসাইটে নায়িকাদের মধ্যে উত্তম কুমারের হৃদয়ের রানি ছিলেন আরেক কিংবদন্তিতুল্য নায়িকা সুপ্রিয়া দেবী। সাজগোজ নিয়ে আধুনিকা সুপ্রিয়ার ছিল না কোনো মাথাব্যথা, ছিল পড়াশোনার নেশা। উত্তম কুমারকে সাম্প্রতিক সাহিত্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতেন তিনি। নির্মল দের বসু পরিবার (১৯৫২) ছবিতে উত্তম তাঁর বন্ধুর বোন বেণু ওরফে সুপ্রিয়া দেবীকে পেয়েছিলেন সহ–অভিনেত্রী হিসেবে। পরে তিনিই পর্দায় উত্তমের অন্যতম সফল সিনেমা-জুটি এবং ব্যক্তি ও দাম্পত্যজীবনে প্রেরণাদাত্রী হয়ে ওঠেন। বাস্তব জীবনেও তাঁরা ছিলেন সত্যিকারের জুটি। উত্তম-সুপ্রিয়া উত্তরায়ণ (১৯৬৩), কাল তুমি আলেয়া (১৯৬৬), বন পলাশীর পদাবলী (১৯৭৩), বাঘ বন্দীর খেলা (১৯৭৫), সন্ন্যাসী রাজা (১৯৭৫) প্রভৃতি তুমুল জনপ্রিয় ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে উত্তম কুমারের সঙ্গে ঢাকার মেয়ে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের জুটিও জনপ্রিয় হয়। তাঁর অভিনয়গুণে মুগ্ধ ছিলেন মহানায়ক। হাত বাড়ালেই বন্ধু (১৯৬০), দুই ভাই (১৯৬১), মোমের আলো (১৯৬৮), নিশি পদ্ম (১৯৭০) ইত্যাদি সিনেমায় তাঁদের জুটিও প্রশংসিত হয়। ধন্যি মেয়ে (১৯৭১), মৌচাক (১৯৭৫)-এর মত কমেডি ছবিতে সাবিত্রী-উত্তম জুটির অভিনয় রীতিমতো কিংবদন্তি হয়ে আছে।
পঞ্চাশের দশকে যখন চলচ্চিত্রের আকাশ রাঙিয়ে দিতে শুরু করেন, তখন থেকেই বাংলাদেশের মানুষের কাছেও আপন হয়ে আছেন উত্তম কুমার। কারণ, ১৯৪৭-এ দেশভাগ হলেও এ দেশের সিনেমা হলগুলোতে তখনো ভারতীয় বাংলা সিনেমা প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল না। পরে পাকিস্তানে ভারত-বিদ্বেষ প্রকট ও নিষেধাজ্ঞা জারি হলে সেই সুযোগ সীমিত হয়ে হয়ে পড়ে। কিন্তু তত দিনে উত্তম-সুচিত্রা জুটির স্থায়ী আসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে বাঙালি দর্শকের ঘরে ঘরে, অন্দর মহলে। উত্তমের সাবলীল অভিনয়ই তাঁর প্রতি মানুষের এই আকর্ষণের চুম্বকশক্তি। এখনো বাংলা সিনেমার পুরোনো দর্শকেরা তাই উত্তম কুমারকেই খুঁজে ফেরে। সিনেমা হলে ভিএইচএস ক্যাসেটে, সিডি/ডিভিডিতে, ইন্টারনেটে যে ফর্মেই হোক, বাংলাদেশে ‘উত্তমকুমারের সিনেমা’ দেখার জোয়ার কমেনি কখনো। এমনকি করোনাকালীন লকডাউনের সময়েও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে উত্তম কুমারের দর্শক বেড়েছে; তারা ঘুরেফিরে বারবারই দেখছেন উত্তম কুমার অভিনীত ছবি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও চলচ্চিত্রের বন্দিদশা কিন্তু রয়ে গেছে আগের মতোই। ছিটেফোঁটা ছাড়া ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অবাধ চলচ্চিত্র বিনিময় বন্ধ রয়েছে যথারীতি আগের মতোই। বাণিজ্যিক স্বার্থের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের সিনেমা হলে ভারতীয় বাংলা ছবিই প্রদর্শিত হচ্ছে না, আর পুরোনো দিনের সিনেমা তো একদমই নিষিদ্ধ বস্তু। কিন্তু ওই বস্তুর প্রতিই বাঙালির অমোঘ আকর্ষণের পেছনের কারণ সেই উত্তম কুমারই। আকাশ সংস্কৃতি আর অন্তর্জালের দুনিয়া আজ সব বাধা-বিপত্তি বানের জলের মতো ঘুচিয়ে দিয়েছে। রাত জেগে, নিজের ঘরে বসে অথবা হাতের তালুতে অবাধে উত্তম কুমারের সংবর্ধনা রচনা করছে বাংলাদেশের মানুষ। তাঁর ছবি গোগ্রাসে গিলছে মধ্যবয়সী নারী ও পুরুষ থেকে নতুন প্রজন্ম পর্যন্ত সবাই। শুনেছি বাংলাদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও এখন ‘টেলিভিশনের খবরে, সিনেমার পর্দায়, বাস্তবে—সর্বত্রই মানুষ প্রতিনিয়ত জটিল ও নিম্ন রুচির কনটেন্ট আর অশ্লীলতা ও ভায়োলেন্স দেখানো হয়, যা দর্শকের মনে স্বস্তি দিতে পারে না। বিশেষ করে, মানুষ যখন দৈনন্দিন জীবনের জটিলতায় বিধ্বস্ত, তখন সে রূঢ়-বাস্তবতা থেকে পালিয়ে মুক্তি পেতে চায়। উত্তমের ছবিতে সেই স্বস্তির সন্ধান আছে, আজকের বাঙালি নির্বিশেষে তাই ফিরে যেতে চায় সেই রোমান্টিকতার জগতে! বাংলা সিনেমার রোমান্টিক নায়ক হিসেবে তাই এখনো উত্তম কুমারই সবার পছন্দ। প্রয়াণ দিবসে তাই আমিও মহানায়ক উত্তম কুমারকে জানাই প্রাণের প্রণতি।
জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ: কবি, গবেষক ও চলচ্চিত্রকার
আরও পড়ুন

বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৯ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ—এমন মন্তব্য করে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিফেন মিলার।
গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার বলেন, ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে ‘আমেরিকার শ্রম, উদ্ভাবন ও ঘামের’ ওপর আর সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত করে নেওয়াকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের সবচেয়ে বড় ‘চুরি’ বলে অভিহিত করেন। মিলারের এই মন্তব্যের ঠিক এক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ ও সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছাকাছি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সেপ্টেম্বর থেকে মাদক পাচারের অভিযোগে বেশ কয়েকটি নৌযানে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, এসব নৌকা যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার করছিল এবং তা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোকেনসহ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর প্রধান উৎস ভেনেজুয়েলা নয়। ফলে অনেকের মতে, এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল নিয়ন্ত্রণ এবং নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো।
মিলার কী বলেছেন
গতকাল বুধবার এক্সে দেওয়া পোস্টে স্টিফেন মিলার লেখেন, ‘আমেরিকার শ্রম, মেধা ও পরিশ্রমই ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প সৃষ্টি করেছে। এই শিল্প জোরপূর্বক রাষ্ট্রায়ত্ত করা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ ও সম্পত্তির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুরি। আর সেই লুণ্ঠিত সম্পদ সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগাতে এবং আমাদের দেশের রাস্তায় খুনি, ভাড়াটে যোদ্ধা ও মাদক ছড়িয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়েছে।’
মিলার তাঁর পোস্টে ট্রাম্পের আগের একটি বক্তব্যও যুক্ত করেন, যেখানে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেল, ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ ‘চুরি’ করার অভিযোগ তোলেন। ওই পোস্টে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ ঘোষণা করেন এবং দেশটির তেল ট্যাংকারগুলোর ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন।
মিলার আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা থেকে আসা অভিবাসীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হবে এবং সব ‘চুরি হওয়া সম্পদ’ অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ভেনেজুয়েলায় কী পরিমাণ তেল রয়েছে
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলেই বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
২০২৩ সালের হিসাবে ভেনেজুয়েলার তেল মজুতের পরিমাণ প্রায় ৩০৩ বিলিয়ন ব্যারেল—যা বিশ্বে সর্বাধিক। তবে উৎপাদন ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশটি এখন তেল থেকে আগের মতো আয় করতে পারছে না।
অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সের (ওইসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভেনেজুয়েলার অপরিশোধিত তেল রপ্তানির মূল্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে সৌদি আরব রপ্তানি করেছে ১৮১ বিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ১২৫ বিলিয়ন ডলার ও রাশিয়া ১২২ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্র কেন ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর দাবি করছে
২০ শতকের শুরুর দিকে ভেনেজুয়েলায় তেল অনুসন্ধান শুরু করে মার্কিন কোম্পানিগুলো। ১৯২২ সালে ভেনেজুয়েলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মারাকাইবো হ্রদ এলাকায় প্রথম বড় তেলক্ষেত্র আবিষ্কার করে রয়্যাল ডাচ শেল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার তেল উত্তোলন ও উন্নয়নে বড় ধরনের বিনিয়োগ শুরু করে। স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো চুক্তিভিত্তিকভাবে কাজ করে ভেনেজুয়েলাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহকারীতে পরিণত করে।
১৯৬০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওপেক গঠনের সময় ভেনেজুয়েলা ছিল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তবে ১৯৭৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কার্লোস আন্দ্রেস পেরেজ তেলশিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করেন এবং পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) প্রতিষ্ঠা করেন।
পরে হুগো শাভেজ ক্ষমতায় এসে সব বিদেশি তেলসম্পদ জাতীয়করণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া, অব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগের অভাবে তেল উৎপাদন ক্রমেই কমতে থাকে।
কবে থেকে নিষেধাজ্ঞা
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে নিকোলাস মাদুরোর শাসনামলে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশটি চীন, ভারত ও কিউবার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—যুক্তরাষ্ট্রের এমন দাবির কি কোনো আইনি ভিত্তি আছে
না, নেই। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক। এই নীতির নাম ‘স্থায়ী প্রাকৃতিক সম্পদে সার্বভৌম অধিকার’ (Permanent Sovereignty over Natural Resources)।
১৯৬২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাবে এই নীতি স্বীকৃতি পায়। সে অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলার তেল সম্পূর্ণভাবে ভেনেজুয়েলারই। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এ তেলের ওপর দাবি জানানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
তাহলে শেভরন কেন কাজ করছে
যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও হিউস্টনভিত্তিক তেল কোম্পানি শেভরন ভেনেজুয়েলায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণত বিদেশি কোম্পানিগুলো ভেনেজুয়েলায় সরাসরি তেলক্ষেত্রের মালিক হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলার (পিডিভিএসএ) সঙ্গে যৌথভাবে তেল উৎপাদন করে এবং উৎপাদিত তেলের একটি অংশ পায়।
২০২২ সালে জো বাইডেন প্রশাসন শেভরনকে বিশেষ লাইসেন্স দেয়, যাতে তারা নিষেধাজ্ঞার বাইরে থেকে কাজ করতে পারে। চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসন সেই নিষেধাজ্ঞা ছাড় নবায়ন করেছে।
শেভরন দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং সেখানে তাদের বিপুল সম্পদ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি সরে গেলে সেই সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে—যা অতীতে এক্সন, কারগিল ও হিলটনের মতো কোম্পানির ক্ষেত্রে ঘটেছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মূলত ঐতিহাসিকভাবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর করা বিনিয়োগ ও পরে তা বাজেয়াপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এই ‘মালিকানা’ দাবি করছে। তবে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় ও আন্তর্জাতিক আইনে কোনো দেশের সম্পদ অন্য দেশের মালিকানাধীন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটি মূলত ভেনেজুয়েলায় শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ও তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি ভূরাজনৈতিক কৌশল।
আল-জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

বিশেষত সংগীতের প্রতি উত্তমের ছিল অসীম একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও ভালোবাসা। প্রাথমিক জীবনে গানের শিক্ষক হিসেবেই কিন্তু তিনি টিকে থাকার চেষ্টা করেছিলেন। স্ত্রী গৌরী দেবীর সঙ্গে তাঁর পরিচয়ও হয়েছিল এই গান শেখানোর মধ্য দিয়ে। অসামান্য গলা আর অসাধারণ গায়ন রীতির অধিকারী ছিলেন তিনি। অভিনয় যদি তিনি না করতেন, তাহলে উত
২৪ জুলাই ২০২১
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৯ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে। সোভিয়েত আমলের পরিত্যক্ত সমরাস্ত্রের ভান্ডার থেকে শুরু করে আজকের আধুনিক ড্রোনের যুদ্ধক্ষেত্র—এই তিন দশকে ইউক্রেন ও চীনের সম্পর্ক এক অদ্ভুত ও জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেয়েছে।
ইউক্রেনের সমরাস্ত্র ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায় হলো ১৯৯৮ সালে চীনের কাছে সোভিয়েত আমলের ‘ভারিয়াগ’ রণতরি বিক্রি। ইউক্রেনের মাইকোলাইভ বন্দরে পড়ে থাকা এই বিশাল জাহাজটি বেইজিং কিনেছিল মাত্র ২০ মিলিয়ন ডলারে। অবশ্য আজকের একটি আধুনিক যুদ্ধজাহাজের মূল্যের তুলনায় এটি অতি নগণ্য। বেইজিং তখন দাবি করেছিল, জাহাজটি একটি ভাসমান ক্যাসিনো ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু কয়েক বছর পরই বিশ্ববাসী অবাক হয়ে দেখল, সেই পরিত্যক্ত ভারিয়াগই রূপান্তরিত হয়েছে চীনের প্রথম শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরিতে, নাম তার ‘লিয়াওনিং’।
শুধু রণতরিই নয়, চীনের আধুনিক প্রতিরক্ষা শিল্পকে গড়ে তুলতে কিয়েভের কারিগরি সহায়তা ছিল অভাবনীয়। ইউক্রেন থেকে চীনে পাড়ি জমিয়েছে আরও অনেক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে: হেলিকপ্টার এবং শক্তিশালী ট্যাংক ইঞ্জিনের নকশা ও উৎপাদন প্রযুক্তি; চীনের নৌবাহিনীর গ্যাস টারবাইন এবং বিমানবিধ্বংসী রাডার ব্যবস্থার মূল কারিগরি জ্ঞান।
ইউক্রেন স্বীকার করেছে যে তারা একসময় অবৈধভাবে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয়টি ‘কেএইচ-৫৫’ ক্রুজ মিসাইল বেইজিংয়ে পাঠিয়েছিল। এটি চীনের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাকে কয়েক দশক এগিয়ে দেয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে। আজ ইউক্রেনীয় ড্রোন বিশেষজ্ঞরা সরাসরি স্বীকার করছেন, যুদ্ধের ভাগ্য এখন বেইজিংয়ের হাতে। কিয়েভের ড্রোন যুদ্ধের অগ্রপথিক আন্দ্রেই প্রোনিন আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘চীন চাইলে মাত্র এক দিনে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। তারা শুধু আমাদের অথবা রুশদের কাছে ড্রোন যন্ত্রাংশ রপ্তানি বন্ধ করে দিলেই হলো।’
ইউক্রেনের আকাশে আজ যে লাখ লাখ ড্রোন উড়ছে, তার প্রতিটি উপাদানে চীনের ছাপ রয়েছে। ড্রোনের ফ্রেম, মোটর, ফ্লাইট কন্ট্রোলার, লিথিয়াম ব্যাটারি এবং নেভিগেশন মডিউল—সবই মূলত চীনা কারখানায় তৈরি।
‘স্নেক আইল্যান্ড’ নামক একটি সামরিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় ড্রোন শিল্প এখন পুরোপুরি চীনা আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে নিওডিয়ামিয়াম ম্যাগনেট এবং থার্মাল সেন্সরের মতো জটিল কাঁচামালের ক্ষেত্রে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কিয়েভকে এক কঠিন রাজনৈতিক চাপে রেখেছে।
ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, যুদ্ধের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশ পুনর্গঠনে চীনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার। ২০১১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচের আমলে চীনের সঙ্গে যে ‘কৌশলগত অংশীদারি’ শুরু হয়েছিল, কিয়েভ এখন তার আধুনিক সংস্করণ চাচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য ইউক্রেনের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ইউক্রেনকে উত্তর-পূর্ব চীন থেকে কাজাখস্তান ও ককেশাস হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর প্রধান লজিস্টিক হাব বা ‘সেতুবন্ধনকারী দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের।
তবে বিশ্লেষক ইগার তিশকেভিচের মতে, চীনকে ইউরোপীয় বাজারে উন্নততর প্রবেশের সুযোগ দিতে ইউক্রেনকে তার সোভিয়েত আমলের চওড়া রেললাইন বদলে পশ্চিমা মানদণ্ডের ন্যারো গেজ ট্র্যাকে রূপান্তর করতে হবে।
যুদ্ধের মধ্যেও চীন এখনো ইউক্রেনীয় ইস্পাত, ভোজ্যতেল এবং সয়াবিনের প্রধান ক্রেতা। এই বাণিজ্যই বর্তমানে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে কোনোমতে সচল রেখেছে।
বিশ্লেষক অ্যালেক্সি কুশের মতে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য একটি ঐতিহাসিক ভুল হতে পারে। তিনি মনে করেন, ইউক্রেনের কূটনীতি কেবল পশ্চিমমুখী হলে চলবে না, বরং চীনসহ পুরো ‘গ্লোবাল সাউথ’-এর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। সমরাস্ত্রের গোপন অতীত এবং ড্রোনের অনিশ্চিত বর্তমানকে পেছনে ফেলে, কিয়েভ এখন এমন এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছে, যেখানে ইউক্রেন হবে পূর্ব ও পশ্চিমের বাণিজ্যিক মিলনস্থল—যেখানে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সৈন্য নয়, বরং পণ্যবাহী জাহাজ ও ট্রেন চলাচল করবে।

বিশেষত সংগীতের প্রতি উত্তমের ছিল অসীম একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও ভালোবাসা। প্রাথমিক জীবনে গানের শিক্ষক হিসেবেই কিন্তু তিনি টিকে থাকার চেষ্টা করেছিলেন। স্ত্রী গৌরী দেবীর সঙ্গে তাঁর পরিচয়ও হয়েছিল এই গান শেখানোর মধ্য দিয়ে। অসামান্য গলা আর অসাধারণ গায়ন রীতির অধিকারী ছিলেন তিনি। অভিনয় যদি তিনি না করতেন, তাহলে উত
২৪ জুলাই ২০২১
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

বিশেষত সংগীতের প্রতি উত্তমের ছিল অসীম একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও ভালোবাসা। প্রাথমিক জীবনে গানের শিক্ষক হিসেবেই কিন্তু তিনি টিকে থাকার চেষ্টা করেছিলেন। স্ত্রী গৌরী দেবীর সঙ্গে তাঁর পরিচয়ও হয়েছিল এই গান শেখানোর মধ্য দিয়ে। অসামান্য গলা আর অসাধারণ গায়ন রীতির অধিকারী ছিলেন তিনি। অভিনয় যদি তিনি না করতেন, তাহলে উত
২৪ জুলাই ২০২১
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৯ ঘণ্টা আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

বিশেষত সংগীতের প্রতি উত্তমের ছিল অসীম একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও ভালোবাসা। প্রাথমিক জীবনে গানের শিক্ষক হিসেবেই কিন্তু তিনি টিকে থাকার চেষ্টা করেছিলেন। স্ত্রী গৌরী দেবীর সঙ্গে তাঁর পরিচয়ও হয়েছিল এই গান শেখানোর মধ্য দিয়ে। অসামান্য গলা আর অসাধারণ গায়ন রীতির অধিকারী ছিলেন তিনি। অভিনয় যদি তিনি না করতেন, তাহলে উত
২৪ জুলাই ২০২১
বর্তমানে ভেনেজুয়েলার অধিকাংশ তেল মজুত রয়েছে দেশটির পূর্বাঞ্চলের ওরিনোকো বেল্টে। প্রায় ৫৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অঞ্চলে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেল মজুত রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগে
নব্বইয়ের দশকে যখন ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এক নব্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছিল, তখন তাদের কাছে চীনের চাহিদা ছিল শুধু আকরিক লোহা, শস্য আর সূর্যমুখী তেল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমীকরণ আমূল বদলে গেছে।
১৯ ঘণ্টা আগে
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
৪ দিন আগে