Ajker Patrika

নারীদের সম্মান দিতে পুরুষের সমস্যা কোথায়, মনস্তত্ত্বটা কী

প্রমিতি কিবরিয়া ইসলাম
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৫, ১৩: ০০
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোতে পুরুষদের নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানের অভাব একটি গুরুতর সমস্যা। যদিও বাংলাদেশের সংবিধান নারীদের সমান অধিকার দেয় এবং নারীশিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচুর আইন ও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বাস্তবে সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণমূলক ভূমিকায় নারীকে এখনো কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, পারিবারিক কাঠামো, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং অর্থনৈতিক অবস্থা—এসব মিলিয়ে বাংলাদেশের পুরুষেরা নারীকে অনেক সময় একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে, যেখানে নারীর স্বাধীনতা, ক্ষমতায়ন এবং আত্মবিশ্বাসকে উপেক্ষা করা হয়।

পুরুষদের মধ্যে কেন নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করার মনোভাব দেখা যায়? এর উত্তরটি সহজ নয়। এটি শুধু ব্যক্তিগত মানসিকতার সমস্যা নয়, বরং এটি বৃহত্তর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা একটি জটিল বিষয়। বাংলাদেশে নারীর অবস্থান, তার অধিকার, তার স্বাধীনতা এবং সম্মান—এসব বিষয় পারস্পরিক সম্পর্কিত। নারীকে দমিয়ে রাখা, পুরুষদের অধীনস্থ বা নিচু অবস্থানে রাখার প্রবণতা— এটি শুধু বাংলাদেশেই বিদ্যমান তা নয়, কম বেশি সব দেশেই দেখা যায়।

যেকোনো সম্পর্কের একটি মৌলিক দিক হলো—পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান। তবে প্রাপ্য সম্মান (শুধু মৌখিক প্রশংসা নয়) পাওয়ার ক্ষেত্রে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন নারীরা। এটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে পেশাগত পরিবেশেও হতে পারে।

সচেতনতার অভাব

পুরুষেরা সাধারণত নারীদের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয়টি আলাদা করে ভাবেন না বা গুরুত্ব দেন না। পুরুষেরা ঠিকই একে অপরের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করতে জানে, যেমন: বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে কেন ব্যতিক্রম? এর একটি সরল ব্যাখ্যা হতে পারে, হয় তারা বিপরীত লিঙ্গকে সম্মান দিতে জানে না, অথবা সমান যোগ্য বিবেচনায় সেটি ভেবেই দেখে না। এটি এক ধরনের অবহেলা বা উপেক্ষা হতে পারে।

পুরুষেরা জানে কীভাবে একে অপরের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করতে হয়, তা সে সামাজিক পরিবেশে হোক, কর্মক্ষেত্রে হোক বা প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতিতে হোক। অজুহাত হিসেবে পুরুষেরা যদি দাবি করে যে, তারা কখনো নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন নিয়ে ভাবেনি বা জানে না, তাহলে তারা আসলে নারীদের প্রতি তাদের আচরণ, সম্পর্কে ক্ষেত্রে সমান না ভাবা এবং সাধারণত নারী–পুরুষ সম্পর্কের ভেতরে যে বৈষম্য বিদ্যমান, তা নিয়ে চিন্তা বা আত্মসমালোচনা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। এই প্রতিক্রিয়া একটি সমাজের অবচেতন নৈতিক চর্চার প্রতিফলন, যেখানে নারীদের প্রতি সম্মান প্রত্যাশিত বা প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হয় না।

নারী ও পুরুষের কাজ আলাদা

নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন বা দায়িত্ব এড়ানোর জন্য পুরুষদের আরেকটি সাধারণ কৌশল হলো নারীদের প্রশংসা করা! যেমন: নারীরা এসব কাজে অনেক ভালো। এটি বিশেষ করে গৃহস্থালির কাজ (রান্না, সূচিকর্ম, ঘর গোছানো ইত্যাদি), সন্তান লালন–পালন এবং আবেগ সম্পর্কিত কাজে। সমাজে ছেলেদের আবেগবর্জিত কঠোর বাস্তবতার শিক্ষা দেওয়ার চল রয়েছে। সে ক্ষেত্রে নারীদের আবেগী, কোমল হৃদয়ের বলে ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এ ধরনের বাহানা আসলে সূক্ষ্মভাবে ঐতিহ্যগত লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকাকেই শক্তিশালী করে।

পুরুষেরা বলে, নারীরা শিশুদের দেখাশোনায় তাদের চেয়ে ভালো। আপাতদৃষ্টিতে এটিকে নারীর প্রতি অকুণ্ঠ প্রশংসা বলেই মনে হতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এখানে যা ঘটছে, তা হলো এক ধরনের চালাকি—প্রশংসার ছদ্মবেশে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া।

কাউকে নিয়ন্ত্রণ বা বশীভূত করে রাখার একটি মোক্ষম কৌশল হিসেবে সাধারণত ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী সম্পর্কে কর্তৃত্ববাদীরা নিজস্ব ধারণা প্রচার করে। ওই জনগোষ্ঠীর আচরণ, মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠার ভান করে। ঠিক একই ভাবে পুরুষেরাও হয় নারীদের সম্পর্কে নিজেদের ধারণাকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চায় অথবা নারীদের বুঝতে অক্ষমতার দোহাই দেয়।

কখনো কখনো প্রশংসাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কৌশলে কাউকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবিত করা হয়। প্রকৃত প্রশংসা থেকে এটি আলাদা। কারণ এটি সাধারণত কাউকে প্রভাবিত করার জন্য ব্যবহার করা হয়, যাতে তারা এমনভাবে কাজ করে যা প্রশংসাকারী ব্যক্তি কোনো না কোনোভাবে লাভবান হয়। এটা এমন এক ধরনের প্রশংসা যা খুব সূক্ষ্মভাবে কাজ করে এবং যার ফলে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি নিজেকে বিশেষ, প্রশংসিত বা স্বীকৃত বলে ভাবতে পারে। তার অজান্তেই এর মাধ্যমে প্রশংসাকারী ব্যক্তি গোপন উদ্দেশ্য হাসিল করে।

এই কৌশলটি শুধু নারীদের ওপর দায়িত্বের বোঝা চাপায় না, বরং তাদের সময় ও শক্তি মূল্যহীন করে তোলে। পরিবর্তে, এই কৌশল ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ডগুলোতে পুরুষের অংশগ্রহণ না থাকাকে যুক্তিসংগত করে তোলা হয়। পুরুষেরা দায়িত্ব নেওয়ার পরিবর্তে, নারীদের ওপর আরও দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়।

শর্তসাপেক্ষে সম্মান

কিছু পুরুষ শুধু তখনই নারীদের সম্মান করবে যখন তাদের মা বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ (কর্মস্থল ইত্যাদি) বলবে যে, তাদের এটি করা উচিত। এই ধরনের সম্মানের মধ্যে কোনো আন্তরিকতা থাকে না। বরং পরিণতির ভয় থেকে করা হয়।

সমাজে সাধারণত, নারীদের সম্মান করতে শেখানো হয় ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা নৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে। অর্থাৎ, পুরুষদের ওপর সামাজিক বা পারিবারিক চাপ থাকে, এর সঙ্গে নারীর মর্যাদা অনুধাবনের কোনো সম্পর্ক নেই। এর ফলে, তাদের মুখের কথা এবং কাজে বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হয়। নারীদের সম্মান করে বলে দাবি করলেও, তাদের আচরণে সব সময় তা প্রকাশ পায় না। তারা মূলত শাস্তি (আইনগত) বা বিচার (পাবলিক জাজমেন্ট) এড়ানোর জন্য সামাজিক চর্চা মেনে চলে মাত্র। তারা সমতা এবং সম্মানের গুরুত্বকে মানসিকভাবে গভীর ও অর্থপূর্ণভাবে মেনে নিতে ব্যর্থ হয়।

ঐতিহাসিক অস্বীকৃতি এবং সমাজের অবজ্ঞা

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো, পুরুষদের বর্তমান লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা এবং সামাজিক প্রত্যাশার পরিবর্তনকে অস্বীকার করা। কিছু পুরুষ এখনো বিশ্বাস করে যে, নারীদের সম্মান করার প্রয়োজন নেই বা লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনগুলো ঘটছে, তা অতিরঞ্জিত বা নারীদের জন্য অপ্রাসঙ্গিক। যখন নারীদের সমান করে দেখার প্রয়োজনীয়তার কথা তোলা হয়, তখন তারা প্রায়ই নারীদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঐতিহাসিক বাস্তবতাকে খাটো করে দেখে অথবা নারীর প্রতি অসম্মানকে সমাজের একটি সমস্যা হিসেবেও অগ্রাহ্য করে।

নারীদের অধিকার অর্জনের সংগ্রামের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে অস্বীকৃতির বিষয়টি বোঝার জন্য, নিম্নলিখিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনগত মাইলফলকগুলোর সময়রেখা বিবেচনা করা যেতে পারে—

১৮৪৮–সেনেকা ফলস কনভেনশন: প্রথম নারীদের অধিকার সম্মেলন, যেখানে নারীদের ভোটাধিকার এবং সমান অধিকার দাবি করা হয়।

১৯১৯–আমেরিকার সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের ভোটাধিকার অর্জন।

১৯৪৫–জাতিসংঘের মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র: নারী ও পুরুষের সমান অধিকার জাতিসংঘের সনদে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

১৯৬৩–যুক্তরাষ্ট্র: নারী-পুরুষের সমান বেতন দেওয়ার আইন পাস হয়।

১৯৭২–যুক্তরাষ্ট্র: শিক্ষা এবং ক্রীড়া ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়।

১৯৭৫–জাতিসংঘের নারীদের প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদ: নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি গৃহীত হয়।

২০১০–আইসিডব্লিউআর (সিইডিএডব্লিউ): নারী অধিকারের জন্য বৈশ্বিক সংবিধান, যা জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে নারীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে বাধ্য করে।

এই মাইলফলকগুলো নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার অর্জনে অসংখ্য সংগ্রামের ফলস্বরূপ, যা বর্তমানে সমাজে নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে, কিছু পুরুষ এখনো এসব পরিবর্তনকে অস্বীকার করে, যা এই সংগ্রামের অগ্রগতি এবং নারীদের অধিকার সম্পর্কে তাদের গভীরভাবে অবহিত না হওয়ারই ইঙ্গিত।

এই আইনগত অগ্রগতির পরেও, অনেক পুরুষ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে স্বীকার করতে চায় না। নিপীড়নের বিরুদ্ধে নারীদের দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে সাধিত পরিবর্তনগুলোকে অস্বীকার বা হালকা করে দেখিয়ে, পুরুষেরা তাদের নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে চায়।

এ ধরনের অস্বীকৃতি পুরুষদের যে সুবিধা দেয়—

  • নিজেদের আচরণ এবং যে পদ্ধতিতে তারা পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে লাভবান হয়, তা নিয়ে পুনর্মূল্যায়ন এড়ানোর সুযোগ দেয়।
  • সম্পর্ক, ভূমিকা ও দায়িত্বের পরিবর্তিত ধারণার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে অস্বীকার করতে পারে।
  • তারা এমন একটি সমাজব্যবস্থাকে রক্ষা করে যেখানে তাদের নিজেদের কাজ নিয়ে প্রশ্ন করতে বা নারীদের প্রতি অসম্মানের প্রভাব নিয়ে চিন্তা করতে হয় না।

পিতৃতান্ত্রিকতার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ভিত্তি

নারীদের সম্মান করতে পুরুষদের মনে যে বাধা, তার অন্যতম প্রধান কারণ হলো—পিতৃতান্ত্রিকতার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ভিত্তি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, পৃথিবীর বিভিন্ন সমাজে পুরুষদের ক্ষমতার উচ্চস্থানে বসিয়ে, নারীদের অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে। প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু করে আধুনিক প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত আইন, ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় অনুশাসনে পুরুষদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত ছিল।

সামাজিকীকরণ: লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা

ছোটবেলা থেকে ছেলে-মেয়েদের কঠোর লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা অনুসরণ করতে শেখানো হয়, যা ছেলেদের আধিপত্যশীল, প্রতিযোগিতামূলক এবং আবেগহীন হতে উদ্বুদ্ধ করে—যা সাধারণত ‘প্রথাগত পৌরুষ’–এর সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যদিকে, মেয়েদের কোমল এবং সহানুভূতিশীল হতে উৎসাহিত করা হয়। মনোবিজ্ঞানী মাইকেল কিমেল তাঁর বই ম্যানহুড ইন আমেরিকা–তে যুক্তি দেন, এই লিঙ্গভিত্তিক প্রত্যাশাগুলো পুরুষদের ওপর একটি বিশাল চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে তারা এমন পুরুষত্বের মডেল অনুসরণ করে যা নারীদের দুর্বল বা অক্ষম হিসেবে দেখায়।

এই ধরনের লিঙ্গভিত্তিক নিদর্শনগুলো মিডিয়া, বিজ্ঞাপন এবং এমনকি পরিবারের মধ্যে প্রচারিত হয়, যা নারীদের কম সম্মানযোগ্য করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, ‘আলফা মেল’ নামে এমন এক পুরুষের ধারণা দেওয়া, যে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে, নিয়ন্ত্রণ দাবি করে এবং অন্যদের, বিশেষত নারীদের, স্বাধীনতা সংকুচিত করে। এই সাংস্কৃতিক মডেল অনেক পুরুষের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত, যা তাদের নারীদের সমান হিসেবে সম্মান করতে বাধা দেয়।

ক্ষমতা এবং বিশেষাধিকার হারানোর ভয়

নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করার আরেকটি কারণ হলো, পুরুষদের ক্ষমতা হারানোর ভয়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষেরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অধিকাংশ সুবিধা ভোগ করে। লিঙ্গ সমতার আন্দোলনের উত্থান এই ক্ষমতার কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলেছে, যার ফলে কিছু পুরুষ পরিবর্তন প্রতিরোধ করে। এই ভয় বিভিন্ন আচরণে প্রতিফলিত হয়, যেমন ম্যানস্প্লেনিং (পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি), গ্যাসলাইটিং, অথবা সরাসরি আক্রমণ, যা আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে করা হয়।

মনস্তাত্ত্বিক কারণ: নিরাপত্তাহীনতা এবং আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার অভাব

কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদের নারীর প্রতি সম্মান দেখাতে না পারার পেছনে গভীর মনস্তাত্ত্বিক কারণ থাকতে পারে। যেমন: নিরাপত্তাহীনতা অথবা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার (ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স) অভাব। অনেক পুরুষকে আবেগ বা মানবিক দুর্বলতা দমন করতে শেখানো হয়, যার ফলে তারা সম্পর্কের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান এবং সহানুভূতির ভিত্তিতে চলতে অক্ষম। এই আবেগ শূন্যতা নারীদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণের মধ্যে প্রকাশ পেতে পারে, কারণ তারা নিজেদের অক্ষমতা বা হুমকির সম্মুখীন হলে নিরাপত্তাহীনতা থেকে নিয়ন্ত্রণ বা আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে পারে।

মিসোজিনি এবং অধিকারবোধ

নারীদের সম্মান করতে পুরুষদের যে সমস্যা, তার মূল কারণ হলো মিসোজিনি বা নারীদের প্রতি ঘৃণা বা সংস্কার। মিসোজিনি শুধু প্রকাশ্য ঘৃণার বিষয় নয়, এটি আরও সূক্ষ্মভাবে প্রকাশ পেতে পারে, যেমন নারীদের অর্জনকে তুচ্ছ করা, তাদের অবজ্ঞা করা।

আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন (এপিএ)–এর গবেষণা দেখিয়েছে, যারা মিসোজিনিস্টিক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে, তারা নারীদের কম সক্ষম, কম অধিকারের যোগ্য এবং তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের জন্য নিজেরাই দায়ী বলে মনে করে। কারণ পুরুষদের মনোভাব হলো, নারীর ওপর তাদের কিছু বিশেষাধিকার রয়েছে। কর্মক্ষেত্র, সম্পর্ক বা সামাজিক জীবনে তারা এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে— শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনের বিখ্যাত গানগুলোর নেপথ্যের নারীরা

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ০৫
খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের জন্য অনেক জনপ্রিয় গান লিখেছেন, সুর করেছেন এবং গেয়েছেন নারীরা। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের জন্য অনেক জনপ্রিয় গান লিখেছেন, সুর করেছেন এবং গেয়েছেন নারীরা। প্রতীকী ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব বড়দিনের কথা মনে হলে কিছু জনপ্রিয় গানের কথা সামনে আসে। জানেন কি, হিমেল হাওয়ার পরশ আর আলোকসজ্জার রোশনাইয়ের মধ্যে যে সুরগুলো আমাদের কানে বাজে, সেগুলো সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে একদল নারী। তাঁদের লেখা, কণ্ঠ আর সুরের জাদুকরী মিশেলে বড়দিন পেয়েছে এক অনন্য রূপ।

কুইন অব ক্রিসমাস মারায়া

বড়দিনের গানের কথা উঠলে যে নামটি সবার আগে স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে, তিনি হলেন মারায়া কেরি। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত হয় বড়দিনের অলিখিত অ্যানথাম, ‘অল আই ওয়ান্ট ফর ক্রিসমাস ইজ ইউ...’ গানটি। এটি যৌথভাবে লিখেছিলেন মারায়া কেরি ও ওয়াল্টার এন আফানাসিফ। এর কণ্ঠশিল্পী ছিলেন মারায়া। এই গানের প্রতিটি ছত্রে মিশে রয়েছে এক চিরন্তন আর্তি। তাঁর গানের কথায় ফুটে ওঠে সেই সত্য, ‘বড়দিনে খুব বেশি কিছু চাওয়ার নেই আমার,/ শুধু একটি জিনিসেরই বড় প্রয়োজন... বড়দিনে শুধু তোমাকেই চাই আমি!’ এর অর্থ, উৎসবের জাঁকজমক বা দামি উপহারের চেয়ে প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যই আসল।

'কুইন অব ক্রিসমাস' মারিয়া কেরি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
'কুইন অব ক্রিসমাস' মারিয়া কেরি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

মারায়া কেরি ও ওয়াল্টার এ গানটি লিখতে ও সুর করতে সময় নিয়েছিলেন মাত্র ১৫ মিনিট। গান লেখা ও কণ্ঠ দেওয়াই নয়, মারায়া ছিলেন এই গানের সুরকার। প্রতিবছরের ডিসেম্বরে বিলবোর্ড চার্টের শীর্ষে ফিরে আসা এই এক গান থেকে তিনি কোটি কোটি টাকা রয়্যালটি পান, যা তাঁকে এনে দিয়েছে কুইন অব ক্রিসমাস বা বড়দিনের রানি উপাধি।

ড্রামের শব্দে ধ্রুপদি সুর

ক্যাথরিন কেনিকট ডেভিস। ছবি: উইকিপিডিয়া
ক্যাথরিন কেনিকট ডেভিস। ছবি: উইকিপিডিয়া

এক দরিদ্র শিশু, যার কাছে যিশুর জন্মের আনন্দ উৎসবে দেওয়ার মতো কোনো দামি উপহার ছিল না। তাই সে তার ছোট্ট ড্রামটি বাজিয়ে সম্মান জানাতে চেয়েছিল। এমনই একটি ঘটনাকে সুরে-তালে মিলিয়েছিলেন আমেরিকান সংগীত শিক্ষক ক্যাথরিন কেনিকট ডেভিস। ১৯৪১ সালের অনন্য সৃষ্টি ‘দ্য লিটিল ড্রামার বয়’ গানটি। প্রথমে এর নাম ছিল ‘দ্য ক্যারল অব দ্য ড্রাম’। গানটি একটি চেক গানের অনুকরণে তৈরি বলে ধারণা করা হয়। তবে এর সুর এবং কথা দুটোরই মূল কারিগর ছিলেন ক্যাথরিন। গানের সেই বিখ্যাত ‘পা-রাম-পাম-পাম-পাম’ সুরটি মূলত ক্যাথরিনেরই করা। আজও বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে বড়দিনের ক্যারল হিসেবে এ সুরটি মানুষের হৃদয়ে অনুরণিত হয়।

চঞ্চলতা ও শাশ্বত আবেদন

বড়দিনের উৎসবে কেবল ভক্তি বা আবেগ নয়, মিশে থাকে কিছুটা চঞ্চলতা আর কৌতুকও। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘স্যান্টা বেবি’ গানটি তারই প্রমাণ। এর নেপথ্যে ছিলেন প্রতিভাবান গীতিকার জোয়ান জাভিটস। তিনি ছিলেন বিখ্যাত মার্কিন সিনেটর জ্যাকব জাভিটসের ভাইয়ের মেয়ে। সে সময়ে দাঁড়িয়ে এক নারীর এমন চটুল ও আধুনিক কথার গান লেখা ছিল বেশ সাহসী পদক্ষেপ। ফিল স্প্রিংগার ও টনি স্প্রিংগারের সঙ্গে মিলে জোয়ান এ গানটি লিখেছিলেন। গানটি আর্থ কিটের কণ্ঠে অমর হয়ে আছে। দশকের পর দশক পার হলেও গানটির আবেদন একটুও কমেনি। ম্যাডোনা থেকে শুরু করে কাইলি মিনোগ, টেইলর সুইফট এবং আরিয়ানা গ্রান্দের মতো বর্তমান সময়ের পপতারকারাও এ গানটি নতুন করে গেয়েছেন।

‘স্যান্টা বেবি’ গানটির নেপথ্যে ছিলেন প্রতিভাবান গীতিকার জোয়ান জাভিটস। ছবি: উইকিপিডিয়া
‘স্যান্টা বেবি’ গানটির নেপথ্যে ছিলেন প্রতিভাবান গীতিকার জোয়ান জাভিটস। ছবি: উইকিপিডিয়া

কিংবদন্তির সুর ও আধুনিকতার ছোঁয়া

কান্ট্রি মিউজিকের কিংবদন্তি ডলি পার্টন বড়দিনের উৎসবকে রাঙিয়েছেন নিজের মেধা দিয়ে। তিনি বড়দিন উপলক্ষে একাধিক সফল অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন, যেগুলোর অধিকাংশ গানই ছিল তাঁর নিজের লেখা। তাঁর অমর সৃষ্টি ‘হার্ড ক্যান্ডি ক্রিসমাস’ ও ‘ক্রিসমাস অব মেনি কালার্স’ গানগুলো আজও শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।

সিয়ার কণ্ঠে বড়দিনের আনন্দের স্রোত

অস্ট্রেলিয়ান সংগীতশিল্পী ও গীতিকার সিয়া। ছবি: রোলিং স্টোন
অস্ট্রেলিয়ান সংগীতশিল্পী ও গীতিকার সিয়া। ছবি: রোলিং স্টোন

সময়ের স্রোতে বড়দিনের গানে যোগ হয়েছে আধুনিকতার নতুন মাত্রা। তরুণ প্রজন্মের কাছে বড়দিন মানেই যেন অস্ট্রেলিয়ান সংগীতশিল্পী ও গীতিকার সিয়া। ২০১৭ সালে তিনি প্রকাশ করেন ‘এভরিডে ইজ ক্রিসমাস’ অ্যালবামটি। সিয়া প্রমাণ করেছেন, বড়দিনের গানের জন্য কেবল পুরোনো ক্ল্যাসিকের ওপর নির্ভর করার প্রয়োজন নেই। তাঁর নিজের লেখা ‘স্নো ম্যান’ ও ‘স্যান্টা ইজ কামিং ফর আস’ গানগুলো এখনকার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়।

বড়দিনের সুরের মূর্ছনা কেবল সুর নয়; বরং এক অদৃশ্য মিলনমেলা। পর্দার আড়ালে থাকা এই নারী কারিগরদের লেখনী আর সুরের মায়ায় বড়দিন হয়ে ওঠে আরও মধুময়, আরও প্রাণবন্ত। প্রিয়জন আর আত্মীয়স্বজনের সে মিলনমেলায় এ গানগুলোই হয়ে থাকে আত্মার খোরাক।

সূত্র: বিবিসি, ওয়েব্যাক মেশিন, কনকর্ড ফ্রি পাবলিক লাইব্রেরি, ভ্যানিটি ফেয়ার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে— শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উদ্যোক্তা মেলা: সংখ্যা কমলেও আশাবাদী নারী উদ্যোক্তারা

কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা
উদ্যোক্তা মেলা: সংখ্যা কমলেও আশাবাদী নারী উদ্যোক্তারা

ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়; বরং নেটওয়ার্কিং, নতুন আইডিয়া বিনিময় এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের বিশাল খোলা বই। তবে চলতি বছর সেই মেলাগুলোর চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন; বিশেষ করে উদ্যোক্তা মেলার সংখ্যা কমে যাওয়া এবং এর প্রভাব নিয়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

মেলার গুরুত্ব ও বর্তমান সংকট

এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, নতুন উদ্যোক্তাদের ৬০ শতাংশ নারী। ফাউন্ডেশনটি এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আর্টেমিস লাইফস্টাইলের স্বত্বাধিকারী ফায়জা আহমেদ রাফা বলেন, ‘আমরা যারা অনলাইন বিজনেসের সঙ্গে জড়িত, তারা বছরে বেশ কিছু মেলায় অংশ নেওয়ার চেষ্টা করি, যাতে সরাসরি ভোক্তাদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি করা যায়।

এ ছাড়া উদ্যোক্তা মেলাগুলোতে পরিচিতি পাওয়ার সুযোগ থাকে। অনলাইন উদ্যোগ নিয়ে ভোক্তাদের অনেক সময় বিশ্বাস তৈরি করতে অসুবিধা হয়। মেলা করলে তাঁরা সরাসরি এসে পণ্য যাচাই করতে পারেন। এর ফলে অনেকে নিশ্চিন্তে অনলাইনে অর্ডার করেন।’ রাফা আরও জানান, সাধারণত ঈদ, ফাল্গুন, বৈশাখ বা দুর্গাপূজার মতো উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন করা হয়। তবে তাঁর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ‘লাস্ট দু-এক বছরে তুলনামূলক মেলার আয়োজন কিছুটা কম।’

কেন কমছে মেলার সংখ্যা

নারী উদ্যোক্তা ফোরামের সভাপতি রাফিয়া আক্তার, যিনি ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে কাজ করছেন, তিনি এ বছর বড় কোনো মেলার আয়োজন করতে পারেননি। এর কারণ হিসেবে তিনি দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। রাফিয়া আক্তার বলেন, ‘আসলে দেশের পরিস্থিতির কারণে এ বছর মেলা আয়োজন করা হয়নি। যে কারণে অর্থনৈতিক দিকেও প্রভাব পড়েছে। এ মুহূর্তে ইনভেস্ট করে মেলায় কেউ অংশ নেবেন কি না, সেসব দিক বিবেচনা করে বড় কোনো মেলার আয়োজন করা হয়নি এবার।’

রাফিয়া আক্তার আরও যোগ করেন, ‘গত বছরের আগেও দেখা গেছে, সব সময় ফোন আসত, এখানে মেলা সেখানে মেলা। সেটা কমে গেছে। এটা আমার কাছে কম এসেছে কি না জানি না। মনে হয়, মেলার আয়োজন তুলনামূলক কমে গেছে।’

তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন

মাইসারার স্বত্বাধিকারী এলমা খন্দকার এষা। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর আমি মেলা করিনি। তবে চলতি বছর বেশ কিছু মেলা করেছি। সেটা যদি হিসাব করি, তাহলে আমার চোখে মেলা কম মনে হয়নি।’

অর্থনীতিতে নারীর অবদান ও আগামীর প্রত্যাশা অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪ অনুযায়ী, দেশের ১ কোটি ১৮ লাখ এসএমইর মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ নারী মালিকানাধীন হলেও উদ্যোক্তা হওয়ার হার দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩ কোটি ৭ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ নারী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি চমকপ্রদ তথ্য হলো, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে দারিদ্র্যসীমায় নতুন করে কোনো নারী যুক্ত হননি, যেখানে ১ লাখ ৬০ হাজার পুরুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন।

সৌন্দর্যশিল্প, হস্তশিল্প, বুটিক ও ব্লক প্রিন্টের মতো খাতে নারীদের জয়জয়কার। এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে মেলার মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অপরিহার্য। এতে ঢাকাসহ বড় শহরের ভোক্তাদের সঙ্গে সারা দেশের নারী উদ্যোক্তাদের সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হয়। এতে পণ্য ও ক্রয়বৈচিত্র্য বাড়ে, ভোক্তা এবং সরবরাহকারীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা তৈরি

হয়। সর্বোপরি অর্থনৈতিক গতিশীলতা ঠিক থাকে। কিন্তু এ বছর দৃশ্যমানভাবে মেলার সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে। তবু উদ্যোক্তারা অনেক আশাবাদী। এই আশাবাদ দেশের অর্থনীতির জন্যই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে— শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রোজের ফুটে ওঠার গল্প

আল আমিন
রোজাইয়া রাব্বি রোজ
রোজাইয়া রাব্বি রোজ

ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। কিন্তু নিজের চেষ্টায় তিনি আজ অন্য নারীদের কাছে হয়ে উঠেছেন আদর্শ।

২০১৯ সালে একটি সেলাই মেশিন দিয়ে শুরু করেন নিজের ভুবনে যাত্রা। কিছু গজ কাপড় কিনে পোশাক তৈরির কাজ শুরু করেন প্রথমে। সেলাই মেশিনের আওয়াজের চেয়ে তখন বেশি শোনা যেত মানুষের কটূক্তির আওয়াজ। তাই ছোটবেলার রান্না করার শখ থেকে ছোট্ট পরিসরে শুরু করলেন ক্যাটারিং সার্ভিস। সেখানেও ডেলিভারি, প্রমোশনসহ নানা সমস্যার মুখে পড়লেন তিনি। তবে দমে গেলেন না। কয়েকজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করলেন উদ্যোক্তা উন্নয়ন আবাসন নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ। তাঁর নিজের তৈরি পণ্যের পাশাপাশি শহরের নারীদের উৎপাদিত পণ্য সেই ফেসবুক গ্রুপে বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহের কাজ শুরু করেন রোজ।

খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে অল্প দিনেই তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন পঞ্চগড় শহরের চাউলহাটির নিউমার্কেট এলাকায় তাঁর ‘প্রত্যাশা’ ব্র্যান্ডের নিজস্ব একটি আউটলেট আছে। সেখানে বুটিকস ও হ্যান্ডপেইন্টের বিভিন্ন পণ্য তিনি পাইকারি বিক্রি করেন। এখন তাঁর অধীনে নিয়মিত কাজ করছেন ১০ জন নারী।

উদ্যোক্তা জীবনের শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে তিনি জেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জনকারী নারী হিসেবে পেয়েছেন এ বছরের শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী পুরস্কার। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে তাঁকে অদম্য নারী পুরস্কারে ভূষিত করেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক কাজী মো. সায়েমুজ্জামান।

রোজাইয়া রাব্বি রোজের স্বপ্ন, তাঁর পণ্য যেন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তাঁদের জীবনমানের উন্নয়নে তিনি কাজ করে যেতে চান অন্য নারীদের সঙ্গে নিয়ে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে— শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আন্তর্জাতিক নারী: অন্ধকার আকাশ যাঁর ল্যাবরেটরি

ফিচার ডেস্ক
আন্তর্জাতিক নারী: অন্ধকার আকাশ যাঁর ল্যাবরেটরি

পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র নয়—একটি স্যাটেলাইট। সেই কৌতূহলী কিশোরীটি আজকের মনীষা শ্রেষ্ঠা—নেপালের সফল জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জ্যোতিঃপদার্থবিদ এবং দেশটির প্রথম নারী অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার। তিনি এখন হাই-এনার্জি অ্যাস্ট্রোফিজিকস বিষয়ে পিএইচডি করছেন।

চ্যালেঞ্জের সঙ্গে শুরু যে লড়াই

মনীষার বিজ্ঞানের পথে আসাটা ছিল অনেকটা জেদের বশে। তিনি যে কলেজে পড়তেন, সেখানে পদার্থবিজ্ঞান ক্লাসে ছিল ১২০ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচ-ছয়জন মেয়ে। অথচ জীববিজ্ঞানের চিত্রটা ছিল ঠিক উল্টো। বন্ধুকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তর পান, মেয়েদের জন্য পদার্থবিজ্ঞানের চেয়ে জীববিজ্ঞান অনেক সহজ। মনীষা বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেন। তিনি ভাবলেন, তাঁকে পদার্থবিজ্ঞানই পড়তে হবে।

ক্লাসে ঢোকার পর শুরু হলো অন্য এক লড়াই। পুরুষশাসিত সেই পরিবেশে অনেক সময় মেয়েদের বসার জন্য কোনো আসনই দেওয়া হতো না; তাদের দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হতো। এমনকি ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময়ও তরুণেরা কাজ করত, আর মেয়েদের দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখার অনুমতি ছিল। মাস্টার্স পর্যায়ে এসে এই সংকট আরও বাড়ে। পড়াশোনার পদ্ধতি ছিল শুধু নোট নেওয়া আর মুখস্থ করা। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে মনীষা ডিগ্রি শেষ না করেই পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির যাত্রা

২০১৩ সালে মনীষা নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটিতে (এনএএসও) প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে যোগ দেন। তখন সংগঠনটির কোনো অফিস ছিল না, ছিল খুব সীমিত সুবিধা। মনীষা ও তাঁর দল মিলে বছরের পর বছর পরিশ্রম করে সেটিকে আন্তর্জাতিক উচ্চতায় নিয়ে যান।

সম্প্রতি এই সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের সদস্যপদ পেয়েছে, যা নেপালের ১০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম।

আজ এনএএসও শিক্ষা, গবেষণা ও প্রচার—তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সৃজনশীল চিন্তার উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। মনীষার দল সারা দেশে সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং শিক্ষার্থীদের হাতে টেলিস্কোপ ও বই তুলে দিচ্ছে। যাতে তারাও বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে পারে।

অলিম্পিয়াড ও বৈশ্বিক সাফল্য

মনীষা শ্রেষ্ঠা নেপালের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নেপালি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করেন। তাঁর হাত ধরে অনেক শিক্ষার্থী ফ্রান্স, আমেরিকা ও সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক মঞ্চে লড়াই করেছেন। এমনকি এই অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া তিন শিক্ষার্থী বর্তমানে বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। ২০২০ সালে তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে স্টারস শাইন ফর এভরিওয়ান সংস্থা তাঁকে বিশেষ সম্মাননা দেয়।

ডার্ক স্কাই বা অন্ধকার আকাশ রক্ষা

মনীষা শুধু বিজ্ঞানী নন, তিনি একজন দক্ষ আলোকচিত্রীও। নেপালের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় তাঁর তোলা মহাকাশের ছবি নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তিনি বর্তমান সময়ের বড় একটি সমস্যা আলোকদূষণ নিয়ে কাজ করছেন।

২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ মানুষ শহর ও অবকাঠামোর কৃত্রিম আলোর কারণে রাতের আকাশের আসল সৌন্দর্য দেখতে পায় না। মনীষা তাদের সতর্ক করে জানান, আগামী ২০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে নক্ষত্ররাজি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। তাই নেপালে ‘অ্যাস্ট্রো-ট্যুরিজম’ কিংবা জ্যোতি-পর্যটন বিকাশের মাধ্যমে আকাশ রক্ষার স্বপ্ন দেখেন মনীষা শ্রেষ্ঠা।

ভবিষ্যতের স্বপ্ন

মনীষার স্বপ্ন নেপালে একটি নিজস্ব মানমন্দির তৈরি করা, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তিনি মনে করেন, নেপালের কাছে দামি যন্ত্রপাতি না থাকলেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় ল্যাবরেটরি আছে। সেটা হলো, মাথার ওপরের অন্ধকার আকাশ। তিনি বিশ্বাস করেন, আকাশ আমাদের সবাইকে এক সুতোয় বাঁধে। তিনি চান তাঁর জীবনের গল্প শুনে অন্য মেয়েরাও যেন বিজ্ঞানের কঠিন পথে পা বাড়াতে পিছপা না হয়।

সূত্র: এশিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক, দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে— শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত