Ajker Patrika

কলাবতী শাড়ির রূপকার দুই নারী

ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট ও  মাহিদুল ইসলাম, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) 
কলাবতী শাড়ির রূপকার দুই নারী

প্রতিটি সাফল্যের পেছনে থাকে দারুণ সব গল্প। কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ি বানানোর সফলতার যে গল্প ছড়িয়ে পড়েছে, এর পেছনের গল্পটিও দারুণ। অদ্ভুত বিষয়, এ সফলতার পেছনে জড়িয়ে আছে দুই নারীর চিন্তা ও কর্মতৎপরতা। তাঁদের একজন রাধাবতী দেবী, অন্যজন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। 

একজন রাধাবতী দেবী
সংগ্রামমুখর এক জীবন তাঁর। প্রায় ৬৫ বছর আগে কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের ভানুবিল মাঝেরগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রাধাবতী দেবী। পৃথিবীতে আসার কয়েক মাস পর বাবাকে হারান। ফলে মা মালতী দেবী হয়ে ওঠেন তাঁর ভরসার জায়গা। কিছুদিন পর মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন।

ফলে রাধাবতী বড় হন চাচার কাছে। স্থানীয় তেতইগাঁও রশিদ উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। সংসারজীবন শুরুর মাত্র তিন মাস পর বিচ্ছেদ হয়ে যায়! ২০১৬ সালে তাঁর মা মারা যান। এত সব বিচ্ছেদ আর বিষণ্নতার গল্প নিয়ে রাধাবতী দেবী বয়ে চলেছেন ৬৬ বছরের জীবন। বর্তমানে চাচাতো ভাই অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক রণজিৎ সিংহের পরিবারে থাকেন তিনি। সাধ্যমতো কাজ করে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন রাধাবতী। সাধারণত সব মণিপুরি নারীই তাঁত বুনতে পারেন। তিনিও এর ব্যতিক্রম 
নন। ১৯৭৫ সাল থেকে তিনি তাঁত বয়নের কাজ শুরু করেন এবং ১৯৯২ সাল থেকে শাড়ি তৈরি শুরু করেন।

এই দীর্ঘ তাঁত বয়নের অভিজ্ঞতা তাঁকে দক্ষ করে তুলেছে। সেই দক্ষতার খোঁজ পান বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। ফলে এক দারুণ উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখে।

কলাবতী শাড়ি তৈরির পর বান্দরবান জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে রাধাবতী দেবীকে অর্থসহায়তা এবং একটি স্মার্টফোন উপহার দেওয়া হয়। তবে উপহার আর মজুরির চেয়ে তাঁর 
কাছে আনন্দের বিষয়, তিনি দেশের জন্য কিছু করতে পেরেছেন। এ জন্য সরকার, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ও ফুফাতো ভাই গুণমনির কাছে ঋণী বলে জানান রাধাবতী দেবী।

 জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির সঙ্গে রাধাবতী দেবীএকটি প্রকল্প এবং ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি 
কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরির পেছনে আছে একটি প্রকল্পের দীর্ঘদিন ধরে নীরবে কাজ করে যাওয়ার গল্প। সেই প্রকল্পটি হলো কলাগাছের আঁশ থেকে বানানো সুতায় হস্তশিল্প তৈরি। এর নেপথ্য কারিগর বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে কলাগাছের তন্তু দিয়ে হস্তজাত শিল্প তৈরির এ পরীক্ষামূলক প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে বান্দরবানে। অফিস-আদালত বা সভা-সেমিনারে ব্যবহারের জন্য ফোল্ডার, ঝুড়ি, শতরঞ্জি, কলমদানি, পাঁচ তারকা হোটেলের কক্ষে পরার জন্য জুতাসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি হচ্ছে কলাগাছের তন্তু দিয়ে। প্রথম পর্বের কাজে সফলতা এলে এই সুতা দিয়ে কাপড় বা শাড়ি বানানো যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়। সেই চিন্তার সূত্র ধরে প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে তাঁতে কাপড় বোনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে আসে সাফল্য। তবে সেই কাপড় অনেক মোটা আর খসখসে। কিন্তু ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি ভাবতে থাকেন, কাপড় যেহেতু বানানো গেছে, আরেকটু চেষ্টা করলে শাড়িও বানানো সম্ভব। এ চিন্তা থেকে অগ্রসর হতে হতে এ বছরের একেবারে শুরুতে শাড়ি তৈরির প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় রাধাবতী দেবীকে। শাড়ি বানানোর জন্য মৌলভীবাজার থেকে তাঁতও আনা হয়। এতেই আসে সফলতা।

ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘দক্ষ তাঁতশিল্পী রাধাবতী দেবীকে আমরা সাহস ও অনুপ্রেরণা দিয়ে তৈরি করিয়েছি শাড়িটি। এ জন্য তাঁকে স্মরণ রাখতে শাড়ির নাম দিয়েছি “কলাবতী”। কলাগাছের “কলা” আর রাধাবতীর “বতী” যোগ করে নির্ধারণ করা হয়েছে এই নাম।’

তবে পুরো প্রকল্পকে শতভাগ সফল বলা যায় না এখনো। ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জানান, সুতাকে কতটা নমনীয় করা যায়, কীভাবে আরও বেশি সুতা উৎপন্ন করা যায়—এসব নিয়ে বড় পরিসরে গবেষণা হওয়া দরকার। সে কারণে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, তাঁত বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় চিঠি পাঠানো হচ্ছে বলেও জানান ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি।

শাড়িটি যেমন
কলাগাছের সুতা থেকে তৈরি শাড়িটি অনেকটা মণিপুরি ও জামদানি শাড়ির মতো অথবা এ দুই শাড়ির মাঝামাঝি। ঘিয়ে রঙের জমিনে লাল ও সবুজ রঙের সুতা দিয়ে নকশা করা হয়েছে শাড়িটি। স্থানীয় পদ্ধতিতে সুতা নরম করার চেষ্টা করা হয়েছে। শাড়ি তৈরি করতে প্রায় ৮০০ গ্রাম সুতা ব্যবহার করা হয়। শাড়ির পাড় বোনা হয়েছে কোরিয়ান সুতা দিয়ে আর শাড়ির জমিন ও আঁচল তৈরি করা হয়েছে কলাগাছের সুতা দিয়ে।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কারিগরের মজুরিসহ শাড়ির দাম চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা হবে।

উদ্যোগ সফল হলে ভালো লাগে সবার। রাধাবতী দেবী কিংবা ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি—দুজনই খানিকটা তৃপ্ত। তাঁরা জানান, কাজটি এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে ভবিষ্যতের জন্য। এখান থেকে স্থানীয় মানুষ যাতে লাভবান হয়, সে পথ খুঁজে বের করতে হবে।

আমরাও আশায় আছি, একসময় পথের দিশা পাওয়া যাবে। স্থানীয় পরিসরে তো বটেই, একদিন রাধাবতী দেবী কিংবা ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজির উত্তরসূরিরা আন্তর্জাতিক পরিসরে নিয়ে যাবেন তাঁদের সফলতার গল্প।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উদ্যোক্তা মেলা: সংখ্যা কমলেও আশাবাদী নারী উদ্যোক্তারা

কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা
উদ্যোক্তা মেলা: সংখ্যা কমলেও আশাবাদী নারী উদ্যোক্তারা

ঢাকা শহরে শুধু নয়, পুরো দেশে নারীরা ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব অবদান রেখে চলেছেন। আমরা সেই সব নারীকে ‘উদ্যোক্তা’ হিসেবে দেখছি। এই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বছরজুড়ে অনুষ্ঠিত হতো বিভিন্ন ধরনের মেলা, সেটাও শুধু ঢাকায় নয়; বরং পুরো দেশে। সেই মেলাগুলো শুধু পণ্য বিক্রির জায়গা নয়; বরং নেটওয়ার্কিং, নতুন আইডিয়া বিনিময় এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের বিশাল খোলা বই। তবে চলতি বছর সেই মেলাগুলোর চিত্রটা কিছুটা ভিন্ন; বিশেষ করে উদ্যোক্তা মেলার সংখ্যা কমে যাওয়া এবং এর প্রভাব নিয়ে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

মেলার গুরুত্ব ও বর্তমান সংকট

এসএমই ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, নতুন উদ্যোক্তাদের ৬০ শতাংশ নারী। ফাউন্ডেশনটি এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আর্টেমিস লাইফস্টাইলের স্বত্বাধিকারী ফায়জা আহমেদ রাফা বলেন, ‘আমরা যারা অনলাইন বিজনেসের সঙ্গে জড়িত, তারা বছরে বেশ কিছু মেলায় অংশ নেওয়ার চেষ্টা করি, যাতে সরাসরি ভোক্তাদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি করা যায়।

এ ছাড়া উদ্যোক্তা মেলাগুলোতে পরিচিতি পাওয়ার সুযোগ থাকে। অনলাইন উদ্যোগ নিয়ে ভোক্তাদের অনেক সময় বিশ্বাস তৈরি করতে অসুবিধা হয়। মেলা করলে তাঁরা সরাসরি এসে পণ্য যাচাই করতে পারেন। এর ফলে অনেকে নিশ্চিন্তে অনলাইনে অর্ডার করেন।’ রাফা আরও জানান, সাধারণত ঈদ, ফাল্গুন, বৈশাখ বা দুর্গাপূজার মতো উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে মেলার আয়োজন করা হয়। তবে তাঁর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ‘লাস্ট দু-এক বছরে তুলনামূলক মেলার আয়োজন কিছুটা কম।’

কেন কমছে মেলার সংখ্যা

নারী উদ্যোক্তা ফোরামের সভাপতি রাফিয়া আক্তার, যিনি ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে কাজ করছেন, তিনি এ বছর বড় কোনো মেলার আয়োজন করতে পারেননি। এর কারণ হিসেবে তিনি দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। রাফিয়া আক্তার বলেন, ‘আসলে দেশের পরিস্থিতির কারণে এ বছর মেলা আয়োজন করা হয়নি। যে কারণে অর্থনৈতিক দিকেও প্রভাব পড়েছে। এ মুহূর্তে ইনভেস্ট করে মেলায় কেউ অংশ নেবেন কি না, সেসব দিক বিবেচনা করে বড় কোনো মেলার আয়োজন করা হয়নি এবার।’

রাফিয়া আক্তার আরও যোগ করেন, ‘গত বছরের আগেও দেখা গেছে, সব সময় ফোন আসত, এখানে মেলা সেখানে মেলা। সেটা কমে গেছে। এটা আমার কাছে কম এসেছে কি না জানি না। মনে হয়, মেলার আয়োজন তুলনামূলক কমে গেছে।’

তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করেন

মাইসারার স্বত্বাধিকারী এলমা খন্দকার এষা। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর আমি মেলা করিনি। তবে চলতি বছর বেশ কিছু মেলা করেছি। সেটা যদি হিসাব করি, তাহলে আমার চোখে মেলা কম মনে হয়নি।’

অর্থনীতিতে নারীর অবদান ও আগামীর প্রত্যাশা অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪ অনুযায়ী, দেশের ১ কোটি ১৮ লাখ এসএমইর মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ নারী মালিকানাধীন হলেও উদ্যোক্তা হওয়ার হার দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে দেশের ৩ কোটি ৭ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ নারী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) একটি চমকপ্রদ তথ্য হলো, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে দারিদ্র্যসীমায় নতুন করে কোনো নারী যুক্ত হননি, যেখানে ১ লাখ ৬০ হাজার পুরুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন।

সৌন্দর্যশিল্প, হস্তশিল্প, বুটিক ও ব্লক প্রিন্টের মতো খাতে নারীদের জয়জয়কার। এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে মেলার মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অপরিহার্য। এতে ঢাকাসহ বড় শহরের ভোক্তাদের সঙ্গে সারা দেশের নারী উদ্যোক্তাদের সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হয়। এতে পণ্য ও ক্রয়বৈচিত্র্য বাড়ে, ভোক্তা এবং সরবরাহকারীদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা তৈরি

হয়। সর্বোপরি অর্থনৈতিক গতিশীলতা ঠিক থাকে। কিন্তু এ বছর দৃশ্যমানভাবে মেলার সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে। তবু উদ্যোক্তারা অনেক আশাবাদী। এই আশাবাদ দেশের অর্থনীতির জন্যই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রোজের ফুটে ওঠার গল্প

আল আমিন
রোজাইয়া রাব্বি রোজ
রোজাইয়া রাব্বি রোজ

ব্যর্থতা কখনো কখনো সাফল্যের মোড়কে ফিরে আসে। রোজাইয়া রাব্বি রোজের গল্পটা তেমনই। কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা শেষ করে ২০১৭ সালে ভর্তি হন গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে, কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে বাবার অসুস্থতার কারণে বেশি দিন পড়াশোনা করতে পারেননি। লেখাপড়া ছেড়ে তাঁকে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। কিন্তু নিজের চেষ্টায় তিনি আজ অন্য নারীদের কাছে হয়ে উঠেছেন আদর্শ।

২০১৯ সালে একটি সেলাই মেশিন দিয়ে শুরু করেন নিজের ভুবনে যাত্রা। কিছু গজ কাপড় কিনে পোশাক তৈরির কাজ শুরু করেন প্রথমে। সেলাই মেশিনের আওয়াজের চেয়ে তখন বেশি শোনা যেত মানুষের কটূক্তির আওয়াজ। তাই ছোটবেলার রান্না করার শখ থেকে ছোট্ট পরিসরে শুরু করলেন ক্যাটারিং সার্ভিস। সেখানেও ডেলিভারি, প্রমোশনসহ নানা সমস্যার মুখে পড়লেন তিনি। তবে দমে গেলেন না। কয়েকজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করলেন উদ্যোক্তা উন্নয়ন আবাসন নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ। তাঁর নিজের তৈরি পণ্যের পাশাপাশি শহরের নারীদের উৎপাদিত পণ্য সেই ফেসবুক গ্রুপে বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহের কাজ শুরু করেন রোজ।

খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে অল্প দিনেই তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন পঞ্চগড় শহরের চাউলহাটির নিউমার্কেট এলাকায় তাঁর ‘প্রত্যাশা’ ব্র্যান্ডের নিজস্ব একটি আউটলেট আছে। সেখানে বুটিকস ও হ্যান্ডপেইন্টের বিভিন্ন পণ্য তিনি পাইকারি বিক্রি করেন। এখন তাঁর অধীনে নিয়মিত কাজ করছেন ১০ জন নারী।

উদ্যোক্তা জীবনের শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে তিনি জেলা পর্যায়ে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জনকারী নারী হিসেবে পেয়েছেন এ বছরের শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী পুরস্কার। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে তাঁকে অদম্য নারী পুরস্কারে ভূষিত করেন পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক কাজী মো. সায়েমুজ্জামান।

রোজাইয়া রাব্বি রোজের স্বপ্ন, তাঁর পণ্য যেন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তাঁদের জীবনমানের উন্নয়নে তিনি কাজ করে যেতে চান অন্য নারীদের সঙ্গে নিয়ে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আন্তর্জাতিক নারী: অন্ধকার আকাশ যাঁর ল্যাবরেটরি

ফিচার ডেস্ক
আন্তর্জাতিক নারী: অন্ধকার আকাশ যাঁর ল্যাবরেটরি

পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র নয়—একটি স্যাটেলাইট। সেই কৌতূহলী কিশোরীটি আজকের মনীষা শ্রেষ্ঠা—নেপালের সফল জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জ্যোতিঃপদার্থবিদ এবং দেশটির প্রথম নারী অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার। তিনি এখন হাই-এনার্জি অ্যাস্ট্রোফিজিকস বিষয়ে পিএইচডি করছেন।

চ্যালেঞ্জের সঙ্গে শুরু যে লড়াই

মনীষার বিজ্ঞানের পথে আসাটা ছিল অনেকটা জেদের বশে। তিনি যে কলেজে পড়তেন, সেখানে পদার্থবিজ্ঞান ক্লাসে ছিল ১২০ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচ-ছয়জন মেয়ে। অথচ জীববিজ্ঞানের চিত্রটা ছিল ঠিক উল্টো। বন্ধুকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তর পান, মেয়েদের জন্য পদার্থবিজ্ঞানের চেয়ে জীববিজ্ঞান অনেক সহজ। মনীষা বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেন। তিনি ভাবলেন, তাঁকে পদার্থবিজ্ঞানই পড়তে হবে।

ক্লাসে ঢোকার পর শুরু হলো অন্য এক লড়াই। পুরুষশাসিত সেই পরিবেশে অনেক সময় মেয়েদের বসার জন্য কোনো আসনই দেওয়া হতো না; তাদের দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হতো। এমনকি ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময়ও তরুণেরা কাজ করত, আর মেয়েদের দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখার অনুমতি ছিল। মাস্টার্স পর্যায়ে এসে এই সংকট আরও বাড়ে। পড়াশোনার পদ্ধতি ছিল শুধু নোট নেওয়া আর মুখস্থ করা। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে মনীষা ডিগ্রি শেষ না করেই পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির যাত্রা

২০১৩ সালে মনীষা নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটিতে (এনএএসও) প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে যোগ দেন। তখন সংগঠনটির কোনো অফিস ছিল না, ছিল খুব সীমিত সুবিধা। মনীষা ও তাঁর দল মিলে বছরের পর বছর পরিশ্রম করে সেটিকে আন্তর্জাতিক উচ্চতায় নিয়ে যান।

সম্প্রতি এই সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের সদস্যপদ পেয়েছে, যা নেপালের ১০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম।

আজ এনএএসও শিক্ষা, গবেষণা ও প্রচার—তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সৃজনশীল চিন্তার উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। মনীষার দল সারা দেশে সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং শিক্ষার্থীদের হাতে টেলিস্কোপ ও বই তুলে দিচ্ছে। যাতে তারাও বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে পারে।

অলিম্পিয়াড ও বৈশ্বিক সাফল্য

মনীষা শ্রেষ্ঠা নেপালের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নেপালি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করেন। তাঁর হাত ধরে অনেক শিক্ষার্থী ফ্রান্স, আমেরিকা ও সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক মঞ্চে লড়াই করেছেন। এমনকি এই অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া তিন শিক্ষার্থী বর্তমানে বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। ২০২০ সালে তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে স্টারস শাইন ফর এভরিওয়ান সংস্থা তাঁকে বিশেষ সম্মাননা দেয়।

ডার্ক স্কাই বা অন্ধকার আকাশ রক্ষা

মনীষা শুধু বিজ্ঞানী নন, তিনি একজন দক্ষ আলোকচিত্রীও। নেপালের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় তাঁর তোলা মহাকাশের ছবি নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তিনি বর্তমান সময়ের বড় একটি সমস্যা আলোকদূষণ নিয়ে কাজ করছেন।

২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ মানুষ শহর ও অবকাঠামোর কৃত্রিম আলোর কারণে রাতের আকাশের আসল সৌন্দর্য দেখতে পায় না। মনীষা তাদের সতর্ক করে জানান, আগামী ২০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে নক্ষত্ররাজি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। তাই নেপালে ‘অ্যাস্ট্রো-ট্যুরিজম’ কিংবা জ্যোতি-পর্যটন বিকাশের মাধ্যমে আকাশ রক্ষার স্বপ্ন দেখেন মনীষা শ্রেষ্ঠা।

ভবিষ্যতের স্বপ্ন

মনীষার স্বপ্ন নেপালে একটি নিজস্ব মানমন্দির তৈরি করা, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তিনি মনে করেন, নেপালের কাছে দামি যন্ত্রপাতি না থাকলেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় ল্যাবরেটরি আছে। সেটা হলো, মাথার ওপরের অন্ধকার আকাশ। তিনি বিশ্বাস করেন, আকাশ আমাদের সবাইকে এক সুতোয় বাঁধে। তিনি চান তাঁর জীবনের গল্প শুনে অন্য মেয়েরাও যেন বিজ্ঞানের কঠিন পথে পা বাড়াতে পিছপা না হয়।

সূত্র: এশিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক, দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অধিকারের পক্ষে মার্থার লড়াই

ফিচার ডেস্ক
অধিকারের পক্ষে মার্থার লড়াই

একজন নারীর জীবনী ও চিঠিপত্র ঐতিহাসিকদের কাছে উনিশ শতকের নারী আন্দোলনের অমূল্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাঁর নাম মার্থা কফিন রাইট। তিনি ছিলেন একজন প্রভাবশালী নারী অধিকারকর্মী, দাসপ্রথাবিরোধী ও সমাজসংস্কারক। ১৮৪৮ সালের ঐতিহাসিক সেনেকা ফলস কনভেনশনের পাঁচজন আয়োজকের মধ্যে একজন ছিলেন তিনি।

১৮৪৮ সালের ১৯ ও ২০ জুলাই নিউইয়র্কের সেনেকা ফলসে অনুষ্ঠিত সে সম্মেলনটি ছিল আধুনিক নারী অধিকার আন্দোলনের বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ। সেটিই ছিল আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম কোনো প্রকাশ্য সম্মেলন, যা আয়োজিত হয়েছিল শুধু নারীদের সামাজিক, নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার নিয়ে আলোচনার জন্য। শুধু এর আয়োজক হিসেবে নয়, উনিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে একাধিক জাতীয় নারী অধিকার সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মার্থা। ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আমেরিকান ইকুয়াল রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। সাম্যবাদে বিশ্বাসী একটি পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন মার্থা। তিনি কাজ করেছেন দাসপ্রথার বিরুদ্ধে। নিউইয়র্কের অবার্নে তাঁর বাড়িটি ছিল আন্ডারগ্রাউন্ড রেল রোডের একটি অন্যতম প্রধান স্টেশনের পাশেই। তিনি পালিয়ে আসা দাসদের আশ্রয় দিতেন এবং তাদের স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতেন।

সাত সন্তানের জননী মার্থা পারিবারিক দায়িত্বের পাশাপাশি রাজনৈতিক লড়াইয়ে কখনো পিছপা হননি। তাঁর জন্ম ১৮০৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর। ১৮৭৫ সালের ৪ জানুয়ারি মৃত্যুর পর তাঁকে অবার্নের ফোর্ট হিল সিমেট্রিতে সমাহিত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই হত্যাকাণ্ডকে ব্যক্তিগত অপরাধ গণ্য করে আ.লীগের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার

আতাউর রহমান বিক্রমপুরী কারাগারে

বিএনপিতে রেদোয়ান আহমেদ-ববি হাজ্জাজ, ছেড়ে দিচ্ছে আরও ৮ আসন

আজকের রাশিফল: ফেসবুকে জ্ঞান ঝাড়বেন না— বন্ধুরা জানে আপনি কপি মাস্টার, স্ত্রীর কথা শুনুন

নতুন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত