Ajker Patrika

আর নয় ট্রল, উগান্ডার গণমাধ্যমও স্বাধীন

গোলাম ওয়াদুদ
আর নয় ট্রল, উগান্ডার গণমাধ্যমও স্বাধীন

এ দেশে ট্রল আর উগান্ডা যেন হরিহর আত্মা। পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে চলে। পরিসংখ্যান নেই, তারপরও কাণ্ডজ্ঞান থেকে বুকে হাত দিয়ে বলাই যায়, পৃথিবীর আর কোনো দেশ নিয়ে এতটা ট্রল করে না বাঙালি, যতটা করে উগান্ডা নিয়ে। কেন ভাই? উগান্ডার অবস্থা কি এতই খারাপ? আপনারা না জেনেই বালসুলভ আচরণ করেন এবং উগান্ডাকে ভাসিয়ে দেন ট্রল-সাগরে। আপনারা কি জানেন, উগান্ডার গণমাধ্যমও স্বাধীন? অবশ্য এ নিয়ে দুর্মুখেরা এখন অন্য কথাও বলতে পারে। 

এই পরশ্রীকাতরদের দিকে তাকিয়ে না হয় ‘স্বাধীন ছিল’ বলা যায়। তা, এক সময় মুক্ত বিহঙ্গের মতো স্বাধীনভাবে কাজ করতেন উগান্ডার সাংবাদিক ভাইয়েরা—এ ভাবলেই তো চোখে জল আসে। কারণ, ‘করতেন’ বলা মানেই তো এখন আর ‘করেন না’ বলা। আহা সে কী দিন ছিল! সরকারের বা বড় ব্যবসাপতির দুর্নীতি, আয়ের পথ, অপরাধ, খুন-জখম ইত্যাদির খবর উগান্ডার সাংবাদিকেরা কত-না সাহসের সঙ্গে প্রচার করতেন। বড় দুর্নীতির খবর বেরোলে তাদের সরকার রাগ করা তো দূরের কথা, সাংবাদিককে ডেকে তার গালটি টিপে দিত আদর করে। শুধু কি তাই, সঙ্গে দিতে চাইত হাজারটা উপঢৌকন, মানে উপহার আরকি। কিন্তু, বললেই হবে নাকি। উগান্ডার সাংবাদিক বলে কথা। সততার পরাকাষ্ঠা সেই সাংবাদিকেরা সেই উপহার ‘দূর ছাই’ বলে ভীষণ তাচ্ছিল্যের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করতেন। 

আহা কী সে দিন! কিন্তু হায় ‘সময় গড়ায়ে যায়’। কীভাবে, সে প্রশ্ন তুলবেন না। কারণ, সময়ের আকার সম্পর্কে আইনস্টাইনও জানতেন না। সে যা হোক। এই সময়ের কোনো এক গলি-ঘুপচিতেই ঘাপটি মেরে ছিল আমাদের ট্রলবাজেরা। তারা কথায় কথায় উগান্ডার নাম নিতেন। ঈর্ষাকাতরতা আরকি। হিংসা, হিংসা। কারও ভালোই সহ্য হয় না; গায়ে ফোসকা পড়ে। আর এ জন্যই উগান্ডা নিয়ে এত কিছু। কথায় কথায় উগান্ডা। কেউ অভিনব কিছু করতে চাইছে, তো বলা হচ্ছে—উগান্ডা চইলা যা। অথচ যে বলছে, সেও হয়তো জীবনে উগান্ডা দেখেনি, এমনকি টিভি কিংবা ছবিতেও। তো এই সব করতে করতেই হাজার মাইল দূরের দেশটির ওপর নজর লাগল। তাও যে-সে নয়, এই বঙ্গীয় ব-দ্বীপের নজর। ফলাফল দেখতেই পাচ্ছেন। 

বৈশ্বিক গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে উগান্ডার অবস্থান এবার সাত ধাপ পিছিয়েছে। গতকাল সাংবাদিকদের প্যারিসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস বৈশ্বিক গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচক প্রকাশ করার পর অবশ্য এ খবর জানা গেল। তো কেন পেছাল? 

ব্যাপার আহামরি তেমন কিছুই নয়। হয়েছে কি, খাতা কলমে গণমাধ্যমকে একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হলেও উগান্ডার কর্মকাণ্ডে তা বোঝা যায় না। এটা অবশ্য হুট করে নয়। আগেই বলেছি, নজর লাগার একটা ব্যাপার আছে। আমাদের মতো আরও অনেক দেশের মানুষের নজরও সম্ভবত পড়েছিল। আর নজর লাগার তুকতাক চিকিৎসা সম্পর্কে যারা জানেন, তাঁরা একমত হবেন যে, একটু কঠোর না হলে চলে না। উগান্ডা সরকারকেও বাধ্য হয়ে একটু কঠোর হতে হয়েছে। তাদের আয়-উন্নতির খবর যাতে বাইরে না আসে, সে জন্য খবরঅলাদের একটু বোঝাতে হয়েছে। 

অনেক দেশেই রাষ্ট্রনায়কেরা বছরের পর বছর টিকে থাকার জন্য গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করে রাখে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যতভাবে আটকানো যায়, তার সবগুলোই করে তারা। গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরে বছরের পর বছর টিকে থাকতে চায় তারা। উগান্ডার রাষ্ট্রনায়কের মধ্যেও এ ব্যাপারে কিঞ্চিৎ আকারে দেখা যায়। ফলে উগান্ডা এবার বৈশ্বিক গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৩২তম স্থান দখল করেছে (অবশ্য আমাদের থেকে এগিয়ে এখনো)। আশার কথা হচ্ছে, তাদের আগের অবস্থান থেকে তারা পিছিয়েছে। উগান্ডার অবস্থা গত বছর মানে ২০২১ সালে ছিল ১২৫। মানে এক বছরে তাদের অবনতি হয়েছে ৭ ধাপ। গণমাধ্যমকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বছরের পর বছর টিকে আছে দেশটির সরকারপ্রধান। 

দেশটিতে ষষ্ঠ মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছেন ইওয়েরি মুসেভেনি। ১৯৮৬ সাল থেকে আফ্রিকার দেশ উগান্ডার ক্ষমতায় আছেন সাবেক গেরিলা কমান্ডার ইওয়েরি মুসেভেনি ৷ ২০১৯ সালে সংবিধান পরিবর্তন করে ২০২১ সালে ষষ্ঠবারের মতো নির্বাচনে অংশ নেন তিনি। ২০২১ সালের নির্বাচনেও জয় লাভ করেন সাবেক এই গেরিলা কমান্ডার। নির্বাচনের সময় দেশটিতে অনেক সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। তাঁর বিপক্ষে যিনি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁকেও গ্রেপ্তার করেছিলেন মুসেভেনি। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ছিল মুসেভেনির বিরুদ্ধে। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে এখনো তিনি টিকে আছেন। 

নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ উঠলে মুসাভেনি জনগণের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে বলেছিলেন, ‘কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে।’ 

একই সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘কীভাবে বন্দুকের ব্যবহার করতে হয়, সেটি আমাদের চেয়ে ভালো কেউ জানে না। আমাদের চেয়ে ভালো লড়াই করতে পারে—এমন কেউও নেই।’ 

সাংবাদিকদের চুপ করিয়ে দিতে তিনি বন্দুকের ভয় দেখিয়েছেন। তাঁর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা অনেক সাংবাদিক নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে। 

 ২০২১ সালে নির্বাচনের সময় নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে নিজেদের শঙ্কার কথা জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ। নির্বাচনের পর আন্দোলন দমাতে দেশটির রাস্তায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান। 

দেশটির সংবিধানে মুক্ত গণমাধ্যমের কথা থাকলেও নানাভাবে তিনি তা দমিয়ে রাখছেন। নিজেদের বাহিনী দিয়ে হুমকি-ধমকি, এমনকি প্রকাশ্যে নিজেও হুমকি দিচ্ছেন সাংবাদিকদের, যার পরিণতি আজ বৈশ্বিক গণমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে দেশটির ৭ ধাপ অবনতি। 

দেশটিতে আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই সম্প্রচার লাইসেন্স বাতিল করার ঘটনাও ঘটেছে। দেশটিতে প্রেস অ্যান্ড জার্নালিস্ট অ্যাক্ট ২০০০ আইনটির উদ্দেশ্য ছিল সাংবাদিকতা, কাঠামো এবং প্রক্রিয়া তৈরি করা; যার মাধ্যমে একজন সাংবাদিক হয়ে ওঠে এবং পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা অনুশীলন করে। যা হোক, এই আইনের পরিবর্তে কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকতার অনুশীলনকে অপরাধীকরণের জন্য অপব্যবহার করেছে। এটি বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে। যেখানে মিডিয়ার ভয়েস বন্ধ করা হয়েছিল; আইনত কাকে সাংবাদিক হিসেবে গণ্য করা হবে, তার ওপর বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় দেশটিতে। বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হয়। 

যা হোক, সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করা, না করা নিয়ে আমাদের কী যায় আসে। একটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান যেটাকে ঠিক মনে করবেন, সেটাই হবে। তিনি তো বলতেই পারেন যে, ‘আমার শাসনে থাকবা, আমার খাবা, আমার পরবা, আর আমার বিরুদ্ধে লিখবা, তা হবে না।’ এটা আসলে আমি বা আপনিও হয়তে মানব না। আমার বাড়ির বিড়ালকে আমি দুধ-ভাত দিয়ে পোষার পরও যদি আমাকে দেখেই শব্দ করে, তাহলে তো আমিও মানব না। ব্যাপারটা এমনই সরল। 

কথামতো না চললে তো বকে দিতেই হয়। এটা তো গুরুজনের কর্তব্য। এমন কর্তব্যের কথা বুঝে না বুঝে রাষ্ট্র করাটা কি মেনে নেওয়া যায়, যখন আবার দূর-অদূরের বহু দেশ নজর দিয়ে বসে আছে। সে যাক। আফ্রিকার দেশ উগান্ডার ভালো-মন্দে নজর লাগিয়ে দেশটিকে না হয় একটি সূচকে নামিয়ে আনা গেছে। কিন্তু আমাদের কী হলো? আমরা তো দিব্যি আছি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২৩ লাখ টাকার ‘ডিম’ গিলে ফেললেন যুবক, এক সপ্তাহ পর যেভাবে উদ্ধার করল পুলিশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হীরকখচিত মহামূল্যবান ডিম গিলে ফেলেছিলেন এক যুবক। ছবি: নিউজিল্যান্ড পুলিশ
হীরকখচিত মহামূল্যবান ডিম গিলে ফেলেছিলেন এক যুবক। ছবি: নিউজিল্যান্ড পুলিশ

এক চুরির ঘটনায় রীতিমতো হইচই পড়ে গেল নিউজিল্যান্ডে। এক ব্যক্তি একটি বহুমূল্য হীরকখচিত লকেট চুরি করতে গিয়ে তা গিলে ফেলেন। তবে অবশেষে সেই লকেটটি ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়’ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের পক্ষ থেকে বিবিসিকে জানানো হয়েছে, লকেটটি উদ্ধার করতে ‘মেডিকেল হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়নি’।

৩২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে অকল্যান্ডের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্যারট্রিজ জুয়েলার্সের দোকান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ, লকেটটি গিলে ফেলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁকে ধরা হয়। চুরির প্রায় এক সপ্তাহ পরে এই মূল্যবান জিনিসটি উদ্ধার করা সম্ভব হলো।

ফেবার্গে এগ-এর আদলে তৈরি এই লকেটটির মূল্য ৩৩ হাজার ৫৮৫ নিউজিল্যান্ড ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২৩ লাখ টাকার বেশি)। জুয়েলারের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গিলে ফেলা এই লকেটটিতে ৬০টি সাদা হিরা এবং ১৫টি নীলকান্তমণি বসানো রয়েছে। লকেটটি খুললে এর ভেতরে ১৮ ক্যারেট সোনার তৈরি একটি ছোট অক্টোপাস দেখা যায়। এই কারণে লকেটটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অক্টোপাস ডিম’। ১৯৮৩ সালের জেমস বন্ড ছবি ‘অক্টোপাসি’ থেকে অনুপ্রাণিত।

চুরি করার পর থেকেই পুলিশ ওই ব্যক্তিকে নিজেদের হেফাজতে রেখে লাগাতার নজরদারি চালাচ্ছিল। নিউজিল্যান্ড পুলিশ এর আগে জানিয়েছিল, যেহেতু এই ব্যক্তি পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন, তাই যা ঘটেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পর্যবেক্ষণ করা আমাদের কর্তব্য।

ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে এবং আগামী ৮ ডিসেম্বর তাঁকে ফের আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু এই লকেট চুরিই নয়, ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। ১২ নভেম্বর একই জুয়েলারি দোকান থেকে একটি আইপ্যাড চুরি করেছিলেন তিনি। এর একদিন পরে একটি ব্যক্তিগত ঠিকানা থেকে ১০০ নিউজিল্যান্ড ডলার মূল্যের বিড়ালের লিটার এবং ফ্লি কন্ট্রোল (মাছি নিয়ন্ত্রণ) পণ্য চুরি করেন।

প্যারট্রিজ জুয়েলার্স জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া এই বিরল ফেবার্গে লকেটটি নির্মাতাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১৯ হাজার ডলারের ‘ডিম’ গিলে যুবক কারাগারে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ২৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিউজিল্যান্ডে এক ব্যক্তি হীরাখচিত লকেট চুরি করেছেন এমন এক উপায়ে, যা শুনলে সিনেমার দৃশ্যই মনে হয়। দোকানদারেরা টের পাওয়ার আগেই তিনি লকেটটি গিলে ফেলেন। পরে পুলিশ এসে তাঁকে হাতেনাতে ধরে ফেলে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে পুলিশ জানিয়েছে, গিলে ফেলা ফ্যাবারজে এগ লকেট, যার মূল্য ৩৩ হাজার ৫৮৫ নিউজিল্যান্ড ডলার (১৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার) এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, গত শুক্রবার বিকেলে অকল্যান্ডের কেন্দ্রস্থলে পারট্রিজ জুয়েলার্সে পুলিশ ডাকা হলে ৩২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে দোকান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।

জুয়েলারির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, যে ফ্যাবারজে এগ চুরি করা হয়েছে, তাতে রয়েছে ৬০টি সাদা হীরা এবং ১৫টি নীল নীলা। ডিমটি খুললে দেখা যায়, ভেতরে ১৮ ক্যারেট সোনার একটি ছোট্ট অক্টোপাস।

ডিমটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অক্টোপাসি এগ’, যা ১৯৮৩ সালের একই নামের জেমস বন্ড চলচ্চিত্র থেকে অনুপ্রাণিত; যার কাহিনির কেন্দ্রে রয়েছে এক জটিল ফ্যাবারজে এগ চুরির ঘটনা।

ফ্যাবারজে দুই শতাব্দীর বেশি আগে রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত এক বিশ্বখ্যাত জুয়েলারি ব্র্যান্ড, যা রত্ন ও মূল্যবান ধাতু দিয়ে তৈরি ডিম-আকৃতির শিল্পকর্মের জন্য পরিচিত।

বিবিসি জানিয়েছে, ৮ ডিসেম্বর আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে অভিযুক্ত ব্যক্তির। তিনি গত ১২ নভেম্বর একই জুয়েলারি দোকান থেকে একটি আইপ্যাড চুরির অভিযোগেও অভিযুক্ত। পরদিন ১০০ নিউজিল্যান্ড ডলার মূল্যের বিড়ালের বর্জ্য পরিষ্কারের সামগ্রী ও পিঁপড়া নিয়ন্ত্রণের পণ্য চুরির অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জরায়ুহীন হয়ে জন্মেছিলেন, তাঁর হয়ে সন্তান জন্ম দিলেন প্রিয় বন্ধু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ১৪
গত অক্টোবরে জর্জিয়া ব্যারিংটনের সন্তান ওটিলির জন্ম দেন ডেইজি হোপ (ডানে)। ছবি: বিবিসি
গত অক্টোবরে জর্জিয়া ব্যারিংটনের সন্তান ওটিলির জন্ম দেন ডেইজি হোপ (ডানে)। ছবি: বিবিসি

সদ্য মা হয়েছেন জর্জিয়া ব্যারিংটন। কিন্তু মেয়ে ওটিলিকে তিনি জন্ম দেননি। জন্ম দিয়েছেন তাঁর প্রিয় বন্ধু ডেইজি হোপ; যিনি কিশোর বয়সে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে জর্জিয়ার হয়ে সন্তানের জন্ম দেন।

দুই বন্ধু ছোটবেলা থেকেই অবিচ্ছেদ্য। তাঁরা নিজেদের ‘সোল সিস্টার্স’ বলে ডাকেন। একসঙ্গে বড় হয়েছেন। তাঁদের বাবারাও ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

শৈশবের সেই বন্ধনই একদিন হয়ে ওঠে জীবন বদলে দেওয়া উদারতার ভিত্তি।

১৫ বছর বয়সে জর্জিয়া এমন কিছু জানতে পারেন, যা কোনো অল্প বয়সী মেয়ে আশা করে না। তিনি জরায়ু ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছেন এবং কোনো দিন সন্তান ধারণ করতে পারবেন না।

মেয়ার-রোকিটানস্কি-কুস্টার-হাউসার সিনড্রোম বিরল এক জন্মগত রোগ, যা প্রতি ৫ হাজার নারীর মধ্যে একজনের ক্ষেত্রে দেখা যায়। জর্জিয়ার মনে হয়েছিল, একমুহূর্তে তাঁর ভবিষ্যৎটা যেন বদলে গেল।

১৫ বছর বয়সকালের সেই ঘটনা মনে করে জর্জিয়া বলেন, ‘আমার গোটা পৃথিবীই ভেঙে পড়েছিল। আমি সব সময় ভেবে বড় হয়েছি, আমি একজন মা হব আর সেটা আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হলো। আমি যা কিছু স্বপ্ন দেখেছিলাম, সবই শেষ হয়ে গেল।’

সে সময় ডেইজি খুব মাতৃত্বপ্রবণ ছিলেন না। কিন্তু তিনি বন্ধুর রোগ নির্ণয়ের কথা এখনো স্পষ্ট মনে করতে পারেন। তাঁর কাছে ‘অন্যায়’ মনে হয়েছিল—যে বন্ধু মাতৃত্বের স্বপ্ন দেখতেন, তিনি কিনা মা হতে পারবেন না!

এমা বার্নেটের সঙ্গে ‘রেডি টু টক’ অনুষ্ঠানে ডেইজি বলেন, ‘আমি তাঁকে ভরসা দিতে চেয়েছিলাম, বোঝাতে চেয়েছিলাম—পৃথিবী শেষ হয়ে যায়নি। তাই বলেছিলাম, একদিন আমি তাঁর হয়ে সন্তান ধারণ করব। তখন হয়তো বুঝিনি কথাটার গভীরতা কতটা। কিন্তু ভেতরে ভেতরে জানতাম, জর্জিয়ার জন্য আমি এটা করবই।’

১০ বছরের বেশি সময় পরে ডেইজি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন। ২০২৩ সালে দুই বন্ধু মিলে আইভিএফ প্রক্রিয়া শুরু করেন।

জর্জিয়া একজন ধাত্রী হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। নিজেকে এমন এক জগতে নিমজ্জিত করেছিলেন, যে জগতে তিনি হয়তো কোনো দিন অংশ নিতে পারবেন না বলে ভয় পেয়েছিলেন।

জর্জিয়া বলেন, ‘একবার আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এটা কি আমার জন্য সঠিক পেশা? কিন্তু আসলে এটা আমাকে সেরে উঠতে সাহায্য করেছে। আর অন্তর থেকে জানতাম—কোনো না কোনোভাবে আমি মা হবই।’

কয়েক বছর পরে ডেইজি তাঁর প্রথম সন্তানের জন্ম দেন। আর সেই প্রসবে ধাত্রী ছিলেন জর্জিয়াই।

ডেইজি বলেন, ‘আমার সন্তানের প্রতি যে ভালোবাসা অনুভব করেছি, তা ছিল অসাধারণ। তখন মনে হয়েছিল, প্রত্যেকেরই তো এই অনুভূতি পাওয়ার অধিকার আছে।’

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিড়ালের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ করল নিউজিল্যান্ড সরকার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাকিউরা স্টুয়ার্ট দ্বীপে এই বিড়াল পুকুনুই বা সাউদার্ন ডটারেল প্রজাতি নামে এক ধরনের পাখিকে প্রায় বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ছবি: ১২৩আরএফের সৌজন্যে
রাকিউরা স্টুয়ার্ট দ্বীপে এই বিড়াল পুকুনুই বা সাউদার্ন ডটারেল প্রজাতি নামে এক ধরনের পাখিকে প্রায় বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ছবি: ১২৩আরএফের সৌজন্যে

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ২০৫০ সালের মধ্যে বন্য বিড়াল বা মালিকহীন বিড়াল নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। দেশটির সংরক্ষণমন্ত্রী তামা পোতাকা গত শুক্রবার এই ঘোষণা দেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার বন্য বিড়ালকে নিউজিল্যান্ডের বিশ্বস্বীকৃত ‘প্রিডেটর-ফ্রি ২০৫০’ তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকায় কিছু শিকারি প্রাণীকে যুক্ত করা হয়েছে, যেগুলো জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। ২০১৬ সালে এই উদ্যোগ চালু হওয়ার পর প্রথমবার কোনো নতুন শিকারিকে এ তালিকায় যুক্ত করা হলো।

দীর্ঘদিন ধরেই নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকায় বন্য বিড়াল ধরা ও মেরে ফেলা হচ্ছিল। তবে তালিকায় যুক্ত হওয়ায় এবার তাদের বিরুদ্ধে সমন্বিত জাতীয় পর্যায়ের অভিযানে নামবে সরকার—যার মধ্যে থাকবে বৃহৎ আকারের নির্মূল কর্মসূচি ও বিশেষ গবেষণা। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে ২০২৬ সালের মার্চ মাসে।

নিউজিল্যান্ডের বনভূমি ও উপকূলীয় দ্বীপগুলোতে বর্তমানে ২৫ লাখেরও বেশি বন্য বিড়াল ও মালিকহীন বিড়ালের বিচরণ। লেজসহ এসব বিড়ালের দৈর্ঘ্য এক মিটার এবং ওজন প্রায় সাত কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এসব বন্য বিড়াল দেশটির দুর্লভ প্রাণিজগৎ ধ্বংসের মূল কারণগুলোর একটি হয়ে উঠেছে।

রাকিউরা স্টুয়ার্ট দ্বীপে এই বিড়াল পুকুনুই বা সাউদার্ন ডটারেল প্রজাতি নামে একধরনের পাখিকে প্রায় বিলুপ্তির মুখে ঠেলে দিয়েছে। মাউন্ট রুয়াপেহু এলাকায় তারা প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১০০ বাদুড় শিকার করায় সে প্রজাতিও হুমকিতে।

রেডিও নিউজিল্যান্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সংরক্ষণমন্ত্রী পোতাকা বন্য বিড়ালকে আখ্যা দেন ‘স্টোন-কোল্ড কিলার’ বা নির্দয় শিকারি হিসেবে। তিনি বলেন, ‘জীববৈচিত্র্য রক্ষা, বনভূমির সৌন্দর্য বজায় রাখা এবং আমাদের কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে এসব হত্যাকারীকে সরিয়ে ফেলতেই হবে।’

বন্য বিড়ালকে তালিকায় যুক্ত করা নিয়ে বহু বছর ধরে প্রচারণা চললেও অতীতে বিষয়টি নিয়ে প্রবল জনমত-বিরোধিতা দেখা গেছে। পরিবেশবিদ গ্যারেথ মরগান ২০১৩ সালে ‘ক্যাটস টু গো’ প্রচারণা শুরু করলে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। তবে এবার সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, খসড়া কৌশল নিয়ে জনমতের ৯০ শতাংশই বন্য বিড়াল নির্মূল করার পক্ষে মত দিয়েছে।

এদিকে, গৃহপালিত বিড়াল এ তালিকায় না থাকলেও সেগুলোও দেশটির জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে বিড়াল পালনের দিক থেকে নিউজিল্যান্ড বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত