Ajker Patrika

ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপে কি ড্রাগনদের বাস

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ১৬: ১১
ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপে কি ড্রাগনদের বাস

হাজার হাজার বছর ধরেই ভয়ানক এক প্রাণী ড্রাগনের গল্প আলোড়িত করে আসছে মানুষকে। সুমেরু অঞ্চলের কিংবদন্তি থেকে শুরু করে প্রাচীন মেসোপটেমিয়া এবং পরে চীন, মিসর, ভারত, গ্রিস এমনকি গ্রেট ব্রিটেনের মতো জায়গায় ড্রাগন নিয়ে ডালপালা মেলেছে কত হাজারও গল্প। বই, সিনেমা, টিভি শোতে নিয়মিতই ড্রাগনকে দেখি আমরা। 

কিন্তু ড্রাগন কি সত্যি আছে, নাকি পুরোটা আমাদের কল্পনা। সত্যি বলতে ড্রাগন নামধারী অনেক প্রাণীই আছে পৃথিবীতে। তবে মুখ দিয়ে আগুন বের হওয়া সেই ভয়াল দর্শন ড্রাগন পুরোপুরিই কল্পনা। এমনকি ড্রাগন নামধারী বেশির ভাগ প্রাণী ততটা বিপজ্জনকও নয়। তবে কমোডো ড্রাগনের কথা যদি বলেন তবে হিসাবটা একটু আলাদা। দশ ফুটি প্রাণীটা যখন লকলকে জিব বের করে আপনার দিকে এগিয়ে আসবে, তখন আমাদের কল্পনার ওই ড্রাগনের কথাই হয়তো মনে পড়ে যাবে। উল্টো দিকে খিঁচে দৌড় দেওয়াটাই হবে তখন একমাত্র লক্ষ্য। 

লিজার্ডদের মধ্যে কমোডো ড্রাগনই সবচেয়ে বড় ও ভারী। প্রাপ্তবয়স্ক একটি কমোডো ড্রাগন ১০ ফুট পর্যন্ত হয় লম্বায়। ওজনের হয় ১৪০ কেজি বা ৩০০ পাউন্ডের মতো। তবে সাধারণত এদের ওজন ৭০ কেজি বা ১৫০ পাউন্ডের আশপাশে হয়। 

আনুমানিক ১৫১০ সালের হান্ট-লেনক্স গ্লোবে প্রথম সম্ভবত ‘হিক সান্ট ড্রাকোনস’ বা ‘এখানে ড্রাগন আছে’ কথাটি প্রথম ব্যবহার করা হয়। এশিয়ার পূর্ব উপকূলকে চিহ্নিত করা হয় এটা দিয়ে। চীনা নাবিকদের কয়েকটি ছোট ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপে ড্রাগন দেখার গল্পের ভিত্তিতে সম্ভবত এটা করা হয়। 

ইন্দোনেশিয়ার কমোডো দ্বীপের পাশাপাশি রিনকা, ফ্লোরস দ্বীপে দেখা মেলে তাদের। কমোডো জাতীয় উদ্যান এদের মূল আস্তানা। পার্কটিতে তিনটি বড় দ্বীপ কমোডো, পাদার এবং রিনকা ছাড়াও ছোট ২৬টি দ্বীপ আছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) দেওয়া তথ্য বলছে বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপগুলোতে বুনো পরিবেশে টিকে থাকা প্রাপ্তবয়স্ক কমোডো ড্রাগনের সংখ্যা ১ হাজার ৩৮৩। ছোট ও কিশোর বয়সী ড্রাগনের সংখ্যাটাও কম নয়। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের চিড়িয়াখানায় বেশ কিছু কমোডো ড্রাগন আছে। 

যতদূর জানা যায়, ইন্দোনেশিয়ার কমোডো দ্বীপে বাস করায় আর ভয়ানক চেহারা ও লম্বা হলুদ জিভ মিলিয়ে পৌরাণিক সেই ড্রাগনের সঙ্গে কিছুটি মিল খুঁজে পাওয়াতেই এর নাম রাখা হয় ‘কমোডো ড্রাগন’। 

ইতালির রোমের চিড়িয়াখানায় শিশু কমোডো ড্রাগন। ছবি: এএফপিস্থানীয়রা এদের কথা জানলেও পৃথিবীর মানুষের কাছে এরা পরিচিত হয় বিশ শতকের গোড়ার দিকে, আরও পরিষ্কারভাবে বললে ১৯১০ সালে। ওই সময় ইন্দোনেশিয়া ছিল ডাচদের কলোনি। এখানকার ডাচ প্রশাসক ছিলেন লেফটেন্যান্ট জ্যাক কেল হেনরি ভ্যান স্টেইন ভ্যান হেনসব্রুক। ডাঙায় বাস করে এমন বিশাল আকারের ‘কুমিরের’ গল্প শুনে উৎসাহিত হয়ে ওঠেন তিনি। কমোডো দ্বীপে অভিযান চালিয়ে ফেরেন আশ্চর্য এই প্রাণীদের ছবি আর একটা চামড়া নিয়ে। 

যে দ্বীপগুলোয় কমোডো ড্রাগনের বাস সেখানে তারাই রাজা। মোটামুটি যা পায় তাই খায় এরা। ইতিমধ্যে মারা যাওয়া প্রাণী খেতেও তাদের আপত্তি নেই। হরিণ, মহিষ, শূকর এমনকি বাচ্চা বা কম বয়স্ক কমোডো ড্রাগনদেরও খায় এরা। তবে এসব বাচ্চা কমোডো ড্রাগনেরা খুব চটপটে। গাছে চড়ে বড়দের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার তরিকা খুব দ্রুতই শিখে নেয় তারা। 

কমোডো ড্রাগনের মানুষকে আক্রমণের ঘটনাও ঘটে, যদিও সংখ্যাটা বেশি নয়। বন্য এবং চিড়িয়াখানায় বন্দী দুই ধরনের কমোডো ড্রাগনের থেকেই এমন আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। ১৯৭৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৩৮ বছরে কমোডো ন্যাশনাল পার্কের তথ্য অনুসারে, মানুষের ওপর ২৪টি আক্রমণের খবর পাওয়া গেছে, যার মধ্যে পাঁচজন নিহত হন। নিহতদের বেশির ভাগই কমোডো জাতীয় উদ্যানের আশপাশে বসবাসকারী স্থানীয় গ্রামবাসী। 

শিকারের সময় কমোডো ড্রাগন তাদের লুকিয়ে থাকার অসাধারণ ক্ষমতা ও ধৈর্যের প্রমাণ দেয়। ঝোপ-জঙ্গল বা লম্বা ঘাসে ঘাপটি মেরে থাকে, যতক্ষণ না কোনো শিকার পাশ দিয়ে যায়। নাগালের মধ্যে এলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে শক্তিশালী পা এবং ধারালো নখ দিয়ে আঁকড়ে ধরে। তারপর ধারালো দাঁত ডুবিয়ে দেয় শিকারের শরীরে। 

শুনে অবাক হবেন, স্ত্রী কমোডো ড্রাগন পুরুষ ড্রাগন ছাড়াই প্রজনন করতে সক্ষম। এটি পার্থেনোজেনেসিস নামে পরিচিত অযৌন প্রজননের একটি প্রক্রিয়ার কারণে হয়। ২০০৬ সালে প্রথম বিষয়টি জানা যায়, যখন ফ্লোরা নামক একটি ড্রাগন ইংল্যান্ডের চেস্টার চিড়িয়াখানায় পাঁচটি শিশু ড্রাগন জন্ম দেয়। অথচ কোনো পুরুষ কমোডো ড্রাগনের সঙ্গে কখনো তাকে রাখা হয়নি। 

লন্ডন চিড়িয়াখানার জো ক্যাপনের মতে, কমোডো ড্রাগনের উদ্ভব ৯ কোটি বছর আগে। অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা বিশালাকায় মনিটর লিজার্ড বা গুইসাপ থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে এদের উদ্ভব। এতদিন ধরে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় একপর্যায়ে নিজেরাই একটি প্রজাতিতে পরিণত হয়। 

 ১৯২৬ সালে উইলিয়াম ডগলাস বার্ডেন নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস চিড়িয়াখানার জন্য এক জোড়া ড্রাগন ধরতে কমোডো দ্বীপে যান। বার্ডেনের বন্ধু, চলচ্চিত্র পরিচালক মেরিয়ান কুপার তাঁর ১৯৩৩ সালে মুক্তি পাওয়া কিং কং ছবিতে দুঃসাহসিক সেই অভিযানের অনেক উপাদানই ব্যবহার করেন। কুপার সব সময়ই চেয়েছিলেন দৈত্যাকার একটি গরিলা বা শিম্পাঞ্জিজাতীয় প্রাণীকে ঘিরে আবর্তিত হবে কাহিনি। তবে রহস্যময় দ্বীপ এবং বিশাল আকারের প্রাচীন দানব সরীসৃপগুলোর দৃশ্য চিত্রায়িত হয় বার্ডেনের ভ্রমণে অনুপ্রাণিত হয়ে। যতদূর নানা যায় কমোডো ড্রাগনদের নামটি দেন বার্ডেনই। 

স্পেনের এক চিড়িয়াখানায় ভয়াল দর্শন জিভ বের করে আছে একটি কমোডো ড্রাগন। ছবি: এএফপিএবার শক্তিশালী এ সরীসৃপদের চেহারার একটু বর্ণনা দেওয়া যাক। এদের মাথা চওড়া ও চ্যাপ্টা, নাক কিছুটা বৃত্তাকার, পা বাঁকানো এবং লেজটা বিশাল ও পেশিবহুল। তাদের হাঁটা অবশ্য খুব দ্রুতগতির নয়। ১০ মাইলের বেশি গতি তোলাটাই ওদের জন্য বেশ কঠিন। ততে এই ড্রাগনদের যে জিনিসটা আপনার নজর কাড়বে সেটি, লম্বা হলুদ জিব। ক্রমাগত এটা বাইরে বের করে আনে আবার ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলে। এমনিতে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় সাভানা বনে বাস করে। তবে দ্বীপের বিস্তৃত সৈকত এমনকি পাহাড়েও এরা বিচরণ করে। 

স্ত্রী কমোডো ড্রাগন একবারে ৩০টি ডিম পাড়তে পারে। এগুলো এরা কয়েক মাস ধরে পাহারা দেয়। শিশুদের সবুজাভ শরীরে হলুদ ও কালো বলয়ের মতো থাকে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধূসর থেকে লালচে-বাদামি হয়ে যায় এই রং। ছোট ড্রাগনরা বড় কমোডো ড্রাগনসহ অন্য শিকারি প্রাণীদের এড়াতে আট মাস বয়স না হওয়া পর্যন্ত গাছেই থাকে। 

ভয়ংকর চেহারারা এই ড্রাগনদের শিকারের বেশির ভাগ প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়। তবে তাতে এদের বয়েই গেছে। একবার যদি শিকারকে কামড়াতে সক্ষম হয় তবেই হয়েছে। এদের লালায় থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং বিষ কয়েক দিনের মধ্যে শিকারকে মেরে ফেলবে। প্রাণীটি মারা যাওয়ার পরে, যার জন্য চার দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে, কমোডো তার শক্তিশালী ঘ্রাণশক্তি ব্যবহার করে দেহটি শনাক্ত করে। প্রায়ই কোনো একটি শিকার অনেক কমোডো ড্রাগনকে মিলেমিশে খেতে দেখা যায়। এদের দৃষ্টিশক্তিও প্রখর, তাই অনেক দূর থেকেই শিকারকে দেখতে পারে। 

এই সরীসৃপদের বড়, বাঁকা ও ধারালো দাঁত এদের সবচেয়ে মারাত্মক অস্ত্র। যেগুলো মাংস ছিঁড়ে খেতে সাহায্য করে। দাঁতের ফাঁকে সাম্প্রতিক খাওয়া মাংসের কণা রয়ে যায়। এই প্রোটিন-সমৃদ্ধ পচা মাংসে প্রচুর ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত থাকে। এদের লালায় প্রায় ৫০ ধরনের ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে, যার মধ্যে অন্তত সাতটি খুব ক্ষতিকর। গবেষকেরা ড্রাগনের নিচের চোয়ালে একটি বিষ গ্রন্থিরও সন্ধান পেয়েছেন। এ বিষ রক্তকে জমাট বাঁধতে বাধা দেয়, যা ব্যাপক রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে শিকারকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। 

তবে কমোডোর কামড় কিন্তু অন্য কমোডো ড্রাগনের জন্য মারাত্মক নয়। একে অপরের সঙ্গে ঝগড়া করার সময় আহত ড্রাগনেরা ব্যাকটেরিয়া এবং বিষে আক্রান্ত হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীরা কমোডো ড্রাগনের রক্তে এর বিষ বা ব্যাকটেরিয়ার প্রতিষেধক খুঁজছেন। এদের গলা এবং ঘাড়ের পেশি দ্রুত মাংসের বিশাল খণ্ড গিলে ফেলতে সাহায্য করে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক প্রাণী একবারে নিজের শরীরের ওজনের ৮০ শতাংশ খাবার গ্রহণ করতে সক্ষম। তবে যখন বিপদ দেখা দেয় তখন কমোডো ড্রাগন তাদের ওজন কমাতে তাদের পেটের ভেতরে জমা হওয়া খাবার ছুড়ে ফেলে দ্রুতগতিতে পালাতে পারে। 

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক কিডস, বিবিসি সায়েন্স ফোকাস, স্মিথসোনিয়ানস ন্যাশনাল জু, বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চীনের গ্রামে লিভ টুগেদার ও গর্ভধারণ নিয়ে ‘অদ্ভুত’ আইন জারি, সমালোচনার ঝড়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩৭
গ্রাম মাতবরদের এই নতুন আইন নিয়ে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। ছবি: সংগৃহীত
গ্রাম মাতবরদের এই নতুন আইন নিয়ে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। ছবি: সংগৃহীত

বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক থেকে শুরু করে স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত ঝগড়া—সবকিছুতেই এখন থেকে গুনতে হবে মোটা অঙ্কের জরিমানা। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের লিংক্যাং গ্রামের কমিটি এমন নিয়ম জারি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘গ্রামের নিয়মাবলি: সবাই সমান’ শিরোনামের একটি নোটিশ ভাইরাল হওয়ার পর শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্ক।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামের শৃঙ্খলা বজায় রাখার নামে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে স্থানীয় গ্রাম কমিটি। ভাইরাল হওয়া ছবির ভিত্তিতে জরিমানার তালিকাটি নিচে দেওয়া হলো:

প্রাদেশিক বৈষম্য: ইউনান প্রদেশের বাইরের কাউকে বিয়ে করলে দম্পতিকে ১ হাজার ৫০০ ইউয়ান (প্রায় ২৩,০০০ টাকা) জরিমানা দিতে হবে।

বিয়ের আগে গর্ভধারণ: কোনো নারী বিয়ের আগে গর্ভবতী হলে তাঁকে ৩ হাজার ইউয়ান জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

লিভ ইন রিলেশন: বিয়ে ছাড়াই কোনো যুগল একত্রে বসবাস করলে প্রতিবছর ৫০০ ইউয়ান জরিমানা দিতে হবে।

সন্তান জন্মের সময়: বিয়ের মাত্র ১০ মাসের মধ্যে কোনো দম্পতি সন্তান জন্ম দিলে তাঁকে ‘অকাল গর্ভধারণ’ হিসেবে গণ্য করে ৩ হাজার ইউয়ান জরিমানা করা হবে।

পারিবারিক কলহ: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হলে এবং তা মেটাতে গ্রাম কর্তাদের ডাকলে উভয় পক্ষকে ৫০০ ইউয়ান করে জরিমানা দিতে হবে।

সামাজিক আচরণ: মদ্যপ অবস্থায় বিশৃঙ্খলা করলে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার ইউয়ান এবং গুজব ছড়ালে ১ হাজার ইউয়ান পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

চীনের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘উইবো’-তে এই নোটিশ শেয়ার হওয়ার পর নেটিজেনরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। অনেক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ‘গ্রাম কমিটি কি এখন মানুষের শোবার ঘরের পাহারাদার হতে চায়?’ কেউ কেউ এটিকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। সমালোচকদের মতে, আধুনিক চীনের আইনি কাঠামোয় এ ধরনের নিয়মাবলি সম্পূর্ণ অবৈধ এবং মধ্যযুগীয় বর্বরতার শামিল।

বিতর্ক তুঙ্গে উঠলে স্থানীয় মেংডিং টাউন সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। ১৬ ডিসেম্বর রেড স্টার নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রশাসনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, নোটিশটি গ্রাম কমিটির নিজস্ব উদ্যোগে টাঙানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘এই নিয়মগুলো অত্যন্ত অস্বাভাবিক এবং ইউনিয়ন বা টাউন সরকারের কাছ থেকে কোনো প্রকার পূর্বানুমতি নেওয়া হয়নি। আমরা ইতিমধ্যেই নোটিশটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি এবং এটি এখন কার্যকর নেই।’

লিংক্যাং গ্রামটির জনসংখ্যা বা বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীনের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রাম কমিটিগুলো নিজেদের ছোটখাটো ‘রাজা’ মনে করে এ ধরনের অবৈধ নিয়ম জারি করে থাকে। এই ঘটনাটি চীনের গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসনের সীমাবদ্ধতা এবং সাধারণ মানুষের আইনি অধিকার রক্ষার প্রয়োজনীয়তাকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৩০ বছর পর প্রথম শিশুর জন্মে খুশিতে মাতোয়ারা ইতালির এক গ্রাম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মা-বাবার কোলে লারা বুসি ত্রাবুক্কো। ছবি: দ্য গার্ডিয়ানের সৌজন্যে
মা-বাবার কোলে লারা বুসি ত্রাবুক্কো। ছবি: দ্য গার্ডিয়ানের সৌজন্যে

ইতালির আব্রুজ্জো অঞ্চলের মাউন্ট জিরিফালকোর পাদদেশে অবস্থিত এক প্রাচীন গ্রাম পালিয়ারা দে মার্সি। জনশূন্য এই গ্রামে মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যাই বেশি। গত কয়েক দশক ধরে গ্রামটি নিস্তব্ধতায় ডুবে ছিল, কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে সেখানে বইছে খুশির জোয়ার। কারণ, দীর্ঘ ৩০ বছর পর এই গ্রামে প্রথম কোনো শিশুর জন্ম হয়েছে।

লারা বুসি ত্রাবুক্কো নামের এই শিশুটির আগমনে গ্রামের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ জনে। তার খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষাদান অনুষ্ঠানে পুরো গ্রাম ভেঙে পড়েছিল। এমনকি ৯ মাস বয়সী লারা এখন ওই অঞ্চলের প্রধান পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। লারার মা সিনজিয়া ত্রাবুক্কো বলেন, ‘যারা আগে এই গ্রামের নামও জানত না, তারাও এখন লারাকে দেখতে আসছে।’

লারার জন্ম এক দিকে যেমন আশার প্রতীক, অন্য দিকে এটি ইতালির ভয়াবহ জনসংখ্যা হ্রাসের চিত্রকেও ফুটিয়ে তুলেছে।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ইতালিতে জন্মহার সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে (৩,৬৯,৯৪৪ জন)। প্রজনন হার প্রতি নারী পিছু মাত্র ১.১৮, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন।

২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসের উপাত্ত অনুযায়ী, আব্রুজ্জো অঞ্চলে জন্মহার গত বছরের তুলনায় আরও ১০.২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় বাসিন্দারা এই পরিস্থিতির জন্য একাধিক কারণকে দায়ী করেছেন। এরমধ্যে রয়েছে—তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কর্মসংস্থানের অভাব ও দেশত্যাগের প্রবণতা। কর্মজীবী মায়েদের জন্য ডে-কেয়ার বা নার্সারির অভাব। অনেক নারী মা হওয়ার পর আর কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারেন না। পুরুষদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বন্ধ্যাত্ব এবং অনেকের সন্তান না নেওয়ার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। ট্যাক্স বেশি হলেও সেই অনুযায়ী সামাজিক সেবা বা উন্নত জীবনযাত্রার অভাব।

জর্জিয়া মেলোনির সরকার এই পরিস্থিতিকে ‘জনসংখ্যার শীতকাল’ (Demographic Winter) হিসেবে অভিহিত করেছে। সংকট মোকাবিলায় ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে প্রতিটি শিশুর জন্মের পর এককালীন ১ হাজার ইউরো ‘বেবি বোনাস’ এবং প্রতি মাসে প্রায় ৩৭০ ইউরো শিশু ভাতা দেওয়ার নিয়ম চালু করা হয়েছে। তবে লারার মায়ের মতে, শুধু অর্থ দিয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়; পুরো ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন।

এদিকে, জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় অনেক শহরে প্রসূতি বিভাগ (Maternity Unit) বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পালিয়ারা দে মার্সি থেকে এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত সুলমোনা শহরের হাসপাতালটি এখন বন্ধের ঝুঁকিতে। নিয়ম অনুযায়ী বছরে অন্তত ৫০০ শিশুর জন্ম না হলে সেই ইউনিট চালু রাখা কঠিন। ২০২৪ সালে সেখানে মাত্র ১২০টি শিশুর জন্ম হয়েছে। এটি বন্ধ হয়ে গেলে গর্ভবতী নারীদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অন্য শহরে যেতে হবে, যা জরুরি অবস্থায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

গ্রামের মেয়র জিউসেপিনা পেরোজি আশা প্রকাশ করেন, লারার জন্ম অন্যদেরও পরিবার গঠনে অনুপ্রাণিত করবে। কিন্তু লারার ভবিষ্যৎ শিক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েই গেছে। গ্রামটিতে কয়েক দশক ধরে কোনো শিক্ষক নেই, এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামের স্কুলগুলোও শিক্ষার্থীর অভাবে বন্ধ হওয়ার পথে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জরায়ুর বাইরে বেড়ে উঠল শিশু, অলৌকিক জন্ম দেখল ক্যালিফোর্নিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ১১
২০২৫ সালের আগস্টে লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডারস-সিনাই হাসপাতালে সুজ লোপেজের মেয়ে কাইলা সুজ, তাঁর কোলে রিউ ও অ্যান্ড্রু লোপেজ (ছবিতে বাম দিক থেকে)। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০২৫ সালের আগস্টে লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডারস-সিনাই হাসপাতালে সুজ লোপেজের মেয়ে কাইলা সুজ, তাঁর কোলে রিউ ও অ্যান্ড্রু লোপেজ (ছবিতে বাম দিক থেকে)। ছবি: এপির সৌজন্যে

ক্যালিফোর্নিয়ার সুজ লোপেজ যখন তাঁর ছোট ছেলে রিউকে কোলে নিয়ে বসেন, তখন এক অলৌকিক বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যান। কারণ, ছোট্ট রিউ তাঁর মায়ের জরায়ুর ভেতরে নয়, বেড়ে উঠেছিল পেটের ভেতরে একটি বিশাল আকৃতির ওভারিয়ান সিস্টের আড়ালে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিরল এই ঘটনাকে ‘মিরাকল’ বা অলৌকিক বলছেন চিকিৎসকেরা।

লস অ্যাঞ্জেলেসের সিডারস-সিনাই মেডিকেল সেন্টারের প্রসূতি ও প্রসব বিভাগের মেডিকেল ডিরেক্টর ড. জন ওজিমেক এপিকে বলেন, ‘প্রতি ৩০ হাজার গর্ভাবস্থার মধ্যে মাত্র একটি জরায়ুর বাইরে পেটের ভেতরে (Abdominal Pregnancy) ঘটে। আর পূর্ণ মেয়াদে সুস্থ শিশু জন্ম দেওয়ার ঘটনা ১ কোটিতে একজনের ক্ষেত্রেও দেখা যায় না। এটি সত্যিই অবিশ্বাস্য।’

৪১ বছর বয়সী সুজ লোপেজ পেশায় একজন নার্স। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সন্তান জন্ম দেওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগ পর্যন্ত তিনি জানতেনই না যে তিনি অন্তঃসত্ত্বা।

সুজ দীর্ঘদিন ধরে ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। যখন তাঁর পেট বড় হতে শুরু করে, তিনি ভেবেছিলেন, এটি ২১ পাউন্ড ওজনের সেই সিস্টেরই বৃদ্ধি।

সাধারণ গর্ভাবস্থার কোনো লক্ষণ; যেমন সকালবেলায় অসুস্থতা বোধ করা (Morning Sickness) বা শিশুর নড়াচড়া—কিছুই তিনি অনুভব করেননি। অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণে ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়াকেও তিনি স্বাভাবিক ধরে নিয়েছিলেন।

অবশেষে পেটে অসহ্য ব্যথা শুরু হলে তিনি সিস্ট অপসারণের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। সেখানে সিটি স্ক্যান করার আগে বাধ্যতামূলক গর্ভাবস্থা পরীক্ষায় ফল ‘পজিটিভ’ আসে।

হাসপাতালে আলট্রাসাউন্ড এবং এমআরআই স্ক্যানে দেখা যায়, সুজের জরায়ু সম্পূর্ণ খালি। অথচ একটি পূর্ণাঙ্গ ভ্রূণ তাঁর লিভারের কাছে পেটের এক কোণে অ্যামনিওটিক থ্যাকের ভেতরে বেড়ে উঠছে। ড. ওজিমেক জানান, ভ্রূণটি লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে সরাসরি আক্রান্ত করেনি, বরং পেলভিসের পাশের দেয়ালে গেঁথে ছিল। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হলেও লিভারের তুলনায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণযোগ্য ছিল।

গত ১৮ আগস্ট এক জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ৮ পাউন্ড (৩.৬ কেজি) ওজনের রিউকে পৃথিবীতে আনা হয়। অস্ত্রোপচারের সময় সুজের সেই বিশাল সিস্টটিও অপসারণ করা হয়। অত্যধিক রক্তক্ষরণ হলেও চিকিৎসকদের দক্ষতায় সুজ এবং তাঁর সন্তান দুজনেই সুস্থভাবে ফিরে আসেন।

সুজের স্বামী অ্যান্ড্রু লোপেজ বলেন, ‘বাইরে শান্ত থাকলেও আমি ভেতরে-ভেতরে প্রার্থনা করছিলাম। যেকোনো মুহূর্তে স্ত্রী বা সন্তানকে হারানোর ভয় আমাকে তাড়া করছিল।’

বর্তমানে রিউ সম্পূর্ণ সুস্থ এবং প্রাণচঞ্চল। নিজের ১৮ বছর বয়সী বড় বোন কাইলার সঙ্গে তার খুনসুটি লেগেই থাকে। সামনেই রিউয়ের প্রথম বড়দিন। সুজ লোপেজ আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমি এখন অলৌকিক ঘটনায় বিশ্বাস করি। ঈশ্বর আমাদের জীবনের সেরা উপহারটি দিয়েছেন।’

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এই কেস এতই বিরল যে তাঁরা এটি একটি মেডিকেল জার্নালে প্রকাশের পরিকল্পনা করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অন্য নারীর ছবিতে লাইক দেওয়া বৈবাহিক বিশ্বাসভঙ্গের শামিল: তুরস্কের আদালত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৫৭
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

তুরস্কের একটি আদালত এক চাঞ্চল্যকর রায়ে জানিয়েছেন, স্ত্রী ছাড়া অন্য নারীদের অনলাইন পোস্টে স্বামীর বারবার ‘লাইক’ দেওয়া বৈবাহিক বিশ্বাস নষ্ট করতে পারে এবং তা বিবাহবিচ্ছেদের ভিত্তি হিসেবে গণ্য হতে পারে। মধ্যতুরস্কের কায়সেরি শহরের একটি মামলায় এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত এসেছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম হাবারলারের বরাত দিয়ে হংকং থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এইচবি নামে এক নারী তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে মৌখিক অপমান এবং আর্থিক ভরণপোষণ না দেওয়ার অভিযোগ আনেন। ওই নারী আরও উল্লেখ করেন, তাঁর স্বামী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর সময় কাটাতেন এবং সেখানে নিয়মিত অন্য নারীদের ছবিতে, এমনকি প্রলুব্ধকর ছবিতেও ‘লাইক’ দিতেন। মাঝেমধ্যে তিনি ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যও করতেন।

এইচবি যুক্তি দেন, এই আচরণ তাঁর স্বামীর দাম্পত্য আনুগত্যের পরিপন্থী। তিনি বিবাহবিচ্ছেদের পাশাপাশি খোরপোশ ও ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেন। স্বামী এসবি অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনিও পাল্টা বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন এবং দাবি করেন, তাঁর স্ত্রী তাঁর বাবাকে অপমান করেছেন এবং অতিরিক্ত ঈর্ষাপরায়ণ। স্ত্রীর এসব অভিযোগ তাঁর সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

আদালত এই মামলায় স্বামীকেই বেশি দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেন। তাঁকে প্রতি মাসে ৭৫০ লিরা বা ২০ মার্কিন ডলার খোরপোশ এবং ৮০ হাজার লিরা ২ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এসবি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দাবি করেন, এই পরিমাণ অনেক বেশি। কিন্তু আদালত তাঁর সেই আবেদন নাকচ করে দেন।

বিচারকেরা জানান, অন্য নারীদের ছবিতে ওই ব্যক্তির ‘লাইক’ দেওয়ার বিষয়টি বৈবাহিক বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে। তাঁরা মন্তব্য করেন, ‘অনলাইনে এই আপাত নিরীহ মিথস্ক্রিয়াগুলো মূলত মানসিক নিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে।’

তুর্কি আইনজীবী ইমামোগ্লু স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, এই রায় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল যে অনলাইন কর্মকাণ্ড এখন বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে গণ্য হবে। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে স্ক্রিনশট, মেসেজ এবং সব ধরনের ডিজিটাল কার্যক্রম উভয় পক্ষের দোষ নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া হবে। নাগরিকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সময় বিষয়টি মাথায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছি।’

এই মামলা অনলাইনে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এক নেটিজেন লিখেছেন, ‘যদি একটি লাইক আপনার সম্পর্ক ধ্বংস করতে পারে, তবে আপনাদের বিয়ে কখনোই মজবুত ছিল না।’ অন্য একজন মন্তব্য করেছেন, ‘এখন পরিচয় লুকিয়ে লাইক দেওয়ার ফিচার চালু করার সময় এসেছে।’ তবে তৃতীয় একজন ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, ‘যদি অনলাইনে প্রতিটি লাইক বা ভিউকে অবিশ্বস্ততা হিসেবে দেখা হয়, তবে মানুষ সারাক্ষণ ভয়ে থাকবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হওয়া উচিত মতপ্রকাশের মুক্ত জায়গা।’

তুরস্কের আদালতে অদ্ভুত কারণে বিবাহবিচ্ছেদের রায় দেওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে এক ব্যক্তিকে তাঁর সাবেক স্ত্রীকে ফোনের কন্টাক্ট লিস্টে ‘মোটু’ নামে সেভ করার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, যা অসম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তাসনিম জারাকে দেওয়া টাকা ফেরত চান? উপায় বলে দিলেন জারা নিজেই

তাসনিম জারার পদত্যাগের পর সামান্তা শারমিনের রহস্যময় পোস্ট

এনসিপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণা তাসনিম জারার

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত