Ajker Patrika

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি: রেকর্ড ৭৩ কোটি ডলারে নিষ্পত্তি করল ফেসবুক

প্রযুক্তি ডেস্ক
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯: ২৬
কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি: রেকর্ড ৭৩ কোটি ডলারে নিষ্পত্তি করল ফেসবুক

ব্যবহারকারীদের অনুমতি ছাড়াই তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য কেমব্রিজ অ্যানালিটিকাসহ তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া নিয়ে মামলা ৭২ কোটি ৫০ লাখ ডলারে নিষ্পত্তি করতে রাজি হয়েছে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকাকে অনুমতি ছাড়াই ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করেছিল ফেসবুক। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবারে (২২ ডিসেম্বর) আদালতে জমা দেওয়া নথিপত্র থেকেই মেটার সমঝোতা প্রকাশ্যে আসে। ২০১৮ সালে এ খবর ফাঁস হওয়ার পর মামলার মুখে পড়ে ফেসবুক। 

বাদীপক্ষের আইনজীবীরা প্রস্তাবিত ক্ষতিপূরণের ওই অঙ্ক যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য গোপনীয়তা আইনে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ বলে উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে এটি মেটার এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ। বাদীপক্ষের প্রধান আইনজীবী ডেরেক লোজার এবং লেসলি ওয়েভার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘এই জটিল ও অভূতপূর্ব ঐতিহাসিক নিষ্পত্তি মামলার বাদীদের স্বস্তি দেবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান ফ্রান্সিসকো শহরের ফেডারেল আদালতের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে এই নিষ্পত্তি। তবে নিজেদের কোনো ভুল স্বীকার করেনি মেটা। এক বিবৃতিতে মেটা বলে, কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথা ভেবেই এ নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গত তিন বছরে আমরা ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা প্রসঙ্গে আমাদের কার্যপ্রণালী ঢেলে সাজিয়েছি এবং সামগ্রিক গোপনীয়তা প্রকল্প চালু করেছি।

ছবি: নিউইয়র্ক টাইমসের সৌজন্যে বর্তমানে বিলুপ্ত কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ২০১৬ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে কাজ করেছিল। ভোটারদের লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপনী প্রচার চালানোর লক্ষ্যে কয়েক কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেছিল তারা। মূলত ফেসবুকের অনুমোদনপ্রাপ্ত এক গবেষকের কাছ থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করেছিল কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। ফেসবুকে নিজস্ব একটি অ্যাপ চালু করার অনুমোদন ছিল ওই গবেষকের। কয়েক কোটি ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল অ্যাপটির মাধ্যমে।

ওই কেলেঙ্কারির ঘটনায় মেটার ব্যবসায়িক কৌশল নিয়ে তদন্তে নামে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থাগুলো। কংগ্রেসের শুনানিতে সশরীরে উপস্থিত হন মেটার প্রধান মার্ক জাকারবার্গ। সেখানে আইনপ্রণেতাদের তোপের মুখে পড়েন তিনি।

এর আগে, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশনের (এফটিসি) সঙ্গে আপস করতে ৫০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয় মেটা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির গোপনীয়তা চর্চার বিষয়টি তদন্ত করছিল এফটিসি। একই সঙ্গে ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকেও (এসইসি) ১০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল মেটা। ব্যবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তার ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করার অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে এই ক্ষতিপূরণ দেয় মেটা। 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চ্যাপা শুঁটকির পিঠা

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
চ্যাপা শুঁটকির পিঠা
চ্যাপা শুঁটকির পিঠা

শীতে বাড়িতে প্রায়ই কোনো না কোনো পিঠা তৈরি হয়। এবার একটু ভিন্ন ঘরানার পিঠা তৈরি করুন। খুব সহজে সন্ধ্যার নাশতা হিসেবে তৈরি করতে পারেন চ্যাপা শুঁটকির পিঠা। এ পিঠার রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা

উপকরণ

চ্যাপা বা সিদল ১০ থেকে ১২টি, রসুন আধা কাপ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, কাঁচা মরিচ ২০টি, লবণ স্বাদমতো, চালের গুঁড়া ২ কাপ, পানি পরিমাণমতো।

প্রণালি

কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন হালকা সেদ্ধ বা ভেজে পরে শুঁটকি ও লবণ দিয়ে আরও কিছু সময় ভেজে নিন। ভাজা উপকরণ পাটায় মিহি করে বাটুন। চালের গুঁড়া ও লবণ একসঙ্গে মেখে ধীরে ধীরে পানি দিয়ে রুটি মতো ডো তৈরি করুন। পরে সমান করে পুরির মতো গোল করে গর্ত বানিয়ে তার ভেতর ভর্তা ভরে হাতের তালুতে রেখে চেপে চেপে গোল পিঠা তৈরি করুন। পরে তাওয়া মিডিয়াম আঁচে গরম করে পিঠাগুলো এপিঠ-ওপিঠ করে ভাজুন তেল ছাড়া। খেয়াল রাখতে হবে, যেন ভেতরে কাঁচা না থাকে। ঠিকমতো ভেজে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে চ্যাপা শুঁটকির পিঠা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৬-এর ডায়েট রেজল্যুশন: নতুন বছর শুরু হোক টেকসই অভ্যাস নিয়ে

ফিচার ডেস্ক
ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

নতুন বছর মানেই ডায়েট নিয়ে একগাদা জাঁকজমকপূর্ণ প্রতিজ্ঞা। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, ফেব্রুয়ারি আসার আগেই বেশির ভাগ মানুষের সেই উৎসাহের বেলুন ফুস করে ফেটে যায়। এর মূল কারণ হলো ‘ক্রাশ ডায়েট’ বা অবাস্তব লক্ষ্য। আপনার কাছে সুষম খাদ্য মানে কী। এটি কি কেবল কম খাওয়া বা ক্যালরি গণনা করা? না, এটি আপনার শরীরকে সঠিক পরিমাণে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করার একটি মাধ্যম। টেকসই স্বাস্থ্য শুরু হয় আপনার শরীরের আসলে কী প্রয়োজন, তা বোঝার মধ্য দিয়ে। এই উপলব্ধি আপনাকে খাবারের সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তন আনতে এবং দীর্ঘস্থায়ী অভ্যাস তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে। তবে একটি দীর্ঘস্থায়ী ডায়েট বা খাদ্যাভ্যাস কীভাবে তৈরি করতে হয়, তা হয়তো অনেকে বুঝতে পারেন না। তাই ২০২৬ সালে পা দিয়ে আপনার স্বাস্থ্যযাত্রাকে স্থায়ী করতে ডায়েট প্ল্যানে কোন ভুলগুলো করা যাবে না, তা জেনে রাখা জরুরি। এতে আপনার ডায়েট যাত্রার শুরুটা ভালো হবে।

জেন-জি ট্রেন্ড আর অন্ধ অনুকরণের ফাঁদ

বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে বড় ভুল হলো তারা অন্যের দেখাদেখি হুজুগে ডায়েট শুরু করে। কোনো একটি পদ্ধতি একজনের জন্য কাজ করছে মানেই যে আপনার শরীরের জন্য তা কার্যকর হবে, এমনটা নয়। ধৈর্যহীন আর অহেতুক কৌতূহলে ঘন ঘন ডায়েট প্ল্যান বদলানো ওজন কমানোর বদলে স্বাস্থ্যঝুঁকি আর মানসিক অবসাদ তৈরি করে।

ওজনের কাঁটা নয়, নজর দিন পুষ্টিতে

ওজন কমানো মানেই খাবার খাওয়া কমিয়ে দেওয়া বা ক্যালরি গণনা করা নয়। পুষ্টি বিসর্জন দিয়ে ওজন কমাতে গিয়ে অনেক সময় আমরা গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতা ডেকে আনি। ফলের রস বা ফ্যাড ডায়েটের বদলে আপনার পাতে যেন থাকে পর্যাপ্ত ফলমূল, শাকসবজি, লিন প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি। খেয়াল রাখতে হবে প্রতিদিন যেন প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান খাবারে উপস্থিত থাকে। শরীরে কোনো পুষ্টির ঘাটতি (যেমন: ভিটামিন ডি, আয়রন) আছে কি না, তা জানতে রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। খাদ্যতালিকায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার বেশি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। লক্ষ্য হওয়া উচিত শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি দেওয়া, কেবল ক্যালরি কমানো নয়।

বার্ষিক নয়, মাসিক লক্ষ্য স্থির করুন

পুরো বছরের জন্য বিশাল লক্ষ্য নির্ধারণ না করে মাসিক লক্ষ্য সেট করুন। যেমন মাসে দুই কেজি কমানোর লক্ষ্য ধরুন। এটি শুনতে ছোট মনে হলেও বছরে তা ২৪ কেজি দাঁড়ায়। যা একটি চমৎকার এবং স্বাস্থ্যকর অর্জন। ছুটির দিনসহ প্রতিদিন ঘুমানোর এবং ঘুম থেকে ওঠার একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন। বেলা তিনটার পর ক্যাফেইন বা কফিজাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলার অভ্যাস করে তুলুন। ঘুমানোর আগে ২০ মিনিটের একটি রিল্যাক্সেশন বা শরীর শিথিল করার নিয়ম তৈরি করুন। অবাস্তব টার্গেট আপনাকে ব্যর্থতার অনুভূতি দেয়, যা আপনার আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে। এর চেয়ে দৈনন্দিন করা অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসকে আগে ঝেড়ে ফেলুন নিজের জীবন থেকে।

ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

’স্মার্ট’ (SMART) ফর্মুলায় হোক লক্ষ্য নির্ধারণ

আপনার স্বাস্থ্য লক্ষ্যগুলো হতে হবে নির্দিষ্ট (Specific), পরিমাপযোগ্য (Measurable), অর্জনযোগ্য (Achievable), প্রাসঙ্গিক (Relevant) এবং সময়োপযোগী (Time-bound)। যেমন ‘আমি মেদ কমাব’ না বলে বলুন, ‘আমি প্রতিদিন ১৫ মিনিট করে হাঁটব।’ এতে আপনার মস্তিষ্কের জন্য কাজটি সহজ মনে হয়। সপ্তাহে ৫ দিন ৩০ মিনিট করে দ্রুত হাঁটার অভ্যাস করুন। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে চিনিযুক্ত পানীয়র পরিবর্তে পানি পান করুন। শরীরের গঠন উন্নত করতে প্রতি সপ্তাহে ওয়েট ট্রেনিং করতে পারেন।

ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

সুস্থতার চার স্তম্ভের সমন্বয়

ডায়েট মানেই শুধু খাবার আর ব্যায়াম নয়, এটি চারটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে:

শারীরিক স্বাস্থ্য: সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যায়াম ও বিশ্রাম।

মানসিক সুস্থতা: স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ও ডিজিটাল ডিটক্স।

পুষ্টিকর অভ্যাস: ৮০/২০ নিয়ম অনুসরণ (৮০% স্বাস্থ্যকর খাবার, ২০% প্রিয় খাবার)।

প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য: নিয়মিত চেকআপ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা।

ধৈর্যের পরীক্ষা ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

মনে রাখবেন, জীবনযাত্রার পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ। অন্যের এক মাসের অর্জনের সঙ্গে নিজের তুলনা না করে নিজের শরীরের চাহিদা বুঝুন। বিশেষ করে মেনোপজ বা মাঝবয়সী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ডায়েট চার্টটি বিশেষায়িত হতে হবে। আপনার কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে নিজে থেকে ইন্টারনেটের ডায়েট ফলো না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শে পার্সোনালাইজড ডায়েট চার্ট তৈরি করুন। সুস্থতা কোনো গন্তব্য নয়, এটি একটি পথচলা; যা শুরু হয় আপনার প্লেটের সচেতন সিদ্ধান্ত দিয়ে। ২০২৬ সালের ডায়েট হোক প্রতিশ্রুতিমুক্ত এবং পরিকল্পনাময়। নিজেকে বঞ্চিত না করে ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি স্থায়ী অভ্যাস গড়ে তুলুন।

সূত্র: হেলথ শর্টস, মিয়ামি লেক মেডিকেল সেন্টার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কোরিয়ানরা কেন কালো-সাদা পোশাকে ‘আসক্ত’

ফিচার ডেস্ক
ছবি: ফ্রিপিক
ছবি: ফ্রিপিক

সিউলে ঘুরতে এলে অনেক পর্যটক কিমচি বা কে-পপ ছাড়া আরেকটি বিষয় দেখে সবচেয়ে বেশি অবাক হন। সেটি হলো কোরিয়ানদের পোশাকের রং। রাস্তাঘাটে তাকালেই চোখে পড়ে কালো, সাদা আর ধূসর রঙের আধিক্য। পরিসংখ্যান বলছে, কোরিয়ায় পরা মোট পোশাকের ৬০ শতাংশের বেশি এই তিনটি রঙের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

পর্যটকের চোখে ‘একই রঙের শহর’

৩২ বছর বয়সী মার্কিন নাগরিক ইসাবেল স্মিথ প্রথম সিউলে এসে বিষয়টি স্পষ্টভাবে টের পান। তিনি বলেন, ‘চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম, প্রায় সবাই কালো, সাদা বা ধূসর রঙের পোশাক পরেছে।’ যুক্তরাষ্ট্রে উজ্জ্বল রঙের পোশাক ও গাঢ় মেকআপে অভ্যস্ত স্মিথ সিউলের ভিড়ে নিজেকে কিছুটা বেমানান মনে করেন। শিক্ষার্থীরা তাঁর পোশাকের প্রশংসা করলেও প্রায়ই বলে, ‘এই স্টাইলটা তোমাকে ঠিক মানাচ্ছে না।’ একবার একটি নামী ব্র্যান্ডের দোকানে কমলা রঙের কানের দুল কিনতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, কোরিয়ায় সেই ডিজাইন বিক্রি হয় না। কারণ হিসেবে বিক্রয়কর্মী সোজাসাপ্টা জানিয়ে দেন, এই রঙের চাহিদাই নেই।

পরিসংখ্যান যা বলছে

স্মিথের অভিজ্ঞতা কোনো ব্যতিক্রম নয়। সিজে লজিস্টিকসের ‘এভরিডে লাইফ রিপোর্ট’-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কোরিয়ায় পোশাকের মধ্যে কালো রঙের অংশ ৩৮ শতাংশ, সাদা ১৫ শতাংশ এবং ধূসর ৯ শতাংশ। সব মিলিয়ে একরঙের পোশাকের হার দাঁড়ায় ৬২ শতাংশ। কোরিয়ায় পোশাক নির্বাচনে এই রংগুলোর আধিপত্য স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তথ্য ভোক্তাদের বাস্তব পছন্দের ওপর তৈরি করা হয়েছে।

সামাজিক চাপ ও ‘মিশে যাওয়ার’ মানসিকতা

৩৪ বছর বয়সী কওন ইউন-জি জানান, তাঁর আলমারির বেশির ভাগ পোশাক সাদা, কালো ও নেভি ব্লু। একসময় লাল ডোরা দেওয়া একটি পোলো শার্ট তাঁর পছন্দ হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি নেভি রঙেরটাই কিনেছিলেন। কারণ, তাঁর ভয় ছিল, লাল রংটা হয়তো বেশি চোখে পড়বে। একদিন অফিসে হলুদ রঙের কার্ডিগান পরে যাওয়ার পর সহকর্মীদের নানা মন্তব্য তাঁকে অস্বস্তিতে ফেলে। কওন বলেন, ‘কেউ আমার পোশাক নিয়ে মন্তব্য করুক সেটা চাই না। শুধু সবার সঙ্গে মিশে থাকতে চাই।’

ছবি: ফ্রিপিক
ছবি: ফ্রিপিক

একটি জরিপে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের ৪১ শতাংশ ইচ্ছাকৃতভাবে এক রঙের পোশাক বেছে নেয়; যাতে তারা আলাদা করে নজরে না পড়ে। কমিউনিটি ও দলগত মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেওয়া সমাজে খুব আলাদা পোশাক অনেক সময় অদৃশ্য সামাজিক চাপ তৈরি করে।

সংস্কৃতির শিকড় কোথায়

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে রয়েছে সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যা। নিরপেক্ষ রং কোরিয়ান সংস্কৃতিতে বিনয়, সংযম ও সামঞ্জস্যের প্রতীক। অতীতে কোরিয়ানদের বলা হতো ‘সাদা পোশাকের মানুষ’। কারণ, ঐতিহ্যবাহী সাদা হানবক ছিল তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। সময়ের সঙ্গে সেই রুচি সাদা থেকে কালো ও ধূসর রঙেও বদলেছে। আজ এই রংগুলোকে পরিশীলন, স্থিরতা ও আধুনিকতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।

ছবি: ফ্রিপিক
ছবি: ফ্রিপিক

ব্যস্ত জীবনে ব্যবহারিক সুবিধা

সংস্কৃতির পাশাপাশি আধুনিক জীবনের ব্যস্ততাও এই প্রবণতাকে আরও জোরদার করেছে। ৩৩ বছর বয়সী অফিসকর্মী পার্ক নাম-জিন বলেন, ‘এক রঙের পোশাক পরতে অন্য পোশাকের সঙ্গে সহজে মেলানো যায়। সকালে তৈরি হতে সময় কম লাগে, আবার দেখতেও গোছানো লাগে।’ ফ্যাশন বিশেষজ্ঞদের মতে, কালো ও সাদা পোশাক প্রায় সব ধরনের কাপড় ও স্টাইলের সঙ্গে মানিয়ে যায়। ফলে ফ্যাশন বদলেও এগুলো দ্রুত অচল হয়ে পড়ে না। এ কারণেই কালো-সাদা টি-শার্ট সব সময় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়।

শীতের সিউল আর কালো কোট

শীতকালে সিউলের রাস্তায় তাকালেই চোখে পড়ে কালো লং-প্যাডেড জ্যাকেটের সারি। কারণও খুব সাধারণ, শীতের জ্যাকেট দামি, বারবার কেনা হয় না, আর কালো রং ময়লা সহজে ঢেকে রাখে।

একজন ফ্যাশন বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘এখানে রং মানে শুধু পোশাক নয়, এটি হলো সামঞ্জস্য। কী পরছেন, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনি চারপাশের সঙ্গে কতটা মানিয়ে চলছেন।’

সূত্র: কোরিয়া হেরাল্ড

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাথার ওপর মরুকরণ: কেন বিশ্বজুড়ে কমছে পুরুষের চুলের ঘনত্ব

ফিচার ডেস্ক
মাথার ওপর ঘাস কম থাকলেও যদি ভেতরে উর্বরতা থাকে, তবে জীবনটা কিন্তু মোটেও পানসে নয়। ছবি: পেক্সেলস
মাথার ওপর ঘাস কম থাকলেও যদি ভেতরে উর্বরতা থাকে, তবে জীবনটা কিন্তু মোটেও পানসে নয়। ছবি: পেক্সেলস

বাঙালি সমাজে চুল পড়া কিংবা টাক নিয়ে নানান কথা প্রচলিত আছে। কথাগুলো কৌতুকপূর্ণ হলেও আধুনিক বিশ্বের পুরুষদের জন্য এটি এক পরম দীর্ঘশ্বাসের নাম। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কপালে হাত বুলিয়ে যখন দেখা যায় ‘হেয়ারলাইন’ দিন দিন সীমান্তের মতো পিছু হটছে, তখন কারই বা মন ভালো থাকে? কিন্তু সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, আপনি একা নন। মাথার ওপর এই ‘মরুকরণ’ এখন বিশ্বজুড়ে এক মহোৎসবের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। মাথার ওপর ঘাস কম থাকলেও যদি ভেতরে উর্বরতা থাকে, তবে জীবনটা কিন্তু মোটেও পানসে নয়; বরং এক চিলতে রোদ মাথায় মেখে আভিজাত্যের সঙ্গেই ঘুরে বেড়ান। কারণ, ‘টাক’ এখন বিশ্বজনীন!

স্পেন যখন টাকে চ্যাম্পিয়ন

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ‘টাক’ বা কেশহীন পুরুষের দেশ কোনটি জানেন? উত্তরটা হলো স্পেন। ২০২৪ সালের ডেটা অনুযায়ী, স্পেনের প্রায় ৪৪.৫ শতাংশ পুরুষই হয় টাক, না হয় দ্রুত চুল হারাচ্ছেন তারা। তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে ইতালি ও ফ্রান্স। ইতালিতে ৪৪.৩৭ শতাংশ পুরুষের মাথায় টাক। আর ফ্রান্সে এর সংখ্যা ৪৪.২৫ শতাংশ। ভাবা যায়! অর্ধেক দেশের পুরুষ মাথার মাঝখানে মরুভূমি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিও এই দৌড়ে পিছিয়ে নেই, তারাও টপ ফাইভের মধ্যে বেশ দাপটের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছে।

পশ্চিমের দেশে হাহাকারের কারণ

গবেষণা ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এশিয়া বা দক্ষিণ আমেরিকার তুলনায় ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে পুরুষদের মাথায় টাক পড়ার হার লক্ষণীয়ভাবে বেশি। প্রশ্ন উঠতে পারে, পশ্চিমাদের মাথায় কেন এত বাতাসের ঝাপটা? গবেষকেরা বলছেন, এর পেছনে কয়েকটা জম্পেশ কারণ আছে। প্রথম কারণ জিনতত্ত্ব। ককেশীয় বা সাদা চামড়ার পুরুষদের ডিএনএতেই নাকি চুল পড়ার একটা সহজাত প্রবণতা আছে। দ্বিতীয়ত, খাদ্যাভ্যাস। বার্গার, প্রক্রিয়াজাত মিট আর ভিটামিনের অভাব তাদের চুলের গোড়াকে নড়বড়ে করে দিচ্ছে। চুল পড়া সরাসরি বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত। পশ্চিমা দেশগুলোতে (যেমন যুক্তরাজ্য) পুরুষদের গড় বয়স সাধারণত ৪০ বছর। অন্যদিকে ভারত বা ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে তরুণ প্রজন্মের সংখ্যা বেশি। জনসংখ্যার গড় বয়স বেশি হওয়ার কারণে পশ্চিমা দেশগুলোতে টাক পড়া পুরুষদের সংখ্যা বেশি দেখা যায়। সেই সঙ্গে আছে ইউরোপ-আমেরিকার অতিরিক্ত কর্মব্যস্ততা ও মানসিক চাপ। মানে, পকেটে টাকা এলেও মাথায় চুল টিকছে না। এর পেছনে কাজ করে মূলত পাঁচটি প্রধান কারণ।

জনসংখ্যার গড় বয়স বেশি হওয়ার কারণে পশ্চিমা দেশগুলোতে টাক পড়া পুরুষদের সংখ্যা বেশি দেখা যায়। ছবি: পেক্সেলস
জনসংখ্যার গড় বয়স বেশি হওয়ার কারণে পশ্চিমা দেশগুলোতে টাক পড়া পুরুষদের সংখ্যা বেশি দেখা যায়। ছবি: পেক্সেলস

এশীয়রা কি তবে নিরাপদ

মজার বিষয় হলো, আমাদের এশিয়ায় টাক পড়ার হার তুলনামূলক অনেক কম। ইন্দোনেশিয়া এই তালিকার একদম নিচে, মাত্র ২৬.৯৬ শতাংশ। ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ার পুরুষদের মাথায়ও এখনো বেশ জঙ্গল টিকে আছে। তবে এশিয়ায় টাকে চ্যাম্পিয়ন কিন্তু জাপান। ২০১১ সালের এক জরিপ বলছে, এশীয় দেশগুলোর মধ্যে জাপানিরাই সবচেয়ে বেশি চুল হারান। চীন ও ভারতেও এখন এই সমস্যা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে, যদিও পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় তা এখনো নস্যি। ২০২৪ সালের জরিপের তথ্য অনুযায়ী এশিয়ার দেশ হিসেবে তালিকায় সবার ওপরে আছে তুরস্ক। দেশটির ৪০.০৩ শতাংশ পুরুষের মাথায় টাক। এরপর আছে সৌদি আরব ৩৯.৭৫ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৩৮.১ শতাংশ, জাপান ৩৫.৬৯ শতাংশ, ইরান ৩৫.০৩ শতাংশ, ভারত ৩৪.০৬ শতাংশ, পাকিস্তান ৩৩.৬৪ শতাংশ, ইসরায়েল ৩৩.৫৬ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়া ৩২.২৭ শতাংশ, থাইল্যান্ড ৩০.৯৪ শতাংশ, চীন ৩০.৮১ শতাংশ, মালয়েশিয়া ২৯.২৪ শতাংশ, ফিলিপাইন ২৮ শতাংশ ও সবশেষে আছে ইন্দোনেশিয়া, ২৬.৯৬ শতাংশ।

ককেশীয় বা সাদা চামড়ার পুরুষদের ডিএনএ-তেই নাকি চুল পড়ার একটা সহজাত প্রবণতা আছে। ছবি: পেক্সেলস
ককেশীয় বা সাদা চামড়ার পুরুষদের ডিএনএ-তেই নাকি চুল পড়ার একটা সহজাত প্রবণতা আছে। ছবি: পেক্সেলস

টাক পড়ার মহৌষধি ও ঘরসংসার

টাক পড়া নিয়ে এখন আর কেউ ঘরে বসে হাপিত্যেশ করেন না। নরওয়ের পুরুষেরা যেমন টাক পড়াকে বার্ধক্যের সহজ নিয়ম হিসেবে মেনে নিয়ে ক্লিন শেভ লুকে স্টাইল করেন। আবার যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট কিংবা চুল প্রতিস্থাপনের বাজার এখন তুঙ্গে। আমাদের দেশেও এখন হরেক রকম তেলের বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি ডাক্তারদের কাছে ভিড় বাড়ছে। কেউ কেউ তো আবার রসিকতা করে বলেন, ‘মাথায় চুল নেই তো কী হয়েছে, বুদ্ধি তো সব ভেতরেই জমছে!’

টাকই যখন আভিজাত্য

চুল পড়া শুধু বংশগতি বা হরমোনের খেলা নয়, এটি এখন আমাদের জীবনযাত্রার এক আয়না। তবে স্পেন বা ইতালির মতো দেশগুলো আমাদের একটা দারুণ শিক্ষা দেয়, চুলে জঙ্গল থাকুক বা না থাকুক, আত্মবিশ্বাসটা যেন ষোলো আনা থাকে। তাই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ‘চকচকে’ মাথা দেখে মন খারাপ না করে ভাবুন, বিশ্বের প্রায় ৪২ শতাংশ পুরুষই আপনার এই দলে আছেন।

সূত্র: মেডিহেয়ার, স্ট্যাটিস্টা, ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত