Ajker Patrika

টিকটক লাইভে ভিক্ষাবৃত্তি, ব্যবহৃত হচ্ছে শিশুরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৫: ৩১
শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি এবং অন্যান্য ধরনের ভিক্ষাবৃত্তির জন্য কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে টিকটিক। ছবি: টিকটক
শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি এবং অন্যান্য ধরনের ভিক্ষাবৃত্তির জন্য কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে টিকটিক। ছবি: টিকটক

ক্যামেরার সামনে একত্র হয়ে বসে আছে তিন শিশু। তারা আফগানিস্তানের এক কাঁচা মাটির বাড়িতে অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। তাদের মধ্যে একটি ছেলে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আমরা খুব গরিব, দয়া করে সাহায্য করুন।’ তাদের লাইভ স্ট্রিমটি ব্রিটেনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় দেখানো হচ্ছে টিকটক লাইভের মাধ্যমে।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে টিকটকের ভার্চুয়াল ‘গিফট’ চেয়ে যাচ্ছে তারা, যা পরবর্তীকালে অর্থে রূপান্তর করা যাবে। একবার একটি গিফট পাওয়ার পর তারা খুশি হয়ে হাততালি দেয়। অন্য একটি লাইভ স্ট্রিমে ডিজিটাল গোলাপ পাওয়ার পর এক মেয়ে আনন্দিত হয়ে চিৎকার করে বলছে, ‘ধন্যবাদ, আমরা আপনাকে ভালোবাসি!’ এই গোলাপের মূল্য ছিল মাত্র ১ পেনি। তবে টিকটক থেকে নগদে পরিণত হলে এর মূল্য এক-তৃতীয়াংশের কম হতে পারে।

এদিকে টিকটক দাবি করে, এটি শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি এবং অন্য ধরনের ভিক্ষাবৃত্তির জন্য কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং লাইভে অংশগ্রহণকারীদের জন্য কঠোর নীতিমালা রয়েছে। তবে ব্রিটিশ গণমাধ্যম অবসার্ভারের তদন্তে দেখা গেছে, এই ধরনের লাইভ স্ট্রিম প্রচলিত হয়ে উঠেছে এবং এর মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে টিকটক। অর্থাৎ এসব কনটেন্ট থেকে কমিশন এবং ফি কাটছে টিকটক। এসব কমিশন ৭০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি অলিভিয়ে দে শুটার একে ‘চমকপ্রদ ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং ‘মানুষের দুর্দশা থেকে লাভ করার’ জন্য টিকটক ও মধ্যস্বত্বভোগীদের অভিযুক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘মানুষের কষ্ট থেকে মুনাফা নেওয়া ডিজিটাল ডাকাতি ছাড়া আর কিছুই নয়। আমি টিকটককে অনুরোধ জানাচ্ছি, তাদের নিজেদের নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে এবং “কমিশন” (ফি) নেওয়ার যৌক্তিকতা পুনর্বিবেচনা করতে।’

‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর ডিজিটাল হানিকর বিশেষজ্ঞ জেফ্রি ডি মারকো বলেছেন, এই ধরনের অভ্যাস গুরুতর অপব্যবহার। এই ধরনের কনটেন্ট থেকে প্ল্যাটফর্মগুলো যেন আর সরাসরি বা পরোক্ষভাবে লাভবান না হয়, এ জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

এলাকাভিত্তিক বিশ্লেষণে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, সিরিয়া, মিসর ও কেনিয়ার মতো দেশগুলোতে এই ধরনের লাইভ ভিক্ষাবৃত্তির ঘটনা দেখা গেছে।

তদন্তে দেখা যায়, একটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় প্রতিদিন লাইভ স্ট্রিম হয়, যেখানে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন শিশুকে দেখানো হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে লাইভে এসে ডিজিটাল গিফটের জন্য ভিক্ষা চাইছিল সাতজন তরুণ ছেলে। পরদিন একই স্থানে অন্য ছেলেরা উপস্থিত হয়, তাদের পাশে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি বসে ছিলেন। ওই অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে অবজারভার জানানোর পর টিকটক দুই ঘণ্টার মধ্যে সেটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ইন-অ্যাপ রিপোর্টিং টুলের মাধ্যমে আগের একটি রিপোর্টের পর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এদিকে ৫ হাজার ৩০০ ফলোয়ারের অ্যাকাউন্টে লাইভ স্ট্রিমে চেয়ারে বসে থাকা বৃদ্ধ এক পুরুষের সম্প্রচার দেখানো হচ্ছিল। অ্যাকাউন্টটি তৃতীয় পক্ষ পরিচালনা করছিল বলে মনে হচ্ছিল। তবে তাদের পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এই অ্যাকাউন্টের বায়োতে লেখা ছিল ‘গরিব মানুষ’ এবং তার পাশে কান্নার ইমোজি ব্যবহার করা হয়েছে।

কিছু লাইভ স্ট্রিমে মানুষের নিকৃষ্ট এবং কখনো কখনো বিপজ্জনক স্টান্ট করতে দেখা গেছে। তারা ভার্চুয়াল গিফটের বিনিময়ে এসব স্টান্ট করে থাকে। যেমন নিজেদের আঘাত করা, দীর্ঘ সময় জেগে থাকা, মাটিতে ঢেকে ফেলা বা ক্যামেরার সামনে ঘুমানো। ইন্দোনেশিয়ার এক লাইভ স্ট্রিমে দেখা গেছে, দুটি ছোট মেয়ে জানালাবিহীন, সাদা দেয়ালবিশিষ্ট স্টুডিওর টাইলযুক্ত মেঝেতে শুয়ে রয়েছে। এরপর একই অ্যাকাউন্ট থেকে ওই টাইলযুক্ত মেঝেতে ঘুমানো এক পুরুষের লাইভ সম্প্রচার করা হয়।

পাকিস্তানের আরেকটি সম্প্রচারে দেখা গেছে, তিনজন পুরুষ অন্ধকারে বসে আছেন, তাঁদের মাথায় প্লাস্টিকের বালতি ও পার্টি হ্যাট। তাঁরা ক্যামেরার সামনে ঘুমিয়ে ছিলেন। যখন একটি গিফট পাচ্ছিলেন, তখনই তাঁরা জেগে উঠেছিলেন এবং নাচ পরিবেশন করছিলেন।

২০২০ সালে আগস্টে টিকটিকে লাইভ ফিচার চালু হয়। এর মাধ্যমে কনটেন্ট ক্রিয়েটররা সরাসরি দর্শকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

টিকটকের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে ১০০ মিলিয়ন মানুষ লাইভ করে, যা ‘বিলিয়ন’ সংখ্যক ব্যবহারকারী কাছে পৌঁছেছে। দর্শকেরা সরাসরি মন্তব্য বা গিফট পাঠিয়ে নির্মাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল দাতব্য সংস্থায় কর্মরত এবং ইন্দোনেশিয়ার সামাজিক অন্তর্ভুক্তিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ নোভিতা আংগ্রেইনি বলেন, অনেক নির্মাতা টিকটক লাইভ ব্যবহার করেন, তাঁদের ‘প্রতিভা প্রদর্শন’ বা ‘মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন’ করার জন্য। সাধারণত এটি ব্যবহার করেন, যাঁরা নিজেদের গান গাওয়া, নাচ, ভিডিও গেম খেলা, ছবি আঁকা বা রান্না করার ভিডিও ধারণ করেন। তবে এখন ক্রমবর্ধমানভাবে ভুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এটি। বিশেষ করে তাঁরা, যাঁরা এটিকে ‘অর্থ উপার্জনের সহজ পথ’ হিসেবে দেখছেন। তিনি আরও যোগ করেন, এই ধরনের ‘ক্ষতিকর’ ভিক্ষাবৃত্তি-সম্পর্কিত ভিডিও অত্যন্ত দ্রুত বাড়ছে। এটি একটি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের শোষণ।

তিনি আরও বলেন, এসব লাইভ স্ট্রিমের পেছনে মূলত দারিদ্র্য এবং ডিজিটাল শিক্ষা-দক্ষতার অভাব কাজ করছে। এ ছাড়া মানুষগুলোকে এগুলো জোর করে করানো হচ্ছে কি না, তা সহজে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ভুক্তভোগীরা নিজেদের শোষিত হওয়ার কথা অস্বীকার করেন এবং দাবি করেন, ‘এটি একটি সহযোগিতা, যার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা হচ্ছে।’

তবে তিনি সতর্ক করে জানান, সংগঠিত ভিক্ষাবৃত্তি নেটওয়ার্কগুলোর মাধ্যমে শোষণের ‘উচ্চ ঝুঁকি’ রয়েছে। যেগুলো আয় প্রবাহের নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং একাধিক পরিবারকে লাইভ স্ট্রিমের জন্য নিয়ন্ত্রণ করে।

টিকটক জানিয়েছে, তারা কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে ছিল—অবজারভার কর্তৃক চিহ্নিত অ্যাকাউন্টগুলো মুছে ফেলা। তারা বলেছে, তাদের নীতিমালায় লাইভ স্ট্রিমে শোষণমূলক ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যার মধ্যে শিশু বা দুর্বল ব্যক্তিদের শোষণমূলক ভিক্ষাবৃত্তি অন্তর্ভুক্ত। টিকটকের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘যেকোনো লাইভ কনটেন্ট, যেখানে শিশুদের গিফটের জন্য ভিক্ষা চায়, তা টিকটক অনুমোদন করে না।’

যেসব ক্ষেত্রে শোষণমূলক ভিক্ষাবৃত্তি বা শিশু শোষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে, সেখানে তারা ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নিয়েছে। তারা সেসব লাইভ স্ট্রিম বন্ধ করেছে এবং স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তারা জানায়, ‘প্রতিরোধমূলক শনাক্তকরণ এবং নিবেদিত টিম ও প্রযুক্তির মাধ্যমে’ তারা প্রতি মাসে চার মিলিয়ন লাইভ স্ট্রিম বন্ধ করে ‘আমাদের প্ল্যাটফর্মকে নিরাপদ রাখতে’ সাহায্য করছে। লাইভ স্ট্রিম হোস্ট করার জন্য এক হাজার ফলোয়ার এবং বয়স ১৮ বছরের বেশি হতে হবে। তবে শিশুরা একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে উপস্থিত থাকলে লাইভে আসতে পারবে।

টিকটক জানায়, তারা যে কমিশন এবং ফি গ্রহণ করে, তা পরিবর্তনশীল। লাইভ স্ট্রিমাররা গিফটের পূর্ণ মূল্য পায় না, বরং তারা ‘ডায়মন্ড’ নামে পয়েন্ট পায়। এই পয়েন্ট গিফট এবং তাদের স্ট্রিমের জনপ্রিয়তা ও সময়কাল অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। কমিশন এবং ফি পরিশোধের পর, সাধারণত তারা মূল গিফটের অর্ধেক পায়, তবে কখনো কখনো মাত্র ৩০ শতাংশ। টিকটক দাবি করেছে, ৩০ শতাংশ আয় ‘অ্যাপ স্টোর ফি এবং পেমেন্ট প্রোভাইডার খরচে’ চলে যায়। টিকটকে ১০০টির বেশি ডিজিটাল গিফট রয়েছে, যার মধ্যে একটি রোজ (১ পেনি) থেকে শুরু করে, টিকটক ইউনিভার্স (প্রায় ৪৫০ পাউন্ড) রয়েছে।

শোষণমূলক কনটেন্ট থেকে লাভ নেওয়ার জন্য আগে সমালোচনার মুখে পড়েছিল টিকটক। বিশেষ করে ২০২২ সালে যৌন নির্যাতন লাইভ স্ট্রিমের ঘটনায়।

২০২৩ সালে আল জাজিরা জানায়, ইন্দোনেশিয়ার অনাথ আশ্রমগুলো লাইভ স্ট্রিমের মাধ্যমে অনুদান সংগ্রহ করছে। এসব লাইভ স্ট্রিমে শিশুদের ঘুমাতে দেখা যায়। টিকটক বলেছে, তারা এমন শোষণমূলক ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ করেছে। তবে অনাথ আশ্রমের লাইভ স্ট্রিমটি তাদের নিয়ম ভঙ্গ করেনি।

টিকটক লাইভে ভিক্ষাবৃত্তি-সম্পর্কিত ঝুঁকি থাকলেও অনেক দাতব্য সংস্থা বলছে, এটি সংকটে থাকা মানুষকে সাহায্য পেতে সহায়তা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ফিলিপাইনের এক পরিবার তাদের যমজ শিশুর অস্ত্রোপচারের জন্য অনুদান সংগ্রহে সফল হয়েছিল। তবে অনেক ক্ষেত্রে এটি স্পষ্ট নয় যে এর মাধ্যমে আসলেই কারা উপকৃত হচ্ছে।

অ্যান্টি-স্লেভারি ইন্টারন্যাশনালের ক্যাথরিন টার্নার বলেন, কিছু শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি বেঁচে থাকার জন্য ভিক্ষা করে, তবে অন্যরা তৃতীয় পক্ষ দ্বারা ‘শারীরিক বা মানসিকভাবে শোষিত’ হয়ে থাকে। এই তৃতীয় পক্ষ আয়প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে।

লাইভ স্ট্রিমারদের পুরস্কারের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করার জন্য সরকারি ইস্যুকৃত আইডি চায় টিকটক। তবে দর্শকদের জন্য এটি জানার উপায় নেই যে যারা লাইভে থাকছে, তারা বাস্তবে উপকৃত হচ্ছে কি না। অক্সফোর্ডের ক্রিমিনোলজি কেন্দ্রের গবেষক ‘মায়া লাহাভ’ বলেন, লাইভ স্ট্রিম নিয়ন্ত্রণ করা বা নজরদারিতে রাখার জন্য অনেক তথ্য প্রয়োজন, যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি উল্লেখ করেন, এসব কনটেন্ট সরানো উচিত কি না, তা নিয়ে নৈতিক প্রশ্ন রয়েছে।

তবে তিনি আরও বলেন, তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ এবং শিশু বা অসুস্থদের সম্মতির বিষয়টি নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ রয়েছে। ‘এখানে মূল প্রশ্ন, কখন এটি শোষণ হয়ে ওঠে! এই সঠিক ভারসাম্যই তাদের মানতে হবে।’

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের মেয়ে কুমিল্লায় আটক

পটিয়ায় আওয়ামী লীগের বিজয় দিবস উদ্‌যাপন, ক্ষুব্ধ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকারীরা

‘নিরাপত্তার’ কারণে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনের বিএনপি প্রার্থীর

আজকের রাশিফল: বাবা-মা আজ আবদার রাখবেন, সিঙ্গেলরা দ্রুত প্রোফাইল পিক বদলান

ধানমন্ডি ৩২-এ ভাসানী, সিরাজ সিকদার, হাদির ছবি টানালেন জুলাই যোদ্ধারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাক্ষাৎকার

চর্চা ‘লার্নিং থ্রো প্র্যাকটিস’ধারণাকে প্রাধান্য দেয়

রায়হান উল ইসলাম সানজিদ।

অনলাইন ক্লাস, গাইডবুক আর মক টেস্টের পরেও বাংলাদেশের পরীক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ নিয়মিত অনুশীলনের অভাবে পিছিয়ে পড়েন। পড়া থাকলেও কোথায় দুর্বলতা, কীভাবে নিজের অগ্রগতি যাচাই করবেন—সে প্রশ্নের উত্তর অনেক সময় মেলে না। এই প্রেক্ষাপটে ‘চর্চা’ নিজেকে উপস্থাপন করছে একটি অনুশীলনকেন্দ্রিক লার্নিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে। দেশের এডটেক খাতে এই উদ্যোগের ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কথা বলেছেন চর্চার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান উল ইসলাম সানজিদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. আশিকুর রহমান

আশিকুর রহমান

চর্চার শুরুটা কীভাবে?

চর্চার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০২১ সালে। তখন আমি নিজেই ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। প্রতিদিন ক্লাস, লেকচার, গাইডবুক আর প্রশ্নব্যাংকের চাপ—সব মিলিয়ে নিজের মতো করে প্র্যাকটিস করার সময় খুব কম পাওয়া যেত। এই জায়গায় সমস্যাটা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। ভাবলাম, যদি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম থাকে, যেখানে গৎবাঁধা নিয়মে আটকে না থেকে নিয়মিত ও সহজভাবে প্র্যাকটিস করা যায়, তাহলে শেখাটা অনেক বেশি আনন্দের হতে পারে। সেই ভাবনা থেকে চর্চার জন্ম। রুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির পর কাজটি আরও গতি পায়। ক্লাসরুম থেকেই আমার কো-ফাউন্ডার ও সিএমও নাফিসের সঙ্গে পরিচয়। পরে গালিব কো-ফাউন্ডার ও সিওও হিসেবে যুক্ত হন। শুরু থেকেই মার্কেটিং ও অপারেশনের দায়িত্ব মূলত তাঁরা দুজনই সামলাচ্ছেন।

চর্চা অ্যাপ তৈরির পেছনে মূল অনুপ্রেরণা কী ছিল?

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় পড়াশোনা আর পরীক্ষাকে প্রায় সব সময় ভয়ের বিষয় হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। অথচ শেখার প্রক্রিয়াটা হওয়া উচিত আনন্দদায়ক, যেখানে একজন শিক্ষার্থী সমস্যা সমাধান করতে করতেই শিখবেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, পড়ার উপকরণ অনেক থাকলেও নিয়মিত প্র্যাকটিসের সুযোগ খুব সীমিত। এই বাস্তবতা থেকে চর্চার ভাবনা। আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষাকে ভয় না পেয়ে প্র্যাকটিসের মাধ্যমে শেখার আনন্দ খুঁজে পাক। শেখার প্রতিটি ধাপ যেন চাপ না হয়ে আগ্রহ তৈরি করে—এটিই ছিল চর্চার মূল অনুপ্রেরণা।

শুরুতে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল?

নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা ‘চর্চা’র বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। যেটি একসঙ্গে হাজার হাজার ব্যবহারকারী সামলাতে পারবে এবং সবার জন্য অভিজ্ঞতাটি হবে নিরবচ্ছিন্ন। এর পাশাপাশি বাস্তব চ্যালেঞ্জ ছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তের, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত ও উপযোগী কনটেন্ট তৈরি করা। অষ্টম শ্রেণি থেকে বিসিএস—প্রতিটি স্তরের জন্য আলাদা চাহিদা রয়েছে। সেই কনটেন্ট যেন একদিকে নির্ভুল হয়, অন্যদিকে আকর্ষণীয় ও গেমিফাইড হয়। এই ভারসাম্য বজায় রাখাটা ছিল কঠিন। তবে ধাপে ধাপে এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে আজ চর্চা একটি গ্রহণযোগ্য প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।

‘চর্চা এআই’-এর ধারণা কীভাবে এল?

এটি মূলত এআই এজেন্ট, যা এনসিটিবি পাঠ্যবই এবং আমাদের ১০ লক্ষাধিক প্রশ্নের ডেটাবেইসের ওপর প্রশিক্ষিত। শিক্ষার্থীরা টেক্সট বা ছবি আকারে যেকোনো প্রশ্ন দিতে পারেন, আর চর্চা এআই বইভিত্তিক রেফারেন্সসহ উত্তর দেয়। এটি শুধু ডাউট সলভিং নয়, বরং একটি পার্সোনালাইজড লার্নিং সলিউশন। শিক্ষার্থী বুঝতে পারেন—কোন টপিকে তিনি দুর্বল, কোথায় আরও প্র্যাকটিস দরকার। মাত্র তিন মাসে চর্চা এআই-এ ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি চ্যাটরুম তৈরি হয়েছে।

প্রশ্নভান্ডারের মান কীভাবে নিশ্চিত করেন?

চর্চার কনটেন্ট মান নিশ্চিত করতে আমাদের একটি আলাদা কনটেন্ট টিম রয়েছে। অষ্টম শ্রেণি, এসএসসি, এইচএসসি ও বিসিএস—প্রতিটি সেগমেন্টে আলাদা টিম কাজ করে। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা এই তিন ধারার জন্য রয়েছে বিষয়ভিত্তিক এক্সপার্টরা। নিয়মিত আপডেট, রিভিউ এবং গবেষণার মাধ্যমে কনটেন্টের মান ধরে রাখাই আমাদের মূল অগ্রাধিকার।

স্ট্রিক, লিডার বোর্ড ও রিপোর্ট কতটা কার্যকর?

চর্চা ‘লার্নিং থ্রো প্র্যাকটিস’ ধারণাটিকে প্রাধান্য দেয়। স্ট্রিক শিক্ষার্থীদের দৈনিক অভ্যাস গড়তে সাহায্য করে। আমাদের এমন ব্যবহারকারীও আছেন, যাঁদের স্ট্রিক এক বছরের বেশি। লিডার বোর্ড শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি করে। আর মাসিক রিপোর্ট শিক্ষার্থীকে নিজের অগ্রগতি বুঝতে সাহায্য করে। কোথায় উন্নতি হচ্ছে বা কোথায় আরও মনোযোগ দরকার, সেসব বোঝা যায় এ থেকে।

ডেটা প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করছেন?

ব্যবহারকারীর ডেটা সুরক্ষা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবহারকারীরা যেকোনো সময় নিজেদের তথ্য বা অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে পারেন। কোনো তথ্য ব্যবহারকারীর সম্মতি ছাড়া সংগ্রহ করা হয় না। সব ডেটা এনক্রিপটেড থাকে এবং অ্যাপ সার্ভার যোগাযোগ এইচটিটিপিএস সিকিউরিটির মাধ্যমে সুরক্ষিত। এই ব্যবস্থাগুলো ব্যবহারকারীদের নিশ্চিন্ত অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আগামী পাঁচ বছরে আমরা চর্চাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত লার্নিং অ্যাপে পরিণত করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য ১০ কোটির বেশি শিক্ষার্থীকে সেবা দেওয়া। একই সঙ্গে আমরা বিশ্বাস করি, শেখার কোনো সীমানা নেই। তাই চর্চাকে একটি গ্লোবাল লার্নিং অ্যান্ড প্র্যাকটিস ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাও আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ থেকে জন্ম নেওয়া একটি প্ল্যাটফর্ম যেন বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের শেখার সঙ্গী হয়ে ওঠে, এই স্বপ্ন নিয়েই আমরা এগোচ্ছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের মেয়ে কুমিল্লায় আটক

পটিয়ায় আওয়ামী লীগের বিজয় দিবস উদ্‌যাপন, ক্ষুব্ধ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকারীরা

‘নিরাপত্তার’ কারণে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনের বিএনপি প্রার্থীর

আজকের রাশিফল: বাবা-মা আজ আবদার রাখবেন, সিঙ্গেলরা দ্রুত প্রোফাইল পিক বদলান

ধানমন্ডি ৩২-এ ভাসানী, সিরাজ সিকদার, হাদির ছবি টানালেন জুলাই যোদ্ধারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মিরর ব্যাকটেরিয়া কি আধুনিক পৃথিবীর নতুন মারণাস্ত্র

মইনুল হাসান, ফ্রান্স  
মিরর ব্যাকটেরিয়া কি আধুনিক পৃথিবীর নতুন মারণাস্ত্র

মানুষ কি পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে? এ কথা কেন বলছি, তার কারণ আছে।গত বছর ডিসেম্বরে বিজ্ঞান পত্রিকা ‘সায়েন্স’-এ ৯টি দেশের মোট ৩৮ জন খ্যাতনামা বিজ্ঞানী একত্রে বিবৃতি দিয়ে মানুষকে সতর্ক করেছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন আছেন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী। তাঁরা বিবৃতির সঙ্গে যুক্ত করেছেন ৩০০ পাতার এক বিশাল সচিত্র প্রতিবেদন। তাঁরা সে প্রতিবেদনে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, জীবন নিয়ে খেলা চলবে না। সে বিজ্ঞানীরা আয়নার মধ্যে পুরো পৃথিবী ধ্বংসের অতি মারাত্মক অশনিসংকেত পাচ্ছেন। কারণ, পৃথিবীর দেশে দেশে বিভিন্ন গবেষণাগারে ‘মিরর লাইফ’ বা ‘আয়না জীবন’ উদ্ভাবনে একই সঙ্গে বহু বিজ্ঞানী নিরলসভাবে কাজ করছেন এবং সফলতার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছেন। বিশেষ করে চীনের ওয়েস্ট লেক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব লাইফ সায়েন্সের গবেষক বিজ্ঞানী টিং ঝু জীববিজ্ঞানীদের বিস্মিত করে আয়না জীবন উদ্ভাবনে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছেন।

‘আয়না জীবন’ একধরনের কৃত্রিম জীবন। প্রকৃতিতে জীবনের প্রধান আণবিক উপাদান, অনুঘটক প্রোটিন, ডিএনএ, আরএনএ ইত্যাদির অণুগুলো অসমমিতিক অর্থাৎ মাঝখান থেকে বিভাজন করলে দুটি অসমান অংশে বিভক্ত হবে। এ ছাড়া এই অণুগুলো একটি বিশেষ নকশার আকারে সাজানো। কোনোটি ডান দিকে ঘোরানো আবার কোনোটি বাঁ দিকে। সাধারণভাবে পৃথিবীর সব জীবের ডিএনএ ডান দিকে আর প্রোটিন পাক খায় বাঁ দিকে। কিন্তু ‘মিরর লাইফ’-এ বিষয়টা একদম উল্টো, এখানে ডিএনএ বাঁ দিকে আর প্রোটিন পাক খায় ডান দিকে। ডান ও বাঁ হাতের মতো। দেখতে ঠিক এক রকম, একে অন্যের প্রতিবিম্ব, তবে ভিন্ন। কেন এমন হয়? এ প্রশ্নের উত্তর মানুষ আজও জানে না। প্রকৃতির এ এক অভেদ্য রহস্য।

বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন, জীবনের এই ডান দিককে বাঁ দিকে আর বাঁ দিককে ডান দিকে করে নতুন ধরনের জীবন উদ্ভাবনের। প্রকৃতির এই ‘ডান’ ও ‘বাঁ’-এর বিপরীতে গিয়ে গবেষণাগারে জীবনের সরল মডেল এককোষী ব্যাকটেরিয়ার কোষে ডিএনএ পরিবর্তন করে বাঁ দিকে ঘুরিয়ে দিলে অর্থাৎ আয়নার প্রতিবিম্ব অনুসারে অণুগুলো গঠন করলে সৃষ্টি হবে ‘আয়না ব্যাকটেরিয়া’। বাইরে থেকে সেগুলোর কোনো পার্থক্য করা যাবে না। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, বিভিন্ন জটিল রোগ নিরাময়ে তা হবে এক অব্যর্থ মহৌষধ।

তবে বহু বিজ্ঞানীর মতে, এর প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে। তাঁরা উদ্বিগ্ন হচ্ছেন এই ভেবে যে এমন গঠনের অণুজীব যদি একবার তৈরি হয়, তবে তা পৃথিবীর বিদ্যমান বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্যের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। প্রতিটি জীবের দেহে প্রাকৃতিকভাবে রয়েছে এক চমৎকার রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা। শরীরের অভ্যন্তরে প্রাণঘাতী অণুজীব বা ভাইরাস ঢুকে পড়লে, জীবদেহের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিজে থেকেই সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং অনুপ্রবেশকারী কোষকে পর্যুদস্ত করতে শুরু করে। ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিম উপায়ে সৃষ্ট এই আয়না ব্যাকটেরিয়াকে জীবদেহের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শনাক্ত করতে মোটেই সক্ষম নয়।

বিজ্ঞানী টিং ঝু
বিজ্ঞানী টিং ঝু

ডান হাতের দস্তানা যেমন বাঁ হাতে ঢোকানো সহজসাধ্য নয়, তেমনই জীবদেহের প্রকৃতিপ্রদত্ত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা আয়না ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে মোটেও কার্যকর নয়। প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক এবং ব্যাকটেরিয়া খাদক ভাইরাস দিয়েও একে নির্মূল করা যাবে না। কোনো রকম অসতর্কতা বা ভুলের কারণে গবেষণাগার থেকে এই মারাত্মক সংক্রামক রোগের আয়না ব্যাকটেরিয়া বেরিয়ে পড়লে দ্রুত সংক্রমিত করবে পুরো জীবজগৎ। শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধব্যবস্থা কাজ করবে না এবং উপযুক্ত প্রতিষেধক না থাকায় পশুপাখি, উদ্ভিদ, জলজ জীব এমনকি মানুষও এই অভিশপ্ত অণুজীবের মরণ কামড় থেকে রেহাই পাবে না। বিশ্বব্যাপী উজাড় হবে প্রাণ, সমাপ্তি ঘটবে মাটির পৃথিবীতে দৃশ্যমান জীবনের, এমনটাই আশঙ্কা করছেন বিবৃতিদাতা বিজ্ঞানীরাসহ অনেকেই। হতে পারে কোনো এক অশুভ শক্তির হাতে পৌঁছে গেছে এই প্রাণঘাতী এবং অপ্রতিরোধ্য, অতি ক্ষুদ্র আয়না অণুজীব। তাহলে তা হবে এক অতি ভয়ংকর মারণাস্ত্র।

সূত্র: ‘সিয়োন্স এ আভেনির’, ফ্রান্স।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের মেয়ে কুমিল্লায় আটক

পটিয়ায় আওয়ামী লীগের বিজয় দিবস উদ্‌যাপন, ক্ষুব্ধ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকারীরা

‘নিরাপত্তার’ কারণে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনের বিএনপি প্রার্থীর

আজকের রাশিফল: বাবা-মা আজ আবদার রাখবেন, সিঙ্গেলরা দ্রুত প্রোফাইল পিক বদলান

ধানমন্ডি ৩২-এ ভাসানী, সিরাজ সিকদার, হাদির ছবি টানালেন জুলাই যোদ্ধারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অনলাইনে কেনাকাটার নিরাপদ উপায়

ফিচার ডেস্ক
অনলাইনে কেনাকাটার নিরাপদ উপায়

অনলাইনে কেনাকাটার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। ঘরে বসেই পছন্দের পণ্য অর্ডার করার সুবিধা থাকলেও এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রতারণার ঝুঁকি। তবে কেনাকাটার আগে কয়েকটি বিষয়ে সচেতন থাকলে এসব প্রতারণা এড়িয়ে চলা সম্ভব।

পরিচিত ও বিশ্বাসযোগ্য প্ল্যাটফর্ম

চেষ্টা করুন পরিচিত ও পরীক্ষিত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পণ্য কিনতে। নতুন কোনো ওয়েবসাইটে কেনাকাটার আগে সেটি আসল কি না, প্রতিষ্ঠানটি কত দিন ধরে ব্যবসা করছে—এসব বিষয় সম্পর্কে খোঁজ নিন।

ব্র্যান্ড ও প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে জানুন

কেনার আগে সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্ম বা ব্র্যান্ড সম্পর্কে অনলাইনে খোঁজ নিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিজ্ঞাপন বা গ্রাহক রিভিউ থেকে প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করা যায়।

অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন না

অনলাইনে কেনাকাটার সময় যেসব ওয়েবসাইট অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্য চায়, যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা অতিরিক্ত গোপন তথ্য, সেসব প্ল্যাটফর্ম এড়িয়ে চলুন। সাধারণ কেনাকাটার জন্য এসব তথ্যের প্রয়োজন হয় না।

নিরাপদ পেমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করুন

ব্যাংক কার্ড দিয়ে অনলাইনে কেনাকাটা এখন স্বাভাবিক হলেও হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি থাকে। সম্ভব হলে ক্যাশ অন ডেলিভারি বা বিশ্বস্ত পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করুন।

পাবলিক ওয়াই-ফাই এড়িয়ে চলুন

ফ্রি বা পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে যেকোনো আর্থিক লেনদেন করা ঝুঁকিপূর্ণ। অনলাইনে পেমেন্টের সময় ব্যক্তিগত বা নিরাপদ ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

সূত্র: গ্লোবাল সাইবার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের মেয়ে কুমিল্লায় আটক

পটিয়ায় আওয়ামী লীগের বিজয় দিবস উদ্‌যাপন, ক্ষুব্ধ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকারীরা

‘নিরাপত্তার’ কারণে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনের বিএনপি প্রার্থীর

আজকের রাশিফল: বাবা-মা আজ আবদার রাখবেন, সিঙ্গেলরা দ্রুত প্রোফাইল পিক বদলান

ধানমন্ডি ৩২-এ ভাসানী, সিরাজ সিকদার, হাদির ছবি টানালেন জুলাই যোদ্ধারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গুগলের নতুন ফিচার: সাধারণ হেডফোনই হবে রিয়েল–টাইম অনুবাদক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
এর মাধ্যমে ৭০টিরও বেশি ভাষায় নির্বিঘ্নে অডিও অনুবাদ পাওয়া যাবে। ছবি: সংগৃহীত
এর মাধ্যমে ৭০টিরও বেশি ভাষায় নির্বিঘ্নে অডিও অনুবাদ পাওয়া যাবে। ছবি: সংগৃহীত

গুগল ট্রান্সলেটে একটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ আপডেট এনেছে গুগল। এই ফিচারে যুক্ত করা হয়েছে রিয়েল-টাইম ট্রান্সলেটর, যা সরাসরি হেডফোনের মাধ্যমে ব্যবহার করা যাবে।

গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) বেটা সংস্করণে চালু হওয়া এই ফিচারটি ব্যবহার করতে শুধু একটি উপযোগী অ্যান্ড্রয়েড ফোন এবং গুগল ট্রান্সলেট অ্যাপই যথেষ্ট। এর মাধ্যমে ৭০টিরও বেশি ভাষায় নির্বিঘ্নে অডিও অনুবাদ পাওয়া যাবে।

গুগল জানিয়েছে, তারা তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) টুল জেমিনি ব্যবহার করে বাগধারা, প্রবাদ–প্রবচন, স্থানীয় অভিব্যক্তি বা স্ল্যাংয়ের মতো সূক্ষ্ম অর্থবোধক বাক্যাংশের অনুবাদ আরও উন্নত করার চেষ্টা করেছে।

এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি বলেছে, ‘আমরা টেক্সট অনুবাদের জন্য গুগল ট্রান্সলেটে জেমিনির সবচেয়ে শক্তিশালী অনুবাদ সক্ষমতা যুক্ত করছি। হেডফোনের মাধ্যমে লাইভ স্পিচ–টু–স্পিচ অনুবাদের একটি বেটা অভিজ্ঞতা চালু করছি এবং অনুশীলন ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অ্যাপে নতুন ভাষা যুক্ত করছি।’

এর আগে এই সুবিধা শুধু পিক্সেল বাডসের জন্য সীমিত ছিল। তবে নতুন বেটা সংস্করণের মাধ্যমে যেকোনো হেডফোনকেই একমুখী রিয়েল–টাইম অনুবাদ ডিভাইসে রূপান্তর করা যাবে।

গুগল জানিয়েছে, দৈনন্দিন যোগাযোগের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই ফিচারটি কার্যকর একটি টুল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। কথোপকথনের সময় ভাষাগত দূরত্ব ঘোচানো, ভ্রমণের সময় পাবলিক এনাউন্সমেন্ট বোঝা কিংবা বিদেশি ভাষার টেলিভিশন অনুষ্ঠান বা অনলাইন কনটেন্ট অনুসরণের ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হবে।

গুগলের সার্চ ভার্টিক্যালস বিভাগের প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট রোজ ইয়াও বলেন, ‘আপনি যদি ভিন্ন কোনো ভাষায় কথা বলতে চান, বিদেশে অবস্থানকালে কোনো ভাষণ বা বক্তৃতা শুনতে চান, কিংবা অন্য ভাষার টিভি অনুষ্ঠান বা সিনেমা দেখতে চান, তাহলে এখন শুধু হেডফোন লাগিয়ে ট্রান্সলেট অ্যাপ খুলে লাইভ ট্রান্সলেট-এ ট্যাপ করলেই আপনার পছন্দের ভাষায় রিয়েল–টাইম অনুবাদ শুনতে পারবেন।’

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও ভারতে চালু হচ্ছে এই বেটা সংস্করণটি। কোম্পানি জানিয়েছে, ২০২৬ সালে আইওএস এবং আরও বেশি দেশে এই সুবিধা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি, কথা বলার অনুশীলনের ভিত্তিতে ব্যবহারকারীদের সহায়ক পরামর্শ দিতে উন্নত ফিডব্যাক ব্যবস্থাও যুক্ত করা হচ্ছে।

এ ছাড়া ব্যবহারকারীদের দৈনন্দিন শেখার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে স্ট্রিক ট্র্যাকিং ফিচারও চালু করছে গুগল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের মেয়ে কুমিল্লায় আটক

পটিয়ায় আওয়ামী লীগের বিজয় দিবস উদ্‌যাপন, ক্ষুব্ধ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকারীরা

‘নিরাপত্তার’ কারণে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনের বিএনপি প্রার্থীর

আজকের রাশিফল: বাবা-মা আজ আবদার রাখবেন, সিঙ্গেলরা দ্রুত প্রোফাইল পিক বদলান

ধানমন্ডি ৩২-এ ভাসানী, সিরাজ সিকদার, হাদির ছবি টানালেন জুলাই যোদ্ধারা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত