Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

এটা ধরে রাখলে বিশ্বকাপে অনেক দূর যাব

এটা ধরে রাখলে বিশ্বকাপে অনেক দূর যাব

জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ে সফর দিয়ে বাংলাদেশ-অধ্যায় শুরু হয়েছে স্পিন পরামর্শক রঙ্গনা হেরাথের। টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল বাঁ-হাতি স্পিনার এই মুহূর্তে ছুটি কাটাচ্ছেন নিজের শহর কলম্বোয়। সেখান থেকেই ফোনে গতকাল সকালে কথা বলেন আজকের পত্রিকার সঙ্গে। প্রায় আধঘণ্টার এ আলাপচারিতায় হেরাথ বিস্তারিত বলেন সবশেষ সিরিজে বাংলাদেশ স্পিনারদের পারফরম্যান্স, আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও বাংলাদেশ দলে তাঁর কোচিং অভিজ্ঞতা নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রানা আব্বাস

রানা আব্বাস, ঢাকা
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১৫: ০৭

প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলে যোগ দিয়েই টানা কয়েকটি সিরিজ জয়ের সঙ্গী হয়েছেন। এটা কতটা তৃপ্তিদায়ক?

রঙ্গনা হেরাথ: আমার কোচিং ক্যারিয়ারের শুরুর জন্য এটা খুবই ভালো। ক্লাব ক্রিকেট ও কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সঙ্গে কাজ করেছি। এ ক্ষেত্রে বিসিবিকে ধন্যবাদ সুযোগটা দেওয়ায়। যদি জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ তিনটি সিরিজের কথা বলেন, খুব ভালো ছিল। জেতার মানসিকতা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যখন আমরা বিশ্বকাপে যাচ্ছি। এ ধরনের আচরণ ও শরীরী ভাষা আমরা বাংলাদেশ দলে দেখেছি। এটি বিশ্বকাপের আগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন: সবশেষ তিন সিরিজে স্পিনারদের পারফরম্যান্স কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

হেরাথ: যদি জিম্বাবুয়ে সিরিজের দিকে তাকান, মিরাজ খুব ভালো বোলিং করেছে। ওয়ানডেতে সাকিব ভালো করেছে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নাসুম, মেহেদী, সাকিব সবাই খুব ভালো অবদান রেখেছে। তবে যেটা লক্ষ করেছি, তারা প্রতিদিন উন্নতি করছে। কোচ হিসেবে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে বেশি কিছু করতে পারি না। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি ট্যাকটিক্যাল ও মানসিকভাবে কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়, সেটা শেখাতে। সেসব কোচকে ধন্যবাদ দিতে চাই; যাঁরা নাসুম, মেহেদী, মিরাজ, সাকিবসহ বাকিদের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁরা জাতীয় দলে আসার আগেই কঠিন পরিশ্রম করেছে। এই পর্যায়ে আসার আগে তারা অনেক ভালো কিছু করতে পেরেছে।

প্রশ্ন: ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নাসুম দারুণ খেলেছেন। অনেকেই মনে করছেন, তাঁকে খুব বেশি চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়নি, যেহেতু কন্ডিশনের সহায়তা পেয়েছেন। দেশের বাইরেও নাসুমের দক্ষতা নিয়ে কতটা আশাবাদী?

হেরাথ: হ্যাঁ, এই কন্ডিশন অনুযায়ী সে ভালো করেছে। তবে আপনাকে অন্য দিকটাও ভাবতে হবে। যখন আপনার এ ধরনের মাইন্ড সেট থাকবে ও আত্মবিশ্বাস থাকবে, তখন অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মতো দেশে গেলেও সেই আত্মবিশ্বাস নিজের সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন। এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি জানি, উপমহাদেশের বাইরে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ থাকবে। এ ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে কাজ করছি, কীভাবে দেশের বাইরের কন্ডিশন বিবেচনায় তাদের স্কিল ও ট্যাকটিক্যাল জায়গায় উন্নতি করা যায়।

প্রশ্ন: এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্পিনারদের নিয়ে কতটা আশাবাদী?

হেরাথ: যেটা লক্ষ করেছি, আইপিএলের পরই আমরা বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলব। আমার ধারণা, দুবাই, শারজা, আবুধাবিতে স্পিনারদের জন্য কিছুটা সহায়তা থাকবে। সহায়তা থাকুক বা না-থাকুক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিবেচনায় আমাদের স্মার্ট ক্রিকেট খেলতে হবে।

প্রশ্ন: প্রতিটি দল বিশ্বকাপে লেগ স্পিনার নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ দলে কোনো লেগ স্পিনার নেই।

হেরাথ: শ্রীলঙ্কায় ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, ইংল্যান্ডের আদিল রশিদ আছে। ভারতেও আছে। তারা (লেগ স্পিনার) খরুচে হতে পারে, আবার তারা উইকেটও এনে দিতে পারে। আমাদের দলে বিপ্লব আছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে মূল দলে নেই। তবে আমার মনে হয়, বিশ্বকাপের পরও রিস্ট স্পিনাররা টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডের জন্য ভালো বিকল্প হতে পারে।

প্রশ্ন: আপনি শ্রীলঙ্কার ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন। চ্যাম্পিয়ন দলের পরিবেশ কেমন হয়, আপনার জানা আছে। আপনার এই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ দলকে কীভাবে সহায়তা করতে পারে?

হেরাথ: আমাদের এখন জেতার মানসিকতা ও সমন্বয় আছে। শরীরী ভাষা ও আচরণও এখানে যুক্ত। এটা এখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ধরে রাখতে হবে। আমি তিনটি ফাইনালে ছিলাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে হেরেছিলাম। ২০১২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হেরেছি। সৌভাগ্যবশত ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছি। পরিস্থিতির সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন এবং কীভাবে প্রয়োগ করছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এরই মধ্যে সেই অভিজ্ঞতা তাদের (খেলোয়াড়) সঙ্গে শেয়ার করেছি। এখনকার (বাংলাদেশ) দলের দিকে তাকালে সেই মাইন্ড সেট দেখতে পাবেন।

প্রশ্ন: এবার বাংলাদেশ দলের নকআউট পর্বে খেলার সম্ভাবনা কতটা দেখছেন?

হেরাথ: আমরা ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চাই। বিশ্বকাপের আগে দল হিসেবে আমরা ভালো অবস্থায় আছি। এখন এটা ধরে রাখলে বিশ্বকাপে অনেক দূর যাব। এটা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে।

প্রশ্ন: সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশ একজন বাঁ-হাতি স্পিনারের খোঁজ করছে, যিনি লম্বা সময় সাকিব আল হাসানের সঙ্গী হতে পারবেন। এখন নাসুম এসেছেন। আবদুর রাজ্জাক দৃশ্যপট থেকে আড়ালের পর গত ছয় বছরে সাদা বলে বাংলাদেশ পাঁচ-ছয়জন বাঁ-হাতি স্পিনারকে বাজিয়ে দেখেছে। বেশির ভাগই থিতু হতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?

হেরাথ: যখন নাসুম বা অন্য কাউকে দলে আনবেন, তখন স্পিনার হিসেবে তাদের অনেক বেশি সুযোগ দিতে হবে। যখন তাদের বেশি খেলাবেন, তখন তারা আত্মবিশ্বাস পাবে। এখন দেখছি নাসুম উন্নতি করছে। এখনো উন্নতির জায়গা আছে। বেশি সুযোগ পেলে আরও মেলে ধরতে পারবে। আর একবার আত্মবিশ্বাস পেলে পারফরম্যান্সও ধরে রাখা সম্ভব হবে।

প্রশ্ন: একটা সময় সাকিব-মুশফিকদের প্রবল প্রতিপক্ষ ছিলেন। এখন তাঁদেরই কোচ আপনি। কেমন লাগে বিষয়টা?

হেরাথ: এটা ভিন্ন অভিজ্ঞতা। উপভোগ করছি। মুশফিক, সাকিব, তামিম, রিয়াদের (মাহমুদউল্লাহ) সঙ্গে অনেক ম্যাচ খেলেছি। আমাদের বেশ ভালো বোঝাপড়া আছে। এটা বেশ সহায়ক। খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলাপগুলোও তাই বেশ ভালো হয়।

প্রশ্ন: খেলোয়াড়িজীবনে যে বাংলাদেশ দলকে দেখেছেন, সেটির সঙ্গে এখনকার বাংলাদেশের মূল পার্থক্য কোথায়?

হেরাথ: বাংলাদেশ এখন নিয়মিত জিতছে। খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সও ভালো হচ্ছে। যখন তাদের আত্মবিশ্বাস ও সক্ষমতা থাকবে, তখন তারা নিজেদের শতভাগ দিতে পারবে। তারা এখন ব্যক্তিগতভাবে ভালো করছে এবং দলকেও জয়ের পথে নিয়ে যাচ্ছে। আগের দিনগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে তারা হয়তো তখন নিয়মিত জিততে পারত না। এখন বাংলাদেশ দলে জেতার মানসিকতা দেখতে পাচ্ছি। বিশ্বকাপের আগে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিকেলে কাঁপালেন মোস্তাফিজ, রাতে সাকিব

ক্রীড়া ডেস্ক    
মোস্তাফিজুর রহমান, সাকিব আল হাসান দুজনেই দুর্দান্ত বোলিং করেছেন আজ। ছবি: ক্রিকইনফো
মোস্তাফিজুর রহমান, সাকিব আল হাসান দুজনেই দুর্দান্ত বোলিং করেছেন আজ। ছবি: ক্রিকইনফো

সংযুক্ত আরব আমিরাতে আজ বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের জয়জয়কার। বিকেলে আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে গালফ জায়ান্টসকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন বাংলাদেশের এই বাঁহাতি পেসার। আবুধাবি থেকে ১৩৯ কিলোমিটার দূরে দু্বাইয়ে রাতে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন সাকিব আল হাসান।

মোস্তাফিজ, সাকিব দুজনই এবারের আইএল টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো খেলছেন। সাকিব এই পর্যন্ত তিন ম্যাচ খেলেছেন। যার মধ্যে প্রথম দুই ম্যাচ ১০-এর বেশি ইকোনমিতে বোলিং করেছেন। মুক্ত হস্তে রান বিলিয়ে দিলেও পাননি কোনো উইকেট। তবে নামটা যে সাকিব আল হাসান, কখন যে ঘুরে দাঁড়াবেন সেটা আগে থেকে অনুমান করা কঠিন। দুবাইয়ে আজ ডেজার্ট ভাইপার্সের বিপক্ষে ৪ ওভারে ১৪ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট।

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমআই এমিরেটসের অধিনায়ক কাইরন পোলার্ড। সাকিব আজ পাওয়ারপ্লের (প্রথম ৬ ওভার) শেষ হওয়ার ঠিক পরের ওভারেই বোলিংয়ে এসেছেন। ইনিংসের সপ্তম ওভারের শেষ বলে ফখর জামানকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন সাকিব। ১৩ বলে ১৩ রান করে আউট হয়েছেন ফখর। এক ওভার পরে এসে সাকিব তুলে নিয়েছেন স্যাম কারানের উইকেট। নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে কারানকে কট এন্ড বোল্ড করেন সাকিব। বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডারকে দিয়ে ইনিংসের ১১তম ও ১৫তম ওভার করিয়ে নিয়েছেন পোলার্ড। ৪ ওভারে ১৪ রানে ২ উইকেট নেওয়া সাকিব আজ কোনো চার-ছক্কা হজম করেননি। এমনকি কোনো ওয়াইড, নো বলও দেননি।

সাকিবের দুর্দান্ত বোলিংয়ের রাতে ডেজার্ট ভাইপার্স ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১২৪ রান করেছে। ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৫ রান করে অপরাজিত থাকেন ড্যান লরেন্স। এমআই এমিরেটসের সাকিব, জহুর খান নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। একটি করে উইকেট পেয়েছেন মোহাম্মদ গজনফার ও আরব গুল। ভাইপার্সের ১৮ বলে ১৪ রান করা জেসন রায় হয়েছেন রানআউট।

বিকেলে গালফ জায়ান্টসের বিপক্ষে দুবাই ক্যাপিটালসের ৬ উইকেটের জয়ে মোস্তাফিজ হয়েছেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। ৩.৫ ওভারে ৩৪ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। এবারের আইএল টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচে ৮.২৯ ইকোনমিতে নিয়েছেন ১৪ উইকেট। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী বাংলাদেশের এই বাঁহাতি পেসার। ১৫ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী মোস্তাফিজের দুবাই ক্যাপিটালসের সতীর্থ ওয়াকার সালামখেইল। ৮ ম্যাচে ৭.৪৯ ইকোনমিতে সালামখেইল বোলিং করেছেন।

গালফ জায়ান্টসের বিপক্ষে ৬ উইকেটে জেতার পর দুবাই ক্যাপিটালসের পয়েন্ট এখন ৮। সমান ৮ পয়েন্ট এমআই এমিরেটসও। এই দলে খেলছেন বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তবে নেট রানরেটের কারণে এগিয়ে দুবাই ক্যাপিটালস। ‍+০.৮৩৬ নেট রানরেট নিয়ে দুইয়ে অবস্থান করছে মোস্তাফিজের দুবাই। তিন নম্বরে অবস্থান করা সাকিবের এমিরেটসের নেট রানরেট ‍+০.৩৪১।

দুবাই ক্যাপিটালস ও এমআই এমিরেটস আট ও সাত ম্যাচ খেলেছে এখন পর্যন্ত। চার ও পাঁচে থাকা গালফ জায়ান্টস, আবুধাবি নাইট রাইডার্স দুই দলেরই পয়েন্ট ৬। চার পয়েন্ট নিয়ে ছয় দলের মধ্যে ছয় নম্বরে অবস্থান করছে শারজা ওয়ারিয়র্স। এখন ভাইপার্সকে হারালে এমআই এমিরেটস দুই নম্বরে উঠে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতকে একা হাতে শেষ করে দেওয়া কে এই সামির মিনহাজ

ক্রীড়া ডেস্ক    
ভারতের বিপক্ষে ১৭২ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন সামির মিনহাস। ছবি: ক্রিকইনফো
ভারতের বিপক্ষে ১৭২ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন সামির মিনহাস। ছবি: ক্রিকইনফো

সামির মিনহাসের কাছে ১৬ রানে হেরেছে ভারত—ভক্ত-সমর্থকেরা চাইলে মজা করে এমনটা বলতেই পারেন। দুবাইয়ের আইসিসি একাডেমিতে পাকিস্তানের এই ক্রিকেটার করেছেন ১৭২ রান। তাঁর ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল ওয়ানডে নয়, ভারত-পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালটা হচ্ছে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে।

সামিরের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ভারতের বিপক্ষে ৩৪৭ রানের পাহাড় গড়ে পাকিস্তান। বরাবরের মতো ভারত-পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের এই ফাইনাল ম্যাচটাও হয়েছে একপেশে। শিরোপা নির্ধারণী ফাইনালে ভারত গুটিয়ে গেছে ১৫৬ রানে। পাকিস্তানের ১৯১ রানের বিশাল জয়ের পর একই সঙ্গে ম্যাচসেরা, সিরিজসেরার পুরস্কার পেয়েছেন সামির। ১১৩ বলে ১৭ চার ও ৯ ছক্কায় করেছেন ১৭২ রান। স্বাভাবিকভাবেই ১৯ বছর বয়সী মিনহাসকে নিয়ে অনেকের কৌতূহল জেগেছে। তিনি আসলে পাকিস্তান জাতীয় দলের ক্রিকেটার আরাফাত মিনহাসের ছোট ভাই।

আরাফাত মিনহাসের সঙ্গে সামিরের বয়সের ব্যবধান মাত্র ১ বছর। দুই বছর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া আরাফাত পাকিস্তানের জার্সিতে খেলেছেন চার টি-টোয়েন্টি। ৫.১৬ ইকোনমিতে নিয়েছেন ৪ উইকেট। সামিরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক না হলেও এই ১৯ বছর বয়সেই তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের নানা ধাপ অতিক্রম করে এই টপ অর্ডার ব্যাটার পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলে জায়গা করে নিয়েছেন। মুলতানের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৩ ক্রিকেট, দক্ষিণ পাঞ্জাব অনূর্ধ্ব-১৬ ও মুলতান অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে সামিরের।

দুবাইয়ের আইসিসি একাডেমিতে আজই যে ভারতের বিপক্ষে সামির ঝড় তুলেছেন তা নয়। এর আগে দুবাইয়ের দ্য সেভেন্স স্টেডিয়ামে মালয়েশিয়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে বিস্ফোরক সেঞ্চুরি করেছিলেন। ১২ ডিসেম্বর সেই ম্যাচে ১৪৮ বলে ১১ চার ও ৮ ছক্কায় ১৭৭ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন। ৫ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটিতে ৪৭১ রান করে ২০২৫ অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক তিনি। আজ ভারতের বিপক্ষে ফাইনালসেরা ও টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার পাওয়ার পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সামির বলেন, ‘দারুণ একটা ইনিংস ছিল। এমন বড় ইনিংস খেলার পরিকল্পনা ছিল। আমি আমার স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে চেয়েছি। এ ধরনের উইকেটে আগে ব্যাটিং করতে চেয়েছিলাম। এই ম্যাচটা (ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল) আমার জন্য বেশ স্মরণীয়।’

এ বছরের সেপ্টেম্বরে ভারতের কাছে হেরে এশিয়া কাপে রানার্সআপ হয়েছিল পাকিস্তান। জাতীয় দল রানার্সআপ হলেও বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে একের পর এক শিরোপা জিতেছে পাকিস্তান। নভেম্বরে হংকং সিক্সেস, রাইজিং স্টার্স এশিয়া কাপ—এই দুটি টুর্নামেন্ট জেতে পাকিস্তান। খাজা নাফে, আব্দুল সামাদ, আব্বাস আফ্রিদিরা হংকং সিক্সেসে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন। এই তিন ক্রিকেটারের মধ্যে একমাত্র খাজা নাফের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়নি। সবশেষ বিপিএলে চিটাগং কিংসের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে নজর কেড়েছেন তিনি।

কাতারে নভেম্বর রাইজিং স্টার্স টুর্নামেন্টে বাংলাদেশকে সুপার ওভারে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল পাকিস্তান। শিরোপা নির্ধারণী ফাইনালে মূল ম্যাচে সুফিয়ান মুকিম ও আরাফাত মিনহাস ৩ ও ২ উইকেট নিয়েছিলেন। মূল ম্যাচে ২ উইকেট নেওয়া আহমেদ দানিয়াল সুপার ওভারেও নিয়েছিলেন ২ উইকেট। ফাইনালসেরার পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন মাজ সাদাকাত। টি-টোয়েন্টিতে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে এরই মধ্যে লাইমলাইটে চলে এসেছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হঠাৎ ভাত থেকে স্যান্ডউইচে চলে গেলি, শামীমকে সাইফউদ্দিন

ক্রীড়া ডেস্ক    
শামীম হোসেন পাটোয়ারীর সঙ্গে মজা করেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ছবি: ফাইল ছবি
শামীম হোসেন পাটোয়ারীর সঙ্গে মজা করেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ছবি: ফাইল ছবি

১২তম বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) সামনে রেখে দলগুলো এরই মধ্যে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে। ছয় ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়ে সিলেটে এ সপ্তাহের শুক্রবার মাঠে গড়াচ্ছে বিপিএল। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, আকবর আলীরা অনুশীলনের ফাঁকে আড্ডাচ্ছলে মজাও করেছেন।

মিরপুরে আজ ঢাকা ক্যাপিটালস আনুষ্ঠানিকভাবে বিপিএলের প্রস্তুতি শুরু করেছে। অনুশীলনটা যেন একঘেঁষে না মনে হয়, সেজন্য একে অন্যের সঙ্গে মজা করে সময়টা প্রাণবন্ত করেছেন সাইফউদ্দিন-শামীমরা। নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে সাইফউদ্দিন আজ বাংলাদেশ সময় রাতে ১৫ সেকেণ্ডের একটি ভিডিও ছেড়েছেন। বাংলাদেশের এই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার ক্যাপশন দিয়েছেন, ‘শামীম এখন অন্য কিছু খায়’। ভিডিওতে সাইফউদ্দিনকে বলতে শোনা গেছে, ‘শামীম। হঠাৎ করে ভাত থেকে স্যান্ডউইচে চলে গেলি।’ শামীম এরপর তাদের হাতে থাকা স্যান্ডউইচ দেখিয়ে বলেছেন, ‘শুভেচ্ছাদূত।’ সাইফউদ্দিন জানতে চাইলেন, ‘কোনটা বেশি মজা?’ শামীম এরপর প্যাকেট দেখিয়ে বলে, ‘ইউরো।’ ইউরো মূলত সেই স্যান্ডউইচ কোম্পানির নাম।

ছয় দলের বিপিএল সামনে রেখে ঢাকা ক্যাপিটালস গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তুতি শুরু করেছে। অনুশীলনের সময়ই মিঠুনকে অধিনায়ক ঘোষণা করেছে ঢাকা। কেন মিঠুনকেই অধিনায়ক করল ঢাকা, তার ব্যাখ্যায় ফ্র্যাঞ্চাইজিটির প্রধান নির্বাহী আতিক ফাহাদ বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেক ক্রিকেটারই অধিনায়ক হওয়ার যোগ্য। আপনি হয়তো দেখেছেন আমাদের সাইফ, তাসকিন, ইমাদ ওয়াসিম আছে। আরও অনেকেই আছে। কাকে অধিনায়কত্ব দেব, সেটা ঠিক করতে আমাদের ম্যানেজমেন্ট, কোচিং প্যানেলেরও অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। শেষ বিপিএলে ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিল দলকে (চিটাগং কিংস) এবং আমাদেরও যেহেতু এবার শিরোপা জয়ের ইচ্ছা রয়েছে, আমরা কাপ নিয়ে যাব। সেই পরিকল্পনা থেকেই আমাদের কোচিং প্যানেল সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিঠুন ভাইকে দেওয়ার। আশা করি সে (মিঠুন) এ বছর ফাইনালে কাপসহ নিয়ে যাবে।’

এবারের বিপিএলে সর্বোচ্চ ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় নাঈম শেখকে কিনেছে চট্টগ্রাম রয়্যালস। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯২ লাখ টাকা দাম উঠেছে হৃদয়ের। তাঁকে কিনেছে রংপুর রাইডার্স। একই দল লিটনকে কিনেছে ৭০ লাখ টাকায়। তাসকিনকে সরাসরি চুক্তিতে নিয়েছে ঢাকা ক্যাপিটালস। এই বিপিএলেই প্রথমবারের মতো অংশ নিচ্ছে নোয়াখালী এক্সপ্রেস। তবে সর্বোচ্চ চারবারের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। নেই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালও। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালকেও দেখা যাবে না ২০২৬ বিপিএলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এবারও পাকিস্তানের বোর্ডপ্রধানকে বর্জন করলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা

ক্রীড়া ডেস্ক    
মহসিন নাকভির কাছ থেকে এবারও পদক গ্রহণ করেননি ভারতীয় ক্রিকেটাররা। ছবি: এসিসি
মহসিন নাকভির কাছ থেকে এবারও পদক গ্রহণ করেননি ভারতীয় ক্রিকেটাররা। ছবি: এসিসি

মাঠের লড়াইয়ে ভারত-পাকিস্তান এখন তেমন একটা জমে না। কিন্তু হাইভোল্টেজ বলেও যে একটা ব্যাপার আছে। মাঠের পারফরম্যান্সের চেয়ে অন্যান্য ঘটনায় বেশি আলোচনা ছড়ায় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। তিন মাস পর আজ দুবাইয়ের আইসিসি একাডেমিতে চিত্রনাট্য ভিন্ন হলেও ম্যাচ শেষে কাহিনিটা রয়ে গেছে একই।

দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে এ বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছিল ভারত। সেবার সূর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বাধীন ভারত এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) প্রধান মহসিন নাকভির কাছ থেকে শিরোপা নেয়নি। প্রায় তিন মাস পর আজ দুবাইয়ের আইসিসি একাডেমিতে ভারতকে ১৯১ রানে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছে পাকিস্তান। এসিসি প্রধান হিসেবে নাকভি বয়সভিত্তিক এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল দেখতে গেছেন। তিনি একই সঙ্গে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যানও। কিন্তু ম্যাচ শেষে পরাজিত ভারতকে রানার্সআপ পদক যখন দিতে যান নাকভি, ভারতীয় ক্রিকেটাররা তাঁর কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেননি।

নাকভি যে মঞ্চে আজ দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাঁর আশপাশেও যাননি ভারতীয় ক্রিকেটাররা। বৈভব সূর্যবংশী, আয়ুশ মাত্রে, কিষাণ সিংরা রানার্সআপ পদক নিয়েছেন মুবাশশির উসমানির কাছ থেকে। উসমানি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার (আইসিসি) সহযোগী সদস্য দেশগুলোর বোর্ড পরিচালক। একই সঙ্গে আমিরাত ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বেও আছেন তিনি। মঞ্চের ডান অংশে দাঁড়িয়ে উসমানির কাছ থেকে একে একে ভারতীয় ক্রিকেটাররা পদক গ্রহণ করেছেন। নাকভি এরপর চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান দলের সঙ্গে শিরোপা জয়ের উদযাপন করেছেন।

২৮ সেপ্টেম্বর নাকভির কাছ থেকে শিরোপা না নিয়ে উদযাপন করেছিল ভারত। শিরোপাছাড়া উদযাপন করে সূর্যকুমার, অভিষেক শর্মা, তিলক ভার্মারা ক্রিকেট ইতিহাসে বিরল ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন। এ বছরের এপ্রিলে পেহেলগামে বন্দুকধারীদের গুলিতে পর্যটক নিহতের ঘটনায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুই দেশ মে মাসে জড়িয়েছিল সামরিক সংঘাতেও। এশিয়া কাপ, নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ, রাইজিং স্টার্স এশিয়া কাপ, অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ—এ বছর এই চার টুর্নামেন্টের কোনোটিতেই টসের সময় করমর্দন করেননি ভারত-পাকিস্তানের অধিনায়কেরা।

অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা পাকিস্তান এর আগে একবারই জিতেছিল। ২০১২ সালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তান। ১৩ বছর পর এবার আর শিরোপা ভাগাভাগি করতে হয়নি ভারত-পাকিস্তানকে। দুবাইয়ে আইসিসি একাডেমি মাঠে ভারতকে ১৯১ রানে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের শিরোপা জিতল পাকিস্তান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত