Ajker Patrika

মুন্না ফিরলেন মোরসালিন হয়ে

কারিমুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ৪৭
ছবিতে মোরসালিন ও মুন্না। প্রায় দুই যুগের ব্যবধানে তাঁদের গোলেই ভারতের বিপক্ষে দুটি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সবশেষ দেশকে আনন্দে ভাসিয়েছেন মোরসালিন।
ছবিতে মোরসালিন ও মুন্না। প্রায় দুই যুগের ব্যবধানে তাঁদের গোলেই ভারতের বিপক্ষে দুটি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সবশেষ দেশকে আনন্দে ভাসিয়েছেন মোরসালিন।

অনেক আগেই ফুটবল ছেড়েছেন মতিউর মুন্না। বুট তুলে রেখে পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী বনে গেছেন। সাবেক এই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারকে দেশের ফুটবলের কোথাও পাওয়া যায় না এখন। সংবাদমাধ্যমের সামনেও হাজির হন না খুব একটা। কালেভদ্রে কোনো দরকারে দেশের ফুটবলের এক সময়কার তারকাকে পাওয়া যায় মুঠোফোনে। যাঁকে নিয়ে এত এত স্মৃতি, সোনালী সময় সেই মুন্না এখন ফুটবল অঙ্গনে অতীত, ফেলে আসা কোনো মুহূর্ত।

তরুণ প্রজন্মের বেশিরভাগই মুন্নাকে চেনেন না। না চেনাই তো স্বাভাবিক। মুন্না মাঠের খেলাকে বিদায় বলেছেন এক যুগ আগে। সবশেষ ২০১৩ সালে মোহামেডানের হয়ে ক্লাব ফুটবলে দেখা গেছে তাঁকে। এরপর থেকেই বেঁছে নিয়েছেন নতুন জীবন। দীর্ঘ সময় পর বাংলাদেশ ফুটবলের এক সময়কার পরিচিত মুখ সেই মুন্নাকে স্মরণ করালেন শেখ মোরসালিন। যেন মুন্না ফিরলেন এই তরুণ ফুটবলারের মাঝেই। তাও এমন এক দিনে, যেদিন ভারতের বিপক্ষে ফুরিয়েছে প্রায় দুই যুগের জয়ের অপেক্ষা।

এর আগে সবশেষ ২০০৩ সালে ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সে বছরের ১৮ জানুয়ারির কথা। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে গোল্ডেন গোলে শেষ হাসি হেসেছিল স্বাগতিকরা। নির্ধারিত সময় শেষে ১-১ সমতায় ছিল দুই দল। অতিরিক্ত সময়ের ৯৮ মিনিটে বাঁ পায়ের গতিময় শটে ২৫ গজ দূর থেকে ভারতের জাল কাঁপান মুন্না। এর আগে-পরে গোল্ডেন গোল থেকে আর কোনো ম্যাচ জেতেনি বাংলাদেশ।

সেই জয়ের পর কেটে গেছে ২৩ বছর। কোনোভাবেই যেন ভারতকে হারানো যাচ্ছিল না। ২০১৯ সালে একবার জয়ের খুব কাছ থেকে ঘুরে এসেছে বাংলাদেশ। সে বছরের অক্টোবরে কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে ৮৮ মিনিটে হেডে ভারতের জালে বল পাঠান ডিফেন্ডার সাদ উদ্দীন। এরপরও জেতা হয়নি সফরকারীদের। শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে ড্র নিয়ে ফেরে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে জয়ের অপেক্ষা এবার আর বাড়তে দিলেন না মোরসালিন। এএফসি এশিয়ান কাপ বাচাইপর্বের ম্যাচে তাঁর গোলে ভারতকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। গোলের পর গোটা দেশ এবং গ্যালারিকে আনন্দে ভাসিয়ে মোরসালিন বোঝালেন–এই জয় কতটা দরকার ছিল বাংলাদেশের জন্য।

গোলের পর সতীর্থদের সঙ্গে মোরসালিনের উদযাপন। শেষ পর্যন্ত তাঁর গোলেই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ।
গোলের পর সতীর্থদের সঙ্গে মোরসালিনের উদযাপন। শেষ পর্যন্ত তাঁর গোলেই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ।

চতুর্থ রাউন্ড শেষেই এএফসি এশিয়ান কাপের মূল পর্বে উঠার স্বপ্ন শেষ হয়েছে বাংলাদেশের। তাই আক্ষরিক অর্থেই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা ছিল কেবলমাত্র নিয়মরক্ষার। পয়েন্ট টেবিলে কোনো কাজে না আসলেও ম্যাচটা মোটেও হালকাভাবে নেয়নি বাংলাদেশ। জিততে মরিয়া ছিল জামাল ভূঁইয়ার দল। অন্তত ফুটবলারদের নিবেদন এবং একাগ্রতা সেটাই প্রমাণ করেছে। পরিকল্পনা মেনে ম্যাচের আগে টানা কয়েকদিন ঘাম ঝরিয়েছে গোটা দল। প্রতিপক্ষ ভারত বলে কথা। ভক্তরাও তাই খুব আগ্রহ নিয়ে একটি জয়ের অপেক্ষায় ছিলেন। প্রতিবেশীদের বিপক্ষে ম্যাচ ঘিরে কতটা উন্মাদনা জন্ম নিয়েছিল সেটার বড় প্রমাণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। টানা কয়েকদিনের আলোচনা আর অপেক্ষার পর গতকাল বুকভরা আশা এবং জয়ের স্বপ্ন নিয়ে মাঠে এসেছিলেন সবাই।

ম্যাচজুড়ে এভাবেই মেতেছিলেন ভক্তরা। মোরসালিনের গোলের পর গ্যালারিতে গলা ফাটিয়েছেন সবাই। এই উদযাপন ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। দীর্ঘ ২৩ বছর পর ভারতের বিপক্ষে জয় বলে কথা।
ম্যাচজুড়ে এভাবেই মেতেছিলেন ভক্তরা। মোরসালিনের গোলের পর গ্যালারিতে গলা ফাটিয়েছেন সবাই। এই উদযাপন ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। দীর্ঘ ২৩ বছর পর ভারতের বিপক্ষে জয় বলে কথা।

২০০৩ সালের ম্যাচটা ছিল সেমিফাইনাল। জিতলেই ফাইনালের হাতছানি। কিন্তু এএফসি বাছাইপর্ব থেকে বাদ পড়ার পরও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি যেন পরম আরাধ্য ছিল বাংলাদেশের জন্য। অন্তত দর্শকদের আগ্রহ দেখে এটা বলতেই হয়। তা নাহলে কী আর বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের টিকিট শেষ হয় মাত্র চার মিনিটে! হ্যাঁ, চার মিনিটেই শেষ হয়েছিল ম্যাচটির টিকিট। দর্শকদের টিকিট কেনার প্রতিটি পয়সা উসুল করেছেন মোরসালিন, রাকিব, হামজারা; রুদ্ধশ্বাস এক জয় উপহার দিয়ে।

হোম অফ ফুটবল খ্যাত জাতীয় স্টেডিয়ামে ভক্তদের বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। কিক অফের ১১ মিনিটে মাথায় এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। মোরসালিনের পাস পেয়ে বাঁ প্রান্ত দিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে ছুটতে থাকেন রাকিব হোসেন। এরপর ডি বক্সে মোরসালিনকে লক্ষ্য করে বল বাড়ান তিনি। গুরপ্রীত সিং সান্ধুর বাধা পেরিয়ে প্রথম ছোঁয়ার দক্ষতার সঙ্গে ঠিকানা খুঁজে নেন মোরসালিন। সঙ্গে সঙ্গেই গগনবিদারী চিৎকারে ফেটে পড়ে গোটা জাতীয় স্টেডিয়াম। বাজ পড়ার ন্যয় এই চিৎকার যেন জয়ের বার্তাই দিচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত হয়েছেও তাই। বাকি সময় আর গোলটার শোধ দিতে পারেনি ভারত। শেষ বাঁশি বাজতেই শুরু হয় জয়োৎসব। আকাশে-বাতাসে তখন কেবল বাংলাদেশের জয়ধ্বনি। এই জয় ১৮ কোটি প্রাণে স্পন্দন জাগিয়েছে, সবাইকে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে–সমর্থন করলে বাংলাদেশ ফুটবল হতাশ করবে না।

২৩ বছর পর ভারতের বিপক্ষে জয়সূচক গোল করায় দেশের ফুটবলে চলছে মোরসালিন বন্দনা। বাংলাদেশের জার্সিতে এর আগের ২০ ম্যাচে ৬ বার জাল বল জড়ান এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। কিন্তু এবারের গোলটা নিঃসন্দেহে তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা গোলগুলোর মধ্যে শীর্ষেই থাকবে। মোরসালিন করে দেখালেন তেমন কিছুই, ২০০৩ সালে গোল্ডেন গোলে যেটা করে দেখিয়েছিলেন মুন্না। মাঝখানের প্রায় দুই যুগ অতীত হলেও দুটি গোলেই মিশে রইল বাংলাদেশের বীরত্বগাঁথা, ফুটবলের প্রতি ভক্তদের ভালোবাসার এক অকৃত্রিম নিদর্শন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ