Ajker Patrika

মহাকাশের যে কোনো প্রান্তে যোগাযোগ হবে মুহূর্তে, ইন্টারনেটেই সম্ভব হলো টেলিপোর্টেশন

আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫: ২৫
গবেষণাটি কোয়ান্টাম যোগাযোগের পরবর্তী স্তরে যাওয়ার একটি দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। ছবি: সাইটেকডেইলি
গবেষণাটি কোয়ান্টাম যোগাযোগের পরবর্তী স্তরে যাওয়ার একটি দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। ছবি: সাইটেকডেইলি

আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথের নিকটবর্তী নক্ষত্রমণ্ডল হলো ‘আলফা সেনটাওরি’। তবুও এটি আকাশগঙ্গা থেকে ৪ আলোকবর্ষ দূরে। অর্থাৎ, সেকেন্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল বেড়ে ছুটে চলা আলোককণারও এই তারকামণ্ডলীতে পৌঁছাতে ৪ বছর লাগবে। তার মানে পৃথিবী থেকে ‘আলফা সেনটাওরি’তে কোনো তথ্য পাঠাতে কমপক্ষে চার বছর সময় লাগবে। যেখানে আলোককণার গতিই সর্বোচ্চ ধরা হয়। আর আধুনিক ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের লেগে যাবে হাজার কোটি বছর।

কিন্তু এই কাজটি করা সম্ভব নিমেষে! যে কৌশলে এটি করা সম্ভব সেটিই হলো কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন। কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার সবচেয়ে আকর্ষণীয় তত্ত্ব এটি। যেটি আইনস্টাইনও বিশ্বাস করতে পারেননি। যদিও এরই মধ্যে একাধিক গবেষণায় এটির সম্ভাব্যতা প্রমাণিত হয়েছে।

সর্বশেষ প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্ভব হলো কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন। একটি আলোক কণার (ফোটন) কোয়ান্টাম দশাকে সফলভাবে ৩০ কিলোমিটার (প্রায় ১৮ মাইল) ফাইবার অপটিক কেবলে স্থানান্তর করা হয়েছে। এমনকি ইন্টারনেটে প্রচুর ডেটা ট্র্যাফিকের মধ্যেই এটি সম্ভব হয়েছে। এটি এমন একটি বড় সাফল্য, যা একসময় পুরোপুরি অসম্ভব মনে করা হতো। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা এই চমকপ্রদ বিষয়টি করে দেখিয়েছে। কোয়ান্টাম প্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগকে আরও একধাপ এগিয়ে নিল এই গবেষণা। এটি ভবিষ্যতে আমাদের যোগাযোগ এবং তথ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটাতে পারে।

যদিও এই সাফল্য আপাতত সাধারণ কাজের জন্য স্টার ট্রেক টিভি সিরিজের মতো আস্ত বস্তু বা মানুষকে টেলিপোর্টেশনে সহায়তা করবে না। তবে বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবহার করেই একটি কোয়ান্টাম দশাকে টেলিপোর্ট (স্থানান্তর) করার সফলতা অর্জন বিজ্ঞানের জন্য একটি বিরাট পদক্ষেপ। এটি কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নেটওয়ার্ক, উন্নত এনক্রিপশন বা শক্তিশালী নতুন সেন্সিং পদ্ধতির দিকে যেতে সহায়ক হতে পারে।

গবেষণা দলের নেতৃত্বে থাকা নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটিং প্রকৌশলী প্রম কুমার বলেন, ‘এটি অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ, কারণ কেউই ভাবেনি যে এটি সম্ভব হবে। পরবর্তী প্রজন্মের কোয়ান্টাম ও প্রচলিত নেটওয়ার্কগুলোকে একটি একক ফাইবার অপটিক অবকাঠামোর মাধ্যমে সমন্বিত করার পথ দেখাচ্ছে আমাদের গবেষণা। এটি কোয়ান্টাম যোগাযোগের পরবর্তী স্তরে যাওয়ার একটি দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।’

কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন বেশ কিছুটা স্টার ট্রেকে দেখানো টানেল সিস্টেমের মতো, যেখানে মহাকাশচারীরা মুহূর্তেই অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হন। টেলিপোর্টেশনের মাধ্যমে একটি বস্তু বা কোয়ান্টাম দশা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা যায়। কৌশলটি হলো, নির্দিষ্ট স্থানে থাকা বস্তুর সম্ভাব্য কোয়ান্টাম দশা শনাক্ত এবং সেটিকে সুকৌশলে ধ্বংস করার মাধ্যমে অন্য কাঙ্ক্ষিত স্থানে একই বস্তুর কোয়ান্টাম দশার একই সম্ভাবনা তৈরির মাধ্যমে স্থানান্তর করা।

যদিও দুটি বস্তুর পরিমাপ কৌশল একযোগে এদের ভাগ্য চূড়ান্ত করে, এরপরও উভয়ের কোয়ান্টাম পরিচয়কে বিজড়নের জন্য (কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেন্ট) একটি একক তথ্যের তরঙ্গ পাঠাতে হয়।

কণার কোয়ান্টাম দশাগুলো সাধারণত অত্যন্ত অস্থিতিশীল হয় এবং সৃষ্টির কিছুক্ষণের মধ্যে বাস্তবতার মধ্যে এটি ধ্বংস হয়ে যায়। তবে ফোটনের কোয়ান্টাম দশা ইন্টারনেটের প্রচলিত ট্রাফিকের মধ্যে পাঠানো—বিশেষ করে যখন তা রক্ষা করা কঠিন—একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।

কোয়ান্টাম দশাগুলো কম্পিউটারে সুরক্ষিত রাখা এক বিষয়, আর যেই অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ব্যাংক লেনদেন, ভিডিও দেখা বা টেক্সট মেসেজের মতো প্রচুর ডেটা স্থানান্তর চলছে, সেখানে ফোটনকে অক্ষত অবস্থায় পাঠানো আলাদা বিষয়। কারণ সেই অপটিক্যাল ফাইবারে ফোটনের কোয়ান্টাম দশাটিকে সুরক্ষিত রাখা অনেক বেশ চ্যালেঞ্জিং।

প্রতি সেকেন্ডে ৪০০ গিগাবিট ইন্টারনেট ট্রাফিকের প্রবাহ হয়, সেখানে একক ফোটনের কোয়ান্টাম দশা রক্ষা করতে বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করেছে গবেষক দলটি। ফোটনের কোয়ান্টাম দশা খুবই সংবেদনশীল। যদি ফোটন প্রচুর ডেটা ট্রাফিকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তখন এটি তার কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলতে পারে। তাই বিশেষ কৌশল ব্যবহার করে ফোটনের পথ বা চ্যানেলকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন গবেষকেরা। এই কৌশল ফোটনের চ্যানেলকে সীমিত করে এবং এটি অন্য তরঙ্গগুলোর সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ও মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

প্রম কুমার বলেন, ‘আলো কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে তা আমরা অত্যন্ত সতর্কভাবে অধ্যয়ন করেছি এবং ফোটন কণাগুলো এমন একটি সঠিক জায়গায় রেখেছি, যেখানে ওই ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়া কমিয়ে আনা সম্ভব। ক্ল্যাসিক্যাল চ্যানেলগুলোর সঙ্গে একযোগে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও এর মাধ্যমে কোয়ান্টাম যোগাযোগ সফলভাবে সম্পাদন করতে পেরেছি।

এর আগে ইন্টারনেটের সিমুলেশনগুলোতে কোয়ান্টাম তথ্য প্রচলিত ডেটা স্ট্রিমের সঙ্গে সফলভাবে পাঠাতে পেরেছে অন্য গবেষণা দলগুলো। তবে কুমারের দলই প্রথমবারের মতো একটি প্রকৃত ইন্টারনেট স্ট্রিমের পাশাপাশি কোয়ান্টাম অবস্থার টেলিপোর্টেশন করতে পেরেছে।

প্রত্যেকটি পরীক্ষা আরও নিশ্চিত করছে যে, কোয়ান্টাম ইন্টারনেট খুব শিগগিরই বাস্তবে পাওয়া যাবে। এটি কম্পিউটিং প্রকৌশলীদের জন্য একটি নতুন ধরনের টুল সরবরাহ করবে, যার মাধ্যমে তাঁরা পৃথিবীকে আরও ভালোভাবে পরিমাপ করতে, পর্যবেক্ষণ করতে, সুরক্ষিত করতে এবং গণনা করতে পারবেন। আর এ জন্য নতুন ইন্টারনেট প্রযুক্তির প্রয়োজন হবে না।

গবেষক প্রম কুমার বলেন, ‘কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন ভৌগোলিকভাবে দূরবর্তী নোডগুলোর মাধ্যমে নিরাপদভাবে কোয়ান্টাম সংযোগ দেওয়ার সক্ষমতা রাখে।

কিন্তু অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে ধারণা করেছেন যে, কেউই আলোক কণা স্থানান্তরের জন্য বিশেষ অবকাঠামো তৈরি করবে না। তবে যদি আমরা সঠিক তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেছে নিই, তাহলে আমাদের নতুন কোনো অবকাঠামো তৈরি করতে হবে না। প্রচলিত যোগাযোগ এবং কোয়ান্টাম যোগাযোগ একসঙ্গে কাজ করতে পারে।’

এই গবেষণা প্রতিবেদনটি অপটিকা জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

তথ্যসূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কক্ষপথে স্যাটেলাইট সংঘর্ষের ঝুঁকি নিয়ে বিজ্ঞানীদের ‘ক্র্যাশ ক্লক’ সতর্কতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: নিও সায়েন্টিস্ট
ছবি: নিও সায়েন্টিস্ট

কোনো বড় ধরনের সৌরঝড় বা প্রযুক্তিগত বিপর্যয়ের কারণে যদি পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলো হঠাৎ নিজেদের গতিপথ পরিবর্তনের সক্ষমতা হারায়, তবে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এক গবেষণা বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সব স্যাটেলাইট একযোগে অচল হয়ে পড়লে প্রথম সংঘর্ষ ঘটতে সময় লাগবে গড়ে মাত্র ২.৮ দিন।

গত সাত বছরে পৃথিবীর কক্ষপথে স্যাটেলাইটের সংখ্যা তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০১৮ সালে যেখানে প্রায় ৪ হাজার স্যাটেলাইট ছিল, এখন সেই সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজারে পৌঁছেছে। এই বিস্ফোরণধর্মী বৃদ্ধির পেছনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে স্পেসএক্সের স্টারলিংক প্রকল্প। নিম্ন-পৃথিবী কক্ষপথে (৩৪০ থেকে ৫৫০ কিলোমিটার উচ্চতায়) বর্তমানে স্টারলিংকের স্যাটেলাইটই রয়েছে ৯ হাজারের বেশি।

কক্ষপথে এত বেশি স্যাটেলাইট থাকার কারণে নিয়মিত সংঘর্ষ এড়াতে ‘কলিশন অ্যাভয়ডেন্স ম্যানুভার’ বা গতিপথ পরিবর্তনের কৌশল নিতে হয়। স্পেসএক্স জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ৩১ মে পর্যন্ত মাত্র ছয় মাসে তারা ১ লাখ ৪৪ হাজারেরও বেশি সংঘর্ষ এড়ানোর কৌশল প্রয়োগ করেছে।

গত মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে নিও সায়েন্টিস্ট জানিয়েছে, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সারা থিয়েল ও তাঁর সহকর্মীরা স্যাটেলাইটের অবস্থানসংক্রান্ত উন্মুক্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে সংঘর্ষ ঝুঁকি পরিমাপের জন্য নতুন একটি সূচক তৈরি করেছেন। এই সূচকের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্র্যাশ ক্লক’।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালে যদি সব স্যাটেলাইট হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারাত, তবে প্রথম সংঘর্ষ হতে সময় লাগত প্রায় ১২১ দিন। কিন্তু বর্তমানে সেই সময় নেমে এসেছে মাত্র ২.৮ দিনে। এই তথ্য বিজ্ঞানীদেরও বিস্মিত করেছে।

সব স্যাটেলাইট একসঙ্গে অচল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম হলেও ২০২৪ সালের মে মাসে শক্তিশালী সৌরঝড়ে স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলোতে অস্বাভাবিক ঢেউয়ের মতো প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল। ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী সৌরঝড় হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন—আগামী বছরগুলোতে স্পেসএক্স, অ্যামাজন ও চীনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আরও হাজার হাজার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছে। ফলে কক্ষপথে ভিড় আরও বাড়বে, আর ‘ক্র্যাশ ক্লক’-এর সময়সীমা আরও এগিয়ে আসবে। এই পরিস্থিতি মহাকাশ ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজনীয়তা সামনে আনছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইতালির পার্কে মিলল ২১ কোটি বছর আগের হাজার হাজার ডাইনোসরের পায়ের ছাপ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৫
একটি খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে কয়েক শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই পায়ের ছাপগুলো এক আলোকচিত্রীর চোখে ধরা পড়ে। ছবি: বিবিসি
একটি খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে কয়েক শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই পায়ের ছাপগুলো এক আলোকচিত্রীর চোখে ধরা পড়ে। ছবি: বিবিসি

উত্তর ইতালির একটি ন্যাশনাল পার্কে ২১ কোটি বছর আগের ডাইনোসরের পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। তাও আবার একটি-দুটি নয়, হাজার হাজার। এই পায়ের ছাপগুলোর কয়েকটির ব্যাস ১৫ ইঞ্চি পর্যন্ত। আর এগুলো সমান্তরাল সারিতে সাজানো। এসবের মধ্যে অনেকগুলোতে আঙুল ও নখের ছাপ স্পষ্ট বোঝা গেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানা গেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এই ডাইনোসরগুলো ছিল ‘প্রোসাওরোপড’ (prosauropod) প্রজাতির। এ প্রজাতির ডাইনোসরের গলা লম্বা ও মাথা ছোট এবং ধারালো নখবিশিষ্ট তৃণভোজী প্রাণী ছিল।

মিলানভিত্তিক জীবাশ্মবিদ ক্রিস্টিয়ানো ডাল সাসো বলেন, ‘কখনো কল্পনাও করিনি, আমি যে অঞ্চলে বাস করি, সেখানেই এমন এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের দেখা পাব।’

গত সেপ্টেম্বরে মিলানের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত স্টেলভিও ন্যাশনাল পার্কের একটি খাঁড়া পাহাড়ের গায়ে কয়েক শ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই পায়ের ছাপগুলো একজন আলোকচিত্রীর চোখে ধরা পড়ে।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০ থেকে ২৫ কোটি বছর আগে ট্রায়াসিক যুগে এই পাহাড়ের অংশটি ছিল একটি সমুদ্র তীরবর্তী সমতল ভূমি, যা পরে আল্পাইন পর্বতমালায় রূপান্তরিত হয়।

ডাল সাসো আরও বলেন, এই জায়গা ডাইনোসরে পরিপূর্ণ ছিল; এটি একটি বিশাল বৈজ্ঞানিক সম্পদ।

ডাল সাসো আরও যোগ করেন, ডাইনোসরের দলগুলো সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল করত এবং সেখানে আরও কিছু চিহ্ন পাওয়া গেছে, যেগুলো থেকে মনে হয়, পশুরা আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে দলবদ্ধ হয়ে বৃত্তাকারে অবস্থান নিত।

আবিষ্কারকেরা বলছেন, প্রোসাওরোপডগুলো ১০ মিটার বা ৩৩ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারত। তারা সাধারণত দুই পায়ে হাঁটত, তবে কিছু ক্ষেত্রে পায়ের ছাপের সামনে হাতের ছাপও পাওয়া গেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, তারা সম্ভবত মাঝেমধ্যে থেমে বিশ্রাম নেওয়ার সময় তাদের সামনের পা মাটিতে রাখত।

আলোকচিত্রী এলিয়ো ডেলা ফেরেরা এই স্থান আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই আবিষ্কার আমাদের সবার মধ্যে ভাবনার খোরাক জোগাবে এবং আমরা যেখানে বাস করি, আমাদের ঘর, আমাদের পৃথিবী, এই জায়গাগুলো সম্পর্কে আমরা কতটা কম জানি, তা বোঝায়।’

ইতালির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, এলাকাটি অত্যন্ত দুর্গম এবং যাতায়াতের কোনো পথ নেই। তাই গবেষণার কাজে ড্রোনের পাশাপাশি রিমোট সেন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

উল্লেখ্য, আগামী বছর ইতালিতে শীতকালীন অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর ডাইনোসরের পায়ের ছাপ পাওয়া স্টেলভিও ন্যাশনাল পার্কটি সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ইতালির সীমান্তবর্তী ফ্রায়েল উপত্যকায় অবস্থিত। মন্ত্রণালয় জানায়, এটি যেন অনেকটা এমন যে, স্বয়ং ইতিহাসই বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ক্রীড়া ইভেন্টকে শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছে; প্রকৃতি ও ক্রীড়ার মধ্যে এক প্রতীকী সেতুবন্ধনের মাধ্যমে অতীত ও বর্তমানকে এক সুতায় গেঁথেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জোট বেঁধে শিকার ধরতে ছুটছে কিলার হোয়েল ও ডলফিন, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪০
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূলে কিলার হোয়েল নামে পরিচিত অরকা ও হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন। ছবি: ইউবিসি
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূলে কিলার হোয়েল নামে পরিচিত অরকা ও হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন। ছবি: ইউবিসি

ব্রিটিশ কলম্বিয়ার উপকূলে একদিন। স্যামন মাছের ঝাঁক পড়িমড়ি করে ছুটতে দেখা গেল। তাদের পিছেই চোখে পড়ল কিলার হোয়েল নামে পরিচিত অরকা ও হোয়াইট–সাইডেড ডলফিনের দলকে। তাও আবার একসঙ্গে! এই দুই শিকারী প্রাণীকে জোটবেঁধে স্যামন শিকারে ছুটতে দেখে যারপরনাই বিস্মিত বিজ্ঞানীরা। শিকার একই হওয়ায় দুই শিকারী জোট বেঁধেছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

এ নিয়ে একটি গবেষণাও প্রকাশিত হয়েছে। সায়েন্টিফিক রিপোর্টস সাময়িকীতে প্রকাশিত ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, এই দুই শিকারি প্রাণীর মধ্যে হয়তো একটি সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

গবেষকেরা বলছেন, ‘কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া উপকূলে প্যাসিফিক হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন ও নর্দার্ন রেসিডেন্ট কিলার হোয়েলের মধ্যে এ ধরনের একটি রহস্যজনক সম্পর্ক দেখা যায়, যেখানে এই দুই সিটাসিয়ান প্রজাতিকে প্রায়ই একে অপরের কয়েক মিটারের মধ্যেই দেখা যায়।’

ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লাইবনিজ ইনস্টিটিউট ও হাকাই ইনস্টিটিউটের সঙ্গে কাজ করা বিজ্ঞানীরা ড্রোন ভিডিও ও শব্দগত রেকর্ডিং সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে জানান, এই প্রথম অরকা ও ডলফিনের এভাবে খাদ্য চাহিদা পূরণে যৌথভাবে কাজ করতে দেখা গেল।

গবেষণার প্রধান লেখক সারা ফরচুন দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘স্যামন শিকারের পারদর্শিতায় শীর্ষস্থানে রয়েছে এই তিমিগুলো। তারা অত্যন্ত দক্ষ ও বিশেষায়িত শিকারি। মনে হচ্ছিল ডলফিনগুলো তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে। অরকাদের এভাবে ডলফিনের অনুসরণ করতে দেখা ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত আর ভীষণ রোমাঞ্চকর।’

দুই শিকারির মধ্যে সদ্য গড়ে ওঠা এই সম্পর্কের কারণ নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন। একটি সম্ভাবনা হলো ক্লেপ্টোপ্যারাসিটিজম, যেখানে ডলফিনেরা অরকার শিকার ছিনিয়ে নিতে পারে।

আরেকটি ব্যাখ্যা হতে পারে, ডলফিনেরা স্তন্যপায়ীভোজী ট্রানসিয়েন্ট কিলার হোয়েল এবং কিছুটা কম মাত্রায় বড় হাঙরের হাত থেকে সুরক্ষা পেতে এই সম্পর্ক গড়ে তুলছে।

তবে সারা ফরচুনের মতে, যদি ডলফিনেরা পরজীবীর মতো আচরণ করত, তাহলে সদ্য ধরা শিকার নিয়ে সাধারণত অত্যন্ত রক্ষণশীল কিলার হোয়েলেরা এতটা শান্ত থাকত না, যেমনটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে। এতে গবেষকদের সামনে সবচেয়ে জোরালো ব্যাখ্যাটি উঠে এসেছে, এই দুই শিকারি আসলে পরস্পরকে সহযোগিতা করছে।

সারা ফরচুন আরও বলেন, ‘অরকাগুলো নিজেদের অবস্থান এমনভাবে নিচ্ছিল, যেন তারা ডলফিনদের অনুসরণ করছে। ফলে ডলফিনদেরই নেতৃত্বের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছিল। বিষয়টি আমাদের আরও গভীরভাবে তথ্য বিশ্লেষণ করতে এবং আসলে কী ঘটছে তা বোঝার চেষ্টা করতে আগ্রহী করে তোলে।’

এই সহযোগিতা নিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে, কারণ নর্দার্ন রেসিডেন্ট অরকারা মূলত স্যামন শিকারে বিশেষজ্ঞ আর হোয়াইট–সাইডেড ডলফিন সাধারণত হেরিং ও অ্যাঙ্কোভির মতো ছোট মাছ খেয়ে থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফ্রান্সে সমুদ্রতলে কিংবদন্তির শহর, ৭০০০ বছর আগের বিশাল প্রাচীরের সন্ধান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সমুদ্রতলে ৭ হাজার বছর ধরে টিকে আছে এক বিশাল পাথুরে দেয়াল। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সমুদ্রতলে ৭ হাজার বছর ধরে টিকে আছে এক বিশাল পাথুরে দেয়াল। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ফ্রান্সের ব্রিতানি উপকূলের কাছে সমুদ্রের গভীরে এক বিশাল পাথরের প্রাচীরের সন্ধান মিলেছে। এই প্রাচীন প্রায় ৭ হাজার বছর আগে—অর্থাৎ ৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে নির্মিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফরাসি সামুদ্রিক প্রত্নতাত্ত্বিকেরা ধারণা করছেন, সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধির কারণে যে প্রস্তর যুগের সমাজ এই এলাকা থেকে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল, এই আবিষ্কার হয়তো সেই সমাজেরই প্রতিনিধিত্ব করছে। সেখানে তলিয়ে যাওয়া শহরের প্রচলিত কিংবদন্তির নিদর্শনও হতে পারে এই প্রাচীর।

১২০ মিটার দীর্ঘ এই প্রাচীর ফ্রান্সের জলসীমায় পাওয়া সমুদ্রতলের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো। প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনুমান, এটি হয়তো মাছ ধরার জন্য এক ধরনের ফাঁদ হিসেবে ব্যবহৃত হতো, অথবা সমুদ্রের ক্রমবর্ধমান জলস্তর থেকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য বাঁধ হিসেবে নির্মিত হয়েছিল।

প্রাচীরটি ব্রিতানির পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত ইলে দে সঁ-এর উপকূলে আবিষ্কৃত হয়েছে। সমুদ্র সৈকতে জোয়ারের চিহ্ন এখনো বহন করছে এই প্রাচীর। বর্তমানে প্রাচীরটি প্রায় নয় মিটার গভীরে ডুবে আছে। দ্বীপটি আগের আকারের তুলনায় অনেকটাই ছোট হয়ে গেছে, সমুদ্রের পানিস্তর বৃদ্ধির এটি বড় প্রমাণ।

প্রাচীরটির গড় প্রস্থ প্রায় ২০ মিটার এবং উচ্চতা দুই মিটার। নিয়মিত ব্যবধানে ডুবুরিরা এর মধ্যে বড় গ্রানাইট পাথর বা মনোলিথ-এর অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। এগুলো দুটি সমান্তরাল রেখায় প্রাচীরের ওপরে উঁচু হয়ে আছে। মনে করা হচ্ছে, এই মনোলিথগুলোই প্রাচীরের মূল ভিত্তি হিসেবে শিলাস্তরের ওপর স্থাপন করা হয়েছিল এবং পরবর্তীতে স্ল্যাব ও ছোট পাথর দিয়ে তাদের ঘিরে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। যদি মাছ ধরার ফাঁদ হিসেবে ব্যবহারের অনুমানটি সঠিক হয়, তাহলে বলা যায়, মনোলিথগুলোতে জোয়ারের পানি নেমে যাওয়ার সময় মাছ ধরার জাল বেঁধে রাখা হতো।

প্রাচীরটির মোট ভর প্রায় ৩ হাজার ৩০০ টন। প্রত্নতাত্ত্বিক ইভান পাইয়ার বলেন, এই বিশাল নির্মাণ একটি সুসংগঠিত সমাজের কাজ হতে পারে। মূলত শিকারি-সংগ্রাহক (হান্টার গ্যাদারার) জনগোষ্ঠী এটি নির্মাণ করেছে, যারা সম্পদের প্রাচুর্য থাকায় স্থিতিশীল জীবনযাপন শুরু করেছিল। অথবা, এটি ছিল ৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই অঞ্চলে আসা নব্যপ্রস্তর যুগের জনগোষ্ঠীর নির্মাণ।

পাইয়ারের মতে, মনোলিথগুলো নব্যপ্রস্তর যুগের বিখ্যাত মেনহিরগুলোর চেয়েও প্রাচীন। ফলে এটি পাথর উত্তোলন, কাটা এবং পরিবহনের জ্ঞান তৎকালীন শিকারি-সংগ্রাহক সমাজ থেকে পরবর্তী নব্যপ্রস্তর যুগের কৃষকদের কাছে স্থানান্তরিত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব নটিক্যাল আর্কিওলজিতে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, এই আবিষ্কার স্থানীয় ব্রেটোন কিংবদন্তিগুলোর উৎস হতে পারে। যেমন, ব্রিতানির উপকূলে অবস্থিত বে অব দোয়ারনেনেজ-এর আশপাশে ডুবে যাওয়া শহর ইশ (Ys)-এর কিংবদন্তি। গবেষকদের মতে, একটি অত্যন্ত সুসংগঠিত সমাজ দ্বারা গঠিত অঞ্চলের বিলুপ্তি মানুষের স্মৃতিতে গভীরভাবে প্রোথিত হয়েছে। সমুদ্রের জলস্তর দ্রুত বৃদ্ধির ফলে মাছ ধরার কাঠামো, প্রতিরক্ষামূলক কাজ এবং বাস্তুচ্যুতির ঘটনাগুলো সম্ভবত স্থানীয় মানুষের মনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলেছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত