Ajker Patrika

কমিশনে বিএনপির মত: নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রবর্তন ক্যু বলে গণ্য হবে

তানিম আহমেদ, ঢাকা 
আপডেট : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ২৬
কমিশনে বিএনপির মত: নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রবর্তন ক্যু বলে গণ্য হবে

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানের অধীনে গঠিত হয়েছে। সংবিধানের অধীনে গঠিত কোনো সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে বিদ্যমান সংবিধানের স্থলে নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করলে সেটি বিপ্লব নয়; বরং ‘ক্যু’ হিসেবে গণ্য হবে বলে জানিয়ে দিল বিএনপি। দলটি বলেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনো দল বা গোষ্ঠী এরূপ অসম্মানজনক পথে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করলে, সেটি হবে জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে পাঠানো তিন পৃষ্ঠার মতামতে এসব কথা বলেছে বিএনপি। এতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের তিনটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশও করেছে দলটি।

বিএনপি তাদের মতামতে বলেছে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন করার বিপজ্জনক চেষ্টা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাস্তবসম্মত নয়। দলটি সংবিধান সংস্কারবিষয়ক সুপারিশ নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন চায় বলেও জানিয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতির বিষয়ে সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০টি দল ও জোটের কাছে মতামত চাওয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিএনপিসহ ২৭টি দল তাদের মতামত দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী আগামীকাল শনিবার বাস্তবায়ন পদ্ধতির বিষয়ে মতামত জমা দেবে। অন্যদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতির বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছে এনসিপি। সেগুলো নিয়ে গতকাল রাতে দলীয় ফোরামে আলোচনার ভিত্তিতে সুপারিশ তৈরি করে কমিশনে মতামত জমা দেবে তারা।

বিএনপির তিন পাতার মতামতের প্রথম দুটিতে জুলাই সনদের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের একাধিক উদ্ধৃতি দিয়ে তার স্বপক্ষে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরে। পাশাপাশি বলা হয়, কয়েকটি রাজনৈতিক দল জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে সনদের স্বপ্নদ্রষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সুচিন্তিত ধারণার বাইরে গিয়ে নানাবিধ নিত্যনতুন ধারণা-পন্থার কথা ব্যক্ত করছে। সেগুলো সুচিন্তিত ও বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করে বিএনপি।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে গঠিত হয়েছে—বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপি বলছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হয়নি। কিন্তু জুলাই সনদের খসড়ায় আট দফার অঙ্গীকারনামায় জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপরে স্থান দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা আইনি ও সাংবিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে অসম্ভব, অসংগত ও অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করে বিএনপি।

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার অবস্থান অত্যন্ত সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিত। তারা প্রধান উপদেষ্টার বাস্তবায়ন কৌশলকে সমর্থন করে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ বা প্রয়োজন নেই। বিএনপির মতে, প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্যে জুলাই সনদ তিন ধাপে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই সনদের ‘আশু করণীয় সংস্কার কাজগুলো’ বাস্তবায়ন করবে; জুলাই সনদের বাকি অংশের বেশ কিছু কাজের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করবে এবং নির্বাচিত সরকার জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে।

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, সংবিধান সংস্কারবিষয়ক সুপারিশ ছাড়া অন্য আশু করণীয় সুপারিশগুলো কোনো ধরনের কালক্ষেপণ না করেই অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবায়ন করবে। এজন্য প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশ জারি, বিধি প্রণয়ন, প্রশাসনিক আদেশ জারি, প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ বা অন্য কোনো বৈধপন্থা বা কৌশলের আশ্রয় নিতে পারে সরকার। এ ছাড়া আশু করণীয় নয়, এমন সুপারিশগুলো যথাসম্ভব বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সরকার শুরু করবে। পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দুই বছরের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে বা নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করে জাতির কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে।

এ ছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার দুই বছরের মধ্যে সংবিধান সংশোধনীসম্পর্কিত সুপারিশ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাস্তবায়িত না হওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করবে। জুলাই সনদে স্বাক্ষরের মাধ্যমে দলগুলো জাতির কাছে এ বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে বলে মনে করে দলটি।

আগামী সপ্তাহে দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে চূড়ান্ত জুলাই সনদ

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত পর্যালোচনা করতে আগামী সপ্তাহে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এরপর চূড়ান্ত জুলাই সনদ ও বাস্তবায়নের উপায়সম্পর্কিত সুপারিশ একসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠাবে। গতকাল জাতীয় সংসদের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ-সংক্রান্ত একটি তথ্য জুলাই সনদের সঙ্গে দলগুলোর কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত কমিশন নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ ও বাস্তবায়নের সুপারিশ দলগুলোর কাছে একসঙ্গে পাঠাতে চাই আমরা। যদি তা না হয় তবে ভুল-বোঝাবুঝি হতে পারে। তখন মনে হবে আমরা বাস্তবায়ন নিয়ে ভাবছি না। আমরা বাস্তবায়নের পথ সম্পর্কে সুপারিশ করতে চাই। সেটার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আগামী সপ্তাহের শুরুতেই বৈঠক করব।’

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ, অধ্যাদেশসহ একাধিক সুপারিশ কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারকে করা হবে বলে জানা গেছে। আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা সরকারকে এমন একটি পথ দেখাতে চাই, যাতে বর্তমান সরকারের মেয়াদকালেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথ সুনিশ্চিত করা যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের অনুমতি পেল বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের অনুমতি পেয়েছে দলটি। রোববার (২১ ডিসেম্বর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।

আগামী ২৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে আসছেন তারেক রহমান। এ উপলক্ষে সেদিনই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি চেয়েছিল বিএনপি।

শায়রুল কবির জানান, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার জনাব শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বরাবর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের অনুমতি প্রদান করে চিঠি পাঠিয়েছেন।

রোববার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে নয়া পল্টনে অবস্থিত বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ওই চিঠি পৌঁছে দেওয়া হয়। চিঠিটি গ্রহণ করেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য (দপ্তর দায়িত্বে) জনাব সাত্তার পাটোয়ারী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পত্রিকা অফিসে হামলার গোয়েন্দা তথ্য ছিল, আমলে নেওয়া হয়নি: সালাহউদ্দিন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪০
গণমাধ্যমপ্রধান এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
গণমাধ্যমপ্রধান এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

১৮ ডিসেম্বর রাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে হামলার কথা উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘প্রথম আলো, ডেইলি স্টার জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই দৃশ্য সারা বিশ্ব দেখেছে। সেটা আমাদের জন্য লজ্জার। এটা কোনোভাবে আমরা শুধুমাত্র দুঃখ প্রকাশ করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে সমাপ্ত করতে পারব না।’

তিনি বলেন, ‘এখানে সরকারের দায়িত্ব ছিল সবচাইতে বেশি। আমরা জেনেছি, হামলার বিষয়ে ইন্টেলিজেন্স (গোয়েন্দা) রিপোর্ট ছিল। কিন্তু সেটা আমলে নেওয়া হলো না কেন?’

আজ রোববার রাজধানীর হোটেল র‍্যাডিসন ব্লুতে এক মতবিনিময় সভায় সালাহউদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক, রেডিও, টেলিভিশনের বার্তাপ্রধান এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বিএনপি।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘শুনেছি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলার পরেও এক-দুই ঘণ্টা পর তারা সাড়া দিয়েছে। সেটা কেন? কাদের হাতে আমরা এই রাষ্ট্রব্যবস্থা দেব? নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যারা দায়িত্ব নিয়েছেন, তাঁদের ভূমিকাটা প্রশ্নবিদ্ধ।’

তিনি বলেন, ‘কিছুদিন যাবৎ গণমাধ্যমকে চিহ্নিত করে, টার্গেট করে হামলা করতে দেখেছি। নতুন নয়। কিছু স্থাপনায়, ঠিকানায় মবোক্রেসিকে অ্যালাও (প্রশ্রয়) করা হয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম ডেমোক্রেসি, কিন্তু কেন হয়ে যাবে মবোক্রেসি? তাকে কেন লালন করতে দেওয়া হবে! এগুলো আমি সরকারের দুর্বলতাকেই ইঙ্গিত করছি। এগুলো আরও কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।’

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘দেশ নিয়ে গণপ্রত্যাশা, গণ-আকাঙ্ক্ষা অনেক বেশি। পূর্ণ গণতন্ত্র চায় বাংলাদেশের সব মানুষ। গণতন্ত্রকে সর্বক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে চায়। গণতন্ত্র বিনির্মাণের জন্য যে প্রতিষ্ঠান সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমাদের শক্তিশালী করতে হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে দাঁড় করাতে হবে, যাতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে।’

গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে গণমাধ্যমকে চতুর্থ স্তম্ভ বলে। সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকেরই রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট থাকবে, আছে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বার্থের বিবেচনায় সব সময় আমরা যেন দেশের পক্ষেই থাকি। নিরপেক্ষ না থাকি। রাষ্ট্র। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব যদি জনগণ দেয় তাহলে আমাদের সহযোগিতা থাকবে সর্বোচ্চ। আমরা অতীত ভুলে যেতে চাই, তবে ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী কি করেছে সেটা স্মরণে রাখতে চাই।’

তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘জনগণ আশা করছে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের খুঁটিটা শক্তিশালী হয়। তিনি বাধ্য হয়ে দীর্ঘ ১৮ বছর কষ্টকর নির্বাসিত জীবন যাপন করেছেন। তার এই প্রত্যাবর্তনকে আমরা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য কাজে লাগাতে চাই। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘শফিক রেহমানের মতো বর্ষীয়ান সাংবাদিককে যেভাবে জেলে নিয়ে যে আচরণ করা হয়েছে! সবকিছু মিলিয়ে ফ্যাসিবাদের আমলে একটা ঘন কালো অন্ধকারের সময় পার করেছি। প্রত্যেকেই কমবেশি আক্রান্ত হয়েছি। এখনো যে বিষয়গুলো আমাদের সামনে আসছে, তা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।’

এ সময় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, ‘একজন তরুণ নেতার এমন মৃত্যুর আমরা প্রতিবাদ জানাই। তাঁর কথার কারণে জীবন দিতে হবে, এটা মেনে নেওয়ার মতো না।’

তিনি বলেন, ‘কারও বক্তব্য এবং মতামতের জন্য তাঁর ওপর আক্রমণ হওয়া ফ্যাসিবাদ-উত্তর সময়ে কাম্য নয়। ভারতে গোদি মিডিয়ার কথা বলা হয়, তেমনি স্বৈরাচারী রাষ্ট্রে মিডিয়াও ভূমিকা পালন করে।’

মতবিনিময় সভায় পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যক্তিত্বের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আজকের পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কামরুল হাসান, নয়া দিগন্তের সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান, দৈনিক খবরের কাগজ সম্পাদক মোস্তফা কামাল, কালের কণ্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ, যুগান্তর সম্পাদক আব্দুল হাই শিকদার, নির্বাহী সম্পাদক এনাম আবেদীন, আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ।

মতবিনিময় সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আহমেদ পাভেল উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে কারা হত্যা করেছে, জনগণের বুঝতে বাকি নেই: গোলাম পরওয়ার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর মগবাজারে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি স্মরণে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে বক্তব্য দেন গোলাম পরওয়ার। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর মগবাজারে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি স্মরণে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে বক্তব্য দেন গোলাম পরওয়ার। ছবি: আজকের পত্রিকা

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘ওসমান হাদি চাইত দেশ আধিপত্যবাদী শক্তির হাত থেকে মুক্ত থাকুক। তাই যারা দিল্লির আধিপত্যবাদীদের খুশি করতে চায়, তারাই এই হত্যার মদদদাতা। ওসমান হাদি বিজাতীয় সংস্কৃতির বিরুদ্ধে “ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার” গড়ে তুলেছিল। আমাদের জাতিসত্তা, আমাদের ইসলামি মূল্যবোধ, আমাদের সুস্থ স্বদেশীয় জাতীয় সংস্কৃতির বিরোধিতা যারা করে, বিজাতীয় সংস্কৃতি যারা এখানে আনতে চায়—তারাই ওসমান হাদির খুনির পক্ষে। দুইয়ে দুইয়ে চার হয়, এই অঙ্ক সহজেই বোঝা যায়।’

আজ রোববার রাজধানীর মগবাজারে আল ফালাহ মিলনায়তনে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিনা হাদি স্মরণে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে এসব কথা বলেন গোলাম পরওয়ার।

ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টার একটি সময়সীমা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘আমরা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও দাবি করছি—প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জাতির সামনে স্পষ্ট করুন। যদি তা না করেন, তবে জাতি বিশ্বাস করবে যে প্রশাসনের ভেতরে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা লুকিয়ে আছে যারা খুনিদের রক্ষা করছে। ওসমানের মতো মৃত্যুঞ্জয়ী বীরেরা বিদায় নেবে আর আপনারা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন খেয়েও দায়িত্ব পালন করবেন না, তা জনগণ মেনে নেবে না।’

তিনি যোগ করেন, ‘সরকারের যদি কোনো ব্যর্থতা থাকে, কোনো গোয়েন্দা কর্মকর্তা যদি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন—জাতির কাছে বলেন, তার দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দেন। তার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করেন।’

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আপনি ওসমান হাদির জানাজায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে—প্রিয় হাদি, আমরা তোমাকে বিদায় জানাতে আসিনি। আমরা তোমার কাছে শপথ নিতে এসেছি। ওয়াদা করতে এসেছি।— সেই ওয়াদাটা আপনি রক্ষা করুন। আপনার উপদেষ্টাদের বলুন। ইন্টেলিজেন্সের (গোয়েন্দা তথ্য) ব্যর্থতার জন্য যারা দায়ী তাদের নাম প্রকাশ করুন, না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। তাহলেই হাদির কফিনকে সামনে রেখে আপনি যে ওয়াদার অঙ্গীকারের কথা বলেছেন সেটা সত্য বলেছেন বলে প্রমাণিত হবে।’

দেশবাসীর উদ্দেশে এই জামায়াত নেতা বলেন, ‘সরকারের এই নীরবতার দেয়াল ভেঙে এই জাতির গণ-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে একাত্ম হওয়া উচিত। শহীদ ওসমান বিন হাদির পরিবারের সঙ্গে আমরা শুধু জামায়াতে ইসলামি নয়, সারা দেশবাসী আছে এবং ইনশা আল্লাহ থাকবে।’

দোয়া মাহফিলে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল হালিম, এটিএম মা’ছুম, ওসমান হাদির বড় ভাই ওমর ফারুক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত ফ্লাইটের দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২২
তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য নির্ধারিত লন্ডন-ঢাকা রুটের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট থেকে দুই কেবিন ক্রুকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নিরাপত্তা ও ভিআইপি ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বিবেচনায় এনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

প্রত্যাহার করা কেবিন ক্রুরা হলেন জুনিয়র পার্সার মো. সওগাতুল আলম সওগাত এবং ফ্লাইট স্টুয়ার্ডেস জিনিয়া ইসলাম। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার তথ্যের ভিত্তিতেই তাঁদের ফ্লাইট দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে ওই দুই কেবিন ক্রুর ছবি ছড়িয়ে পড়ে, যা নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয়। অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা নিয়মিত সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সেলিমের ফ্লাইট পরিচালনার দায়িত্বে যুক্ত ছিলেন। এসব বিষয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত থাকায় ভিআইপি যাত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে সম্ভাব্য ঝুঁকির কথা উল্লেখ করা হয়।

বিমান সূত্র জানায়, তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-২০২ ফ্লাইটটি আগামী বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যের লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে। ওই ফ্লাইটে তারেক রহমানের পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতাও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

পরিস্থিতি বিবেচনায় ফ্লাইট সার্ভিস বিভাগ পরে ওই ফ্লাইটে জুনিয়র পার্সার মোস্তফা এবং ফ্লাইট স্টুয়ার্ডেস আয়াতকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ভিআইপি যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে এ ধরনের ব্যবস্থা আগে নেওয়ার নজির রয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের ২ মে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একটি ফ্লাইট থেকেও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুই কেবিন ক্রুকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে সময়ও ভিআইপি যাত্রীর নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত