হুসাইন আহমদ

বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে বিশেষ নাম—সিরাজুল আলম খান। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ইতিহাসের পরিক্রমায় নিজের ভূমিকার জন্য ‘রহস্যপুরুষ’ আখ্যা পেয়েছেন এই রাজনীতিক। কর্মকাণ্ডে রহস্য থাকলেও রাজনৈতিক মহলে তাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত তিনি। যে গোপন সংগঠন স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্বের কেন্দ্রে ছিল, সেই ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের’ প্রবক্তা ও মূল সংগঠক তিনিই ছিলেন।
রাজনীতির এই ‘রহস্যপুরুষ’ দশকের পর দশক ধরে রহস্য বুকে পুষে নিয়েই চলে গেলেন। উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সংক্রমণসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগে আজ শুক্রবার দুপুরে ৮২ বছর বয়সী ‘দাদাভাই’ রহস্যময় জীবন থেকে বিদায় নিলেন। রাজনৈতিক সহযোগী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা তাঁকে ‘দাদাভাই’ ডাকতেন।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বছরের বেশির ভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদে ওপর গবেষণা করে ও বই লিখে সময় কাটাতেন। বাংলাদেশে এলে অধিকাংশ সময় কাটাতেন পাঁচতারা হোটেলে। রাজনৈতিক সহযোগী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ভুলে গেলেও সাম্যবাদী দার্শনিক কার্ল মার্ক্সের আদলে লম্বা দাঁড়ি ও চুল তাঁর আমৃত্যু সঙ্গী হয়ে ছিল। অকৃতদার থেকে তিনি বিপ্লবী ঐতিহ্যের দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন।
জন্ম ও শৈশব
সিরাজুল আলম খান ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। খোরশেদ আলম খান ও সৈয়দা জাকিয়া খাতুনের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। তাঁরা পাঁচ ভাই ও তিন বোন। খোরশেদ আলম খান এডিনবরায় (স্কটল্যান্ড) পড়াশোনা শেষে স্কুল পরিদর্শক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় বদলি হয়ে যেতেন। তাই শৈশবের বেশির ভাগ সময় তিনি নোয়াখালী থেকে দূরে ছিলেন। সিরাজুল আলম খান বলতেন, শৈশব থেকেই বাবাই তাঁর পরামর্শদাতা ছিলেন।
তাঁর মা স্বল্প শিক্ষিত হলেও সামাজিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয়-সংস্কৃতির শিক্ষায় কড়া ছিলেন। শৈশব থেকেই তাঁর ভাইবোনদের সবাই তাঁদের পিতার কাছ থেকে আধুনিক এবং পাশ্চাত্য দৃষ্টিভঙ্গির পাঠ এবং মায়ের কাছ থেকে মধ্যপন্থী মুসলিম মূল্যবোধের পাঠ নেন।
শিক্ষা
১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে অসামান্য কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিকুলেশন (এসএসসি) পাস করেন সিরাজুল আলম খান। এরপর ঢাকা কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি। এইচএসসি পাস করে ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি ফজলুল হক হলে থাকতেন।
‘কনভোকেশন মুভমেন্টে’ অংশগ্রহণ করার কারণে গণিতে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। প্রতিদিন রাত করে হলে ফিরতেন তিনি। ফলে হল থেকেও একবার বহিষ্কৃত হন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করায় তাঁর পক্ষে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রাজনীতি
কলেজে পাঠ্যক্রম-বহির্ভূত কার্যক্রম সিরাজুল আলম খানকে ভবিষ্যৎ নেতা হওয়ার পথ দেখায়; ঢাকা কলেজেই তাঁর রাজনীতির শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ছাত্রলীগের সদস্য হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং পরবর্তীকালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৬৩-৬৪ ও ১৯৬৪-৬৫ দুই মেয়াদে দুই বছর তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
জাতীয়তাবাদী চেতনাকে বিকশিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে যে ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’ গড়ে উঠেছিল, তাঁর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। এই নিউক্লিয়াসের সদস্য ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই নিউক্লিয়াসের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হত।
ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৬৯-৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে নিউক্লিয়াসের রাজনৈতিক শাখা হিসেবে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) এবং সশস্ত্র শাখা হিসেবে ‘জয় বাংলা বাহিনী’ গড়ে তোলা হয়।

এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে সিরাজুল আলম খানের ভূমিকা ছিল মুখ্য। ১৯৬৯-৭০ সালে গণ-আন্দোলনের চাপে ভেঙে পড়া পাকিস্তানি শাসনের সমান্তরালে নিউক্লিয়াসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠন করা হয় ছাত্র ব্রিগেড, যুব ব্রিগেড, শ্রমিক ব্রিগেড, নারী ব্রিগেড, কৃষক ব্রিগেড, সার্জেন্ট জহুর বাহিনী। এদের সদস্যরা এ ভেঙে পড়া পাকিস্তানি শাসনের পরিবর্তে যানবাহন চলাচল, ট্রেন-স্টিমার চালু রাখা, শিল্প-কারখানা উৎপাদন আব্যাহত রাখা এবং থানা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের পতাকা তৈরি করে ২ মার্চ উত্তোলন করেছিল ‘নিউক্লিয়াস’। এর অধীনে ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’ প্রকাশিত হয়। ‘আমার সোনার বাংলা ...’—কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানকে জাতীয় সংগীত এবং স্বাধীনতার থিম হিসেবে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বাছাই করে।
‘...এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’—বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ভাষণ প্রস্তুত করতে ‘নিউক্লিয়াস’ ও বিএলএফ নেতৃত্ব সহায়তা করেছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলন ও সমান্তরাল বেসামরিক প্রশাসন চালু করায় মূল ভূমিকা রেখেছিল বিএলএফ। শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিও দিয়েছিল বিএলএফ নেতৃত্ব।
পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরোধে সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে বিএলএফ হাইকমান্ড পুনর্গঠন করা হয়। পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্তির জন্য ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের সময় ভারতে বিএলএফের নাম পাল্টে ‘মুজিব বাহিনী’ হয়।
আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘১৯৬৯-এ আমি ছিলাম তোতাপাখির মতো। সবকিছু করে দিয়েছেন আমার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু সিরাজুল আলম খান, যিনি আমাকে হাতে-কলমে রাজনীতি শিখিয়েছেন।’
জাসদ পর্ব
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর আন্দোলন-সংগ্রামের রূপ ও চরিত্র বদলে যায়। ‘বিপ্লবী জাতীয় সরকার’ গঠন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের মতভেদ দেখা দেয়। তাঁর সিদ্ধান্ত ও তৎপরতায় গঠিত হয় নতুন রাজনৈতিক দল ও একমাত্র বিরোধী দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। বাংলাদেশের ইতিহাসের বহুল বিতর্কিত অংশ কথিত ‘সিপাহী জনতার গণ-অভ্যুত্থান’। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানেরও নেপথ্য পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিরাজুল আলম খান।
তাঁর সঙ্গে এই দুই ঘটনার আরও কুশীলব ছিলেন মেজর জলিল, আ স ম আবদুর রব ও কর্নেল আবু তাহের। জাসদের চিন্তাগুরু সিরাজুল আলম খান তাহেরকে মাঠে নামিয়ে দিয়ে চলে যান অজ্ঞাত স্থানে। যদিও সেখান থেকেই তিনি তাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। কিন্তু মূল দৃশ্যপট থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেন তিনি।
কিন্তু পরে ১৯৭৬ সালেই জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৭৯ সালে মুক্তি পান। আরও দুবার তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৬৩ সালের শেষদিকে ‘কনভোকেশন মুভমেন্টের’ কারণে তিনি গ্রেপ্তার হন। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে বিদেশ যাওয়া আগে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ২৪ মার্চ সিরাজুল আলম খানকে গ্রেপ্তার করা হলে চার মাস পর হাইকোর্টের রায়ে মুক্তি পান। ভিন্ন ভিন্ন তিন মেয়াদে প্রায় সাত বছর কারাভোগ করেন তিনি।
গবেষণা
দীর্ঘ কারাজীবনে তিনি দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, রাজনীতি-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজবিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান, সামরিক বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, সংগীত, খেলাধুলা নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি ছিল।
স্বাধীনতার পরপরই রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে সিরাজুল আলম খান রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ‘তাত্ত্বিক’ উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করেন। গণিত শাস্ত্রে পড়লেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওপর গড়ে উঠে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য ও দক্ষতা। সেই কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওশকোশের ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের খণ্ডকালীন অধ্যাপক হন।
সিরাজুল আলম খানের বই ও ভাষণ থেকে তাঁর রাজনৈতিক-প্রশাসনিক রূপরেখা নিয়ে বেশ কিছু মূল ধারণা মিলেছে। এসব কিছুর মধ্যে তাঁর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আরেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক জিল্লুর রহমান খান। শেষ পর্যন্ত তাঁরা তাত্ত্বিক পর্যায়ে একসঙ্গে কাজ করেছেন।
নব্বই দশকের গোড়ার দিকে সিরাজুল আলম খান পরিবর্তিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৪ দফা প্রস্তাব পেশ করেন। সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্থায়নে উপজেলাভিত্তিক ‘শিল্পাঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশের জনগণকে শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী হিসেবে বিভক্ত করে ‘রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক’ মডেল হাজির করেছেন সিরাজুল আলম খান। চিরাচরিত পার্লামেন্টারি ধাঁচের ‘অঞ্চলভিত্তিক’ প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি শ্রম, কর্ম, পেশায় নিয়োজিত সমাজ শক্তিসমূহের ‘বিষয়ভিত্তিক’ প্রতিনিত্বের ব্যবস্থাসংবলিত ‘দুই কক্ষ’বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন, ফেডারেল সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন, বাংলাদেশকে কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন এবং প্রাদেশিক সরকার গঠন, উপজেলা পর্যায়ে স্বশাসিত স্থানীয় সরকার পদ্ধতি চালু করার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক আইনব্যবস্থা ও শাসন কাঠামোর পরিবর্তে স্বাধীন দেশের উপযোগী শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার মডেল উত্থাপন করেন তিনি।

বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে বিশেষ নাম—সিরাজুল আলম খান। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ইতিহাসের পরিক্রমায় নিজের ভূমিকার জন্য ‘রহস্যপুরুষ’ আখ্যা পেয়েছেন এই রাজনীতিক। কর্মকাণ্ডে রহস্য থাকলেও রাজনৈতিক মহলে তাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত তিনি। যে গোপন সংগঠন স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্বের কেন্দ্রে ছিল, সেই ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের’ প্রবক্তা ও মূল সংগঠক তিনিই ছিলেন।
রাজনীতির এই ‘রহস্যপুরুষ’ দশকের পর দশক ধরে রহস্য বুকে পুষে নিয়েই চলে গেলেন। উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সংক্রমণসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগে আজ শুক্রবার দুপুরে ৮২ বছর বয়সী ‘দাদাভাই’ রহস্যময় জীবন থেকে বিদায় নিলেন। রাজনৈতিক সহযোগী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা তাঁকে ‘দাদাভাই’ ডাকতেন।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বছরের বেশির ভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদে ওপর গবেষণা করে ও বই লিখে সময় কাটাতেন। বাংলাদেশে এলে অধিকাংশ সময় কাটাতেন পাঁচতারা হোটেলে। রাজনৈতিক সহযোগী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ভুলে গেলেও সাম্যবাদী দার্শনিক কার্ল মার্ক্সের আদলে লম্বা দাঁড়ি ও চুল তাঁর আমৃত্যু সঙ্গী হয়ে ছিল। অকৃতদার থেকে তিনি বিপ্লবী ঐতিহ্যের দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন।
জন্ম ও শৈশব
সিরাজুল আলম খান ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। খোরশেদ আলম খান ও সৈয়দা জাকিয়া খাতুনের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। তাঁরা পাঁচ ভাই ও তিন বোন। খোরশেদ আলম খান এডিনবরায় (স্কটল্যান্ড) পড়াশোনা শেষে স্কুল পরিদর্শক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় বদলি হয়ে যেতেন। তাই শৈশবের বেশির ভাগ সময় তিনি নোয়াখালী থেকে দূরে ছিলেন। সিরাজুল আলম খান বলতেন, শৈশব থেকেই বাবাই তাঁর পরামর্শদাতা ছিলেন।
তাঁর মা স্বল্প শিক্ষিত হলেও সামাজিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয়-সংস্কৃতির শিক্ষায় কড়া ছিলেন। শৈশব থেকেই তাঁর ভাইবোনদের সবাই তাঁদের পিতার কাছ থেকে আধুনিক এবং পাশ্চাত্য দৃষ্টিভঙ্গির পাঠ এবং মায়ের কাছ থেকে মধ্যপন্থী মুসলিম মূল্যবোধের পাঠ নেন।
শিক্ষা
১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে অসামান্য কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিকুলেশন (এসএসসি) পাস করেন সিরাজুল আলম খান। এরপর ঢাকা কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি। এইচএসসি পাস করে ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি ফজলুল হক হলে থাকতেন।
‘কনভোকেশন মুভমেন্টে’ অংশগ্রহণ করার কারণে গণিতে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। প্রতিদিন রাত করে হলে ফিরতেন তিনি। ফলে হল থেকেও একবার বহিষ্কৃত হন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করায় তাঁর পক্ষে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রাজনীতি
কলেজে পাঠ্যক্রম-বহির্ভূত কার্যক্রম সিরাজুল আলম খানকে ভবিষ্যৎ নেতা হওয়ার পথ দেখায়; ঢাকা কলেজেই তাঁর রাজনীতির শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ছাত্রলীগের সদস্য হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং পরবর্তীকালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৬৩-৬৪ ও ১৯৬৪-৬৫ দুই মেয়াদে দুই বছর তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
জাতীয়তাবাদী চেতনাকে বিকশিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে যে ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’ গড়ে উঠেছিল, তাঁর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। এই নিউক্লিয়াসের সদস্য ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই নিউক্লিয়াসের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হত।
ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৬৯-৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে নিউক্লিয়াসের রাজনৈতিক শাখা হিসেবে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) এবং সশস্ত্র শাখা হিসেবে ‘জয় বাংলা বাহিনী’ গড়ে তোলা হয়।

এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে সিরাজুল আলম খানের ভূমিকা ছিল মুখ্য। ১৯৬৯-৭০ সালে গণ-আন্দোলনের চাপে ভেঙে পড়া পাকিস্তানি শাসনের সমান্তরালে নিউক্লিয়াসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠন করা হয় ছাত্র ব্রিগেড, যুব ব্রিগেড, শ্রমিক ব্রিগেড, নারী ব্রিগেড, কৃষক ব্রিগেড, সার্জেন্ট জহুর বাহিনী। এদের সদস্যরা এ ভেঙে পড়া পাকিস্তানি শাসনের পরিবর্তে যানবাহন চলাচল, ট্রেন-স্টিমার চালু রাখা, শিল্প-কারখানা উৎপাদন আব্যাহত রাখা এবং থানা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের পতাকা তৈরি করে ২ মার্চ উত্তোলন করেছিল ‘নিউক্লিয়াস’। এর অধীনে ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’ প্রকাশিত হয়। ‘আমার সোনার বাংলা ...’—কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানকে জাতীয় সংগীত এবং স্বাধীনতার থিম হিসেবে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বাছাই করে।
‘...এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’—বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ভাষণ প্রস্তুত করতে ‘নিউক্লিয়াস’ ও বিএলএফ নেতৃত্ব সহায়তা করেছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলন ও সমান্তরাল বেসামরিক প্রশাসন চালু করায় মূল ভূমিকা রেখেছিল বিএলএফ। শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিও দিয়েছিল বিএলএফ নেতৃত্ব।
পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরোধে সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে বিএলএফ হাইকমান্ড পুনর্গঠন করা হয়। পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্তির জন্য ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের সময় ভারতে বিএলএফের নাম পাল্টে ‘মুজিব বাহিনী’ হয়।
আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘১৯৬৯-এ আমি ছিলাম তোতাপাখির মতো। সবকিছু করে দিয়েছেন আমার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু সিরাজুল আলম খান, যিনি আমাকে হাতে-কলমে রাজনীতি শিখিয়েছেন।’
জাসদ পর্ব
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর আন্দোলন-সংগ্রামের রূপ ও চরিত্র বদলে যায়। ‘বিপ্লবী জাতীয় সরকার’ গঠন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের মতভেদ দেখা দেয়। তাঁর সিদ্ধান্ত ও তৎপরতায় গঠিত হয় নতুন রাজনৈতিক দল ও একমাত্র বিরোধী দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। বাংলাদেশের ইতিহাসের বহুল বিতর্কিত অংশ কথিত ‘সিপাহী জনতার গণ-অভ্যুত্থান’। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানেরও নেপথ্য পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিরাজুল আলম খান।
তাঁর সঙ্গে এই দুই ঘটনার আরও কুশীলব ছিলেন মেজর জলিল, আ স ম আবদুর রব ও কর্নেল আবু তাহের। জাসদের চিন্তাগুরু সিরাজুল আলম খান তাহেরকে মাঠে নামিয়ে দিয়ে চলে যান অজ্ঞাত স্থানে। যদিও সেখান থেকেই তিনি তাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। কিন্তু মূল দৃশ্যপট থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেন তিনি।
কিন্তু পরে ১৯৭৬ সালেই জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৭৯ সালে মুক্তি পান। আরও দুবার তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৬৩ সালের শেষদিকে ‘কনভোকেশন মুভমেন্টের’ কারণে তিনি গ্রেপ্তার হন। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে বিদেশ যাওয়া আগে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ২৪ মার্চ সিরাজুল আলম খানকে গ্রেপ্তার করা হলে চার মাস পর হাইকোর্টের রায়ে মুক্তি পান। ভিন্ন ভিন্ন তিন মেয়াদে প্রায় সাত বছর কারাভোগ করেন তিনি।
গবেষণা
দীর্ঘ কারাজীবনে তিনি দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, রাজনীতি-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজবিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান, সামরিক বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, সংগীত, খেলাধুলা নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি ছিল।
স্বাধীনতার পরপরই রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে সিরাজুল আলম খান রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ‘তাত্ত্বিক’ উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করেন। গণিত শাস্ত্রে পড়লেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওপর গড়ে উঠে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য ও দক্ষতা। সেই কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওশকোশের ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের খণ্ডকালীন অধ্যাপক হন।
সিরাজুল আলম খানের বই ও ভাষণ থেকে তাঁর রাজনৈতিক-প্রশাসনিক রূপরেখা নিয়ে বেশ কিছু মূল ধারণা মিলেছে। এসব কিছুর মধ্যে তাঁর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আরেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক জিল্লুর রহমান খান। শেষ পর্যন্ত তাঁরা তাত্ত্বিক পর্যায়ে একসঙ্গে কাজ করেছেন।
নব্বই দশকের গোড়ার দিকে সিরাজুল আলম খান পরিবর্তিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৪ দফা প্রস্তাব পেশ করেন। সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্থায়নে উপজেলাভিত্তিক ‘শিল্পাঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশের জনগণকে শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী হিসেবে বিভক্ত করে ‘রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক’ মডেল হাজির করেছেন সিরাজুল আলম খান। চিরাচরিত পার্লামেন্টারি ধাঁচের ‘অঞ্চলভিত্তিক’ প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি শ্রম, কর্ম, পেশায় নিয়োজিত সমাজ শক্তিসমূহের ‘বিষয়ভিত্তিক’ প্রতিনিত্বের ব্যবস্থাসংবলিত ‘দুই কক্ষ’বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন, ফেডারেল সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন, বাংলাদেশকে কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন এবং প্রাদেশিক সরকার গঠন, উপজেলা পর্যায়ে স্বশাসিত স্থানীয় সরকার পদ্ধতি চালু করার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক আইনব্যবস্থা ও শাসন কাঠামোর পরিবর্তে স্বাধীন দেশের উপযোগী শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার মডেল উত্থাপন করেন তিনি।
হুসাইন আহমদ

বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে বিশেষ নাম—সিরাজুল আলম খান। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ইতিহাসের পরিক্রমায় নিজের ভূমিকার জন্য ‘রহস্যপুরুষ’ আখ্যা পেয়েছেন এই রাজনীতিক। কর্মকাণ্ডে রহস্য থাকলেও রাজনৈতিক মহলে তাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত তিনি। যে গোপন সংগঠন স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্বের কেন্দ্রে ছিল, সেই ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের’ প্রবক্তা ও মূল সংগঠক তিনিই ছিলেন।
রাজনীতির এই ‘রহস্যপুরুষ’ দশকের পর দশক ধরে রহস্য বুকে পুষে নিয়েই চলে গেলেন। উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সংক্রমণসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগে আজ শুক্রবার দুপুরে ৮২ বছর বয়সী ‘দাদাভাই’ রহস্যময় জীবন থেকে বিদায় নিলেন। রাজনৈতিক সহযোগী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা তাঁকে ‘দাদাভাই’ ডাকতেন।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বছরের বেশির ভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদে ওপর গবেষণা করে ও বই লিখে সময় কাটাতেন। বাংলাদেশে এলে অধিকাংশ সময় কাটাতেন পাঁচতারা হোটেলে। রাজনৈতিক সহযোগী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ভুলে গেলেও সাম্যবাদী দার্শনিক কার্ল মার্ক্সের আদলে লম্বা দাঁড়ি ও চুল তাঁর আমৃত্যু সঙ্গী হয়ে ছিল। অকৃতদার থেকে তিনি বিপ্লবী ঐতিহ্যের দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন।
জন্ম ও শৈশব
সিরাজুল আলম খান ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। খোরশেদ আলম খান ও সৈয়দা জাকিয়া খাতুনের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। তাঁরা পাঁচ ভাই ও তিন বোন। খোরশেদ আলম খান এডিনবরায় (স্কটল্যান্ড) পড়াশোনা শেষে স্কুল পরিদর্শক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় বদলি হয়ে যেতেন। তাই শৈশবের বেশির ভাগ সময় তিনি নোয়াখালী থেকে দূরে ছিলেন। সিরাজুল আলম খান বলতেন, শৈশব থেকেই বাবাই তাঁর পরামর্শদাতা ছিলেন।
তাঁর মা স্বল্প শিক্ষিত হলেও সামাজিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয়-সংস্কৃতির শিক্ষায় কড়া ছিলেন। শৈশব থেকেই তাঁর ভাইবোনদের সবাই তাঁদের পিতার কাছ থেকে আধুনিক এবং পাশ্চাত্য দৃষ্টিভঙ্গির পাঠ এবং মায়ের কাছ থেকে মধ্যপন্থী মুসলিম মূল্যবোধের পাঠ নেন।
শিক্ষা
১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে অসামান্য কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিকুলেশন (এসএসসি) পাস করেন সিরাজুল আলম খান। এরপর ঢাকা কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি। এইচএসসি পাস করে ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি ফজলুল হক হলে থাকতেন।
‘কনভোকেশন মুভমেন্টে’ অংশগ্রহণ করার কারণে গণিতে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। প্রতিদিন রাত করে হলে ফিরতেন তিনি। ফলে হল থেকেও একবার বহিষ্কৃত হন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করায় তাঁর পক্ষে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রাজনীতি
কলেজে পাঠ্যক্রম-বহির্ভূত কার্যক্রম সিরাজুল আলম খানকে ভবিষ্যৎ নেতা হওয়ার পথ দেখায়; ঢাকা কলেজেই তাঁর রাজনীতির শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ছাত্রলীগের সদস্য হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং পরবর্তীকালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৬৩-৬৪ ও ১৯৬৪-৬৫ দুই মেয়াদে দুই বছর তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
জাতীয়তাবাদী চেতনাকে বিকশিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে যে ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’ গড়ে উঠেছিল, তাঁর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। এই নিউক্লিয়াসের সদস্য ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই নিউক্লিয়াসের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হত।
ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৬৯-৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে নিউক্লিয়াসের রাজনৈতিক শাখা হিসেবে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) এবং সশস্ত্র শাখা হিসেবে ‘জয় বাংলা বাহিনী’ গড়ে তোলা হয়।

এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে সিরাজুল আলম খানের ভূমিকা ছিল মুখ্য। ১৯৬৯-৭০ সালে গণ-আন্দোলনের চাপে ভেঙে পড়া পাকিস্তানি শাসনের সমান্তরালে নিউক্লিয়াসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠন করা হয় ছাত্র ব্রিগেড, যুব ব্রিগেড, শ্রমিক ব্রিগেড, নারী ব্রিগেড, কৃষক ব্রিগেড, সার্জেন্ট জহুর বাহিনী। এদের সদস্যরা এ ভেঙে পড়া পাকিস্তানি শাসনের পরিবর্তে যানবাহন চলাচল, ট্রেন-স্টিমার চালু রাখা, শিল্প-কারখানা উৎপাদন আব্যাহত রাখা এবং থানা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের পতাকা তৈরি করে ২ মার্চ উত্তোলন করেছিল ‘নিউক্লিয়াস’। এর অধীনে ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’ প্রকাশিত হয়। ‘আমার সোনার বাংলা ...’—কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানকে জাতীয় সংগীত এবং স্বাধীনতার থিম হিসেবে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বাছাই করে।
‘...এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’—বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ভাষণ প্রস্তুত করতে ‘নিউক্লিয়াস’ ও বিএলএফ নেতৃত্ব সহায়তা করেছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলন ও সমান্তরাল বেসামরিক প্রশাসন চালু করায় মূল ভূমিকা রেখেছিল বিএলএফ। শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিও দিয়েছিল বিএলএফ নেতৃত্ব।
পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরোধে সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে বিএলএফ হাইকমান্ড পুনর্গঠন করা হয়। পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্তির জন্য ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের সময় ভারতে বিএলএফের নাম পাল্টে ‘মুজিব বাহিনী’ হয়।
আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘১৯৬৯-এ আমি ছিলাম তোতাপাখির মতো। সবকিছু করে দিয়েছেন আমার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু সিরাজুল আলম খান, যিনি আমাকে হাতে-কলমে রাজনীতি শিখিয়েছেন।’
জাসদ পর্ব
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর আন্দোলন-সংগ্রামের রূপ ও চরিত্র বদলে যায়। ‘বিপ্লবী জাতীয় সরকার’ গঠন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের মতভেদ দেখা দেয়। তাঁর সিদ্ধান্ত ও তৎপরতায় গঠিত হয় নতুন রাজনৈতিক দল ও একমাত্র বিরোধী দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। বাংলাদেশের ইতিহাসের বহুল বিতর্কিত অংশ কথিত ‘সিপাহী জনতার গণ-অভ্যুত্থান’। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানেরও নেপথ্য পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিরাজুল আলম খান।
তাঁর সঙ্গে এই দুই ঘটনার আরও কুশীলব ছিলেন মেজর জলিল, আ স ম আবদুর রব ও কর্নেল আবু তাহের। জাসদের চিন্তাগুরু সিরাজুল আলম খান তাহেরকে মাঠে নামিয়ে দিয়ে চলে যান অজ্ঞাত স্থানে। যদিও সেখান থেকেই তিনি তাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। কিন্তু মূল দৃশ্যপট থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেন তিনি।
কিন্তু পরে ১৯৭৬ সালেই জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৭৯ সালে মুক্তি পান। আরও দুবার তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৬৩ সালের শেষদিকে ‘কনভোকেশন মুভমেন্টের’ কারণে তিনি গ্রেপ্তার হন। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে বিদেশ যাওয়া আগে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ২৪ মার্চ সিরাজুল আলম খানকে গ্রেপ্তার করা হলে চার মাস পর হাইকোর্টের রায়ে মুক্তি পান। ভিন্ন ভিন্ন তিন মেয়াদে প্রায় সাত বছর কারাভোগ করেন তিনি।
গবেষণা
দীর্ঘ কারাজীবনে তিনি দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, রাজনীতি-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজবিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান, সামরিক বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, সংগীত, খেলাধুলা নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি ছিল।
স্বাধীনতার পরপরই রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে সিরাজুল আলম খান রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ‘তাত্ত্বিক’ উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করেন। গণিত শাস্ত্রে পড়লেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওপর গড়ে উঠে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য ও দক্ষতা। সেই কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওশকোশের ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের খণ্ডকালীন অধ্যাপক হন।
সিরাজুল আলম খানের বই ও ভাষণ থেকে তাঁর রাজনৈতিক-প্রশাসনিক রূপরেখা নিয়ে বেশ কিছু মূল ধারণা মিলেছে। এসব কিছুর মধ্যে তাঁর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আরেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক জিল্লুর রহমান খান। শেষ পর্যন্ত তাঁরা তাত্ত্বিক পর্যায়ে একসঙ্গে কাজ করেছেন।
নব্বই দশকের গোড়ার দিকে সিরাজুল আলম খান পরিবর্তিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৪ দফা প্রস্তাব পেশ করেন। সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্থায়নে উপজেলাভিত্তিক ‘শিল্পাঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশের জনগণকে শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী হিসেবে বিভক্ত করে ‘রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক’ মডেল হাজির করেছেন সিরাজুল আলম খান। চিরাচরিত পার্লামেন্টারি ধাঁচের ‘অঞ্চলভিত্তিক’ প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি শ্রম, কর্ম, পেশায় নিয়োজিত সমাজ শক্তিসমূহের ‘বিষয়ভিত্তিক’ প্রতিনিত্বের ব্যবস্থাসংবলিত ‘দুই কক্ষ’বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন, ফেডারেল সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন, বাংলাদেশকে কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন এবং প্রাদেশিক সরকার গঠন, উপজেলা পর্যায়ে স্বশাসিত স্থানীয় সরকার পদ্ধতি চালু করার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক আইনব্যবস্থা ও শাসন কাঠামোর পরিবর্তে স্বাধীন দেশের উপযোগী শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার মডেল উত্থাপন করেন তিনি।

বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে বিশেষ নাম—সিরাজুল আলম খান। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ইতিহাসের পরিক্রমায় নিজের ভূমিকার জন্য ‘রহস্যপুরুষ’ আখ্যা পেয়েছেন এই রাজনীতিক। কর্মকাণ্ডে রহস্য থাকলেও রাজনৈতিক মহলে তাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত তিনি। যে গোপন সংগঠন স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্বের কেন্দ্রে ছিল, সেই ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের’ প্রবক্তা ও মূল সংগঠক তিনিই ছিলেন।
রাজনীতির এই ‘রহস্যপুরুষ’ দশকের পর দশক ধরে রহস্য বুকে পুষে নিয়েই চলে গেলেন। উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সংক্রমণসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগে আজ শুক্রবার দুপুরে ৮২ বছর বয়সী ‘দাদাভাই’ রহস্যময় জীবন থেকে বিদায় নিলেন। রাজনৈতিক সহযোগী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা তাঁকে ‘দাদাভাই’ ডাকতেন।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বছরের বেশির ভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্রে থাকতেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদে ওপর গবেষণা করে ও বই লিখে সময় কাটাতেন। বাংলাদেশে এলে অধিকাংশ সময় কাটাতেন পাঁচতারা হোটেলে। রাজনৈতিক সহযোগী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ভুলে গেলেও সাম্যবাদী দার্শনিক কার্ল মার্ক্সের আদলে লম্বা দাঁড়ি ও চুল তাঁর আমৃত্যু সঙ্গী হয়ে ছিল। অকৃতদার থেকে তিনি বিপ্লবী ঐতিহ্যের দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন।
জন্ম ও শৈশব
সিরাজুল আলম খান ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। খোরশেদ আলম খান ও সৈয়দা জাকিয়া খাতুনের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। তাঁরা পাঁচ ভাই ও তিন বোন। খোরশেদ আলম খান এডিনবরায় (স্কটল্যান্ড) পড়াশোনা শেষে স্কুল পরিদর্শক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় বদলি হয়ে যেতেন। তাই শৈশবের বেশির ভাগ সময় তিনি নোয়াখালী থেকে দূরে ছিলেন। সিরাজুল আলম খান বলতেন, শৈশব থেকেই বাবাই তাঁর পরামর্শদাতা ছিলেন।
তাঁর মা স্বল্প শিক্ষিত হলেও সামাজিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয়-সংস্কৃতির শিক্ষায় কড়া ছিলেন। শৈশব থেকেই তাঁর ভাইবোনদের সবাই তাঁদের পিতার কাছ থেকে আধুনিক এবং পাশ্চাত্য দৃষ্টিভঙ্গির পাঠ এবং মায়ের কাছ থেকে মধ্যপন্থী মুসলিম মূল্যবোধের পাঠ নেন।
শিক্ষা
১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে অসামান্য কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিকুলেশন (এসএসসি) পাস করেন সিরাজুল আলম খান। এরপর ঢাকা কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি। এইচএসসি পাস করে ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি ফজলুল হক হলে থাকতেন।
‘কনভোকেশন মুভমেন্টে’ অংশগ্রহণ করার কারণে গণিতে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। প্রতিদিন রাত করে হলে ফিরতেন তিনি। ফলে হল থেকেও একবার বহিষ্কৃত হন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করায় তাঁর পক্ষে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রাজনীতি
কলেজে পাঠ্যক্রম-বহির্ভূত কার্যক্রম সিরাজুল আলম খানকে ভবিষ্যৎ নেতা হওয়ার পথ দেখায়; ঢাকা কলেজেই তাঁর রাজনীতির শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ছাত্রলীগের সদস্য হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং পরবর্তীকালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৬৩-৬৪ ও ১৯৬৪-৬৫ দুই মেয়াদে দুই বছর তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
জাতীয়তাবাদী চেতনাকে বিকশিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে যে ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’ গড়ে উঠেছিল, তাঁর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। এই নিউক্লিয়াসের সদস্য ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত এই নিউক্লিয়াসের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হত।
ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৬৯-৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে নিউক্লিয়াসের রাজনৈতিক শাখা হিসেবে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বিএলএফ) এবং সশস্ত্র শাখা হিসেবে ‘জয় বাংলা বাহিনী’ গড়ে তোলা হয়।

এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে সিরাজুল আলম খানের ভূমিকা ছিল মুখ্য। ১৯৬৯-৭০ সালে গণ-আন্দোলনের চাপে ভেঙে পড়া পাকিস্তানি শাসনের সমান্তরালে নিউক্লিয়াসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠন করা হয় ছাত্র ব্রিগেড, যুব ব্রিগেড, শ্রমিক ব্রিগেড, নারী ব্রিগেড, কৃষক ব্রিগেড, সার্জেন্ট জহুর বাহিনী। এদের সদস্যরা এ ভেঙে পড়া পাকিস্তানি শাসনের পরিবর্তে যানবাহন চলাচল, ট্রেন-স্টিমার চালু রাখা, শিল্প-কারখানা উৎপাদন আব্যাহত রাখা এবং থানা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের পতাকা তৈরি করে ২ মার্চ উত্তোলন করেছিল ‘নিউক্লিয়াস’। এর অধীনে ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’ প্রকাশিত হয়। ‘আমার সোনার বাংলা ...’—কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানকে জাতীয় সংগীত এবং স্বাধীনতার থিম হিসেবে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বাছাই করে।
‘...এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’—বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ভাষণ প্রস্তুত করতে ‘নিউক্লিয়াস’ ও বিএলএফ নেতৃত্ব সহায়তা করেছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলন ও সমান্তরাল বেসামরিক প্রশাসন চালু করায় মূল ভূমিকা রেখেছিল বিএলএফ। শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিও দিয়েছিল বিএলএফ নেতৃত্ব।
পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরোধে সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে বিএলএফ হাইকমান্ড পুনর্গঠন করা হয়। পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্তির জন্য ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের সময় ভারতে বিএলএফের নাম পাল্টে ‘মুজিব বাহিনী’ হয়।
আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘১৯৬৯-এ আমি ছিলাম তোতাপাখির মতো। সবকিছু করে দিয়েছেন আমার রাজনৈতিক শিক্ষাগুরু সিরাজুল আলম খান, যিনি আমাকে হাতে-কলমে রাজনীতি শিখিয়েছেন।’
জাসদ পর্ব
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর আন্দোলন-সংগ্রামের রূপ ও চরিত্র বদলে যায়। ‘বিপ্লবী জাতীয় সরকার’ গঠন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের মতভেদ দেখা দেয়। তাঁর সিদ্ধান্ত ও তৎপরতায় গঠিত হয় নতুন রাজনৈতিক দল ও একমাত্র বিরোধী দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। বাংলাদেশের ইতিহাসের বহুল বিতর্কিত অংশ কথিত ‘সিপাহী জনতার গণ-অভ্যুত্থান’। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানেরও নেপথ্য পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিরাজুল আলম খান।
তাঁর সঙ্গে এই দুই ঘটনার আরও কুশীলব ছিলেন মেজর জলিল, আ স ম আবদুর রব ও কর্নেল আবু তাহের। জাসদের চিন্তাগুরু সিরাজুল আলম খান তাহেরকে মাঠে নামিয়ে দিয়ে চলে যান অজ্ঞাত স্থানে। যদিও সেখান থেকেই তিনি তাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। কিন্তু মূল দৃশ্যপট থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেন তিনি।
কিন্তু পরে ১৯৭৬ সালেই জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৭৯ সালে মুক্তি পান। আরও দুবার তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৬৩ সালের শেষদিকে ‘কনভোকেশন মুভমেন্টের’ কারণে তিনি গ্রেপ্তার হন। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে বিদেশ যাওয়া আগে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ২৪ মার্চ সিরাজুল আলম খানকে গ্রেপ্তার করা হলে চার মাস পর হাইকোর্টের রায়ে মুক্তি পান। ভিন্ন ভিন্ন তিন মেয়াদে প্রায় সাত বছর কারাভোগ করেন তিনি।
গবেষণা
দীর্ঘ কারাজীবনে তিনি দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, রাজনীতি-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজবিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান, সামরিক বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, সংগীত, খেলাধুলা নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি ছিল।
স্বাধীনতার পরপরই রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে সিরাজুল আলম খান রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ‘তাত্ত্বিক’ উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করেন। গণিত শাস্ত্রে পড়লেও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওপর গড়ে উঠে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য ও দক্ষতা। সেই কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তিনি ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওশকোশের ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের খণ্ডকালীন অধ্যাপক হন।
সিরাজুল আলম খানের বই ও ভাষণ থেকে তাঁর রাজনৈতিক-প্রশাসনিক রূপরেখা নিয়ে বেশ কিছু মূল ধারণা মিলেছে। এসব কিছুর মধ্যে তাঁর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আরেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক জিল্লুর রহমান খান। শেষ পর্যন্ত তাঁরা তাত্ত্বিক পর্যায়ে একসঙ্গে কাজ করেছেন।
নব্বই দশকের গোড়ার দিকে সিরাজুল আলম খান পরিবর্তিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৪ দফা প্রস্তাব পেশ করেন। সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অর্থায়নে উপজেলাভিত্তিক ‘শিল্পাঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশের জনগণকে শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবী হিসেবে বিভক্ত করে ‘রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক’ মডেল হাজির করেছেন সিরাজুল আলম খান। চিরাচরিত পার্লামেন্টারি ধাঁচের ‘অঞ্চলভিত্তিক’ প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি শ্রম, কর্ম, পেশায় নিয়োজিত সমাজ শক্তিসমূহের ‘বিষয়ভিত্তিক’ প্রতিনিত্বের ব্যবস্থাসংবলিত ‘দুই কক্ষ’বিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠন, ফেডারেল সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন, বাংলাদেশকে কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন এবং প্রাদেশিক সরকার গঠন, উপজেলা পর্যায়ে স্বশাসিত স্থানীয় সরকার পদ্ধতি চালু করার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক আইনব্যবস্থা ও শাসন কাঠামোর পরিবর্তে স্বাধীন দেশের উপযোগী শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার মডেল উত্থাপন করেন তিনি।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমঝোতা নিয়ে শেষ মুহূর্তের দরকষাকষি চলছে। নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ কোনো ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে ভোটে যাওয়ার বিরোধিতা করলেও জামায়াতের সঙ্গী হতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিপি।
৬ ঘণ্টা আগে
নেতা আছেন, তাঁর নেতৃত্বও আছে। তাঁকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা; যাঁকে কেন্দ্র করে দলের সব ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সেই নেতা সশরীরে না থাকায় একধরনের শূন্যতা ছিল বিএনপিতে। অবশেষে সেই শূন্যতা দূর হলো।
৬ ঘণ্টা আগে
জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাভার থেকে ফেরার সময় তিনি এই কৃতজ্ঞতা জানান।
৯ ঘণ্টা আগে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
১০ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমঝোতা নিয়ে শেষ মুহূর্তের দরকষাকষি চলছে। নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ কোনো ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে ভোটে যাওয়ার বিরোধিতা করলেও জামায়াতের সঙ্গী হতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিপি। কিন্তু এই সমঝোতার রূপরেখা বা ধরন কেমন হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি জুলাইয়ের তরুণ আন্দোলনকারীদের গড়া দলটি।
এদিকে বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা কিংবা জোট করা নিয়ে গঠনের এক মাস না পেরোতেই ভাঙনের সুর বাজছে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন গতকাল শুক্রবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে আমাদের নির্বাহী কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই এটা মোটামুটি নিশ্চিত। কিন্তু এই সমঝোতার ধরন কী হবে, কত আসনে সমঝোতা হবে, জোট হবে, নাকি শুধুই আসন সমঝোতা হবে; সেসব বিষয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এনসিপির সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনা এখনো চলমান। আলোচনার অগ্রগতিও ভালোই।’ কত আসনে সমঝোতা হচ্ছে জানতে চাইলে আযাদ বলেন, ‘কত আসনে সমঝোতা হবে সে রকম আলোচনা এখনো হয়নি। আগে নির্বাচনী সমঝোতার আলোচনা চূড়ান্ত হবে, তারপর অবস্থা ও অবস্থান বুঝে আসন সমঝোতার আলাপ হবে।’
এনসিপিকে ৩০টি আসন ছেড়ে দেওয়ার গুঞ্জনকে নাকচ করে দিয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘এ রকম আলোচনা আমাদের মধ্যে হয়নি।’
তবে আসনের বিষয়ে এনসিপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘৩০ আসনের বিষয়ে চূড়ান্ত আলাপ হয়নি। কিন্তু সংখ্যার বিষয়ে প্রাথমিক একটি ধারণা পাওয়ার পরেই আলোচনা এগিয়েছে।’
এনসিপির নেতারা বলছেন, দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। উল্লেখযোগ্য একটি অংশ জামায়াতের সঙ্গে থাকার পক্ষে। আর ক্ষুদ্র একটি অংশ চায় বিএনপির সঙ্গে জোট। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশের বিরোধিতার কারণে বৃহস্পতিবার রাতের পর জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে একটি ‘সন্দেহ’ তৈরি হয়েছে। অনেক নেতা চাইছেন, জামায়াতকে সঙ্গী করার আগে এনসিপি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করুক যে এটা শুধুই একটি নির্বাচনী কৌশলগত সমঝোতা। এ সমঝোতার সঙ্গে আদর্শগত কোনো সম্পর্ক নেই।
এনসিপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাহী কাউন্সিল সদস্য বলেন, ‘আমাদের প্রার্থীদের নিরাপত্তা, তাঁদের জিতে আসার সম্ভাবনা; এ রকম নানা বিষয় বিবেচনা করে কৌশলগত কারণে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক আদর্শগত জায়গা থেকে এক হওয়ার কোনো বিষয় জড়িত নয়। ভারতসহ নানা দেশে এ ধরনের জোট দেখা যায়। অনেক সময় বাম বা মধ্যপন্থীরাও নির্বাচনী কৌশলগত কারণে ডানপন্থীদের সঙ্গে এক হয়।’
নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি। দুই দলের নেতারাই বলেছেন, শেষ পর্যন্ত কত আসনে সমঝোতা হবে তা নিষ্পত্তি হতে সে দিনটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। কারণ সমঝোতার শর্ত হিসেবে দুই দল থেকেই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রার্থীকে তুলে নিতে হবে।
জোট ভাঙার আভাস?
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলা গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। গতকাল শুক্রবার সকালে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন ইঙ্গিত দেন এর নেতারা।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম জানান, গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের দুই দল এনসিপি ও এবি পার্টি বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনা করছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে খবর রটেছে। যদিও এসব বিষয়ে জোটের আরেক শরিক রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। কাইয়ূম বলেন, খবরটি সত্যি হয়ে থাকলে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন আর এই জোটে থাকবে না।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি অভিযোগ করেন, এনসিপি ও এবি পার্টি জোটের আকাঙ্ক্ষা মানছে না। তিনি বলেন, ‘এনসিপি জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করতে গেছে– এ কথা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাউর হওয়ার পর আমাদের দল, দলের বাইরের লোকজন, শুভানুধ্যায়ী, যাঁরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হিসেবে মনে করেন, তাঁদের মধ্যে একধরনের কনফিউশন (সংশয়) সৃষ্টি হয়েছে যে, জোটের অংশীদার হয়ে আমরা জামায়াতের কাছে চলে যাচ্ছি।’
কাইয়ূম বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, বিএনপি বা জামায়াত এ মুহূর্তে জাতীয় স্বার্থে কাজ করছে না। অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে গিয়ে তারা জাতিকে বিভক্ত করছে। এই বিভাজনের কোনো অংশ আমরা হতে চাই না।’
গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট ভেঙে গেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা বলেন, ‘রাজনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলতে চাই বলে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বলতে পারছি, না এটা ভেঙে গেছে। তবে সামাজিক মাধ্যম এবং বিভিন্ন খবরে যা শোনা যাচ্ছে, যদি সেগুলো সত্য হয়, তাহলে কার্যত এই জোট এক্সিস্ট (অস্তিত্বশীল থাকা) করবে না।’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ছিল গণতন্ত্র মঞ্চের অংশ। সেই জোট থেকে বেরিয়ে গত ৭ ডিসেম্বর এনসিপির নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটে যোগ দেয় দলটি।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমঝোতা নিয়ে শেষ মুহূর্তের দরকষাকষি চলছে। নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ কোনো ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে ভোটে যাওয়ার বিরোধিতা করলেও জামায়াতের সঙ্গী হতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিপি। কিন্তু এই সমঝোতার রূপরেখা বা ধরন কেমন হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি জুলাইয়ের তরুণ আন্দোলনকারীদের গড়া দলটি।
এদিকে বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা কিংবা জোট করা নিয়ে গঠনের এক মাস না পেরোতেই ভাঙনের সুর বাজছে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন গতকাল শুক্রবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে আমাদের নির্বাহী কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই এটা মোটামুটি নিশ্চিত। কিন্তু এই সমঝোতার ধরন কী হবে, কত আসনে সমঝোতা হবে, জোট হবে, নাকি শুধুই আসন সমঝোতা হবে; সেসব বিষয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এনসিপির সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনা এখনো চলমান। আলোচনার অগ্রগতিও ভালোই।’ কত আসনে সমঝোতা হচ্ছে জানতে চাইলে আযাদ বলেন, ‘কত আসনে সমঝোতা হবে সে রকম আলোচনা এখনো হয়নি। আগে নির্বাচনী সমঝোতার আলোচনা চূড়ান্ত হবে, তারপর অবস্থা ও অবস্থান বুঝে আসন সমঝোতার আলাপ হবে।’
এনসিপিকে ৩০টি আসন ছেড়ে দেওয়ার গুঞ্জনকে নাকচ করে দিয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘এ রকম আলোচনা আমাদের মধ্যে হয়নি।’
তবে আসনের বিষয়ে এনসিপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘৩০ আসনের বিষয়ে চূড়ান্ত আলাপ হয়নি। কিন্তু সংখ্যার বিষয়ে প্রাথমিক একটি ধারণা পাওয়ার পরেই আলোচনা এগিয়েছে।’
এনসিপির নেতারা বলছেন, দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। উল্লেখযোগ্য একটি অংশ জামায়াতের সঙ্গে থাকার পক্ষে। আর ক্ষুদ্র একটি অংশ চায় বিএনপির সঙ্গে জোট। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশের বিরোধিতার কারণে বৃহস্পতিবার রাতের পর জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে একটি ‘সন্দেহ’ তৈরি হয়েছে। অনেক নেতা চাইছেন, জামায়াতকে সঙ্গী করার আগে এনসিপি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করুক যে এটা শুধুই একটি নির্বাচনী কৌশলগত সমঝোতা। এ সমঝোতার সঙ্গে আদর্শগত কোনো সম্পর্ক নেই।
এনসিপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাহী কাউন্সিল সদস্য বলেন, ‘আমাদের প্রার্থীদের নিরাপত্তা, তাঁদের জিতে আসার সম্ভাবনা; এ রকম নানা বিষয় বিবেচনা করে কৌশলগত কারণে জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক আদর্শগত জায়গা থেকে এক হওয়ার কোনো বিষয় জড়িত নয়। ভারতসহ নানা দেশে এ ধরনের জোট দেখা যায়। অনেক সময় বাম বা মধ্যপন্থীরাও নির্বাচনী কৌশলগত কারণে ডানপন্থীদের সঙ্গে এক হয়।’
নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২০ জানুয়ারি। দুই দলের নেতারাই বলেছেন, শেষ পর্যন্ত কত আসনে সমঝোতা হবে তা নিষ্পত্তি হতে সে দিনটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। কারণ সমঝোতার শর্ত হিসেবে দুই দল থেকেই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রার্থীকে তুলে নিতে হবে।
জোট ভাঙার আভাস?
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তোলা গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। গতকাল শুক্রবার সকালে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন ইঙ্গিত দেন এর নেতারা।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম জানান, গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের দুই দল এনসিপি ও এবি পার্টি বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনা করছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে খবর রটেছে। যদিও এসব বিষয়ে জোটের আরেক শরিক রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। কাইয়ূম বলেন, খবরটি সত্যি হয়ে থাকলে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন আর এই জোটে থাকবে না।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি অভিযোগ করেন, এনসিপি ও এবি পার্টি জোটের আকাঙ্ক্ষা মানছে না। তিনি বলেন, ‘এনসিপি জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করতে গেছে– এ কথা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাউর হওয়ার পর আমাদের দল, দলের বাইরের লোকজন, শুভানুধ্যায়ী, যাঁরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হিসেবে মনে করেন, তাঁদের মধ্যে একধরনের কনফিউশন (সংশয়) সৃষ্টি হয়েছে যে, জোটের অংশীদার হয়ে আমরা জামায়াতের কাছে চলে যাচ্ছি।’
কাইয়ূম বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, বিএনপি বা জামায়াত এ মুহূর্তে জাতীয় স্বার্থে কাজ করছে না। অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে গিয়ে তারা জাতিকে বিভক্ত করছে। এই বিভাজনের কোনো অংশ আমরা হতে চাই না।’
গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট ভেঙে গেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা বলেন, ‘রাজনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলতে চাই বলে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বলতে পারছি, না এটা ভেঙে গেছে। তবে সামাজিক মাধ্যম এবং বিভিন্ন খবরে যা শোনা যাচ্ছে, যদি সেগুলো সত্য হয়, তাহলে কার্যত এই জোট এক্সিস্ট (অস্তিত্বশীল থাকা) করবে না।’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ছিল গণতন্ত্র মঞ্চের অংশ। সেই জোট থেকে বেরিয়ে গত ৭ ডিসেম্বর এনসিপির নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটে যোগ দেয় দলটি।

বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে বিশেষ নাম—সিরাজুল আলম খান। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ইতিহাসের পরিক্রমায় নিজের ভূমিকার জন্য ‘রহস্যপুরুষ’ আখ্যা পেয়েছেন এই রাজনীতিক। কর্মকাণ্ডে রহস্য থাকলেও রাজনৈতিক মহলে তাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত তিনি। যে গোপন সংগঠন স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্বের কেন্দ
০৯ জুন ২০২৩
নেতা আছেন, তাঁর নেতৃত্বও আছে। তাঁকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা; যাঁকে কেন্দ্র করে দলের সব ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সেই নেতা সশরীরে না থাকায় একধরনের শূন্যতা ছিল বিএনপিতে। অবশেষে সেই শূন্যতা দূর হলো।
৬ ঘণ্টা আগে
জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাভার থেকে ফেরার সময় তিনি এই কৃতজ্ঞতা জানান।
৯ ঘণ্টা আগে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
১০ ঘণ্টা আগেরেজা করিম, ঢাকা

নেতা আছেন, তাঁর নেতৃত্বও আছে। তাঁকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা; যাঁকে কেন্দ্র করে দলের সব ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সেই নেতা সশরীরে না থাকায় একধরনের শূন্যতা ছিল বিএনপিতে। অবশেষে সেই শূন্যতা দূর হলো। দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে গত বৃহস্পতিবার দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে এখন পুরোদমে উজ্জীবিত বিএনপি।
তারেক দেশে ফেরায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ফিরে এসেছে আত্মবিশ্বাস। সাংগঠনিক তৎপরতার পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারেও ফিরেছে গতি।
তারেক রহমানের ফেরার মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচনে বিএনপির বিজয়ের সম্ভাবনা প্রবল হয়েছে বলেও মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকেরা। একই সঙ্গে দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা ও সংশয় কেটে গেছে বলছেন তাঁরা।
তারেক রহমানকে এরই মধ্যে ‘ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী’ আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারেকের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের প্রিয় নেতা, ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী জনাব তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনে দেশের মানুষ খুশি হয়েছে, জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে, জনগণ উজ্জীবিত হয়েছে।’
দলীয় সূত্র বলছে, তারেক রহমান দেশে ফেরায় রাজধানী থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত বিএনপির সাংগঠনিক ইউনিটগুলো নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এত দিন অনেক এলাকায় নির্বাচনী প্রস্তুতি ও প্রচার কার্যক্রম ছিল ধীরগতির। এখন পোস্টারিং, লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ এবং স্থানীয় পর্যায়ে সভা-সমাবেশের সংখ্যা বাড়ছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলে তাঁরা জানান, নেতৃত্বের সরাসরি উপস্থিতি নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণে যেমন সহায়ক হচ্ছে, তেমনি মাঠের কর্মীদের মধ্যেও কাজের তাগিদ বাড়িয়েছে। তারেক রহমান দেশে ফেরার ২৪ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই নেতা-কর্মীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। গা ছাড়া দেওয়া নেতা-কর্মীরাও গা ঝাড়া দিতে শুরু করেছেন এখন, মাঠপর্যায়ে কর্মসূচির সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভূমিকা রাখেন, এমন নেতারা বলছেন, প্রবাসে থেকে দল পরিচালনার কারণে অনেক সময় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিলম্ব হতো।
দেশে ফিরে তারেক রহমান সরাসরি দিকনির্দেশনা দিতে পারায় সাংগঠনিক কাজের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারে সমন্বয় তৈরি হচ্ছে। নির্বাচন-কেন্দ্রিক বার্তা, স্লোগান ও কর্মসূচি আরও গোছানোভাবে মাঠে নামানো সম্ভব হচ্ছে। তাঁরা আরও বলছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে দলের রাজনৈতিক বার্তা আরও স্পষ্ট ও ধারাবাহিক হচ্ছে। এত দিন প্রবাস থেকে দেওয়া ভার্চুয়াল বক্তব্য ও নির্দেশনা অনেক সময় বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হওয়ার অভিযোগ ছিল। দেশে থেকে সরাসরি বক্তব্য ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত সেই বিভ্রান্তি কমাবে এবং নির্বাচনী প্রচারে দলের অবস্থান পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে সহায়ক হবে।
তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা জানান, আগে অনেক সময় নির্দেশনা পৌঁছাতে দেরি হতো বা বিভ্রান্তি তৈরি হতো। এখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কাছাকাছি থাকায় সিদ্ধান্ত দ্রুত মাঠে বাস্তবায়ন হবে। জেলা ও মহানগর পর্যায়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা, ওয়ার্ডভিত্তিক বৈঠক এবং সম্ভাব্য প্রার্থী ও সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো সম্ভব হবে। এতে কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ ও দায়বদ্ধতা দুটিই বাড়াবে। সব মিলিয়ে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে বিএনপিতে যে চাঙাভাব সৃষ্টি হয়েছে, তা সাংগঠনিক দিক থেকেই নয়, নির্বাচনী প্রচারেও নতুন গতি এনেছে।
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তারেক রহমান ফিরে আসায় বিএনপি শুধু নয়, দেশ সত্যিকার অর্থে একজন যোগ্য অভিভাবক পেয়েছে।’ তিনি বলেন, তারেক রহমান ফিরে আসায় নেতা-কর্মীরা অনেক বেশি উজ্জীবিত, অনেক বেশি সাহসী। প্রিয় নেতাকে কাছে পেয়ে নতুন পরিবর্তনের দিকে অগ্রসর হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন সারা দেশের নেতা-কর্মীরা।
১৭ বছর পর, বিশেষ করে সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরাও। তাঁদের মতে, বিএনপির জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। তারেক রহমানের ফেরায় যে চাঙাভাব ও নির্বাচনী গতি তৈরি হয়েছে, তা দলকে সাময়িকভাবে শক্তিশালী করেছে। তবে এই গতি কতটা স্থায়ী হবে, তা নির্ভর করবে দল কত দ্রুত অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারে এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে পারে, তার ওপর। এ ক্ষেত্রে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন তাঁরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, তারেক রহমান ফিরে আসায় বিএনপিতে যে চাঙাভাব তৈরি হয়েছে, তা বজায় রাখতে হলে সবার আগে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তারেক রহমানকে কঠোর হতে হবে। তিনি আরও বলেন, দলের স্বার্থে সুযোগসন্ধানীদের দূরে রাখতে হবে। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলা না থাকলে সব অর্জন ব্যর্থ হয়ে যাবে। এ বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের খুব সতর্ক থাকতে হবে।
রাত সোয়া ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় সাভার বাজার পার হয় তারেক রহমানের গাড়িবহর। বিএনপির মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

নেতা আছেন, তাঁর নেতৃত্বও আছে। তাঁকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা; যাঁকে কেন্দ্র করে দলের সব ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সেই নেতা সশরীরে না থাকায় একধরনের শূন্যতা ছিল বিএনপিতে। অবশেষে সেই শূন্যতা দূর হলো। দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে গত বৃহস্পতিবার দেশে ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে এখন পুরোদমে উজ্জীবিত বিএনপি।
তারেক দেশে ফেরায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ফিরে এসেছে আত্মবিশ্বাস। সাংগঠনিক তৎপরতার পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারেও ফিরেছে গতি।
তারেক রহমানের ফেরার মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচনে বিএনপির বিজয়ের সম্ভাবনা প্রবল হয়েছে বলেও মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকেরা। একই সঙ্গে দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা ও সংশয় কেটে গেছে বলছেন তাঁরা।
তারেক রহমানকে এরই মধ্যে ‘ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী’ আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারেকের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের প্রিয় নেতা, ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী জনাব তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনে দেশের মানুষ খুশি হয়েছে, জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে, জনগণ উজ্জীবিত হয়েছে।’
দলীয় সূত্র বলছে, তারেক রহমান দেশে ফেরায় রাজধানী থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত বিএনপির সাংগঠনিক ইউনিটগুলো নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এত দিন অনেক এলাকায় নির্বাচনী প্রস্তুতি ও প্রচার কার্যক্রম ছিল ধীরগতির। এখন পোস্টারিং, লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ এবং স্থানীয় পর্যায়ে সভা-সমাবেশের সংখ্যা বাড়ছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলে তাঁরা জানান, নেতৃত্বের সরাসরি উপস্থিতি নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণে যেমন সহায়ক হচ্ছে, তেমনি মাঠের কর্মীদের মধ্যেও কাজের তাগিদ বাড়িয়েছে। তারেক রহমান দেশে ফেরার ২৪ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই নেতা-কর্মীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। গা ছাড়া দেওয়া নেতা-কর্মীরাও গা ঝাড়া দিতে শুরু করেছেন এখন, মাঠপর্যায়ে কর্মসূচির সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভূমিকা রাখেন, এমন নেতারা বলছেন, প্রবাসে থেকে দল পরিচালনার কারণে অনেক সময় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিলম্ব হতো।
দেশে ফিরে তারেক রহমান সরাসরি দিকনির্দেশনা দিতে পারায় সাংগঠনিক কাজের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারে সমন্বয় তৈরি হচ্ছে। নির্বাচন-কেন্দ্রিক বার্তা, স্লোগান ও কর্মসূচি আরও গোছানোভাবে মাঠে নামানো সম্ভব হচ্ছে। তাঁরা আরও বলছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে দলের রাজনৈতিক বার্তা আরও স্পষ্ট ও ধারাবাহিক হচ্ছে। এত দিন প্রবাস থেকে দেওয়া ভার্চুয়াল বক্তব্য ও নির্দেশনা অনেক সময় বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হওয়ার অভিযোগ ছিল। দেশে থেকে সরাসরি বক্তব্য ও সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত সেই বিভ্রান্তি কমাবে এবং নির্বাচনী প্রচারে দলের অবস্থান পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে সহায়ক হবে।
তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা জানান, আগে অনেক সময় নির্দেশনা পৌঁছাতে দেরি হতো বা বিভ্রান্তি তৈরি হতো। এখন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কাছাকাছি থাকায় সিদ্ধান্ত দ্রুত মাঠে বাস্তবায়ন হবে। জেলা ও মহানগর পর্যায়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি সভা, ওয়ার্ডভিত্তিক বৈঠক এবং সম্ভাব্য প্রার্থী ও সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো সম্ভব হবে। এতে কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ ও দায়বদ্ধতা দুটিই বাড়াবে। সব মিলিয়ে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে বিএনপিতে যে চাঙাভাব সৃষ্টি হয়েছে, তা সাংগঠনিক দিক থেকেই নয়, নির্বাচনী প্রচারেও নতুন গতি এনেছে।
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তারেক রহমান ফিরে আসায় বিএনপি শুধু নয়, দেশ সত্যিকার অর্থে একজন যোগ্য অভিভাবক পেয়েছে।’ তিনি বলেন, তারেক রহমান ফিরে আসায় নেতা-কর্মীরা অনেক বেশি উজ্জীবিত, অনেক বেশি সাহসী। প্রিয় নেতাকে কাছে পেয়ে নতুন পরিবর্তনের দিকে অগ্রসর হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন সারা দেশের নেতা-কর্মীরা।
১৭ বছর পর, বিশেষ করে সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরাও। তাঁদের মতে, বিএনপির জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। তারেক রহমানের ফেরায় যে চাঙাভাব ও নির্বাচনী গতি তৈরি হয়েছে, তা দলকে সাময়িকভাবে শক্তিশালী করেছে। তবে এই গতি কতটা স্থায়ী হবে, তা নির্ভর করবে দল কত দ্রুত অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারে এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে পারে, তার ওপর। এ ক্ষেত্রে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন তাঁরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, তারেক রহমান ফিরে আসায় বিএনপিতে যে চাঙাভাব তৈরি হয়েছে, তা বজায় রাখতে হলে সবার আগে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তারেক রহমানকে কঠোর হতে হবে। তিনি আরও বলেন, দলের স্বার্থে সুযোগসন্ধানীদের দূরে রাখতে হবে। ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলা না থাকলে সব অর্জন ব্যর্থ হয়ে যাবে। এ বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের খুব সতর্ক থাকতে হবে।
রাত সোয়া ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় সাভার বাজার পার হয় তারেক রহমানের গাড়িবহর। বিএনপির মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে বিশেষ নাম—সিরাজুল আলম খান। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ইতিহাসের পরিক্রমায় নিজের ভূমিকার জন্য ‘রহস্যপুরুষ’ আখ্যা পেয়েছেন এই রাজনীতিক। কর্মকাণ্ডে রহস্য থাকলেও রাজনৈতিক মহলে তাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত তিনি। যে গোপন সংগঠন স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্বের কেন্দ
০৯ জুন ২০২৩
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমঝোতা নিয়ে শেষ মুহূর্তের দরকষাকষি চলছে। নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ কোনো ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে ভোটে যাওয়ার বিরোধিতা করলেও জামায়াতের সঙ্গী হতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিপি।
৬ ঘণ্টা আগে
জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাভার থেকে ফেরার সময় তিনি এই কৃতজ্ঞতা জানান।
৯ ঘণ্টা আগে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
১০ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাভার থেকে ফেরার সময় তিনি এই কৃতজ্ঞতা জানান।
তারেক রহমান নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যাঁরা বিকেল থেকে কষ্ট করেছেন, আপনাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।’
এর আগে, আজ বিকেল ৪টা ৪২ মিনিটে বাবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করেন তারেক রহমান। এরপর সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। তাঁকে বহনকারী বাস ধীরগতিতে চলায় দীর্ঘ ৫ পাঁচ ঘণ্টা পর স্মৃতিসৌধে পৌঁছান তিনি। এই দীর্ঘ সময় সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁর নিরাপত্তাবেষ্টনী হয়ে ছিলেন। তাই সারা দিনের কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি বিএনপির মধ্যমণি।

জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাভার থেকে ফেরার সময় তিনি এই কৃতজ্ঞতা জানান।
তারেক রহমান নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যাঁরা বিকেল থেকে কষ্ট করেছেন, আপনাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।’
এর আগে, আজ বিকেল ৪টা ৪২ মিনিটে বাবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করেন তারেক রহমান। এরপর সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। তাঁকে বহনকারী বাস ধীরগতিতে চলায় দীর্ঘ ৫ পাঁচ ঘণ্টা পর স্মৃতিসৌধে পৌঁছান তিনি। এই দীর্ঘ সময় সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁর নিরাপত্তাবেষ্টনী হয়ে ছিলেন। তাই সারা দিনের কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি বিএনপির মধ্যমণি।

বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে বিশেষ নাম—সিরাজুল আলম খান। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ইতিহাসের পরিক্রমায় নিজের ভূমিকার জন্য ‘রহস্যপুরুষ’ আখ্যা পেয়েছেন এই রাজনীতিক। কর্মকাণ্ডে রহস্য থাকলেও রাজনৈতিক মহলে তাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত তিনি। যে গোপন সংগঠন স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্বের কেন্দ
০৯ জুন ২০২৩
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমঝোতা নিয়ে শেষ মুহূর্তের দরকষাকষি চলছে। নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ কোনো ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে ভোটে যাওয়ার বিরোধিতা করলেও জামায়াতের সঙ্গী হতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিপি।
৬ ঘণ্টা আগে
নেতা আছেন, তাঁর নেতৃত্বও আছে। তাঁকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা; যাঁকে কেন্দ্র করে দলের সব ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সেই নেতা সশরীরে না থাকায় একধরনের শূন্যতা ছিল বিএনপিতে। অবশেষে সেই শূন্যতা দূর হলো।
৬ ঘণ্টা আগে
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
১০ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
বিএনপির মিডিয়া সেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এক ফেসবুক পোস্টে মিডিয়া সেল জানায়, তারেক রহমান আজ শুক্রবার রাত ১০টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
বিএনপির মিডিয়া সেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এক ফেসবুক পোস্টে মিডিয়া সেল জানায়, তারেক রহমান আজ শুক্রবার রাত ১০টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে বিশেষ নাম—সিরাজুল আলম খান। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ইতিহাসের পরিক্রমায় নিজের ভূমিকার জন্য ‘রহস্যপুরুষ’ আখ্যা পেয়েছেন এই রাজনীতিক। কর্মকাণ্ডে রহস্য থাকলেও রাজনৈতিক মহলে তাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত তিনি। যে গোপন সংগঠন স্বাধীনতাযুদ্ধের নেতৃত্বের কেন্দ
০৯ জুন ২০২৩
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমঝোতা নিয়ে শেষ মুহূর্তের দরকষাকষি চলছে। নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ কোনো ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে ভোটে যাওয়ার বিরোধিতা করলেও জামায়াতের সঙ্গী হতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিপি।
৬ ঘণ্টা আগে
নেতা আছেন, তাঁর নেতৃত্বও আছে। তাঁকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা; যাঁকে কেন্দ্র করে দলের সব ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, সেই নেতা সশরীরে না থাকায় একধরনের শূন্যতা ছিল বিএনপিতে। অবশেষে সেই শূন্যতা দূর হলো।
৬ ঘণ্টা আগে
জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাভার থেকে ফেরার সময় তিনি এই কৃতজ্ঞতা জানান।
৯ ঘণ্টা আগে