Ajker Patrika

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাক্ষাৎ শিষ্টাচার বহির্ভূত: ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক

জবি প্রতিনিধি 
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬: ৩৯
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল আজ মঙ্গলবার এক মানববন্ধনের আয়োজন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল আজ মঙ্গলবার এক মানববন্ধনের আয়োজন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য একটি সংগঠন থেকে প্রতিনিধি নেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সব ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি দেখা করতে পারবে। একটা মাত্র সংগঠন সব শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি করতে পারে না। সব সংগঠনকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আয়োজিত এক মানববন্ধনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এসব কথা বলেন।

নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা অবশ্যই দেখা করতে পারে কিন্তু কোনো প্রেস নোটের মাধ্যমে তা হবে না। আমরা ক্রিয়াশীল ছাত্রসমাজের ২৮টি সংগঠনকে আমন্ত্রণ দিয়েছিলাম সভার জন্য। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে দাওয়াত দিইনি কারণ তারা তাদের নিজেদের রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন মনে করে না। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যারা দেখা করেছেন তা শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে আমরা মনে করি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির শিবিরকে ইঙ্গিত করে বলেন, আরেকটি সংগঠনকে দাওয়াত দিইনি বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এই ছাত্র সংগঠনটি অতীতে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে রাজনীতি করেছে। খুনি সংগঠন ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর তারা এবার প্রকাশ্যে এসে রাজনীতি করছে। তাই আমরা সব সংগঠনের সঙ্গে তাদের আমন্ত্রণ জানাইনি।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির উপস্থিত ছিলেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
মানববন্ধনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির উপস্থিত ছিলেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির আরও বলেন, দুনিয়া কাঁপানো ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের ১০০-এর বেশি নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে। তা ছাড়া সারা দেশে অন্য কোনো সংগঠনের এত নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে কেও দেখাতে পারেনি। জাতীয়তাবাদ ছাত্রদলের প্রথম শহীদ ওয়াসিমকে আমরা ভুলে যায়নি। ৫০০০-এর বেশি নেতা-কর্মী সেসময় গ্রেপ্তার হয়েছিল। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বিশ্বাস করে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্ব যে আন্দোলন গত ৫ আগস্ট তার প্রাথমিক ফলাফল পেয়েছে। ৫ আগস্টের পূর্বে সব থেকে নির্যাতিত সংগঠন ছিল ছাত্রদল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন নেতা-কর্মী এখন পর্যন্ত গুম রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভবিষ্যতে ছাত্রদলের রাজনীতি পরিচালিত হবে বলেও জানান তিনি।

এ সময় নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমরা দাবি জানাতে চাই খুনি ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সব নেতা-কর্মীকে আইনের আওতায় আনতে হবে দ্রুত।

মানববন্ধনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলাম বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট দেশে আয়না ঘর বানিয়ে আমাদের ভাই ছাত্রদলের রাসেল, রানা, আল আমিনকে আজও গুম অবস্থায় রেখেছে। প্রতিটি মায়ের আহাজারি তারা তাদের সন্তানকে ফেরত চায়। প্রতিটি ছাত্রদলের সহকর্মী তাদের ফেরত পেতে আহাজারি করছে। আমরা আমাদের গুম হওয়া সহকর্মীকে ফিরে পেতে সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করে আন্দোলন চালিয়ে যাব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি কাজী জিয়া উদ্দিন বাসেত, সিনিয়র সহসভাপতি ইব্রাহিম কবির মিঠু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেল, মো. মাহমুদুল হাসান খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুল আরেফিনসহ শাখা ছাত্রদলের অসংখ্য নেতা-কর্মী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা-দাফন ঘিরে সংসদ ভবন এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৫০
খালেদা জিয়ার জানাজা, দাফন ঘিরে জাতীয় সংসদ ভবন-জিয়া উদ্যান এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। ছবি : আজকের পত্রিকা
খালেদা জিয়ার জানাজা, দাফন ঘিরে জাতীয় সংসদ ভবন-জিয়া উদ্যান এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। ছবি : আজকের পত্রিকা

‎সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জানাজা, দাফন ঘিরে জাতীয় সংসদ ভবন এবং জিয়া উদ্যান এলাকা ঘিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব, সেনাবাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থার কয়েক হাজার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। অনুমোদিত ছাড়া সংসদ ভবনের উত্তর প্লাজায় কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

‎আজ ‎বুধবার সকালে সংসদ ভবন এলাকায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।

গতকাল ‎মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। আজ সকাল ৯টার একটু আগে বাংলাদেশের পতাকায় মোড়ানো একটি গাড়িতে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের উদ্দেশে বের করা হয় তাঁর মরদেহ। এরপর নেওয়া হয় গুলশানের তারেক রহমানের বাসায়। সেখান থেকে তাঁর মরদেহ জানাজা ও দাফনের জন্য আনা হয় জাতীয় সংসদ ভবনে।

খালেদা জিয়ার জানাজা, দাফন ঘিরে জাতীয় সংসদ ভবন-জিয়া উদ্যান এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। ছবি : আজকের পত্রিকা
খালেদা জিয়ার জানাজা, দাফন ঘিরে জাতীয় সংসদ ভবন-জিয়া উদ্যান এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। ছবি : আজকের পত্রিকা

খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টাগণ, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ।

‎এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন কার্যক্রম পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় করা হবে। এ সময় ১০ হাজারের বেশি পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।

‎‎জানা যায়, খালেদা জিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এবং তাঁর জানাজায় অংশ নিতে পাকিস্তানের স্পিকার ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত ও দেশটির উচ্চশিক্ষামন্ত্রী, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল সরকারের একজন প্রতিনিধিসহ বেশ কয়েকটি দেশের মন্ত্রী ও বিশেষ দূত ঢাকায় আসছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এরশাদের ১২৬টি আসনের টোপ প্রত্যাখ্যান করে সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন খালেদা জিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৫৭
খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত
খালেদা জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে গভীর সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল, তার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। সম্প্রতি তৎকালীন সরকারের নীতিনির্ধারকদের স্মৃতিচারণা ও ডায়েরি থেকে বেরিয়ে এসেছে সেই সময়ের ক্ষমতা দখল, ষড়যন্ত্র এবং একজন সাধারণ গৃহবধূ থেকে খালেদা জিয়ার প্রখর রাজনৈতিক নেত্রী হয়ে ওঠার রোমাঞ্চকর ইতিহাস।

বিচারপতি সাত্তার ও এরশাদের প্ররোচনা

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। তবে পরবর্তী পূর্ণমেয়াদি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিএনপির ভেতরে চরম দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। তৎকালীন নীতিনির্ধারকদের মতে, একদল খালেদা জিয়াকে সরাসরি রাজনীতিতে আনতে চাইলেও তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদের প্ররোচনায় একটি পক্ষ বিচারপতি সাত্তারের মনোনয়ন নিশ্চিত করে। এরশাদের আশঙ্কা ছিল, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ থাকবে না।

এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. এম এ মতিন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অভিযোগ রয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে একটি ‘প্রেশার গ্রুপ’ তৈরি করা হয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজও সাত্তারের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শামসুদ্দোহাও এরশাদের প্ররোচনায় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা যায়।

১৯৮২-এর অভ্যুত্থান ও বিএনপির ভাঙন

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ বিচারপতি সাত্তারকে হটিয়ে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করার পরপরই শুরু হয় ধরপাকড়। তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা তানভীর আহমদ সিদ্দিকীসহ অনেককে জেলে পাঠানো হয়। এরশাদের শাসনামলে বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য বারবার ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করা হয়। এর ফলে ১৯৮৩ সালে শাহ আজিজ, ডা. এম এ মতিন এবং শামসুল হুদা চৌধুরীদের নিয়ে ‘বিএনপি (হুদা-মতিন)’ গ্রুপ গঠিত হয়, যারা মূলত এরশাদকে সমর্থন জোগাত।

বিশ্বব্যাংকের উদ্বেগ ও এরশাদের অগণতান্ত্রিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা

রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর জেনারেল এরশাদ দাবি করতে থাকেন যে প্রশাসনে সামরিক বাহিনীর সরাসরি অংশীদারত্ব থাকতে হবে। এই অগণতান্ত্রিক দাবি বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ওয়াশিংটনে কর্মরত তৎকালীন কর্মকর্তা এম সাইদুজ্জামান ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে সরকারকে জানিয়েছিলেন, সামরিক হস্তক্ষেপের কারণে বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি সাত্তারকে সতর্ক করলেও ততক্ষণে পর্দার আড়ালে ক্ষমতা দখলের চিত্রনাট্য চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল।

আপসহীন নেত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার উত্থান

বিএনপির এই চরম দুর্দিনে দল যখন অস্তিত্ব সংকটে, তখনই দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনুরোধে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসেন। ১৯৮৭ সালে তাঁকে আটকের পরও আন্দোলন দমানো যায়নি। ধীরে ধীরে তিনি একজন দক্ষ বক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। অথচ ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত লাজুক ছিলেন এবং এমনকি জিয়াউর রহমানের জীবদ্দশায় কোনো পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যেতেও সংকোচ বোধ করতেন। তাঁর এই আমূল পরিবর্তন এবং প্রখর স্মৃতিশক্তি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বদেরও মুগ্ধ করেছিল।

’৮৬-এর নির্বাচন: ষড়যন্ত্র ও দৃঢ়তা

১৯৮৬ সালের নির্বাচনে এরশাদ বিএনপিকে ১২৬টি আসন দেওয়ার টোপ দিয়েছিলেন। এই প্রস্তাব নিয়ে দলের অভ্যন্তরে বিতর্ক থাকলেও খালেদা জিয়া তাঁর সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। তিনি পরিষ্কার জানিয়েছিলেন, স্বৈরশাসকের অধীনে কোনো সিট ভাগাভাগি বা নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ ঘোষণা করলেও পরদিনই নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনকে দুর্বল করে দেন বলে বিএনপি নেতাদের অভিমত।

চূড়ান্ত পতন ও গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন

দীর্ঘ ৯ বছরের লড়াইয়ের পর ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর সম্মিলিত আন্দোলনের মুখে এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের পদত্যাগ এবং প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে পুনরায় গণতন্ত্রের সূর্য উদিত হয়।

তথ্যসূত্র: তৎকালীন সরকারের নীতিনির্ধারকদের স্মৃতিচারণা ও ‘গণতন্ত্রের সংগ্রাম’ বইয়ের ঐতিহাসিক নথি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মরদেহ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে, চলছে জানাজার প্রস্তুতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ১৩
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপসহীন নেত্রী এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মরদেহ জানাজার জন্য মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আজ বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার কিছু পরে নেওয়া হয়েছে। এর পর বাদ জোহর আনুমানিক বেলা ২টার দিকে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার পরিবর্তে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর পশ্চিম প্রান্তে কফিন রাখা হবে বলে জানা গেছে। জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং পুরো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে খালেদা জিয়ার জানাজাকে কেন্দ্র করে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নিরাপত্তা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সকল দপ্তর। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের চারপাশের সড়কগুলোতেও যেন জনসাধারণ অবস্থান করতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে ইতিমধ্যে সংসদ ভবন এলাকায় আসতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। সেখানে কেউ কাঁদছেন, কেউ মন খারাপ করে বসে আছেন। পুরো এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে শোকের পরিবেশ।

জানাজার পর বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশে খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে। এ সময় খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, বিদেশি অতিথি, রাষ্ট্রদূত ও বিএনপির মনোনীত রাজনীতিবিদেরা উপস্থিত থাকবেন।

দাফনের কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্নের জন্য সেখানে নির্ধারিত ব্যক্তি ব্যতীত আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। দাফন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে জনসাধারণের চলাচল সীমিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গুলশান থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পথে খালেদা জিয়ার মরদেহ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৩৯
জাতীয় পতাকায় মোড়ানো গাড়িতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহ। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাতীয় পতাকায় মোড়ানো গাড়িতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহ। ছবি: আজকের পত্রিকা

গুলশান থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পথে যাত্রা শুরু করেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মরদেহবাহী জাতীয় পতাকায় মোড়ানো গাড়িটি। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে গুলশানের ৭৯ সড়কে ১৯৬ নম্বর বাড়িতে তারেক রহমানের বাসভবন থেকে বের হয় গাড়িবহর।

এর আগে, আজ সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মরদেহবাহী গাড়ি তারেক রহমানের বাসভবনে প্রবেশ করে। এর পাশেই খালেদা জিয়ার দীর্ঘদিনের বাসভবন ফিরোজা।

এ সময় পুরো এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে দিয়ে মরদেহ বাসার ভেতরে নেওয়া হলে স্বজনদের মধ্যে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আত্মীয়স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় খালেদা জিয়ার মরদেহের পাশে বসে তাঁর সন্তান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোরআন তেলাওয়াত করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ এবং রেজা কিবরিয়াসহ দলের শীর্ষ নেতারা। বাসার বাইরে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ ভিড় করেন। প্রিয় নেত্রীকে শেষবারের মতো এক নজর দেখার চেষ্টা করেন অনেকে। এলাকা জুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত