Ajker Patrika

শাপলা চত্বরের সেই হেফাজত এখন কুপোকাত

রেজা করিম ও শাহরিয়ার হাসান
শাপলা চত্বরের সেই হেফাজত এখন কুপোকাত

ঢাকা: ২০১৩ সালের ৫ মে। হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ। দলে দলে মিছিল নিয়ে মতিঝিলের দিকে এগোতে থাকে হাজার হাজার টুপি পরা মানুষ। তাদের সিংহভাগই কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক–শিক্ষার্থী। হেফাজতে ইসলাম নামে একটি নতুন সংগঠনের ব্যানারে মিছিল করা এসব মানুষ একপর্যায়ে বসে পড়ে শাপলা চত্বর এলাকায়। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়। শুরু হয় তাণ্ডব। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো রাজধানীতে। ওই রাতে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দিলেও সেদিনের শোডাউনই হেফাজতকে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। তবে মাত্র আট বছরের ব্যবধানেই সেই উদ্ধত হেফাজত আজ কুপোকাত।

গত আট বছরে নানাভাবে সরকারকে চাপে রেখেছে হেফাজত। সুযোগ পেলেই শক্তি দেখাতে চাওয়া হেফাজত সর্বশেষ তাণ্ডব চালায় সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে। তাদের এই কর্মকাণ্ড দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও সমালোচিত হয়।

গত ২৫ এপ্রিল রাতে বিলুপ্তির ঘোষণার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পতন হয়েছে হেফাজতে ইসলামের। বিলুপ্ত কমিটির আমির জুনাইদ বাবুনগরীর ঘোষণার মধ্য দিয়ে ১১ বছরের পথ চলায় বিরতি নিল সংগঠনটি। সম্প্রতি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যোগ দেওয়া নিয়ে বিরোধিতা করে আন্দোলনের মাঠ গরম করে হেফাজত। এবারও তাঁরা শাপলা চত্বরের মতো ভয়াল পরিস্থিতি তৈরির পাঁয়তারা চালায়। তবে সরকারের কঠোর অবস্থান এবং নিজেদের ভুলের কারণে পুরোপুরি ভরাডুবি হয়েছে তাঁদের। লন্ডভন্ড হেফাজতকে আর কোনোমতেই ছাড় দিতে চায় না সরকার। এ অবস্থায় হেফাজতের সামনে কঠিন এক আগামী অপেক্ষা করছে।

হেফাজতের উত্থান-পতন
২০১০–এর ১৯ জানুয়ারি জন্ম হয় হেফাজতে ইসলামের। জন্মের পরপরই রাজপথ গরম করে নিজেদের অবস্থানের জানান দেয় কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটি। ২০১১ সালে নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরোধিতা করে আন্দোলনের মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম। তবে সে বছর শায়খুল হাদিস আজিজুল হক ও মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ওই আন্দোলনে হেফাজতকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওই দুই নেতার মৃত্যুর পরে ধীরে ধীরে নিজেদের জানান দিতে শুরু করে সংগঠনটি। ২০১৩ সালে শাহবাগে ব্লগারদের উপস্থিতি ও তাঁদের লেখাকে ইস্যু করে সামনে চলে আসে হেফাজত। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্লগার রাজিব হায়দারের ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ আলেমদের নিয়ে হাটহাজারীতে আলোচনায় বসেন। সে আলোচনার সিদ্ধান্তেই ৫ এপ্রিল ২০১৩ শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে হেফাজত। সেদিনই প্রথমবারের মতো রাজধানীতে জোরেশোরে নিজেদের উত্থানের জানান দেয় সংগঠনটি।

সম্প্রতি মোদিবিরোধী আন্দোলনে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের নামে অশান্ত হয়ে ওঠে হেফাজত। ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে ১৭ জন মানুষ প্রাণ হারান। আহত হন আরও অনেকে। ক্ষতির সম্মুখীন হয় বিপুল সম্পদ। গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে নারীসহ অবরুদ্ধ হন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। এ অবস্থায় হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যায় সরকার। এরপর আট বছর আগে করা ‘সরকার উৎখাতে উসকানি’ দেওয়ার ৬৮টি মামলার তদন্ত নতুন করে সক্রিয় হয়। নতুন করে দায়ের হয় ১৪৪টি মামলা। আসামি করা হয়েছে ৩ হাজার ২০০ জনকে। অজ্ঞাতনামা আসামি আছে প্রায় ৮০ হাজার। নতুন-পুরোনো মামলায় এরই মধ্যে হেফাজতের প্রায় ৯০০ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ২০ জনসহ ৩৫ জন কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন। ১১ এপ্রিল হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে গ্রেপ্তার করে এই অভিযান শুরু করে পুলিশ। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮ এপ্রিল আলোচিত মামুনুল হক গ্রেপ্তার হন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা হেফাজতের পুরোনো মামলাগুলো গুছিয়ে এনেছি। নতুন মামলাগুলোর কয়েকটি সিআইডি ও পিবিআই তদন্ত করছে। আগামী দু-এক মাসের মধ্যে মামলাগুলোর তদন্ত শেষ করা হবে।’

একের পর এক কেন্দ্রীয় নেতার গ্রেপ্তার আর মামলার ভারে নুয়ে পড়া হেফাজত সমঝোতার পথ বেছে নিয়ে সরকারের মন গলানোর চেষ্টা করে। তবে কোনো চেষ্টাই কাজে আসেনি। এ পরিস্থতিতে ২৫ এপ্রিল রাতে হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে সংগঠন চলছে ৫ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। এরপরেও থামেনি গ্রেপ্তার অভিযান।

 রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হেফাজতের পরিচয় ও উদ্দেশ্য অস্পষ্ট। তারা নিজেদের অরাজনৈতিক বললেও তাদের কর্মকাণ্ডে রাজনীতি আছে। তাঁদের স্ববিরোধী আচরণ প্রমাণ করে যে রাজনীতির বিষয়ে তাদের স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। কাজেই তাঁদের পতন অনিবার্য। অন্যদিকে হাতেনাতে প্রমাণ না থাকলেও এটা বোঝা যায়, হেফাজতে ওপরের সারির নেতারা কারো না কারও স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছেন। অন্যদিকে হেফাজতকে এখানে অনেক বড় করে তোলা হয়েছে নানাভাবে। ঠিক যতটা না, তার অনেক বড় করে দেখানো হয়েছে।

রাজনীতির জন্য হেফাজতকে বড় কোনো ফ্যাক্টর মনে করেন না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হেফাজতকে বড় করে দেখানো হলেও সারা দেশে তাদের মূলত দুইটা মাত্র পকেট। একটা পকেট ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, আরেকটা চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে। এই দুইটা পকেট দিয়ে তাঁরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে ফেলবে, এই শক্তি তাঁদের নেই। তাঁরা হয়তো উত্তেজনা ছড়াতে পারবে, যেটা তাঁরা করেছে। কিন্তু শেষমেশ তাঁদের পতনও হয়েছে।’

হেফাজতের করুণ পরিণতির জন্য সংগঠনের নেতা–কর্মীদের অনেকেই বলছেন, বিভক্তিই এ পরিণতি ডেকে এনেছে। সংগঠনের বর্তমান নাজুক পরিস্থিতির জন্য হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির নীতি নির্ধারকদেরও দায়ী করেছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে। তাঁরা বলেন, 'জুনাইদ বাবুনগরী ও তাঁর একান্ত অনুসারীদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আজ এমন পরিণতি হয়েছে। হেফাজত বিভক্ত না হলে হয়তো আজ এ অবস্থা দেখতে হতো না।'

২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা ও আমির আহমদ শাহ শফীর মৃত্যু হয়। ১৫ নভেম্বর নতুন কমিটি হয়। এই কমটিতে শফীপন্থীরা জায়গা না পাওয়ায় সংগঠনে বিদ্রোহী একটি পক্ষ দাঁড়িয়ে যায়। এ পক্ষটি শফীপুত্র আনাস মাদানীকে নিয়ে হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা করে আসছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ পক্ষটি তৎপর হয়ে উঠেছে। তাঁরাই এখন ব্যস্ত হেফাজতকে নতুনভাবে সাজাতে।

 এরই মধ্যে আহমদ শফীর ২৫ হাজার মুরিদ ও খলিফার তালিকা তৈরি করে তাঁদের সক্রিয় করার প্রক্রিয়া চলছে। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করছে তাঁরা। আলেম-ওলামাদের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও এ বিষয়ে যোগাযোগ রক্ষা করছেন তাঁরা।

হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দীন রুহী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হেফাজতের আগামী দিনে কী হবে, না হবে, সেটা আমরাই নির্ধারণ করব। আহমদ শফীর আদর্শের আলোকে হেফাজতের আগামী দিনের নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’

বিরোধী পক্ষের এ চাপ নিয়েও চিন্তায় আছে হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব। বিশেষ করে ওই পক্ষটি সরকারঘেঁষা বলে চিন্তাটা আরও বেশি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকার ও হেফাজতের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী ১৪ দলের এক নেতা বলেছেন, সরকার বাবুনগরী ও তাঁর অনুসারীদের নিয়ে করা হেফাজতকে কোনোভাবেই মানতে পারছে না। এরই মধ্যে আমিরের জন্য নতুন কাউকে খোঁজা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে হেফাজতে ইসলামের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব নেতা নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’

হেফাজত কারও নয়
রাজনৈতিক স্বার্থে হেফাজতকে ব্যবহারের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ থাকলেও সংগঠনটির দায় নিতে চায় না কেউ। বিএনপির অভিযোগ, হেফাজতে ইসলাম শুরু থেকেই ক্ষমতাসীন সরকারের মাধ্যমে প্রতিপালিত হয়ে আসছে। সংগঠনটির বেড়ে ওঠা, কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের স্বীকৃতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধি, হেফাজতের শীর্ষনেতৃত্বের সঙ্গে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নিয়মিত যোগাযোগের মধ্য দিয়ে তারই প্রমাণ পাওয়া গেছে।

হেফাজতের কর্মসূচি ঘিরে সংঘটিত সাম্প্রতিক তাণ্ডবের জন্য সরকার দলের পক্ষ থেকে বিএনপিকে দায়ী করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে উগ্র-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর তাণ্ডবলীলায় যে বিএনপি জড়িত, তা দিবালোকের মতো পরিষ্কার।’

জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকারের নেতা, মন্ত্রী, অনেক মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে ‘হেফাজতকে বিএনপি ইন্ধন দিয়েছে, কর্মসূচি পালনে সমর্থন দিয়েছে।’ কিন্তু হেফাজতের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’

 ক্যালেন্ডারে হেফাজতের কর্মসূচি
২০১১: নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করতে ‘নারী উন্নয়ন নীতিমালা’ ঘোষিত হওয়ার পরপরই সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে সংগঠনটি।
২০১৩: দেশে ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৩ দফা উত্থাপন করে। দাবিগুলোর বেশ কয়েকটি ধারা বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনা এখনো মানুষের মনকে নাড়িয়ে দেয়।
২০১৪: ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেফাজতে ইসলাম অংশ নেবে এমন প্রচারও ছিল। শেষ পর্যন্ত তারা অবশ্য নির্বাচনে যায়নি। সংগঠনটির বিরুদ্ধে সরকার সমর্থক ও সরকারবিরোধী দুই অংশের কাছ থেকেই আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ১১ এপ্রিল এক সমাবেশে আহমদ শফী বলেন, ‘হাসিনা সরকার, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ সবাই আমাদের বন্ধু।’
২০১৭: সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে স্থাপন করা গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য অপসারণে বিক্ষোভ করে হেফাজত। বিক্ষোভ সমাবেশে হেফাজত নেতারা হুমকি দেন, সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে ভাস্কর্যটি অপসারণ করা না হলে ‘শাপলা চত্বরের মতো পরিস্থিতি’ তৈরি হতে পারে।
২০২০: বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণের দাবি করে হেফাজতে ইসলাম।
২০২১: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে আক্রমণাত্মক কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতায় ১৭ জন প্রাণ হারান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৭ ঘণ্টায় ১২ লাখ টাকা তাসনিম জারার নির্বাচনী তহবিলে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
তাসনিম জারা। ছবি: সংগৃহীত
তাসনিম জারা। ছবি: সংগৃহীত

সাত ঘণ্টায় ১২ লাখ টাকার বেশি নির্বাচনী অনুদান পেয়েছেন ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা। আজ মঙ্গলবার ভোরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে তিনি এ কথা জানান।

ফেসবুক পোস্টে তাসনিম জারা লিখেছেন, ‘মাত্র ৭ ঘণ্টায় আপনারা ১২ লাখ টাকারও বেশি পাঠিয়েছেন। এতটা অভূতপূর্বভাবে আপনারা পাশে দাঁড়াবেন, তা সত্যিই আমাদের কল্পনার বাইরে ছিল। আপনাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।’

তাসনিম জারা আরও জানান, তাদের মোট লক্ষ্যমাত্রা ৪৬ লাখ ৯৩ হাজার ৫৮০ টাকা। আর ৩৪ লাখ টাকা সংগ্রহ সম্পন্ন হলেই তহবিল সংগ্রহ বন্ধ করে দেওয়া হবে।

তাসনিম জারা ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমরা অবগত আছি, যে রাত (সোমবার) ২টার পর থেকে নির্ধারিত লিমিট অতিক্রম করার কারণে বিকাশে আর টাকা পাঠানো যাচ্ছে না। আপাতত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ডোনেশান গ্রহণ করা যাচ্ছে।’

গতকাল সোমবার নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ শুরু করেন তাসনিম জারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে সহায়তা চান তিনি।

তাসনিম জারা গতকাল রাতে আরেকটি পোস্টে লিখেছেন, ‘আপনাদের আগেই বলেছি, আমরা স্বচ্ছভাবে টাকা উত্তোলন ও খরচ করব। তাই আপনাদের সঙ্গে স্ক্রিনশট শেয়ার করছি। এ দুটি অ্যাকাউন্ট শূন্য থেকে শুরু হয়েছে। আর্থিক স্বচ্ছতা বজায় রাখতে আপনাদের সম্পূর্ণ হিসাব দেওয়া হবে।’

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ঢাকা-৯ (খিলগাঁও, সবুজবাগ, মুগদা, মান্ডা) আসনের মনোনয়নপত্র কিনেছেন তাসনিম জারা। ঢাকা-৯ আসন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪ ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ড তথা সবুজবাগ, খিলগাঁও, মুগদা ও মান্ডা থানা নিয়ে গঠিত।

এই আসনটিতে বিএনপি এখনো প্রার্থী না দিলেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দিয়েছে। এই আসনে জামায়াতের প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থী কবির আহমদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকা-১৭ আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন এনসিপির তাজনূভা, ১৮-তে নাসীর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। ছবি: সংগৃহীত
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আজ সোমবার আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনার কার্যালয় থেকে তাজনূভা জাবীন ঢাকা-১৭ ও নাসীরুদ্দীন ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়নপত্র নেন।

তাজনূভা জাবীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড প্রোফাইলে দেওয়া পোস্টে বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে ঢাকা-১৭ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি আজকে। আমার জন‍্য দোয়া করবেন আপনারা। আমার দল এনসিপি। আমার দলের মার্কা শাপলা কলি।’

ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনী এলাকার মধ্যে রয়েছে গুলশান, বনানী, বারিধারা, ভাষানটেক, কালাচাঁদপুর, শাহজাদপুর, কড়াইল, মহাখালী ও ক‍্যান্টনমেন্ট। এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী এস এম খালিকুজ্জামান। বিএনপি এই আসনে এখানো দলীয় প্রার্থী দেয়নি। এই আসনের আরেকজন প্রার্থী বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ।

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পক্ষে তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা উত্তরা আজিমপুর কাঁচাবাজার আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনার অফিস থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এনসিপির মিডিয়া সেল বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম সদস্যসচিব মো. মান্নান তালুকদার (মাহিন), সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম প্রিন্স এবং এনসিপির উত্তরার সাত থানার প্রধান সমন্বয়কারী ও যুগ্ম সমন্বয়কারীরা।

ঢাকা-১৮ আসনের নির্বাচনী এলাকার মধ্যে রয়েছে উত্তরখান, খিলক্ষেত, তুরাগ ও দক্ষিণখান। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর এবং জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যক্ষ আশরাফুল হক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মব সহিংসতা গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলছে: রিজভী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি

দেশের বিভিন্ন স্থানে উচ্ছৃঙ্খল জনতা মব তৈরি করে হামলা চালাচ্ছে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ করছে— এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে গণতন্ত্রবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আজ সোমবার জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা উপলক্ষে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, বিভিন্ন ইস্যুকে সামনে রেখে সারা দেশে একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশে গণতন্ত্র কখনোই শক্তিশালী হবে না। তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। জনগণ এখন ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। কিন্তু সেই সম্ভাবনাকে নষ্ট করার জন্য একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে। এ ধরনের অপচেষ্টাকে কোনোভাবেই সুযোগ না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে বিদেশের সঙ্গে অসম চুক্তিতে চড়া মূল্যে বিদ্যুৎ কিনে জনগণের অর্থের অপচয় করেছে। জনগণের কষ্টার্জিত টাকাকে নিজের মনে করে লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বের প্রশংসা করে রিজভী বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ইশরাক এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই প্রজন্মের নেতা-কর্মীরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচন বানচালের চেষ্টা জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করবে: জোনায়েদ সাকি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

গণসংহতি আন্দোলনের (জিএসএ) প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যাবে, গণতান্ত্রিক বন্দোবস্তের দিকে যাবে; তার জন্য বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন অপরিহার্য। যারাই একে বানচাল করতে চেষ্টা করবে, তাদের জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জুলাইয়ের আদর্শে প্রতিহত করবে।

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শহীদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড, গণমাধ্যম ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলা, ময়মনসিংহে শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে গণপিটুনি দিয়ে মেরে লাশ পুড়িয়ে ফেলা ও লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের বাড়িতে আগুন দিয়ে শিশু আয়েশা আক্তারকে পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, জুলাইয়ে যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, তার বিচার করতে হবে। নির্বাচন বানচালের যে তৎপরতা চলছে, সরকারকে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা প্রথম আলো, ডেইলি স্টার কিংবা অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন জনের ওপর হামলা করেছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

সরকারের সমালোচনা করে জোনায়েদ সাকি বলেন, অভ্যুত্থানের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সরকার, যারা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত করার দায়িত্বপ্রাপ্ত, তারা আজকে অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী নেতৃত্বের নিরাপত্তা দেওয়ার কাজটি করতে পারছে না।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে সাকি বলেন, তারা এখনো দেশকে ধ্বংস করার ক্ষেত্র থেকে নিরস্ত হয়নি। তারা গণতান্ত্রিক উত্তরণকে নস্যাৎ করে দিয়ে, বানচাল করে দিয়ে এই দেশকে আবারও চূড়ান্ত বিপর্যয়ের দিকে নিতে চায়। পতিত ফ্যাসিস্টরা বসে নেই, তারা বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের অর্জনকে ধ্বংস করতে চায়।

দেশে নব্য ফ্যাসিস্টের আগমন ঘটেছে ইঙ্গিত করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিস্টরা যে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছিল, আজকে তার বিপরীতে আরেক দল নতুন করে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করতে চায় এবং সেইটাকে কি সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে? এক ফ্যাসিবাদ পাল্টে আরেক ফ্যাসিবাদের ধারা সেখানে জন্ম কিংবা তাদের উত্থানে সহায়তা করছে? আমাদের সতর্ক ও সচেতন হতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ তিনি গণমাধ্যমের ওপরে হামলাকে গণতন্ত্রের ওপরে হামলা বলে উল্লেখ করেন।

সমাবেশে দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, ‘আমরা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বলতে এই ন্যায়বিচার ও ইনসাফের রাজনৈতিক মতাদর্শকে বুঝেছিলাম। সেই রাষ্ট্র গঠনের জন্য আমাদের এই মুহূর্তে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটাতে হবে।’

দলের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, ‘যারা পতিত ফ্যাসিস্টকে পুনর্বাসন করতে চায়, তারাই আমাদের নির্বাচনকে বারবার পিছিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। এই ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে হবে।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জিএসএর রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দীন পাপ্পু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, দীপক কুমার রায়, আমজাদ হোসেন, অঞ্জন দাস, লুৎফুন্নাহার সুমনা প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত