Ajker Patrika

রোজার আগে বা পরে জাতীয় নির্বাচন

  • জুনের কিছু আগে নির্বাচনের বিষয়ে সরকার একটু নমনীয়। ভাবতে হচ্ছে তিনটি বিষয়।
  • জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি ও এনসিপিসহ কয়েকটি দল রাজি হতে পারে।
  • বিষয়টি নিয়ে ভেতরে ভেতরে সরকারের সঙ্গে দলগুলোর আলোচনার কথা শোনা যাচ্ছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৫ জুন ২০২৫, ০৮: ৩৪
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বিএনপিসহ অনেক দল চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চাইছে। অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার আগে ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা বললেও এ অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসসহ সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এখন আর ডিসেম্বরের কথা বলছেন না। তাঁরা বলছেন আগামী বছর জুনের মধ্যে ভোট করার কথা। নির্বাচনের পরিকল্পনা থেকে ডিসেম্বর খসিয়ে ফেলার বিষয়টি অবশ্য দলগুলোর নজর এড়ায়নি।

এমন প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার একজন সহকারী ও সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখেন জামায়াতে ইসলামীর এমন একজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী বছর জুনের মধ্যে রমজান মাস, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মতো তিনটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নির্বিঘ্ন রাখতে হলে রমজান মাসের আগে আগে অথবা ঠিক পরে ভোটের সম্ভাবনা দেখছেন তাঁরা।

রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক নেতা বলছেন, রাষ্ট্রব্যবস্থায় কিছু সংস্কার, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু করা ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে নিয়ে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার কথা ছিল। কিন্তু তিনটি ক্ষেত্রের কোনোটিতেই গত ১০ মাসে তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি দেখছেন তাঁরা।

রাজনীতিকদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদের অন্তত ছয়জন উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টরা মুখে মুখে সংস্কার, বিচার ও আগামী জুনে নির্বাচনের কথা বললেও ভেতরে-ভেতরে অন্য কোনো পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন। মিয়ানমারের রাখাইনের সঙ্গে ‘মানবিক করিডর’ চালুর মতো বিতর্কিত বিষয়, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়া, সরকারি চাকরিবিধি পরিবর্তনের জন্য অধ্যাদেশ জারি ও কে কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা থাকবেন–এমন বহু বিষয় সামনে নিয়ে আসার পাশাপাশি ভোটের রোডম্যাপ না দেওয়ায় সরকারের মতলব নিয়ে সন্দেহ করছে বেশির ভাগ দল। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপিসহ কয়েকটি দল ভোটের দাবিতে মাঠে নামার আওয়াজ দিতে শুরু করেছে।

অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা জানাচ্ছেন, বিএনপি আগামী ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যে চাপ তৈরি করছে, তা তিনি ভালোভাবে নিচ্ছেন না। যেকোনো অবস্থাতে চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না করার ‘অবস্থান’ তিনি নিয়েছেন। এতে উপদেষ্টা পরিষদের অন্তত ছয় সদস্যের সমর্থন আছে। তাঁরা আশা করছেন, আগামী বছর জুনের মধ্যে বা সম্ভব হলে আরেকটু আগে নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দলের সমর্থন সরকার পাবে।

নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির এই জেদ এবং একে অপরকে দোষারোপের ধারাবাহিকতায় উভয় পক্ষের মধ্যকার সম্পর্ক চরম তিক্ততার দিকে যাচ্ছে, এমনটা মনে করছেন রাজনৈতিক নেতাদের অনেকে।

বিরাজমান পরিস্থিতিতে দলের ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে মঙ্গলবার বলেন, ‘রোডম্যাপ ঘোষণা না করে সরকার যে টালবাহানা করছে, এ বিষয়টাকে আমরা ভালোভাবে দেখছি না। জনগণও ভালোভাবে নিচ্ছে না।’

সরকার দ্রুত সময়ে রোডম্যাপ ঘোষণা করে অস্থিরতা দূর করবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘তা না হলে আমরা জনগণকে নিয়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হব।’

নির্বাচন নিয়ে সরকার ও দলগুলোর মধ্যে বোঝাপড়া না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের কথা বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘এমনিতেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানের রেকর্ড নেই বললেই চলে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, হয়তো এবারও আলোচনায় সমাধান আসবে না।’

জামায়াতের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ভোট কখন হবে, তা নিয়ে মতভেদ ও অস্থিরতা তৈরি হলে, তা দেশের জন্য ভালো কিছু হবে না। জামায়াত মনে করে, দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে বিএনপি ও কিছু জনসমর্থন আছে এমন রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের ক্ষমতার বিভিন্ন ‘কেন্দ্রের’ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

একটা দলের কর্মীরা ‘না’ ভোটের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে: গোলাম পরওয়ার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ছবি: আজকের পত্রিকা
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ছবি: আজকের পত্রিকা

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জামায়াতসহ ৮ দল। আজ রোববার রাজধানীর মগবাজারে আল ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ৮ দলের পক্ষে এই আহ্বান জানান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। একটি দলের কর্মী অনলাইনে ‘না’ ভোটের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির প্রয়োজনে গণভোটটা যখন হবে, এই গণভোটের সংস্কারের পক্ষে আমরা সবাই “হ্যাঁ” বলব এবং জাতিকে আমরা “হ্যাঁ”-এর পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করব। কারণ, আমরা সংস্কারের পক্ষে ছিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক যে সংস্কারগুলো গণভোটে যাচ্ছে কমিশনের পক্ষ থেকে, তার মধ্যে অনেক সংস্কারের ব্যাপারে একটি দল বিরোধিতা করেছিল। আমরা সংস্কারপন্থী, সেই কারণে আমরা এই সংস্কারের পক্ষে আছি এবং আমরা দেশবাসীকে এই সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষে “হ্যাঁ” ভোট দেওয়ার জন্য একই সঙ্গে আহ্বান জানাতে থাকব।’

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল সরকারে কাছে দাবি জানান, সরকার যেন এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো জাতির সামনে তুলে ধরে যে, কী কী সংস্কার করা হচ্ছে, কী বিদ্যমান রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আছে, আর কী নতুন হবে। নির্বাচন কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে পাবলিক করতে পারে, সরকারি প্রচারপত্র বিলি করে, জাতীয় প্রচারমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করে জনগণকে সচেতন করতে পারে। তিনি বলেন, ‘জনগণ যেন এই সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষে “হ্যাঁ” বলতে পারে। তার প্রয়োজনীয় উৎসাহ দেওয়া, প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে জিনিসটাকে সহজ করা দরকার।’

গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে যেভাবে বলেছেন, সাধারণ স্বল্পশিক্ষিত মানুষ এই সব সংস্কারের ইন্টারনাল, এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ খুব কমই বোঝে। এটাকে অতি সহজ করে, কিসে আমরা “হ্যাঁ” বলতে যাচ্ছি—সংস্কারে গৃহীত সব বিষয়গুলোকে অতি সহজ করে ভোটারদের কাছে, দেশবাসীর কাছে সরকারকে পেশ করতে হবে।’

একটা দলের কর্মীরা অনলাইনে ‘না’ ভোটের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে, অভিযোগ করে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এটা দিয়েই প্রমাণ হলো যে নতুন অভিযাত্রায় সংস্কারের কারা বিরোধিতা করছে। গোটা জাতি সংস্কারের পক্ষে, আর যদি কেউ এটার বিপক্ষে যায় জাতি নিশ্চয় তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।’

৮ দলের আন্দোলন অব্যাহত থাকছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে পরওয়ার বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচির বিষয়ে লিয়াজোঁ কমিটির ওপর দায়িত্ব আছে, তারা বসবেন এবং ঘোষণা করবেন। আমাদের আন্দোলনের সব দাবি তো পূরণ হয়নি। এ জন্য আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুস আহমাদ, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জাগপার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল আহমেদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দিন আহমদসহ ৮ দলের শীর্ষ নেতারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: সিইসি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের দ্বিতীয় দিনে বক্তব্য রাখছেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের দ্বিতীয় দিনে বক্তব্য রাখছেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আমরা যাতে সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন করতে পারি। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সমান রাখতে পারি। সে জন্য আপনাদের পরামর্শ চাই।’

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ রোববার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের দ্বিতীয় দিনে এ কথা বলেন তিনি। আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় সংলাপ শুরু হয়।

আচরণবিধি প্রতিপালনের ওপর সুন্দর নির্বাচন নির্ভর করে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘আপনারা নিজেরা পড়বেন। আমরা তো আচরণবিধি প্রতিপালনের জন্য প্রচারণ করবই। আপনারাও দলীয়ভাবে যদি প্রচারণার ব্যবস্থা করেন, আপনাদের কর্মীদের যদি বলেন যে, এই আচরণবিধি আমাদের ফলো করতে হবে। তাহলে আমাদের জন্য একটু সুবিধা হয়।’

আজ সকালে গণফোরাম, গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপ বসেছে ইসি। এর পর দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, তৃণমূল বিএনপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসির সংলাপে ইসলামী ঐক্যজোটের দুই পক্ষের হট্টগোল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রোববার নির্বাচন কমিশনে সংলাপে এসে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান ইসলামী ঐক্যজোটের দুই পক্ষ। ছবি: স্ক্রিনশট
রোববার নির্বাচন কমিশনে সংলাপে এসে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান ইসলামী ঐক্যজোটের দুই পক্ষ। ছবি: স্ক্রিনশট

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের সংলাপ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সংলাপ শুরু হয়। এতে ইসলামী ঐক্যজোটের দুই পক্ষের প্রতিনিধি আসায় কিছুটা হট্টগোল হয়। এ সময় সংলাপে অংশ নিতে আসা যাদের কাছে চিঠি নেই তাদের সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বলেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।

সম্মেলন কক্ষ থেকে বের হাওয়ার সময় ইসলামী ঐক্যজোটের একপক্ষের যুগ্ম মহাসচিব দাবি করা মইনুদ্দিন রুহি আরেক পক্ষের প্রতি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের চিঠিটা ব্ল্যাকমেল করে ওনারা উঠিয়ে নিয়েছেন।’

সরেজমিনে দেখা যায়, সংলাপে অংশ নিতে দলটির যুগ্ম মহাসচিব দাবি করা মইনুদ্দিন রুহিসহ তিন সদস্যের প্রতিনিধি আগেই চেয়ারে বসেন। পরে দলটির আরেক পক্ষের মাওলানা জোবায়েরসহ একটি প্রতিনিধি সংলাপের কক্ষে প্রবেশ করেন, যাদের কাছে ইসি থেকে পাঠানো আমন্ত্রণপত্র রয়েছে। তখন কিছুটা হট্টগোলের পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ সময় ইসি সচিব যাদের কাছে চিঠি নেই তাদের সম্মেলন কক্ষ থেকে বের হয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানান।

সম্মেলন কক্ষ থেকে বের হওয়া অংশ থেকে মইনুদ্দিন রুহি বলেন, ‘আমাদের চিঠিটা ব্ল্যাকমেল করে ওনারা উঠিয়ে নিয়েছেন। কমিশন চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছে। চেয়ারম্যান যাদের প্রতিনিধি নির্ণয় করেছেন, তারা আসবেন না? চেয়ারম্যান আমাদের চিঠি দিয়ে, প্যাডের মধ্যে লিখে দিয়েছেন। ওনারা (ইসি) বলছেন চিঠি যার কাছে তারা বসবেন। এটি একটি কথা হলো। বাইরের লোকের কাছে চিঠি থাকতে পারে? চিঠিটা ডাকে পাঠিয়ে, যে কেউ চিঠিটা উঠাইতে পারেন। চিঠি যার কাছে থাকবে, সেই কি ইসলামী ঐক্যজোটের প্রতিনিধি হবে?’ —প্রশ্ন রাখেন তিনি।

মইনুদ্দিন রুহি বলেন, চেয়ারম্যান ও মহাসচিব স্বাক্ষর করে আমাদের তিনজনকে প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছেন।

ইসলামী ঐক্যজোটের এক পক্ষ সম্মেলন কক্ষ ত্যাগ করলে ইসি সচিব বলেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত অসামঞ্জস্যতা দিয়ে শুরু করার জন্য। তিতা দিয়ে শুরু করলে নাকি ভালো হয়।’

আজ সকালে গণফোরাম, গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, তৃণমূল বিএনপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি।

বিষয়:

ইসি
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহাল করবে বিএনপি: সালাহউদ্দিন আহমদ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সালাহউদ্দিন আহমদ। ফাইল ছবি
সালাহউদ্দিন আহমদ। ফাইল ছবি

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহাল করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘সম্মিলিত খতমে নবুয়ত পরিষদ’-এর উদ্যোগে আয়োজিত খতমে নবুয়ত মহাসম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

সম্মেলনে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যেটা সংযোজন করেছিলেন—মহান আল্লাহর প্রতি আস্থা এবং বিশ্বাস–সংবিধানের প্রস্তাবনায় ছিল এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ছিল, অনুচ্ছেদ ৮-এর মধ্যে। সেটা তুলে দেওয়া হয়েছে আপনারা জানেন। ইনশা আল্লাহ আমরা সেটা পুনর্বহাল করব।’

বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন কর্মী। আমাদের নেতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সংবিধানে প্রথমবারের মতো ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজন করেছিলেন।’

সালাহউদ্দীন আহমদ আরও বলেন, ‘রাসুল (সা.)-কে আল্লাহ তাআলা সারা বিশ্বের রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছেন। আমরা মুসলমান।...রাসুল (সা.) বলে গিয়েছেন, “আমিই সর্বশেষ নবী। আমার পরে কোনো নবী আসবে না। ” যদি এরপরও কেউ নিজেকে নবী ঘোষণা করে বা দাবি করে, তাহলে তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই ঘোষণার মধ্যে নাই।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যদি বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব আমাদের দেয়; এ দেশের জনগণ যদি মহব্বত করে আমাদের দায়িত্ব দেয়; যদি আপনারা সবাই সহযোগিতা করেন, তাহলে আপনাদের আজকের এই যে দাবিদাওয়া, এসব দাবিদাওয়ার পক্ষে আমরা। এসব দাবি নিয়ে সংসদে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কানুনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে ইনশা আল্লাহ। এ জন্য সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

ধর্মীয় এ মহাসম্মেলনে বক্তারা কাদিয়ানিদের (আহমদিয়া মুসলিম হিসেবে পরিচিত) রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবি তোলেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা। পাকিস্তানের কয়েকজন ইসলামি চিন্তাবিদ, রাজনীতিকসহ বেশ কয়েকজন বিদেশি আলেম সম্মেলনে যোগ দেন। এদের মধ্যে ছিলেন পাকিস্তানের পার্লামেন্টের সদস্য ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তানের সভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান, ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা ইলিয়াস গুম্মান, পাকিস্তানের বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মহাসচিব মাওলানা হানিফ জলন্ধরী। বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ আলেম ও ইসলামি দলের নেতাদের মধ্যে ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত