এম আবুল কালাম আজাদ

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় এক অধ্যায় রচিত হয় জঙ্গিদমন অভিযানে, কিন্তু সেটা মানুষের কাছে অজানাই রয়ে গেছে। এর কারণ হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমে শুধু সরকার ও তার বাহিনীর বয়ান তুলে ধরা, যেখানে কতটা দক্ষতা ও সাফল্যের সঙ্গে তারা জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করেছে সে চিত্র ফুটে উঠত। এর পেছনে যে এক অন্যায় ও অমানবিক দিক রয়েছে তা মিডিয়ায় উঠে আসেনি, ফলে সেটা অন্ধকারেই রয়ে যায়।
আমরা জানি, ২০১৩ সাল থেকে জুলাই ২০১৬ পর্যন্ত দেশে একের পর এক জঙ্গি হামলা হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা হয় হলি আর্টিজান বেকারিতে। এসব হামলায় বিদেশি নাগরিকসহ অনেক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়। আওয়ামী লীগ সরকার সেসব হামলা প্রতিহত করতে না পারলেও শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে সংসদে দাবি করেন জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল।
এমন দাবির পেছনে কারণ রয়েছে বলে যুক্তিও দেওয়া হয়। হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর জঙ্গিদের দমনে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ বাড়ে। তাই যেকোনো মূল্যে জঙ্গিদমনে সাফল্য দেখানোর প্রয়োজন। এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দারা জঙ্গিদের আটক করতে মরিয়া হয়ে যায়। আশ্চর্যজনকভাবে হঠাৎ তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একের পর এক জঙ্গি আস্তানা খুঁজে পায় এবং সফল অভিযানে বড় বড় জঙ্গির মৃত্যু ঘটে। একই সঙ্গে শুরু হয় জঙ্গি আটকের হিড়িক। নবগঠিত সিটিটিসি ছাড়াও পুলিশ, র্যাব ও ডিবি দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে শত শত মানুষকে জঙ্গি হিসেবে আটক শুরু করে।
পরিস্থিতি দেখে মনে হয় যে পুরো দেশ জঙ্গিতে ছেয়ে গেছে। বাংলাদেশ যেন এক জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সাংবাদিক হিসেবে জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও জঙ্গি আটকের ঘটনা নিয়ে আমাদের মাঝে সন্দেহ জন্মে। অনেকে মনে করে, অভিযান বা আটকের অনেক কিছু সাজানো। তবে যেহেতু তখন কেউ তা খতিয়ে দেখেনি বা আনুসন্ধান করেনি তাই পুলিশের দেওয়া তথ্য বা ন্যারেটিভের বাইরে অন্যকোনো গল্প থাকলেও তা চাপা পড়ে যায়।
দু-তিনটি ঘটনা নিয়ে মিডিয়া আনুসন্ধান করলে ভিন্ন রকম তথ্য বেরিয়ে আসে, যার সঙ্গে পুলিশ বা র্যাবের দেওয়া তথ্যের মিল পাওয়া যায়নি। এ থেকে ধারণা হয়, প্রতিটি ঘটনার পেছনে কোনো না কোনো অন্য গল্প লুকিয়ে আছে।
সে সময় জঙ্গি ধরার এক অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু হয় বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে। প্রকৃত জঙ্গিদের ধরার পাশাপাশি নিরীহ নারী-পুরুষদের জঙ্গি বানানোর প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। এ ক্ষেত্রে তারা নানান রকম গল্পের আশ্রয় নেয়। কিন্তু কীভাবে, কেন এমন অন্যায় করা হয় তা জানতেই ২০২১ সালে নারী জঙ্গিবাদ নিয়ে গবেষণা ও অনুসন্ধান শুরু করি। অবাক হয়ে দেখি, জঙ্গিদমনে সাজানো নাটক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপকতা দেখে। ঘটনার যত ভেতরে প্রবেশ করি ততই জানতে পারি র্যাব, পুলিশ, ডিবি একই ধরনের গল্পের অবতারণা করে কীভাবে নিরপরাধ মানুষদের আটক করেছে, অনেককে বড় জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানের অনেক ঘটনাই অসত্য। অর্থাৎ জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিদমন অভিযান সম্পর্কে আমরা বাইরে থেকে বা গণমাধ্যম থেকে যা জানি, তার বাইরেও আছে অন্য ঘটনা। সারা দেশ চষে বেড়িয়ে যেসব ঘটনা তুলে এনেছিলাম তার কয়েকটির কথা আজ তুলে ধরলেই বোঝা যাবে কেন ঘটনার পেছনের ঘটনা খুঁজতে হবে।
ভুয়া সুইসাইড স্কোয়াড মেম্বার
২০১৬ সালে সিরাজগঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশ চার নারীকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করে জানায় যে, তারা নব্য জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য এবং ফিদায়ি হামলার জন্য প্রস্তুত ছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ডিবি রাত আড়াইটায় তাদের এক গ্রাম থেকে আটক করে। আটক এক নারীর বাড়িতে তারা গোপন বৈঠক করছিল।
নারীদের মধ্যে ছিল একজন মা ও তার দুই অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে, আর মধ্য বয়সী আরেকজন। যারা দুজনেই নিরক্ষর।
এই ঘটনা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুসারে, অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম আটক নারীদের ছবি ও ভিডিওসহ ফলাও করে রিপোর্ট করে।
অথচ প্রকৃত ঘটনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওই নারীদের ডিবি পুলিশ এক মাস পূর্বে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং সেটা দিনের বেলায় গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে। এরপর তাদের পুলিশ ডিবি অফিসে আটকে রেখে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও শারীরিক নির্যাতন করে জবানবন্দী আদায় করা হয়।
সত্য ঘটনা বের করা কঠিন ছিল না। এই নারীদের সিরাজগাঞ্জ শহর থেকে মাত্র ৩০ মাইল দূরের গ্রাম থেকে তুলে আনা হয়। গণমাধ্যম চাইলেই সেখানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে পারত। তা করা হয়নি। ফলে পুলিশের বানানো গল্প সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, গ্রামের নিরীহ নারীরা সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য হিসেবে খ্যাতি পায়।
সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের এমন ভূমিকায় পুলিশ আরও উৎসাহিত হয়।
সিরাজগঞ্জ ডিবির ওই টিম একই ধরনের আরেকটি ঘটনার জন্ম দেয়। আবার তারা চার নারীকে হাজির করে দাবি করে যে, তাদের শহরের এক বাড়িতে মধ্যরাতে গোপন বৈঠক করার সময় আটক করা হয়। সাংবাদিকেরা এবারও যাচাই বা অনুসন্ধান না করে পুলিশের বক্তব্য হুবহু তুলে ধরে।
এই দুই ঘটনার অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে, ওই নারীদের বাড়ি বিভিন্ন জেলায় এবং ডিবি একেক জনকে একেক স্থান একেক সময়ে তুলে এনে পূর্বের ঘটনার মতো অফিসে আটকে রেখে ও একই কায়দায় জবানবন্দী আদায় করে। এভাবেই তারা সফলভাবে জঙ্গি দমনের একেকটা উদাহরণ তৈরি করতে থাকে।
পহেলা বৈশাখবিরোধী লিফলেট ও ৯ জঙ্গি
২০১৮ সালে রাজশাহী জেলার এক বালিকা বিদ্যালয়ে দুজন ছাত্রী লিফলেট বিলি করে, যেখানে লেখা ছিল পহেলা বৈশাখ পালন করা ইসলামবিরোধী তাই তা পরিহার করা উচিত। তারা স্থানীয় ইসলামি ছাত্রী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিল।
ঘটনার তিন দিন পর পুলিশ স্থানীয় এক জামায়াত নেতার বাড়িতে মধ্যরাতে অভিযান করে জামায়াত নেতা, তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে ও তাঁর ভাইয়ের তিন মেয়েকে তুলে নিয়ে যায়। পরের দিন সকালে সাংবাদিকদের সামনে তাঁদের উপস্থাপন করে পুলিশ জানায়, আটককৃতরা নব্য জেএমবির সঙ্গে জড়িত, তাঁরা রাত ২টার সময় গোপন বৈঠক করে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। বৈঠকে বোমা হামলা চালিয়ে জীবন দিয়ে হলেও তাঁরা পহেলা বৈশাখ উদযাপন প্রতিহত করবে বলে সভায় তাঁরা আলোচনা করেন।
স্থানীয় সাংবাদিকেরা পুলিশের ভাষ্যমতে রিপোর্ট করে।
ওই এলাকায় কয়েকদিন অনুসন্ধানের পর জানা যায়, ঘটনাটা এক ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলের নেতারা লিফলেটের ঘটনাকে ঘিরে ওই জামায়াত নেতাকে শায়েস্তা করতে চায়। আর তাই মধ্যরাতে অভিযান চালাতে দেরি হয়। স্থানীয় অনেক বাসিন্দা এসব জানেন। জঙ্গি ধরতে পুলিশ এতোটাই বেপরোয়া হয় যে, ওই ঘটনায় করা মামলায় তারা দূরের আরেকটি গ্রাম থেকে জামায়াত নেতার আত্মীয় দুজন নারীকে আটক করে।
স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, তিনি প্রকৃত ঘটনা জানলেও সেটা নিয়ে রিপোর্ট করার সাহস পাননি।
২ দিনব্যাপী বন্দুক যুদ্ধ, ২টি লাশ
২০১৭ সালের এপ্রিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়ে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে জঙ্গি অভিযানে পারদর্শী সিটিটিসি ও সোয়াতের সদস্যরা সেখানে যায়। গ্রামবাসীদের সরিয়ে দিয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে দুই দিনব্যাপী গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়। এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয় যেন বড় এক সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হচ্ছে। দুই দিন পর আস্তানার বাড়িতে ঢুকে পুলিশ দুটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে। দাবি করে, এরা নিজেরা বোমা ফাটিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পায়ে গুলিবদ্ধ এক অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তাঁর শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এমন ভাষ্য সব মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়।
পুলিশের নথিতে বলা হয়, পুলিশ মোট ২ হাজার রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এর বিপরীতে জঙ্গিদের দিক থেকেও অনেক গুলি করার কথা। সে ক্ষেত্রে জঙ্গিদের কাছে ভারি অস্ত্র ও গুলি থাকার কথা। কিন্তু তার প্রমাণ অভিযান শেষে পাওয়া যায়নি।
আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত বাড়ির দেয়ালে অনেক গুলির দাগ থাকলেও আশপাশের কোনো বাড়ির দেয়ালে দেখা যায়নি। জঙ্গিরা গুলি করলে তা থাকার কথা।
এখানেও সন্দেহের অনেক উপাদান থাকায় অনুসন্ধানে করতে নেমে অন্যরকম তথ্য পাওয়া যায়। আহত নারী ও তাঁর স্বামী যে বাড়িতে বসবাস করতেন সেটি ছিল এক প্রবাসীর। তিনি তাঁদের সেখানে থাকতে দিয়েছিলেন। ওই নারীর স্বামী যাকে পুলিশ বড় জঙ্গি হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে খুব ধার্মিক ও ভিন্নভাবে নামাজ পড়ার কারণে অনেকে সন্দেহের চোখে দেখত বলে আহত নারী ও আশপাশের গ্রামবাসীরা জানায়।
অন্য যে ব্যক্তির লাশ সেখানে পাওয়া গেছে তিনি বড় জঙ্গি ছিলেন। ওই জঙ্গি ঢাকার ডিবি অফিস থেকে পালিয়ে যান। তবে পুলিশ তাঁকে আবার আটক করে। অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশের দুজন সদস্য জানান, তাঁকে আগেই মেরে লাশ ওই বাড়িতে নেওয়া হয়েছিল। আর আহত নারীর স্বামীকে পয়েন্ট ব্লাঙ্ক গুলি করা হয় বলে তাঁরা জানান।
ফলে মধ্যরাতের অনেক গোপন বৈঠক আসলেই যে সংগঠিত হয়নি এগুলো তার প্রমাণ।
সত্যিকার অর্থে প্রায় সব জঙ্গি ঘটনার পেছনে কোনো না কোনো গল্প আছে যা আমরা জানি না।
যেমন, ২০১৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর আশকোনায় শাকিরা নামের এক নারী আত্মঘাতী হামলা চালায়। দেশের ইতিহাসে সেটা প্রথম। সারা দুনিয়ার মিডিয়ায় সেটা প্রকাশিত হয়। আত্মসমর্পণ না করে ওই নারী তার কোমরে বেঁধে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে সেখানে তার মৃত্যু হয়। সঙ্গে থাকা তার মেয়ে আহত হলেও উপস্থিত কোনো পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়নি।
এই ঘটনা নিয়ে কেউ সন্দেহ পোষণ করেনি। তবে এর সঙ্গেও অন্য এক সত্য লুকিয়ে আছে। আর তা হলো, শাকিরাকে খুব কাছে থেকে গুলি করা হয়, যা সিটিটিসি একাধিক সদস্য নিশ্চিত করেছে।
সোয়াতের এক শুটার যিনি সে সময় উপস্থিত ছিলেন সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন, তিনি নিজেও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন এবং সেগুলো শাকিরাকে বিদ্ধ করে। মজার ব্যাপার হলো, শাকিরার পোস্টমর্টেম রিপোর্টে গুলির কথা উল্লেখ করা হয়নি। এমন ঘটনাও ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। শাকিরা আত্মঘাতী হয়েছে, নাকি গুলিতে মারা গেছে সে প্রশ্ন অমীমাংসিত।
বাংলাদেশের নারী জঙ্গিদের আগাপাশতলা জানতে প্রায় তিন বছর আমরা গবেষণা করেছি। গবষেণালব্ধ ফল জার্মানি থেকে ২০২৩ সালে ‘উইমেন ইন টেরোরিজম ইন বাংলাদেশ’ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। বইটির সহ-লেখক জার্মান গবেষক ও লেখক ড. ইয়াসমিন লরচ।
সেই বইয়ে নিহত শাকিরার ঘটনার মতো আরো অনেক কাহিনীর বর্ণনা উঠে এসেছে।
যৌথ এই গবেষণায় বেরিয়ে আসে, ১২০ জন নারীকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে, যাদের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ ছিলেন নিরপরাধ। এই সংখ্যা পুরুষ জঙ্গিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি বলে পুলিশ ও র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
জঙ্গি দমনে নাটক কেন?
জঙ্গি দমনে হাসিনা সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ছাড়াও সফল জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও জঙ্গি ধরার জন্য বিশেষ প্রণোদনা, পুরস্কার, পদোন্নতি, ভালো পদায়ন ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সবচেয়ে বড় আকর্ষণের বিষয় ছিল মিডিয়ায় ব্যাপক কাভারেজ।
২০১৬ সাল থেকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে জঙ্গি ধরার এক অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যে যত সফল জঙ্গি অভিযান ও জঙ্গি আটক করেছে তারা ততই বাহিনী ও সরকারের বাহাবা পেয়েছে। বিপিএম ও পিপিএম তো ছিলই। ফলে এই প্রতিযোগিতা মাঠ পর্যায়ের পুলিশের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।
আবার অভিযানের ঘটনাকে বড় করে দেখানো হয় বেশি মিডিয়া কাভারেজ ও বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরির জন্য। প্রমাণ করার চেষ্টা হয় যে, ভয়ঙ্কর জঙ্গিদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই পুলিশ দমন করতে পারে।
২০১৫ সাল থেকে নারী জঙ্গির সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যায়। যেহেতু নারীদের সংবাদমূল্য বেশি ফলে প্রকৃত নারী জঙ্গির সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গিবাদে জড়িত না এমন অনেককে আটক করা হয়। নারীদের একটা গ্রুপ হিসেবে দেখালে গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। এই প্রবণতা প্রবল আকার ধারণ করে।
গবেষণা ও অনুসন্ধানের সময় অনেক পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তা তথ্য ও নথি দিয়ে সহায়তা করেন।
এদের অনেকে জানিয়েছেন কীভাবে তৈরি গল্পের মাধ্যমে নিরাপরাধ নারী-পুরুষদের জঙ্গি বানানো হয়েছে। আর এটা বেশি করেছে র্যাব। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপে এটা করতে হয়েছে বলেও দাবি তাদের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্র্যাপ করে কিছু ধার্মিক ব্যক্তিকে জঙ্গি হিসেবে ধরা হয়, সে তথ্য অবলীলায় স্বীকার করেছেন দুই কর্মকর্তা।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে সবাই জানতেন কীভাবে এমন অন্যায় কাজ করা হচ্ছে। সবাই নীরব ছিলেন। কারণ এ থেকে তাঁরা নিজেরা ও সরকার বড় ধরনের সুবিধা পেত।
ব্যাপারটা সরকারের ভেতরে অজানা ছিল না। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক শহিদুল হকের লেখা বই থেকে এর প্রমাণ মেলে। তিনি তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন, পান্থপথে জঙ্গি অভিযানের ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে বলেছিলেন, এখানে এসে এমন নাটক না করলেও পারতে।
প্রকৃত ও ফেইক জঙ্গি সবাই নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়। ধনী পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউই সহজে আইনি সুবিধা পায়নি, জামিনও পায়নি। জঙ্গিদের আইনি সহযোগিতা না দেওয়ার জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজেই উকিলদের পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এটা নিরপরাধ ব্যক্তিদের জন্য বেশি মর্মান্তিক। একদিকে তারা জঙ্গিবাদে জড়িত না, অন্যদিকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আইনি লড়াইয়ের জন্য উকিল না পাওয়া, বছরের পর বছর কারাবন্দি থাকা তাদের জন্য অনেক বড় অন্যায়। জামিনের পর মামলার ঘানি বয়ে বেড়ানো তো আছেই।
একজন নিরপরাধ নারী বা পুরুষকে জঙ্গি তকমা দিলে তার ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যায়। এই কালিমা তার পক্ষে মুছে ফেলা সম্ভব হয় না। রাষ্ট্রের সব ধরনের সুবিধা থেকে সে বঞ্চিত হয়। চাকরি না পেয়ে তারা পরিবার ও সমাজে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তারা অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের কাছে জঙ্গিবাদ বড় একটি রাজনৈতিক কার্ড ছিল। এই কার্ড তারা শেষ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করেছে। কিন্তু জঙ্গি দমনের নামে বড় সংখ্যক নিরপরাধ মানুষের ওপর অত্যাচার ও তাদের মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করা বড় ধরনের অন্যায়। কিন্তু মিডিয়া জেনে অথবা না জেনে বিষয়টি এড়িয়ে যায় বলে এখনো মানুষ সে সম্পর্কে জানে না।
মিডিয়া যে কোনো ঘটনা বিনা প্রশ্নে বা খতিয়ে দেখা ছাড়া প্রকাশ করলে সেটা মানুষ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ বয়ে আনে না, বরং অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। জঙ্গিবাদ সাংবাদিকতা এর বড় উদাহরণ।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় এক অধ্যায় রচিত হয় জঙ্গিদমন অভিযানে, কিন্তু সেটা মানুষের কাছে অজানাই রয়ে গেছে। এর কারণ হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমে শুধু সরকার ও তার বাহিনীর বয়ান তুলে ধরা, যেখানে কতটা দক্ষতা ও সাফল্যের সঙ্গে তারা জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করেছে সে চিত্র ফুটে উঠত। এর পেছনে যে এক অন্যায় ও অমানবিক দিক রয়েছে তা মিডিয়ায় উঠে আসেনি, ফলে সেটা অন্ধকারেই রয়ে যায়।
আমরা জানি, ২০১৩ সাল থেকে জুলাই ২০১৬ পর্যন্ত দেশে একের পর এক জঙ্গি হামলা হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা হয় হলি আর্টিজান বেকারিতে। এসব হামলায় বিদেশি নাগরিকসহ অনেক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়। আওয়ামী লীগ সরকার সেসব হামলা প্রতিহত করতে না পারলেও শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে সংসদে দাবি করেন জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল।
এমন দাবির পেছনে কারণ রয়েছে বলে যুক্তিও দেওয়া হয়। হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর জঙ্গিদের দমনে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ বাড়ে। তাই যেকোনো মূল্যে জঙ্গিদমনে সাফল্য দেখানোর প্রয়োজন। এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দারা জঙ্গিদের আটক করতে মরিয়া হয়ে যায়। আশ্চর্যজনকভাবে হঠাৎ তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একের পর এক জঙ্গি আস্তানা খুঁজে পায় এবং সফল অভিযানে বড় বড় জঙ্গির মৃত্যু ঘটে। একই সঙ্গে শুরু হয় জঙ্গি আটকের হিড়িক। নবগঠিত সিটিটিসি ছাড়াও পুলিশ, র্যাব ও ডিবি দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে শত শত মানুষকে জঙ্গি হিসেবে আটক শুরু করে।
পরিস্থিতি দেখে মনে হয় যে পুরো দেশ জঙ্গিতে ছেয়ে গেছে। বাংলাদেশ যেন এক জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সাংবাদিক হিসেবে জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও জঙ্গি আটকের ঘটনা নিয়ে আমাদের মাঝে সন্দেহ জন্মে। অনেকে মনে করে, অভিযান বা আটকের অনেক কিছু সাজানো। তবে যেহেতু তখন কেউ তা খতিয়ে দেখেনি বা আনুসন্ধান করেনি তাই পুলিশের দেওয়া তথ্য বা ন্যারেটিভের বাইরে অন্যকোনো গল্প থাকলেও তা চাপা পড়ে যায়।
দু-তিনটি ঘটনা নিয়ে মিডিয়া আনুসন্ধান করলে ভিন্ন রকম তথ্য বেরিয়ে আসে, যার সঙ্গে পুলিশ বা র্যাবের দেওয়া তথ্যের মিল পাওয়া যায়নি। এ থেকে ধারণা হয়, প্রতিটি ঘটনার পেছনে কোনো না কোনো অন্য গল্প লুকিয়ে আছে।
সে সময় জঙ্গি ধরার এক অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু হয় বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে। প্রকৃত জঙ্গিদের ধরার পাশাপাশি নিরীহ নারী-পুরুষদের জঙ্গি বানানোর প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। এ ক্ষেত্রে তারা নানান রকম গল্পের আশ্রয় নেয়। কিন্তু কীভাবে, কেন এমন অন্যায় করা হয় তা জানতেই ২০২১ সালে নারী জঙ্গিবাদ নিয়ে গবেষণা ও অনুসন্ধান শুরু করি। অবাক হয়ে দেখি, জঙ্গিদমনে সাজানো নাটক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপকতা দেখে। ঘটনার যত ভেতরে প্রবেশ করি ততই জানতে পারি র্যাব, পুলিশ, ডিবি একই ধরনের গল্পের অবতারণা করে কীভাবে নিরপরাধ মানুষদের আটক করেছে, অনেককে বড় জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানের অনেক ঘটনাই অসত্য। অর্থাৎ জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিদমন অভিযান সম্পর্কে আমরা বাইরে থেকে বা গণমাধ্যম থেকে যা জানি, তার বাইরেও আছে অন্য ঘটনা। সারা দেশ চষে বেড়িয়ে যেসব ঘটনা তুলে এনেছিলাম তার কয়েকটির কথা আজ তুলে ধরলেই বোঝা যাবে কেন ঘটনার পেছনের ঘটনা খুঁজতে হবে।
ভুয়া সুইসাইড স্কোয়াড মেম্বার
২০১৬ সালে সিরাজগঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশ চার নারীকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করে জানায় যে, তারা নব্য জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য এবং ফিদায়ি হামলার জন্য প্রস্তুত ছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ডিবি রাত আড়াইটায় তাদের এক গ্রাম থেকে আটক করে। আটক এক নারীর বাড়িতে তারা গোপন বৈঠক করছিল।
নারীদের মধ্যে ছিল একজন মা ও তার দুই অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে, আর মধ্য বয়সী আরেকজন। যারা দুজনেই নিরক্ষর।
এই ঘটনা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুসারে, অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম আটক নারীদের ছবি ও ভিডিওসহ ফলাও করে রিপোর্ট করে।
অথচ প্রকৃত ঘটনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওই নারীদের ডিবি পুলিশ এক মাস পূর্বে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং সেটা দিনের বেলায় গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে। এরপর তাদের পুলিশ ডিবি অফিসে আটকে রেখে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও শারীরিক নির্যাতন করে জবানবন্দী আদায় করা হয়।
সত্য ঘটনা বের করা কঠিন ছিল না। এই নারীদের সিরাজগাঞ্জ শহর থেকে মাত্র ৩০ মাইল দূরের গ্রাম থেকে তুলে আনা হয়। গণমাধ্যম চাইলেই সেখানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে পারত। তা করা হয়নি। ফলে পুলিশের বানানো গল্প সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, গ্রামের নিরীহ নারীরা সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য হিসেবে খ্যাতি পায়।
সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের এমন ভূমিকায় পুলিশ আরও উৎসাহিত হয়।
সিরাজগঞ্জ ডিবির ওই টিম একই ধরনের আরেকটি ঘটনার জন্ম দেয়। আবার তারা চার নারীকে হাজির করে দাবি করে যে, তাদের শহরের এক বাড়িতে মধ্যরাতে গোপন বৈঠক করার সময় আটক করা হয়। সাংবাদিকেরা এবারও যাচাই বা অনুসন্ধান না করে পুলিশের বক্তব্য হুবহু তুলে ধরে।
এই দুই ঘটনার অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে, ওই নারীদের বাড়ি বিভিন্ন জেলায় এবং ডিবি একেক জনকে একেক স্থান একেক সময়ে তুলে এনে পূর্বের ঘটনার মতো অফিসে আটকে রেখে ও একই কায়দায় জবানবন্দী আদায় করে। এভাবেই তারা সফলভাবে জঙ্গি দমনের একেকটা উদাহরণ তৈরি করতে থাকে।
পহেলা বৈশাখবিরোধী লিফলেট ও ৯ জঙ্গি
২০১৮ সালে রাজশাহী জেলার এক বালিকা বিদ্যালয়ে দুজন ছাত্রী লিফলেট বিলি করে, যেখানে লেখা ছিল পহেলা বৈশাখ পালন করা ইসলামবিরোধী তাই তা পরিহার করা উচিত। তারা স্থানীয় ইসলামি ছাত্রী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিল।
ঘটনার তিন দিন পর পুলিশ স্থানীয় এক জামায়াত নেতার বাড়িতে মধ্যরাতে অভিযান করে জামায়াত নেতা, তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে ও তাঁর ভাইয়ের তিন মেয়েকে তুলে নিয়ে যায়। পরের দিন সকালে সাংবাদিকদের সামনে তাঁদের উপস্থাপন করে পুলিশ জানায়, আটককৃতরা নব্য জেএমবির সঙ্গে জড়িত, তাঁরা রাত ২টার সময় গোপন বৈঠক করে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। বৈঠকে বোমা হামলা চালিয়ে জীবন দিয়ে হলেও তাঁরা পহেলা বৈশাখ উদযাপন প্রতিহত করবে বলে সভায় তাঁরা আলোচনা করেন।
স্থানীয় সাংবাদিকেরা পুলিশের ভাষ্যমতে রিপোর্ট করে।
ওই এলাকায় কয়েকদিন অনুসন্ধানের পর জানা যায়, ঘটনাটা এক ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলের নেতারা লিফলেটের ঘটনাকে ঘিরে ওই জামায়াত নেতাকে শায়েস্তা করতে চায়। আর তাই মধ্যরাতে অভিযান চালাতে দেরি হয়। স্থানীয় অনেক বাসিন্দা এসব জানেন। জঙ্গি ধরতে পুলিশ এতোটাই বেপরোয়া হয় যে, ওই ঘটনায় করা মামলায় তারা দূরের আরেকটি গ্রাম থেকে জামায়াত নেতার আত্মীয় দুজন নারীকে আটক করে।
স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, তিনি প্রকৃত ঘটনা জানলেও সেটা নিয়ে রিপোর্ট করার সাহস পাননি।
২ দিনব্যাপী বন্দুক যুদ্ধ, ২টি লাশ
২০১৭ সালের এপ্রিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়ে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে জঙ্গি অভিযানে পারদর্শী সিটিটিসি ও সোয়াতের সদস্যরা সেখানে যায়। গ্রামবাসীদের সরিয়ে দিয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে দুই দিনব্যাপী গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়। এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয় যেন বড় এক সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হচ্ছে। দুই দিন পর আস্তানার বাড়িতে ঢুকে পুলিশ দুটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে। দাবি করে, এরা নিজেরা বোমা ফাটিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পায়ে গুলিবদ্ধ এক অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তাঁর শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এমন ভাষ্য সব মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়।
পুলিশের নথিতে বলা হয়, পুলিশ মোট ২ হাজার রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এর বিপরীতে জঙ্গিদের দিক থেকেও অনেক গুলি করার কথা। সে ক্ষেত্রে জঙ্গিদের কাছে ভারি অস্ত্র ও গুলি থাকার কথা। কিন্তু তার প্রমাণ অভিযান শেষে পাওয়া যায়নি।
আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত বাড়ির দেয়ালে অনেক গুলির দাগ থাকলেও আশপাশের কোনো বাড়ির দেয়ালে দেখা যায়নি। জঙ্গিরা গুলি করলে তা থাকার কথা।
এখানেও সন্দেহের অনেক উপাদান থাকায় অনুসন্ধানে করতে নেমে অন্যরকম তথ্য পাওয়া যায়। আহত নারী ও তাঁর স্বামী যে বাড়িতে বসবাস করতেন সেটি ছিল এক প্রবাসীর। তিনি তাঁদের সেখানে থাকতে দিয়েছিলেন। ওই নারীর স্বামী যাকে পুলিশ বড় জঙ্গি হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে খুব ধার্মিক ও ভিন্নভাবে নামাজ পড়ার কারণে অনেকে সন্দেহের চোখে দেখত বলে আহত নারী ও আশপাশের গ্রামবাসীরা জানায়।
অন্য যে ব্যক্তির লাশ সেখানে পাওয়া গেছে তিনি বড় জঙ্গি ছিলেন। ওই জঙ্গি ঢাকার ডিবি অফিস থেকে পালিয়ে যান। তবে পুলিশ তাঁকে আবার আটক করে। অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশের দুজন সদস্য জানান, তাঁকে আগেই মেরে লাশ ওই বাড়িতে নেওয়া হয়েছিল। আর আহত নারীর স্বামীকে পয়েন্ট ব্লাঙ্ক গুলি করা হয় বলে তাঁরা জানান।
ফলে মধ্যরাতের অনেক গোপন বৈঠক আসলেই যে সংগঠিত হয়নি এগুলো তার প্রমাণ।
সত্যিকার অর্থে প্রায় সব জঙ্গি ঘটনার পেছনে কোনো না কোনো গল্প আছে যা আমরা জানি না।
যেমন, ২০১৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর আশকোনায় শাকিরা নামের এক নারী আত্মঘাতী হামলা চালায়। দেশের ইতিহাসে সেটা প্রথম। সারা দুনিয়ার মিডিয়ায় সেটা প্রকাশিত হয়। আত্মসমর্পণ না করে ওই নারী তার কোমরে বেঁধে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে সেখানে তার মৃত্যু হয়। সঙ্গে থাকা তার মেয়ে আহত হলেও উপস্থিত কোনো পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়নি।
এই ঘটনা নিয়ে কেউ সন্দেহ পোষণ করেনি। তবে এর সঙ্গেও অন্য এক সত্য লুকিয়ে আছে। আর তা হলো, শাকিরাকে খুব কাছে থেকে গুলি করা হয়, যা সিটিটিসি একাধিক সদস্য নিশ্চিত করেছে।
সোয়াতের এক শুটার যিনি সে সময় উপস্থিত ছিলেন সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন, তিনি নিজেও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন এবং সেগুলো শাকিরাকে বিদ্ধ করে। মজার ব্যাপার হলো, শাকিরার পোস্টমর্টেম রিপোর্টে গুলির কথা উল্লেখ করা হয়নি। এমন ঘটনাও ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। শাকিরা আত্মঘাতী হয়েছে, নাকি গুলিতে মারা গেছে সে প্রশ্ন অমীমাংসিত।
বাংলাদেশের নারী জঙ্গিদের আগাপাশতলা জানতে প্রায় তিন বছর আমরা গবেষণা করেছি। গবষেণালব্ধ ফল জার্মানি থেকে ২০২৩ সালে ‘উইমেন ইন টেরোরিজম ইন বাংলাদেশ’ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। বইটির সহ-লেখক জার্মান গবেষক ও লেখক ড. ইয়াসমিন লরচ।
সেই বইয়ে নিহত শাকিরার ঘটনার মতো আরো অনেক কাহিনীর বর্ণনা উঠে এসেছে।
যৌথ এই গবেষণায় বেরিয়ে আসে, ১২০ জন নারীকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে, যাদের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ ছিলেন নিরপরাধ। এই সংখ্যা পুরুষ জঙ্গিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি বলে পুলিশ ও র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
জঙ্গি দমনে নাটক কেন?
জঙ্গি দমনে হাসিনা সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ছাড়াও সফল জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও জঙ্গি ধরার জন্য বিশেষ প্রণোদনা, পুরস্কার, পদোন্নতি, ভালো পদায়ন ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সবচেয়ে বড় আকর্ষণের বিষয় ছিল মিডিয়ায় ব্যাপক কাভারেজ।
২০১৬ সাল থেকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে জঙ্গি ধরার এক অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যে যত সফল জঙ্গি অভিযান ও জঙ্গি আটক করেছে তারা ততই বাহিনী ও সরকারের বাহাবা পেয়েছে। বিপিএম ও পিপিএম তো ছিলই। ফলে এই প্রতিযোগিতা মাঠ পর্যায়ের পুলিশের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।
আবার অভিযানের ঘটনাকে বড় করে দেখানো হয় বেশি মিডিয়া কাভারেজ ও বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরির জন্য। প্রমাণ করার চেষ্টা হয় যে, ভয়ঙ্কর জঙ্গিদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই পুলিশ দমন করতে পারে।
২০১৫ সাল থেকে নারী জঙ্গির সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যায়। যেহেতু নারীদের সংবাদমূল্য বেশি ফলে প্রকৃত নারী জঙ্গির সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গিবাদে জড়িত না এমন অনেককে আটক করা হয়। নারীদের একটা গ্রুপ হিসেবে দেখালে গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। এই প্রবণতা প্রবল আকার ধারণ করে।
গবেষণা ও অনুসন্ধানের সময় অনেক পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তা তথ্য ও নথি দিয়ে সহায়তা করেন।
এদের অনেকে জানিয়েছেন কীভাবে তৈরি গল্পের মাধ্যমে নিরাপরাধ নারী-পুরুষদের জঙ্গি বানানো হয়েছে। আর এটা বেশি করেছে র্যাব। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপে এটা করতে হয়েছে বলেও দাবি তাদের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্র্যাপ করে কিছু ধার্মিক ব্যক্তিকে জঙ্গি হিসেবে ধরা হয়, সে তথ্য অবলীলায় স্বীকার করেছেন দুই কর্মকর্তা।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে সবাই জানতেন কীভাবে এমন অন্যায় কাজ করা হচ্ছে। সবাই নীরব ছিলেন। কারণ এ থেকে তাঁরা নিজেরা ও সরকার বড় ধরনের সুবিধা পেত।
ব্যাপারটা সরকারের ভেতরে অজানা ছিল না। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক শহিদুল হকের লেখা বই থেকে এর প্রমাণ মেলে। তিনি তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন, পান্থপথে জঙ্গি অভিযানের ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে বলেছিলেন, এখানে এসে এমন নাটক না করলেও পারতে।
প্রকৃত ও ফেইক জঙ্গি সবাই নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়। ধনী পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউই সহজে আইনি সুবিধা পায়নি, জামিনও পায়নি। জঙ্গিদের আইনি সহযোগিতা না দেওয়ার জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজেই উকিলদের পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এটা নিরপরাধ ব্যক্তিদের জন্য বেশি মর্মান্তিক। একদিকে তারা জঙ্গিবাদে জড়িত না, অন্যদিকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আইনি লড়াইয়ের জন্য উকিল না পাওয়া, বছরের পর বছর কারাবন্দি থাকা তাদের জন্য অনেক বড় অন্যায়। জামিনের পর মামলার ঘানি বয়ে বেড়ানো তো আছেই।
একজন নিরপরাধ নারী বা পুরুষকে জঙ্গি তকমা দিলে তার ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যায়। এই কালিমা তার পক্ষে মুছে ফেলা সম্ভব হয় না। রাষ্ট্রের সব ধরনের সুবিধা থেকে সে বঞ্চিত হয়। চাকরি না পেয়ে তারা পরিবার ও সমাজে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তারা অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের কাছে জঙ্গিবাদ বড় একটি রাজনৈতিক কার্ড ছিল। এই কার্ড তারা শেষ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করেছে। কিন্তু জঙ্গি দমনের নামে বড় সংখ্যক নিরপরাধ মানুষের ওপর অত্যাচার ও তাদের মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করা বড় ধরনের অন্যায়। কিন্তু মিডিয়া জেনে অথবা না জেনে বিষয়টি এড়িয়ে যায় বলে এখনো মানুষ সে সম্পর্কে জানে না।
মিডিয়া যে কোনো ঘটনা বিনা প্রশ্নে বা খতিয়ে দেখা ছাড়া প্রকাশ করলে সেটা মানুষ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ বয়ে আনে না, বরং অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। জঙ্গিবাদ সাংবাদিকতা এর বড় উদাহরণ।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক
এম আবুল কালাম আজাদ

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় এক অধ্যায় রচিত হয় জঙ্গিদমন অভিযানে, কিন্তু সেটা মানুষের কাছে অজানাই রয়ে গেছে। এর কারণ হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমে শুধু সরকার ও তার বাহিনীর বয়ান তুলে ধরা, যেখানে কতটা দক্ষতা ও সাফল্যের সঙ্গে তারা জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করেছে সে চিত্র ফুটে উঠত। এর পেছনে যে এক অন্যায় ও অমানবিক দিক রয়েছে তা মিডিয়ায় উঠে আসেনি, ফলে সেটা অন্ধকারেই রয়ে যায়।
আমরা জানি, ২০১৩ সাল থেকে জুলাই ২০১৬ পর্যন্ত দেশে একের পর এক জঙ্গি হামলা হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা হয় হলি আর্টিজান বেকারিতে। এসব হামলায় বিদেশি নাগরিকসহ অনেক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়। আওয়ামী লীগ সরকার সেসব হামলা প্রতিহত করতে না পারলেও শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে সংসদে দাবি করেন জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল।
এমন দাবির পেছনে কারণ রয়েছে বলে যুক্তিও দেওয়া হয়। হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর জঙ্গিদের দমনে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ বাড়ে। তাই যেকোনো মূল্যে জঙ্গিদমনে সাফল্য দেখানোর প্রয়োজন। এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দারা জঙ্গিদের আটক করতে মরিয়া হয়ে যায়। আশ্চর্যজনকভাবে হঠাৎ তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একের পর এক জঙ্গি আস্তানা খুঁজে পায় এবং সফল অভিযানে বড় বড় জঙ্গির মৃত্যু ঘটে। একই সঙ্গে শুরু হয় জঙ্গি আটকের হিড়িক। নবগঠিত সিটিটিসি ছাড়াও পুলিশ, র্যাব ও ডিবি দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে শত শত মানুষকে জঙ্গি হিসেবে আটক শুরু করে।
পরিস্থিতি দেখে মনে হয় যে পুরো দেশ জঙ্গিতে ছেয়ে গেছে। বাংলাদেশ যেন এক জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সাংবাদিক হিসেবে জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও জঙ্গি আটকের ঘটনা নিয়ে আমাদের মাঝে সন্দেহ জন্মে। অনেকে মনে করে, অভিযান বা আটকের অনেক কিছু সাজানো। তবে যেহেতু তখন কেউ তা খতিয়ে দেখেনি বা আনুসন্ধান করেনি তাই পুলিশের দেওয়া তথ্য বা ন্যারেটিভের বাইরে অন্যকোনো গল্প থাকলেও তা চাপা পড়ে যায়।
দু-তিনটি ঘটনা নিয়ে মিডিয়া আনুসন্ধান করলে ভিন্ন রকম তথ্য বেরিয়ে আসে, যার সঙ্গে পুলিশ বা র্যাবের দেওয়া তথ্যের মিল পাওয়া যায়নি। এ থেকে ধারণা হয়, প্রতিটি ঘটনার পেছনে কোনো না কোনো অন্য গল্প লুকিয়ে আছে।
সে সময় জঙ্গি ধরার এক অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু হয় বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে। প্রকৃত জঙ্গিদের ধরার পাশাপাশি নিরীহ নারী-পুরুষদের জঙ্গি বানানোর প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। এ ক্ষেত্রে তারা নানান রকম গল্পের আশ্রয় নেয়। কিন্তু কীভাবে, কেন এমন অন্যায় করা হয় তা জানতেই ২০২১ সালে নারী জঙ্গিবাদ নিয়ে গবেষণা ও অনুসন্ধান শুরু করি। অবাক হয়ে দেখি, জঙ্গিদমনে সাজানো নাটক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপকতা দেখে। ঘটনার যত ভেতরে প্রবেশ করি ততই জানতে পারি র্যাব, পুলিশ, ডিবি একই ধরনের গল্পের অবতারণা করে কীভাবে নিরপরাধ মানুষদের আটক করেছে, অনেককে বড় জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানের অনেক ঘটনাই অসত্য। অর্থাৎ জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিদমন অভিযান সম্পর্কে আমরা বাইরে থেকে বা গণমাধ্যম থেকে যা জানি, তার বাইরেও আছে অন্য ঘটনা। সারা দেশ চষে বেড়িয়ে যেসব ঘটনা তুলে এনেছিলাম তার কয়েকটির কথা আজ তুলে ধরলেই বোঝা যাবে কেন ঘটনার পেছনের ঘটনা খুঁজতে হবে।
ভুয়া সুইসাইড স্কোয়াড মেম্বার
২০১৬ সালে সিরাজগঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশ চার নারীকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করে জানায় যে, তারা নব্য জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য এবং ফিদায়ি হামলার জন্য প্রস্তুত ছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ডিবি রাত আড়াইটায় তাদের এক গ্রাম থেকে আটক করে। আটক এক নারীর বাড়িতে তারা গোপন বৈঠক করছিল।
নারীদের মধ্যে ছিল একজন মা ও তার দুই অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে, আর মধ্য বয়সী আরেকজন। যারা দুজনেই নিরক্ষর।
এই ঘটনা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুসারে, অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম আটক নারীদের ছবি ও ভিডিওসহ ফলাও করে রিপোর্ট করে।
অথচ প্রকৃত ঘটনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওই নারীদের ডিবি পুলিশ এক মাস পূর্বে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং সেটা দিনের বেলায় গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে। এরপর তাদের পুলিশ ডিবি অফিসে আটকে রেখে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও শারীরিক নির্যাতন করে জবানবন্দী আদায় করা হয়।
সত্য ঘটনা বের করা কঠিন ছিল না। এই নারীদের সিরাজগাঞ্জ শহর থেকে মাত্র ৩০ মাইল দূরের গ্রাম থেকে তুলে আনা হয়। গণমাধ্যম চাইলেই সেখানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে পারত। তা করা হয়নি। ফলে পুলিশের বানানো গল্প সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, গ্রামের নিরীহ নারীরা সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য হিসেবে খ্যাতি পায়।
সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের এমন ভূমিকায় পুলিশ আরও উৎসাহিত হয়।
সিরাজগঞ্জ ডিবির ওই টিম একই ধরনের আরেকটি ঘটনার জন্ম দেয়। আবার তারা চার নারীকে হাজির করে দাবি করে যে, তাদের শহরের এক বাড়িতে মধ্যরাতে গোপন বৈঠক করার সময় আটক করা হয়। সাংবাদিকেরা এবারও যাচাই বা অনুসন্ধান না করে পুলিশের বক্তব্য হুবহু তুলে ধরে।
এই দুই ঘটনার অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে, ওই নারীদের বাড়ি বিভিন্ন জেলায় এবং ডিবি একেক জনকে একেক স্থান একেক সময়ে তুলে এনে পূর্বের ঘটনার মতো অফিসে আটকে রেখে ও একই কায়দায় জবানবন্দী আদায় করে। এভাবেই তারা সফলভাবে জঙ্গি দমনের একেকটা উদাহরণ তৈরি করতে থাকে।
পহেলা বৈশাখবিরোধী লিফলেট ও ৯ জঙ্গি
২০১৮ সালে রাজশাহী জেলার এক বালিকা বিদ্যালয়ে দুজন ছাত্রী লিফলেট বিলি করে, যেখানে লেখা ছিল পহেলা বৈশাখ পালন করা ইসলামবিরোধী তাই তা পরিহার করা উচিত। তারা স্থানীয় ইসলামি ছাত্রী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিল।
ঘটনার তিন দিন পর পুলিশ স্থানীয় এক জামায়াত নেতার বাড়িতে মধ্যরাতে অভিযান করে জামায়াত নেতা, তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে ও তাঁর ভাইয়ের তিন মেয়েকে তুলে নিয়ে যায়। পরের দিন সকালে সাংবাদিকদের সামনে তাঁদের উপস্থাপন করে পুলিশ জানায়, আটককৃতরা নব্য জেএমবির সঙ্গে জড়িত, তাঁরা রাত ২টার সময় গোপন বৈঠক করে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। বৈঠকে বোমা হামলা চালিয়ে জীবন দিয়ে হলেও তাঁরা পহেলা বৈশাখ উদযাপন প্রতিহত করবে বলে সভায় তাঁরা আলোচনা করেন।
স্থানীয় সাংবাদিকেরা পুলিশের ভাষ্যমতে রিপোর্ট করে।
ওই এলাকায় কয়েকদিন অনুসন্ধানের পর জানা যায়, ঘটনাটা এক ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলের নেতারা লিফলেটের ঘটনাকে ঘিরে ওই জামায়াত নেতাকে শায়েস্তা করতে চায়। আর তাই মধ্যরাতে অভিযান চালাতে দেরি হয়। স্থানীয় অনেক বাসিন্দা এসব জানেন। জঙ্গি ধরতে পুলিশ এতোটাই বেপরোয়া হয় যে, ওই ঘটনায় করা মামলায় তারা দূরের আরেকটি গ্রাম থেকে জামায়াত নেতার আত্মীয় দুজন নারীকে আটক করে।
স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, তিনি প্রকৃত ঘটনা জানলেও সেটা নিয়ে রিপোর্ট করার সাহস পাননি।
২ দিনব্যাপী বন্দুক যুদ্ধ, ২টি লাশ
২০১৭ সালের এপ্রিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়ে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে জঙ্গি অভিযানে পারদর্শী সিটিটিসি ও সোয়াতের সদস্যরা সেখানে যায়। গ্রামবাসীদের সরিয়ে দিয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে দুই দিনব্যাপী গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়। এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয় যেন বড় এক সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হচ্ছে। দুই দিন পর আস্তানার বাড়িতে ঢুকে পুলিশ দুটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে। দাবি করে, এরা নিজেরা বোমা ফাটিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পায়ে গুলিবদ্ধ এক অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তাঁর শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এমন ভাষ্য সব মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়।
পুলিশের নথিতে বলা হয়, পুলিশ মোট ২ হাজার রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এর বিপরীতে জঙ্গিদের দিক থেকেও অনেক গুলি করার কথা। সে ক্ষেত্রে জঙ্গিদের কাছে ভারি অস্ত্র ও গুলি থাকার কথা। কিন্তু তার প্রমাণ অভিযান শেষে পাওয়া যায়নি।
আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত বাড়ির দেয়ালে অনেক গুলির দাগ থাকলেও আশপাশের কোনো বাড়ির দেয়ালে দেখা যায়নি। জঙ্গিরা গুলি করলে তা থাকার কথা।
এখানেও সন্দেহের অনেক উপাদান থাকায় অনুসন্ধানে করতে নেমে অন্যরকম তথ্য পাওয়া যায়। আহত নারী ও তাঁর স্বামী যে বাড়িতে বসবাস করতেন সেটি ছিল এক প্রবাসীর। তিনি তাঁদের সেখানে থাকতে দিয়েছিলেন। ওই নারীর স্বামী যাকে পুলিশ বড় জঙ্গি হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে খুব ধার্মিক ও ভিন্নভাবে নামাজ পড়ার কারণে অনেকে সন্দেহের চোখে দেখত বলে আহত নারী ও আশপাশের গ্রামবাসীরা জানায়।
অন্য যে ব্যক্তির লাশ সেখানে পাওয়া গেছে তিনি বড় জঙ্গি ছিলেন। ওই জঙ্গি ঢাকার ডিবি অফিস থেকে পালিয়ে যান। তবে পুলিশ তাঁকে আবার আটক করে। অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশের দুজন সদস্য জানান, তাঁকে আগেই মেরে লাশ ওই বাড়িতে নেওয়া হয়েছিল। আর আহত নারীর স্বামীকে পয়েন্ট ব্লাঙ্ক গুলি করা হয় বলে তাঁরা জানান।
ফলে মধ্যরাতের অনেক গোপন বৈঠক আসলেই যে সংগঠিত হয়নি এগুলো তার প্রমাণ।
সত্যিকার অর্থে প্রায় সব জঙ্গি ঘটনার পেছনে কোনো না কোনো গল্প আছে যা আমরা জানি না।
যেমন, ২০১৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর আশকোনায় শাকিরা নামের এক নারী আত্মঘাতী হামলা চালায়। দেশের ইতিহাসে সেটা প্রথম। সারা দুনিয়ার মিডিয়ায় সেটা প্রকাশিত হয়। আত্মসমর্পণ না করে ওই নারী তার কোমরে বেঁধে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে সেখানে তার মৃত্যু হয়। সঙ্গে থাকা তার মেয়ে আহত হলেও উপস্থিত কোনো পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়নি।
এই ঘটনা নিয়ে কেউ সন্দেহ পোষণ করেনি। তবে এর সঙ্গেও অন্য এক সত্য লুকিয়ে আছে। আর তা হলো, শাকিরাকে খুব কাছে থেকে গুলি করা হয়, যা সিটিটিসি একাধিক সদস্য নিশ্চিত করেছে।
সোয়াতের এক শুটার যিনি সে সময় উপস্থিত ছিলেন সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন, তিনি নিজেও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন এবং সেগুলো শাকিরাকে বিদ্ধ করে। মজার ব্যাপার হলো, শাকিরার পোস্টমর্টেম রিপোর্টে গুলির কথা উল্লেখ করা হয়নি। এমন ঘটনাও ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। শাকিরা আত্মঘাতী হয়েছে, নাকি গুলিতে মারা গেছে সে প্রশ্ন অমীমাংসিত।
বাংলাদেশের নারী জঙ্গিদের আগাপাশতলা জানতে প্রায় তিন বছর আমরা গবেষণা করেছি। গবষেণালব্ধ ফল জার্মানি থেকে ২০২৩ সালে ‘উইমেন ইন টেরোরিজম ইন বাংলাদেশ’ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। বইটির সহ-লেখক জার্মান গবেষক ও লেখক ড. ইয়াসমিন লরচ।
সেই বইয়ে নিহত শাকিরার ঘটনার মতো আরো অনেক কাহিনীর বর্ণনা উঠে এসেছে।
যৌথ এই গবেষণায় বেরিয়ে আসে, ১২০ জন নারীকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে, যাদের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ ছিলেন নিরপরাধ। এই সংখ্যা পুরুষ জঙ্গিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি বলে পুলিশ ও র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
জঙ্গি দমনে নাটক কেন?
জঙ্গি দমনে হাসিনা সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ছাড়াও সফল জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও জঙ্গি ধরার জন্য বিশেষ প্রণোদনা, পুরস্কার, পদোন্নতি, ভালো পদায়ন ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সবচেয়ে বড় আকর্ষণের বিষয় ছিল মিডিয়ায় ব্যাপক কাভারেজ।
২০১৬ সাল থেকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে জঙ্গি ধরার এক অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যে যত সফল জঙ্গি অভিযান ও জঙ্গি আটক করেছে তারা ততই বাহিনী ও সরকারের বাহাবা পেয়েছে। বিপিএম ও পিপিএম তো ছিলই। ফলে এই প্রতিযোগিতা মাঠ পর্যায়ের পুলিশের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।
আবার অভিযানের ঘটনাকে বড় করে দেখানো হয় বেশি মিডিয়া কাভারেজ ও বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরির জন্য। প্রমাণ করার চেষ্টা হয় যে, ভয়ঙ্কর জঙ্গিদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই পুলিশ দমন করতে পারে।
২০১৫ সাল থেকে নারী জঙ্গির সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যায়। যেহেতু নারীদের সংবাদমূল্য বেশি ফলে প্রকৃত নারী জঙ্গির সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গিবাদে জড়িত না এমন অনেককে আটক করা হয়। নারীদের একটা গ্রুপ হিসেবে দেখালে গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। এই প্রবণতা প্রবল আকার ধারণ করে।
গবেষণা ও অনুসন্ধানের সময় অনেক পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তা তথ্য ও নথি দিয়ে সহায়তা করেন।
এদের অনেকে জানিয়েছেন কীভাবে তৈরি গল্পের মাধ্যমে নিরাপরাধ নারী-পুরুষদের জঙ্গি বানানো হয়েছে। আর এটা বেশি করেছে র্যাব। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপে এটা করতে হয়েছে বলেও দাবি তাদের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্র্যাপ করে কিছু ধার্মিক ব্যক্তিকে জঙ্গি হিসেবে ধরা হয়, সে তথ্য অবলীলায় স্বীকার করেছেন দুই কর্মকর্তা।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে সবাই জানতেন কীভাবে এমন অন্যায় কাজ করা হচ্ছে। সবাই নীরব ছিলেন। কারণ এ থেকে তাঁরা নিজেরা ও সরকার বড় ধরনের সুবিধা পেত।
ব্যাপারটা সরকারের ভেতরে অজানা ছিল না। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক শহিদুল হকের লেখা বই থেকে এর প্রমাণ মেলে। তিনি তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন, পান্থপথে জঙ্গি অভিযানের ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে বলেছিলেন, এখানে এসে এমন নাটক না করলেও পারতে।
প্রকৃত ও ফেইক জঙ্গি সবাই নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়। ধনী পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউই সহজে আইনি সুবিধা পায়নি, জামিনও পায়নি। জঙ্গিদের আইনি সহযোগিতা না দেওয়ার জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজেই উকিলদের পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এটা নিরপরাধ ব্যক্তিদের জন্য বেশি মর্মান্তিক। একদিকে তারা জঙ্গিবাদে জড়িত না, অন্যদিকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আইনি লড়াইয়ের জন্য উকিল না পাওয়া, বছরের পর বছর কারাবন্দি থাকা তাদের জন্য অনেক বড় অন্যায়। জামিনের পর মামলার ঘানি বয়ে বেড়ানো তো আছেই।
একজন নিরপরাধ নারী বা পুরুষকে জঙ্গি তকমা দিলে তার ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যায়। এই কালিমা তার পক্ষে মুছে ফেলা সম্ভব হয় না। রাষ্ট্রের সব ধরনের সুবিধা থেকে সে বঞ্চিত হয়। চাকরি না পেয়ে তারা পরিবার ও সমাজে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তারা অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের কাছে জঙ্গিবাদ বড় একটি রাজনৈতিক কার্ড ছিল। এই কার্ড তারা শেষ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করেছে। কিন্তু জঙ্গি দমনের নামে বড় সংখ্যক নিরপরাধ মানুষের ওপর অত্যাচার ও তাদের মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করা বড় ধরনের অন্যায়। কিন্তু মিডিয়া জেনে অথবা না জেনে বিষয়টি এড়িয়ে যায় বলে এখনো মানুষ সে সম্পর্কে জানে না।
মিডিয়া যে কোনো ঘটনা বিনা প্রশ্নে বা খতিয়ে দেখা ছাড়া প্রকাশ করলে সেটা মানুষ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ বয়ে আনে না, বরং অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। জঙ্গিবাদ সাংবাদিকতা এর বড় উদাহরণ।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় এক অধ্যায় রচিত হয় জঙ্গিদমন অভিযানে, কিন্তু সেটা মানুষের কাছে অজানাই রয়ে গেছে। এর কারণ হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমে শুধু সরকার ও তার বাহিনীর বয়ান তুলে ধরা, যেখানে কতটা দক্ষতা ও সাফল্যের সঙ্গে তারা জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করেছে সে চিত্র ফুটে উঠত। এর পেছনে যে এক অন্যায় ও অমানবিক দিক রয়েছে তা মিডিয়ায় উঠে আসেনি, ফলে সেটা অন্ধকারেই রয়ে যায়।
আমরা জানি, ২০১৩ সাল থেকে জুলাই ২০১৬ পর্যন্ত দেশে একের পর এক জঙ্গি হামলা হয়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা হয় হলি আর্টিজান বেকারিতে। এসব হামলায় বিদেশি নাগরিকসহ অনেক নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়। আওয়ামী লীগ সরকার সেসব হামলা প্রতিহত করতে না পারলেও শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে সংসদে দাবি করেন জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল।
এমন দাবির পেছনে কারণ রয়েছে বলে যুক্তিও দেওয়া হয়। হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর জঙ্গিদের দমনে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ বাড়ে। তাই যেকোনো মূল্যে জঙ্গিদমনে সাফল্য দেখানোর প্রয়োজন। এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দারা জঙ্গিদের আটক করতে মরিয়া হয়ে যায়। আশ্চর্যজনকভাবে হঠাৎ তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একের পর এক জঙ্গি আস্তানা খুঁজে পায় এবং সফল অভিযানে বড় বড় জঙ্গির মৃত্যু ঘটে। একই সঙ্গে শুরু হয় জঙ্গি আটকের হিড়িক। নবগঠিত সিটিটিসি ছাড়াও পুলিশ, র্যাব ও ডিবি দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে শত শত মানুষকে জঙ্গি হিসেবে আটক শুরু করে।
পরিস্থিতি দেখে মনে হয় যে পুরো দেশ জঙ্গিতে ছেয়ে গেছে। বাংলাদেশ যেন এক জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সাংবাদিক হিসেবে জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও জঙ্গি আটকের ঘটনা নিয়ে আমাদের মাঝে সন্দেহ জন্মে। অনেকে মনে করে, অভিযান বা আটকের অনেক কিছু সাজানো। তবে যেহেতু তখন কেউ তা খতিয়ে দেখেনি বা আনুসন্ধান করেনি তাই পুলিশের দেওয়া তথ্য বা ন্যারেটিভের বাইরে অন্যকোনো গল্প থাকলেও তা চাপা পড়ে যায়।
দু-তিনটি ঘটনা নিয়ে মিডিয়া আনুসন্ধান করলে ভিন্ন রকম তথ্য বেরিয়ে আসে, যার সঙ্গে পুলিশ বা র্যাবের দেওয়া তথ্যের মিল পাওয়া যায়নি। এ থেকে ধারণা হয়, প্রতিটি ঘটনার পেছনে কোনো না কোনো অন্য গল্প লুকিয়ে আছে।
সে সময় জঙ্গি ধরার এক অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু হয় বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে। প্রকৃত জঙ্গিদের ধরার পাশাপাশি নিরীহ নারী-পুরুষদের জঙ্গি বানানোর প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। এ ক্ষেত্রে তারা নানান রকম গল্পের আশ্রয় নেয়। কিন্তু কীভাবে, কেন এমন অন্যায় করা হয় তা জানতেই ২০২১ সালে নারী জঙ্গিবাদ নিয়ে গবেষণা ও অনুসন্ধান শুরু করি। অবাক হয়ে দেখি, জঙ্গিদমনে সাজানো নাটক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপকতা দেখে। ঘটনার যত ভেতরে প্রবেশ করি ততই জানতে পারি র্যাব, পুলিশ, ডিবি একই ধরনের গল্পের অবতারণা করে কীভাবে নিরপরাধ মানুষদের আটক করেছে, অনেককে বড় জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানের অনেক ঘটনাই অসত্য। অর্থাৎ জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিদমন অভিযান সম্পর্কে আমরা বাইরে থেকে বা গণমাধ্যম থেকে যা জানি, তার বাইরেও আছে অন্য ঘটনা। সারা দেশ চষে বেড়িয়ে যেসব ঘটনা তুলে এনেছিলাম তার কয়েকটির কথা আজ তুলে ধরলেই বোঝা যাবে কেন ঘটনার পেছনের ঘটনা খুঁজতে হবে।
ভুয়া সুইসাইড স্কোয়াড মেম্বার
২০১৬ সালে সিরাজগঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশ চার নারীকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করে জানায় যে, তারা নব্য জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য এবং ফিদায়ি হামলার জন্য প্রস্তুত ছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ডিবি রাত আড়াইটায় তাদের এক গ্রাম থেকে আটক করে। আটক এক নারীর বাড়িতে তারা গোপন বৈঠক করছিল।
নারীদের মধ্যে ছিল একজন মা ও তার দুই অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে, আর মধ্য বয়সী আরেকজন। যারা দুজনেই নিরক্ষর।
এই ঘটনা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুসারে, অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম আটক নারীদের ছবি ও ভিডিওসহ ফলাও করে রিপোর্ট করে।
অথচ প্রকৃত ঘটনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওই নারীদের ডিবি পুলিশ এক মাস পূর্বে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং সেটা দিনের বেলায় গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে। এরপর তাদের পুলিশ ডিবি অফিসে আটকে রেখে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও শারীরিক নির্যাতন করে জবানবন্দী আদায় করা হয়।
সত্য ঘটনা বের করা কঠিন ছিল না। এই নারীদের সিরাজগাঞ্জ শহর থেকে মাত্র ৩০ মাইল দূরের গ্রাম থেকে তুলে আনা হয়। গণমাধ্যম চাইলেই সেখানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে পারত। তা করা হয়নি। ফলে পুলিশের বানানো গল্প সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, গ্রামের নিরীহ নারীরা সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য হিসেবে খ্যাতি পায়।
সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের এমন ভূমিকায় পুলিশ আরও উৎসাহিত হয়।
সিরাজগঞ্জ ডিবির ওই টিম একই ধরনের আরেকটি ঘটনার জন্ম দেয়। আবার তারা চার নারীকে হাজির করে দাবি করে যে, তাদের শহরের এক বাড়িতে মধ্যরাতে গোপন বৈঠক করার সময় আটক করা হয়। সাংবাদিকেরা এবারও যাচাই বা অনুসন্ধান না করে পুলিশের বক্তব্য হুবহু তুলে ধরে।
এই দুই ঘটনার অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে, ওই নারীদের বাড়ি বিভিন্ন জেলায় এবং ডিবি একেক জনকে একেক স্থান একেক সময়ে তুলে এনে পূর্বের ঘটনার মতো অফিসে আটকে রেখে ও একই কায়দায় জবানবন্দী আদায় করে। এভাবেই তারা সফলভাবে জঙ্গি দমনের একেকটা উদাহরণ তৈরি করতে থাকে।
পহেলা বৈশাখবিরোধী লিফলেট ও ৯ জঙ্গি
২০১৮ সালে রাজশাহী জেলার এক বালিকা বিদ্যালয়ে দুজন ছাত্রী লিফলেট বিলি করে, যেখানে লেখা ছিল পহেলা বৈশাখ পালন করা ইসলামবিরোধী তাই তা পরিহার করা উচিত। তারা স্থানীয় ইসলামি ছাত্রী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিল।
ঘটনার তিন দিন পর পুলিশ স্থানীয় এক জামায়াত নেতার বাড়িতে মধ্যরাতে অভিযান করে জামায়াত নেতা, তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে ও তাঁর ভাইয়ের তিন মেয়েকে তুলে নিয়ে যায়। পরের দিন সকালে সাংবাদিকদের সামনে তাঁদের উপস্থাপন করে পুলিশ জানায়, আটককৃতরা নব্য জেএমবির সঙ্গে জড়িত, তাঁরা রাত ২টার সময় গোপন বৈঠক করে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। বৈঠকে বোমা হামলা চালিয়ে জীবন দিয়ে হলেও তাঁরা পহেলা বৈশাখ উদযাপন প্রতিহত করবে বলে সভায় তাঁরা আলোচনা করেন।
স্থানীয় সাংবাদিকেরা পুলিশের ভাষ্যমতে রিপোর্ট করে।
ওই এলাকায় কয়েকদিন অনুসন্ধানের পর জানা যায়, ঘটনাটা এক ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও তার শরিক দলের নেতারা লিফলেটের ঘটনাকে ঘিরে ওই জামায়াত নেতাকে শায়েস্তা করতে চায়। আর তাই মধ্যরাতে অভিযান চালাতে দেরি হয়। স্থানীয় অনেক বাসিন্দা এসব জানেন। জঙ্গি ধরতে পুলিশ এতোটাই বেপরোয়া হয় যে, ওই ঘটনায় করা মামলায় তারা দূরের আরেকটি গ্রাম থেকে জামায়াত নেতার আত্মীয় দুজন নারীকে আটক করে।
স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, তিনি প্রকৃত ঘটনা জানলেও সেটা নিয়ে রিপোর্ট করার সাহস পাননি।
২ দিনব্যাপী বন্দুক যুদ্ধ, ২টি লাশ
২০১৭ সালের এপ্রিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়ে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে জঙ্গি অভিযানে পারদর্শী সিটিটিসি ও সোয়াতের সদস্যরা সেখানে যায়। গ্রামবাসীদের সরিয়ে দিয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে দুই দিনব্যাপী গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়। এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয় যেন বড় এক সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হচ্ছে। দুই দিন পর আস্তানার বাড়িতে ঢুকে পুলিশ দুটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে। দাবি করে, এরা নিজেরা বোমা ফাটিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পায়ে গুলিবদ্ধ এক অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তাঁর শিশুকন্যাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এমন ভাষ্য সব মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়।
পুলিশের নথিতে বলা হয়, পুলিশ মোট ২ হাজার রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এর বিপরীতে জঙ্গিদের দিক থেকেও অনেক গুলি করার কথা। সে ক্ষেত্রে জঙ্গিদের কাছে ভারি অস্ত্র ও গুলি থাকার কথা। কিন্তু তার প্রমাণ অভিযান শেষে পাওয়া যায়নি।
আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত বাড়ির দেয়ালে অনেক গুলির দাগ থাকলেও আশপাশের কোনো বাড়ির দেয়ালে দেখা যায়নি। জঙ্গিরা গুলি করলে তা থাকার কথা।
এখানেও সন্দেহের অনেক উপাদান থাকায় অনুসন্ধানে করতে নেমে অন্যরকম তথ্য পাওয়া যায়। আহত নারী ও তাঁর স্বামী যে বাড়িতে বসবাস করতেন সেটি ছিল এক প্রবাসীর। তিনি তাঁদের সেখানে থাকতে দিয়েছিলেন। ওই নারীর স্বামী যাকে পুলিশ বড় জঙ্গি হিসেবে উল্লেখ করে তাঁর জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে খুব ধার্মিক ও ভিন্নভাবে নামাজ পড়ার কারণে অনেকে সন্দেহের চোখে দেখত বলে আহত নারী ও আশপাশের গ্রামবাসীরা জানায়।
অন্য যে ব্যক্তির লাশ সেখানে পাওয়া গেছে তিনি বড় জঙ্গি ছিলেন। ওই জঙ্গি ঢাকার ডিবি অফিস থেকে পালিয়ে যান। তবে পুলিশ তাঁকে আবার আটক করে। অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশের দুজন সদস্য জানান, তাঁকে আগেই মেরে লাশ ওই বাড়িতে নেওয়া হয়েছিল। আর আহত নারীর স্বামীকে পয়েন্ট ব্লাঙ্ক গুলি করা হয় বলে তাঁরা জানান।
ফলে মধ্যরাতের অনেক গোপন বৈঠক আসলেই যে সংগঠিত হয়নি এগুলো তার প্রমাণ।
সত্যিকার অর্থে প্রায় সব জঙ্গি ঘটনার পেছনে কোনো না কোনো গল্প আছে যা আমরা জানি না।
যেমন, ২০১৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর আশকোনায় শাকিরা নামের এক নারী আত্মঘাতী হামলা চালায়। দেশের ইতিহাসে সেটা প্রথম। সারা দুনিয়ার মিডিয়ায় সেটা প্রকাশিত হয়। আত্মসমর্পণ না করে ওই নারী তার কোমরে বেঁধে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে সেখানে তার মৃত্যু হয়। সঙ্গে থাকা তার মেয়ে আহত হলেও উপস্থিত কোনো পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়নি।
এই ঘটনা নিয়ে কেউ সন্দেহ পোষণ করেনি। তবে এর সঙ্গেও অন্য এক সত্য লুকিয়ে আছে। আর তা হলো, শাকিরাকে খুব কাছে থেকে গুলি করা হয়, যা সিটিটিসি একাধিক সদস্য নিশ্চিত করেছে।
সোয়াতের এক শুটার যিনি সে সময় উপস্থিত ছিলেন সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন, তিনি নিজেও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন এবং সেগুলো শাকিরাকে বিদ্ধ করে। মজার ব্যাপার হলো, শাকিরার পোস্টমর্টেম রিপোর্টে গুলির কথা উল্লেখ করা হয়নি। এমন ঘটনাও ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। শাকিরা আত্মঘাতী হয়েছে, নাকি গুলিতে মারা গেছে সে প্রশ্ন অমীমাংসিত।
বাংলাদেশের নারী জঙ্গিদের আগাপাশতলা জানতে প্রায় তিন বছর আমরা গবেষণা করেছি। গবষেণালব্ধ ফল জার্মানি থেকে ২০২৩ সালে ‘উইমেন ইন টেরোরিজম ইন বাংলাদেশ’ গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। বইটির সহ-লেখক জার্মান গবেষক ও লেখক ড. ইয়াসমিন লরচ।
সেই বইয়ে নিহত শাকিরার ঘটনার মতো আরো অনেক কাহিনীর বর্ণনা উঠে এসেছে।
যৌথ এই গবেষণায় বেরিয়ে আসে, ১২০ জন নারীকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে, যাদের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ ছিলেন নিরপরাধ। এই সংখ্যা পুরুষ জঙ্গিদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি বলে পুলিশ ও র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
জঙ্গি দমনে নাটক কেন?
জঙ্গি দমনে হাসিনা সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ছাড়াও সফল জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও জঙ্গি ধরার জন্য বিশেষ প্রণোদনা, পুরস্কার, পদোন্নতি, ভালো পদায়ন ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সবচেয়ে বড় আকর্ষণের বিষয় ছিল মিডিয়ায় ব্যাপক কাভারেজ।
২০১৬ সাল থেকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে জঙ্গি ধরার এক অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যে যত সফল জঙ্গি অভিযান ও জঙ্গি আটক করেছে তারা ততই বাহিনী ও সরকারের বাহাবা পেয়েছে। বিপিএম ও পিপিএম তো ছিলই। ফলে এই প্রতিযোগিতা মাঠ পর্যায়ের পুলিশের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।
আবার অভিযানের ঘটনাকে বড় করে দেখানো হয় বেশি মিডিয়া কাভারেজ ও বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরির জন্য। প্রমাণ করার চেষ্টা হয় যে, ভয়ঙ্কর জঙ্গিদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই পুলিশ দমন করতে পারে।
২০১৫ সাল থেকে নারী জঙ্গির সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যায়। যেহেতু নারীদের সংবাদমূল্য বেশি ফলে প্রকৃত নারী জঙ্গির সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গিবাদে জড়িত না এমন অনেককে আটক করা হয়। নারীদের একটা গ্রুপ হিসেবে দেখালে গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। এই প্রবণতা প্রবল আকার ধারণ করে।
গবেষণা ও অনুসন্ধানের সময় অনেক পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তা তথ্য ও নথি দিয়ে সহায়তা করেন।
এদের অনেকে জানিয়েছেন কীভাবে তৈরি গল্পের মাধ্যমে নিরাপরাধ নারী-পুরুষদের জঙ্গি বানানো হয়েছে। আর এটা বেশি করেছে র্যাব। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপে এটা করতে হয়েছে বলেও দাবি তাদের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্র্যাপ করে কিছু ধার্মিক ব্যক্তিকে জঙ্গি হিসেবে ধরা হয়, সে তথ্য অবলীলায় স্বীকার করেছেন দুই কর্মকর্তা।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে সবাই জানতেন কীভাবে এমন অন্যায় কাজ করা হচ্ছে। সবাই নীরব ছিলেন। কারণ এ থেকে তাঁরা নিজেরা ও সরকার বড় ধরনের সুবিধা পেত।
ব্যাপারটা সরকারের ভেতরে অজানা ছিল না। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক শহিদুল হকের লেখা বই থেকে এর প্রমাণ মেলে। তিনি তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন, পান্থপথে জঙ্গি অভিযানের ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে বলেছিলেন, এখানে এসে এমন নাটক না করলেও পারতে।
প্রকৃত ও ফেইক জঙ্গি সবাই নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়। ধনী পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউই সহজে আইনি সুবিধা পায়নি, জামিনও পায়নি। জঙ্গিদের আইনি সহযোগিতা না দেওয়ার জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজেই উকিলদের পরামর্শ দিয়েছিলেন।
এটা নিরপরাধ ব্যক্তিদের জন্য বেশি মর্মান্তিক। একদিকে তারা জঙ্গিবাদে জড়িত না, অন্যদিকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আইনি লড়াইয়ের জন্য উকিল না পাওয়া, বছরের পর বছর কারাবন্দি থাকা তাদের জন্য অনেক বড় অন্যায়। জামিনের পর মামলার ঘানি বয়ে বেড়ানো তো আছেই।
একজন নিরপরাধ নারী বা পুরুষকে জঙ্গি তকমা দিলে তার ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যায়। এই কালিমা তার পক্ষে মুছে ফেলা সম্ভব হয় না। রাষ্ট্রের সব ধরনের সুবিধা থেকে সে বঞ্চিত হয়। চাকরি না পেয়ে তারা পরিবার ও সমাজে বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তারা অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের কাছে জঙ্গিবাদ বড় একটি রাজনৈতিক কার্ড ছিল। এই কার্ড তারা শেষ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করেছে। কিন্তু জঙ্গি দমনের নামে বড় সংখ্যক নিরপরাধ মানুষের ওপর অত্যাচার ও তাদের মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করা বড় ধরনের অন্যায়। কিন্তু মিডিয়া জেনে অথবা না জেনে বিষয়টি এড়িয়ে যায় বলে এখনো মানুষ সে সম্পর্কে জানে না।
মিডিয়া যে কোনো ঘটনা বিনা প্রশ্নে বা খতিয়ে দেখা ছাড়া প্রকাশ করলে সেটা মানুষ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ বয়ে আনে না, বরং অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। জঙ্গিবাদ সাংবাদিকতা এর বড় উদাহরণ।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

সুযোগসন্ধানী উগ্রপন্থীদের মব-তাণ্ডবে সৃষ্ট মারাত্মক অস্থির-অনিশ্চিত এক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন যেন স্বস্তির একরাশ হাওয়ার মতো। দেশে বাম, মধ্য বাম ও উদার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা...
১৫ ঘণ্টা আগে
বেশ খেদের সঙ্গে অনেকেরই জিজ্ঞাসা—স্বাধীনতা লাভের পর বিগত পাঁচ দশক তথা ৫৪ বছরে (১৯৭১-২০২৫) শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অর্জন কী; কী পেয়েছি এই সুদীর্ঘ সময়ে? আবার তৃপ্তির ঢেকুর তুলে খুবই উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে অনেককে এ কথাও বলতে শোনা যায়...
১৫ ঘণ্টা আগে
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা তরুণদের দল এনসিপিতে মহাদঙ্গল শুরু হয়েছে। দলটি মধ্যপন্থী রাজনীতি, দ্বিতীয় রিপাবলিক এবং নতুন বন্দোবস্তের কথা বলে যাত্রা শুরু করেছিল। প্রতিষ্ঠার এক বছর না যেতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধতা নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগে
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
২ দিন আগেকোনো রাজনীতিকের সামনে সুযোগ বারবার আসে না। সেদিক থেকে তারেক রহমান সৌভাগ্যবান। তাঁর সামনে দ্বিতীয়বারের মতো সুযোগ এসেছে জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার, শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা ফেরানোর। রাষ্ট্রকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান ধাঁচে নিয়ে যাওয়ার অপতৎপরতা রুখে দিতেও তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেন।
আজাদুর রহমান চন্দন

সুযোগসন্ধানী উগ্রপন্থীদের মব-তাণ্ডবে সৃষ্ট মারাত্মক অস্থির-অনিশ্চিত এক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন যেন স্বস্তির একরাশ হাওয়ার মতো। দেশে বাম, মধ্য বাম ও উদার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা-ভঙ্গুরতার কারণে এই অস্থির ও ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে শান্তিপ্রিয় মানুষ যখন এমন কোনো দল বা নেতার প্রয়োজন বোধ করছিলেন মনেপ্রাণে, ঠিক সে সময়ে তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছরের ‘নির্বাসিত’ জীবন শেষ করে দেশে ফিরে সবাইকে নিয়ে সবার জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার ইচ্ছা-প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বললেন, ‘আজ আমাদের সময় এসেছে, সবাই মিলে দেশ গড়ার। এ দেশে যেমন পাহাড়ের মানুষ আছেন, এ দেশে একইভাবে সমতলেরও মানুষ আছেন; এ দেশে মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করেন।’ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসুন, আমরা যে ধর্মের মানুষ হই, আমরা যে শ্রেণির মানুষ হই, যে রাজনৈতিক দলেরই সদস্য হই, অথবা একজন নির্দলীয় ব্যক্তি হই, আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে, যেকোনো মূল্যে এ দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে; যেকোনো মূল্যে যেকোনো বিশৃঙ্খলাকে পরিত্যাগ করতে হবে; যেকোনো মূল্যে আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে মানুষ নিরাপদ থাকতে পারেন। শিশু হোক, নারী হোক, পুরুষ হোক, যেকোনো বয়স, যেকোনো শ্রেণি, যেকোনো পেশা, যেকোনো ধর্মের মানুষ যেন নিরাপদ থাকেন, এই হোক আমাদের চাওয়া।’
এটা ঠিক, এ দেশে রাজনীতিবিদদের বক্তব্য মানুষ খুব কমই আমলে নেয়। ‘ওসব তো রাজনীতির কথা’—এমন মন্তব্যের মাধ্যমে রাজনীতিবিদেরাও নানা সময়ে বুঝিয়ে দেন, তাঁদের বক্তব্য নিছকই কথার কথা। তা সত্ত্বেও সংকটে-দুর্বিপাকে মানুষ রাজনীতিকদের ওপরই ভরসা করে থাকেন। এমনই এক সংকটকালে তারেক রহমানের ওপর আস্থা রাখতে দেখা যাচ্ছে এমন অনেক মানুষকেও, যাঁরা একসময় তাঁকে পছন্দ করতেন না। অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা সত্ত্বেও তারেক রহমান ছাড়া ভরসা করার মতো কাউকে কি এ মুহূর্তে চোখে পড়ছে? রাজনীতিসচেতন মানুষদের কাছে বিএনপির পরিচয় একটি ডান বা মধ্য-ডানপন্থী দল হিসেবে। অতি ডানপন্থার ঝুঁকির মধ্যে এই দলের নেতা কি পারবেন ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে? এমন অনেক প্রশ্ন আছে অনেক মানুষের।
এই অবস্থায় তারেক রহমানও আজ কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি। তাঁর সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। এ মুহূর্তে তাঁর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে দলের ভেতরের কোন্দল মেটানো, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং সকল পর্যায়ে দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে নেতা-কর্মীদের বাধ্য করা। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামানো, নেতাদের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা এবং ভোটারদের আস্থা অর্জন করাও তাঁর জন্য জরুরি। এরই মধ্যে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্র বা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁদের বুঝিয়ে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা তারেক রহমানের জন্য এক কঠিন কাজ হবে। মিত্রদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির ভেতরে যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, তা নিরসন করাও খুব সহজ কাজ নয়। বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণার পাশাপাশি মিত্রদের জন্য কিছু আসন ছাড়ার পর কয়েকটি জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে। যশোর-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মনিরামপুর এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। নীলফামারী-১ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম প্রার্থী ঘোষণা করার পর সেখানেও একই ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। কিশোরগঞ্জ-৪ ও ঝিনাইদহ-৪ আসনেও মিত্রদের ছাড় দেওয়ায় তৃণমূল নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করেছেন বিএনপির আলোচিত নেত্রী রুমিন ফারহানা।
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে সমালোচনার মুখে আছে বিএনপি। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ২৫৯টি ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৬৬ জন নিহত এবং ২ হাজার ৯২৩ জন আহত হয়েছেন। এ পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, দলে শৃঙ্খলা ফেরানো কতটা জরুরি। তারেক রহমান এত বছর দল পরিচালনা করেছেন ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে। এখন তিনি দেশে উপস্থিত থাকার সময় যদি দলীয় নেতা-কর্মীরা অপকর্মে জড়ান, তবে তাতে তাঁর সুনাম নষ্ট হবে এবং প্রতিপক্ষ আরও বেশি করে সমালোচনার সুযোগ পাবে।
তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারবেন কি না, সে নিয়ে কিছুদিন আগে পর্যন্ত একধরনের অনিশ্চয়তা ছিল। সে সুযোগে যাঁরা অনেকটা ‘ফাঁকা মাঠে’ গোল দেওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন, তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে বিএনপির নেতার প্রত্যাবর্তন। উদীয়মান কোনো কোনো দল তো এখন টলমল অবস্থায়। কিছুদিন আগেও যেখানে বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেওয়ার খবর পাওয়া যেত, সেখানে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে গেছে। তবে আসন্ন ক্ষমতার হাতছানি দেখে গণমাধ্যমের আনত মস্তকে বন্দনায় মেতে ওঠাটা বিপজ্জনক। বন্দনা ও চাটুকারিতা প্রশ্রয় পেয়ে গেলে নেতৃত্বের সামনে বিপথে চালিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ ঝুঁকি কতটা এড়িয়ে চলতে পারেন, সেটিও দেখার বিষয়।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন মাস তিনেক আগে বলেছিলেন, ‘এ দেশে শতকরা ৯২ ভাগ মানুষ মুসলমান হলেও নানা ধর্মের মানুষ ও জাতিগোষ্ঠী একসঙ্গে বসবাস করছেন। এখানে সব মত-পথ এবং ধর্মের মানুষকে নেতৃত্ব দিতে পারে—এমন নেতৃত্বের খুবই প্রয়োজন। জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী অথচ সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতার প্রয়োজন। এ ধরনের নেতা তারেক রহমানকে ছাড়া কাউকে দেখছি না। কারণ, তারেক রহমান মধ্যপন্থী ধারার রাজনীতি করলেও ইসলামি মূলধারার রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মীয় উগ্রবাদী নেতার যেমন গ্রহণযোগ্যতা নেই; তেমনি ইঙ্গো-মার্কিন চেতনা এবং বাম চেতনায় বিশ্বাসী তথাকথিত প্রগতিশীল নেতার গ্রহণযোগ্যতা নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাপিত জীবনে ইসলামি চেতনা ধারণ করেন; কিন্তু কথাবার্তা ও কর্মের মাধ্যমে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য মধ্যপন্থী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।’ বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমিরে শরিয়ত মাওলানা আবু জাফর কাশেমীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এবং সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান খায়রুল আহসানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল দৈনিক ইনকিলাব ভবনে সম্পাদকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন। এ এম এম বাহাউদ্দীনের এই মূল্যায়নের মর্যাদাও যদি তারেক রহমান রাখতে পারেন, তবে সামনের দিনগুলোতে সেটিও দেশের জন্য একেবারে কম হবে না।
কোনো রাজনীতিকের সামনে সুযোগ বারবার আসে না। সেদিক থেকে তারেক রহমান সৌভাগ্যবান। তাঁর সামনে দ্বিতীয়বারের মতো সুযোগ এসেছে জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার, শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা ফেরানোর। রাষ্ট্রকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান ধাঁচে নিয়ে যাওয়ার অপতৎপরতা রুখে দিতেও তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেন। তাঁর পিতা জিয়াউর রহমান শাসনকালের সূচনার দিকে তখনকার বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এম জি (মোহাম্মদ গোলাম) তোয়াবের দিক থেকে এমনই এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন। এম জি তোয়াব আগে থেকেই কট্টর পাকিস্তানপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর দিক থেকে চ্যালেঞ্জ থাকার কারণেই তখন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিরও সীমিত সমর্থন পেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। এ মুহূর্তে দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের আবেগ-উচ্ছ্বাস ও নিরাপত্তার কড়াকড়িতে তারেক রহমানের চলাফেরাসহ কর্মসূচির কারণে রাস্তাঘাটে পোহানো কষ্টটুকু মানুষ মন থেকে মেনে নিলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা না-ও হতে পারে। বিষয়টির দিকে বিএনপির নেতার সুনজর বিবেচনা রাখে। সামগ্রিকভাবে তারেক রহমান সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, সে অনুযায়ী অগ্রসর হলেই আপাতত পাওয়া স্বস্তিটুকু স্থায়ী হতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

সুযোগসন্ধানী উগ্রপন্থীদের মব-তাণ্ডবে সৃষ্ট মারাত্মক অস্থির-অনিশ্চিত এক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন যেন স্বস্তির একরাশ হাওয়ার মতো। দেশে বাম, মধ্য বাম ও উদার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা-ভঙ্গুরতার কারণে এই অস্থির ও ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে শান্তিপ্রিয় মানুষ যখন এমন কোনো দল বা নেতার প্রয়োজন বোধ করছিলেন মনেপ্রাণে, ঠিক সে সময়ে তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছরের ‘নির্বাসিত’ জীবন শেষ করে দেশে ফিরে সবাইকে নিয়ে সবার জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার ইচ্ছা-প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বললেন, ‘আজ আমাদের সময় এসেছে, সবাই মিলে দেশ গড়ার। এ দেশে যেমন পাহাড়ের মানুষ আছেন, এ দেশে একইভাবে সমতলেরও মানুষ আছেন; এ দেশে মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করেন।’ শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আসুন, আমরা যে ধর্মের মানুষ হই, আমরা যে শ্রেণির মানুষ হই, যে রাজনৈতিক দলেরই সদস্য হই, অথবা একজন নির্দলীয় ব্যক্তি হই, আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে, যেকোনো মূল্যে এ দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে; যেকোনো মূল্যে যেকোনো বিশৃঙ্খলাকে পরিত্যাগ করতে হবে; যেকোনো মূল্যে আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে মানুষ নিরাপদ থাকতে পারেন। শিশু হোক, নারী হোক, পুরুষ হোক, যেকোনো বয়স, যেকোনো শ্রেণি, যেকোনো পেশা, যেকোনো ধর্মের মানুষ যেন নিরাপদ থাকেন, এই হোক আমাদের চাওয়া।’
এটা ঠিক, এ দেশে রাজনীতিবিদদের বক্তব্য মানুষ খুব কমই আমলে নেয়। ‘ওসব তো রাজনীতির কথা’—এমন মন্তব্যের মাধ্যমে রাজনীতিবিদেরাও নানা সময়ে বুঝিয়ে দেন, তাঁদের বক্তব্য নিছকই কথার কথা। তা সত্ত্বেও সংকটে-দুর্বিপাকে মানুষ রাজনীতিকদের ওপরই ভরসা করে থাকেন। এমনই এক সংকটকালে তারেক রহমানের ওপর আস্থা রাখতে দেখা যাচ্ছে এমন অনেক মানুষকেও, যাঁরা একসময় তাঁকে পছন্দ করতেন না। অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা সত্ত্বেও তারেক রহমান ছাড়া ভরসা করার মতো কাউকে কি এ মুহূর্তে চোখে পড়ছে? রাজনীতিসচেতন মানুষদের কাছে বিএনপির পরিচয় একটি ডান বা মধ্য-ডানপন্থী দল হিসেবে। অতি ডানপন্থার ঝুঁকির মধ্যে এই দলের নেতা কি পারবেন ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে? এমন অনেক প্রশ্ন আছে অনেক মানুষের।
এই অবস্থায় তারেক রহমানও আজ কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি। তাঁর সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। এ মুহূর্তে তাঁর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে দলের ভেতরের কোন্দল মেটানো, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং সকল পর্যায়ে দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে নেতা-কর্মীদের বাধ্য করা। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামানো, নেতাদের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখা এবং ভোটারদের আস্থা অর্জন করাও তাঁর জন্য জরুরি। এরই মধ্যে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্র বা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁদের বুঝিয়ে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা তারেক রহমানের জন্য এক কঠিন কাজ হবে। মিত্রদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির ভেতরে যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, তা নিরসন করাও খুব সহজ কাজ নয়। বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণার পাশাপাশি মিত্রদের জন্য কিছু আসন ছাড়ার পর কয়েকটি জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে। যশোর-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় মনিরামপুর এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। নীলফামারী-১ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম প্রার্থী ঘোষণা করার পর সেখানেও একই ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। কিশোরগঞ্জ-৪ ও ঝিনাইদহ-৪ আসনেও মিত্রদের ছাড় দেওয়ায় তৃণমূল নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করেছেন বিএনপির আলোচিত নেত্রী রুমিন ফারহানা।
গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে সমালোচনার মুখে আছে বিএনপি। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ২৫৯টি ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৬৬ জন নিহত এবং ২ হাজার ৯২৩ জন আহত হয়েছেন। এ পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, দলে শৃঙ্খলা ফেরানো কতটা জরুরি। তারেক রহমান এত বছর দল পরিচালনা করেছেন ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে। এখন তিনি দেশে উপস্থিত থাকার সময় যদি দলীয় নেতা-কর্মীরা অপকর্মে জড়ান, তবে তাতে তাঁর সুনাম নষ্ট হবে এবং প্রতিপক্ষ আরও বেশি করে সমালোচনার সুযোগ পাবে।
তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারবেন কি না, সে নিয়ে কিছুদিন আগে পর্যন্ত একধরনের অনিশ্চয়তা ছিল। সে সুযোগে যাঁরা অনেকটা ‘ফাঁকা মাঠে’ গোল দেওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন, তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে বিএনপির নেতার প্রত্যাবর্তন। উদীয়মান কোনো কোনো দল তো এখন টলমল অবস্থায়। কিছুদিন আগেও যেখানে বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেওয়ার খবর পাওয়া যেত, সেখানে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে গেছে। তবে আসন্ন ক্ষমতার হাতছানি দেখে গণমাধ্যমের আনত মস্তকে বন্দনায় মেতে ওঠাটা বিপজ্জনক। বন্দনা ও চাটুকারিতা প্রশ্রয় পেয়ে গেলে নেতৃত্বের সামনে বিপথে চালিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ ঝুঁকি কতটা এড়িয়ে চলতে পারেন, সেটিও দেখার বিষয়।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন মাস তিনেক আগে বলেছিলেন, ‘এ দেশে শতকরা ৯২ ভাগ মানুষ মুসলমান হলেও নানা ধর্মের মানুষ ও জাতিগোষ্ঠী একসঙ্গে বসবাস করছেন। এখানে সব মত-পথ এবং ধর্মের মানুষকে নেতৃত্ব দিতে পারে—এমন নেতৃত্বের খুবই প্রয়োজন। জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী অথচ সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতার প্রয়োজন। এ ধরনের নেতা তারেক রহমানকে ছাড়া কাউকে দেখছি না। কারণ, তারেক রহমান মধ্যপন্থী ধারার রাজনীতি করলেও ইসলামি মূলধারার রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মীয় উগ্রবাদী নেতার যেমন গ্রহণযোগ্যতা নেই; তেমনি ইঙ্গো-মার্কিন চেতনা এবং বাম চেতনায় বিশ্বাসী তথাকথিত প্রগতিশীল নেতার গ্রহণযোগ্যতা নেই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাপিত জীবনে ইসলামি চেতনা ধারণ করেন; কিন্তু কথাবার্তা ও কর্মের মাধ্যমে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য মধ্যপন্থী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।’ বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমিরে শরিয়ত মাওলানা আবু জাফর কাশেমীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এবং সম্মিলিত ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান খায়রুল আহসানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল দৈনিক ইনকিলাব ভবনে সম্পাদকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন। এ এম এম বাহাউদ্দীনের এই মূল্যায়নের মর্যাদাও যদি তারেক রহমান রাখতে পারেন, তবে সামনের দিনগুলোতে সেটিও দেশের জন্য একেবারে কম হবে না।
কোনো রাজনীতিকের সামনে সুযোগ বারবার আসে না। সেদিক থেকে তারেক রহমান সৌভাগ্যবান। তাঁর সামনে দ্বিতীয়বারের মতো সুযোগ এসেছে জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়ার, শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা ফেরানোর। রাষ্ট্রকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান ধাঁচে নিয়ে যাওয়ার অপতৎপরতা রুখে দিতেও তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেন। তাঁর পিতা জিয়াউর রহমান শাসনকালের সূচনার দিকে তখনকার বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এম জি (মোহাম্মদ গোলাম) তোয়াবের দিক থেকে এমনই এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন। এম জি তোয়াব আগে থেকেই কট্টর পাকিস্তানপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর দিক থেকে চ্যালেঞ্জ থাকার কারণেই তখন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিরও সীমিত সমর্থন পেয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। এ মুহূর্তে দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের আবেগ-উচ্ছ্বাস ও নিরাপত্তার কড়াকড়িতে তারেক রহমানের চলাফেরাসহ কর্মসূচির কারণে রাস্তাঘাটে পোহানো কষ্টটুকু মানুষ মন থেকে মেনে নিলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা না-ও হতে পারে। বিষয়টির দিকে বিএনপির নেতার সুনজর বিবেচনা রাখে। সামগ্রিকভাবে তারেক রহমান সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, সে অনুযায়ী অগ্রসর হলেই আপাতত পাওয়া স্বস্তিটুকু স্থায়ী হতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় এক অধ্যায় রচিত হয় জঙ্গিদমন অভিযানে, কিন্তু সেটা মানুষের কাছে অজানাই রয়ে গেছে। এর কারণ হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমে শুধু সরকার ও তার বাহিনীর বয়ান তুলে ধরা, যেখানে কতটা দক্ষতা ও সাফল্যের সঙ্গে তারা জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করেছে সে চিত্র ফুটে উঠত।
১০ ডিসেম্বর ২০২৪
বেশ খেদের সঙ্গে অনেকেরই জিজ্ঞাসা—স্বাধীনতা লাভের পর বিগত পাঁচ দশক তথা ৫৪ বছরে (১৯৭১-২০২৫) শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অর্জন কী; কী পেয়েছি এই সুদীর্ঘ সময়ে? আবার তৃপ্তির ঢেকুর তুলে খুবই উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে অনেককে এ কথাও বলতে শোনা যায়...
১৫ ঘণ্টা আগে
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা তরুণদের দল এনসিপিতে মহাদঙ্গল শুরু হয়েছে। দলটি মধ্যপন্থী রাজনীতি, দ্বিতীয় রিপাবলিক এবং নতুন বন্দোবস্তের কথা বলে যাত্রা শুরু করেছিল। প্রতিষ্ঠার এক বছর না যেতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধতা নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগে
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
২ দিন আগেবিমল সরকার

বেশ খেদের সঙ্গে অনেকেরই জিজ্ঞাসা—স্বাধীনতা লাভের পর বিগত পাঁচ দশক তথা ৫৪ বছরে (১৯৭১-২০২৫) শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অর্জন কী; কী পেয়েছি এই সুদীর্ঘ সময়ে? আবার তৃপ্তির ঢেকুর তুলে খুবই উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে অনেককে এ কথাও বলতে শোনা যায়, বারবার রাজনৈতিক কলহ, শত রকমের বাধাবিপত্তি ও দুর্যোগ-দুর্বিপাকের মধ্যেও এ সময়ে কী পাইনি আমরা! আসলে নির্মোহ ও পক্ষপাতহীন দৃষ্টিতে দেখতে পারলে দুটি পক্ষের কোনোটির মতামতকেই উপেক্ষা করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না—‘কী পেয়েছি’ আর ‘কী পাইনি’।
এখানে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রটি নিয়ে আমার ছিটেফোঁটা আলোকপাত করার প্রয়াস। ইংরেজরা প্রথমবারের মতো ১৯০৫ সালে বাংলাকে (ব্রিটিশ বাংলা) ভাগ এবং ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম’ নামে স্বতন্ত্র একটি প্রদেশ সৃষ্টি করে। নবগঠিত প্রদেশটির রাজধানী স্থাপন করা হয় ঢাকায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জন-অধ্যুষিত এলাকার চাহিদা ও অন্যান্য যৌক্তিক কারণে করা হলেও মাত্র ছয় বছরের মাথায় ১৯১১ সালে তা বাতিল করা হয়। বঙ্গভঙ্গ এবং বঙ্গভঙ্গ রদকে কেন্দ্র করে ঐতিহ্যবাহী শহর ঢাকাসহ গোটা পূর্ববঙ্গ ও এই এলাকার মুসলিম জনগণের প্রতি শাসককুল ইংরেজদের একটি বিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়।
বঙ্গভঙ্গের সময় অবিভক্ত বাংলায় একটিই মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ছিল—কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত ১৮৫৭ সাল)। এ ছাড়া অবিভক্ত বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম প্রভৃতি) কলেজ ছিল মোট ৩৭টি। এই ৩৭টির মধ্যে ‘পূর্ববঙ্গ ও আসামে’ (নবগঠিত প্রদেশ) ১১টি এবং অবশিষ্ট বঙ্গে ছিল ২৬টি কলেজ। একই সময় (১৯০৫) সারা বাংলায় এমএ পড়ার কলেজ ছিল মোট তিনটি। বিখ্যাত ঢাকা কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, রাজশাহী কলেজ, জগন্নাথ কলেজসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের তখন ‘ভরা যৌবন’; খ্যাতি ও গৌরব-গরিমা অনেক দিক থেকেই। তা সত্ত্বেও পূর্ববঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশ) ও আসামে (নবগঠিত প্রদেশের অংশ) এমএ পড়ার মতো কোনো কলেজ বা বন্দোবস্ত ছিল না সে সময়।
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন শর্ত অনুযায়ী ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী ২৫ মাইল পরিধি এলাকায় অবস্থিত কলেজগুলোই (ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ কলেজ প্রভৃতি ৭টি) এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় রাখা হয়। পূর্ববঙ্গের বাকি সব কলেজ থেকে যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে (যা ১৯৪৭ সালে দেশভাগ পর্যন্ত বহাল থাকে)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ববঙ্গের প্রথম, অবিভক্ত বাংলার দ্বিতীয় (প্রথমটি কলকাতা) এবং উপমহাদেশের ১১তম বিশ্ববিদ্যালয়। বঙ্গভঙ্গ এবং পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই অঞ্চলে নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনায় কলেজসহ বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে থাকে।
১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পায়। পূর্ববঙ্গকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় পাকিস্তানের সঙ্গে এবং তখনই পূর্ববঙ্গ শিক্ষা অধ্যাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক কাম শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে ‘এফিলিয়েশন’-এর ব্যবস্থা যোগ করলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর (ডিগ্রি স্তরের ৩৪টি ও ইন্টারমিডিয়েট স্তরের ২৩টি) এফিলিয়েশন ও তত্ত্বাবধানের ভার এই বিশ্ববিদ্যালয়টির (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ওপর ন্যস্ত হয়।
পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় বাংলাদেশ এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় একটিই ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মেডিকেল কলেজও একটিই, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ইংরেজ আমলে ১৯৪৬ সালে স্থাপিত)। এ ছাড়া সারা দেশে কলেজ ছিল মোট ৫৫টি (ডিগ্রি ও ইন্টারমিডিয়েট স্তরে; এগুলোর মধ্যে সরকারি কলেজ ৪টি)। ঠিক এ সবকিছু নিয়েই পাকিস্তান আমলে যাত্রা শুরু হয় আমাদের।
পাকিস্তানি শাসনের ২৪ বছরে অন্যায়, শোষণ আর বৈষম্যের মধ্যেও উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বেশ কিছু উন্নয়ন ও সম্প্রসারণমূলক কাজ সম্পন্ন হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিন পরে হলেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয় এ সময়ে (পাকিস্তান সৃষ্টির ছয় বছরের মাথায় ১৯৫৩ সালে হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আর ২০ বছরের মাথায় ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)। এ ছাড়া পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে একে একে মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয় আটটি।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যা যেমন রয়েছে নানাবিধ, তেমনি উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সম্ভাবনাগুলোকেও খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। দেশে বর্তমানে ৫৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি আছে ১১৫টি। সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৭টি; বেসরকারি ৭৩টি। বিভাগীয় পাঁচ শহরে রয়েছে পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এত কিছু থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতি, অনিয়ম আর অব্যবস্থার কারণে উচ্চশিক্ষা নিয়ে সার্বক্ষণিক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকতে হয় গোটা জাতিকে। স্বাধীনতার ৫৪ বছরের মাথায় এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় আর কী হতে পারে?
আসলেই তো! আগে যেমনই থাক বা না থাক, শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমানে কি নেই আমাদের? স্বীকার না করে উপায় নেই, উচ্চশিক্ষায় আমাদের দেশে এ এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। সরকারি-বেসরকারি দেড় শর বেশি বিশ্ববিদ্যালয় (১৭২টি)। একইভাবে এক শর বেশি মেডিকেল কলেজ (১১০টি)। রয়েছে পাঁচ বিভাগীয় শহরে পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া ৭০৮টি সরকারি কলেজ। ডিগ্রি স্তরে পাঠদান উপযোগী কলেজ দুই হাজারের বেশি (২,২৫৭টি)। আর সরকারি-বেসরকারি সাড়ে আট শ কলেজে (৮৮২) অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স (১৭৫) পড়ানোর ব্যবস্থা-বন্দোবস্ত রয়েছে। এসব বিবেচনায় শিক্ষাক্ষেত্রে এক বিপ্লব বলা যেতে পারে।
আমি আবারও কিছুটা অতীতমুখী হতে চাই। ১৯৪৭ সালে একটিমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় আর একটি মেডিকেল কলেজ দিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু। ২৪ বছর পর ১৯৭২ সালে স্বাধীন দেশে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়, আটটি মেডিকেল কলেজ, ডিগ্রি স্তরের ১১০টি কলেজ, (যেগুলোর মধ্যে ২৬টি সরকারি) আর অনার্স পড়ানোর মতো কলেজ ২০টি। সে তুলনায় আজ অভাবনীয় পরিবর্তন ও অগ্রগতি সহজেই দৃশ্যমান। তবে উপযুক্ত দেখভালের অভাব ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে অনেক কিছু থাকার পরও কী যেন নেই আমাদের। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে সব সময় ব্যতিব্যস্ত করে রাখে।
প্রখ্যাত সাহিত্যিক যাযাবরের (বিনয়কুমার মুখোপাধ্যায়) অমর সৃষ্টি ‘দৃষ্টিপাত’ উপন্যাসটির কথা মনে পড়ে। যাযাবর তাঁর কালজয়ী উপন্যাস শেষ করেন এই বাক্যটি দিয়ে—‘যে আগুন আলো দেয় না অথচ দহন করে, সেই দীপ্তিহীন অগ্নির নির্দয় দহনে পলে পলে দগ্ধ হলেন কাণ্ডজ্ঞানহীন হতভাগ্য চারুদত্ত আধারকার।’ আমাদের উচ্চ শিক্ষপ্রতিষ্ঠানেও যেন এমন শিক্ষারূপী আগুন আছে, যা আলো দেয় না অথচ প্রতিনিয়ত দহন করে চলেছে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক

বেশ খেদের সঙ্গে অনেকেরই জিজ্ঞাসা—স্বাধীনতা লাভের পর বিগত পাঁচ দশক তথা ৫৪ বছরে (১৯৭১-২০২৫) শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অর্জন কী; কী পেয়েছি এই সুদীর্ঘ সময়ে? আবার তৃপ্তির ঢেকুর তুলে খুবই উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে অনেককে এ কথাও বলতে শোনা যায়, বারবার রাজনৈতিক কলহ, শত রকমের বাধাবিপত্তি ও দুর্যোগ-দুর্বিপাকের মধ্যেও এ সময়ে কী পাইনি আমরা! আসলে নির্মোহ ও পক্ষপাতহীন দৃষ্টিতে দেখতে পারলে দুটি পক্ষের কোনোটির মতামতকেই উপেক্ষা করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না—‘কী পেয়েছি’ আর ‘কী পাইনি’।
এখানে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রটি নিয়ে আমার ছিটেফোঁটা আলোকপাত করার প্রয়াস। ইংরেজরা প্রথমবারের মতো ১৯০৫ সালে বাংলাকে (ব্রিটিশ বাংলা) ভাগ এবং ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম’ নামে স্বতন্ত্র একটি প্রদেশ সৃষ্টি করে। নবগঠিত প্রদেশটির রাজধানী স্থাপন করা হয় ঢাকায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জন-অধ্যুষিত এলাকার চাহিদা ও অন্যান্য যৌক্তিক কারণে করা হলেও মাত্র ছয় বছরের মাথায় ১৯১১ সালে তা বাতিল করা হয়। বঙ্গভঙ্গ এবং বঙ্গভঙ্গ রদকে কেন্দ্র করে ঐতিহ্যবাহী শহর ঢাকাসহ গোটা পূর্ববঙ্গ ও এই এলাকার মুসলিম জনগণের প্রতি শাসককুল ইংরেজদের একটি বিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়।
বঙ্গভঙ্গের সময় অবিভক্ত বাংলায় একটিই মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ছিল—কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (স্থাপিত ১৮৫৭ সাল)। এ ছাড়া অবিভক্ত বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম প্রভৃতি) কলেজ ছিল মোট ৩৭টি। এই ৩৭টির মধ্যে ‘পূর্ববঙ্গ ও আসামে’ (নবগঠিত প্রদেশ) ১১টি এবং অবশিষ্ট বঙ্গে ছিল ২৬টি কলেজ। একই সময় (১৯০৫) সারা বাংলায় এমএ পড়ার কলেজ ছিল মোট তিনটি। বিখ্যাত ঢাকা কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, রাজশাহী কলেজ, জগন্নাথ কলেজসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের তখন ‘ভরা যৌবন’; খ্যাতি ও গৌরব-গরিমা অনেক দিক থেকেই। তা সত্ত্বেও পূর্ববঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশ) ও আসামে (নবগঠিত প্রদেশের অংশ) এমএ পড়ার মতো কোনো কলেজ বা বন্দোবস্ত ছিল না সে সময়।
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন শর্ত অনুযায়ী ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী ২৫ মাইল পরিধি এলাকায় অবস্থিত কলেজগুলোই (ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ কলেজ প্রভৃতি ৭টি) এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় রাখা হয়। পূর্ববঙ্গের বাকি সব কলেজ থেকে যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে (যা ১৯৪৭ সালে দেশভাগ পর্যন্ত বহাল থাকে)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ববঙ্গের প্রথম, অবিভক্ত বাংলার দ্বিতীয় (প্রথমটি কলকাতা) এবং উপমহাদেশের ১১তম বিশ্ববিদ্যালয়। বঙ্গভঙ্গ এবং পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই অঞ্চলে নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনায় কলেজসহ বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে থাকে।
১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পায়। পূর্ববঙ্গকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় পাকিস্তানের সঙ্গে এবং তখনই পূর্ববঙ্গ শিক্ষা অধ্যাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক কাম শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে ‘এফিলিয়েশন’-এর ব্যবস্থা যোগ করলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর (ডিগ্রি স্তরের ৩৪টি ও ইন্টারমিডিয়েট স্তরের ২৩টি) এফিলিয়েশন ও তত্ত্বাবধানের ভার এই বিশ্ববিদ্যালয়টির (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ওপর ন্যস্ত হয়।
পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় বাংলাদেশ এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় একটিই ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মেডিকেল কলেজও একটিই, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ইংরেজ আমলে ১৯৪৬ সালে স্থাপিত)। এ ছাড়া সারা দেশে কলেজ ছিল মোট ৫৫টি (ডিগ্রি ও ইন্টারমিডিয়েট স্তরে; এগুলোর মধ্যে সরকারি কলেজ ৪টি)। ঠিক এ সবকিছু নিয়েই পাকিস্তান আমলে যাত্রা শুরু হয় আমাদের।
পাকিস্তানি শাসনের ২৪ বছরে অন্যায়, শোষণ আর বৈষম্যের মধ্যেও উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বেশ কিছু উন্নয়ন ও সম্প্রসারণমূলক কাজ সম্পন্ন হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিন পরে হলেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয় এ সময়ে (পাকিস্তান সৃষ্টির ছয় বছরের মাথায় ১৯৫৩ সালে হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আর ২০ বছরের মাথায় ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)। এ ছাড়া পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে একে একে মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয় আটটি।
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যা যেমন রয়েছে নানাবিধ, তেমনি উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সম্ভাবনাগুলোকেও খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। দেশে বর্তমানে ৫৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি আছে ১১৫টি। সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৭টি; বেসরকারি ৭৩টি। বিভাগীয় পাঁচ শহরে রয়েছে পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এত কিছু থাকা সত্ত্বেও দুর্নীতি, অনিয়ম আর অব্যবস্থার কারণে উচ্চশিক্ষা নিয়ে সার্বক্ষণিক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকতে হয় গোটা জাতিকে। স্বাধীনতার ৫৪ বছরের মাথায় এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় আর কী হতে পারে?
আসলেই তো! আগে যেমনই থাক বা না থাক, শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমানে কি নেই আমাদের? স্বীকার না করে উপায় নেই, উচ্চশিক্ষায় আমাদের দেশে এ এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। সরকারি-বেসরকারি দেড় শর বেশি বিশ্ববিদ্যালয় (১৭২টি)। একইভাবে এক শর বেশি মেডিকেল কলেজ (১১০টি)। রয়েছে পাঁচ বিভাগীয় শহরে পাঁচটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া ৭০৮টি সরকারি কলেজ। ডিগ্রি স্তরে পাঠদান উপযোগী কলেজ দুই হাজারের বেশি (২,২৫৭টি)। আর সরকারি-বেসরকারি সাড়ে আট শ কলেজে (৮৮২) অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স (১৭৫) পড়ানোর ব্যবস্থা-বন্দোবস্ত রয়েছে। এসব বিবেচনায় শিক্ষাক্ষেত্রে এক বিপ্লব বলা যেতে পারে।
আমি আবারও কিছুটা অতীতমুখী হতে চাই। ১৯৪৭ সালে একটিমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় আর একটি মেডিকেল কলেজ দিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু। ২৪ বছর পর ১৯৭২ সালে স্বাধীন দেশে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়, আটটি মেডিকেল কলেজ, ডিগ্রি স্তরের ১১০টি কলেজ, (যেগুলোর মধ্যে ২৬টি সরকারি) আর অনার্স পড়ানোর মতো কলেজ ২০টি। সে তুলনায় আজ অভাবনীয় পরিবর্তন ও অগ্রগতি সহজেই দৃশ্যমান। তবে উপযুক্ত দেখভালের অভাব ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে অনেক কিছু থাকার পরও কী যেন নেই আমাদের। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অস্বস্তি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে সব সময় ব্যতিব্যস্ত করে রাখে।
প্রখ্যাত সাহিত্যিক যাযাবরের (বিনয়কুমার মুখোপাধ্যায়) অমর সৃষ্টি ‘দৃষ্টিপাত’ উপন্যাসটির কথা মনে পড়ে। যাযাবর তাঁর কালজয়ী উপন্যাস শেষ করেন এই বাক্যটি দিয়ে—‘যে আগুন আলো দেয় না অথচ দহন করে, সেই দীপ্তিহীন অগ্নির নির্দয় দহনে পলে পলে দগ্ধ হলেন কাণ্ডজ্ঞানহীন হতভাগ্য চারুদত্ত আধারকার।’ আমাদের উচ্চ শিক্ষপ্রতিষ্ঠানেও যেন এমন শিক্ষারূপী আগুন আছে, যা আলো দেয় না অথচ প্রতিনিয়ত দহন করে চলেছে।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় এক অধ্যায় রচিত হয় জঙ্গিদমন অভিযানে, কিন্তু সেটা মানুষের কাছে অজানাই রয়ে গেছে। এর কারণ হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমে শুধু সরকার ও তার বাহিনীর বয়ান তুলে ধরা, যেখানে কতটা দক্ষতা ও সাফল্যের সঙ্গে তারা জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করেছে সে চিত্র ফুটে উঠত।
১০ ডিসেম্বর ২০২৪
সুযোগসন্ধানী উগ্রপন্থীদের মব-তাণ্ডবে সৃষ্ট মারাত্মক অস্থির-অনিশ্চিত এক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন যেন স্বস্তির একরাশ হাওয়ার মতো। দেশে বাম, মধ্য বাম ও উদার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা...
১৫ ঘণ্টা আগে
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা তরুণদের দল এনসিপিতে মহাদঙ্গল শুরু হয়েছে। দলটি মধ্যপন্থী রাজনীতি, দ্বিতীয় রিপাবলিক এবং নতুন বন্দোবস্তের কথা বলে যাত্রা শুরু করেছিল। প্রতিষ্ঠার এক বছর না যেতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধতা নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগে
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা তরুণদের দল এনসিপিতে মহাদঙ্গল শুরু হয়েছে। দলটি মধ্যপন্থী রাজনীতি, দ্বিতীয় রিপাবলিক এবং নতুন বন্দোবস্তের কথা বলে যাত্রা শুরু করেছিল। প্রতিষ্ঠার এক বছর না যেতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধতা নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির নির্বাচনী আসন সমঝোতার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার পর ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দল থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ও রাজনৈতিক পর্ষদের সদস্য তাসনিম জারা। এখন তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন। গতকাল পদত্যাগ করেন আরেক নেত্রী তাজনূভা জাবীন। এর আগে দল থেকে পদত্যাগ করেন এনসিপিতে জামায়াতবিরোধী অংশের নেতা হিসেবে পরিচিত মীর আরশাদুল হক। এরপর ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দলের ৩০ জন নেতা এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামকে ‘সম্ভাব্য জোট বিষয়ে নীতিগত আপত্তি’র বিষয়ে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। তাতে তাঁরা বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো ধরনের জোট এনসিপির নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে এবং রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ধরনের জোট এনসিপির বহু কর্মী, সমর্থক এবং বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মসহ অনেক সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও হতাশা সৃষ্টি করবে। এর মাধ্যমে এনসিপির নিজস্ব মধ্যপন্থী রাজনৈতিক অবস্থানও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কিছুদিন আগে বিএনপি ও জামায়াত জোটের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, এনসিপি ও এবি পার্টি মিলে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট গঠন করেছিল। আপাতত এ জোটের কোনো ভবিষ্যৎ দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে ‘জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। গতকাল ২৮ ডিসেম্বর সকালে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ মিডিয়া গ্রুপে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশে জোটগত রাজনীতি একটা পুরোনো সংস্কৃতি। প্রতিপক্ষ রাজনীতিকে মোকাবিলা করার জন্য সমমনা দলের সঙ্গে জোট করা নতুন বিষয় নয়। পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগকে পরাস্ত করতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুক্ত ফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। এরপর নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলন করার জন্য ত্রিদলীয় জোট গঠিত হয়েছিল। তাদের সম্মিলিত আন্দোলনে এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হন। তবে নির্বাচনী জোটে দেশ ও জনগণের লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়। যেমন বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোট গঠন করে সরকার গঠন করেছিল। এরপর শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী হওয়ার ক্ষেত্রে এই জোটের ভূমিকাও ছিল। সবচেয়ে ক্ষতির দিক হলো, ছোট দলগুলো সুবিধার জন্য জোট করে পরবর্তী সময়ে বড় দলের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। তাদের আর নিজস্ব রাজনীতি থাকে না।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করা দল এনসিপি সম্ভবত একই ভুলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
নানা সমালোচনার পরও দলটি যে সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছিল, সাময়িক নির্বাচনী সুবিধার জন্য সে সম্ভাবনা নষ্ট হওয়ার পথে। এতে হতাশ হবে তরুণদের একটি বড় অংশ। হতাশ হবে দেশের নতুন রাজনীতিপ্রত্যাশী একটি শক্তি, যারা বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগের বাইরে বিকল্প খুঁজছিল।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা তরুণদের দল এনসিপিতে মহাদঙ্গল শুরু হয়েছে। দলটি মধ্যপন্থী রাজনীতি, দ্বিতীয় রিপাবলিক এবং নতুন বন্দোবস্তের কথা বলে যাত্রা শুরু করেছিল। প্রতিষ্ঠার এক বছর না যেতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধতা নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির নির্বাচনী আসন সমঝোতার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার পর ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দল থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ও রাজনৈতিক পর্ষদের সদস্য তাসনিম জারা। এখন তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন। গতকাল পদত্যাগ করেন আরেক নেত্রী তাজনূভা জাবীন। এর আগে দল থেকে পদত্যাগ করেন এনসিপিতে জামায়াতবিরোধী অংশের নেতা হিসেবে পরিচিত মীর আরশাদুল হক। এরপর ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দলের ৩০ জন নেতা এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামকে ‘সম্ভাব্য জোট বিষয়ে নীতিগত আপত্তি’র বিষয়ে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। তাতে তাঁরা বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো ধরনের জোট এনসিপির নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে এবং রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ধরনের জোট এনসিপির বহু কর্মী, সমর্থক এবং বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মসহ অনেক সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও হতাশা সৃষ্টি করবে। এর মাধ্যমে এনসিপির নিজস্ব মধ্যপন্থী রাজনৈতিক অবস্থানও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কিছুদিন আগে বিএনপি ও জামায়াত জোটের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, এনসিপি ও এবি পার্টি মিলে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট গঠন করেছিল। আপাতত এ জোটের কোনো ভবিষ্যৎ দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে ‘জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। গতকাল ২৮ ডিসেম্বর সকালে তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ মিডিয়া গ্রুপে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশে জোটগত রাজনীতি একটা পুরোনো সংস্কৃতি। প্রতিপক্ষ রাজনীতিকে মোকাবিলা করার জন্য সমমনা দলের সঙ্গে জোট করা নতুন বিষয় নয়। পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগকে পরাস্ত করতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুক্ত ফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। এরপর নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলন করার জন্য ত্রিদলীয় জোট গঠিত হয়েছিল। তাদের সম্মিলিত আন্দোলনে এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হন। তবে নির্বাচনী জোটে দেশ ও জনগণের লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়। যেমন বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোট গঠন করে সরকার গঠন করেছিল। এরপর শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী হওয়ার ক্ষেত্রে এই জোটের ভূমিকাও ছিল। সবচেয়ে ক্ষতির দিক হলো, ছোট দলগুলো সুবিধার জন্য জোট করে পরবর্তী সময়ে বড় দলের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। তাদের আর নিজস্ব রাজনীতি থাকে না।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করা দল এনসিপি সম্ভবত একই ভুলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
নানা সমালোচনার পরও দলটি যে সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছিল, সাময়িক নির্বাচনী সুবিধার জন্য সে সম্ভাবনা নষ্ট হওয়ার পথে। এতে হতাশ হবে তরুণদের একটি বড় অংশ। হতাশ হবে দেশের নতুন রাজনীতিপ্রত্যাশী একটি শক্তি, যারা বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগের বাইরে বিকল্প খুঁজছিল।

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় এক অধ্যায় রচিত হয় জঙ্গিদমন অভিযানে, কিন্তু সেটা মানুষের কাছে অজানাই রয়ে গেছে। এর কারণ হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমে শুধু সরকার ও তার বাহিনীর বয়ান তুলে ধরা, যেখানে কতটা দক্ষতা ও সাফল্যের সঙ্গে তারা জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করেছে সে চিত্র ফুটে উঠত।
১০ ডিসেম্বর ২০২৪
সুযোগসন্ধানী উগ্রপন্থীদের মব-তাণ্ডবে সৃষ্ট মারাত্মক অস্থির-অনিশ্চিত এক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন যেন স্বস্তির একরাশ হাওয়ার মতো। দেশে বাম, মধ্য বাম ও উদার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা...
১৫ ঘণ্টা আগে
বেশ খেদের সঙ্গে অনেকেরই জিজ্ঞাসা—স্বাধীনতা লাভের পর বিগত পাঁচ দশক তথা ৫৪ বছরে (১৯৭১-২০২৫) শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অর্জন কী; কী পেয়েছি এই সুদীর্ঘ সময়ে? আবার তৃপ্তির ঢেকুর তুলে খুবই উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে অনেককে এ কথাও বলতে শোনা যায়...
১৫ ঘণ্টা আগে
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
২ দিন আগে
ড. কামরুল হাসান মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি করেছেন। হামবোল্ট রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অসংগতি, বৈষম্য নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন তিনি। শিক্ষা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান, ছাত্র সংসদ, ছাত্ররাজনীতির গতিধারা এবং শিক্ষাব্যবস্থার নানা বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা
মাসুদ রানা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম মূল দাবি ছিল ‘বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন’। গত দেড় বছরে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সেই কাঙ্ক্ষিত বৈষম্যহীনতার পথে কতটুকু এগিয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
প্রশ্ন হলো, বৈষম্যহীনতা মূল রেখে, ডালপালা ছাঁটলে তো কোনো লাভ হবে না। বৈষম্য তো রয়ে গেছে আমাদের মূলে। একটা দেশে কীভাবে কওমি মাদ্রাসা, আলিয়া মাদ্রাসা, বাংলা মিডিয়াম, বাংলার আবার ইংরেজি ভার্সন, ইংরেজি মাধ্যম থাকতে পারে? আমি আমার শিক্ষকতা জীবনে দেখেছি, এইসব শিক্ষাকাঠামোর কোথাও মিলনস্থান নেই। এভাবে আমরা আমাদের দেশের মানুষকে শিক্ষা, অর্থনীতি ও ধর্ম দিয়ে বিভাজিত করেছি। এ রকম একটা সমাজে বৈষম্যহীন করার জন্য যে ধরনের প্রজ্ঞা, পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি লাগে, তার তো সব অনুপস্থিতি এখনো আছে।
সুতরাং আমি গত দেড় বছরে বাংলাদেশের কোনো পর্যায়েই বৈষম্যহীনতা তো দূরের কথা, বৈষম্য কমানোর চেষ্টা দেখিনি। গরিব মানুষ আরও গরিব হয়েছে, ধনীরা হয়তোবা আরও বেশি ধনী হয়েছে। কিন্তু বৈষম্য কোনো দিক দিয়েই কমেনি।
আগের সরকারের প্রবর্তিত নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল। বর্তমান সরকার যে পরিমার্জন এনেছে, তা শিক্ষাব্যবস্থার কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা কি রেখেছে?
আগের সরকার যা করেছে এবং বর্তমান সরকার যা করছে, আসলে তা হলো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আগের সরকার মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সব সদস্যকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবহার করেছে। আর এই সরকার ক্ষমতায় আসতে না আসতেই চব্বিশের আন্দোলনকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কোনো বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটা সময় লাগে। ইতিহাসকে আসলে একটা সময় দিতে হয়। এটা সত্যি সত্যি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য কি না, সেটা সময়ের আলোকে আসলে রেকটিফাই ও টেস্ট করতে হয়। মানে ফিল্টারিং প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এখনই এটা দেওয়ার মানে হলো, আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান, ঠিক যেভাবে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেছিল। ইতিহাস তো ব্যবহার্য বিষয় না। ইতিহাস তো ধারণ করার বিষয়।
চব্বিশকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা মানেই হলো, আপনাদের কোনো লাভের বিষয় আছে। আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান টিস্যু পেপারের মতো। শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করে আপনারা আপনাদের হীন স্বার্থ হাসিলের ব্যবস্থা করবেন, সেটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। কাকে বাদ দেওয়া হবে? রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দকে বাদ দেওয়া যায়? এঁদের কবিতা ও অন্যান্য লেখা দিয়ে ধর্ম ও জাতিভেদের ব্যাপারগুলো টেনে নিয়ে আসা ঠিক না। তাঁরা সময় দ্বারা পরীক্ষিত। ভালো মানের লোক দিয়ে একটা শিক্ষা কমিশন করা দরকার ছিল। কিন্তু এই সরকারের কি ম্যান্ডেট থাকতে পারে আমলাদের দিয়ে পাঠ্যপুস্তকের বিষয় যোগ বা বিয়োগ করার? তাদের এই যোগ ও বাদ দেওয়ার কোনোটাই সমর্থন করতে পারি না।
গত দেড় বছরের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির পটপরিবর্তনকে কীভাবে দেখেন?
২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষের মধ্যে একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা তাদের রাজনীতি করবে, লেজুড়বৃত্তি করবে না। কোনো দলের জাতীয় নেতারা অন্যায় করলে সেটার প্রতিবাদ করবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে থাকবে, শিক্ষায় কীভাবে বাজেট বৃদ্ধি করা যায়, গবেষণায় কীভাবে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা যায়; শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে ও এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিতে যুক্ত থাকবে এবং সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখবে—দেশ কোন দিকে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যখন দলীয় বৃত্তের মধ্যে চলে যায়, তখন একটা দলের মধ্যে আটকে থাকলে তো তারা পুরো আকাশ দেখতে পাবে না। সে কারণে তারা সেই দলের কোনো অন্যায় কর্মকাণ্ডকে মাফ করে দেয়। আর অন্য দলের সামান্য অন্যায়কে বড় করে দেখে থাকে। এটা শিক্ষার্থীদের চরিত্র হওয়া উচিত না। এই আকাঙ্ক্ষাটা জুলাই আন্দোলনের পর তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটা আবার ফিরে এসেছে। দলান্ধতা আবার বেড়ে
গেছে। কিন্তু সবার না। যেমন উগ্র ডানপন্থীদের কার্যক্রম প্রচণ্ড রকম বেড়ে গেছে। কিন্তু এটাকে প্রতিহত করার জন্য তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমানে ডাকসুসহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের কার্যক্রমকে কীভাবে দেখেন?
ছাত্র সংসদের কিছু দায়িত্ব আছে। তারা কী করতে পারে এবং কী করা উচিত এবং কী করা উচিত না, সেগুলোর সবকিছু লিখিত না থাকলেও অধিকাংশ জনের কাছে সেগুলোর একটা ধারণা আছে। ছাত্র সংসদের কাজ তো ছিন্নমূল মানুষকে লাঠির বাড়ি দিয়ে উঠিয়ে দেওয়া না। ছাত্র সংসদের কাজ গুন্ডামি করা নয় বা কাউকে পেটানো না। তারা নিজেদের প্রশাসনের অংশ মনে করে। উপাচার্য বলেন, ‘তোমরা আমাদেরই পার্ট।’ তা হতে পারে না।
ছাত্র সংসদের নির্ধারিত কাজ হচ্ছে সাংস্কৃতিক, খেলাধুলার বিষয়গুলো দেখভাল করা, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণাকে কীভাবে অগ্রসর করা যায়, কীভাবে লেখাপড়ার মান আরও উন্নত করা যায়—এসব নিয়ে কাজ করা। উন্নত দেশের ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা নতুন ছাত্র যারা ভর্তি হয়েছে, তাদের প্রয়োজনে বাসস্ট্যান্ড ও বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে থাকে। কারণ, বিভিন্ন দেশ থেকে বা গ্রাম থেকে যখন শিক্ষার্থীরা আসে, নতুন একটা শহর চেনার কথা না। ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিদের কাজ আসলে এগুলোই। শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্কলারশিপ পাবে, কে আর্থিকভাবে দুর্বল—এদের জন্যই তারা কাজ করবে। কিন্তু আসল কাজ বাদ দিয়ে এরা যা করছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটা দলকে কীভাবে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী করা যায়, সেগুলোতে তাদের মূল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পরিবেশ ফিরে এসেছে?
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই সরকার তো নির্দলীয়। এই নির্দলীয় সরকার কি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সত্যিকারের একাডেমিকভাবে যোগ্য লোকদের নিয়োগ দিয়েছে? সব ক্ষেত্রেই উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ দলীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই দলীয় উপাচার্যরা নিয়োগ পাওয়ার পর প্রশাসনিক সব পদে প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ডিনদের দলীয়ভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। গত সরকার যা করেছে, এর আগে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন যা করেছে, এই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেও কোনো পার্থক্য দেখা গেল না।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর একটি নতুন সরকার ক্ষমতায় আসবে। তারা কি শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে নতুন আশার আলো দেখাতে পারবে?
এই দেশে সবদিক দিয়ে সবচেয়ে বড় দুটি সমস্যা হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা। যেহেতু দেশের শিক্ষা ও সরকারি হাসপাতালের মান ভালো না, সেহেতু দেশের লক্ষ-কোটি টাকা ডলারে রূপান্তরিত হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। প্রতিবছর দেশ থেকে প্রায় ১৫-২০ হাজার শিক্ষার্থী শুধু পড়ালেখার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছেন। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার একটা বড় অংশ শুধু শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছে। শুধু অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে না, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও বিদেশে চলে যাচ্ছেন। কোনো সরকার কি পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেছে, যাঁরা বিদেশে যাচ্ছেন, তার কত অংশ দেশে ফিরে আসছেন? এ দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পড়াশোনা শেষ করে এই যে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশে চলে যাচ্ছেন, এটাকেই বলা হয় ‘ব্রেন ড্রেন’। আমরা যাঁদের মেধাবী হিসেবে তৈরি করছি, তাঁদের সেবাটা পাচ্ছে না এ দেশ। তার চিত্রটা দেখা পাওয়া যায় রাস্তাঘাটে হাঁটলে। শুধু তা-ই না, এ দেশে আরেকটা সমস্যা তৈরি হয়েছে—গত সাড়ে ১৫ বছরে থিয়েটার, টেলিভিশন, গানের শিল্পীসহ নানা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে গেছেন। সুতরাং শিক্ষক, ছাত্র ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে যাওয়ার কারণে দেশে মেধাবীদের একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
একটা দেশ উন্নত হওয়ার জন্য প্রয়োজন একটা নির্দিষ্টসংখ্যক উচ্চ মানের মানুষের। এঁদের সংখ্যা কমে যাওয়া মানে শরীরের রক্তশূন্যতার মতো। আমরা এখন সেই রক্তশূন্যতার মধ্যে ভুগছি। প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যাও কমে গেছে। সমাজকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়া দরকার।
শিক্ষাব্যবস্থাকে যদি ভালো করা না যায়, তাহলে দেশে বেকার সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের শিক্ষার মান খারাপ হওয়ার কারণে বেকারের সংখ্যা প্রচুর। বেকারত্বের কারণেই দেশে নানা ধরনের অরাজকতা তৈরি হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে যে দল ক্ষমতায় আসবে, তাদের কাছে আমার আবেদন বা অনুরোধ থাকবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। কারণ, প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষ তৈরি হয়। আগে উন্নত মানুষ তৈরি করতে হবে। কারণ, উন্নত মানুষের মাধ্যমেই কেবল উন্নত দেশ গড়া সম্ভব। দালানকোঠা নির্মাণ করে দেশ উন্নত করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর এমন একটা দেশ পাওয়া যাবে না, যে দেশ শিক্ষায় উন্নত না হয়ে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হতে পেরেছে। একটা উদাহরণ দিই। আজ থেকে ৩০ বছর আগেও চীনের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে ১০০-এর মধ্যে ছিল না। সেই চীনের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০-এর মধ্যে অবস্থান করছে। আশা করা যায়, আগামী ১০ বছরের মধ্যে তারা দশের মধ্যে চলে আসবে। এই যে চলে আসা এবং তাদের যে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন, দুটিই হাত ধরাধরি করে এগিয়েছে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা ও আপনাকেও ধন্যবাদ।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম মূল দাবি ছিল ‘বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন’। গত দেড় বছরে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সেই কাঙ্ক্ষিত বৈষম্যহীনতার পথে কতটুকু এগিয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
প্রশ্ন হলো, বৈষম্যহীনতা মূল রেখে, ডালপালা ছাঁটলে তো কোনো লাভ হবে না। বৈষম্য তো রয়ে গেছে আমাদের মূলে। একটা দেশে কীভাবে কওমি মাদ্রাসা, আলিয়া মাদ্রাসা, বাংলা মিডিয়াম, বাংলার আবার ইংরেজি ভার্সন, ইংরেজি মাধ্যম থাকতে পারে? আমি আমার শিক্ষকতা জীবনে দেখেছি, এইসব শিক্ষাকাঠামোর কোথাও মিলনস্থান নেই। এভাবে আমরা আমাদের দেশের মানুষকে শিক্ষা, অর্থনীতি ও ধর্ম দিয়ে বিভাজিত করেছি। এ রকম একটা সমাজে বৈষম্যহীন করার জন্য যে ধরনের প্রজ্ঞা, পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি লাগে, তার তো সব অনুপস্থিতি এখনো আছে।
সুতরাং আমি গত দেড় বছরে বাংলাদেশের কোনো পর্যায়েই বৈষম্যহীনতা তো দূরের কথা, বৈষম্য কমানোর চেষ্টা দেখিনি। গরিব মানুষ আরও গরিব হয়েছে, ধনীরা হয়তোবা আরও বেশি ধনী হয়েছে। কিন্তু বৈষম্য কোনো দিক দিয়েই কমেনি।
আগের সরকারের প্রবর্তিত নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অনেক বিতর্ক ছিল। বর্তমান সরকার যে পরিমার্জন এনেছে, তা শিক্ষাব্যবস্থার কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা কি রেখেছে?
আগের সরকার যা করেছে এবং বর্তমান সরকার যা করছে, আসলে তা হলো মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আগের সরকার মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সব সদস্যকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবহার করেছে। আর এই সরকার ক্ষমতায় আসতে না আসতেই চব্বিশের আন্দোলনকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কোনো বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটা সময় লাগে। ইতিহাসকে আসলে একটা সময় দিতে হয়। এটা সত্যি সত্যি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য কি না, সেটা সময়ের আলোকে আসলে রেকটিফাই ও টেস্ট করতে হয়। মানে ফিল্টারিং প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এখনই এটা দেওয়ার মানে হলো, আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান, ঠিক যেভাবে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করেছিল। ইতিহাস তো ব্যবহার্য বিষয় না। ইতিহাস তো ধারণ করার বিষয়।
চব্বিশকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা মানেই হলো, আপনাদের কোনো লাভের বিষয় আছে। আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে চান টিস্যু পেপারের মতো। শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করে আপনারা আপনাদের হীন স্বার্থ হাসিলের ব্যবস্থা করবেন, সেটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। কাকে বাদ দেওয়া হবে? রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দকে বাদ দেওয়া যায়? এঁদের কবিতা ও অন্যান্য লেখা দিয়ে ধর্ম ও জাতিভেদের ব্যাপারগুলো টেনে নিয়ে আসা ঠিক না। তাঁরা সময় দ্বারা পরীক্ষিত। ভালো মানের লোক দিয়ে একটা শিক্ষা কমিশন করা দরকার ছিল। কিন্তু এই সরকারের কি ম্যান্ডেট থাকতে পারে আমলাদের দিয়ে পাঠ্যপুস্তকের বিষয় যোগ বা বিয়োগ করার? তাদের এই যোগ ও বাদ দেওয়ার কোনোটাই সমর্থন করতে পারি না।
গত দেড় বছরের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির পটপরিবর্তনকে কীভাবে দেখেন?
২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষের মধ্যে একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, শিক্ষার্থীরা তাদের রাজনীতি করবে, লেজুড়বৃত্তি করবে না। কোনো দলের জাতীয় নেতারা অন্যায় করলে সেটার প্রতিবাদ করবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে থাকবে, শিক্ষায় কীভাবে বাজেট বৃদ্ধি করা যায়, গবেষণায় কীভাবে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা যায়; শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে ও এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিতে যুক্ত থাকবে এবং সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখবে—দেশ কোন দিকে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যখন দলীয় বৃত্তের মধ্যে চলে যায়, তখন একটা দলের মধ্যে আটকে থাকলে তো তারা পুরো আকাশ দেখতে পাবে না। সে কারণে তারা সেই দলের কোনো অন্যায় কর্মকাণ্ডকে মাফ করে দেয়। আর অন্য দলের সামান্য অন্যায়কে বড় করে দেখে থাকে। এটা শিক্ষার্থীদের চরিত্র হওয়া উচিত না। এই আকাঙ্ক্ষাটা জুলাই আন্দোলনের পর তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটা আবার ফিরে এসেছে। দলান্ধতা আবার বেড়ে
গেছে। কিন্তু সবার না। যেমন উগ্র ডানপন্থীদের কার্যক্রম প্রচণ্ড রকম বেড়ে গেছে। কিন্তু এটাকে প্রতিহত করার জন্য তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
বর্তমানে ডাকসুসহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের কার্যক্রমকে কীভাবে দেখেন?
ছাত্র সংসদের কিছু দায়িত্ব আছে। তারা কী করতে পারে এবং কী করা উচিত এবং কী করা উচিত না, সেগুলোর সবকিছু লিখিত না থাকলেও অধিকাংশ জনের কাছে সেগুলোর একটা ধারণা আছে। ছাত্র সংসদের কাজ তো ছিন্নমূল মানুষকে লাঠির বাড়ি দিয়ে উঠিয়ে দেওয়া না। ছাত্র সংসদের কাজ গুন্ডামি করা নয় বা কাউকে পেটানো না। তারা নিজেদের প্রশাসনের অংশ মনে করে। উপাচার্য বলেন, ‘তোমরা আমাদেরই পার্ট।’ তা হতে পারে না।
ছাত্র সংসদের নির্ধারিত কাজ হচ্ছে সাংস্কৃতিক, খেলাধুলার বিষয়গুলো দেখভাল করা, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণাকে কীভাবে অগ্রসর করা যায়, কীভাবে লেখাপড়ার মান আরও উন্নত করা যায়—এসব নিয়ে কাজ করা। উন্নত দেশের ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা নতুন ছাত্র যারা ভর্তি হয়েছে, তাদের প্রয়োজনে বাসস্ট্যান্ড ও বিমানবন্দর থেকে রিসিভ করে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে থাকে। কারণ, বিভিন্ন দেশ থেকে বা গ্রাম থেকে যখন শিক্ষার্থীরা আসে, নতুন একটা শহর চেনার কথা না। ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিদের কাজ আসলে এগুলোই। শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্কলারশিপ পাবে, কে আর্থিকভাবে দুর্বল—এদের জন্যই তারা কাজ করবে। কিন্তু আসল কাজ বাদ দিয়ে এরা যা করছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটা দলকে কীভাবে জাতীয় নির্বাচনে জয়ী করা যায়, সেগুলোতে তাদের মূল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পরিবেশ ফিরে এসেছে?
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই সরকার তো নির্দলীয়। এই নির্দলীয় সরকার কি দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সত্যিকারের একাডেমিকভাবে যোগ্য লোকদের নিয়োগ দিয়েছে? সব ক্ষেত্রেই উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ দলীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই দলীয় উপাচার্যরা নিয়োগ পাওয়ার পর প্রশাসনিক সব পদে প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ডিনদের দলীয়ভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। গত সরকার যা করেছে, এর আগে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন যা করেছে, এই অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেও কোনো পার্থক্য দেখা গেল না।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর একটি নতুন সরকার ক্ষমতায় আসবে। তারা কি শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে নতুন আশার আলো দেখাতে পারবে?
এই দেশে সবদিক দিয়ে সবচেয়ে বড় দুটি সমস্যা হলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা। যেহেতু দেশের শিক্ষা ও সরকারি হাসপাতালের মান ভালো না, সেহেতু দেশের লক্ষ-কোটি টাকা ডলারে রূপান্তরিত হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। প্রতিবছর দেশ থেকে প্রায় ১৫-২০ হাজার শিক্ষার্থী শুধু পড়ালেখার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছেন। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার একটা বড় অংশ শুধু শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছে। শুধু অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে না, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও বিদেশে চলে যাচ্ছেন। কোনো সরকার কি পরিসংখ্যান নিয়ে দেখেছে, যাঁরা বিদেশে যাচ্ছেন, তার কত অংশ দেশে ফিরে আসছেন? এ দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পড়াশোনা শেষ করে এই যে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশে চলে যাচ্ছেন, এটাকেই বলা হয় ‘ব্রেন ড্রেন’। আমরা যাঁদের মেধাবী হিসেবে তৈরি করছি, তাঁদের সেবাটা পাচ্ছে না এ দেশ। তার চিত্রটা দেখা পাওয়া যায় রাস্তাঘাটে হাঁটলে। শুধু তা-ই না, এ দেশে আরেকটা সমস্যা তৈরি হয়েছে—গত সাড়ে ১৫ বছরে থিয়েটার, টেলিভিশন, গানের শিল্পীসহ নানা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে গেছেন। সুতরাং শিক্ষক, ছাত্র ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দেশ থেকে চলে যাওয়ার কারণে দেশে মেধাবীদের একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে।
একটা দেশ উন্নত হওয়ার জন্য প্রয়োজন একটা নির্দিষ্টসংখ্যক উচ্চ মানের মানুষের। এঁদের সংখ্যা কমে যাওয়া মানে শরীরের রক্তশূন্যতার মতো। আমরা এখন সেই রক্তশূন্যতার মধ্যে ভুগছি। প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যাও কমে গেছে। সমাজকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়া দরকার।
শিক্ষাব্যবস্থাকে যদি ভালো করা না যায়, তাহলে দেশে বেকার সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের শিক্ষার মান খারাপ হওয়ার কারণে বেকারের সংখ্যা প্রচুর। বেকারত্বের কারণেই দেশে নানা ধরনের অরাজকতা তৈরি হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে যে দল ক্ষমতায় আসবে, তাদের কাছে আমার আবেদন বা অনুরোধ থাকবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। কারণ, প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষ তৈরি হয়। আগে উন্নত মানুষ তৈরি করতে হবে। কারণ, উন্নত মানুষের মাধ্যমেই কেবল উন্নত দেশ গড়া সম্ভব। দালানকোঠা নির্মাণ করে দেশ উন্নত করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর এমন একটা দেশ পাওয়া যাবে না, যে দেশ শিক্ষায় উন্নত না হয়ে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হতে পেরেছে। একটা উদাহরণ দিই। আজ থেকে ৩০ বছর আগেও চীনের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে ১০০-এর মধ্যে ছিল না। সেই চীনের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০-এর মধ্যে অবস্থান করছে। আশা করা যায়, আগামী ১০ বছরের মধ্যে তারা দশের মধ্যে চলে আসবে। এই যে চলে আসা এবং তাদের যে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন, দুটিই হাত ধরাধরি করে এগিয়েছে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা ও আপনাকেও ধন্যবাদ।

বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় এক অধ্যায় রচিত হয় জঙ্গিদমন অভিযানে, কিন্তু সেটা মানুষের কাছে অজানাই রয়ে গেছে। এর কারণ হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমে শুধু সরকার ও তার বাহিনীর বয়ান তুলে ধরা, যেখানে কতটা দক্ষতা ও সাফল্যের সঙ্গে তারা জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করেছে সে চিত্র ফুটে উঠত।
১০ ডিসেম্বর ২০২৪
সুযোগসন্ধানী উগ্রপন্থীদের মব-তাণ্ডবে সৃষ্ট মারাত্মক অস্থির-অনিশ্চিত এক সময়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন যেন স্বস্তির একরাশ হাওয়ার মতো। দেশে বাম, মধ্য বাম ও উদার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা...
১৫ ঘণ্টা আগে
বেশ খেদের সঙ্গে অনেকেরই জিজ্ঞাসা—স্বাধীনতা লাভের পর বিগত পাঁচ দশক তথা ৫৪ বছরে (১৯৭১-২০২৫) শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অর্জন কী; কী পেয়েছি এই সুদীর্ঘ সময়ে? আবার তৃপ্তির ঢেকুর তুলে খুবই উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে অনেককে এ কথাও বলতে শোনা যায়...
১৫ ঘণ্টা আগে
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা তরুণদের দল এনসিপিতে মহাদঙ্গল শুরু হয়েছে। দলটি মধ্যপন্থী রাজনীতি, দ্বিতীয় রিপাবলিক এবং নতুন বন্দোবস্তের কথা বলে যাত্রা শুরু করেছিল। প্রতিষ্ঠার এক বছর না যেতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধতা নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগে