মহিউদ্দিন খান মোহন
গল্পটি এ রকম—এক গোখরো সাপ বনের মধ্যে ধ্যানমগ্ন এক দরবেশের কাছে গিয়ে বলল, ‘দরবেশ বাবা, জীবনে ছোবল দিয়ে মানুষ ও জীব-জানোয়ার মেরে অনেক পাপ করেছি। আমি আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই।’ দরবেশ তাকে বললেন, ‘যেহেতু তুই অতীত কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত, তাই সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই তোকে ক্ষমা করবেন। তবে এখন থেকে তুই আর কাউকে ছোবল দিস না।’ তারপর থেকে সাপটি কাউকে ছোবল দেয় না। মানুষ দেখলে দ্রুত জঙ্গলে লুকিয়ে পড়ে। কেউ ভুল করে ওটার ওপর পা-চাপা দিলেও সে ফণা তোলে না। খবরটি এলাকায় রাষ্ট্র হয়ে গেল। ফলে কেউ আর সাপটিকে ভয় পায় না। একদিন সাপটি একটি মাঠের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল। সে মাঠে কতগুলো শিশু-কিশোর ফুটবল খেলছিল। ওরা সাপটিকে দেখে বল ফেলে ওটাকেই লাথি মারতে শুরু করল। কিশোরদের এলোপাতাড়ি লাথি খেতে খেতে সাপটির প্রাণ যায় যায় অবস্থা। কোনোমতে বনে ঢুকে দরবেশকে গিয়ে বলল, ‘বাবা, আপনি তো আমাকে ছোবল মারতে নিষেধ করেছিলেন। এখন তো কেউ আমাকে ভয় পায় না। লাথি মারতে মারতে আমার জানের অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে। এ আপনি আমাকে কী দীক্ষা দিলেন?’ দরবেশ স্মিত হেসে বললেন, ‘বৎস, তোকে আমি ছোবল মারতে নিষেধ করেছি। কিন্তু ফোঁস করতে তো নিষেধ করি নাই। ফণা তুলে ফোঁস করতে তো দোষ নাই।’ গল্পটি মনে পড়ল, দেশের সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনাবলি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিকার দর্শকের ভূমিকা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার একটি মন্তব্য পত্রিকায় পড়ে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্যে যাওয়ার আগে দেশে সম্প্রতি সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাবলির ওপর কিছুটা আলোকপাত করা আবশ্যক। ২৪ নভেম্বর আদি ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল ও কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজসহ পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালান কমপক্ষে ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ঘটনার সূত্রপাত ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। ওই শিক্ষার্থী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ নভেম্বর মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ২০ ও ২১ নভেম্বর ঘেরাও করেন ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সেদিন মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ ঢাকা ও আশপাশের প্রায় ৩৫টি কলেজের শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সেন্ট গ্রেগরি কলেজে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালান। এই ঘটনার পরদিন কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা ডেমরার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে পাল্টা হামলা চালান। কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও বহিরাগত ব্যক্তি সেখানে ব্যাপক লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, হামলায় কলেজটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
লক্ষণীয় হলো, এইসব হামলা-পাল্টা হামলায় রাজধানী ও এর আশপাশের কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধভাবে অংশ নিয়েছেন। একজন শিক্ষার্থীর দুঃখজনক মৃত্যুর ঘটনায় সৃষ্ট সহিংসতায় রাজধানীর নানা প্রান্ত, এমনকি পার্শ্ববর্তী জেলা শহর নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণকে নিছক সাময়িক উত্তেজনার ফসল বলা যাবে না। কোনো বিশেষ মহল সুপরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। সচেতন ব্যক্তিদের অভিমত, এই ঘটনায় গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে কোনো মহলের ভিন্নতর পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিপ্রায় নিহিত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তা ছাড়া, দেশবাসী গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে যে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কিছু লোক সংঘবদ্ধভাবে নানা রকম দাবি আদায়ের নামে প্রতিনিয়ত রাজপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। দাবিদাওয়া আদায়ের নামে তাঁরা হঠাৎ কেন এত বেপরোয়া হয়ে উঠলেন, এ প্রশ্ন সচেতন ব্যক্তিদের। তাঁরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল অ্যাজেন্ডা ‘রাষ্ট্র ও নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার’ শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠান যাতে বাস্তবায়িত হতে না পারে, সে জন্য বিঘ্ন সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি মহলের চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ এইসব তথাকথিত আন্দোলন। অতিসম্প্রতি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসাসনেস’ বা ইসকনের অতিমাত্রায় বিপ্লবী হয়ে ওঠা এবং তাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ওই একই সূত্রে গাঁথা কি না, তা-ও ভেবে দেখা দরকার।
যেসব দাবি নিয়ে সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার কতিপয় মানুষ রাজপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে, সেসব বিষয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু করার আছে বলে মনে হয় না। কেননা, এই সরকারের মুখ্য দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র ও নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে একটি অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। অথচ আমরা দেখছি বিভিন্ন পেশার মানুষ তাঁদের বেতন বাড়ানো, কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় বানানো ইত্যাদি দাবি নিয়ে মাঠে নেমে পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার চেষ্টা করছেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বীর শহীদ সৈয়দ নিসার আলী তিতুমীরের নামে দেশে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিকে অযৌক্তিক বলা যাবে না। তবে তা হতে হবে শহীদ তিতুমীরের স্মৃতিধন্য যশোরের নারকেলবাড়িয়ায়, রাজধানীর তিতুমীর কলেজে নয়। তা ছাড়া, রাজধানীতে নতুন আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি না দেওয়ারও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। এইসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নির্বাচিত সরকারের, অন্তর্বর্তী সরকারের নয়। বিষয়টি সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।
তবে এ মুহূর্তে দেশবাসী উদ্বিগ্ন পুলিশের নির্বিকার ভূমিকায়। দাবি আদায় ও প্রতিবাদ-বিক্ষোভের নামে প্রায় প্রত্যহ রাজপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হলেও পুলিশ যেন আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠছে না। লক্ষ করা গেছে, ৫ আগস্টের পর থেকে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে পুলিশের মধ্যে একধরনের অকর্মণ্যতা দেখা দিয়েছে। চোখের সামনে বিক্ষোভের নামে উচ্ছৃঙ্খলতা, জনজীবনে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হলেও পুলিশ মুখ ঘুরিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকছে। ফলে অনেকেরই মনে সন্দেহ জেগেছে, জনসম্পৃক্ত এই বাহিনীটি অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে চায় কি না। সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক প্রতিটি সহিংস ঘটনায় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। সংঘর্ষ, ধ্বংসযজ্ঞ চলাকালে তাদের দেখা পাওয়া যায়নি। পুলিশের এই ভূমিকার সমালোচনার মুখে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) ২৫ নভেম্বর গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘যারা আন্দোলন করছে, তারা আমারই ভাই, কার ওপর কঠোর হব? আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। কারও রাস্তায় নামার প্রয়োজন নেই।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশের সর্ববৃহৎ একটি ডিসিপ্লিনড বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা, আন্তরিকতা সবকিছুর ওপর আস্থা রেখেই বলতে চাই, আমাদের দেশে ‘মিঠা কথায় চিড়া ভেজে না’ কিংবা ‘সোজা আঙুলে ঘি ওঠে না’ প্রবাদ বাক্যগুলো এমনি এমনি প্রচলিত হয়নি। যদি মনে করে থাকেন, আপনার মিষ্টি কথায় ওইসব স্বার্থান্বেষী মহল ভালো মানুষের মতো নিরস্ত হবে, তবে মারাত্মক ভুল হবে। কেননা, ওদের অ্যাজেন্ডা হলো বর্তমান সরকারকে বিব্রত-বিপর্যস্ত করে জুলাই বিপ্লবের লক্ষ্য অর্জনকে ব্যাহত করা।
তাই বলে এটা কেউ বলবে না, বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে পুলিশকে স্বৈরশাসকের আমলের ন্যায় হিংস্রতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, নির্বিচার গুলি চালিয়ে মানুষ মেরে ফেলতে হবে। মিনিমাম লাঠিপেটা, টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি তো রোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি এসব ষড়যন্ত্রের নেপথ্য কুশীলবদের চিহ্নিত করে খোঁয়াড়ে ঢুকিয়ে দেওয়া জরুরি। এখানেই নিবন্ধের শুরুতে উদ্ধৃত গল্পের মাজেজা নিহিত। মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, ছোবল না মারলেও ফণা তুলে অন্তত একটু ফোঁস করুন। ‘আকলমান্দকে লিয়ে ইশারাই কাফি হ্যায়!’
লেখক: মহিউদ্দিন খান মোহন
সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
গল্পটি এ রকম—এক গোখরো সাপ বনের মধ্যে ধ্যানমগ্ন এক দরবেশের কাছে গিয়ে বলল, ‘দরবেশ বাবা, জীবনে ছোবল দিয়ে মানুষ ও জীব-জানোয়ার মেরে অনেক পাপ করেছি। আমি আমার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই।’ দরবেশ তাকে বললেন, ‘যেহেতু তুই অতীত কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত, তাই সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই তোকে ক্ষমা করবেন। তবে এখন থেকে তুই আর কাউকে ছোবল দিস না।’ তারপর থেকে সাপটি কাউকে ছোবল দেয় না। মানুষ দেখলে দ্রুত জঙ্গলে লুকিয়ে পড়ে। কেউ ভুল করে ওটার ওপর পা-চাপা দিলেও সে ফণা তোলে না। খবরটি এলাকায় রাষ্ট্র হয়ে গেল। ফলে কেউ আর সাপটিকে ভয় পায় না। একদিন সাপটি একটি মাঠের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল। সে মাঠে কতগুলো শিশু-কিশোর ফুটবল খেলছিল। ওরা সাপটিকে দেখে বল ফেলে ওটাকেই লাথি মারতে শুরু করল। কিশোরদের এলোপাতাড়ি লাথি খেতে খেতে সাপটির প্রাণ যায় যায় অবস্থা। কোনোমতে বনে ঢুকে দরবেশকে গিয়ে বলল, ‘বাবা, আপনি তো আমাকে ছোবল মারতে নিষেধ করেছিলেন। এখন তো কেউ আমাকে ভয় পায় না। লাথি মারতে মারতে আমার জানের অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে। এ আপনি আমাকে কী দীক্ষা দিলেন?’ দরবেশ স্মিত হেসে বললেন, ‘বৎস, তোকে আমি ছোবল মারতে নিষেধ করেছি। কিন্তু ফোঁস করতে তো নিষেধ করি নাই। ফণা তুলে ফোঁস করতে তো দোষ নাই।’ গল্পটি মনে পড়ল, দেশের সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনাবলি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিকার দর্শকের ভূমিকা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার একটি মন্তব্য পত্রিকায় পড়ে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্যে যাওয়ার আগে দেশে সম্প্রতি সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাবলির ওপর কিছুটা আলোকপাত করা আবশ্যক। ২৪ নভেম্বর আদি ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল ও কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজসহ পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালান কমপক্ষে ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ঘটনার সূত্রপাত ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে। ওই শিক্ষার্থী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ নভেম্বর মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ২০ ও ২১ নভেম্বর ঘেরাও করেন ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সেদিন মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ ঢাকা ও আশপাশের প্রায় ৩৫টি কলেজের শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সেন্ট গ্রেগরি কলেজে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালান। এই ঘটনার পরদিন কবি নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা ডেমরার মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে পাল্টা হামলা চালান। কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও বহিরাগত ব্যক্তি সেখানে ব্যাপক লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, হামলায় কলেজটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
লক্ষণীয় হলো, এইসব হামলা-পাল্টা হামলায় রাজধানী ও এর আশপাশের কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধভাবে অংশ নিয়েছেন। একজন শিক্ষার্থীর দুঃখজনক মৃত্যুর ঘটনায় সৃষ্ট সহিংসতায় রাজধানীর নানা প্রান্ত, এমনকি পার্শ্ববর্তী জেলা শহর নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণকে নিছক সাময়িক উত্তেজনার ফসল বলা যাবে না। কোনো বিশেষ মহল সুপরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। সচেতন ব্যক্তিদের অভিমত, এই ঘটনায় গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে কোনো মহলের ভিন্নতর পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিপ্রায় নিহিত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। তা ছাড়া, দেশবাসী গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে যে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কিছু লোক সংঘবদ্ধভাবে নানা রকম দাবি আদায়ের নামে প্রতিনিয়ত রাজপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। দাবিদাওয়া আদায়ের নামে তাঁরা হঠাৎ কেন এত বেপরোয়া হয়ে উঠলেন, এ প্রশ্ন সচেতন ব্যক্তিদের। তাঁরা মনে করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল অ্যাজেন্ডা ‘রাষ্ট্র ও নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার’ শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠান যাতে বাস্তবায়িত হতে না পারে, সে জন্য বিঘ্ন সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি মহলের চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ এইসব তথাকথিত আন্দোলন। অতিসম্প্রতি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসাসনেস’ বা ইসকনের অতিমাত্রায় বিপ্লবী হয়ে ওঠা এবং তাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ওই একই সূত্রে গাঁথা কি না, তা-ও ভেবে দেখা দরকার।
যেসব দাবি নিয়ে সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার কতিপয় মানুষ রাজপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে, সেসব বিষয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু করার আছে বলে মনে হয় না। কেননা, এই সরকারের মুখ্য দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্র ও নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে একটি অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। অথচ আমরা দেখছি বিভিন্ন পেশার মানুষ তাঁদের বেতন বাড়ানো, কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় বানানো ইত্যাদি দাবি নিয়ে মাঠে নেমে পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার চেষ্টা করছেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বীর শহীদ সৈয়দ নিসার আলী তিতুমীরের নামে দেশে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিকে অযৌক্তিক বলা যাবে না। তবে তা হতে হবে শহীদ তিতুমীরের স্মৃতিধন্য যশোরের নারকেলবাড়িয়ায়, রাজধানীর তিতুমীর কলেজে নয়। তা ছাড়া, রাজধানীতে নতুন আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি না দেওয়ারও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। এইসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নির্বাচিত সরকারের, অন্তর্বর্তী সরকারের নয়। বিষয়টি সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।
তবে এ মুহূর্তে দেশবাসী উদ্বিগ্ন পুলিশের নির্বিকার ভূমিকায়। দাবি আদায় ও প্রতিবাদ-বিক্ষোভের নামে প্রায় প্রত্যহ রাজপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হলেও পুলিশ যেন আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠছে না। লক্ষ করা গেছে, ৫ আগস্টের পর থেকে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে পুলিশের মধ্যে একধরনের অকর্মণ্যতা দেখা দিয়েছে। চোখের সামনে বিক্ষোভের নামে উচ্ছৃঙ্খলতা, জনজীবনে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হলেও পুলিশ মুখ ঘুরিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকছে। ফলে অনেকেরই মনে সন্দেহ জেগেছে, জনসম্পৃক্ত এই বাহিনীটি অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে চায় কি না। সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক প্রতিটি সহিংস ঘটনায় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। সংঘর্ষ, ধ্বংসযজ্ঞ চলাকালে তাদের দেখা পাওয়া যায়নি। পুলিশের এই ভূমিকার সমালোচনার মুখে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) ২৫ নভেম্বর গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘যারা আন্দোলন করছে, তারা আমারই ভাই, কার ওপর কঠোর হব? আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। কারও রাস্তায় নামার প্রয়োজন নেই।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশের সর্ববৃহৎ একটি ডিসিপ্লিনড বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা, আন্তরিকতা সবকিছুর ওপর আস্থা রেখেই বলতে চাই, আমাদের দেশে ‘মিঠা কথায় চিড়া ভেজে না’ কিংবা ‘সোজা আঙুলে ঘি ওঠে না’ প্রবাদ বাক্যগুলো এমনি এমনি প্রচলিত হয়নি। যদি মনে করে থাকেন, আপনার মিষ্টি কথায় ওইসব স্বার্থান্বেষী মহল ভালো মানুষের মতো নিরস্ত হবে, তবে মারাত্মক ভুল হবে। কেননা, ওদের অ্যাজেন্ডা হলো বর্তমান সরকারকে বিব্রত-বিপর্যস্ত করে জুলাই বিপ্লবের লক্ষ্য অর্জনকে ব্যাহত করা।
তাই বলে এটা কেউ বলবে না, বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে পুলিশকে স্বৈরশাসকের আমলের ন্যায় হিংস্রতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, নির্বিচার গুলি চালিয়ে মানুষ মেরে ফেলতে হবে। মিনিমাম লাঠিপেটা, টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি তো রোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি এসব ষড়যন্ত্রের নেপথ্য কুশীলবদের চিহ্নিত করে খোঁয়াড়ে ঢুকিয়ে দেওয়া জরুরি। এখানেই নিবন্ধের শুরুতে উদ্ধৃত গল্পের মাজেজা নিহিত। মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, ছোবল না মারলেও ফণা তুলে অন্তত একটু ফোঁস করুন। ‘আকলমান্দকে লিয়ে ইশারাই কাফি হ্যায়!’
লেখক: মহিউদ্দিন খান মোহন
সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
আমার এক বন্ধু বহু বছর আগে দেশাত্মবোধক গানের মধ্যে একটা বড় ধরনের ত্রুটি আবিষ্কার করেছিলেন। ত্রুটিটি কমবেশি সব কবি-গীতিকারই করেছেন। দেশাত্মবোধক গানের মধ্যে প্রকৃতির যে বর্ণনা থাকে সেইভাবে মানুষের কথা থাকে না। যে সংগীতে আবার মানুষের কথা থাকে, তাকে গণসংগীত আখ্যা দেওয়া হয়।
৭ ঘণ্টা আগেকয়েক দিন আগে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আমলে সড়ক ও সেতু খাতে ৫১ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। জাতির জন্য দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত কেউই দেশ ও জাতির স্বার্থের দিকটি মাথায় রেখে এক টাকার কাজকে ন
৮ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় অতিপরিচিত একটি শব্দ হলো ময়নাতদন্ত। বিশেষ করে চিকিৎসা-আইন-আদালতের পরিভাষায় কমবেশি আমরা সবাই শব্দটির প্রয়োগ দেখতে পাই। আমরা ময়নাতদন্তের ইংরেজি পোস্টমর্টেম শব্দটির সঙ্গেও পরিচিত।
৮ ঘণ্টা আগেশুধু যেন রাজনৈতিক পটপরিবর্তন না, রাজনীতিটাই পরিবর্তিত রূপে জেল্লা দেখাচ্ছে। আমরা এমন একটি অন্তর্বর্তী সরকার পেয়েছি, যেখানে উপদেষ্টাদের অধিকাংশ সরাসরি আগে রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না বরং রাজনীতির অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। সেই তাঁদের কাছেই দেশের মানুষের যত আশা, যত দাবি।
৮ ঘণ্টা আগে