Ajker Patrika

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অশ্লীল স্লোগান: দায় কার?

ড. এম আবদুল আলীম 
ইদানীং কারও কারও বাড়ির সামনে মব সৃষ্টি করে অশ্লীল স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। ইলাস্ট্রেশন: এআই
ইদানীং কারও কারও বাড়ির সামনে মব সৃষ্টি করে অশ্লীল স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। ইলাস্ট্রেশন: এআই

সাম্প্রতিক সময়ে একটি বিষয় খুব আলোচিত হচ্ছে। সেটি হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং ‘ছাত্র-জনতা’র অশ্লীল স্লোগান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, চায়ের আড্ডায় এবং পত্রপত্রিকার পাতায় অনেককেই এ নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে। আমি নিজেও আমার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। এককথায়, আমরা সমবেত স্বরে আওয়াজ তুলেছি, গেল গেল দেশটা রসাতলে গেল! কিন্তু দায় কার? দায় কি কেবল প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ক্ষোভে-জিঘাংসায় রাজপথে নেমে আসা একদল শিক্ষার্থী কিংবা ‘ছাত্র-জনতার’? নাকি আমাদের সবার? বাহ্যত বিষয়টি সরল মনে হলেও, বাস্তবে পাটিগণিতের সরল অঙ্কের মতো জটিল।

প্রথমেই ‘অশ্লীলতা’ শব্দটি সম্পর্কে পণ্ডিতদের শরণাপন্ন হওয়া যাক। বাংলা একাডেমি আধুনিক বানান অভিধানে ‘অশ্লীল’ শব্দের অর্থ পাওয়া যায় কয়েকটি; যেমন—অশালীন, অশিষ্ট, কুরুচিপূর্ণ, কুৎসিত ও জঘন্য। অশ্লীল থেকেই এসেছে অশ্লীলতা শব্দটি, যার জুতসই ইংরেজি ‘ভালগারিজম’। এআই পণ্ডিতের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে, স্পষ্ট জানিয়ে দিল, ‘ভালগারিজম’ বা ‘ভালগারিটি’ ‘অশ্লীলতা’ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যা সমাজে সাধারণত আপত্তিকর, নোংরা বা অশ্লীল বলে বিবেচিত হয়। এটি সামাজিক রীতিনীতি বা শালীনতার পরিপন্থী যেকোনো বিষয়কে বোঝাতে পারে, যেমন আপত্তিকর ভাষা, অনুপযুক্ত আচরণ বা যৌনতাপূর্ণ বিষয়বস্তু।

এবার দেখা যাক, এ বিষয়ে ধর্মশাস্ত্র ও সমাজবিজ্ঞানীদের বক্তব্য কী। পবিত্র কোরআনের সুরা আন-নূরের ১৯ নম্বর আয়াতে যা বলা হয়েছে, তার মর্মকথা হলো, যারা অশ্লীলতা ছড়ায়, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি। এ ছাড়া অনেক সুরা ও হাদিসে অশ্লীলতা সম্পর্কে কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। ভগবদ্‌গীতায় বলা হয়েছে, যদি তুমি অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করো, তাহলে তুমি সাধুও নয়, শিষ্য বা অনুসারী তৈরির যোগ্যও নয়। বাইবেলে অশ্লীলতাকে স্পষ্টভাবে নিন্দা করে একে নিষিদ্ধ, অনৈতিক ও পাপপূর্ণ কাজ বলে গণ্য করা হয়েছে। সমাজবিজ্ঞানীরা অশ্লীলতাকে একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছেন, এর দ্বারা ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং সমাজের সুস্থ বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। রাষ্ট্রীয় আইনেও অশ্লীলতা সম্পর্কে দণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ২৯২-২৯৩ ধারায় বলা হয়েছে—অশ্লীল প্রকাশনা প্রকাশ, প্রচার, বিক্রি, আমদানি ইত্যাদি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর শাস্তির মেয়াদ তিন মাসের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ডও হতে পারে।

এবার আসা যাক, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের অশ্লীল স্লোগান সম্পর্কে। আন্দোলন-সংগ্রাম এবং প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে স্লোগান নতুন কিছু নয়। সব কালে, সব দেশেই প্রতিবাদী মানুষের কণ্ঠে নতুন নতুন স্লোগান ব্যবহৃত হয়েছে। সেসব নিয়ে ‘স্লোগানে স্লোগানে রাজনীতি’ নামে বইও রচিত হয়েছে। সেসব স্লোগানে ধর্মীয় আদর্শ, রাজনৈতিক বিশ্বাস ও চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে। স্লোগানের সূত্র ধরেই আন্দোলন-সংগ্রাম ও বিপ্লবের আগুন স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানলের রূপ ধারণ করে এক মানুষ থেকে কোটি মানুষের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভের প্রকাশ ঘটাতে অশ্লীল স্লোগান তুলছে। নানা সময় অশ্লীল স্লোগান শোনা গেলেও এটি আলোচনায় আসে ঢাকার রাজপথে প্রকাশ্যে পাথর মেরে এক ব্যক্তিকে হত্যার পর। তখন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা স্লোগান তোলে - ‘এক দুই তিন চার, অমুকের ...।’ গত সোমবার একজন রাজনীতিবিদের বাসার সামনে কিছুসংখ্যক ‘ছাত্র-জনতার’ সঙ্গে এক যুবতী একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে বসে আছে, তাতে লেখা আছে, ‘গাছের আগায় কাউয়া, অমুক ...।’ যুবতীটি কেবল এমন স্লোগানসংবলিত লিখিত প্ল্যাকার্ডই বহন করছে না, মাঝে মাঝে তা স্লোগানেও ব্যবহার করছে।

একটি গাছ যেমন এক দিনে ডালপালা গজিয়ে আকাশের বুকে শাখা-প্রশাখা মেলে দেয় না, একটি দেশেও তেমনি অবক্ষয়ের বিষবৃক্ষ এক দিনে মহিরুহে পরিণত হয় না। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র অবক্ষয়ের বীজ বপন করে দীর্ঘ সময় ধরে লালনপালন ও পরিচর্যা করে তাকে মহিরুহে পরিণত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শিক্ষার্থীরা পড়ে তারা কারা? তারা কি মাটি ফুঁড়ে হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় আবির্ভূত হয়েছে? নাকি কারও জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় আকাশ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে নেমে এসেছে। না, তারা পরিবারে জন্মে, সমাজে বেড়ে ওঠে, অনেক শিক্ষায়তনের গণ্ডি পার হয়ে কঠিন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার বৈতরণি পার হয়ে মেধার চূড়ান্ত স্বাক্ষর রেখে তারপরই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। সংগত কারণেই প্রশ্ন আসে, এই মেধাবী সন্তানদের মুখে অশ্লীল স্লোগান এল কী করে? এককথায় উত্তর, আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে তাদের মুখে এই স্লোগান তুলে দিয়েছি। তাই দায় কেবল তাদের নয়, আমাদের সবার। আমরা দীর্ঘদিন ধরে পরিবারে, সমাজে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, ওয়াজ মাহফিলে, মসজিদ-মন্দিরের ধর্মীয় আলোচনায়, ইউটিউব-ফেসবুকসহ নানা সামাজিক মাধ্যমে, রেডিও-টেলিভিশনের টক শো, নাটক-সিনেমায়, সংবাদপত্রের পাতায়, সাহিত্য-সংস্কৃতির আড্ডায়, সংসদ অধিবেশন থেকে বড় বড় জনসভা, সংবাদ সম্মেলন থেকে বিশ্ব মিডিয়ার সাক্ষাৎকার; সর্বত্র যে বিষবৃক্ষের বীজ আমরা বপন করেছি, তা অঙ্কুরিত হয়ে ক্রমে ডালপালা ছড়িয়ে মহিরুহে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতে যে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য, বিষোদ্গার ও অশ্লীলতা আমরা বছরের পর বছর ছড়িয়ে চলেছি, তা-ই নতুন প্রজন্মের মাঝে সঞ্চারিত হয়ে তাদের প্রতিবাদের ভাষায় অশ্লীল স্লোগান রূপে স্থান পেয়েছে।

শিক্ষার্থীদের অশ্লীল স্লোগানের প্রথম দায় পরিবারের, তারপর সমাজ-রাষ্ট্র ও অন্যদের। একসময় যৌথ পরিবারে পিতা-মাতা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, চাচা-চাচি, মামা-মামি, খালা-খালু—সবার স্নেহ-মায়া, আদর-ভালোবাসায় শিশুরা বেড়ে উঠত। পরিবারের বয়স্ক সদস্যরা গল্প-আড্ডা, হাসিঠাট্টায় শিশুদের আনন্দ দিয়ে আদব-কায়দাসহ নানা নীতিনৈতিকতা ও মূল্যবোধ শেখাত। আর্থসামাজিক-কালিক বাস্তবতায় যৌথ পরিবার ভেঙে গেছে। একক পরিবারের পিতা-মাতারা কর্মের চাপে সন্তানদের তেমন সময় দিতে পারেন না। কাজের অবসরে যতটুকু সময় পান অনেক পিতা-মাতা কলহ-বিবাদে মত্ত থাকেন; আর পরিবারের অপরাপর সদস্যদের গিবত-নিন্দা করে শিশুর মনে তাদের সম্পর্কে বিরূপ ধারণা দিয়েই বড় করেন। অধিকাংশ মায়ের কাছে শিশুরা পিতার কুল সম্পর্কে নেতিবাচক কথাবার্তা শুনতে শুনতে বড় হয়। পরিবারের পর আসে সমাজ। গ্রামে-শহরে এখন খেলার মাঠগুলো প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সুস্থ বিনোদনের ক্লাব নেই বললেই চলে। রাস্তার ধারে, গলির মোড়ে, দোকানের বেঞ্চিতে কিংবা চায়ের স্টলে বসে একজন কিশোর পরনিন্দা-গিবত, অশ্লীল বাক্যালাপ ব্যতীত শিক্ষণীয় কিছু পায় না। সমাজপতিরা আধিপত্য বিস্তারের স্নায়ুযুদ্ধ কিংবা প্রকাশ্য সংঘাতে সমাজকে বিষিয়ে তোলেন। সময় সময় কিশোর-যুবকদের এগুলোতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। স্কুলে ভর্তি করেই মায়েরা শেখায় সহপাঠীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার অসুস্থ লড়াই। পরস্পরের প্রতি হিংসা-দ্বেষ এভাবেই ছড়ায়। শিক্ষকেরা প্রাইভেট শিকারের নেশায় ক্লাসে, ক্লাসের বাইরে সুযোগ পেলেই সহকর্মীদের পিণ্ডি চটকায়। এক শিক্ষক আরেক শিক্ষকের প্রাইভেটের ছাত্রের সঙ্গে যে আচরণ করে, তাতে শিক্ষকতা পেশার মহানুভবতার লেশমাত্র থাকে না। এ চিত্র কেজি কিংবা প্রাইমারি স্কুল থেকে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়েও চোখে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাইভেট পড়ানোর ব্যাপার নেই বটে, তবে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে পরস্পরের কাদা-ছোড়াছুড়ি নোংরামির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্প্রীতি-সহমর্মিতা বৃদ্ধির পরিবর্তে ছড়ায় হিংসা-ক্রোধের বিষ। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, তবে তা সীমিত।

ওয়াজ মাহফিলগুলোতে ভিন্নমত, ভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে কী পরিমাণ বিষোদ্গার করা হয়, তার প্রমাণ ইউটিউবগুলোতে প্রতিনিয়ত দেখা যায়। সাহিত্য-সংস্কৃতির আড্ডা এবং অনুষ্ঠানগুলোতে আজকাল প্রায়ই দেখা যায় নিন্দা-গিবতের উল্লম্ফন। ইউটিউবের ইনফ্লুয়েন্সাররা ভিউ বাড়ানোর জন্য অশ্লীলতাকেই প্রধান অবলম্বন করে। সমাজের যাঁদের আলো ছড়ানোর কথা, সেই চিন্তাশীলদের বড় অংশ নিজের মত, আদর্শ ও পাণ্ডিত্যের অহমিকা প্রকাশ করতে গিয়ে অন্য মত, আদর্শ ও ব্যক্তি সম্পর্কে বিষোদ্গার করেন এবং তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বক্তব্য দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেসব বক্তব্য রীতিমতো ভাইরাল হয়। ফেসবুকের পাতায় ভেসে আসা মানুষের কথাগুলোয় তো বেশির ভাগই থাকে বিষ, ক্রোধ আর অপরকে ঘায়েল করার মন্ত্রে ভরা। টিকটকের ভিডিওর মাধ্যমে অশ্লীলতা সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়াচ্ছে। নাটক-সিনেমাগুলো পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে বসে দেখা যায় না। সংসদে দাঁড়িয়ে রাজনীতিবিদেরা এক দল আরেক দল সম্পর্কে যে বক্তব্য দেন, তার বেশির ভাগই থাকে বিষে ভরা। সময় সময় তা অশ্লীলতার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছায়। টক শোগুলোতেও দেখা যায় একই চিত্র। প্রচারমাধ্যমগুলোও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অশ্লীল স্লোগানের জন্য কি এককভাবে দায়ী? এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের সবাইকেই খুঁজতে হবে। কেবল তা-ই নয়, দায়ও নিতে হবে।

এ থেকে উত্তরণের কার্যকর উপায় বের করতে হবে। প্রথম দায়িত্ব পরিবারকে নিতে হবে। তারপর সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র সবার দায়। ধর্মীয় বক্তা, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিক-চিন্তাশীল ব্যক্তি সবাইকে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য আর সুরুচির বিস্তার ঘটাতে হবে।

নিজ মতের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের বাণিজ্য-মানবিক-বিজ্ঞান-প্রযুক্তির শিক্ষার সঙ্গে নৈতিক শিক্ষা ও ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা দিতে হবে। ধর্ম, সমাজ, রাজনীতি, সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রে যুগ যুগ ধরে চলে আসা মূল্যবোধগুলো সমুন্নত রাখতে হবে। সর্বোপরি আপনি আচরি বচন অপরকে তথা নতুন প্রজন্মকে শেখাতে হবে।

লেখক:- অধ্যাপক, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

কর্মী নেবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, নেই বয়সসীমা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গণতন্ত্র অধরা এখনো

সম্পাদকীয়
গণতন্ত্র অধরা এখনো

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর আয়োজনে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকে উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেকসই গণতন্ত্রের দুর্বলতা। আজকের পত্রিকায় ৩ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মূল চালিকা শক্তি ছিল একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা। স্বাধীনতার পর গত পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করলেও গণতন্ত্র উত্তরণের পথ বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য দায়ী মূলত ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিরোধী দল এবং রাজনীতিকেরা।

গণতন্ত্রের প্রাণ হলো অবাধ, গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বিগত সরকারের সময়ে নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে নানা অভিযোগ ছিল। বিরোধী দলের অনুপস্থিতি, বলপ্রয়োগ এবং ভোটের দিন সাধারণ মানুষের ভোট দিতে না পারার কারণে জনগণের ভোটের প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়েছিল। পাশাপাশি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকে দলীয় বৃত্তের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। সংসদ এক দলের প্রভাবাধীন হয়ে পড়ায় তা কার্যকর বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারেনি।

এর বাইরে বিচার বিভাগ সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন হলেও, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়েও প্রশ্ন আছে। একই সঙ্গে সরকারি প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর একটি অংশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে, যা তাদের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

গত সরকারের বিরুদ্ধে এত এত অভিযোগের পরেও কি আমরা বলতে পারি, গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকার বিগত সরকারের সময়ের সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে? উত্তর হবে ‘না’। কারণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও একই পথের পথিক বলে অভিযোগ আছে। বিগত সরকারের পতনের পরপরই সচিবালয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ থেকে সব ক্ষেত্রে দলীয় প্রভাবমুক্ত করা সম্ভব হয়নি। সেসব জায়গায় এখনকার প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাদের দলীয় আনুগত্যের লোকজন বসিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। তাহলে এ দেশে কীভাবে গণতান্ত্রিক উত্তরণ সম্ভব হবে?

বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে এই সংকট থেকে মুক্ত করতে একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন, যার কেন্দ্রে থাকবে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও স্বাবলম্বী করা, যাতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব হয় এবং জনগণ স্থানীয় পর্যায়ে অংশীদারত্বের ভূমিকা পালন করতে পারে সরাসরি।

তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সংকট যেমন রাতারাতি সৃষ্টি হয়নি, তেমনি এর সমাধানও দ্রুত সম্ভব নয়। এই উত্তরণের পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অনুধাবন করতে হবে, গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অসম্ভব। কেবল একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, জবাবদিহিমূলক এবং শক্তিশালী কাঠামোগত ব্যবস্থার মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক উত্তরণ অর্জন সম্ভব হতে পারে। এই সংকটে জনগণই শেষ ভরসা। বৃহত্তর জনগণের অংশগ্রহণ, সচেতনতা এবং জবাবদিহির দাবিই পারে এই রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। তবে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ছাড়া সেটা সম্ভব না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

কর্মী নেবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, নেই বয়সসীমা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজনৈতিক পরিস্থিতি কি খুবই অস্থিতিশীল!

অরুণ কর্মকার
দেশের রাজনীতিতে সংকট, অস্থিতিশীলতাও আছে। কিন্তু তার সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থার কোনো সম্পর্ক নেই। ছবি: সংগৃহীত
দেশের রাজনীতিতে সংকট, অস্থিতিশীলতাও আছে। কিন্তু তার সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থার কোনো সম্পর্ক নেই। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কখনোই যে প্রকৃত অর্থে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল ছিল তা বলা যাবে না। এখনো যে তা আছে তেমনও নয়। কিন্তু সেটা কি এমন মাত্রার যাতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা যাবে না? রাজনীতিতে কী এমন সংকট এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে যাতে তফসিল ঘোষণা বন্ধ রাখতে বা পিছিয়ে দিতে হবে? কিন্তু তেমনই একটি প্রসঙ্গ তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গত বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে এক বৈঠকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার এমন সময়ে সংকট উত্তরণ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অনুরোধ জানিয়েছে এনসিপি।

ওই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, একটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যখন আসবে তখন তফসিল দেওয়া হলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কেন তফসিল পেছাতে চাইব? আমরা চাই সংকট সমাধান করে তফসিল দেওয়া হোক।’ রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিতিশীলতার প্রসঙ্গটি এনসিপি নেতারা এমন সময় জনসমক্ষে আনলেন যখন পূর্বঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে। এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তো তফসিল ঘোষণার কথা কমিশন বলেছিল। এখন এনসিপি নেতাদের বক্তব্যের সূত্র ধরেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সংকটের প্রসঙ্গটি জনপরিসরে এসেছে এবং বহুল আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।

সিইসির সঙ্গে এনসিপি নেতাদের বৈঠকের বক্তব্য থেকে ধারণা করা যায়, প্রায় দুই সপ্তাহ আগে খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার পর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাকেই তাঁরা রাজনীতিতে সংকটময় এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বলতে চেয়েছেন। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এমন কোনো কথা শোনা যায়নি। বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা যে অত্যন্ত সংকটময়, যেমনটি এর আগে কখনো হয়নি সে কথা দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগেই দেশবাসীকে অবহিত করেছেন। হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলেছে। একই সঙ্গে বিএনপির দলীয় এবং নির্বাচনী কার্যক্রমও চলেছে। এর মধ্যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংকটের তো কিছু নেই। এই কারণে রাজনীতিতে নতুন করে কিছু অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।

হ্যাঁ, খালেদা জিয়ার সংকটময় স্বাস্থ্য পরিস্থিতির খবরে দেশবাসীর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই একটা উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়। কারণ, তিনি দেশের সবচেয়ে বড় একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান নেত্রী হিসেবে দেশবাসীর কাছে পরম শ্রদ্ধাভাজন। সর্বজনের কাছে গ্রহণযোগ্য ও সবচেয়ে প্রবীণ রাজনীতিকদের একজন। তাঁর জন্য সারা দেশের মানুষ তাই প্রার্থনা করেছে। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের চেষ্টা এবং মানুষের প্রার্থনা ও ভালোবাসায় তিনি লন্ডনে যাওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা ফিরে পেয়েছেন। আমরা আশা করি তিনি এবার হাসপাতালে ভর্তির আগের অবস্থায় কিংবা তার চেয়েও সুস্থ হয়ে স্বস্থানে ফিরে আসবেন।

খালেদা জিয়া তো দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। তিনি দলের চেয়ারপারসন হয়েও এই দীর্ঘ অসুস্থতার সময়ে কি দলের সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পেরেছেন? কিংবা এবারও তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসার পর কি দল এবং দলের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবেন? এমনকি তিনি যে তিনটি আসনে প্রার্থী হবেন বলে দলের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, সেই আসনগুলোতে তিনি কি সশরীরে নির্বাচনী প্রচারে যেতে পারবেন? দীর্ঘদিন ধরে হার্ট, কিডনি, লিভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গের অসুস্থতা, সঙ্গে ডায়াবেটিস আক্রান্ত ৮০ বছর বয়সী একজন মানুষের পক্ষে কি তা সম্ভব? সম্ভব নয়। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে খালেদা জিয়া যে কটি আসনে প্রার্থী হবেন, সবগুলোতে বিজয়ী হবেন। এমনকি লন্ডনের হাসপাতালে বসে নির্বাচন করলেও। তা ছাড়া এমন সম্ভাবনাও আছে যে খালেদা জিয়া যে কটি আসনে প্রার্থী হবেন অন্য কোনো দল সেই আসনগুলোতে প্রার্থীই দেবে না। এই পরিস্থিতিকে কীভাবে রাজনীতির সংকটময় এবং অস্থিতিশীল বলা যেতে পারে আমরা জানি না।

তবে দেশের রাজনীতিতে সংকট আছে। অস্থিতিশীলতাও আছে। কিন্তু তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতার কোনো সম্পর্ক নাই। সম্পর্ক আছে অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে কি না তা নিয়ে মানুষ নিঃশঙ্ক নয়। এটা একটা বড় সংকট। মানুষের আস্থার সংকট। আরও সংকট আছে। একই দিনে সংসদ নির্বাচন এবং গণভোটের সিদ্ধান্ত জামায়াতসহ যে দলগুলো বা যে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মানতে কষ্ট হচ্ছে, তাদের ভূমিকা শেষ পর্যন্ত কী হবে সেটা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আছে। এটা আরেকটা বড় সংকট। আরও সংকট আছে। নির্বাচনের মাঠে সব রাজনৈতিক দল সমান সুযোগ পাবে কি না তা নিয়ে এনসিপির যে উদ্বেগ সেটাও একটা বড় সংকট। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তো স্পষ্ট করেই বলেছেন ‘এখন যে ডিসি-এসপিদের নিয়োগ-বদলি করা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন যেন সে বিষয়ে খেয়াল রাখে। সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব আছে বলে আমরা মনে করি। এই বিষয়ে যেন ইসি ব্যবস্থা নেয় এবং নিরপেক্ষ লোক যেন নিয়োগ হয়।’ এর আগে তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে পক্ষপাতদুষ্ট আখ্যায়িত করে কমিশন পুনর্গঠনের দাবিও তুলেছিলেন। সেই পুনর্গঠন তো হয়নি। এই যে নানা ধরনের ক্ষতগুলো রাজনীতিতে রয়েছে, সেগুলোই সংকট। যথেষ্ট পুষ্টি উপাদান পেলে এর যেকোনো একটি ক্ষত ক্যানসারের মতো গুরুতর সংকট হয়ে উঠতে পারে। এর কোনোটির সঙ্গেই খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপি তো নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও কার্যক্রম বন্ধ করে বসে নেই! গত বৃহস্পতিবারও তো বিএনপি ৩৬টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি চলেছে খালেদা জিয়াকে লন্ডনে পাঠানোর সব প্রক্রিয়া-প্রস্তুতিও। এখানে তো কোনো সংকট দেখা যাচ্ছে না।

সংকট আরও অনেক রকম আছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে। একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম এ রিট দায়ের করেন। আগামীকাল রোববারই হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে রিট আবেদনটির শুনানি হতে পারে। এই রিট আবেদনে সংসদ নির্বাচনে জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পরিবর্তে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। যুক্তি হলো, সংবিধান অনুসারে নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন। এই কাজে নির্বাহী বিভাগ নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। কিন্তু সংবিধান লঙ্ঘন করে প্রতিটি নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগকে দেওয়া হয়। নির্বাহী বিভাগ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারের চাহিদা অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করে। ফলে নির্বাচন নিয়ে নানামুখী বিতর্ক তৈরি হয়। অত্যন্ত জোরালো যুক্তি। দীর্ঘদিন ধরেই এসব প্রশ্ন ছিল। নিরসন হয়নি। ফলে এগুলোও রয়ে গেছে সংকট হিসেবে। এসবের মীমাংসা হওয়া জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

কর্মী নেবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, নেই বয়সসীমা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণ: আজকের ভুলে আগামীর ঝুঁকি

ফারিহা জামান নাবিলা
বায়ুতে ধুলা, ধোঁয়া, কার্বন—সব মিলিয়ে বায়ুদূষণ এখন চরম পর্যায়ে চলে গেছে।	ছবি: সংগৃহীত
বায়ুতে ধুলা, ধোঁয়া, কার্বন—সব মিলিয়ে বায়ুদূষণ এখন চরম পর্যায়ে চলে গেছে। ছবি: সংগৃহীত

যা দেখা যায় না, ছোঁয়া যায় না—আজ সেই অদৃশ্য বাতাসই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে নীরব খুনির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কেউ শব্দ করে আঘাত করছে না, কেউ সতর্ক করছে না। তবুও নিঃশব্দে ক্ষতি করে যাচ্ছে প্রতিটি শ্বাসে। আমরা চোখে দেখতে পাই না, কিন্তু নীরবে ধীরে অদৃশ্য শত্রুর মতো বায়ুদূষণ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শ্বাস কেড়ে নিচ্ছে। তারা এমন এক পৃথিবীর দিকে হাঁটছে, যেখানে নির্মল বাতাস বিলাসিতা হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বড় বড় শহর এখন বায়ুদূষণের চরম ঝুঁকিতে। বায়ুতে ধুলা, ধোঁয়া, কার্বন—সব মিলিয়ে বায়ুদূষণ এখন চরম পর্যায়ে চলে গেছে। শিশুদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় হুমকি বায়ুদূষণ। বাংলাদেশের রাজধানী শহর প্রায়ই বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় উঠে আসছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও বিকাশকে বড় ধরনের হুমকির মুখে ফেলছে এবং ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

শহরের স্কুলপড়ুয়া শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা ও কাশির হার বাড়ছে। ইটভাটা ও যানবাহনের ধোঁয়ার কারণে শহরজুড়ে বাতাস প্রায় ধোঁয়াটে হয়ে থাকে, যা শিশু ও বয়স্কদের ফুসফুসের ক্ষতি করে। বায়ুদূষণ শুধু আজকের নয়, এটি সরাসরি আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে আঘাত করছে।

বায়ুদূষণ শুধু পরিবেশগত সমস্যা নয়, এটা মানুষের স্বাস্থ্য, সমাজ ও অর্থনীতির জন্য এক গভীর সংকট। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে বায়ুদূষণের কারণে। দেশে শিল্প এলাকা, ইটভাটা, কারখানা ও যানবাহনের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। ফলে বাতাসে ক্ষতিকর গ্যাস, ধোঁয়া, কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডসহ নানা দূষণ উপাদান মিশে যাচ্ছে। শিশুরা এসব দূষণের প্রভাবে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, দুর্বল ফুসফুস নিয়ে বড় হচ্ছে। শহরে প্রায় সারা বছরই নির্মাণকাজ চলে। এসব কারণে যে ধুলা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে তা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে শিশুদের। ধুলাবালুর ছোট কণা ফুসফুসে সরাসরি গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছে।

বাতাস বিশুদ্ধ করার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো গাছ। সবুজ কমে যাওয়ায় বাতাসে বিষাক্ত গ্যাস জমে থাকে এবং পরিষ্কার হওয়ার সুযোগ পায় না। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে আগামী প্রজন্মের শ্বাসযন্ত্রে। শিল্প-কারখানার মালিক, যানবাহনের মালিকদের অসতর্কতার জন্য বায়ুদূষণ দেখা দেয়। পরিবেশ আইন থাকলেও প্রয়োগ দুর্বল হওয়ায় দূষণ কমানোর কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা তৈরি হয় না। প্রাপ্তবয়স্কর তুলনায় শিশুর শ্বাসযন্ত্র বেশি নাজুক। তারা বেশি দ্রুত শ্বাস নেয়, ফুসফুসের বৃদ্ধি চলমান থাকে ফলে দূষিত বাতাস তাদের দেহে আরও গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। এই কারণেই বায়ুতে থাকা বিষাক্ত কণা তাদের ভবিষ্যৎকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। পুরোনো বাস, ট্রাক ও লেগুনার ধোঁয়াই শহরের বড় দূষণকারী। অনুমোদনহীন ও পুরোনো প্রযুক্তির ইটভাটা বিপুল ক্ষতিকর ধোঁয়া ছাড়ে। ফলে বায়ুদূষণ দিনে দিনে ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে।

বায়ুদূষণ থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করা এবং পুরোনো গাড়িগুলো রাস্তায় না নামানো। ইলেকট্রিক বা হাইব্রিড গাড়ি ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া।

সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ধোঁয়া পরিশোধক যন্ত্র বাধ্যতামূলক করতে হবে। নিয়ম না মানলে জরিমানা বা লাইসেন্স বাতিল করা উচিত। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ইটভাটা তৈরি করা এবং ক্ষতিকর পুরোনো ভাটা বন্ধ করা। শহর ও গ্রামে গাছ লাগানো, রাস্তার পাশে সবুজ বেল্ট তৈরি করা, যাতে ধুলাবালু কমে ও বাতাস পরিষ্কার থাকে।

মানুষ বুঝে আর না বুঝে বায়ুদূষণ করে নিজের পরিবার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষতি করছে। সবাইকে মাস্ক ব্যবহার, অপ্রয়োজনে গাড়ি না চালানো এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দূষণের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, নীতিমালা আপডেট করা এবং কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে।

বায়ুদূষণ এক দিনে তৈরি হওয়া সমস্যা নয়। তাই সমাধানও এক দিনে হবে না। তবে সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক—সবাই একসঙ্গে কাজ করলে পরিস্থিতি অনেকটাই বদলানো সম্ভব। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুস্থ দেশ দিতে হলে আজ থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে—উন্নয়ন হবে, কিন্তু পরিবেশ ধ্বংস করে নয়। পরিষ্কার বাতাস আমাদের প্রাপ্য অধিকার এবং তা নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

কর্মী নেবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, নেই বয়সসীমা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নারীরা কি মানুষ নয়

নুসরাত রুষা
নারীরা কি মানুষ নয়

দেশটা তবে কার? প্রশ্নটা শুনতে যত সরল, বাস্তবে ততটাই ভয়ের। বাউলদের গান—অন্তর্ভেদী মানবতার চর্চা—কারও ‘অপছন্দ’ হলে বাউলদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ওয়াজে নারী বিদ্বেষ, গালাগালি, অপমান, প্রকাশ্য উসকানি দেওয়া হলেও, সেটাকে ধর্মীয় স্বাধীনতার অংশ মনে করা হয়। এই বৈপরীত্যই বলে দেয়—আইনের চোখ সবার জন্য সমান নয়; ক্ষমতা যাদের হাতে, দেশও যেন তাদেরই।

এক সপ্তাহে কয়েকটি ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। নোয়াখালীর বজরা মসজিদ একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা, সংস্কৃতির অংশ। সেখানে মেয়েদের ঢুকতে দেওয়া তো দূরের কথা, গালাগাল করে ‘বেপর্দা নারী’ বলে কটূক্তি করার একটা ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। একজন নারী যখন বললেন, ‘মক্কা-মদিনাতেও তো নারীরা মসজিদে যায়’—তখন পুরো এলাকার মানুষ তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। যেন যুক্তি ও বাস্তবতা তাদের কাছে অপরাধ, আর নারী হওয়া আরও বড় অপরাধ।

একই সপ্তাহে নরসিংদীতে ঘটেছে আরেকটা ঘটনা। অটোতে একটি ইসলামি দলের দুইজন কর্মী অপরিচিত মানুষ, তাঁরা আমার বন্ধুদের জোর করে ধর্ম গ্রহণের উপদেশ দিতে লাগলেন। বললেন, হিন্দু মেয়ে হলে বাড়তি দুঃখ হয় তাঁদের। তাই ইসলাম গ্রহণ করাই উত্তম! ধর্মের নামে কি এভাবে ঠেলেঠুলে মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া যায়? এসব কি স্পষ্ট ধর্মীয় জবরদস্তির পর্যায়ে পড়ে না?

সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয়—শিক্ষিত, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া কিছু হিজাব–বোরকা পরিহিত তরুণী অন্য মেয়েদের অপমান করছে শুধু তারা হিজাব পরে না বলে। নারীকে নিয়ন্ত্রণ করার সামাজিক কাঠামোয় মেয়েদেরই অংশগ্রহণ—এটাই সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। পিতৃতন্ত্র শুধু পুরুষদের হাতে থাকে না; নারীর হাত ধরেও সে বাড়ে, শক্তি পায়।

দেশজুড়ে যে অনানুষ্ঠানিক ‘মোরাল পুলিশিং’ চলছে—এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি সংগঠিত একটি মানসিকতা, যা নারীর পোশাক, চলাফেরা, মতপ্রকাশ—সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। কারও হাতে লাঠি নেই, কিন্তু সবার কাছে আইন-শাসনের মতো রায় দেওয়ার মতো ক্ষমতা চর্চার বিষয় লক্ষ করা যাচ্ছে। রাষ্ট্রের আইনকে উপেক্ষা করে কেউ নিজেকে আইন রক্ষক সাজাচ্ছে, কেউ ধর্মের নামে অভিভাবক আবার কেউ সমাজের নামে বিচারক সাজছে।

এই দেশে মেয়েরা কি নাগরিক? নাকি শুধু নজরদারির বস্তু? যদি বাউলের গান ‘অপমান’ হয়, তবে ওয়াজে নারী বিদ্বেষ অপমান নয় কেন? যদি একজন নারী মসজিদে ঢুকতে না পারা অপরাধ না হয়, তবে তাঁকে গালাগাল করা অপরাধ নয় কেন? যদি হিজাব না পরা ‘অপরাধ’ হয়, তবে মানুষের স্বাধীনতা হরণ করা অপরাধ নয় কেন?

এই দ্বৈত মানদণ্ডের নামই পিতৃতন্ত্র—যেখানে আইন নয়, চলে তাদের ইচ্ছায়; মানবতা নয়, চলে নিয়ন্ত্রণের নেশায়।

বাংলাদেশ কোনো একদল মানুষের নয়। নারীকে ভয় দেখিয়ে, নিয়ন্ত্রণ করে, অসম্মান করে যে সমাজ টিকিয়ে রাখা যায়—এ ধারণা ভ্রান্ত। উন্নত সমাজে নারীর নিরাপত্তা, মর্যাদা, স্বাধীন চলাফেরা—এগুলো মৌলিক বিষয়। আমাদের এখানে এগুলো যেন ক্রমেই বিলাসিতায় পরিণত হচ্ছে।

সময় এসেছে এই অঘোষিত মোরাল পুলিশিংয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর। প্রশ্ন করার—কারা আপনাদের এই অধিকার দিল? ধর্মের নামে অপমান, সমাজের নামে গালিগালাজ, নৈতিকতার নামে নিপীড়ন—এসব মানবতা নয়, ক্ষমতার প্রদর্শন।

বাংলাদেশের নারীরা আর কারও অনুমতির অপেক্ষায় নেই। রাস্তায়, ক্যাম্পাসে, মসজিদে, রিকশায়—সব জায়গায় তারা সমান নাগরিক অধিকার পাবে, সেটাই রাষ্ট্রীয় নিয়ম হওয়ার কথা ছিল। অধিকার নিয়ে, মর্যাদা নিয়ে, ভয়হীনভাবে বাঁচার জন্য রাষ্ট্রে যে জায়গা তাদের, সেটা ছিনিয়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই।

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তর্কে জড়ানো চিকিৎসককে বরখাস্তের নির্দেশ ডিজির

সবকিছু প্রস্তুত হচ্ছে, তারেক রহমান ফিরবেন যেকোনো সময়: আমীর খসরু

শেখ হাসিনা যত দিন ইচ্ছা ভারতে থাকতে পারবেন কি—জবাবে যা বললেন জয়শঙ্কর

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত, মেডিকেল বোর্ডের সবুজসংকেতের অপেক্ষা

কর্মী নেবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, নেই বয়সসীমা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত