
‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’র (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। নব্বইয়ের দশকে ছাত্রশিবিরের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন এক দশকের বেশি সময় ধরে। দলীয় ফোরামে সংস্কার ও একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে পর্যালোচনার দাবি তুললে তাঁকে ২০১৯ সালে জামায়াতে ইসলামী থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তাঁর নেতৃত্বে এবি পার্টি গঠিত হয়। জামায়াত থেকে বেরিয়ে এসে নতুন দল গঠন, সংস্কার ও রাজনীতির নানা বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

আপনি ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি ও সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন প্রায় ১৪ বছর। কেন জামায়াতের রাজনীতি ত্যাগ করলেন?
প্রথমত, আমি জামায়াত ত্যাগ করিনি। ২০১৯ সালে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। জামায়াত আমাকে বহিষ্কার করায় আমি আর সেই দলে ফিরে যাইনি। জামায়াতের একটা নিয়ম হচ্ছে, কারও যদি সদস্যপদ বাতিল করা হয়, তাহলে তাঁর সদস্যপদ গ্রহণের সুযোগ আছে। কেউ যদি ভুল-ত্রুটির জন্য মাফ চেয়ে ফিরে যেতে চান, তাহলে জামায়াত তাঁকে গ্রহণ করে থাকে।
কী কারণে আপনাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল?
যে কারণে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে আমি আর দ্বিতীয়বার তাঁদের সঙ্গে কথা বলিনি। কারণ, আমাকে যে অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছিল, সেটা হলো আমি জামায়াতের মধ্যে সংস্কার ও পরিবর্তনের কিছু বিষয়ে আলোচনা তুলেছিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল বিষয়টি নিয়ে পার্টি ফোরামে আলোচনা করা হোক। জামায়াত সেটা ঠিক মনে করেনি। কারণ, তারা মনে করেছে এসব পার্টির শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ। সে কারণে তারা আমাকে বহিষ্কার করেছে।
তবে আজকে আমার যে রাজনীতির পথপরিক্রমা, সেটার সঙ্গে জামায়াতের রাজনীতির কোনো প্রসঙ্গ নেই। আমরা সম্পূর্ণ নতুন একটা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এর সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্কও সেই।
আপনার সংস্কার প্রস্তাবগুলো কী ছিল?
সুস্পষ্টত তিনটি বিষয় নিয়ে আমার কথা ছিল। জামায়াত একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল আবার ইসলামিক দলও। একটা ইসলামিক দল যখন ট্র্যাডিশনাল রাজনীতি করে, তখন সেটা সাংঘর্ষিক হয়। জামায়াতের মূল বক্তব্য হলো, ‘মানব রচিত মতবাদ হলো হারাম’। আমরা যখন এ রাজনীতিটা করতে গিয়েছি, তখন অনেকগুলো খটকা আমাদের লাগত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যখন কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কোথাও ত্রাণ বিতরণ করা হয় বা তারা যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তখন সেই দলের নেতার পক্ষে স্লোগান দিতে হয়। সেই দলের নেতা যখন ত্রাণ বিতরণ করেন, সেটা তিনি প্রদর্শন করেন। এটা দিয়ে তারা বোঝাতে চায়, তার দল জনকল্যাণমূলক কাজ করছে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে প্রচার করে দান করাতে নিষেধাজ্ঞা আছে। মানে কাউকে দান করলে, সেটা কাউকে প্রদর্শন করিও না। সেটা গোপনে করো। কিন্তু একটা রাজনৈতিক দল তো দেখিয়ে করবে। এটাই তার কাজ। এখানেই ধর্ম আর আমাদের প্রচলিত সমাজব্যবস্থার মধ্যে দ্বন্দ্বটা দেখা দেয়।
আমরা যখন জামায়াতের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে যেতাম, তখন দেখতাম আমরা নিজেরাই নিজেদের পার্টি ও নেতাদের সম্পর্কে প্রচার করছি। আমাদের নেতা খুব ভালো, তাঁকে ভোট দেন। ভোট চাওয়ার ব্যাপারটি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শুদ্ধ না। জামায়াত একটা ইসলামিক দল হিসেবে একদিকে তারা শেখায় নিজেকে প্রচার করা, তুলে ধরা, বাহাদুরি প্রকাশ করা যাবে না, নিজে কিছু দান করলে সেটা প্রচার করা যাবে না, আবার যখন তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে যেসব কাজ করে থাকে, সেসব ধর্মীয় দৃষ্টিতে নিষেধ। তারা আবার সেটাই করে থাকে। এটাই হলো তাদের বড় চারিত্রিক দ্বন্দ্ব। আমরা পার্টিতে এসব ফেস করেছিলাম। আমি নিজে কীভাবে এ দ্বন্দ্ব দূর করতে পারি, সেটা নিয়ে চেষ্টা করেছিলাম। কারণ, এই দ্বন্দ্বের কারণে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে রাজনীতিটা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। আমরা চেয়েছিলাম পার্টির মধ্যে এ আলোচনাটা হোক। জামায়াত একটা খাঁটি ইসলামি দল হিসেবে থাকবে নতুবা পরিপূর্ণ একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে থাকবে। এ জায়গায় একটা দ্বন্দ্ব ছিল। আমরা সেটা নিয়ে আলোচনা তুলেছিলাম। কিন্তু জামায়াত সেটা পছন্দ করেনি। বরং নিরুৎসাহিত করেছে।
এরপর ছিল ১৯৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে। আমাদের কাছে মনে হয়েছিল, এ জায়গায় জামায়াতের একটা অস্পষ্টতা আছে। তারা একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাসংগ্রামকে সম্মান জানায় ও স্বীকৃতি দেয়। তারা বলে থাকে, একাত্তর সালে আমাদের ভূমিকা সঠিক ছিল। আপনাদের ভূমিকা যদি সঠিক থাকে, তাহলে বাংলাদেশের জন্মটা ভুল ছিল, সেটাই তো দাঁড়ায়। একই সঙ্গে দুটি বিষয় সঠিক হতে পারে না। এ দ্বন্দ্বটা নিয়েও পার্টি ফোরামে আলোচনা করা হোক। কিন্তু নেতারা মনে করেছেন, আমরা ষড়যন্ত্র করছি এবং পার্টি ভাঙতে চাইছি। এ কারণে তারা আমাকে বহিষ্কার করেছে। সেই সময় কেউ কেউ জামায়াত থেকে পদত্যাগও করেছেন। এখন তাদের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা নতুন রাজনৈতিক দল শুরু করেছি সম্পূর্ণ নতুন চিন্তাধারা নিয়ে।
জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে আপনাদের পার্টির আদর্শগত পার্থক্য কোথায়?
পার্থক্যটা তো খুবই পরিষ্কার। পার্টি গঠনের প্রথম দিন থেকে আমরা বলেছি, এ দলটা কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক মতবাদভিত্তিক হবে না। আমাদের দলটা হলো নাগরিক অধিকারভিত্তিক। সেই জায়গা থেকে আমরা সমাধান করার চেষ্টা করব। ধরেন কোনো একটা সড়ক ভেঙে গেছে। নাগরিক অধিকারের জায়গা থেকে এটাকে মেরামত করতে কী লাগবে, এটা সংস্কারের জন্য অর্থ কোথা থেকে আসবে—আমরা এসব ধরে প্রস্তাব দেব। কিন্তু আমরা বলব না যে এটা ইসলামিক পদ্ধতিতে বা শেখ মুজিব বা জিয়ার আদর্শ অথবা সমাজতান্ত্রিক আদর্শে এ সড়কটিকে সংস্কার করা হবে।
আমরা কোনো মতাদর্শিক জায়গায় যাব না। আমরা প্রতিটি সমস্যার সঠিক সমাধানের জন্য প্রোপোজ করব। এই সড়কটা ঠিক করতে সরকারের কোন কোষাগার থেকে অর্থ আসবে এবং এটি আরও সুন্দরভাবে মেরামত করা যায়, সেটাই বলব।
এ রকম নাগরিক জীবনের প্রতিটি সমস্যা সমাধানের জন্য বাস্তব জ্ঞান প্রয়োগ করব। আমাদের নাগরিক জীবনের অনেক সমস্যা আছে। যেমন দুর্নীতি দূর করার জন্য একটা ধর্মীয় দল বলবে, ধর্মীয় নির্দেশ পালনের মাধ্যমে এর সমাধান করতে হবে। এটা তাদের প্রস্তাব। আমাদের প্রস্তাব এ রকম হবে না। আমাদের প্রস্তাব হলো, দুর্নীতি কোথায় কোথায় হচ্ছে এবং এটা নির্মূলের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। সেটার জন্য আমরা গবেষণাভিত্তিক প্রস্তাব হাজির করব। যেটাতে জনগণ সহজে অবহিত হবে, সমস্যা এবং সমাধান কী? আমাদের রাজনীতির মূল বক্তব্য হলো, ‘সলিউশন প্রোপোজাল পলিটিকস’।
কিন্তু মতাদর্শের বাইরে কি কোনো রাজনীতি হয়?
মতাদর্শ ছাড়া রাজনীতি হয় না, সেটা সত্য। কিন্তু মতাদর্শটা কী? সেটাই আমাদের কথা। রাষ্ট্রের মতাদর্শের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের মতাদর্শও একই হওয়া উচিত। আমাদের রাষ্ট্রের মতাদর্শ হলো, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের মাধ্যমে নাগরিক অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠিত করা। কোনো রাজনৈতিক দল যদি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করতে চায়, তাহলে একটা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হবে। এটাকেই আমরা মূল ভিত্তি হিসেবে ধরছি। কিন্তু আমরা যদি বলি হিন্দু, খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করব। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার খ্রিষ্টানধর্ম গ্রহণ করে, হিন্দুধর্মও এটাকে সমর্থন করে আর ইসলাম ধর্ম তো এর ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত। তবে কেউ যখন ধর্মটাকে সামনে নিয়ে আসবে, তখন একটা বিভক্তি তৈরি হতে পারে নাগরিকদের মধ্যে। কিন্তু আমি যখন এই নীতির কথা বলব, তখন নাগরিকদের মধ্যে কোনো বিভক্তি তৈরি হবে না। এতে সব ধর্মের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এ জন্য আমরা কোনো ধর্মীয় মতাদর্শের মাধ্যমে বিভক্তি আনতে চাই না।
জুলাই আন্দোলন নানা মতের মানুষকে এক কাতারে এনে দাঁড় করিয়েছিল। অথচ ছয় মাস পেরোতে না পেরোতেই এখন দেশজুড়ে প্রবল রাজনৈতিক বিভক্তির কারণ কী?
এই আন্দোলনের সময় সবাই কিন্তু বসে একমত হয়ে এটা শুরু করেনি। রাজপথেই ঐক্যটা তৈরি হয়েছিল। সাধারণত অপরিকল্পিতভাবে যখন ঐক্যটা তৈরি হয়, পরবর্তী সময়ে সেই ঐক্যটাকে ফলোআপ করতে হয়।
আমাদের ব্যর্থতা হচ্ছে, যাঁরা রাষ্ট্রক্ষমতায় বসেছেন তাঁরা পরবর্তী সময়ে ঐক্যটাকে বজায় রাখার জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। সাধারণভাবে এটা সত্য যে বিজয় হয়ে যাওয়ার পরে মানুষের মধ্যে একটা অনৈক্য, আন্দোলনে কার কতটা ভূমিকা ছিল—এসব নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। কিন্তু কোনো একটা কর্তৃপক্ষ থাকতে হয় যারা বলে যে, এগুলো নিয়ে আমাদের বিতর্ক করার সুযোগ নেই। সামনে আমরা একটা ভালো লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হব। সে দায়িত্বটা ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের। সরকার সে দায়িত্বটা পালন করেনি। না করার কারণে যেটা হয়েছে, সরকার কারও কারও পক্ষ নিয়ে কথা বলেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে নতুন পার্টি গঠিত হচ্ছে। সেই পার্টি নিয়ে আপনাদের মূল্যায়ন কী?
ছাত্ররা যেহেতু এত বড় একটা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে, সে কারণে আমরা মনে করি, তাদের হাত দিয়ে একটা নতুন রাজনীতির উন্মেষ ঘটানোর সুযোগ আছে। মুক্তিযুদ্ধের পরে যখন দেশ স্বাধীন হয়েছে, তখন কিন্তু নেতৃত্বদানকারী দলের মাধ্যমে দেশটা পরিচালিত হয়েছে। পরে তারা সফল হয়েছে নাকি ব্যর্থ হয়েছে, সেটা আলাদা বিতর্ক। সে জন্য ছাত্রদের প্রতি জনগণের একটা বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও সম্মান তৈরি হয়েছে। এ জায়গা থেকে তারা রাজনীতি করতে পারে। এটা খারাপ না। কারণ তাদের নেতৃত্বেই তো দেশের মানুষ রাস্তায় নেমেছে। বাংলাদেশের মানুষের অনেক দিনের প্রত্যাশা বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াত, জাতীয় পার্টির যে পুরোনো রাজনৈতিক ধাঁচ, সেটা বদলিয়ে একটা নতুন পার্টি গঠিত হলে সেটা নতুন ধাঁচ পাবে। একই সঙ্গে সেটা গণতান্ত্রিক এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাবে। সেই বিবেচনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরে নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়, সেটাতে আমরা খুশিই হব, উৎসাহ বোধ করব।
তাদের সফলতার বিষয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
সফলতার বিষয়টা নির্ভর করে মানুষ যখন কোনো কাজ করতে যায়, সেখানে ভুল হলে সংশোধন করে। তারা যখন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাবে, তাদের অনেক ভুল-ত্রুটি দেখা দেবে। যদি তারা সেগুলোকে সংশোধন করে এগোতে পারে, তাহলে অবশ্যই তারা সফল হবে। কারণ, তারা তো নানা বিপত্তির পরেও আন্দোলনটাকে সফল করতে পেরেছে পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করে। আমি তাদের সফলতার ব্যাপারে আশাবাদী। তারা যদি বয়স্কদের পরামর্শ নেয়, যোগ্যদের নেতৃত্ব অন্তর্ভুক্ত করে এবং সমালোচনাকে ভালোভাবে গ্রহণ করে, তাহলে তারা সফল হতে পারবে।
একদিকে নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে বিএনপি, অন্যদিকে সরকার সংস্কারে গুরুত্ব দিচ্ছে। আপনাদের অবস্থান কী?
আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। আমরা বলেছি, সংস্কার ও নির্বাচন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এর মধ্যে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করা এবং খুন, হত্যা ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে যে সাড়ে ১৬ বছর কাটিয়েছি তার একটা বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করা। তাই সংস্কার, নির্বাচন, বিচার এবং রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার দায়িত্ব হলো এ সরকারের। সুতরাং কোনোটাকে বাদ দিয়ে কোনোটাকে গুরুত্ব দিতে পারি না। মনে করেন, সবকিছুকে বাদ দিয়ে সরকার নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হয়, তাহলে যাঁরা নির্বাচিত হবেন এই কাজগুলো তাঁদের ওপর বর্তাবে এবং তাঁদের ওপর চাপটা পড়বে। কিন্তু সংস্কারের কাজটা খুব কঠিন। এটা হলো অজনপ্রিয় কাজ। আর এই কাজটা এ ধরনের সরকারকেই করতে হয়। কারণ তাদেরকে দল-মতনির্বিশেষে সবাই সমর্থন করে। সে জন্য আমরা গুরুত্ব আরোপ করছি, এই সরকারকে অবশ্যই মেজর কিছু সংস্কারে হাত দিতে হবে। মেজর সংস্কারগুলো করেই তাদেরকে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু নির্বাচিত সরকার ছাড়া এসব সংসদে আইন আকারে পাস করা সম্ভব না। ’৯০-এর আন্দোলনের পরে যে দল ক্ষমতায় এসেছিল, তারা কোনো কিছুই করেনি। নির্বাচিত সরকার এসব সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবকে গুরুত্ব কি দেবে?
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যে সংস্কার প্রস্তাবের ব্যাপারে সবাই একমত হবেন, সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করব। আর যেগুলোর ব্যাপারে অনৈক্য থাকবে সেগুলোর ব্যাপারে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করব এবং পরবর্তী সরকারের কাছে সেগুলো অর্পণ করব। সুতরাং এসব নিয়ে একটা দীর্ঘ সময়ের প্রসেস থাকবে। যারা নতুন সরকার গঠন করবে তারাও কিছু সংস্কার নিয়ে চাপে থাকবে। আর অন্য দলগুলো এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকবে সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য। তাই এ বিষয়টাকে নিয়ে জটিল করার কিছু নেই।
অন্তর্বর্তী সরকার ৬ মাসে নানা ক্ষেত্রে সফল নয়। আপনাদের সরকার সম্পর্কে মূল্যায়ন কী?
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ব্যর্থতা হচ্ছে, তারা ছাত্র-জনতার ঐক্যটার দিকে মনোযোগ দেয়নি। দেশে একটা বিপর্যয়কর পরিস্থিতি ছিল। একটা রক্তপাতময় আন্দোলনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হলো তারা কিন্তু জনগণকে আস্থায় নিতে পারেনি। এটা তাদের একটা ভুল হয়েছে। ভুল হতেই পারে। কারণ তারা অপ্রস্তুত, পরিকল্পনাহীন অবস্থায় দায়িত্ব নিয়েছে। এখন আমরা এ সরকারকে সমালোচনার পাশাপাশি সহায়তা করছি এবং আমাদের আস্থা ও অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি।
আপনি ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি ও সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন প্রায় ১৪ বছর। কেন জামায়াতের রাজনীতি ত্যাগ করলেন?
প্রথমত, আমি জামায়াত ত্যাগ করিনি। ২০১৯ সালে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। জামায়াত আমাকে বহিষ্কার করায় আমি আর সেই দলে ফিরে যাইনি। জামায়াতের একটা নিয়ম হচ্ছে, কারও যদি সদস্যপদ বাতিল করা হয়, তাহলে তাঁর সদস্যপদ গ্রহণের সুযোগ আছে। কেউ যদি ভুল-ত্রুটির জন্য মাফ চেয়ে ফিরে যেতে চান, তাহলে জামায়াত তাঁকে গ্রহণ করে থাকে।
কী কারণে আপনাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল?
যে কারণে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে আমি আর দ্বিতীয়বার তাঁদের সঙ্গে কথা বলিনি। কারণ, আমাকে যে অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছিল, সেটা হলো আমি জামায়াতের মধ্যে সংস্কার ও পরিবর্তনের কিছু বিষয়ে আলোচনা তুলেছিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল বিষয়টি নিয়ে পার্টি ফোরামে আলোচনা করা হোক। জামায়াত সেটা ঠিক মনে করেনি। কারণ, তারা মনে করেছে এসব পার্টির শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ। সে কারণে তারা আমাকে বহিষ্কার করেছে।
তবে আজকে আমার যে রাজনীতির পথপরিক্রমা, সেটার সঙ্গে জামায়াতের রাজনীতির কোনো প্রসঙ্গ নেই। আমরা সম্পূর্ণ নতুন একটা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এর সঙ্গে জামায়াতের কোনো সম্পর্কও সেই।
আপনার সংস্কার প্রস্তাবগুলো কী ছিল?
সুস্পষ্টত তিনটি বিষয় নিয়ে আমার কথা ছিল। জামায়াত একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল আবার ইসলামিক দলও। একটা ইসলামিক দল যখন ট্র্যাডিশনাল রাজনীতি করে, তখন সেটা সাংঘর্ষিক হয়। জামায়াতের মূল বক্তব্য হলো, ‘মানব রচিত মতবাদ হলো হারাম’। আমরা যখন এ রাজনীতিটা করতে গিয়েছি, তখন অনেকগুলো খটকা আমাদের লাগত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যখন কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কোথাও ত্রাণ বিতরণ করা হয় বা তারা যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তখন সেই দলের নেতার পক্ষে স্লোগান দিতে হয়। সেই দলের নেতা যখন ত্রাণ বিতরণ করেন, সেটা তিনি প্রদর্শন করেন। এটা দিয়ে তারা বোঝাতে চায়, তার দল জনকল্যাণমূলক কাজ করছে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে প্রচার করে দান করাতে নিষেধাজ্ঞা আছে। মানে কাউকে দান করলে, সেটা কাউকে প্রদর্শন করিও না। সেটা গোপনে করো। কিন্তু একটা রাজনৈতিক দল তো দেখিয়ে করবে। এটাই তার কাজ। এখানেই ধর্ম আর আমাদের প্রচলিত সমাজব্যবস্থার মধ্যে দ্বন্দ্বটা দেখা দেয়।
আমরা যখন জামায়াতের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে যেতাম, তখন দেখতাম আমরা নিজেরাই নিজেদের পার্টি ও নেতাদের সম্পর্কে প্রচার করছি। আমাদের নেতা খুব ভালো, তাঁকে ভোট দেন। ভোট চাওয়ার ব্যাপারটি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে শুদ্ধ না। জামায়াত একটা ইসলামিক দল হিসেবে একদিকে তারা শেখায় নিজেকে প্রচার করা, তুলে ধরা, বাহাদুরি প্রকাশ করা যাবে না, নিজে কিছু দান করলে সেটা প্রচার করা যাবে না, আবার যখন তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে যেসব কাজ করে থাকে, সেসব ধর্মীয় দৃষ্টিতে নিষেধ। তারা আবার সেটাই করে থাকে। এটাই হলো তাদের বড় চারিত্রিক দ্বন্দ্ব। আমরা পার্টিতে এসব ফেস করেছিলাম। আমি নিজে কীভাবে এ দ্বন্দ্ব দূর করতে পারি, সেটা নিয়ে চেষ্টা করেছিলাম। কারণ, এই দ্বন্দ্বের কারণে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে রাজনীতিটা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। আমরা চেয়েছিলাম পার্টির মধ্যে এ আলোচনাটা হোক। জামায়াত একটা খাঁটি ইসলামি দল হিসেবে থাকবে নতুবা পরিপূর্ণ একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে থাকবে। এ জায়গায় একটা দ্বন্দ্ব ছিল। আমরা সেটা নিয়ে আলোচনা তুলেছিলাম। কিন্তু জামায়াত সেটা পছন্দ করেনি। বরং নিরুৎসাহিত করেছে।
এরপর ছিল ১৯৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে। আমাদের কাছে মনে হয়েছিল, এ জায়গায় জামায়াতের একটা অস্পষ্টতা আছে। তারা একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাসংগ্রামকে সম্মান জানায় ও স্বীকৃতি দেয়। তারা বলে থাকে, একাত্তর সালে আমাদের ভূমিকা সঠিক ছিল। আপনাদের ভূমিকা যদি সঠিক থাকে, তাহলে বাংলাদেশের জন্মটা ভুল ছিল, সেটাই তো দাঁড়ায়। একই সঙ্গে দুটি বিষয় সঠিক হতে পারে না। এ দ্বন্দ্বটা নিয়েও পার্টি ফোরামে আলোচনা করা হোক। কিন্তু নেতারা মনে করেছেন, আমরা ষড়যন্ত্র করছি এবং পার্টি ভাঙতে চাইছি। এ কারণে তারা আমাকে বহিষ্কার করেছে। সেই সময় কেউ কেউ জামায়াত থেকে পদত্যাগও করেছেন। এখন তাদের সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা নতুন রাজনৈতিক দল শুরু করেছি সম্পূর্ণ নতুন চিন্তাধারা নিয়ে।
জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে আপনাদের পার্টির আদর্শগত পার্থক্য কোথায়?
পার্থক্যটা তো খুবই পরিষ্কার। পার্টি গঠনের প্রথম দিন থেকে আমরা বলেছি, এ দলটা কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক মতবাদভিত্তিক হবে না। আমাদের দলটা হলো নাগরিক অধিকারভিত্তিক। সেই জায়গা থেকে আমরা সমাধান করার চেষ্টা করব। ধরেন কোনো একটা সড়ক ভেঙে গেছে। নাগরিক অধিকারের জায়গা থেকে এটাকে মেরামত করতে কী লাগবে, এটা সংস্কারের জন্য অর্থ কোথা থেকে আসবে—আমরা এসব ধরে প্রস্তাব দেব। কিন্তু আমরা বলব না যে এটা ইসলামিক পদ্ধতিতে বা শেখ মুজিব বা জিয়ার আদর্শ অথবা সমাজতান্ত্রিক আদর্শে এ সড়কটিকে সংস্কার করা হবে।
আমরা কোনো মতাদর্শিক জায়গায় যাব না। আমরা প্রতিটি সমস্যার সঠিক সমাধানের জন্য প্রোপোজ করব। এই সড়কটা ঠিক করতে সরকারের কোন কোষাগার থেকে অর্থ আসবে এবং এটি আরও সুন্দরভাবে মেরামত করা যায়, সেটাই বলব।
এ রকম নাগরিক জীবনের প্রতিটি সমস্যা সমাধানের জন্য বাস্তব জ্ঞান প্রয়োগ করব। আমাদের নাগরিক জীবনের অনেক সমস্যা আছে। যেমন দুর্নীতি দূর করার জন্য একটা ধর্মীয় দল বলবে, ধর্মীয় নির্দেশ পালনের মাধ্যমে এর সমাধান করতে হবে। এটা তাদের প্রস্তাব। আমাদের প্রস্তাব এ রকম হবে না। আমাদের প্রস্তাব হলো, দুর্নীতি কোথায় কোথায় হচ্ছে এবং এটা নির্মূলের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। সেটার জন্য আমরা গবেষণাভিত্তিক প্রস্তাব হাজির করব। যেটাতে জনগণ সহজে অবহিত হবে, সমস্যা এবং সমাধান কী? আমাদের রাজনীতির মূল বক্তব্য হলো, ‘সলিউশন প্রোপোজাল পলিটিকস’।
কিন্তু মতাদর্শের বাইরে কি কোনো রাজনীতি হয়?
মতাদর্শ ছাড়া রাজনীতি হয় না, সেটা সত্য। কিন্তু মতাদর্শটা কী? সেটাই আমাদের কথা। রাষ্ট্রের মতাদর্শের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের মতাদর্শও একই হওয়া উচিত। আমাদের রাষ্ট্রের মতাদর্শ হলো, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের মাধ্যমে নাগরিক অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠিত করা। কোনো রাজনৈতিক দল যদি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করতে চায়, তাহলে একটা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হবে। এটাকেই আমরা মূল ভিত্তি হিসেবে ধরছি। কিন্তু আমরা যদি বলি হিন্দু, খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করব। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার খ্রিষ্টানধর্ম গ্রহণ করে, হিন্দুধর্মও এটাকে সমর্থন করে আর ইসলাম ধর্ম তো এর ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত। তবে কেউ যখন ধর্মটাকে সামনে নিয়ে আসবে, তখন একটা বিভক্তি তৈরি হতে পারে নাগরিকদের মধ্যে। কিন্তু আমি যখন এই নীতির কথা বলব, তখন নাগরিকদের মধ্যে কোনো বিভক্তি তৈরি হবে না। এতে সব ধর্মের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এ জন্য আমরা কোনো ধর্মীয় মতাদর্শের মাধ্যমে বিভক্তি আনতে চাই না।
জুলাই আন্দোলন নানা মতের মানুষকে এক কাতারে এনে দাঁড় করিয়েছিল। অথচ ছয় মাস পেরোতে না পেরোতেই এখন দেশজুড়ে প্রবল রাজনৈতিক বিভক্তির কারণ কী?
এই আন্দোলনের সময় সবাই কিন্তু বসে একমত হয়ে এটা শুরু করেনি। রাজপথেই ঐক্যটা তৈরি হয়েছিল। সাধারণত অপরিকল্পিতভাবে যখন ঐক্যটা তৈরি হয়, পরবর্তী সময়ে সেই ঐক্যটাকে ফলোআপ করতে হয়।
আমাদের ব্যর্থতা হচ্ছে, যাঁরা রাষ্ট্রক্ষমতায় বসেছেন তাঁরা পরবর্তী সময়ে ঐক্যটাকে বজায় রাখার জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। সাধারণভাবে এটা সত্য যে বিজয় হয়ে যাওয়ার পরে মানুষের মধ্যে একটা অনৈক্য, আন্দোলনে কার কতটা ভূমিকা ছিল—এসব নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। কিন্তু কোনো একটা কর্তৃপক্ষ থাকতে হয় যারা বলে যে, এগুলো নিয়ে আমাদের বিতর্ক করার সুযোগ নেই। সামনে আমরা একটা ভালো লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হব। সে দায়িত্বটা ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের। সরকার সে দায়িত্বটা পালন করেনি। না করার কারণে যেটা হয়েছে, সরকার কারও কারও পক্ষ নিয়ে কথা বলেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে নতুন পার্টি গঠিত হচ্ছে। সেই পার্টি নিয়ে আপনাদের মূল্যায়ন কী?
ছাত্ররা যেহেতু এত বড় একটা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে, সে কারণে আমরা মনে করি, তাদের হাত দিয়ে একটা নতুন রাজনীতির উন্মেষ ঘটানোর সুযোগ আছে। মুক্তিযুদ্ধের পরে যখন দেশ স্বাধীন হয়েছে, তখন কিন্তু নেতৃত্বদানকারী দলের মাধ্যমে দেশটা পরিচালিত হয়েছে। পরে তারা সফল হয়েছে নাকি ব্যর্থ হয়েছে, সেটা আলাদা বিতর্ক। সে জন্য ছাত্রদের প্রতি জনগণের একটা বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও সম্মান তৈরি হয়েছে। এ জায়গা থেকে তারা রাজনীতি করতে পারে। এটা খারাপ না। কারণ তাদের নেতৃত্বেই তো দেশের মানুষ রাস্তায় নেমেছে। বাংলাদেশের মানুষের অনেক দিনের প্রত্যাশা বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াত, জাতীয় পার্টির যে পুরোনো রাজনৈতিক ধাঁচ, সেটা বদলিয়ে একটা নতুন পার্টি গঠিত হলে সেটা নতুন ধাঁচ পাবে। একই সঙ্গে সেটা গণতান্ত্রিক এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাবে। সেই বিবেচনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরে নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়, সেটাতে আমরা খুশিই হব, উৎসাহ বোধ করব।
তাদের সফলতার বিষয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
সফলতার বিষয়টা নির্ভর করে মানুষ যখন কোনো কাজ করতে যায়, সেখানে ভুল হলে সংশোধন করে। তারা যখন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাবে, তাদের অনেক ভুল-ত্রুটি দেখা দেবে। যদি তারা সেগুলোকে সংশোধন করে এগোতে পারে, তাহলে অবশ্যই তারা সফল হবে। কারণ, তারা তো নানা বিপত্তির পরেও আন্দোলনটাকে সফল করতে পেরেছে পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করে। আমি তাদের সফলতার ব্যাপারে আশাবাদী। তারা যদি বয়স্কদের পরামর্শ নেয়, যোগ্যদের নেতৃত্ব অন্তর্ভুক্ত করে এবং সমালোচনাকে ভালোভাবে গ্রহণ করে, তাহলে তারা সফল হতে পারবে।
একদিকে নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে বিএনপি, অন্যদিকে সরকার সংস্কারে গুরুত্ব দিচ্ছে। আপনাদের অবস্থান কী?
আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। আমরা বলেছি, সংস্কার ও নির্বাচন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এর মধ্যে আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করা এবং খুন, হত্যা ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে যে সাড়ে ১৬ বছর কাটিয়েছি তার একটা বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করা। তাই সংস্কার, নির্বাচন, বিচার এবং রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার দায়িত্ব হলো এ সরকারের। সুতরাং কোনোটাকে বাদ দিয়ে কোনোটাকে গুরুত্ব দিতে পারি না। মনে করেন, সবকিছুকে বাদ দিয়ে সরকার নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হয়, তাহলে যাঁরা নির্বাচিত হবেন এই কাজগুলো তাঁদের ওপর বর্তাবে এবং তাঁদের ওপর চাপটা পড়বে। কিন্তু সংস্কারের কাজটা খুব কঠিন। এটা হলো অজনপ্রিয় কাজ। আর এই কাজটা এ ধরনের সরকারকেই করতে হয়। কারণ তাদেরকে দল-মতনির্বিশেষে সবাই সমর্থন করে। সে জন্য আমরা গুরুত্ব আরোপ করছি, এই সরকারকে অবশ্যই মেজর কিছু সংস্কারে হাত দিতে হবে। মেজর সংস্কারগুলো করেই তাদেরকে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার অনেকগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু নির্বাচিত সরকার ছাড়া এসব সংসদে আইন আকারে পাস করা সম্ভব না। ’৯০-এর আন্দোলনের পরে যে দল ক্ষমতায় এসেছিল, তারা কোনো কিছুই করেনি। নির্বাচিত সরকার এসব সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবকে গুরুত্ব কি দেবে?
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যে সংস্কার প্রস্তাবের ব্যাপারে সবাই একমত হবেন, সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করব। আর যেগুলোর ব্যাপারে অনৈক্য থাকবে সেগুলোর ব্যাপারে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করব এবং পরবর্তী সরকারের কাছে সেগুলো অর্পণ করব। সুতরাং এসব নিয়ে একটা দীর্ঘ সময়ের প্রসেস থাকবে। যারা নতুন সরকার গঠন করবে তারাও কিছু সংস্কার নিয়ে চাপে থাকবে। আর অন্য দলগুলো এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকবে সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য। তাই এ বিষয়টাকে নিয়ে জটিল করার কিছু নেই।
অন্তর্বর্তী সরকার ৬ মাসে নানা ক্ষেত্রে সফল নয়। আপনাদের সরকার সম্পর্কে মূল্যায়ন কী?
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ব্যর্থতা হচ্ছে, তারা ছাত্র-জনতার ঐক্যটার দিকে মনোযোগ দেয়নি। দেশে একটা বিপর্যয়কর পরিস্থিতি ছিল। একটা রক্তপাতময় আন্দোলনের মাধ্যমে যে সরকার গঠিত হলো তারা কিন্তু জনগণকে আস্থায় নিতে পারেনি। এটা তাদের একটা ভুল হয়েছে। ভুল হতেই পারে। কারণ তারা অপ্রস্তুত, পরিকল্পনাহীন অবস্থায় দায়িত্ব নিয়েছে। এখন আমরা এ সরকারকে সমালোচনার পাশাপাশি সহায়তা করছি এবং আমাদের আস্থা ও অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি।

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ ঘণ্টা আগে
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
১ ঘণ্টা আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
১ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ...
১ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম ভাবনারও জন্ম হয়। অনেকে কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সদ্য প্রয়াত ইনকিলাব মঞ্চ নেতা ওসমান হাদিকে করা গুলির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ যখন তাদের তদন্ত শুরু করল, তখন দেখা গেল, এ এক রহস্যজনক ব্যাপার! এই ঘটনার সঙ্গে মদ, নারী, ইয়াবাসহ অনেক কিছুই জড়িত বলে ধারণা পুলিশের।
গোলমেলে বলার একটা কারণ হলো, যেহেতু গুলির আঘাত এসেছে এনসিপি নেতার ওপর, তাই কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতারা দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছিলেন। এনসিপির খুলনা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এই গুলির ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বসলেন। তিনি বললেন, মোতালেব গাড়ি থেকে নামার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে মারধর করার পর গুলি করা হয়। এনসিপির খুলনা মহানগরের সংগঠক বললেন, বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর এ সবই সন্ত্রাসী গ্রুপ আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট।
বর্তমান বাস্তবতায় যেকোনো ঘটনাতেই ‘কেষ্টা ব্যাটা’কে খোঁজা কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন কেন কোনো সচেতন রাজনৈতিক কর্মীর মাথায় আসবে না, সেটা বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে আছে কি নেই, দলটি খুলনায় কাজির কিতাবের গরু কি না, সে বিষয়ে এনসিপির কারও মনে কোনো সন্দেহ জাগবে না কেন? আওয়ামী লীগ আমলে যেমন সব দোষ বিএনপি এবং জামায়াতকে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত সরকার, তেমনি এখন যেকোনো অঘটন ঘটলেই বলা নেই কওয়া নেই, আওয়ামী লীগের দিকে ছুটে যায় সন্দেহের তির। মুশকিল হলো, সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটিত না হলে সাধারণ মানুষও একসময় দোষারোপের রাজনীতির মর্মকথা বুঝে যায়। তখন তাদের বেকুব ভেবে বিভ্রান্ত করা যায় না।
এই গোলমেলে ব্যাপারে পুলিশ কী বলছে? পুলিশ একটা কাজের কাজ করেছে। রাজনীতিবিদেরা যখন আওয়ামী লীগের ওপর দোষ দিয়ে ঘটনাটিকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ খোঁজ নিয়েছে সিসিটিভির। আর তাতেই এই গোলমেলে ঘটনার কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ফুটেজে দেখা গেল, কোনো চায়ের দোকান থেকে নয়, মোতালেব বের হচ্ছেন একটি বাড়ি থেকে। তাঁর কানে রয়েছে হাত। অর্থাৎ গুলিটি লেগেছে ওই বাড়িতেই। কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, রোববার দিবাগত রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিলেন এবং এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে আবার এক তরুণীর সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁকেও ধরেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডকে যেন রাজনৈতিক রং লাগাতে দেওয়া না হয়, সেদিকে নজর রাখা দরকার।

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম ভাবনারও জন্ম হয়। অনেকে কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সদ্য প্রয়াত ইনকিলাব মঞ্চ নেতা ওসমান হাদিকে করা গুলির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ যখন তাদের তদন্ত শুরু করল, তখন দেখা গেল, এ এক রহস্যজনক ব্যাপার! এই ঘটনার সঙ্গে মদ, নারী, ইয়াবাসহ অনেক কিছুই জড়িত বলে ধারণা পুলিশের।
গোলমেলে বলার একটা কারণ হলো, যেহেতু গুলির আঘাত এসেছে এনসিপি নেতার ওপর, তাই কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতারা দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছিলেন। এনসিপির খুলনা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এই গুলির ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বসলেন। তিনি বললেন, মোতালেব গাড়ি থেকে নামার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে মারধর করার পর গুলি করা হয়। এনসিপির খুলনা মহানগরের সংগঠক বললেন, বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর এ সবই সন্ত্রাসী গ্রুপ আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট।
বর্তমান বাস্তবতায় যেকোনো ঘটনাতেই ‘কেষ্টা ব্যাটা’কে খোঁজা কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন কেন কোনো সচেতন রাজনৈতিক কর্মীর মাথায় আসবে না, সেটা বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে আছে কি নেই, দলটি খুলনায় কাজির কিতাবের গরু কি না, সে বিষয়ে এনসিপির কারও মনে কোনো সন্দেহ জাগবে না কেন? আওয়ামী লীগ আমলে যেমন সব দোষ বিএনপি এবং জামায়াতকে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত সরকার, তেমনি এখন যেকোনো অঘটন ঘটলেই বলা নেই কওয়া নেই, আওয়ামী লীগের দিকে ছুটে যায় সন্দেহের তির। মুশকিল হলো, সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটিত না হলে সাধারণ মানুষও একসময় দোষারোপের রাজনীতির মর্মকথা বুঝে যায়। তখন তাদের বেকুব ভেবে বিভ্রান্ত করা যায় না।
এই গোলমেলে ব্যাপারে পুলিশ কী বলছে? পুলিশ একটা কাজের কাজ করেছে। রাজনীতিবিদেরা যখন আওয়ামী লীগের ওপর দোষ দিয়ে ঘটনাটিকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ খোঁজ নিয়েছে সিসিটিভির। আর তাতেই এই গোলমেলে ঘটনার কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ফুটেজে দেখা গেল, কোনো চায়ের দোকান থেকে নয়, মোতালেব বের হচ্ছেন একটি বাড়ি থেকে। তাঁর কানে রয়েছে হাত। অর্থাৎ গুলিটি লেগেছে ওই বাড়িতেই। কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, রোববার দিবাগত রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিলেন এবং এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে আবার এক তরুণীর সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁকেও ধরেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডকে যেন রাজনৈতিক রং লাগাতে দেওয়া না হয়, সেদিকে নজর রাখা দরকার।

‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’র (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। নব্বইয়ের দশকে ছাত্রশিবিরের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন এক দশকের বেশি সময় ধরে।
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
১ ঘণ্টা আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
১ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ...
১ ঘণ্টা আগেঅরুণ কর্মকার

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পায়নি। বরং প্রথম আলো অফিসের আশপাশে আগে থেকেই রুটিন দায়িত্ব হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব সদস্য অবস্থান করছিলেন, তাঁরাও সরে যান। আর ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম তো প্রকাশ্য সভায়ই বলেছেন, প্রথম আলো অফিসে হামলা শুরুর পরই তিনি সরকারের সব সংস্থা ও ব্যক্তির কাছে তাঁর প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চেয়েও পাননি। তিনি আরও বলেছেন, দেশে মতপ্রকাশ তো দূরের কথা, বেঁচে থাকার অধিকারের ব্যাপার এসে গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর অধিকাংশের সঙ্গে প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের সম্পর্ক কারও অবিদিত নয়। সরকারের কাজকর্মে পত্রিকা দুটির সমর্থন এবং গঠনমূলক সমালোচনার কথাও সবার জানা। তারপরও তাদেরই যখন এহেন অসহায় অবস্থা, তখন অন্য সবার ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা যে কী, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সে পরিস্থিতি এককথায় বোঝাতে গেলে বলতে হয়, দেশে জননিরাপত্তা পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক। এই পরিস্থিতিতে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা, গলা কেটে-গুলি করে খুন এবং ছায়ানট-উদীচীর মতো প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, আগুন লাগানোর মতো সহিংস কর্মকাণ্ড আকছার চলতে পারছে। বিশিষ্ট সম্পাদক নূরুল কবীরের মতো জনপ্রিয়, পরিচিত ব্যক্তিরাও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
এসব ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে আছে। সরকার নিশ্চয়ই দেশের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের পাশেও আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে যেমন আছে, তেমনিভাবে জনগণের পাশে থাকলে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে কি না। বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করার জন্য আরও দুজনের দুটি প্রণিধানযোগ্য বক্তব্য উল্লেখ করা প্রয়োজন।
এক. জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা প্রসঙ্গে বলেছেন, এই হামলার সঙ্গে সরকারের একটা অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। নাহিদ ইসলাম শুধু জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান সংগঠকদের অন্যতমই নন, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাও ছিলেন। এই সরকারের তরিকা এবং এর ভেতর-বাইরে তিনি ভালোই জানেন। কাজেই তাঁর এই কথাটি অন্য পাঁচটা রাজনৈতিক বক্তৃতার মতো নয়। এখন কথা হলো, সরকারের ভেতরেই যখন এমন শক্তি ঘাপটি মেরে আছে, তখন তারা তো ইচ্ছা করলে নির্বাচনেও বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। এবং সেটা তারা করবে বলেও বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। কেননা, তাদের ভিন্ন অ্যাজেন্ডা রয়েছে।
দুই. ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলামের একটি বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী তিনি প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার প্রসঙ্গে বলেছেন, কারওয়ান বাজারের যে পরিস্থিতি ছিল, সেখানে পুলিশ অ্যাকশনে গেলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেতেন। এরপর পুলিশের ওপর পাল্টা আক্রমণ হতো। সে কারণেই তাঁরা সেখানে অ্যাকশনে যেতে পারেননি। এর ফলে কোনো মানুষ হতাহত হয়নি। এই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য অত্যন্ত যৌক্তিক। তা ছাড়া এই বক্তব্যের মধ্যে কয়েকটি গূঢ় বার্তা লুকিয়ে আছে।
প্রথমত, পুলিশ এমন কোনো পরিস্থিতিতে অ্যাকশনে যাবে না যেখানে তাদেরকে গুলি করতে হতে পারে। যেখানে তাদের গুলিতে মানুষ মারা যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এমনকি, সেখানে যদি আক্রমণকারীদের হাতে আক্রান্ত মানুষের মারা যাওয়ার এবং কোনো মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবু পুলিশ অ্যাকশনে যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের পুরো সময়কাল আমরা এই সত্য অনুধাবন করছি। পুলিশ তথা সরকারের এই ভূমিকার কারণ হতে পারে এই যে জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে এমন একটি বয়ান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, মানুষকে গুলি করে কেবল স্বৈরাচার। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তো স্বৈরাচার হতে পারে না। তারা চুপচাপ সাধারণ মানুষের নিগ্রহ, খুন, লুটপাট এসব দেখতে পারে। কাজেই পুলিশ কীভাবে অ্যাকশনে যাবে! কীভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হামলার হাত থেকে বাঁচতে সরকারের কাছে সাহায্য চেয়ে পাবেন! এসব ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবখানা বোধ হয় এই যে, আমরা আর কদিন। এই কটা দিন কোনোক্রমে চোখমুখ বন্ধ করে কাটিয়ে যেতে পারলেই হয়। কিন্তু ইতিহাসের দায় শোধের যে বিষয় সবার ক্ষেত্রেই থেকে যায়, সে কথাও কি ভোলা উচিত!
তৃতীয়ত, পুলিশ অ্যাকশনে গেলে পুলিশের ওপরও আক্রমণ হতো। এই আশঙ্কাটাও শতভাগ সত্য। অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার ফলে সন্ত্রাসীরা যে পুলিশ-মিলিটারি কিছুই মানে না, সে তো আমরা বারবার দেখছি। তাহলে পুলিশ কেন আক্রান্ত মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেরা বিপদে পড়বে। আর শেষ পর্যন্ত তো পুলিশের ওপরই দোষ চাপানো হয়। কাজেই এহেন পরিস্থিতিতে গা বাঁচিয়ে চলাই শ্রেয়। কিন্তু কথা হলো, এই পরিস্থিতি চলতে দিয়ে নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে তো? নির্বাচনের সময়ও তো কোনো কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একই কাজ করতে পারে। এমনকি, নির্বাচন বিঘ্নিত করার জন্য নতুন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সংগঠিতও হতে পারে। তখন গুলি করার নির্দেশ দিলেও তো অন্তর্বর্তী সরকার স্বৈরাচারের কাতারে পড়ে যাবে। আর তখনো যে পুলিশ সরকারের বা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে অ্যাকশনে যাবে, তারই-বা নিশ্চয়তা কী?
কোনো নিশ্চয়তা নেই বলেই নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গত মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছিলেন সব রিটার্নিং কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপার (এসপি), সব রেঞ্জের ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার, আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। সেখানে তাঁরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাচন অফিস, সব নির্বাচন কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্র—সকল পর্যায়ে নিরাপত্তা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাঁদের ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়ও বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন। অনেক জেলা-উপজেলায় নির্বাচন অফিসগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করে নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ দেন তাঁরা। কিছু এলাকার ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী নিয়ে যেতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) দায়িত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তো আছেই। প্রকৃতপক্ষে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো মানুষই নিজেকে আর নিরাপদ ভাবতে পারছে না। সবাই নিজের এবং পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে মানুষের পাশে থাকবে, কীভাবেই-বা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করবে, সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পায়নি। বরং প্রথম আলো অফিসের আশপাশে আগে থেকেই রুটিন দায়িত্ব হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব সদস্য অবস্থান করছিলেন, তাঁরাও সরে যান। আর ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম তো প্রকাশ্য সভায়ই বলেছেন, প্রথম আলো অফিসে হামলা শুরুর পরই তিনি সরকারের সব সংস্থা ও ব্যক্তির কাছে তাঁর প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চেয়েও পাননি। তিনি আরও বলেছেন, দেশে মতপ্রকাশ তো দূরের কথা, বেঁচে থাকার অধিকারের ব্যাপার এসে গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর অধিকাংশের সঙ্গে প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের সম্পর্ক কারও অবিদিত নয়। সরকারের কাজকর্মে পত্রিকা দুটির সমর্থন এবং গঠনমূলক সমালোচনার কথাও সবার জানা। তারপরও তাদেরই যখন এহেন অসহায় অবস্থা, তখন অন্য সবার ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা যে কী, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সে পরিস্থিতি এককথায় বোঝাতে গেলে বলতে হয়, দেশে জননিরাপত্তা পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক। এই পরিস্থিতিতে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা, গলা কেটে-গুলি করে খুন এবং ছায়ানট-উদীচীর মতো প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, আগুন লাগানোর মতো সহিংস কর্মকাণ্ড আকছার চলতে পারছে। বিশিষ্ট সম্পাদক নূরুল কবীরের মতো জনপ্রিয়, পরিচিত ব্যক্তিরাও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।
এসব ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে আছে। সরকার নিশ্চয়ই দেশের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের পাশেও আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে যেমন আছে, তেমনিভাবে জনগণের পাশে থাকলে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে কি না। বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করার জন্য আরও দুজনের দুটি প্রণিধানযোগ্য বক্তব্য উল্লেখ করা প্রয়োজন।
এক. জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা প্রসঙ্গে বলেছেন, এই হামলার সঙ্গে সরকারের একটা অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। নাহিদ ইসলাম শুধু জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান সংগঠকদের অন্যতমই নন, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাও ছিলেন। এই সরকারের তরিকা এবং এর ভেতর-বাইরে তিনি ভালোই জানেন। কাজেই তাঁর এই কথাটি অন্য পাঁচটা রাজনৈতিক বক্তৃতার মতো নয়। এখন কথা হলো, সরকারের ভেতরেই যখন এমন শক্তি ঘাপটি মেরে আছে, তখন তারা তো ইচ্ছা করলে নির্বাচনেও বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। এবং সেটা তারা করবে বলেও বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। কেননা, তাদের ভিন্ন অ্যাজেন্ডা রয়েছে।
দুই. ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলামের একটি বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী তিনি প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার প্রসঙ্গে বলেছেন, কারওয়ান বাজারের যে পরিস্থিতি ছিল, সেখানে পুলিশ অ্যাকশনে গেলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেতেন। এরপর পুলিশের ওপর পাল্টা আক্রমণ হতো। সে কারণেই তাঁরা সেখানে অ্যাকশনে যেতে পারেননি। এর ফলে কোনো মানুষ হতাহত হয়নি। এই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য অত্যন্ত যৌক্তিক। তা ছাড়া এই বক্তব্যের মধ্যে কয়েকটি গূঢ় বার্তা লুকিয়ে আছে।
প্রথমত, পুলিশ এমন কোনো পরিস্থিতিতে অ্যাকশনে যাবে না যেখানে তাদেরকে গুলি করতে হতে পারে। যেখানে তাদের গুলিতে মানুষ মারা যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এমনকি, সেখানে যদি আক্রমণকারীদের হাতে আক্রান্ত মানুষের মারা যাওয়ার এবং কোনো মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবু পুলিশ অ্যাকশনে যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের পুরো সময়কাল আমরা এই সত্য অনুধাবন করছি। পুলিশ তথা সরকারের এই ভূমিকার কারণ হতে পারে এই যে জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে এমন একটি বয়ান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, মানুষকে গুলি করে কেবল স্বৈরাচার। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তো স্বৈরাচার হতে পারে না। তারা চুপচাপ সাধারণ মানুষের নিগ্রহ, খুন, লুটপাট এসব দেখতে পারে। কাজেই পুলিশ কীভাবে অ্যাকশনে যাবে! কীভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হামলার হাত থেকে বাঁচতে সরকারের কাছে সাহায্য চেয়ে পাবেন! এসব ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবখানা বোধ হয় এই যে, আমরা আর কদিন। এই কটা দিন কোনোক্রমে চোখমুখ বন্ধ করে কাটিয়ে যেতে পারলেই হয়। কিন্তু ইতিহাসের দায় শোধের যে বিষয় সবার ক্ষেত্রেই থেকে যায়, সে কথাও কি ভোলা উচিত!
তৃতীয়ত, পুলিশ অ্যাকশনে গেলে পুলিশের ওপরও আক্রমণ হতো। এই আশঙ্কাটাও শতভাগ সত্য। অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার ফলে সন্ত্রাসীরা যে পুলিশ-মিলিটারি কিছুই মানে না, সে তো আমরা বারবার দেখছি। তাহলে পুলিশ কেন আক্রান্ত মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেরা বিপদে পড়বে। আর শেষ পর্যন্ত তো পুলিশের ওপরই দোষ চাপানো হয়। কাজেই এহেন পরিস্থিতিতে গা বাঁচিয়ে চলাই শ্রেয়। কিন্তু কথা হলো, এই পরিস্থিতি চলতে দিয়ে নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে তো? নির্বাচনের সময়ও তো কোনো কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একই কাজ করতে পারে। এমনকি, নির্বাচন বিঘ্নিত করার জন্য নতুন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সংগঠিতও হতে পারে। তখন গুলি করার নির্দেশ দিলেও তো অন্তর্বর্তী সরকার স্বৈরাচারের কাতারে পড়ে যাবে। আর তখনো যে পুলিশ সরকারের বা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে অ্যাকশনে যাবে, তারই-বা নিশ্চয়তা কী?
কোনো নিশ্চয়তা নেই বলেই নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গত মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছিলেন সব রিটার্নিং কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপার (এসপি), সব রেঞ্জের ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার, আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। সেখানে তাঁরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাচন অফিস, সব নির্বাচন কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্র—সকল পর্যায়ে নিরাপত্তা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাঁদের ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়ও বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন। অনেক জেলা-উপজেলায় নির্বাচন অফিসগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করে নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ দেন তাঁরা। কিছু এলাকার ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী নিয়ে যেতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) দায়িত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তো আছেই। প্রকৃতপক্ষে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো মানুষই নিজেকে আর নিরাপদ ভাবতে পারছে না। সবাই নিজের এবং পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে মানুষের পাশে থাকবে, কীভাবেই-বা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করবে, সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’র (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। নব্বইয়ের দশকে ছাত্রশিবিরের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন এক দশকের বেশি সময় ধরে।
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ ঘণ্টা আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
১ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ...
১ ঘণ্টা আগেহাসান আলী

মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা দূরত্বে—কিন্তু বন্ধু থাকে অনুভবের কাছাকাছি।
প্রবীণ বয়সে সবচেয়ে বড় শত্রু একাকিত্ব। ঘরের ভেতর থেকেও মানুষ একা হয়ে যেতে পারে। কথা বলার মানুষ থাকে না, দিনের অভিজ্ঞতা ভাগ করার কেউ থাকে না। এই নীরবতার মধ্যে একজন বন্ধুর ফোনকল, বিকেলের আড্ডা বা একসঙ্গে হাঁটতে বের হওয়া—সবই হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার অক্সিজেন। বন্ধু মানে কেবল হাসি নয়, বন্ধু মানে নিজের মতো করে কথা বলার স্বাধীনতা।
পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক সময় দায়িত্ব আর প্রত্যাশায় বাঁধা। সন্তানেরা বাবা-মাকে ভালোবাসে ঠিকই, কিন্তু সব কথা বলা যায় না। নিজের ভয়, হতাশা, মৃত্যুচিন্তা কিংবা ব্যর্থতার অনুভূতি—এই বিষয়গুলো সন্তানদের সামনে প্রকাশ করতে প্রবীণেরা সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু একজন বন্ধু সেই জায়গা, যেখানে কোনো বিচার নেই, আছে কেবল শোনা আর বোঝা। বন্ধুর কাছে কান্নাও নিরাপদ।
প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব মানে স্মৃতির ভাগাভাগি। একই সময়ের মানুষ, একই সমাজ, একই লড়াই—এই মিলগুলো বন্ধুত্বকে গভীর করে তোলে। একসঙ্গে বসে পুরোনো দিনের গল্প করলে কেবল স্মৃতি নয়, নিজেদের অস্তিত্বও নতুন করে আবিষ্কার হয়। ‘আমি ছিলাম, আমি করেছি’—এই অনুভূতি আত্মসম্মান জাগিয়ে তোলে, যা বার্ধক্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
মনোবিজ্ঞানের মতে, প্রবীণ বয়সে ভালো বন্ধুত্ব ডিমেনশিয়া ও বিষণ্নতার ঝুঁকি কমায়। কারণ, কথা বলা, হাসা, মতবিনিময়—সবই মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। একজন প্রবীণ যখন বন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, তখন তাঁর মনও সচল থাকে, জীবনের প্রতি আগ্রহ কমে না। বন্ধুত্ব মানে শুধু সময় কাটানো নয়, মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা।
বন্ধু না থাকলে প্রবীণেরা অনেক সময় নিজেদের বোঝা মনে করেন। মনে হয় তাঁরা শুধু অন্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে সেই ধারণা ভেঙে যায়। তখন তাঁরা আবার একজন মানুষ—যার গল্প আছে, মতামত আছে, রসিকতা আছে। বন্ধুত্ব প্রবীণকে ‘রোগী’ থেকে আবার ‘মানুষ’ বানিয়ে তোলে।
আমাদের সমাজে প্রবীণদের বন্ধুত্বকে অনেক সময় তুচ্ছ করা হয়। বলা হয়, ‘এই বয়সে আবার বন্ধু!’ অথচ এই বয়সেই বন্ধুত্ব সবচেয়ে বেশি দরকার। কারণ, তখন জীবনের অধিকাংশ দরজা বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধুত্বই একমাত্র জানালা দিয়ে আলো ঢোকে। প্রবীণদের বন্ধুত্ব মানে জীবনের শেষ অধ্যায়ে মানবিক উষ্ণতা।
বিশেষ করে যাঁরা একা থাকেন, জীবনসঙ্গী হারিয়েছেন, সন্তানেরা দূরে—তাঁদের জন্য বন্ধুই পরিবার। প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, বাজার করা বা শুধু পাশে বসে থাকা—বন্ধু এই কাজগুলো নীরবে করে যায়। কোনো রক্তের সম্পর্ক না হয়েও বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে রক্তের চেয়েও ঘনিষ্ঠ।
প্রবীণদের বন্ধুত্ব তরুণদের জন্যও একটি শিক্ষা। এখানে প্রতিযোগিতা নেই, আছে সহমর্মিতা। এখানে লাভ-ক্ষতি নেই, আছে সময় দেওয়া। প্রবীণ বন্ধুরা একে অপরকে ব্যবহার করেন না, তাঁরা একে অপরকে থাকতে দেন। এই থাকার মধ্যেই নিহিত আছে মানবিকতার সৌন্দর্য।
আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন—যাঁদের ভালো বন্ধু আছে, তাঁদের চোখে আলোর ঝিলিক থাকে। শরীর ভাঙলেও মন ভাঙে না। আর যাঁরা একা, তাঁদের চোখে ক্লান্তি। তাই প্রবীণকল্যাণ মানে শুধু ওষুধ বা খাবার নয়—বন্ধুত্বের পরিবেশ তৈরি করাও।
শেষ পর্যন্ত বলা যায়, প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব হলো জীবনের শেষ প্রদীপ। এই প্রদীপ জ্বলে থাকলে অন্ধকার ভয়ের নয়। বয়স বাড়ে, শরীর ঝরে—কিন্তু বন্ধুত্ব থাকলে মন সব সময় তরুণ থাকে। আর তরুণ মনই তো আসল জীবন।

মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা দূরত্বে—কিন্তু বন্ধু থাকে অনুভবের কাছাকাছি।
প্রবীণ বয়সে সবচেয়ে বড় শত্রু একাকিত্ব। ঘরের ভেতর থেকেও মানুষ একা হয়ে যেতে পারে। কথা বলার মানুষ থাকে না, দিনের অভিজ্ঞতা ভাগ করার কেউ থাকে না। এই নীরবতার মধ্যে একজন বন্ধুর ফোনকল, বিকেলের আড্ডা বা একসঙ্গে হাঁটতে বের হওয়া—সবই হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার অক্সিজেন। বন্ধু মানে কেবল হাসি নয়, বন্ধু মানে নিজের মতো করে কথা বলার স্বাধীনতা।
পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক সময় দায়িত্ব আর প্রত্যাশায় বাঁধা। সন্তানেরা বাবা-মাকে ভালোবাসে ঠিকই, কিন্তু সব কথা বলা যায় না। নিজের ভয়, হতাশা, মৃত্যুচিন্তা কিংবা ব্যর্থতার অনুভূতি—এই বিষয়গুলো সন্তানদের সামনে প্রকাশ করতে প্রবীণেরা সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু একজন বন্ধু সেই জায়গা, যেখানে কোনো বিচার নেই, আছে কেবল শোনা আর বোঝা। বন্ধুর কাছে কান্নাও নিরাপদ।
প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব মানে স্মৃতির ভাগাভাগি। একই সময়ের মানুষ, একই সমাজ, একই লড়াই—এই মিলগুলো বন্ধুত্বকে গভীর করে তোলে। একসঙ্গে বসে পুরোনো দিনের গল্প করলে কেবল স্মৃতি নয়, নিজেদের অস্তিত্বও নতুন করে আবিষ্কার হয়। ‘আমি ছিলাম, আমি করেছি’—এই অনুভূতি আত্মসম্মান জাগিয়ে তোলে, যা বার্ধক্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
মনোবিজ্ঞানের মতে, প্রবীণ বয়সে ভালো বন্ধুত্ব ডিমেনশিয়া ও বিষণ্নতার ঝুঁকি কমায়। কারণ, কথা বলা, হাসা, মতবিনিময়—সবই মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। একজন প্রবীণ যখন বন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, তখন তাঁর মনও সচল থাকে, জীবনের প্রতি আগ্রহ কমে না। বন্ধুত্ব মানে শুধু সময় কাটানো নয়, মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা।
বন্ধু না থাকলে প্রবীণেরা অনেক সময় নিজেদের বোঝা মনে করেন। মনে হয় তাঁরা শুধু অন্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে সেই ধারণা ভেঙে যায়। তখন তাঁরা আবার একজন মানুষ—যার গল্প আছে, মতামত আছে, রসিকতা আছে। বন্ধুত্ব প্রবীণকে ‘রোগী’ থেকে আবার ‘মানুষ’ বানিয়ে তোলে।
আমাদের সমাজে প্রবীণদের বন্ধুত্বকে অনেক সময় তুচ্ছ করা হয়। বলা হয়, ‘এই বয়সে আবার বন্ধু!’ অথচ এই বয়সেই বন্ধুত্ব সবচেয়ে বেশি দরকার। কারণ, তখন জীবনের অধিকাংশ দরজা বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধুত্বই একমাত্র জানালা দিয়ে আলো ঢোকে। প্রবীণদের বন্ধুত্ব মানে জীবনের শেষ অধ্যায়ে মানবিক উষ্ণতা।
বিশেষ করে যাঁরা একা থাকেন, জীবনসঙ্গী হারিয়েছেন, সন্তানেরা দূরে—তাঁদের জন্য বন্ধুই পরিবার। প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, বাজার করা বা শুধু পাশে বসে থাকা—বন্ধু এই কাজগুলো নীরবে করে যায়। কোনো রক্তের সম্পর্ক না হয়েও বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে রক্তের চেয়েও ঘনিষ্ঠ।
প্রবীণদের বন্ধুত্ব তরুণদের জন্যও একটি শিক্ষা। এখানে প্রতিযোগিতা নেই, আছে সহমর্মিতা। এখানে লাভ-ক্ষতি নেই, আছে সময় দেওয়া। প্রবীণ বন্ধুরা একে অপরকে ব্যবহার করেন না, তাঁরা একে অপরকে থাকতে দেন। এই থাকার মধ্যেই নিহিত আছে মানবিকতার সৌন্দর্য।
আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন—যাঁদের ভালো বন্ধু আছে, তাঁদের চোখে আলোর ঝিলিক থাকে। শরীর ভাঙলেও মন ভাঙে না। আর যাঁরা একা, তাঁদের চোখে ক্লান্তি। তাই প্রবীণকল্যাণ মানে শুধু ওষুধ বা খাবার নয়—বন্ধুত্বের পরিবেশ তৈরি করাও।
শেষ পর্যন্ত বলা যায়, প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব হলো জীবনের শেষ প্রদীপ। এই প্রদীপ জ্বলে থাকলে অন্ধকার ভয়ের নয়। বয়স বাড়ে, শরীর ঝরে—কিন্তু বন্ধুত্ব থাকলে মন সব সময় তরুণ থাকে। আর তরুণ মনই তো আসল জীবন।

‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’র (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। নব্বইয়ের দশকে ছাত্রশিবিরের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন এক দশকের বেশি সময় ধরে।
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ ঘণ্টা আগে
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
১ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ...
১ ঘণ্টা আগেসাদিয়া সুলতানা রিমি

বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ ও হতাশার মধ্যেও শান্ত থাকা যায়, কীভাবে উত্তেজনার মুহূর্তে দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা যায়। ইতিহাস আমাদের বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে, সংকটের সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এই অস্থির সময়ের কেন্দ্রে রয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সামনের সারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড। আততায়ীর গুলিতে আহত হয়ে টানা সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই শেষে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জাতির জন্যই গভীর শোকের কারণ। তিনি ছিলেন সেই কণ্ঠ, যে কণ্ঠ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্ন দেখিয়েছিল; তরুণদের মাঝে জাগিয়ে তুলেছিল আশা, সাহস ও প্রতিবাদের ভাষা। সেই কণ্ঠ আজ নীরব। আর এই নীরবতা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক যাত্রার ওপর এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে।
একজন নাগরিকের প্রাণহানি কখনোই ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ হতে পারে না। বিশেষত, যখন সেই নাগরিক একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন। হাদির হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। এই হত্যার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের ন্যূনতম কর্তব্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে ভাষণ, রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা এবং পরিবারটির দায়িত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত এই দায়বদ্ধতারই একটি বার্তা দেয়। তবে ঘোষণা ও আশ্বাসের বাইরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—আইনের শাসনের বাস্তব প্রয়োগ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভাঙতে না পারলে এমন হত্যাকাণ্ড ভবিষ্যতেও পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।
কিন্তু শোক ও ক্ষোভের প্রকাশ যখন সহিংসতায় রূপ নেয়, তখন তা নিজ উদ্দেশ্যকেই নস্যাৎ করে। হাদির হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে যে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয় এবং দুটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান মানে কেবল ইট-পাথরের ভবন নয়; এগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ভিন্নমতের সহাবস্থান এবং সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরের প্রতীক। এসব প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে গণতন্ত্রের শিরায় আঘাত করা। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান যা-ই থাকুক না কেন সহিংসতা কখনোই ন্যায্যতা পায় না।
বিশেষ করে, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করার ঘটনা আমাদের আরও সতর্ক করে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর সোচ্চার ভূমিকা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ। মতভিন্নতার কারণে কাউকে শত্রু বানিয়ে ফেলার এই প্রবণতা সমাজকে বিভক্ত করে, যুক্তিকে হত্যা করে এবং শেষ পর্যন্ত সহিংসতার পথ প্রশস্ত করে। আজ যদি আমরা যুক্তির বদলে লেবেলিংকে বেছে নিই, তবে কাল আর কেউই নিরাপদ থাকবে না।
এই অস্থিরতার পেছনে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য বড় ভূমিকা রাখছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাইহীন তথ্য, আবেগতাড়িত পোস্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার মুহূর্তের মধ্যে জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে দিচ্ছে। ডিজিটাল যুগে দায়িত্বশীল নাগরিকত্বের মানে শুধু ভোট দেওয়া নয়; বরং তথ্য যাচাই করা, সংযত ভাষা ব্যবহার করা এবং উসকানিমূলক কনটেন্ট থেকে বিরত থাকা। এক একটি ভুয়া পোস্ট এক একটি আগুনের স্ফুলিঙ্গ—যা পুরো সমাজকে দগ্ধ করতে পারে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জনও সমান জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। পুলিশি তৎপরতা যদি একপক্ষীয় বা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে তা উত্তেজনা কমানোর বদলে বাড়িয়ে দেবে। তাই শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি সংলাপ, ব্যাখ্যা ও আস্থার রাজনীতি জরুরি।
একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। উসকানি নয়, সংলাপ; প্রতিহিংসা নয়, সহনশীলতা—এই নীতিই হতে হবে পথনির্দেশক। দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। এই সময়ে প্রতিটি দলের ধৈর্য ধরার পরীক্ষা চলছে। নেতারা যদি দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, কর্মীদের সংযত না করেন, তাহলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহুকাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।
নির্বাচন শুধু ক্ষমতা বদলের প্রক্রিয়া নয়; এটি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার প্রতীক। অস্থিতিশীলতা সেই ধারাবাহিকতাকে ভেঙে দেয়। শরিফ ওসমান হাদির স্বপ্ন ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, যেখানে মানুষের অধিকার নিশ্চিত হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে অক্ষুণ্ন। তাঁর স্মৃতির প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা জানাতে হলে সহিংসতা নয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই শক্তিশালী করতে হবে।
বিশেষ করে তরুণসমাজের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদির কণ্ঠ যে তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছিল, আজ তাদেরই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই দর্শনই পারে দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করতে। আবেগের বশে নেওয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত একটি প্রজন্মের স্বপ্ন ধ্বংস করতে পারে।
বাংলাদেশ আজ সংকট, সম্ভাবনা ও সংগ্রামের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে রয়েছে শোক, ক্ষোভ ও অনিশ্চয়তা; অন্যদিকে রয়েছে গণতান্ত্রিক উত্তরণের সম্ভাবনা। কোন পথ বেছে নেওয়া হবে, তা নির্ভর করছে আমাদের সামষ্টিক প্রজ্ঞা ও সংযমের ওপর। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয় বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। যদি আমরা এই শক্তিকে ধারণ করতে পারি, তবে হাদির রক্ত বৃথা যাবে না; বরং তা হয়ে উঠবে একটি ন্যায়ভিত্তিক, সহনশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথে এক কঠিন কিন্তু আশাব্যঞ্জক সংগ্রামের প্রেরণা।
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ ও হতাশার মধ্যেও শান্ত থাকা যায়, কীভাবে উত্তেজনার মুহূর্তে দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা যায়। ইতিহাস আমাদের বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে, সংকটের সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এই অস্থির সময়ের কেন্দ্রে রয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সামনের সারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড। আততায়ীর গুলিতে আহত হয়ে টানা সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই শেষে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জাতির জন্যই গভীর শোকের কারণ। তিনি ছিলেন সেই কণ্ঠ, যে কণ্ঠ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্ন দেখিয়েছিল; তরুণদের মাঝে জাগিয়ে তুলেছিল আশা, সাহস ও প্রতিবাদের ভাষা। সেই কণ্ঠ আজ নীরব। আর এই নীরবতা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক যাত্রার ওপর এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে।
একজন নাগরিকের প্রাণহানি কখনোই ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ হতে পারে না। বিশেষত, যখন সেই নাগরিক একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন। হাদির হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। এই হত্যার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের ন্যূনতম কর্তব্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে ভাষণ, রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা এবং পরিবারটির দায়িত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত এই দায়বদ্ধতারই একটি বার্তা দেয়। তবে ঘোষণা ও আশ্বাসের বাইরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—আইনের শাসনের বাস্তব প্রয়োগ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভাঙতে না পারলে এমন হত্যাকাণ্ড ভবিষ্যতেও পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।
কিন্তু শোক ও ক্ষোভের প্রকাশ যখন সহিংসতায় রূপ নেয়, তখন তা নিজ উদ্দেশ্যকেই নস্যাৎ করে। হাদির হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে যে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয় এবং দুটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান মানে কেবল ইট-পাথরের ভবন নয়; এগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ভিন্নমতের সহাবস্থান এবং সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরের প্রতীক। এসব প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে গণতন্ত্রের শিরায় আঘাত করা। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান যা-ই থাকুক না কেন সহিংসতা কখনোই ন্যায্যতা পায় না।
বিশেষ করে, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করার ঘটনা আমাদের আরও সতর্ক করে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর সোচ্চার ভূমিকা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ। মতভিন্নতার কারণে কাউকে শত্রু বানিয়ে ফেলার এই প্রবণতা সমাজকে বিভক্ত করে, যুক্তিকে হত্যা করে এবং শেষ পর্যন্ত সহিংসতার পথ প্রশস্ত করে। আজ যদি আমরা যুক্তির বদলে লেবেলিংকে বেছে নিই, তবে কাল আর কেউই নিরাপদ থাকবে না।
এই অস্থিরতার পেছনে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য বড় ভূমিকা রাখছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাইহীন তথ্য, আবেগতাড়িত পোস্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার মুহূর্তের মধ্যে জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে দিচ্ছে। ডিজিটাল যুগে দায়িত্বশীল নাগরিকত্বের মানে শুধু ভোট দেওয়া নয়; বরং তথ্য যাচাই করা, সংযত ভাষা ব্যবহার করা এবং উসকানিমূলক কনটেন্ট থেকে বিরত থাকা। এক একটি ভুয়া পোস্ট এক একটি আগুনের স্ফুলিঙ্গ—যা পুরো সমাজকে দগ্ধ করতে পারে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জনও সমান জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। পুলিশি তৎপরতা যদি একপক্ষীয় বা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে তা উত্তেজনা কমানোর বদলে বাড়িয়ে দেবে। তাই শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি সংলাপ, ব্যাখ্যা ও আস্থার রাজনীতি জরুরি।
একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। উসকানি নয়, সংলাপ; প্রতিহিংসা নয়, সহনশীলতা—এই নীতিই হতে হবে পথনির্দেশক। দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। এই সময়ে প্রতিটি দলের ধৈর্য ধরার পরীক্ষা চলছে। নেতারা যদি দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, কর্মীদের সংযত না করেন, তাহলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহুকাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।
নির্বাচন শুধু ক্ষমতা বদলের প্রক্রিয়া নয়; এটি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার প্রতীক। অস্থিতিশীলতা সেই ধারাবাহিকতাকে ভেঙে দেয়। শরিফ ওসমান হাদির স্বপ্ন ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, যেখানে মানুষের অধিকার নিশ্চিত হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে অক্ষুণ্ন। তাঁর স্মৃতির প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা জানাতে হলে সহিংসতা নয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই শক্তিশালী করতে হবে।
বিশেষ করে তরুণসমাজের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদির কণ্ঠ যে তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছিল, আজ তাদেরই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই দর্শনই পারে দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করতে। আবেগের বশে নেওয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত একটি প্রজন্মের স্বপ্ন ধ্বংস করতে পারে।
বাংলাদেশ আজ সংকট, সম্ভাবনা ও সংগ্রামের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে রয়েছে শোক, ক্ষোভ ও অনিশ্চয়তা; অন্যদিকে রয়েছে গণতান্ত্রিক উত্তরণের সম্ভাবনা। কোন পথ বেছে নেওয়া হবে, তা নির্ভর করছে আমাদের সামষ্টিক প্রজ্ঞা ও সংযমের ওপর। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয় বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। যদি আমরা এই শক্তিকে ধারণ করতে পারি, তবে হাদির রক্ত বৃথা যাবে না; বরং তা হয়ে উঠবে একটি ন্যায়ভিত্তিক, সহনশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথে এক কঠিন কিন্তু আশাব্যঞ্জক সংগ্রামের প্রেরণা।
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’র (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। নব্বইয়ের দশকে ছাত্রশিবিরের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সেক্রেটারি ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন এক দশকের বেশি সময় ধরে।
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম...
১ ঘণ্টা আগে
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন...
১ ঘণ্টা আগে
মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা...
১ ঘণ্টা আগে