Ajker Patrika

রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চ্যালেঞ্জ ও খাতসমূহের সমন্বয়

জাহাঙ্গীর আলম শোভন
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১৮: ০১
রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চ্যালেঞ্জ ও খাতসমূহের সমন্বয়

প্রতি বছর সরকারের দুটো প্রধান চ্যালেঞ্জ থাকে যেগুলোর ওপর উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন নির্ভর করে। প্রথম, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, দ্বিতীয়, রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া। রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সহায়ক কিংবা প্রতিবন্ধক কিছু অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নিয়ামক থাকে। সেগুলো এই লক্ষ্যমাত্রাকে সহজ কিংবা কঠিন করে তোলে। আসলে সহজ বলতে কিছু হয় না। সবই কঠিন হয়; কেবল কিছু কঠিনকে অতিক্রম করা যায় আর কিছু কঠিনকে যায় না। 

২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জন্য সরকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এর প্রধান কারণ বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও বাজার অস্থিরতা। যার কারণ রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সংগত কারণে জ্বালানি তেল ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি। 

এসব সমস্যা অতিক্রমে সংশ্লিষ্টরা দুটি অনুভূতি অর্জন করেছে, এক. ভীতি, অন্যটি হচ্ছে সতর্ক থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ঝুঁকি মোকাবিলা। উদাহরণ হলো—আমাদের নিকট অতীতে আমরা দেখি বৈশ্বিক চিত্র ক্ষেত্রবিশেষে নেতিবাচক হলেও আমাদের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। যেমন বিগত ২০২১–২২ অর্থবছরে রপ্তানি খাতের আয় ছিল ৫২ দশমিক ০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। 

পরের বছর কিন্তু এর প্রভাব পড়েছে। মানে কখনো কোনো কিছু কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে বেশি হয়ে গেলে পরে এটার কিছুটা সমন্বয় হয়। মানে ২০২২–২৩ অর্থবছরে যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮ বিলিয়ন ডলার এবং একই অর্থবছরের জুলাই থেকে মে এই সময়ের কৌশলগত রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার। অর্জিত আয় ছিল ৪৭ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। মানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম। নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি যত কমই হোক না কেন সেটা ভালো লক্ষণ নয়। কারণ এটি যদি প্রবণতায় পরিণত হয়ে ক্রমাগত হতে থাকে তাহলে এই চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে। 

অন্যদিকে ইতিবাচক প্রবণতার ক্ষেত্রে হার কম হলেও সেটা স্বস্তিদায়ক। 

সমস্যা হলো, যেসব অনুঘটকের কারণে বিগত অর্থবছরে নেতিবাচক প্রবণতা বা প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়েছে সেসব অনুঘটক এখনো বিদ্যমান। বিশেষ করে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ ও জ্বালানি তেলের মূল্য। যদিও ডলারের দামের ক্ষেত্রে একটি ভালো লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়েছে। ডলারের দাম যে গতিতে বেড়েছে প্রায় তার কাছাকাছি গতিতে কমেছে। যদিও তা আর আগের জায়গায় বা তার কাছাকাছি নেই। 

ডলারের দাম রপ্তানি আয়ের অঙ্কে একটি প্রভাব ফেললেও আমদানি বিবেচনা করলে এতে খুব লাভবান হওয়া যায় না। কারণ আমাদের দেশ থেকে আমরা যেসব প্রধান পণ্য–সেবা রপ্তানি করি সেগুলোকে রূপায়ণ করার জন্য আবার আমদানি নির্ভরতা রয়েছে। তখন কিন্তু কাঁচামাল, প্রযুক্তি ও মেশিনারিজ আমদানিতে বড় অঙ্ক বেরিয়ে যায়। 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) এক হিসাব মতে, গত ২০২২–২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে সময়ের মধ্যে মাত্র ১৬টি পণ্যের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২৫টি পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে। 

রপ্তানি বাড়া ১৬ খাতের কয়েকটির চিত্র এ রকম—নিট পোশাক ২৩২৭৮ দশমিক ১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৯২ শতাংশ, ওভেন পোশাক ১৯৩৫২ মিলিয়ন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ, প্লাস্টিক দ্রব্য ১৯০ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন ডলার সঙ্গে প্রবৃদ্ধি ৩৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ, টুপি ৪১৮ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ২৭ দশমিক ০৯ শতাংশ, কাগজ ও কাগজ পণ্য ২০৯ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন ডলার এবং এতে প্রবৃদ্ধি ১২৯ দশমিক ২১ শতাংশ, ইলেকট্রিক পণ্য ১১৫ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলার আর প্রবৃদ্ধি দেখা যায় ৪৮ দশমিক ০৯ শতাংশ, জুতা (চামড়া ব্যতীত) রপ্তানি ৪৩৩ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন ডলার ও প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২১ শতাংশ, গুঁড়া মসলা রপ্তানি হয়েছে ৩৮ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলারের এবং প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ, চামড়াজাত পণ্য ৩৬১ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন ডলার আর এর প্রবৃদ্ধি ১৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ, সিরামিক পণ্য বিদেশ গেছে ৩৯ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ডলারের, বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

উইগস ও মানুষের চুলের মতো পণ্য একটা ভালো অঙ্ক যোগ করেছে, যা ছিল ১১৩ দশমিক ১২ মিলিয়ন ডলারের প্রবৃদ্ধিও বেশ ভালো— ১৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ, জীবন্ত মাছ অনেক বেশি নয়— ১২ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার তবে প্রবৃদ্ধি ভালো— ১১৫ দশমিক ৩১ শতাংশ, এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে নির্দেশ করছে। 

সিমেন্ট ১২ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ৪৩ দশমিক ৯১ শতাংশ, জাহাজ ৫ দশমিক ১৭ মিলিয়ন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ২১৮৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, রাসায়নিক পণ্য ৩৯ মিলিয়ন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। (সূত্র: ইপিবি প্রতিবেদন) 

এখানে আমরা দেখতে পাই বড় অঙ্কের রপ্তানি খাতগুলোতে প্রবৃদ্ধি স্বাভাবিক কমবেশি ১০ শতাংশের কাছে। প্লাস্টিক দ্রব্য, টুপি, ইলেকট্রিক পণ্য, জীবন্ত মাছ ও জাহাজে প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো। যদিও জাহাজ ও জীবন্ত মাছের ক্ষেত্রে পরিমাণ কম হওয়াতে বেশি প্রবৃদ্ধি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। গোটা হিসাবটাতে এটা বোঝা যায় যে, এই খাতগুলোতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। 

অন্যদিকে রপ্তানি কমে যাওয়া ২৫টি খাতের মধ্যে রয়েছে— স্পেশাল টেক্সটাইল, শাকসবজি, পেট্রোলিয়াম বাই প্রোডাক্টস, ওষুধ, ফলমূল, হস্তশিল্প, ফার্নিচার, কার্পেট, চিংড়ি, রাবার, নিট ফেব্রিকস, বাইসাইকেল, তামার তার, কৌশল যন্ত্রাংশ, শুকনো খাবার, জুট ইয়ার্ন ও টোয়াইন, কাঁকড়া, টেরি টাওয়েলস, হোম টেক্সটাইল, কাঁচাপাট, চা, জুট সক্স ও ব্যাগ, চামড়ার জুতা, চামড়া, গলফ সফট ইত্যাদি। 

সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি কমেছে ফলমূলে— ৮১ শতাংশ, যার মূল্য ছিল দশমিক ৯৮ মিলিয়ন ডলার। শাকসবজির বাজার ফলের চেয়ে ভালো এবং বড় হলেও এখানে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৩৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যার মূল্য ছিল ৫৮ দশমিক ০৩ মিলিয়ন ডলার। এর পরিমাণ এবং হার দুটোই নেতিবাচক। এই বিষয়ে কারণ অনুসন্ধান প্রয়োজন। যদি আমরা মান নিশ্চিত না করার কারণে পিছিয়ে পড়ি সেটা যেমন একটি সমস্যা, আমাদের যদি উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত না হয় সেটাও ভাবার বিষয়। যদিও এই আইটেমটা রপ্তানির চেয়ে আমদানিই বেশি করি। বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও মানগত সমস্যার কারণে আমাদের ফল কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বিদেশে যায় না। দেশীয় ফলের বিদেশে বাজারের ব্যাপারও রয়েছে। আমাদের ফলের মূল ভোক্তা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। 

হস্তশিল্পের রপ্তানি কমেছে ৩২ দশমিক ১৪ শতাংশ, চিংড়ির রপ্তানি কমেছে ২৪ দশমিক ২৩ শতাংশ, পাট ইয়ার্ন ও টোয়াইন কমেছে ৩০ শতাংশ— এগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য খারাপ খবর নিয়ে এসেছে। যদিও এর মধ্যে চিংড়ি খাদ্যপণ্য হওয়া সত্ত্বেও চিংড়ির রপ্তানির পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে জানা গেছে যে, আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আর এর কারণ হচ্ছে ঘেরে যেসব উপকরণ ও খাবার ব্যবহার করা হয় সেগুলোর নিম্নমান। তাই এই বিষয়ে এখন সরকারের তদারকির প্রশ্ন আসে। আসে মান নিশ্চিতকরণ ও খামারিদের পাশে দাঁড়ানোর। 

সরকার ভেনামি আমদানির অনুমতি দিলেও ভেনামি চিংড়ি উৎপাদনের জন্য যে পর্যাপ্ত খামারের অনুমোদন দরকার সেটা পাওয়া যায়নি। এ ধরনের সিদ্ধান্তের সমন্বয়হীনতা আমাদের খুব পুরোনো। এর থেকে আমরা এখনো বের হতে পারিনি। এই একই অর্থবছরে এ রকম অনেকগুলো সমস্যা দেখা দিয়েছে এর ফলে কিছু সুবিধা সরকার থেকে পাওয়া গেলেও সেখানে অন্য সুবিধার জন্য সেগুলো ব্যবহার করা যায় না। যেমন মেনমেইড ফাইবার তৈরির অনুমতি মিলেছে কিন্তু এর জন্য যে যন্ত্র ক্রয় করা দরকার সেগুলোর শুল্ক কমানো বা প্রত্যাহার করা হয়নি। 

হোম টেক্সটাইল রপ্তানি কমেছে ৩০ দশমিক ১৪ শতাংশ, এর পরিমাণ ছিল ১০২৪ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন ডলার, নিট ফেব্রিকস কমেছে ৩৪ শতাংশ এবং এর পরিমাণ ছিল ১৩৬ মিলিয়ন ডলার, প্রকৌশল যন্ত্রাংশ কমেছে ৪৪ শতাংশ, এর পরিমাণ ছিল ১১৮ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন ডলার। এগুলো শিল্পপণ্য বলে এসব খাতে শিল্পখাতে নেতিবাচক চাপ পড়বে বৈকি। 

সরকার এরই মধ্যে আগামী অর্থবছরের রপ্তানি চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করেছে এবং খাত ভিত্তিক ও সার্বিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে কাজ করছে। সরকারের লক্ষ্য আগামী ২০২৫ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করা। যা দেশকে ২০২৬ সালের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে সাহায্য করবে। সে অনুপাতে ২০২৩–২৪ সালে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা হওয়া উচিত ৮০ বিলিয়ন ডলার এবং তা অর্জিত হওয়া জরুরি তাহলে পূর্ববর্তী বছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তুলনামূলক সহজ হবে। 

এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হয় প্রথমত বর্তমান খাতগুলোর প্রবৃদ্ধি দ্বিতীয়ত নতুন নতুন খাতের সৃষ্টি করা।

এখানে সফটওয়্যার খাতের চিত্রটি আসেনি, এই খাতকে আরও শক্তিশালী করা উচিত। সরকারের রেমিট্যান্স আয় বাড়ানোর জন্য বিদেশ গমনের বাধা অপসারণ করে প্রক্রিয়া সহজ করা প্রয়োজন। আমাদের ওষুধ, ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বাজার প্রসারিত করতে হবে। 

ওষুধ, সিমেন্ট, প্লাস্টিক পণ্য, বিস্কুট, শুকনো খাবার, ঢেউটিন ও জাহাজের মতো খাতগুলোকে আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত করা যায়। সফটওয়্যার খাতের ক্ষেত্রে এরই মধ্যে সব ধরনের সফটওয়্যার রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ ডিউটির বিষয়টি অপসারণের দাবি জানানো হয়েছে। সফটওয়্যার তৈরি করতে যেসব সফটওয়্যার লাগে সেগুলোর ডিউটি না কমালে এই খাত একটি বড় ধাক্কা খেতে পারে। 

ক্রসবর্ডার ই–কমার্সের জন্য ভিন্নতর নীতিমালা না হলে এই খাতে উন্নয়ন হবে না। এতে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসে তা খুব নগণ্য হলেও এই খাতের ৭৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কিন্তু কমেছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে এই খাতের উদ্যোক্তারা দেশে নানাবিধ সমস্যার কারণে অন্যত্র বিশেষ করে দুবাইতে তাঁদের ব্যবসা স্থানান্তর করা শুরু করেছেন। 

সম্প্রতি সাদা ইঁদুর রপ্তানির বিষয়ে অনুমতির একটি দাবি উঠেছে। আমার মনে হয় যথাযথ প্রক্রিয়ায় এটি করলে নতুন একটি রপ্তানি খাত হতে পারে। এটির উৎপাদন খরচ কম আর শীতপ্রধান দেশের চেয়ে আমাদের দেশে উৎপাদন হয় বেশি। অল্প জায়গাতেই খামার গড়ে তোলা সম্ভব। তাই এই বিষয়টিতে সরকারের নজর দেওয়া উচিত। 

বর্তমান বছরে মোটের ওপর ১০ শতাংশের মতো লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৭২ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। অনেক খাতের উদ্যোক্তারা হাঁসফাঁস করছেন। অনেকে বিদ্যুৎ ঘাটতির কথা বলছেন। তাঁরা বলছেন, এটা অব্যাহত থাকলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। আবার দেখা যাবে, ডলারের দাম বাড়ার কারণে সেখানে হিসাবের ফেরে কিছু অগ্রগতি সূচক আকারে আসবে। তাই সব মিলিয়ে অসম্ভব নয় মোটেও। তবে সঠিক নীতিমালার অভাবে এবারও ক্রসবর্ডার ই–কমার্স থেকে কোনো ভালো স্কোর দেখা যাচ্ছে না। 

বৈশ্বিক পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতে পারে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সঙ্গে ইতিবাচক দিকও রয়েছে। যেমন, আরএমজির ক্ষেত্রে আমরা যেসব পণ্য রপ্তানি করি তা বেসিক বা প্রয়োজনীয় ফলে অর্থনীতির মন্দাভাব এতে খুব প্রভাব ফেলে না। আবার দেখা যায় মন্দাভাবের কারণে কখনো কখনো বিক্রেতাকে কম উৎপাদন মূল্যের কারণে বাংলাদেশকে বেছে নিতে হয়। কিন্তু আমাদের রপ্তানি পণ্যের প্রবাহ খাতওয়ারি আরও মজবুত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। 

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে— শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুলনার এক গোলমেলে ব্যাপার

সম্পাদকীয়
খুলনার এক গোলমেলে ব্যাপার

খুলনার ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে। এনসিপির এক শ্রমিকনেতাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলিটি তাঁর বাঁ কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত। গুলি লাগার পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। কোনো গুপ্তঘাতক নেতাদের টার্গেট করে হত্যা পরিকল্পনায় নেমেছে কি না, সে রকম ভাবনারও জন্ম হয়। অনেকে কানের পাশ দিয়ে গুলি বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সদ্য প্রয়াত ইনকিলাব মঞ্চ নেতা ওসমান হাদিকে করা গুলির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন। কিন্তু পুলিশ যখন তাদের তদন্ত শুরু করল, তখন দেখা গেল, এ এক রহস্যজনক ব্যাপার! এই ঘটনার সঙ্গে মদ, নারী, ইয়াবাসহ অনেক কিছুই জড়িত বলে ধারণা পুলিশের।

গোলমেলে বলার একটা কারণ হলো, যেহেতু গুলির আঘাত এসেছে এনসিপি নেতার ওপর, তাই কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই রাজনৈতিক নেতারা দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছিলেন। এনসিপির খুলনা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী এই গুলির ঘটনার জন্য সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বসলেন। তিনি বললেন, মোতালেব গাড়ি থেকে নামার পর তাঁকে টেনেহিঁচড়ে একটি চায়ের দোকানে নিয়ে মারধর করার পর গুলি করা হয়। এনসিপির খুলনা মহানগরের সংগঠক বললেন, বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আর এ সবই সন্ত্রাসী গ্রুপ আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট।

বর্তমান বাস্তবতায় যেকোনো ঘটনাতেই ‘কেষ্টা ব্যাটা’কে খোঁজা কতটা যৌক্তিক, সে বিষয়ে কোনো প্রশ্ন কেন কোনো সচেতন রাজনৈতিক কর্মীর মাথায় আসবে না, সেটা বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগ দৃশ্যপটে আছে কি নেই, দলটি খুলনায় কাজির কিতাবের গরু কি না, সে বিষয়ে এনসিপির কারও মনে কোনো সন্দেহ জাগবে না কেন? আওয়ামী লীগ আমলে যেমন সব দোষ বিএনপি এবং জামায়াতকে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকত সরকার, তেমনি এখন যেকোনো অঘটন ঘটলেই বলা নেই কওয়া নেই, আওয়ামী লীগের দিকে ছুটে যায় সন্দেহের তির। মুশকিল হলো, সত্যিকারের ঘটনা উদ্‌ঘাটিত না হলে সাধারণ মানুষও একসময় দোষারোপের রাজনীতির মর্মকথা বুঝে যায়। তখন তাদের বেকুব ভেবে বিভ্রান্ত করা যায় না।

এই গোলমেলে ব্যাপারে পুলিশ কী বলছে? পুলিশ একটা কাজের কাজ করেছে। রাজনীতিবিদেরা যখন আওয়ামী লীগের ওপর দোষ দিয়ে ঘটনাটিকে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন পুলিশ খোঁজ নিয়েছে সিসিটিভির। আর তাতেই এই গোলমেলে ঘটনার কুয়াশা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। ফুটেজে দেখা গেল, কোনো চায়ের দোকান থেকে নয়, মোতালেব বের হচ্ছেন একটি বাড়ি থেকে। তাঁর কানে রয়েছে হাত। অর্থাৎ গুলিটি লেগেছে ওই বাড়িতেই। কেএমপির উপপুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, রোববার দিবাগত রাতে মোতালেব শিকদার এখানে এসেছিলেন এবং এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হন। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে আবার এক তরুণীর সংশ্লিষ্টতা আছে। তাঁকেও ধরেছে পুলিশ।

এ ব্যাপারে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। অসামাজিক কর্মকাণ্ডকে যেন রাজনৈতিক রং লাগাতে দেওয়া না হয়, সেদিকে নজর রাখা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে— শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এভাবে চলতে থাকলে কি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে

অরুণ কর্মকার
দেশে জননিরাপত্তা পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক। ছবি: আজকের পত্রিকা
দেশে জননিরাপত্তা পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারে সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংস হামলা করেছে, তার সূত্র ধরেই শুরু করতে হচ্ছে। ঘটনার পূর্বাপর সবাই এখন জানেন। তাই সংক্ষেপে শুধু একটি বিষয় উল্লেখ করব। হামলার আলামত স্পষ্ট হয়ে ওঠার পরই প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পায়নি। বরং প্রথম আলো অফিসের আশপাশে আগে থেকেই রুটিন দায়িত্ব হিসেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যেসব সদস্য অবস্থান করছিলেন, তাঁরাও সরে যান। আর ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম তো প্রকাশ্য সভায়ই বলেছেন, প্রথম আলো অফিসে হামলা শুরুর পরই তিনি সরকারের সব সংস্থা ও ব্যক্তির কাছে তাঁর প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চেয়েও পাননি। তিনি আরও বলেছেন, দেশে মতপ্রকাশ তো দূরের কথা, বেঁচে থাকার অধিকারের ব্যাপার এসে গেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর অধিকাংশের সঙ্গে প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের সম্পর্ক কারও অবিদিত নয়। সরকারের কাজকর্মে পত্রিকা দুটির সমর্থন এবং গঠনমূলক সমালোচনার কথাও সবার জানা। তারপরও তাদেরই যখন এহেন অসহায় অবস্থা, তখন অন্য সবার ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা যে কী, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সে পরিস্থিতি এককথায় বোঝাতে গেলে বলতে হয়, দেশে জননিরাপত্তা পরিস্থিতি একেবারেই নাজুক। এই পরিস্থিতিতে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা, গলা কেটে-গুলি করে খুন এবং ছায়ানট-উদীচীর মতো প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, আগুন লাগানোর মতো সহিংস কর্মকাণ্ড আকছার চলতে পারছে। বিশিষ্ট সম্পাদক নূরুল কবীরের মতো জনপ্রিয়, পরিচিত ব্যক্তিরাও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।

এসব ঘটনার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে আছে। সরকার নিশ্চয়ই দেশের শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষের পাশেও আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকার প্রথম আলো-ডেইলি স্টারের পাশে যেমন আছে, তেমনিভাবে জনগণের পাশে থাকলে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব হবে কি না। বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করার জন্য আরও দুজনের দুটি প্রণিধানযোগ্য বক্তব্য উল্লেখ করা প্রয়োজন।

এক. জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা প্রসঙ্গে বলেছেন, এই হামলার সঙ্গে সরকারের একটা অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। নাহিদ ইসলাম শুধু জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান সংগঠকদের অন্যতমই নন, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাও ছিলেন। এই সরকারের তরিকা এবং এর ভেতর-বাইরে তিনি ভালোই জানেন। কাজেই তাঁর এই কথাটি অন্য পাঁচটা রাজনৈতিক বক্তৃতার মতো নয়। এখন কথা হলো, সরকারের ভেতরেই যখন এমন শক্তি ঘাপটি মেরে আছে, তখন তারা তো ইচ্ছা করলে নির্বাচনেও বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। এবং সেটা তারা করবে বলেও বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। কেননা, তাদের ভিন্ন অ্যাজেন্ডা রয়েছে।

দুই. ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলামের একটি বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সে অনুযায়ী তিনি প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার প্রসঙ্গে বলেছেন, কারওয়ান বাজারের যে পরিস্থিতি ছিল, সেখানে পুলিশ অ্যাকশনে গেলে গুলি হতো, দুই-চারজন মারা যেতেন। এরপর পুলিশের ওপর পাল্টা আক্রমণ হতো। সে কারণেই তাঁরা সেখানে অ্যাকশনে যেতে পারেননি। এর ফলে কোনো মানুষ হতাহত হয়নি। এই পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্য অত্যন্ত যৌক্তিক। তা ছাড়া এই বক্তব্যের মধ্যে কয়েকটি গূঢ় বার্তা লুকিয়ে আছে।

প্রথমত, পুলিশ এমন কোনো পরিস্থিতিতে অ্যাকশনে যাবে না যেখানে তাদেরকে গুলি করতে হতে পারে। যেখানে তাদের গুলিতে মানুষ মারা যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এমনকি, সেখানে যদি আক্রমণকারীদের হাতে আক্রান্ত মানুষের মারা যাওয়ার এবং কোনো মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবু পুলিশ অ্যাকশনে যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের পুরো সময়কাল আমরা এই সত্য অনুধাবন করছি। পুলিশ তথা সরকারের এই ভূমিকার কারণ হতে পারে এই যে জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশে এমন একটি বয়ান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, মানুষকে গুলি করে কেবল স্বৈরাচার। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তো স্বৈরাচার হতে পারে না। তারা চুপচাপ সাধারণ মানুষের নিগ্রহ, খুন, লুটপাট এসব দেখতে পারে। কাজেই পুলিশ কীভাবে অ্যাকশনে যাবে! কীভাবে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হামলার হাত থেকে বাঁচতে সরকারের কাছে সাহায্য চেয়ে পাবেন! এসব ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবখানা বোধ হয় এই যে, আমরা আর কদিন। এই কটা দিন কোনোক্রমে চোখমুখ বন্ধ করে কাটিয়ে যেতে পারলেই হয়। কিন্তু ইতিহাসের দায় শোধের যে বিষয় সবার ক্ষেত্রেই থেকে যায়, সে কথাও কি ভোলা উচিত!

তৃতীয়ত, পুলিশ অ্যাকশনে গেলে পুলিশের ওপরও আক্রমণ হতো। এই আশঙ্কাটাও শতভাগ সত্য। অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার ফলে সন্ত্রাসীরা যে পুলিশ-মিলিটারি কিছুই মানে না, সে তো আমরা বারবার দেখছি। তাহলে পুলিশ কেন আক্রান্ত মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেরা বিপদে পড়বে। আর শেষ পর্যন্ত তো পুলিশের ওপরই দোষ চাপানো হয়। কাজেই এহেন পরিস্থিতিতে গা বাঁচিয়ে চলাই শ্রেয়। কিন্তু কথা হলো, এই পরিস্থিতি চলতে দিয়ে নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যাবে তো? নির্বাচনের সময়ও তো কোনো কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী একই কাজ করতে পারে। এমনকি, নির্বাচন বিঘ্নিত করার জন্য নতুন কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সংগঠিতও হতে পারে। তখন গুলি করার নির্দেশ দিলেও তো অন্তর্বর্তী সরকার স্বৈরাচারের কাতারে পড়ে যাবে। আর তখনো যে পুলিশ সরকারের বা নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে অ্যাকশনে যাবে, তারই-বা নিশ্চয়তা কী?

কোনো নিশ্চয়তা নেই বলেই নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গত মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়েছিলেন সব রিটার্নিং কর্মকর্তা বা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপার (এসপি), সব রেঞ্জের ডিআইজি, বিভাগীয় কমিশনার, আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা। সেখানে তাঁরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাচন অফিস, সব নির্বাচন কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্র—সকল পর্যায়ে নিরাপত্তা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাঁদের ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়ও বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছেন। অনেক জেলা-উপজেলায় নির্বাচন অফিসগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করে নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ দেন তাঁরা। কিছু এলাকার ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সামগ্রী নিয়ে যেতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) দায়িত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তো আছেই। প্রকৃতপক্ষে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো মানুষই নিজেকে আর নিরাপদ ভাবতে পারছে না। সবাই নিজের এবং পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে মানুষের পাশে থাকবে, কীভাবেই-বা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করবে, সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে— শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্বের গুরুত্ব

হাসান আলী 
প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব হলো জীবনের শেষ প্রদীপ। ছবি: এআই
প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব হলো জীবনের শেষ প্রদীপ। ছবি: এআই

মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পর্কের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে প্রবীণ বয়সে সেই গুরুত্ব আরও গভীর ও সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে। কর্মজীবন শেষ, সন্তানেরা নিজেদের জীবনে ব্যস্ত, শরীর ক্রমেই দুর্বল—এই বাস্তবতায় প্রবীণের জীবনে যে সম্পর্কটি নিঃশর্তভাবে পাশে থাকে, তা হলো বন্ধুত্ব। পরিবার দায়িত্বে আবদ্ধ, আত্মীয়রা দূরত্বে—কিন্তু বন্ধু থাকে অনুভবের কাছাকাছি।

প্রবীণ বয়সে সবচেয়ে বড় শত্রু একাকিত্ব। ঘরের ভেতর থেকেও মানুষ একা হয়ে যেতে পারে। কথা বলার মানুষ থাকে না, দিনের অভিজ্ঞতা ভাগ করার কেউ থাকে না। এই নীরবতার মধ্যে একজন বন্ধুর ফোনকল, বিকেলের আড্ডা বা একসঙ্গে হাঁটতে বের হওয়া—সবই হয়ে ওঠে বেঁচে থাকার অক্সিজেন। বন্ধু মানে কেবল হাসি নয়, বন্ধু মানে নিজের মতো করে কথা বলার স্বাধীনতা।

পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক সময় দায়িত্ব আর প্রত্যাশায় বাঁধা। সন্তানেরা বাবা-মাকে ভালোবাসে ঠিকই, কিন্তু সব কথা বলা যায় না। নিজের ভয়, হতাশা, মৃত্যুচিন্তা কিংবা ব্যর্থতার অনুভূতি—এই বিষয়গুলো সন্তানদের সামনে প্রকাশ করতে প্রবীণেরা সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু একজন বন্ধু সেই জায়গা, যেখানে কোনো বিচার নেই, আছে কেবল শোনা আর বোঝা। বন্ধুর কাছে কান্নাও নিরাপদ।

প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব মানে স্মৃতির ভাগাভাগি। একই সময়ের মানুষ, একই সমাজ, একই লড়াই—এই মিলগুলো বন্ধুত্বকে গভীর করে তোলে। একসঙ্গে বসে পুরোনো দিনের গল্প করলে কেবল স্মৃতি নয়, নিজেদের অস্তিত্বও নতুন করে আবিষ্কার হয়। ‘আমি ছিলাম, আমি করেছি’—এই অনুভূতি আত্মসম্মান জাগিয়ে তোলে, যা বার্ধক্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

মনোবিজ্ঞানের মতে, প্রবীণ বয়সে ভালো বন্ধুত্ব ডিমেনশিয়া ও বিষণ্নতার ঝুঁকি কমায়। কারণ, কথা বলা, হাসা, মতবিনিময়—সবই মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। একজন প্রবীণ যখন বন্ধুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, তখন তাঁর মনও সচল থাকে, জীবনের প্রতি আগ্রহ কমে না। বন্ধুত্ব মানে শুধু সময় কাটানো নয়, মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করা।

বন্ধু না থাকলে প্রবীণেরা অনেক সময় নিজেদের বোঝা মনে করেন। মনে হয় তাঁরা শুধু অন্যের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে সেই ধারণা ভেঙে যায়। তখন তাঁরা আবার একজন মানুষ—যার গল্প আছে, মতামত আছে, রসিকতা আছে। বন্ধুত্ব প্রবীণকে ‘রোগী’ থেকে আবার ‘মানুষ’ বানিয়ে তোলে।

আমাদের সমাজে প্রবীণদের বন্ধুত্বকে অনেক সময় তুচ্ছ করা হয়। বলা হয়, ‘এই বয়সে আবার বন্ধু!’ অথচ এই বয়সেই বন্ধুত্ব সবচেয়ে বেশি দরকার। কারণ, তখন জীবনের অধিকাংশ দরজা বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধুত্বই একমাত্র জানালা দিয়ে আলো ঢোকে। প্রবীণদের বন্ধুত্ব মানে জীবনের শেষ অধ্যায়ে মানবিক উষ্ণতা।

বিশেষ করে যাঁরা একা থাকেন, জীবনসঙ্গী হারিয়েছেন, সন্তানেরা দূরে—তাঁদের জন্য বন্ধুই পরিবার। প্রয়োজনে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, বাজার করা বা শুধু পাশে বসে থাকা—বন্ধু এই কাজগুলো নীরবে করে যায়। কোনো রক্তের সম্পর্ক না হয়েও বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে রক্তের চেয়েও ঘনিষ্ঠ।

প্রবীণদের বন্ধুত্ব তরুণদের জন্যও একটি শিক্ষা। এখানে প্রতিযোগিতা নেই, আছে সহমর্মিতা। এখানে লাভ-ক্ষতি নেই, আছে সময় দেওয়া। প্রবীণ বন্ধুরা একে অপরকে ব্যবহার করেন না, তাঁরা একে অপরকে থাকতে দেন। এই থাকার মধ্যেই নিহিত আছে মানবিকতার সৌন্দর্য।

আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন—যাঁদের ভালো বন্ধু আছে, তাঁদের চোখে আলোর ঝিলিক থাকে। শরীর ভাঙলেও মন ভাঙে না। আর যাঁরা একা, তাঁদের চোখে ক্লান্তি। তাই প্রবীণকল্যাণ মানে শুধু ওষুধ বা খাবার নয়—বন্ধুত্বের পরিবেশ তৈরি করাও।

শেষ পর্যন্ত বলা যায়, প্রবীণ জীবনে বন্ধুত্ব হলো জীবনের শেষ প্রদীপ। এই প্রদীপ জ্বলে থাকলে অন্ধকার ভয়ের নয়। বয়স বাড়ে, শরীর ঝরে—কিন্তু বন্ধুত্ব থাকলে মন সব সময় তরুণ থাকে। আর তরুণ মনই তো আসল জীবন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে— শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সংকট, সম্ভাবনার সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ

সাদিয়া সুলতানা রিমি
সংকট, সম্ভাবনার  সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ আজ এক গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে, যে সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক ও নৈতিকও। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যেখানে যুক্তি ও সংযম প্রায়ই আবেগের কাছে হার মানছে। এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ও সমাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে শোক, ক্ষোভ ও হতাশার মধ্যেও শান্ত থাকা যায়, কীভাবে উত্তেজনার মুহূর্তে দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করা যায়। ইতিহাস আমাদের বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে, সংকটের সময়ে ভুল সিদ্ধান্ত শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।

এই অস্থির সময়ের কেন্দ্রে রয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সামনের সারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড। আততায়ীর গুলিতে আহত হয়ে টানা সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই শেষে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো জাতির জন্যই গভীর শোকের কারণ। তিনি ছিলেন সেই কণ্ঠ, যে কণ্ঠ অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের স্বপ্ন দেখিয়েছিল; তরুণদের মাঝে জাগিয়ে তুলেছিল আশা, সাহস ও প্রতিবাদের ভাষা। সেই কণ্ঠ আজ নীরব। আর এই নীরবতা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক যাত্রার ওপর এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে।

একজন নাগরিকের প্রাণহানি কখনোই ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ হতে পারে না। বিশেষত, যখন সেই নাগরিক একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের প্রতীক হয়ে ওঠেন। হাদির হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা। এই হত্যার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের ন্যূনতম কর্তব্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতির উদ্দেশে ভাষণ, রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা এবং পরিবারটির দায়িত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত এই দায়বদ্ধতারই একটি বার্তা দেয়। তবে ঘোষণা ও আশ্বাসের বাইরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—আইনের শাসনের বাস্তব প্রয়োগ। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভাঙতে না পারলে এমন হত্যাকাণ্ড ভবিষ্যতেও পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।

কিন্তু শোক ও ক্ষোভের প্রকাশ যখন সহিংসতায় রূপ নেয়, তখন তা নিজ উদ্দেশ্যকেই নস্যাৎ করে। হাদির হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে যে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয় এবং দুটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান মানে কেবল ইট-পাথরের ভবন নয়; এগুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ভিন্নমতের সহাবস্থান এবং সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরের প্রতীক। এসব প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে গণতন্ত্রের শিরায় আঘাত করা। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান যা-ই থাকুক না কেন সহিংসতা কখনোই ন্যায্যতা পায় না।

বিশেষ করে, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করার ঘটনা আমাদের আরও সতর্ক করে। আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর সোচ্চার ভূমিকা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ। মতভিন্নতার কারণে কাউকে শত্রু বানিয়ে ফেলার এই প্রবণতা সমাজকে বিভক্ত করে, যুক্তিকে হত্যা করে এবং শেষ পর্যন্ত সহিংসতার পথ প্রশস্ত করে। আজ যদি আমরা যুক্তির বদলে লেবেলিংকে বেছে নিই, তবে কাল আর কেউই নিরাপদ থাকবে না।

এই অস্থিরতার পেছনে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য বড় ভূমিকা রাখছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাইহীন তথ্য, আবেগতাড়িত পোস্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার মুহূর্তের মধ্যে জনমনে ক্ষোভ ছড়িয়ে দিচ্ছে। ডিজিটাল যুগে দায়িত্বশীল নাগরিকত্বের মানে শুধু ভোট দেওয়া নয়; বরং তথ্য যাচাই করা, সংযত ভাষা ব্যবহার করা এবং উসকানিমূলক কনটেন্ট থেকে বিরত থাকা। এক একটি ভুয়া পোস্ট এক একটি আগুনের স্ফুলিঙ্গ—যা পুরো সমাজকে দগ্ধ করতে পারে।

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জনও সমান জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। পুলিশি তৎপরতা যদি একপক্ষীয় বা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে তা উত্তেজনা কমানোর বদলে বাড়িয়ে দেবে। তাই শক্তি প্রয়োগের পাশাপাশি সংলাপ, ব্যাখ্যা ও আস্থার রাজনীতি জরুরি।

একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। উসকানি নয়, সংলাপ; প্রতিহিংসা নয়, সহনশীলতা—এই নীতিই হতে হবে পথনির্দেশক। দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। এই সময়ে প্রতিটি দলের ধৈর্য ধরার পরীক্ষা চলছে। নেতারা যদি দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, কর্মীদের সংযত না করেন, তাহলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহুকাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।

নির্বাচন শুধু ক্ষমতা বদলের প্রক্রিয়া নয়; এটি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার প্রতীক। অস্থিতিশীলতা সেই ধারাবাহিকতাকে ভেঙে দেয়। শরিফ ওসমান হাদির স্বপ্ন ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, যেখানে মানুষের অধিকার নিশ্চিত হবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে অক্ষুণ্ন। তাঁর স্মৃতির প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা জানাতে হলে সহিংসতা নয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই শক্তিশালী করতে হবে।

বিশেষ করে তরুণসমাজের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদির কণ্ঠ যে তরুণদের অনুপ্রাণিত করেছিল, আজ তাদেরই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই দর্শনই পারে দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করতে। আবেগের বশে নেওয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত একটি প্রজন্মের স্বপ্ন ধ্বংস করতে পারে।

বাংলাদেশ আজ সংকট, সম্ভাবনা ও সংগ্রামের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে রয়েছে শোক, ক্ষোভ ও অনিশ্চয়তা; অন্যদিকে রয়েছে গণতান্ত্রিক উত্তরণের সম্ভাবনা। কোন পথ বেছে নেওয়া হবে, তা নির্ভর করছে আমাদের সামষ্টিক প্রজ্ঞা ও সংযমের ওপর। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয় বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। যদি আমরা এই শক্তিকে ধারণ করতে পারি, তবে হাদির রক্ত বৃথা যাবে না; বরং তা হয়ে উঠবে একটি ন্যায়ভিত্তিক, সহনশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথে এক কঠিন কিন্তু আশাব্যঞ্জক সংগ্রামের প্রেরণা।

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

নির্বাচনী সমঝোতা: এখনো হিসাব মেলাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ গুদামে তালাবদ্ধ কম্বল

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে— শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

নীলফামারীর ৪টি আসন: চমকে দিতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত