জাহাঙ্গীর আলম শোভন

লজিস্টিক শব্দটির যথাযথ ও প্রচলিত বাংলা না থাকার কারণে আমরা ‘জাতীয় লজিস্টিক নীতিমালা’ কিংবা ‘জাতীয় লজিস্টিক পলিসি’ উভয়ক্ষেত্রে ‘লজিস্টিক’ শব্দটি রাখছি। এর মানে এই নয় যে, বাংলাভাষা খুব দীন আর এর যথার্থ বাংলা শব্দ নেই। মূলত লজিস্টিক, রসদ, রসদপনা বা রসদ ব্যবস্থাপনা— বাংলাতে যা–ই বলি না কেন— এটি ছাড়া আমাদের জীবনের কোনো কাজই চলছে না। সব কাজই রসদ সম্পর্কিত এবং রসদ ব্যবস্থাপনার মধ্যে পড়ে।
কিন্তু যখন এটিকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মপন্থা হিসেবে পরিকল্পনায় আনতে চাই, তখন আমরা অগ্রসরদের কাছ থেকে জ্ঞান নিই। আর এ কারণে সেখান থেকে আমরা শব্দ গ্রহণ করি এবং ক্ষেত্রে বিশেষে সেখানে যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তার অনুরুপ শব্দ খুঁজতে চেষ্টা করি। কিন্তু একটি শব্দের অর্থের পরিধি হয়তো অতো বেশি থাকে না, বিধায় কখনো সেটিকে আইন ও বিধি দ্বারা নতুন সংজ্ঞা দিয়ে সমৃদ্ধ করা হয়, কখনো সেটিকে সহায়ক শব্দ জুড়ে দিয়ে অর্থপূর্ণ করা হয়।
তাই লজিস্টিক পলিসি হয়তো রসদ নীতিমালা হতে পারে আবার নাও হতে পারে। নামের ক্ষেত্রে কোনো নতুনত্ব না এলেও এর নীতিগুলোর মধ্যে এমন কিছু থাকা প্রয়োজন যাতে এ সংক্রান্ত নিয়মতান্ত্রিক সমস্যা এবং ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত সমস্যা দূর হয়ে যায়। এতে করে একদিকে অভ্যন্তরীণ সাপ্লাইচেইন আরও গতিশীল ও উন্নত হবে এবং বৈদেশিক বাণিজ্য সহজ ও প্রবৃদ্ধিমুখী হবে। বর্তমানে নীতিমালা প্রণয়নে তোড়জোড় চলতে থাকা এই বিষয়ে থেকে এমনটাই প্রত্যাশা করছে বেসরকারি খাতের অংশীজনেরা।
লজিস্টিক পলিসি বা রসদ নীতিমালা তৈরি ডাক বিভাগ কাজ শুরু করে। দেখা যায়, এখানে সরকারের অর্ধশতাধিক এজেন্সি কোনো কোনোভাবে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এমনকি বেসরকারি সব খাতই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। অন্তত সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে শতাধিক খাত। তাই সবার সমন্বয়ে একটি কার্যকর ও সময় উপযোগী রসদ নীতিমালা প্রণয়ন সময়ের চাহিদা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এরই আলোকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি কয়েকটি উপকমিটি নিয়ে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে। এতে প্রায় ২১টি উপখাত চিহ্নিত করে প্রতিটি উপখাতের সমস্যা, সমাধান ও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে পরামর্শ কর্মশালার মাধ্যমে বিষয়গুলোকে একীভূত করা হচ্ছে। বলা বাহুল্য ই–কমার্স লজিস্টিকও এই খাতের একটি উপখাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তবে ক্রস বর্ডার ই–কমার্স সাপ্লাইচেইনও এর আলাদা একটি অংশ হওয়া উচিত।
প্রথমবারের মতো অভ্যন্তরীণ ও আন্তজাতিক ইস্যু মিলিয়ে একটি সমন্বিত স্মার্ট রসদ নীতিমালা বা ইন্ট্রিগেটেড স্মার্ট লজিস্টিক পলিসি তৈরির প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো— সব উপখাতের সমস্যাগুলোর সমন্বিত সমাধানের পথ নির্দেশ করা।
এসব ক্ষেত্রে অতীতের ভালো অভিজ্ঞতার পাশাপাশি খারাপ অভিজ্ঞতাও রয়েছে। উদারহণস্বরুপ বলা যায়, ডিজিটাল কমার্স পলিসি ২০১৮ প্রণয়নের সময় ক্রস বর্ডার ই–কমার্সের বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যায়।
সাধারণ ব্যবসার ক্ষেত্রে যেমন দেশীয় ব্যবসা নীতি এবং বৈদেশিক ব্যবসা নীতি আলাদা রয়েছে। ই–কমার্সের ক্ষেত্রেও তা যুক্তিযুক্ত। আজ পর্যন্ত ক্রসবর্ডার ই–কমার্স পলিসি তৈরি হয়নি। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ই–ক্যাব (ই–কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) আন্তসীমান্ত ই–বাণিজ্য নীতিমালা হিসেবে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার পথে রয়েছে।
আরও উদাহরণ হলো, ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১’ নিয়ে। এখানে যেসব নীতি রয়েছে তা অভ্যন্তরীণ ই–কমার্সের জন্য প্রযোজ্য এবং ক্রস বর্ডার ই–কমার্সের জন্য বাস্তবসম্মত নয়। কিন্তু এখানে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়নি বিধায়। এখানকার অগ্রিম গ্রহণের ১০ শতাংশের নীতি ক্রস–বর্ডার এবং ক্রস বর্ডার খাতের উপখাত ‘প্রিন্ট অন ডিমান্ড’–এর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হচ্ছে। ফলে ক্রস বর্ডার ই–কমার্সের উদ্যোক্তারা তাঁদের ব্যবসার গতি হারাচ্ছে।
নীতি–কৌশল প্রণয়নের জন্য এই বিষয়গুলোর সমন্বয় জরুরি। রসদ বা লজিস্টিক পলিসির দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো, দেশের প্রচলিত সাপ্লাইচেইনকে উন্নত করা, ডিজিটাইজ করা এবং এ সংক্রান্ত পরিবর্তনের জন্য কোনো রূপ ছন্দহীনতা তৈরি না হতে দেওয়া।
অতীতে এ ধরনের নজির রয়েছে। ই–কমার্স খাতে বাসায় বাসায় পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার জন্য করোনা মহামারির সময় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সুযোগ ও সহযোগিতা অবারিত করেছে। কিন্তু দেখা গেল, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এখনো মোটর বাইকের পেছনে ডেলিভারি বাক্স যুক্ত করা কিংবা ডেলিভারি বাক্সযুক্ত মোটরসাইকেলের অনুমোদন দেয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত মামলার ভয় আর পুলিশের দেওয়া মামলার খরচ—এমন আরও অদৃশ্য খরচ হিসাব করে রাস্তায় চলছে এই গাড়িগুলো। এতে একদিকে আইন অমান্য করছে কেউ, কেউ উপরি কামাইয়ের সুযোগ নিচ্ছে। আর উদ্যোক্তারা ডেলিভারি সেবায় অন্তত ১৫–২০ শতাংশ বাড়তি খরচ গুনছে।
কখনো কখনো ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কিছু অগ্রসর কর্মপরিকল্পনা এসব নীতিমালায় যুক্ত থাকে। এটা সার্বিকভাবে ইতিবাচক হলেও, এগুলো যখন অন্য কোনো আইন ও বিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় তখন এর থেকে সুফল পাওয়া যায় না অথবা বেসরকারি খাত নানা সমস্যার মুখে পড়ে।
২০০৬ সালের শ্রম আইনের ৫৬ / (২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘উপরিউক্ত বিধানের হানি না করিয়া, প্রত্যেক কর্মকক্ষে কর্মরত প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য অন্ততঃ ৯.৫ কিউবিক মিটার পরিমাণ জায়গার ব্যবস্থা করিতে হইবে।’ এখানে দেখা যায় বর্তমানে ডিজিটাল ও বিস্তৃত কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে এই বিধানটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
প্রথমত ই–কমার্স ও লজিস্টিক সেক্টরে অনেকে বাসায় বসে সেবা দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে সিস্টেম উন্নয়ন, কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও কলসেন্টার সেবা। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকের সংখ্যানুপাতে অফিসে জায়গা রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত নয়। আবার ডেলিভারি সেবাদাতা ও কুরিয়ার কোম্পানির কর্মসস্থল মূলত রাস্তায় বা পিকিং সেন্টারে। তাঁরা সকালে পণ্য নিয়ে বের হয়ে যান, বিকেলে পেমেন্ট নিয়ে ফিরে আসেন। কেউ কেউ আবার অফিসেও আসেন না। মার্চেন্ট থেকে পণ্য নিয়ে যান, ডেলিভারির পর ব্যাংকে টাকা জমা দেন।
এ অবস্থায়, যে ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার ডেলিভারিম্যান কাজ করেন, সেটিকে যদি শ্রমিকের সংখ্যা অনুসারে অফিসের আকার দিতে হয় তাহলে সেটা বাস্তবসম্মত হবে না। এ ধরনের আইন ও বিধিগুলো ডিজিটাল বা ই–বিজনেসের ক্ষেত্রে শিথিল ও সংশোধন করা জরুরি। বিষয়টি যদি লজিস্টিক পলিসিতে যুক্ত থাকে তাহলে হয়তো সহজে কার্যকর হবে।
কারণ বেসরকারি খাত থেকে বছরের পর বছর ধরনা দিয়েও একটি আইন সংশোধন করা খুব কঠিন হয়ে যায়। যার জ্বলন্ত উদাহরণ ট্রেড লাইসেন্স অ্যাক্ট ২০১৬। আইনটি পাস হওয়ার পর প্রায় ৩০০টি নতুন ব্যবসার প্রস্তাব এসেছে ২০২০ সাল পর্যন্ত। এর মধ্যে প্রায় ২০০টি নতুন ব্যবসা বা পেশা ট্রেড লাইসেন্স অ্যাক্টের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একাধিক অংশীজন সভার পরও বিষয়টি ৭ বছরেও কার্যকর হয়নি। ই–কমার্সের মতো এরকম অনেক নতুন বৃত্তি রয়েছে যা অন্য কোনো ব্যবসার নামে চলছে।
কোনো নীতি প্রণীত হলে সরকার এবং বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে সেটি বাস্তবায়ন করা হয়। এ জন্য প্রতিবছর নীতিমালা মূল্যায়নও প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রে এটা করা হয় না। আবার এটি করতে গেলে জটিলতা রয়েছে। বর্তমানে নীতি কৌশলের সঙ্গে অ্যাকশন প্ল্যান ও লক্ষ্যমাত্রা যুক্ত করে দেওয়া হয় যাতে এটি কার্যকর হয়। এই কৌশলটি বেশ কাজ করছে। এটিও অনেক নীতিমালার ক্ষেত্রে হয়নি। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে বেসরকারি খাত থেকে প্রস্তাব হলো, নীতিমালার সঙ্গে যেমন অ্যাকশন প্ল্যান যুক্ত থাকে এবং লক্ষ্যমাত্রা যেন মূল্যায়নযোগ্য হয়। তাতে প্রতিবছর এটি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কত শতাংশ অর্জিত হয়েছে তা নির্ণয় করা যায়।
যেমন, যদি এমন একটি লক্ষ্যমাত্রা থাকে যে, ডেলিভারিম্যানদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে অথবা ট্রেড অ্যান্ড ফরোয়ার্ড এজেন্টদের একটি প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা হবে। তাহলে এতে যেন সংখ্যা, পরিমাণ ও পরিসীমা উল্লেখ থাকে। তাহলে বছর শেষে কত শতাংশ অর্জিত হয়েছে তা নির্ণয় করা যাবে।
এই মুহূর্তে সবপক্ষের সমন্বয়ে একটি কার্যকর রসদ নীতিমালা বা লজিস্টিক পলিসি তৈরিতে সরকারের আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত। তাহলে এখন শুধু খেয়াল করা উচিত, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যেন গুরুত্বপূর্ণ কোনো কিছু বাদ না পড়ে এবং খাতগুলোর সমন্বয় সাধিত হয়। যদিও পরবর্তীতে সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। তথাপি কোনো কাজ প্রথমবারই যতটা সম্ভব ভালোভাবে করা উচিত।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই–ক্যাব)

লজিস্টিক শব্দটির যথাযথ ও প্রচলিত বাংলা না থাকার কারণে আমরা ‘জাতীয় লজিস্টিক নীতিমালা’ কিংবা ‘জাতীয় লজিস্টিক পলিসি’ উভয়ক্ষেত্রে ‘লজিস্টিক’ শব্দটি রাখছি। এর মানে এই নয় যে, বাংলাভাষা খুব দীন আর এর যথার্থ বাংলা শব্দ নেই। মূলত লজিস্টিক, রসদ, রসদপনা বা রসদ ব্যবস্থাপনা— বাংলাতে যা–ই বলি না কেন— এটি ছাড়া আমাদের জীবনের কোনো কাজই চলছে না। সব কাজই রসদ সম্পর্কিত এবং রসদ ব্যবস্থাপনার মধ্যে পড়ে।
কিন্তু যখন এটিকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মপন্থা হিসেবে পরিকল্পনায় আনতে চাই, তখন আমরা অগ্রসরদের কাছ থেকে জ্ঞান নিই। আর এ কারণে সেখান থেকে আমরা শব্দ গ্রহণ করি এবং ক্ষেত্রে বিশেষে সেখানে যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তার অনুরুপ শব্দ খুঁজতে চেষ্টা করি। কিন্তু একটি শব্দের অর্থের পরিধি হয়তো অতো বেশি থাকে না, বিধায় কখনো সেটিকে আইন ও বিধি দ্বারা নতুন সংজ্ঞা দিয়ে সমৃদ্ধ করা হয়, কখনো সেটিকে সহায়ক শব্দ জুড়ে দিয়ে অর্থপূর্ণ করা হয়।
তাই লজিস্টিক পলিসি হয়তো রসদ নীতিমালা হতে পারে আবার নাও হতে পারে। নামের ক্ষেত্রে কোনো নতুনত্ব না এলেও এর নীতিগুলোর মধ্যে এমন কিছু থাকা প্রয়োজন যাতে এ সংক্রান্ত নিয়মতান্ত্রিক সমস্যা এবং ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত সমস্যা দূর হয়ে যায়। এতে করে একদিকে অভ্যন্তরীণ সাপ্লাইচেইন আরও গতিশীল ও উন্নত হবে এবং বৈদেশিক বাণিজ্য সহজ ও প্রবৃদ্ধিমুখী হবে। বর্তমানে নীতিমালা প্রণয়নে তোড়জোড় চলতে থাকা এই বিষয়ে থেকে এমনটাই প্রত্যাশা করছে বেসরকারি খাতের অংশীজনেরা।
লজিস্টিক পলিসি বা রসদ নীতিমালা তৈরি ডাক বিভাগ কাজ শুরু করে। দেখা যায়, এখানে সরকারের অর্ধশতাধিক এজেন্সি কোনো কোনোভাবে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এমনকি বেসরকারি সব খাতই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। অন্তত সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে শতাধিক খাত। তাই সবার সমন্বয়ে একটি কার্যকর ও সময় উপযোগী রসদ নীতিমালা প্রণয়ন সময়ের চাহিদা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এরই আলোকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি কয়েকটি উপকমিটি নিয়ে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে। এতে প্রায় ২১টি উপখাত চিহ্নিত করে প্রতিটি উপখাতের সমস্যা, সমাধান ও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে পরামর্শ কর্মশালার মাধ্যমে বিষয়গুলোকে একীভূত করা হচ্ছে। বলা বাহুল্য ই–কমার্স লজিস্টিকও এই খাতের একটি উপখাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তবে ক্রস বর্ডার ই–কমার্স সাপ্লাইচেইনও এর আলাদা একটি অংশ হওয়া উচিত।
প্রথমবারের মতো অভ্যন্তরীণ ও আন্তজাতিক ইস্যু মিলিয়ে একটি সমন্বিত স্মার্ট রসদ নীতিমালা বা ইন্ট্রিগেটেড স্মার্ট লজিস্টিক পলিসি তৈরির প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো— সব উপখাতের সমস্যাগুলোর সমন্বিত সমাধানের পথ নির্দেশ করা।
এসব ক্ষেত্রে অতীতের ভালো অভিজ্ঞতার পাশাপাশি খারাপ অভিজ্ঞতাও রয়েছে। উদারহণস্বরুপ বলা যায়, ডিজিটাল কমার্স পলিসি ২০১৮ প্রণয়নের সময় ক্রস বর্ডার ই–কমার্সের বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যায়।
সাধারণ ব্যবসার ক্ষেত্রে যেমন দেশীয় ব্যবসা নীতি এবং বৈদেশিক ব্যবসা নীতি আলাদা রয়েছে। ই–কমার্সের ক্ষেত্রেও তা যুক্তিযুক্ত। আজ পর্যন্ত ক্রসবর্ডার ই–কমার্স পলিসি তৈরি হয়নি। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ই–ক্যাব (ই–কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) আন্তসীমান্ত ই–বাণিজ্য নীতিমালা হিসেবে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার পথে রয়েছে।
আরও উদাহরণ হলো, ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১’ নিয়ে। এখানে যেসব নীতি রয়েছে তা অভ্যন্তরীণ ই–কমার্সের জন্য প্রযোজ্য এবং ক্রস বর্ডার ই–কমার্সের জন্য বাস্তবসম্মত নয়। কিন্তু এখানে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়নি বিধায়। এখানকার অগ্রিম গ্রহণের ১০ শতাংশের নীতি ক্রস–বর্ডার এবং ক্রস বর্ডার খাতের উপখাত ‘প্রিন্ট অন ডিমান্ড’–এর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হচ্ছে। ফলে ক্রস বর্ডার ই–কমার্সের উদ্যোক্তারা তাঁদের ব্যবসার গতি হারাচ্ছে।
নীতি–কৌশল প্রণয়নের জন্য এই বিষয়গুলোর সমন্বয় জরুরি। রসদ বা লজিস্টিক পলিসির দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো, দেশের প্রচলিত সাপ্লাইচেইনকে উন্নত করা, ডিজিটাইজ করা এবং এ সংক্রান্ত পরিবর্তনের জন্য কোনো রূপ ছন্দহীনতা তৈরি না হতে দেওয়া।
অতীতে এ ধরনের নজির রয়েছে। ই–কমার্স খাতে বাসায় বাসায় পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার জন্য করোনা মহামারির সময় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সুযোগ ও সহযোগিতা অবারিত করেছে। কিন্তু দেখা গেল, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এখনো মোটর বাইকের পেছনে ডেলিভারি বাক্স যুক্ত করা কিংবা ডেলিভারি বাক্সযুক্ত মোটরসাইকেলের অনুমোদন দেয়নি। ফলে প্রতিনিয়ত মামলার ভয় আর পুলিশের দেওয়া মামলার খরচ—এমন আরও অদৃশ্য খরচ হিসাব করে রাস্তায় চলছে এই গাড়িগুলো। এতে একদিকে আইন অমান্য করছে কেউ, কেউ উপরি কামাইয়ের সুযোগ নিচ্ছে। আর উদ্যোক্তারা ডেলিভারি সেবায় অন্তত ১৫–২০ শতাংশ বাড়তি খরচ গুনছে।
কখনো কখনো ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কিছু অগ্রসর কর্মপরিকল্পনা এসব নীতিমালায় যুক্ত থাকে। এটা সার্বিকভাবে ইতিবাচক হলেও, এগুলো যখন অন্য কোনো আইন ও বিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় তখন এর থেকে সুফল পাওয়া যায় না অথবা বেসরকারি খাত নানা সমস্যার মুখে পড়ে।
২০০৬ সালের শ্রম আইনের ৫৬ / (২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘উপরিউক্ত বিধানের হানি না করিয়া, প্রত্যেক কর্মকক্ষে কর্মরত প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য অন্ততঃ ৯.৫ কিউবিক মিটার পরিমাণ জায়গার ব্যবস্থা করিতে হইবে।’ এখানে দেখা যায় বর্তমানে ডিজিটাল ও বিস্তৃত কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে এই বিধানটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
প্রথমত ই–কমার্স ও লজিস্টিক সেক্টরে অনেকে বাসায় বসে সেবা দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে সিস্টেম উন্নয়ন, কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও কলসেন্টার সেবা। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকের সংখ্যানুপাতে অফিসে জায়গা রয়েছে কি না তা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত নয়। আবার ডেলিভারি সেবাদাতা ও কুরিয়ার কোম্পানির কর্মসস্থল মূলত রাস্তায় বা পিকিং সেন্টারে। তাঁরা সকালে পণ্য নিয়ে বের হয়ে যান, বিকেলে পেমেন্ট নিয়ে ফিরে আসেন। কেউ কেউ আবার অফিসেও আসেন না। মার্চেন্ট থেকে পণ্য নিয়ে যান, ডেলিভারির পর ব্যাংকে টাকা জমা দেন।
এ অবস্থায়, যে ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার ডেলিভারিম্যান কাজ করেন, সেটিকে যদি শ্রমিকের সংখ্যা অনুসারে অফিসের আকার দিতে হয় তাহলে সেটা বাস্তবসম্মত হবে না। এ ধরনের আইন ও বিধিগুলো ডিজিটাল বা ই–বিজনেসের ক্ষেত্রে শিথিল ও সংশোধন করা জরুরি। বিষয়টি যদি লজিস্টিক পলিসিতে যুক্ত থাকে তাহলে হয়তো সহজে কার্যকর হবে।
কারণ বেসরকারি খাত থেকে বছরের পর বছর ধরনা দিয়েও একটি আইন সংশোধন করা খুব কঠিন হয়ে যায়। যার জ্বলন্ত উদাহরণ ট্রেড লাইসেন্স অ্যাক্ট ২০১৬। আইনটি পাস হওয়ার পর প্রায় ৩০০টি নতুন ব্যবসার প্রস্তাব এসেছে ২০২০ সাল পর্যন্ত। এর মধ্যে প্রায় ২০০টি নতুন ব্যবসা বা পেশা ট্রেড লাইসেন্স অ্যাক্টের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একাধিক অংশীজন সভার পরও বিষয়টি ৭ বছরেও কার্যকর হয়নি। ই–কমার্সের মতো এরকম অনেক নতুন বৃত্তি রয়েছে যা অন্য কোনো ব্যবসার নামে চলছে।
কোনো নীতি প্রণীত হলে সরকার এবং বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে সেটি বাস্তবায়ন করা হয়। এ জন্য প্রতিবছর নীতিমালা মূল্যায়নও প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রে এটা করা হয় না। আবার এটি করতে গেলে জটিলতা রয়েছে। বর্তমানে নীতি কৌশলের সঙ্গে অ্যাকশন প্ল্যান ও লক্ষ্যমাত্রা যুক্ত করে দেওয়া হয় যাতে এটি কার্যকর হয়। এই কৌশলটি বেশ কাজ করছে। এটিও অনেক নীতিমালার ক্ষেত্রে হয়নি। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে বেসরকারি খাত থেকে প্রস্তাব হলো, নীতিমালার সঙ্গে যেমন অ্যাকশন প্ল্যান যুক্ত থাকে এবং লক্ষ্যমাত্রা যেন মূল্যায়নযোগ্য হয়। তাতে প্রতিবছর এটি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কত শতাংশ অর্জিত হয়েছে তা নির্ণয় করা যায়।
যেমন, যদি এমন একটি লক্ষ্যমাত্রা থাকে যে, ডেলিভারিম্যানদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে অথবা ট্রেড অ্যান্ড ফরোয়ার্ড এজেন্টদের একটি প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা হবে। তাহলে এতে যেন সংখ্যা, পরিমাণ ও পরিসীমা উল্লেখ থাকে। তাহলে বছর শেষে কত শতাংশ অর্জিত হয়েছে তা নির্ণয় করা যাবে।
এই মুহূর্তে সবপক্ষের সমন্বয়ে একটি কার্যকর রসদ নীতিমালা বা লজিস্টিক পলিসি তৈরিতে সরকারের আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত। তাহলে এখন শুধু খেয়াল করা উচিত, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যেন গুরুত্বপূর্ণ কোনো কিছু বাদ না পড়ে এবং খাতগুলোর সমন্বয় সাধিত হয়। যদিও পরবর্তীতে সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। তথাপি কোনো কাজ প্রথমবারই যতটা সম্ভব ভালোভাবে করা উচিত।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই–ক্যাব)

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১৬ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান...
১৬ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা...
১৬ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা। ইতিহাস বলে, উত্তেজনার মুহূর্তে ভুল সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন নাগরিকের প্রাণহানি মানেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্য।
তবে এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের পাশাপাশি যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে দুটি গণমাধ্যম ও একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান—যা-ই থাকুক না কেন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সমাজের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আঘাত করা। এসব কর্মকাণ্ড কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। কেন তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করা হলো, তা বোধগম্য নয়।
এই পরিস্থিতিতে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই ছাড়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই সময়ে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় হলো—সংযত ভাষা ব্যবহার করা, তথ্য যাচাই করা এবং উসকানিমূলক পোস্ট বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জন করাও জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে—উসকানি নয়, সংলাপ ও সহনশীলতার পথ বেছে নিতে হবে।
দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। এ সময় প্রতিটি দলকেই ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত থাকতে হবে। শান্ত রাখতে হবে দলের কর্মীদের। নেতারা যদি এ সময় দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অরাজকতার মোকাবিলা করতে পারে, তাহলেই কেবল সামনে আশার আলো দেখা যাবে। বিশেষ করে তরুণসমাজকে মনে রাখতে হবে—দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই পথেই দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয়। বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা। ইতিহাস বলে, উত্তেজনার মুহূর্তে ভুল সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন নাগরিকের প্রাণহানি মানেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্য।
তবে এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের পাশাপাশি যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে দুটি গণমাধ্যম ও একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান—যা-ই থাকুক না কেন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সমাজের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আঘাত করা। এসব কর্মকাণ্ড কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। কেন তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করা হলো, তা বোধগম্য নয়।
এই পরিস্থিতিতে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই ছাড়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই সময়ে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় হলো—সংযত ভাষা ব্যবহার করা, তথ্য যাচাই করা এবং উসকানিমূলক পোস্ট বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জন করাও জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে—উসকানি নয়, সংলাপ ও সহনশীলতার পথ বেছে নিতে হবে।
দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। এ সময় প্রতিটি দলকেই ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত থাকতে হবে। শান্ত রাখতে হবে দলের কর্মীদের। নেতারা যদি এ সময় দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অরাজকতার মোকাবিলা করতে পারে, তাহলেই কেবল সামনে আশার আলো দেখা যাবে। বিশেষ করে তরুণসমাজকে মনে রাখতে হবে—দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই পথেই দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয়। বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

লজিস্টিক শব্দটির যথাযথ ও প্রচলিত বাংলা না থাকার কারণে আমরা ‘জাতীয় লজিস্টিক নীতিমালা’ কিংবা ‘জাতীয় লজিস্টিক পলিসি’ উভয়ক্ষেত্রে ‘লজিস্টিক’ শব্দটি রাখছি। এর মানে এই নয় যে, বাংলাভাষা খুব দীন আর এর যথার্থ বাংলা শব্দ নেই। মূলত লজিস্টিক, রসদ, রসদপনা বা রসদ ব্যবস্থাপনা— বাংলাতে যা–ই বলি না কেন— এটি ছাড়া আমা
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান...
১৬ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা...
১৬ ঘণ্টা আগেঅরুণ কর্মকার

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে। এই শঙ্কা ও সংশয় শুধু শহর-নগরবাসী মানুষের মধ্যে নয়, গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যেও সমানভাবে বিরাজ করছে। গত সপ্তাহে পাঁচ দিন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কয়েকটি জেলা-উপজেলা শহর ও বেশ কিছু গ্রামাঞ্চলে গিয়েছি। পরিচিত-অপরিচিত অনেক মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাতে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে কোনো মানুষ স্বস্তিতে নেই।
মফস্বল শহর এবং গ্রামগঞ্জের মানুষের এই অস্বস্তি যে কেবল রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে, তা নয়। আয়-উপার্জনে গভীর মন্দা থেকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নিরাপত্তার বিষয়ও এই অস্বস্তির কারণ। শত্রুতা করে মামলায় ফাঁসানো, ব্যক্তিগত শত্রুতাকে রাজনৈতিক রং দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া—এগুলো বন্ধ হয়নি। আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে আছে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। তার মধ্যে আছে নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা, যা আমাদের দেশের যেকোনো নির্বাচনকালীন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে। এবারও পরিস্থিতি অন্য রকম হওয়ার কোনো লক্ষণ সাধারণ মানুষ দেখছে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অতীতকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার মানুষকে অব্যাহতভাবে আশ্বস্ত করে যাচ্ছে।
ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান নগরকেন্দ্রিক এবং রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বকেন্দ্রিক পরিস্থিতির দিকে তাকালেও ভিন্ন কোনো চিত্র দেখা যায় না। সম্প্রতি জাতীয় পার্টি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে আগামী নির্বাচনটি একটি ‘পাতানো’ নির্বাচন হতে পারে। দলটির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারি অনেক রকম আশঙ্কার কথা বলেছেন। যেমন ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারে। ভোটের নির্ধারিত সময়ের পরে ভোট হতে পারে। মিডিয়া ভোট হতে পারে। কোনো আশঙ্কাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’ যদিও তাঁরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন দলের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে তাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন বলেও বলে রেখেছেন। এর চেয়েও ভয়ানক এবং স্পর্শকাতর যে বিষয়টি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন তা হলো, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, গ্রহণযোগ্য না হয়, ক্রেডিবল না হয়, রিফ্লেকটিভ না হয় তাহলে ভবিষ্যতে দেশে গৃহযুদ্ধ হতে পারে।
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির এসব বক্তব্য হয়তো রাজনৈতিক বিবেচনায় বিবেচিত হবে। কারণ, তাদের ওপর স্বৈরাচারের দোসর ট্যাগ লাগানো রয়েছে। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের একেবারে কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে যাদের অবস্থান, তারাও তো স্বস্তিতে নেই! তাদের মধ্যেও তো কেউ কেউ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যেমন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে দলের প্রার্থী ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ গত বুধবার নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত হয়ে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করে বলেছেন, পুলিশ তাঁকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে না।
আরেকজন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেহা কবির সিগমাও নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই বুধবারই। তিনি নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলেছেন, ‘আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন পক্ষপাতমুক্ত, সুষ্ঠু ও সবার জন্য নির্বিঘ্ন করা অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের অঙ্গীকার ও প্রত্যয়। কিন্তু এসব প্রশ্নবিদ্ধ ও বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে অবিলম্বে জড়িত ও দায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার আবেদন করছি।’ পরে সাংবাদিকদের রেহা কবির বলেন, ‘পুলিশ ভীতি সৃষ্টি করছে। আমার কর্মী ও আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই ইসি ও প্রশাসনের কাছে সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছি।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর হামলা, হত্যাকাণ্ড চলছে। নির্বাচনের আগে আগে এসব ঘটনা জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সরকার অবশ্য এসব ঘটনার জন্য কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগকেই দায়ী করছে। কিন্তু তাদের এসব কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার কার্যকর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে বলে মনে হয় না। যদি তা-ই হয় এবং আওয়ামী লীগ এ রকম কর্মকাণ্ড চালাতেই থাকে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে হয়তো স্বাভাবিক—সে ক্ষেত্রে সরকার নির্বাচনটা কীভাবে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবে, সেই প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আরেকটি বিষয় বোধ হয় সরকারের ভেবে দেখা দরকার। তা হলো কোনো কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী পর্দার অন্তরালে থেকে সরকারের নাকের ডগায় বসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো অপচেষ্টা চালাচ্ছে কি না। ইনকিলাব মঞ্চের শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর এই প্রশ্নটি আরও গভীরভাবে সামনে এসেছে। কোনো পেশাদার শুটার কাউকে হত্যা করার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দিনের পর দিন প্রকাশ্যে সেই ব্যক্তির আশপাশে থেকে নিজের চেহারা দেখাবে কি না, প্রশ্ন সেটি। অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এমনটা সাধারণত হয় না। কারণ সে ক্ষেত্রে শুটার নিজেই নিজেকে চিহ্নিত করার কাজটি সহজ করে দেয়। কিন্তু ওসমান হাদির ক্ষেত্রে সেই ঘটনাটাই ঘটেছে।
তা ছাড়া, ওসমান হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর (অবশ্য তার আগেও বেশ কয়েকবার) দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য ভারতের জন্য স্পর্শকাতরতা সৃষ্টি করেছে। ফলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সৃষ্ট তীব্র টানাপোড়েন আমরা কয়েক দিন ধরে দেখেছি। নির্বাচনপূর্ব সময়ে দুই দেশের মধ্যে আন্তসীমান্ত উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে, কূটনৈতিক টানাপোড়েন বৃদ্ধি পেলে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে জনমনের অস্বস্তি বাড়াবে কি না, সেটাও বিবেচনার বিষয়। কেননা, আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান।
অবশ্য যেকোনো অজুহাতে নির্বাচন বিঘ্নিত করার কোনো প্রয়াস যে নেই, তা-ও মানুষ বিশ্বাস করে না। কারণ, মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মতো নানা কর্মকাণ্ডও দেখতে পাচ্ছে। তবে সবার জানা এবং বোঝা দরকার যে আগামী নির্বাচন বিঘ্নিত হলে দেশ অনেক বড় ধরনের অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই সংযত আচরণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় আমাদের বড় কোনো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সেই পরিস্থিতি বোধ হয় আমাদের কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। দেশের জন্য তো নয়ই।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে। এই শঙ্কা ও সংশয় শুধু শহর-নগরবাসী মানুষের মধ্যে নয়, গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যেও সমানভাবে বিরাজ করছে। গত সপ্তাহে পাঁচ দিন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কয়েকটি জেলা-উপজেলা শহর ও বেশ কিছু গ্রামাঞ্চলে গিয়েছি। পরিচিত-অপরিচিত অনেক মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাতে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে কোনো মানুষ স্বস্তিতে নেই।
মফস্বল শহর এবং গ্রামগঞ্জের মানুষের এই অস্বস্তি যে কেবল রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে, তা নয়। আয়-উপার্জনে গভীর মন্দা থেকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নিরাপত্তার বিষয়ও এই অস্বস্তির কারণ। শত্রুতা করে মামলায় ফাঁসানো, ব্যক্তিগত শত্রুতাকে রাজনৈতিক রং দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া—এগুলো বন্ধ হয়নি। আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে আছে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। তার মধ্যে আছে নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা, যা আমাদের দেশের যেকোনো নির্বাচনকালীন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পড়ে। এবারও পরিস্থিতি অন্য রকম হওয়ার কোনো লক্ষণ সাধারণ মানুষ দেখছে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অতীতকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও তাদের আশঙ্কা। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার মানুষকে অব্যাহতভাবে আশ্বস্ত করে যাচ্ছে।
ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান নগরকেন্দ্রিক এবং রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বকেন্দ্রিক পরিস্থিতির দিকে তাকালেও ভিন্ন কোনো চিত্র দেখা যায় না। সম্প্রতি জাতীয় পার্টি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে আগামী নির্বাচনটি একটি ‘পাতানো’ নির্বাচন হতে পারে। দলটির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারি অনেক রকম আশঙ্কার কথা বলেছেন। যেমন ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হতে পারে। ভোটের নির্ধারিত সময়ের পরে ভোট হতে পারে। মিডিয়া ভোট হতে পারে। কোনো আশঙ্কাই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’ যদিও তাঁরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন দলের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে তাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন বলেও বলে রেখেছেন। এর চেয়েও ভয়ানক এবং স্পর্শকাতর যে বিষয়টি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন তা হলো, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, গ্রহণযোগ্য না হয়, ক্রেডিবল না হয়, রিফ্লেকটিভ না হয় তাহলে ভবিষ্যতে দেশে গৃহযুদ্ধ হতে পারে।
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির এসব বক্তব্য হয়তো রাজনৈতিক বিবেচনায় বিবেচিত হবে। কারণ, তাদের ওপর স্বৈরাচারের দোসর ট্যাগ লাগানো রয়েছে। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের একেবারে কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে যাদের অবস্থান, তারাও তো স্বস্তিতে নেই! তাদের মধ্যেও তো কেউ কেউ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। যেমন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে দলের প্রার্থী ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ গত বুধবার নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত হয়ে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করে বলেছেন, পুলিশ তাঁকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করছে না।
আরেকজন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেহা কবির সিগমাও নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই বুধবারই। তিনি নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া লিখিত অভিযোগে বলেছেন, ‘আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন পক্ষপাতমুক্ত, সুষ্ঠু ও সবার জন্য নির্বিঘ্ন করা অন্তর্বর্তী সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের অঙ্গীকার ও প্রত্যয়। কিন্তু এসব প্রশ্নবিদ্ধ ও বাধাগ্রস্ত করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে অবিলম্বে জড়িত ও দায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার আবেদন করছি।’ পরে সাংবাদিকদের রেহা কবির বলেন, ‘পুলিশ ভীতি সৃষ্টি করছে। আমার কর্মী ও আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই ইসি ও প্রশাসনের কাছে সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছি।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর হামলা, হত্যাকাণ্ড চলছে। নির্বাচনের আগে আগে এসব ঘটনা জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সরকার অবশ্য এসব ঘটনার জন্য কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগকেই দায়ী করছে। কিন্তু তাদের এসব কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার কার্যকর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে বলে মনে হয় না। যদি তা-ই হয় এবং আওয়ামী লীগ এ রকম কর্মকাণ্ড চালাতেই থাকে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে হয়তো স্বাভাবিক—সে ক্ষেত্রে সরকার নির্বাচনটা কীভাবে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবে, সেই প্রশ্ন মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আরেকটি বিষয় বোধ হয় সরকারের ভেবে দেখা দরকার। তা হলো কোনো কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী পর্দার অন্তরালে থেকে সরকারের নাকের ডগায় বসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির কোনো অপচেষ্টা চালাচ্ছে কি না। ইনকিলাব মঞ্চের শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর এই প্রশ্নটি আরও গভীরভাবে সামনে এসেছে। কোনো পেশাদার শুটার কাউকে হত্যা করার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে দিনের পর দিন প্রকাশ্যে সেই ব্যক্তির আশপাশে থেকে নিজের চেহারা দেখাবে কি না, প্রশ্ন সেটি। অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এমনটা সাধারণত হয় না। কারণ সে ক্ষেত্রে শুটার নিজেই নিজেকে চিহ্নিত করার কাজটি সহজ করে দেয়। কিন্তু ওসমান হাদির ক্ষেত্রে সেই ঘটনাটাই ঘটেছে।
তা ছাড়া, ওসমান হাদির ওপর প্রাণঘাতী হামলার পর (অবশ্য তার আগেও বেশ কয়েকবার) দেশের কোনো কোনো রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য ভারতের জন্য স্পর্শকাতরতা সৃষ্টি করেছে। ফলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সৃষ্ট তীব্র টানাপোড়েন আমরা কয়েক দিন ধরে দেখেছি। নির্বাচনপূর্ব সময়ে দুই দেশের মধ্যে আন্তসীমান্ত উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে, কূটনৈতিক টানাপোড়েন বৃদ্ধি পেলে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে জনমনের অস্বস্তি বাড়াবে কি না, সেটাও বিবেচনার বিষয়। কেননা, আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান।
অবশ্য যেকোনো অজুহাতে নির্বাচন বিঘ্নিত করার কোনো প্রয়াস যে নেই, তা-ও মানুষ বিশ্বাস করে না। কারণ, মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মতো নানা কর্মকাণ্ডও দেখতে পাচ্ছে। তবে সবার জানা এবং বোঝা দরকার যে আগামী নির্বাচন বিঘ্নিত হলে দেশ অনেক বড় ধরনের অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হতে পারে। তাই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই সংযত আচরণ করা প্রয়োজন। অন্যথায় আমাদের বড় কোনো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সেই পরিস্থিতি বোধ হয় আমাদের কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। দেশের জন্য তো নয়ই।

লজিস্টিক শব্দটির যথাযথ ও প্রচলিত বাংলা না থাকার কারণে আমরা ‘জাতীয় লজিস্টিক নীতিমালা’ কিংবা ‘জাতীয় লজিস্টিক পলিসি’ উভয়ক্ষেত্রে ‘লজিস্টিক’ শব্দটি রাখছি। এর মানে এই নয় যে, বাংলাভাষা খুব দীন আর এর যথার্থ বাংলা শব্দ নেই। মূলত লজিস্টিক, রসদ, রসদপনা বা রসদ ব্যবস্থাপনা— বাংলাতে যা–ই বলি না কেন— এটি ছাড়া আমা
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১৬ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান...
১৬ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা...
১৬ ঘণ্টা আগেএম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘ভয় পেয়ে ৫০ বছর বেঁচে থেকে লাভ নেই, যদি এই বেঁচে থাকা সমাজে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে না পারে।’
অবশেষে ওসমান হাদি সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা গেছেন। হাদিকে এভাবে হত্যা করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র দেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য একটি রেড অ্যালার্ট। তবে রাষ্ট্র ও সরকার জুলাই যোদ্ধা ও অকুতোভয় কণ্ঠস্বরগুলোকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে দেশটা গভীর সংকটে নিপতিত হতে বাধ্য।
বহু জল্পনা-কল্পনা-আলোচনার পর দেশ যখন নির্বাচনমুখী ট্রেনে, ঠিক তখন নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীকে আততায়ীরা নিশানা করল কেন? যার ফলে উত্তপ্ত পুরো দেশ। প্রশ্নের মুখে পড়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সন্দেহ নেই, উদ্ভূত পরিস্থিতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে এটি আসন্ন নির্বাচনের জন্য অশনিসংকেত হয়ে উঠতে পারে। নির্বাচন ইস্যুতে বিভিন্ন দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড পরিস্থিতি জটিল করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে হাদির ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য আরও শক্তিশালীরূপে ফিরে এসেছে জুলাই আন্দোলনের পর লুণ্ঠিত অস্ত্রের বিষয়টি। সে সময়ে এই অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা গেলে এখনকার উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি নাও হতে পারত বলে অনেকের ধারণা।
এখন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছে, নির্বাচন কি আদৌ হবে? নাকি নির্বাচন বানচালের অপতৎপরতা আরও জোরালো হয়ে উঠেছে?
এ ঘটনা নিঃসন্দেহে প্রার্থীদের আতঙ্কিত করে তুলছে। এই আতঙ্কের কারণেই বিজয় দিবসের দিন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী নিজেকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। ভয়ের ছায়া তাঁদের গ্রাস করছে। এরই মধ্যে হাদির ওপর আততায়ীর হামলার ঘটনা জনপ্রতিনিধি তো বটেই; জনমনেও একধরনের শঙ্কা তৈরি করেছে, যা ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তরায়। ফলে জনমনে স্বস্তি ফেরাতে এ পরিস্থিতির উন্নতি একমাত্র পথ।
শুধুই কি নির্বাচন বানচাল করা, নাকি এর পেছনে আরও বড় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে? নির্বাচন বানচাল হলে কার লাভ আর কার ক্ষতি? নির্বাচন বানচাল হলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে যাদের লাভ, হাদির ওপর হামলায় তাদের কোনো ইন্ধন রয়েছে কি না বা রাজনৈতিক বিভক্তির সুযোগ নিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ এই ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে কি না? বা দেশি-বিদেশি কোনো শক্তি চরম অস্থিরতা তৈরি করে তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করতে চায়?
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা বিরাজ করছে, তার সমাধান কী? কোনো কোনো মহল ভাবছে নির্বাচন ঘিরে দেশে সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও নাশকতার আশঙ্কাও আছে। তবে সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রাজধানীতে ৩৫২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। শুধু রাজধানীতেই নয়, ঢাকা বিভাগেও গড় হিসাব করলে গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খুন হয়েছে। এই খুনের হার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপের অভাব।
সবাইকে মনে রাখতে হবে, এই নির্বাচনটি বানচাল হয়ে গেলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে দেশ এখন যে সংকটে আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সংকট ঘনীভূত হবে। সুতরাং রাজনৈতিক আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি ভিন্ন হলেও এই মুহূর্তে ক্রিয়াশীল সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বারবার জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে, সেই ঐক্যে যে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে, তা নানা ঘটনায় স্পষ্ট। কিন্তু এখন অন্তত হাদির এই ঘটনার পরে সেই ফাটল দূর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যাশা, যথাযথ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অচিরেই উন্নতি ঘটবে। দূর হবে আস্থার সংকট। দেশ এগিয়ে যাবে একটি সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচনের দিকে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘ভয় পেয়ে ৫০ বছর বেঁচে থেকে লাভ নেই, যদি এই বেঁচে থাকা সমাজে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে না পারে।’
অবশেষে ওসমান হাদি সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা গেছেন। হাদিকে এভাবে হত্যা করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র দেশের সব রাজনৈতিক দলের জন্য একটি রেড অ্যালার্ট। তবে রাষ্ট্র ও সরকার জুলাই যোদ্ধা ও অকুতোভয় কণ্ঠস্বরগুলোকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে দেশটা গভীর সংকটে নিপতিত হতে বাধ্য।
বহু জল্পনা-কল্পনা-আলোচনার পর দেশ যখন নির্বাচনমুখী ট্রেনে, ঠিক তখন নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীকে আততায়ীরা নিশানা করল কেন? যার ফলে উত্তপ্ত পুরো দেশ। প্রশ্নের মুখে পড়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সন্দেহ নেই, উদ্ভূত পরিস্থিতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে এটি আসন্ন নির্বাচনের জন্য অশনিসংকেত হয়ে উঠতে পারে। নির্বাচন ইস্যুতে বিভিন্ন দলের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড পরিস্থিতি জটিল করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে হাদির ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য আরও শক্তিশালীরূপে ফিরে এসেছে জুলাই আন্দোলনের পর লুণ্ঠিত অস্ত্রের বিষয়টি। সে সময়ে এই অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা গেলে এখনকার উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি নাও হতে পারত বলে অনেকের ধারণা।
এখন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছে, নির্বাচন কি আদৌ হবে? নাকি নির্বাচন বানচালের অপতৎপরতা আরও জোরালো হয়ে উঠেছে?
এ ঘটনা নিঃসন্দেহে প্রার্থীদের আতঙ্কিত করে তুলছে। এই আতঙ্কের কারণেই বিজয় দিবসের দিন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী নিজেকে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। ভয়ের ছায়া তাঁদের গ্রাস করছে। এরই মধ্যে হাদির ওপর আততায়ীর হামলার ঘটনা জনপ্রতিনিধি তো বটেই; জনমনেও একধরনের শঙ্কা তৈরি করেছে, যা ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তরায়। ফলে জনমনে স্বস্তি ফেরাতে এ পরিস্থিতির উন্নতি একমাত্র পথ।
শুধুই কি নির্বাচন বানচাল করা, নাকি এর পেছনে আরও বড় কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে? নির্বাচন বানচাল হলে কার লাভ আর কার ক্ষতি? নির্বাচন বানচাল হলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে যাদের লাভ, হাদির ওপর হামলায় তাদের কোনো ইন্ধন রয়েছে কি না বা রাজনৈতিক বিভক্তির সুযোগ নিয়ে তৃতীয় কোনো পক্ষ এই ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে কি না? বা দেশি-বিদেশি কোনো শক্তি চরম অস্থিরতা তৈরি করে তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করতে চায়?
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা বিরাজ করছে, তার সমাধান কী? কোনো কোনো মহল ভাবছে নির্বাচন ঘিরে দেশে সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ও নাশকতার আশঙ্কাও আছে। তবে সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলের জন্য নিরাপত্তা প্রটোকল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রাজধানীতে ৩৫২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। শুধু রাজধানীতেই নয়, ঢাকা বিভাগেও গড় হিসাব করলে গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খুন হয়েছে। এই খুনের হার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, দেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপের অভাব।
সবাইকে মনে রাখতে হবে, এই নির্বাচনটি বানচাল হয়ে গেলে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য ঝুলে গেলে দেশ এখন যে সংকটে আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সংকট ঘনীভূত হবে। সুতরাং রাজনৈতিক আদর্শ, দর্শন ও কর্মসূচি ভিন্ন হলেও এই মুহূর্তে ক্রিয়াশীল সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বারবার জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে, সেই ঐক্যে যে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে, তা নানা ঘটনায় স্পষ্ট। কিন্তু এখন অন্তত হাদির এই ঘটনার পরে সেই ফাটল দূর করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রত্যাশা, যথাযথ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অচিরেই উন্নতি ঘটবে। দূর হবে আস্থার সংকট। দেশ এগিয়ে যাবে একটি সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর নির্বাচনের দিকে।

লজিস্টিক শব্দটির যথাযথ ও প্রচলিত বাংলা না থাকার কারণে আমরা ‘জাতীয় লজিস্টিক নীতিমালা’ কিংবা ‘জাতীয় লজিস্টিক পলিসি’ উভয়ক্ষেত্রে ‘লজিস্টিক’ শব্দটি রাখছি। এর মানে এই নয় যে, বাংলাভাষা খুব দীন আর এর যথার্থ বাংলা শব্দ নেই। মূলত লজিস্টিক, রসদ, রসদপনা বা রসদ ব্যবস্থাপনা— বাংলাতে যা–ই বলি না কেন— এটি ছাড়া আমা
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১৬ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা...
১৬ ঘণ্টা আগেড. মো. শফিকুল ইসলাম

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা এবং কর্মসংস্থানের সংকট—এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে অর্থনীতির ওপর এমন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে পরিসংখ্যান আর বাস্তবজীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে ব্যবধান ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। একদিকে কিছু সামষ্টিক সূচকে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জীবনে বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তা—এই দ্বৈত বাস্তবতা আজকের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সাম্প্রতিক প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ এই বাস্তবতাকে পরিসংখ্যানের আয়নায় তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে অর্থনীতিতে যে শ্লথগতি দেখা গিয়েছিল, তার প্রভাব এখনো পুরোপুরি কাটেনি। যদিও কিছু সূচকে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত রয়েছে, তবু সেই পুনরুদ্ধার কতটা টেকসই, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে আসে মাত্র ২ শতাংশে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাজারে আস্থার সংকট শিল্প ও সেবা খাতে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কৃষি খাতেও প্রবৃদ্ধি ছিল অত্যন্ত সীমিত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে শিল্প খাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও অর্থনীতিবিদদের মতে, এই প্রবৃদ্ধির পেছনে শক্ত ভিত নেই। কারণ, টেকসই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি বিনিয়োগ, যা এখনো দুর্বল। এখানে নতুন নির্বাচিত সরকার এলে, এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে অর্থনীতিকে সচল রাখার বিষয়ে। নির্বাচিত সরকার এলে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং অবস্থার পরিবর্তনও হবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার ১০ শতাংশে স্থির রেখেছে। এই সিদ্ধান্ত স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমাতে সহায়ক হলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পড়ছে বিনিয়োগে। উচ্চ সুদের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে এসেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। জুন ২০২৫ নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৭ শতাংশের কিছু বেশি, যা একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনকভাবে কম। তাই অর্থ উপদেষ্টাকে এখানে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
একই সময়ে সরকারি ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অর্থপ্রবাহ আরও সংকুচিত হয়েছে। ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় অর্থায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নতুন শিল্প স্থাপন, বিদ্যমান শিল্প সম্প্রসারণ কিংবা উদ্ভাবনী উদ্যোগ—সবকিছুই উচ্চ সুদের চাপে থমকে যাচ্ছে। বিনিয়োগ না হলে উৎপাদন বাড়ে না, আর উৎপাদন না বাড়লে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না—এই সরল অর্থনৈতিক সত্যটি আবারও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
শিল্প উৎপাদনের চিত্রও সেই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করছে। যদিও কিছু মাসে শিল্প উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, তবু সামগ্রিকভাবে এই গতি স্থায়ী নয়। উৎপাদনের ধারাবাহিকতা না থাকায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে সীমিত পরিসরে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে শ্রমবাজারে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা আনুমানিক ২৬-২৭ লাখের মধ্যে (২.৬১-২.৭৪ মিলিয়ন)। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ২৪ লাখ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার বেড়েছে প্রায় ৩ লাখের বেশি। বাস্তবে বেকারত্বের হার আরও অনেক বেশি বলে কেউ কেউ মনে করছেন। দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বেকারত্বের হার ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঠেকেছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে দেশের বেকারত্বের হার বেড়ে ৪.৬৩ শতাংশে পৌঁছেছে। শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সামগ্রিক বেকারত্বের হার বেড়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো যুব বেকারত্ব। শিক্ষিত তরুণদের একটি বড় অংশ কাজ, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের বাইরে রয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি কেবল অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। তরুণ জনগোষ্ঠী যদি উৎপাদনপ্রক্রিয়ার বাইরে থাকে, তবে জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ জনসংখ্যাগত বোঝায় পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এলেও সাধারণ মানুষের জীবনে স্বস্তি এখনো সীমিত। খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে নামলেও চালের দাম সাধারণ মানুষের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন বাড়লেও বাজারে তার সুফল না পৌঁছানো বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে। খাদ্যপণ্যের দামে সামান্য অস্থিরতাও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বাজেটে বড় ধাক্কা দেয়। কৃষি খাতেও চ্যালেঞ্জ কম নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ঘন ঘন বন্যা এবং অনিশ্চিত আবহাওয়া কৃষি উৎপাদনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। আউশ ও আমন উৎপাদনে ঘাটতির তথ্য ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। কৃষি যদি স্থিতিশীল না থাকে, তবে মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্য—দুটোই বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি। পর্যটনশিল্প একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত, যা তুলনামূলকভাবে কম বিনিয়োগে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি কার্যকর উৎস হিসেবে কাজ করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে এখনো এই খাতটি যথাযথ গুরুত্ব ও পরিকল্পনার অভাবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন লাভ করতে পারেনি। অন্যদিকে চীন, ভারত, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মতো আমাদের দেশের জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো, দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে নানামুখী উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে এসব উদ্যোগের সুফল পেতে সময় লাগবে, আর সেই সময়টা অর্থনীতি কতটা সহ্য করতে পারবে—সেটিই বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রাখে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু উচ্চ সুদের চাপে বিনিয়োগ স্থবির থাকলে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে এই পুনরুদ্ধার টেকসই হবে না। এখন প্রয়োজন সুসমন্বিত নীতি, বাস্তবমুখী সংস্কার এবং এমন সিদ্ধান্ত, যা কেবল পরিসংখ্যানে নয়, মানুষের জীবনে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক বাস্তবতার মুখোমুখি, যেখানে সংখ্যার ভাষা আর মানুষের অভিজ্ঞতা এক বিন্দুতে মিলছে না। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে সেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন এখনো স্পষ্ট নয়। উচ্চ সুদের চাপ, বিনিয়োগের স্থবিরতা এবং কর্মসংস্থানের সংকট—এই তিনটি বিষয় একসঙ্গে অর্থনীতির ওপর এমন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে পরিসংখ্যান আর বাস্তবজীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে ব্যবধান ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। একদিকে কিছু সামষ্টিক সূচকে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের জীবনে বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তা—এই দ্বৈত বাস্তবতা আজকের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সাম্প্রতিক প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ এই বাস্তবতাকে পরিসংখ্যানের আয়নায় তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে অর্থনীতিতে যে শ্লথগতি দেখা গিয়েছিল, তার প্রভাব এখনো পুরোপুরি কাটেনি। যদিও কিছু সূচকে পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত রয়েছে, তবু সেই পুনরুদ্ধার কতটা টেকসই, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে আসে মাত্র ২ শতাংশে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাজারে আস্থার সংকট শিল্প ও সেবা খাতে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কৃষি খাতেও প্রবৃদ্ধি ছিল অত্যন্ত সীমিত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে শিল্প খাত কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও অর্থনীতিবিদদের মতে, এই প্রবৃদ্ধির পেছনে শক্ত ভিত নেই। কারণ, টেকসই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি বিনিয়োগ, যা এখনো দুর্বল। এখানে নতুন নির্বাচিত সরকার এলে, এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে অর্থনীতিকে সচল রাখার বিষয়ে। নির্বাচিত সরকার এলে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং অবস্থার পরিবর্তনও হবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার ১০ শতাংশে স্থির রেখেছে। এই সিদ্ধান্ত স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমাতে সহায়ক হলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পড়ছে বিনিয়োগে। উচ্চ সুদের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে এসেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। জুন ২০২৫ নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৭ শতাংশের কিছু বেশি, যা একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনকভাবে কম। তাই অর্থ উপদেষ্টাকে এখানে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
একই সময়ে সরকারি ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অর্থপ্রবাহ আরও সংকুচিত হয়েছে। ফলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় অর্থায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নতুন শিল্প স্থাপন, বিদ্যমান শিল্প সম্প্রসারণ কিংবা উদ্ভাবনী উদ্যোগ—সবকিছুই উচ্চ সুদের চাপে থমকে যাচ্ছে। বিনিয়োগ না হলে উৎপাদন বাড়ে না, আর উৎপাদন না বাড়লে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না—এই সরল অর্থনৈতিক সত্যটি আবারও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
শিল্প উৎপাদনের চিত্রও সেই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করছে। যদিও কিছু মাসে শিল্প উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, তবু সামগ্রিকভাবে এই গতি স্থায়ী নয়। উৎপাদনের ধারাবাহিকতা না থাকায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে সীমিত পরিসরে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে শ্রমবাজারে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা আনুমানিক ২৬-২৭ লাখের মধ্যে (২.৬১-২.৭৪ মিলিয়ন)। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ২৪ লাখ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার বেড়েছে প্রায় ৩ লাখের বেশি। বাস্তবে বেকারত্বের হার আরও অনেক বেশি বলে কেউ কেউ মনে করছেন। দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বেকারত্বের হার ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঠেকেছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে দেশের বেকারত্বের হার বেড়ে ৪.৬৩ শতাংশে পৌঁছেছে। শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সামগ্রিক বেকারত্বের হার বেড়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো যুব বেকারত্ব। শিক্ষিত তরুণদের একটি বড় অংশ কাজ, শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের বাইরে রয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি কেবল অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। তরুণ জনগোষ্ঠী যদি উৎপাদনপ্রক্রিয়ার বাইরে থাকে, তবে জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ জনসংখ্যাগত বোঝায় পরিণত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এলেও সাধারণ মানুষের জীবনে স্বস্তি এখনো সীমিত। খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে নামলেও চালের দাম সাধারণ মানুষের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন বাড়লেও বাজারে তার সুফল না পৌঁছানো বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে। খাদ্যপণ্যের দামে সামান্য অস্থিরতাও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বাজেটে বড় ধাক্কা দেয়। কৃষি খাতেও চ্যালেঞ্জ কম নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, ঘন ঘন বন্যা এবং অনিশ্চিত আবহাওয়া কৃষি উৎপাদনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। আউশ ও আমন উৎপাদনে ঘাটতির তথ্য ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। কৃষি যদি স্থিতিশীল না থাকে, তবে মূল্যস্ফীতি ও দারিদ্র্য—দুটোই বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি। পর্যটনশিল্প একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত, যা তুলনামূলকভাবে কম বিনিয়োগে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি কার্যকর উৎস হিসেবে কাজ করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে এখনো এই খাতটি যথাযথ গুরুত্ব ও পরিকল্পনার অভাবে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন লাভ করতে পারেনি। অন্যদিকে চীন, ভারত, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মতো আমাদের দেশের জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পর্যটন খাতকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো, দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে নানামুখী উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে এসব উদ্যোগের সুফল পেতে সময় লাগবে, আর সেই সময়টা অর্থনীতি কতটা সহ্য করতে পারবে—সেটিই বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রাখে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু উচ্চ সুদের চাপে বিনিয়োগ স্থবির থাকলে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে এই পুনরুদ্ধার টেকসই হবে না। এখন প্রয়োজন সুসমন্বিত নীতি, বাস্তবমুখী সংস্কার এবং এমন সিদ্ধান্ত, যা কেবল পরিসংখ্যানে নয়, মানুষের জীবনে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারে।

লজিস্টিক শব্দটির যথাযথ ও প্রচলিত বাংলা না থাকার কারণে আমরা ‘জাতীয় লজিস্টিক নীতিমালা’ কিংবা ‘জাতীয় লজিস্টিক পলিসি’ উভয়ক্ষেত্রে ‘লজিস্টিক’ শব্দটি রাখছি। এর মানে এই নয় যে, বাংলাভাষা খুব দীন আর এর যথার্থ বাংলা শব্দ নেই। মূলত লজিস্টিক, রসদ, রসদপনা বা রসদ ব্যবস্থাপনা— বাংলাতে যা–ই বলি না কেন— এটি ছাড়া আমা
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১৬ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে গণভোটের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি ততই যেন জটিলতর হয়ে উঠছে। সন্ত্রাস, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড চলেছে অব্যাহতভাবে। ফলে জনমনে প্রতিদিনই নতুন নতুন শঙ্কা, সংশয় দানা বাঁধছে।
১৬ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে। বিভিন্ন সময়ে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকেই তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হলেও তিনি তাতে ভীত হননি। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান...
১৬ ঘণ্টা আগে