Ajker Patrika

ভোটার নিবন্ধন কাজে রাজ্যের সমস্যা

  • মাঠে মূল আর্থিক বরাদ্দ পৌঁছায়নি
  • ব্যবহার উপযোগী যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবলের ঘাটতি
  • সময়ের চাপে অনেক কর্মকর্তা রাত ১২টা পর্যন্ত কাজে
  • দীর্ঘ অপেক্ষাসহ নানা অভিযোগ ভোটারের
মো. হুমায়ূন কবীর, ঢাকা
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম অপরিকল্পিতভাবে এবং নানা সীমাবদ্ধতা ও অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিবন্ধনের কাজ শুরু হলেও এখনো মাঠপর্যায়ে কোনো আর্থিক বরাদ্দ দেয়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রয়েছে পুরোনো যন্ত্রপাতির সমস্যা আর জনবলের অভাবও। নিবন্ধন করতে যাওয়া সাধারণ মানুষ এবং ইসির মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

নির্বাচন কমিশন গত ২০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করেছে। সে কর্মসূচির বিষয়েও নাগরিকদের কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছিল। এখন ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত চলছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটার নিবন্ধনের কাজ।

মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু হওয়ার পর নানা সীমাবদ্ধতা সামনে আসছে। ইসি থেকে বলা হয়েছে, কেন্দ্রে গিয়েও ফরম পূরণ করে নিবন্ধন করা যাবে। ফলে অনেকেই ভোটার হওয়ার জন্য নিবন্ধন কেন্দ্রে যাচ্ছেন। তবে ভোটার হওয়ার জন্য জন্মসনদসহ যত নথি লাগে, নিবন্ধন কেন্দ্রে তা যাচাই করার সময় নেই। এ কারণে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। নিবন্ধন কার্যক্রমে ব্যবহৃত ৩০টির মতো উপকরণ নগদ অর্থে কিনতে হয়। সময়মতো বরাদ্দ না পাওয়ায় আপাতত নিজের টাকায় এগুলো কিনতে হচ্ছে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের।

নিবন্ধনের কাজে দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু কারিগরি সমস্যা। মাঠপর্যায়ে ল্যাপটপ এবং আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছবি নেওয়ার যেসব যন্ত্র পাঠানো হয়েছে, তার বেশির ভাগ পুরোনো। কোনোটি কোনোটি কাজের মধ্যে ‘হ্যাং’ (অচল) হয়ে পড়ছে। ডেটা এন্ট্রির ক্ষেত্রে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। কর্মকর্তাদের কারও কারও দিনের কাজ শেষ করতে রাত ১২টা পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে।

ঢাকা অঞ্চলের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখনো কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। নিবন্ধনের জন্য সময় কম দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ যন্ত্রপাতি পুরোনো। ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের বেশির ভাগ নতুন ও অদক্ষ।

ফরিদপুর অঞ্চলের একজন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, একটি কেন্দ্রে ৫০০ থেকে ৬০০ জনের নিবন্ধনের জন্য এক দিন, এক হাজার জন হলে দুই দিন সময় দেওয়া হয়। তিনি ১২টি ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছেন। এর মধ্যে ১০টিই পুরোনো।

সরেজমিন অভিজ্ঞতা

১৭ ফেব্রুয়ারি আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিরা দেশের কয়েকটি স্থানে নিবন্ধনপ্রক্রিয়ার পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে যান। সেখানে তাঁরা কাজের ধীরগতি, যান্ত্রিক সমস্যা ও সাধারণ মানুষের বিভ্রান্তির মতো বিভিন্ন সমস্যার চিত্র দেখেন।

পুরোনো ঢাকার কোর্ট হাউস স্ট্রিটে অবস্থিত রাজার দেউরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, সকাল ১০টা থেকে দুটি ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছেন ডেটা এন্ট্রি অপারেটররা। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি বলেন, ‘আমাদের এখানে পাঁচজন কর্মী দেওয়ার কথা ছিল। আছে মাত্র দুজন।’

রাজার দেউরী বিদ্যালয়ের নিবন্ধন কেন্দ্রে এ প্রতিবেদকের কথা হয় শিপ্ত কর্মকারের সঙ্গে। অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছবি তুলতে গেলে ক্যামেরা হ্যাং হয়ে গিয়েছিল। পরে ল্যাপটপ রিস্টার্ট করে ছবি তুলেছেন।

দুপুর ১২টার দিকে সূত্রাপুরের কাপ্তান বাজারে অবস্থিত নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভোটার নিবন্ধন করতে আসা মানুষে মাঠ পরিপূর্ণ। সেখানে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজশিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৯টায় কেন্দ্রে এসে দুপুর সাড়ে ১২টায় নিবন্ধন সম্পন্ন করতে পারলাম।’

নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে নারী ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমের কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, হাত ঘামে এমন নারীদের আঙুলের ছাপ নিচ্ছে না যন্ত্র। কলেজশিক্ষার্থী সুমাইয়া ওয়াহিদ নওশিন জানান, হাত ঘামায় শুধু আঙুলের ছাপ দিতে তাঁর সময় লেগেছে ১০ মিনিট।

যাত্রাবাড়ী সিটি করপোরেশন আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে উপস্থিত নিবন্ধনে আগ্রহী কয়েকজন লোকবল বাড়ানোর পরামর্শ দিলেন। সজল নামের এক যুবক জানান, সকাল ৮টায় এসেও তাঁর প্রায় দেড় ঘণ্টা লেগেছে।

ঢাকা জেলার দোহার পৌরসভায় অবস্থিত জয়পাড়া সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে নিবন্ধন করতে আসা তাজেল হোসেন বলেন, ‘৯টা ওয়ার্ডের লোকজনের ছবি একসঙ্গে তোলার জন্য অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। অনেকক্ষণ লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’

ছবি তোলার দায়িত্বে থাকা আশিকুল রহমান জানান, কম্পিউটার ও ডিভাইসে লিখতে হয় বলে একটু সময় বেশি লাগছে। এ ছাড়া কম্পিউটারে মাঝে মাঝে একটু সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

রাজশাহী নগরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বালাজান নেসা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে নতুন ভোটার হতে আসা সাফিয়া খাতুন বলেন, চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পা ব্যথা করছে।

নগরের রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার রায় বললেন, ভোটারের বায়োমেট্রিক, স্বাক্ষর নেওয়া, ছবি তোলা ছাড়াও নামসহ ২০ ধরনের তথ্য পূরণ করতে হচ্ছে। তা ছাড়া ফিঙ্গারপ্রিন্ট হালকা হয়ে যাওয়া কিংবা ঘামের কারণে শতকরা প্রায় ২০ ভাগ নারীর আঙুলের ছাপ নিতে সমস্যা হচ্ছে। ডেটা এন্ট্রি অপারেটররা নতুন বলে তাঁরাও কাজে কিছুটা সময় বেশি নিচ্ছেন।

চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট এখলাছুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নতুন ভোটার হিসেবে সন্তানের নিবন্ধন করাতে এসেছিলেন আব্দুল কাইয়ুম। তিনি জানান, তাঁর ছেলেকে দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। একজন অপারেটর বলেন, বায়োমেট্রিক গ্রহণে একটু সময় লাগছে। অনেকের আঙুলের রেখা মুছে যাওয়ায় মেশিন একবারে নিচ্ছে না।

চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মো. বশির আহমেদ জানান, আগে ডিভাইসের সমস্যা থাকলেও তা ঠিক হয়ে গেছে। এখন সমস্যা হচ্ছে বায়োমেট্রিক গ্রহণে।

সোমবার দুপুরে রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে গিয়ে ওপরতলা থেকে নিচতলায় বারবার ওঠানামা করতে দেখা যায় নতুন ভোটার হতে আসা তরুণ নাহিদ হোসেনকে। কথা বলে বোঝা গেল, লেখাপড়া না জানা নাহিদ হোসেন কোথায় কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। দেড় ঘণ্টা পর বাড়ি ফিরে যান তিনি। যাওয়ার আগে নির্বাচন অফিসের সামনে নাহিদ বলেন, দায়িত্বরত একজনকে কাগজপত্র দেখালে তিনি তা ফটোকপি করতে বলেন। ফটোকপি করার পর দোতলায় যেতে বলা হয়। সেখান থেকে আবার নিচতলায় যেতে বলা হয়। একপর্যায়ে বলা হয়, সেখানে তাঁর নামের নিবন্ধন হবে না। নাহিদকে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া হয়। তবে বারবার ফোন দিয়েও তা বন্ধ পেয়ে হতাশ নাহিদ ফিরে যান।

বেলা ১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে হতাশ হয়ে এসে ফিরে যাওয়া রংপুর নগরীর নুরপুর এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুজ্জামান, গণেশপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল ওয়াহেদসহ অন্তত ১০ জনের সঙ্গে আজকের পত্রিকার প্রতিনিধির কথা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মমিনুর আলম বলেন, নির্বাচন অফিসে ভোটার নিবন্ধনের সুযোগ নেই। কারণ, এখানে কোনো ডিভাইস নেই। বাদ পড়া ব্যক্তিরা ১৯ থেকে ২০ মার্চ কেরামতিয়া হাইস্কুলে এলে নিবন্ধন করে দেওয়া হবে।

১৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভায় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক; ঢাকা ও ফরিদপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা; চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যন্ত্রপাতির স্বল্পতা এবং কারিগরি সমস্যার সমাধান করা না হলে নির্ধারিত সময়ে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করার ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর কয়েক দিন আগে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খুব ছোট ছোট দু-একটি আর্থিক বরাদ্দ আমরা দিয়েছি। মূল বরাদ্দের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। দুজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়েছেনও। আশা করছি, খুব শিগগির তা হয়ে যাবে। তখন মাঠপর্যায়ের বরাদ্দটা দেওয়া হবে।’

পুরোনো যন্ত্র এবং কম সময়ে কাজ করার চাপের বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘আসলেই এগুলো ঘটছে। একজন মানুষ যদি সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করেন, তিনি কি পরের দিন পুরো উদ্যমে কাজ করতে পারবেন? এ বিষয়গুলো নিয়ে কমিশনে আলোচনা হয়েছে। এখনো সিদ্ধান্ত না হলেও আশা করি ইতিবাচক কিছু হবে।’

  • প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, দোহার এবং রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার প্রতিনিধি।
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

  • যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা
  • বিপিসির নথি বলছে, আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি আছে
 আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

বোরো ধানের মৌসুমে দেশে জ্বালানি মজুতে টান পড়েছে। বর্তমান ডিজেলের মজুত একেবারেই তলানিতে রয়েছে। সরকারি তেল বিপণনকারী তিনটি কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলে মজুত প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি তেলের মজুত রয়েছে। যদিও বিপিসির দাবি, দেশে জ্বালানি-সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা নেই।

বিপিসির মজুত প্রতিবেদনে জানা যায়, ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ডিজেল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৭ টন মজুত রয়েছে। এর মধ্যে দেশের ২৪টি ডিপোর ট্যাংকে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮২৯ টন মজুত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন লাইটার জাহাজসহ ট্রানজিটে রয়েছে ৪৯ হাজার ৬৬৮ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১৬ হাজার ৬০১ টন ডিজেল সারা দেশে বিক্রি করা হয়েছে। সে হিসাবে দেখা যায়, বর্তমানে বিপিসির কাছে ২০ দিনের ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে বিপিসি বিভিন্ন ডিপোতে পেট্রল মজুত আছে ২২ হাজার ১১৪ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৬১৮ টন পেট্রল বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে পেট্রল ১৩ দিনের মজুত আছে।

বিপিসির ২৩ ডিসেম্বরের স্টক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে মোট ২৮ হাজার ২৭০ টন অকটেন মজুত রয়েছে। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৮৮৫ টন অকটেন বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে ১৫ দিনের অকটেন মজুত আছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক এ কে এম আজাদুর রহমান জানান, সারা দেশে ২৫ দিনের অকটেন ও পেট্রল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ডিজেল ৩৫ দিনের মজুত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। দেশে ডিজেলের মজুত কম কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন শুষ্ক মৌসুমে সব জায়গায় বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। তাই ডিজেলের চাহিদা কম।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৫ হাজার ৬৯৫ টন অকটেন মজুত রয়েছে। আর পেট্রল মজুত রয়েছে ৪ হাজার ২৯৫ টন। সারা দেশের ১৭টি ডিপোতে ৯২ হাজার ৮৯৫ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে সরকারি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৮০ হাজার ২১৩ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯১৪ টন পেট্রল এবং ৪ হাজার ১৮৭ টন অকটেন মজুত রয়েছে। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফতুল্লা, রাজশাহী, হরিয়ান, চিলমারী ডিপোতে কোনো জ্বালানি তেল নাই। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের নাটোর ডিপোতে ৩০ টন, রংপুর ডিপোতে ৫৭ টন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিপোতে ২ টন ডিজেল রয়েছে।

নাম না প্রকাশে সরকারি তেল বিপণনকারী এক কর্মকর্তা জানান, বিপিসির আমদানি করা জ্বালানি তেলের মজুত আশঙ্কাজনকভাবে কম রয়েছে। ডিজেলের মজুত একবারেই কম। তাঁর মতে ১৩ থেকে ১৫ দিনের জ্বালানি মজুত রয়েছে বর্তমানে।

পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আসিফ মালিক বলেন, দেশে পর্যাপ্ত জ্বালানি মজুত রয়েছে। সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। নিয়মিতভাবে জ্বালানি তেলের জাহাজ আসা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান।

তবে গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুল মোমিন বলেন, দেশে ধান উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বড় মৌসুম হচ্ছে বর্তমান বোরো মৌসুম। এ সময় প্রায় ৫২ লাখ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। এই মৌসুমে জ্বালানি-সংকট হলে সেটা দেশের খাদ্য উৎপাদনে ছেদ পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

রাজবাড়ীর পাংশা থানাধীন এলাকায় গত বুধবার রাতে সংঘটিত একটি দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।

পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা। নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের একপর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতিপূর্বে ২০২৩ সালে রুজুকৃত হত্যা, চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১টি পাইপগানসহ আটক করে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর নিন্দা জানায়। সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যেকোনো ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা সহিংসতা সরকার কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

একই সঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, একটি মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।

সরকারসংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।

আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার যেকোনো অপচেষ্টা সরকার কঠোরহস্তে দমন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে বলে মনে করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গির্জায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান শফিকুল আলম। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা তাঁকে (তারেক রহমান) স্বাগত জানাই। উনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলের নেতা এবং আমি বলব তাঁর বাংলাদেশে আসা খুবই একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশে তো সত্যিকার অর্থে কিছু রাজনৈতিক শূন্যতা আছে। উনি আসলে সেটা পূরণ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে আমাদের একটা বড় ইলেকশন, আমরা একটা ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনে (গণতান্ত্রিক উত্তরণে) আছি। আমরা আশা করছি, আমাদের এই ট্রানজিশনটা আরও স্মুথ হবে।’

তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘তাঁর নিরাপত্তা তো তাঁর পার্টি দেখছেন, তবে তাঁরা আমাদের কাছে যেই ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছেন, আমরা সব সহযোগিতাই করছি।’

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে সিলেটে আসে। সিলেটে যাত্রাবিরতি শেষে ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে তাঁর বাসটি সংবর্ধনাস্থলে আসে। কিছুক্ষণ আগে তিনি মঞ্চে অবস্থান নিয়ে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনে বঙ্গভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন রাষ্ট্রপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎস বড়দিনে খ্রিষ্টান ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে তিনি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে বঙ্গভবনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেখানে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্ববাসীর প্রতি বড় দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চিরকাল অটুট ও অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত