Ajker Patrika

রেলের লক্ষ্যমাত্রা টানা ছয় অর্থবছর অধরা

তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
আপডেট : ২৩ মে ২০২৫, ১৩: ৫০
আজকের পত্রিকা গ্রাফিক্স
আজকের পত্রিকা গ্রাফিক্স

বাংলাদেশ রেলওয়ে টানা ছয় অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আয় করেছে। প্রতিবছর লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও এই ছয় অর্থবছরের মধ্যে প্রথম তিন অর্থবছরে আয় কম হয়েছে। তবে পরের তিন অর্থবছরে আয় পর্যায়ক্রমে বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি।

রেলওয়ের আয়ের এই চিত্র ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, আয় কম হওয়ার কারণ বিভিন্ন প্রকল্প ও নানা ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক ব্যয়। অন্তর্বর্তী সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা রেলওয়ের লোকসান কমিয়ে আয় বাড়ানোর পথ বের করতে বিভিন্ন সময় নির্দেশনা দিয়েছেন।

জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিগত সময়গুলোতে ব্যয় ছিল বেশি, নানা কারণে আয় ছিল কম। বিভিন্ন প্রকল্প থেকে শুরু করে নানা জায়গায় অস্বাভাবিক ব্যয় ছিল। তবে আমরা আয় বাড়ানোর জন্য নানা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কাজও হচ্ছে। আশা করছি, বছর শেষে ভালো কিছুই হবে।’

রেলওয়ের সূত্র বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা, অর্জন হয়েছে ১ হাজার ৫৯০ কোটি ১ লাখ টাকা। পরের অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ১২ কোটি ৩ লাখ টাকা ধরা হলেও আয় হয়েছে ২ হাজার ১৯৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ২৫৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জন হয়েছে ১ হাজার ১৬৬ কোটি ৭ লাখ টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৫২৩ কোটি ৩৮ লাখ, অর্জন হয়েছে ১ হাজার ৪৬৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ৩৬৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও অর্জন হয় ১ হাজার ৭৮৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৪৭০ কোটি ২ লাখ, অর্জন হয়েছে ১ হাজার ৯২৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

আয় বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রেলওয়ে মূলত আটটি খাত থেকে আয় করে। সবচেয়ে বেশি আয় করে যাত্রী পরিবহনে, এরপর পণ্য পরিবহনে। অন্য খাতগুলো হলো পার্সেল পরিবহন, বাণিজ্যিক, ভূ-সম্পত্তি, স্ক্র্যাপ, বিদ্যুৎ ও টেলিকম। যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে বিগত চার অর্থবছরেই আয় পর্যায়ক্রমে বাড়লেও তা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম। পার্সেল ও ভূ-সম্পত্তি থেকেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় অনেক কম হয়েছে। তবে টেলিকম খাত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় করেছে।

এ বিষয়ে রেলওয়ের অপারেশন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন কিছু ট্রেন যুক্ত হওয়ায় যাত্রী পরিবহনে আয় বেড়েছে। লোকোমোটিভের অভাবে অনেক লোকাল কমিউটার ট্রেন বন্ধ রয়েছে। ফলে সেই জায়গায় আয় কম হচ্ছে। সব ট্রেন পুরোপুরি চালু থাকলে এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব। লক্ষ্যমাত্রা সব সময় পূরণ করা যায় না। তবে লক্ষ্যমাত্রা ধরেই তাঁদের এগোতে হবে।

সূত্র জানায়, আয় বাড়াতে রেলওয়ে সম্প্রতি তিন মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে।

আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা জানতে চাইলে রেলসচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, যাত্রী ও মালপত্র পরিবহন থেকে হুট করে আয় বাড়বে না। ভূ-সম্পত্তি, স্ক্র্যাপ, অপটিক্যাল ফাইবার—এগুলোতে আয় বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে ব্যয় কমানোর চেষ্টা চলছে। এতে রেলের অপারেটিং খরচের হার কমে আসবে।

আয় বাড়ানোর তিন মেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনায় রয়েছে, যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ, আপাতত ২৬টি ইঞ্জিন ও ক্রু সরবরাহ, আন্তনগর কোটা সমন্বয়, নতুন ট্রেন ও কোচ সংযোজন, অপটিক্যাল ফাইবার ও লাগেজ ভ্যান বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার, টিকিট চেকিং জোরদার এবং অবৈধ জমি উদ্ধার করে ইজারা দেওয়া।

মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় রয়েছে, সরকারি পণ্য পরিবহন, লাগেজ ভ্যান ব্যবহারে নীতিমালা অনুসরণ, স্টেশন ও ট্রেনে বিজ্ঞাপন প্রচার, ট্রাফিক কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ফেরত এবং টঙ্গী-তেজগাঁওয়ে আনলোডিং সুবিধাসম্পন্ন ইয়ার্ড নির্মাণ।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় রয়েছে অব্যবহৃত রেলভূমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করে মার্কেট, হোটেল, অফিস ইত্যাদি ভাড়া দিয়ে আয় বাড়ানো, এজন্য ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা সংশোধন প্রয়োজন।

এ ছাড়া ৫০টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) সংগ্রহ এবং মেরামত শপগুলোর যন্ত্রপাতি ও লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়িয়ে কর্মদক্ষতা উন্নয়ন করতে চায় রেলওয়ে। ধীরাশ্রম আইসিডির নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন করা এবং মোংলা-পদ্মা সেতু রুটে নিমতলীতে নতুন আইসিডি নির্মাণ। স্টেশনগুলোর সিএসএল ৭৫০ মিটারে উন্নীত করা এবং ইয়ার্ড লাইন সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

যমুনা রেলসেতু চালুর ফলে নতুন কোচ, ওয়াগন সংগ্রহ করে যাত্রী ও মালগাড়ি পরিচালনা বাড়ানো এবং মির্জাপুর, নিমতলী, টঙ্গী, তেজগাঁওয়ে আধুনিক গুডস ইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

রেল সূত্র বলছে, এগুলোর পাশাপাশি জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডাবল লাইন, টঙ্গী-আখাউড়া, লাকসাম-চট্টগ্রাম ডুয়েলগেজ, বগুড়া-জামতৈল নতুন লাইন, জয়দেবপুর-জামালপুর ডুয়েলগেজ, আখাউড়া-সিলেট ডুয়েলগেজ, ঢাকা-লাকসাম কর্ড লাইন, ফৌজদারহাট-লাকসাম ফ্রেইট করিডর নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে রেলওয়ের অপারেশনাল দক্ষতা ও রাজস্ব আয় উভয়ই উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালনার দক্ষতার অভাব। দীর্ঘদিন রেলে বড় বড় বিনিয়োগ হচ্ছে; কিন্তু আয় বাড়েনি। ফলে বেসরকারিভাবে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অপারেটর দিয়ে পরিচালনা করলে রেল লাভে ফিরবে। এতে যাত্রীসেবা বাড়বে; বাড়তি ব্যয়, অনিয়ম, চুরি, দুর্নীতি দূর হবে। তখন রেলওয়ের পরিচালন নিয়ে মাথাব্যথা থাকবে না। তারা অবকাঠামোর উন্নয়নে কাজ করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় তাঁকে তলব করা হয়েছে। ভারতের হাইকমিশনারকে তলব করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম।

কূটনৈতিক একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি, কলকাতাসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন নিয়ে উদ্ভূত নিরাপত্তা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রণয় ভার্মাকে তলব করা হয়।

এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর প্রণয় ভার্মাকে তলব করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেদিন তাঁকে তলব করে বলা হয়, বাংলাদেশে আসন্ন সংসদ নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে পলাতক শেখ হাসিনা ভারতে বসে তার সমর্থকদের উসকানিমূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়াতে আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য দিচ্ছে। তাকে এই ধরনের উসকানিমূলক বক্তব্যের সুযোগ দেওয়ায় ভারত সরকারের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের গভীর উদ্বেগের কথা জানানো হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ভারতে অবস্থানরত পলাতক শেখ হাসিনা তার সমর্থকদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়াতে আহ্বান জানিয়ে নিয়মিত উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। যা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এ সময় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আদালতের দেওয়ার দণ্ডের মুখোমুখি করতে দ্রুত প্রত্যর্পণের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বাংলাদেশ।

তলবকালে ভারতীয় হাইকমিশনারের ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের পলাতক সদস্যদের বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

টিএফআই সেলে গুম

শেখ হাসিনা ও সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আজ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় অভিযুক্ত ১৩ সেনা কর্মকর্তাকে গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ হাজির করা হয়। এ সময় হাইকোর্ট এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।	ছবি: আজকের পত্রিকা
গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় অভিযুক্ত ১৩ সেনা কর্মকর্তাকে গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ হাজির করা হয়। এ সময় হাইকোর্ট এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে র‍্যাবের টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেলে (টিএফআই) গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার ১০ সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশের দিন নির্ধারণ রয়েছে আজ।

আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেবেন। ফলে আসামিদের বিচার শুরু হবে কি হবে না তা জানা যাবে।

এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট আসামি হলেন ১৭ জন। এর মধ্যে গ্রেপ্তার ১০ সেনা কর্মকর্তা হলেন র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে), র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।

শেখ হাসিনা ছাড়াও এই মামলায় পলাতক অন্য আসামীরা হলেন—সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ ও র্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. খায়রুল ইসলাম।

গত ১৪ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার তিন আসামির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ ও সাতজনের হয়ে লড়েন তাবারক হোসেন। এছাড়া আসাদুজ্জামান খাঁন কামালসহ তিনজনের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এম হাসান ইমাম, তিনজনের পক্ষে সুজাদ মিয়া ও শেখ হাসিনার হয়ে লড়েন আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

প্রত্যেকেই শুনানিতে আলাদা আলাদা কারণ (গ্রাউন্ড) এনে নিজেদের মক্কেলের অব্যাহতি চেয়েছেন। তবে প্রসিকিউশনের পক্ষে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আবেদন করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে এ বিষয়ে আদেশের জন্য গত রোববার (২১ ডিসেম্বর) দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।

তবে ওই দিন আদেশের নির্ধারিত দিন থাকলেও আসামি ৩ সামরিক কর্মকাতার আইনজীবী জানান, অব্যাহতির আবেদনের শুনানি এখনো কিছুটা বাকি রয়েছে। কারণ আগে কারাগারে আসামিদের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি তিনি।

আদালত আইনজীবীর এই আবেদন মঞ্জুর করে তাঁর আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন শোনেন। একইসঙ্গে আদেশের তারিখ দুদিন পিছিয়ে দেন।

গত ৩ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানিতে টিএফআই সেলের বীভৎসতা তুলে ধরার পাশাপাশি গুমের অন্ধকার পেরিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এক নতুন বাংলাদেশ উদিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। গুম হওয়া ব্যক্তিদের ভাগ্য দুভাবে নির্ধারণ হতো বলেও উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ভাগ্য ভালো হলে গুমের শিকার ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হতো। দ্বিতীয়ত সাত-আট বছর গুম রাখার পর ফেলে রাখা হতো অজানা কোনো স্থানে।

চলতি বছরের ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা ১০ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। একইসঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়।

তবে নির্ধারিত তারিখে হাজির না হওয়ায় তাদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন আদালত। ৮ অক্টোবর এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে ১৭ জনের বিরুদ্ধেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পরিষদে রদবদল হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিয়ে গুঞ্জন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: ফোকাস বাংলা
ছবি: ফোকাস বাংলা

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে এসে উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল করতে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এই প্রক্রিয়ায় একজন উপদেষ্টার দায়িত্ব কমিয়ে নতুন করে একজনকে গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা হতে পারে বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটি জানায়, নতুন উপদেষ্টা দু-এক দিনের মধ্যে শপথ নিতে পারেন। বর্তমান সরকারে থাকা একজনকে উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা একজন উপদেষ্টাকে একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনার মধ্যে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ইনকিলাব মঞ্চের মখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যার পর তাঁর পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে দুদিন ধরে গুঞ্জন আছে। কিন্তু গত রোববার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর বৈঠকে অংশ নেন তিনি। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৮তম সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জনের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পদত্যাগ করলে এখানে বসতাম না।’

১২ ডিসেম্বর ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় হাদির মাথায় গুলি করা হয়। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার পর ১৮ ডিসেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। হাদির হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই দিন রাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় ছায়ানট, উচীদীর কার্যালয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

২০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে জানাজায় প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে হাদির খুনিদের ধরতে সরকারের পদক্ষেপ জানাতে স্বরাষ্ট্র এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের।

হাদি হত্যার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গতকাল বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তারা এই দাবি জানায়।

২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর তাঁকে সরিয়ে ২০২৪ সালের ১৭ আগস্ট জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব দেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নয়াদিল্লি, আগরতলা ও শিলিগুড়িতে ভিসা কার্যাক্রম বন্ধ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু চন্দ্র দাসকে হত্যার পর মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন বিজেপি ও বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। গতকাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে। ছবি: এএফপি
ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু চন্দ্র দাসকে হত্যার পর মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন বিজেপি ও বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। গতকাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরে। ছবি: এএফপি

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশন এবং ত্রিপুরার আগরতলায় সহকারী হাইকমিশন ও পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির ভিসা সেন্টার থেকে ভিসা ও কনস্যুলার সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ।

ভারতের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানায়, দিল্লির ভিসা কেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। গতকাল সোমবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভিসা কেন্দ্রের পাশাপাশি দিল্লিতে অন্য কনস্যুলার পরিষেবাও আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা। যদিও সরকারিভাবে এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা করা হয়নি।

ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম শিলিগুড়ি টাইমস জানায়, গতকাল পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র ভাঙচুর করেছে হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (বিএইচপি), হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ও শিলিগুড়ি মহানগর সংগঠনের সদস্যরা ভিসা কেন্দ্রে ভাঙচুরের পর সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ত্রিপুরার আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনেও ভিসা ও কনস্যুলার সেবা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। সংশ্লিষ্ট মিশনে এ-সংক্রান্ত নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, সম্প্রতি নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে ঢাকায় ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় নয়াদিল্লি। পরে বাংলাদেশের ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর পরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা। ওই সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ভারতের ডেপুটি হাইকমিশন ঘেরাওয়ের ডাক দেয় সে দেশের একটি গোষ্ঠী। ওই পরিস্থিতির মাঝেই চট্টগ্রামে ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনের দপ্তর লক্ষ্য করে ইট ছোড়ার অভিযোগ ওঠে। উত্তেজনা ছড়ায় সিলেটেও। তার পরেই চট্টগ্রামের ভিসা কেন্দ্র বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করে ভারত। নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয় সিলেটের উপদূতাবাসের কাছেও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত