Ajker Patrika

জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের কাজ কী, দেশে কেন আপত্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২৫, ১৬: ৫৩
জেনেভায় ওএইচসিএইচআর-এর সদরদপ্তর। ছবি: সংগৃহীত
জেনেভায় ওএইচসিএইচআর-এর সদরদপ্তর। ছবি: সংগৃহীত

জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর), বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষায় রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রধান সংস্থা হিসেবে কাজ করে। ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা জাতিসংঘ সচিবালয়ের একটি বিভাগ হিসেবে পরিচালিত হয়। এ সংস্থার ম্যান্ডেট জাতিসংঘের সনদ (ইউএন চার্টার) এবং মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র থেকে উদ্ভূত।

কাজের ক্ষেত্র

জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) কাজ অত্যন্ত বিস্তৃত এবং বহুমুখী। এটির লক্ষ্য হলো সবার জন্য মানবাধিকারকে বাস্তবে রূপ দেওয়া। এই সংস্থার প্রধান প্রধান কাজের ক্ষেত্রগুলো হলো:

সর্বজনীন মানবাধিকার: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে প্রকাশিত মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকারকে বাস্তবে রূপ দেওয়া।

মানবাধিকার ইস্যুতে নেতৃত্ব: বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার আলোচনায় একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে, আন্তর্জাতিক ও জাতীয়—উভয় স্তরেই মানবাধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরে।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: মানবাধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

জাতিসংঘ ব্যবস্থার কার্যক্রম সমন্বয়: পুরো জাতিসংঘ ব্যবস্থার মধ্যে মানবাধিকার-সংক্রান্ত প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত ও সমন্বয় করা।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অনুমোদন ও বাস্তবায়ন প্রচার: রাষ্ট্রগুলোকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিগুলো অনুমোদন এবং সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নে উৎসাহিত করা।

নতুন মানদণ্ড তৈরি: নতুন মানবাধিকার মানদণ্ড এবং দলিল তৈরিতে সহায়তা করা।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে সমর্থন: জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা এবং চুক্তি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলোকে, যেমন—মানবাধিকার কাউন্সিল এবং বিভিন্ন চুক্তি সংস্থা, বাস্তব ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া।

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়া: মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো এবং এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।

প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ: সংঘাত বা অপব্যবহারের দিকে নিয়ে যেতে পারে—এমন পরিস্থিতি প্রশমিত করতে প্রতিরোধমূলক মানবাধিকার কার্যক্রম গ্রহণ করা।

জাতীয় মানবাধিকার অবকাঠামো প্রতিষ্ঠা: সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে স্বাধীন জাতীয় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান (এনএইচআরআই) প্রতিষ্ঠা ও সমর্থন করা।

ক্ষেত্রভিত্তিক কার্যক্রম ও অভিযান: মাঠপর্যায়ে উপস্থিতির মাধ্যমে সংস্থাটি, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডগুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে প্রায়ই কারিগরি সহায়তা এবং পর্যবেক্ষণ দেয়।

শিক্ষা ও অ্যাডভোকেসি: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জনসাধারণের মধ্যে মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং জড়িত থাকার জন্য গবেষণা, শিক্ষা এবং অ্যাডভোকেসি কার্যক্রমে অংশ নেওয়া।

সরকারকে সহায়তা: বিচার প্রশাসন, আইন সংস্কার, মানবাধিকার চুক্তি অনুমোদন এবং মানবাধিকার শিক্ষার মতো ক্ষেত্রগুলোতে সরকারগুলোকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং সক্ষমতা-নির্মাণ সহায়তা দেওয়া।

মানবাধিকারের মূলধারা: সংস্থাটি জাতিসংঘের সমস্ত কর্মসূচিতে মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ করে, যাতে শান্তি ও নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং মানবাধিকার–জাতিসংঘের তিনটি স্তম্ভ–একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে এবং পারস্পরিকভাবে শক্তিশালী হয়।

ওএইচসিএইচআরের সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়। এ ছাড়া নিউইয়র্ক কার্যালয়, আঞ্চলিক কার্যালয়, দেশীয় কার্যালয় এবং জাতিসংঘ শান্তি মিশনে মানবাধিকার শাখাগুলোর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী উপস্থিতি বজায় রাখে জাতিসংঘের এই মানবাধিকার সংস্থা।

নিউইয়র্ক কার্যালয় জাতিসংঘের সদর দপ্তরে জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং অপারেশনাল কার্যক্রমে মানবাধিকারের নিয়মাবলি কার্যকরভাবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ করে।

আর আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো বৃহত্তর অঞ্চলগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর নজর রাখে। এর মধ্যে রয়েছে—পূর্ব আফ্রিকা (আদ্দিস আবাবা), দক্ষিণ আফ্রিকা (প্রিটোরিয়া), পশ্চিম আফ্রিকা (ডাকার), দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া (ব্যাংকক), প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল (সুভা), মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা (বৈরুত), মধ্য এশিয়া (বিশকেক), ইউরোপ (ব্রাসেলস), মধ্য আমেরিকা (পানামা সিটি), দক্ষিণ আমেরিকা (সান্তিয়াগো দে চিলি)।

দেশীয় এবং স্বতন্ত্র কার্যালয় রয়েছে প্রায় ১৮টি (বাড়ে কমে)। এই কার্যালয়গুলো স্বাগতিক সরকারগুলোর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সাধারণত মানবাধিকার সুরক্ষা, প্রচার, পর্যবেক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের ম্যান্ডেট থাকে। দেশীয় কার্যালয় রয়েছে এমন দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে: বুর্কিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, চাদ, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, গিনি, হন্ডুরাস, লাইবেরিয়া, মৌরিতানিয়া, মেক্সিকো, নাইজার, ফিলিস্তিন, সুদান, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলেও তাদের উপস্থিতি রয়েছে।

বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ বা সংঘাত-পরবর্তী অঞ্চলে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে অন্তর্ভুক্ত মানবাধিকার কর্মকর্তাদেরও সহায়তা করে এই সংস্থা। যেমন—আফগানিস্তান, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, হাইতি, ইরাক, কোসোভো, লিবিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান—এসব দেশে শাখাগুলো সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ করে।

এই বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ওএইচসিএইচআর সরাসরি সরকার, নাগরিক সমাজ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে মাঠপর্যায়ে কাজ করার সুযোগ পায়।

বাংলাদেশে কার্যালয় স্থাপন ও নানামুখি আপত্তি

ঢাকায় কার্যালয় স্থাপনের বিষয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার মধ্যে সম্প্রতি তিন বছর মেয়াদি একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।

তবে কিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তাদের আপত্তির প্রধান কারণ হলো, অতীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মানবাধিকারের নামে ইসলামি শরিয়াহ, পারিবারিক আইন এবং ধর্মীয় মূল্যবোধে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছে। তারা মনে করে, এই ধরনের কার্যালয় স্থাপন করলে তা সার্বভৌমত্ব ও ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে। বিশেষ করে এলজিবিটি অধিকারের ইস্যুটি বারবার সামনে এসেছে।

বিশেষ করে, হেফাজতে ইসলাম সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছে। তাদের মতে, অতীতেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মানবাধিকারের অজুহাতে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছে। তাই, তারা এই ধরনের কার্যালয় স্থাপনে রাজি নয়।

এ ছাড়া এনসিপির নেতা সারজিস আলমও আপত্তির কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাশক্তির অন্যায় আগ্রাসন, হত্যা, নির্যাতনের বিরুদ্ধে ওএইচসিএইচআর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়া এবং তাঁর ভাষায় পশ্চিমে দাবি অনুযায়ী, মুসলিমদের জঙ্গি-সন্ত্রাসী তকমা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তিনি।

সমালোচকেরা মনে করেন, এই ধরনের কার্যালয় স্থাপন করা হলে তা দেশের ওপর একটি চাপ সৃষ্টি করবে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের কাজে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।

আপত্তির মূল কারণগুলোর মধ্যে—

কিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন মনে করে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পরিপন্থী কাজ করতে পারে। তাদের আশঙ্কা, এই কার্যালয় দেশের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ণ করতে পারে এবং সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে। অতীতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মানবাধিকারের নামে বিভিন্ন দেশে হস্তক্ষেপ করেছে, যা এই ক্ষেত্রেও হতে পারে বলে তারা মনে করে।

এসব উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে একটি ব্যাখ্যাসহ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, এই কার্যালয় কোনো হস্তক্ষেপমূলক সংস্থা হবে না।

অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, ‘ওএইচসিএইচআর মিশন কেবল গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা, যেমন—পূর্ববর্তী সরকারের সময় সংঘটিত অপরাধ—প্রতিরোধ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতেই কাজ করবে। এটি কোনো সামাজিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের প্ল্যাটফর্ম হবে না, যা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন, সামাজিক রীতিনীতি ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর বাইরে যায়।’

এ ছাড়া, সরকারের পূর্ণ সার্বভৌম অধিকার থাকবে এ চুক্তি থেকে সরে আসার, যদি মনে করে যে এই অংশীদারত্ব আর দেশের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়—বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

সরকার মনে করে, এই ধরনের একটি কার্যালয় আগের সরকারগুলোর সময় যদি থাকত, যখন বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গণহত্যার মতো অপরাধ দায়মুক্তির সঙ্গে সংঘটিত হতো, তাহলে হয়তো অনেক অপরাধের তদন্ত, নথিভুক্ত ও বিচার হতো।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফায়ার সার্ভিসে ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করবে সরকার, বাড়বে সুযোগ-সুবিধা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪৭
‘ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স ডে’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ফায়ার সার্ভিসের আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স ডে’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ফায়ার সার্ভিসের আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ভলান্টিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া এবং তাঁদের প্রশিক্ষণের মান ও সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এই লক্ষ্যে একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত প্রণয়ন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর পূর্বাচলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে ‘ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স ডে’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এ কথা জানান।

উপদেষ্টা বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়াররা নিজেদের নিঃস্বার্থ সেবার মাধ্যমে জনগণের বন্ধু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সমর্থ হয়েছেন। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ের ভূমিকম্প, বড় বড় অগ্নিদুর্ঘটনা এবং অন্যান্য দুর্যোগে ফায়ার ফাইটারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভলান্টিয়াররাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করেছেন।

উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ভলান্টিয়ারদের আন্তরিক সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘কোনো রকম সুবিধা না নিয়ে নিজের ইচ্ছায় নিঃস্বার্থভাবে স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য আপনারা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। আপনারা এ কাজের প্রতিদান শুধু ইহকালে নয়, পরকালেও পাবেন।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সারা দেশে ৬২ হাজার ভলান্টিয়ার তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ৫৫ হাজারের বেশি ভলান্টিয়ারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণ নেওয়ার মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবকেরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পরিবারের গর্বিত সদস্য হিসেবে আর্তমানবতার সেবায় ভূমিকা রাখছেন। এর ফলে একদিকে যেমন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের জনবল সংকট দূর হচ্ছে, তেমনি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাও বাড়ছে।

উপদেষ্টা আরও বলেন, সরকারি বাহিনীর সদস্যদের পক্ষে এককভাবে ভূমিকম্প, বড় অগ্নিদুর্ঘটনা বা বন্যার মতো দুর্যোগ মোকাবিলা করা দুরূহ। এ ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকেরা পেশাদার বাহিনীর সঙ্গে কাজ করে দুর্যোগ প্রশমনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে, ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় সব স্তরে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ রাজনীতিমুক্ত হবে কি না—এ-সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আইন প্রণয়ন করা হয় জনগণকে সেবা দেওয়ার জন্য। এই আইনও করা হয়েছে জনগণ যেন প্রকৃত সেবা পায়, তা নিশ্চিত করতে। তিনি আশ্বস্ত করেন, পুলিশ কমিশন জনগণ ও পুলিশের প্রকৃত কল্যাণে কিছু সুপারিশ করবে, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে।

এর আগে উপদেষ্টা পূর্বাচল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রদর্শিত মহড়া দেখেন এবং তাঁদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনাকে ফেরতের ব্যাপারে এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি ভারত: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ০৯
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে ভারত এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, আমরাও তাদের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি।’

আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। রংপুর অঞ্চলে চার দিনের সফরে এসেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছি যে তাঁকে (শেখ হাসিনাকে) ফেরত পাঠানো হোক। যেহেতু উনি একজন কনভিক্টেড, যেহেতু সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা তাঁকে একটি শাস্তি দিয়েছে। কিন্তু আমরা ইতিবাচক কোনো সাড়া এখন পর্যন্ত পাইনি। এটা নিয়ে আমার মনে হয় স্পেকুলেট না করাই ভালো। দেখা যাক কী হয়। আমরা তো চেয়েছি খুব, এ ধরনের ঘটনায় তো ঝট করে এক দিনে, সাত দিনে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। আমরা অপেক্ষা করব, দেখি, ভারতের পক্ষ থেকে কী আসছে রিঅ্যাকশন।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, একটা রিঅ্যাকশন আমরা দেখেছি যেটা, সেটা হলো তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে, এ রকম একটা কথা আসছে আমাদের। দেখুক তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরে কোনো তথ্য নেই বলে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তারেক সাহেব কখন আসবেন, এই সম্বন্ধে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। উনার স্ত্রী সম্ভবত আসছেন বা পৌঁছে গেছেন হয়তো ইতিমধ্যে। আজকে সকালে পৌঁছার কথা ছিল। বেগম জিয়াকে আজকে নেওয়া হচ্ছে না, আমি ঢাকা থেকে আজকে সকালে জানলাম যে আজকে নেওয়া হচ্ছে না। একটু টেকনিক্যাল প্রবলেম দেখা দিয়েছে ওই এয়ারক্র্যাফট নিয়ে। সে ক্ষেত্রে হয়তো এক-আধ দিন দেরি হতে পারে।’

আরাকান আর্মি বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আরাকান আর্মির সাথে আমাদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সম্ভব নয়। তারা একটা নন-স্টেট অ্যাক্টর। আমরা স্টেট হিসেবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা যেমন মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ, থাইল্যান্ড বা ভারতের সাথে করতে পারি, সেটা তাদের সাথে করতে পারি না। তবে আমাদের স্বার্থ যেহেতু আছে, আমাদের দেখতে হবে। এই ঘটনা যাতে কমে বা আদৌ না ঘটে, এটার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

এ ছাড়াও নীলফামারীতে প্রস্তাবিত চীনা হাসপাতালের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত শুরু করে যেতে চায় বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে নির্বাচিত সরকার এলে এই কাজ সমাপ্ত করবে বলেও আশা তার। এ সময় পিছিয়ে পড়া রংপুরের প্রত্নতাত্ত্বিকসহ সব ক্ষেত্রে নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সরকারের সদিচ্ছার কথা জানান তৌহিদ হোসেন।

এরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সপরিবার রংপুর জমিদার বাড়ি তাজহাটে পরিদর্শনে যান। এ ছাড়াও বিকেলে রংপুর সার্কিট হাউসে চা-চক্রের কথা রয়েছে তৌহিদ হোসেনের। আগামীকাল রংপুরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল পরিদর্শন করার কথাও রয়েছে তাঁর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত, রোববার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করে শুরু হওয়া সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষকেরা রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর দু’টি মোর্চা ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ ও ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ নেতারা এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।

কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমাদের নৈতিকতা, মানবিকতা এবং সন্তানতুল্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে’ রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন বা তালাবদ্ধ কর্মসূচি স্থগিত করা হলো। রোববার থেকে সব শ্রেণির তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) চলবে।

এদিকে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের ‘হয়রানিমূলক’ বদলি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

প্রাথমিকের শিক্ষক নেতাদের দাবি, বৃহস্পতিবার তিনজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৪৪ জন সহকারী শিক্ষককে নিজ জেলার বাইরে অন্য জেলায় বদলি করা হয়েছে। এসব বদলিকে তাঁরা ‘হয়রানিমূলক বদলি’ বলে মন্তব্য করেছেন।

শিক্ষক নেতারা দাবি করেছেন, ‘রেওয়াজ না থাকলেও নিজ জেলার বাইরে হয়রানি করতে প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বদলি করা হয়েছে।’

যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা ও অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এসব বদলির আদেশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে প্রাথমিক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন মাসুদ জানিয়েছেন, তাঁকে নোয়াখালী সদর উপজেলার কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরলক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আরেক আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি জানিয়েছেন, তিনিসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত অন্তত ৪৪ জন সহকারী শিক্ষককে অন্য জেলায় প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বদলি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তিনি বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রথমে শোকজ ও পরে বদলি করা হলো। এটি হয়রানিমূলক বদলি, আমাদের শাস্তি দিয়েছে কারণ আমরা শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির পক্ষে লড়াই করেছি। কিন্তু অনেক শিক্ষক যাঁরা আন্দোলনে জড়িত ছিলেন না তবুও তাঁরা বদলি হয়েছেন।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ অনুসারীরা সরকারের দেওয়া আশ্বাস বাস্তবায়নের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালন করেছেন। সোমবার থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেশ কিছু স্কুলে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা তা বর্জন করে কর্মবিরতি চালিয়ে যান।

কয়েক দিন আগে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে তাঁরা আন্দোলন করছিলেন। পরে ১১ তম গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেন।

গত ৮ নভেম্বর শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ ব্যানারে সেদিন বিকেলে তাঁরা ‘কলম বিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিপেটা, কাঁদুনে গ্যাস প্রয়োগ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। সেসময় বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষকেরা পরদিন থেকেই কর্মবিরতি শুরু করেন।

পরে ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা, যেখানে একাদশ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ এবং উচ্চতর গ্রেড ও পদোন্নতির জটিলতা নিরসনে সরকারে আশ্বাস দিয়েছে জানিয়ে ওই দিন রাতে তাঁরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যালটের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন এসপিরা

  • দেশের নবজন্মে ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন এসপিরা: প্রধান উপদেষ্টা
  • সবাইকে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহিত করতে আইজিপির পরামর্শ।
শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ০৫
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।

রাজধানীর রাজারবাগে আজ বৃহস্পতিবার সদ্য পদায়ন পাওয়া ৬৪ জেলার এসপি, কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সব নতুন এসপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব ও মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।

আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বক্তব্য দেওয়া এসপিদের সবার আলোচনাতেই কমবেশি ভোটকেন্দ্রে ব্যালটের নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে। আইজিপি বাহারুল আলম বৈঠকে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশ শতভাগ নিরপেক্ষ থাকবে। জেলায় জেলায় এসপিরা সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে এবং সবাইকে সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে। আইজি এসপিদের বলেছেন, যার যার জেলা ও আসন ধরে ধরে নির্বাচনের সকল প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এতে কাজটা সহজ হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলার এসপি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রশিক্ষণ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার ওপর জোর দিয়েছেন আইজিপি। তিনি বলেন, প্রত্যেক সদস্যকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত বা উত্তেজনার তথ্য আগে থেকেই সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা রেঞ্জের এক এসপি জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করার নির্দেশও দেওয়া হয়। তাঁর মতে, এসব অস্ত্র উদ্ধার করা গেলে সহিংসতার ঝুঁকিও কমে আসবে বলে মনে করে পুলিশ সদর দপ্তর।

বৈঠকের আলোচনা নিয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের এসপি ইয়াসমিন খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যার কথা বলা হয়েছে। ভোটার, ভোট, ভোটের কেন্দ্র নিয়ে আইজি স্যার আমাদের বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’

এর আগে সকালে এসপিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন বাংলাদেশের সূচনা করবে।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে। এই জন্ম দিতে আপনারা (এসপি) ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই আপনাদের দায়িত্ব।’

অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার সেই ইতিহাস বদলানোর সুযোগ এসেছে। যেন দেশে-বিদেশে সবাই বলতে পারে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এ নির্বাচন কেবল রুটিন নির্বাচন নয়; এটি গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী নির্বাচন। যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, সেই স্বপ্নের স্থায়ী ভিত্তি তৈরির সুযোগ এই নির্বাচন।

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেই চিঠি দায়িত্ববোধের বার্তা দিয়ে গেছে। এসপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কর্মস্থলে যাওয়ার আগে আনাসের চিঠিটা কাছে রাখবেন। সেটাই আপনাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেবে।’

পুলিশ সুপারদের পদায়নে লটারির কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর লক্ষ্য ছিল পক্ষপাতহীনতা নিশ্চিত করা। এতে ব্যক্তিগত অসুবিধা হলেও দায়িত্ব পালনে মনোযোগ বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত