Ajker Patrika

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অ্যামনেস্টি মহাসচিবের খোলা চিঠিতে সমালোচনা ও কিছু দাবি

আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৪, ০২: ০৫
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অ্যামনেস্টি মহাসচিবের খোলা চিঠিতে সমালোচনা ও কিছু দাবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড। চিঠিতে কিছু পর্যবেক্ষণ ও দাবি তুলে ধরেছেন তিনি। 

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) এই চিঠি অ্যামনেস্টির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। চিঠিতে ক্যালামার্ড লিখেছেন, বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সাম্প্রতিক সহিংস দমনাভিযানের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ নিয়ে আমি আপনাকে লিখছি। সহিংসতা বন্ধ, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং বিক্ষোভের সময় ২০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করতে জরুরি ও দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আপনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। 

ক্যালামার্ড লিখেছেন, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত ২৮ জুলাই সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন যে, সহিংসতায় ১৪৭ জন নিহত হয়েছেন। যদিও বেসরকারি সূত্র যেমন: প্রথম আলোর তথ্য অনুযায়ী, সহিংসতায় কমপক্ষে ২১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী বিক্ষোভ দমনাভিযানের অন্যতম হয়ে উঠেছে। বিক্ষোভ শান্ত করতে দেশজুড়ে পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এত বেশি প্রাণহানি বিক্ষোভ ও ভিন্নমতের প্রতি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের চরম অসহিষ্ণুতার দুঃখজনক অধ্যায় হয়ে উঠেছে। বিক্ষোভকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহারসহ আইনবহির্ভূত বলপ্রয়োগ মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের প্রতি কর্তৃপক্ষের নিষ্ঠুর অবহেলা এবং আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের বাধ্যবাধকতা মেনে চলার ক্ষেত্রে শোচনীয় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গত ১০ দিনে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও তথ্য–উপাত্ত সংরক্ষণ করেছে উল্লেখ করে সংস্থাটির প্রধান লিখেছেন, পৃথক দুটি ঘটনায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তথ্য–উপাত্ত যাচাই করেছে যাতে ছয় দিন যোগাযোগে বিধিনিষেধ (ইন্টারনেট বন্ধ) চলাকালে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর আইন–বহির্ভূতভাবে বলপ্রয়োগ, আইন–বহির্ভূতভাবে প্রাণঘাতী ও কম প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহারের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে। 

তিনি লিখেছেন, আমরা দেখতে পেয়েছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছররা গুলির বেআইনি ব্যবহার, শিক্ষার্থীরা আবদ্ধ স্থানে থাকা অবস্থায় সেখানে কাঁদানে গ্যাসের বিপজ্জনক ব্যবহার এবং একে (AK) ঘরানার অ্যাসল্ট রাইফেলের মতো প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্রের নির্বিচার ব্যবহার হয়েছে। 

অ্যামনেস্টি আরও দেখতে পেয়েছে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল) হামলা চালিয়েছে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের ওপরও তারা হামলা করেছে। 

এই বিক্ষোভের মধ্যে গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যা থেকে বাংলাদেশের মানুষ দেশজুড়ে ইন্টারনেট শাটডাউনের মুখোমুখি হয়েছে। ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ করার আগে দেশজুড়ে মোবাইল ইন্টারনেট সাময়িক বাধাগ্রস্ত করা হয়। এরপর কিছু এলাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত ১৯ জুলাই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা জারি করে রাজধানীতে সব ধরনের মিছিল–সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। 

গত ১৯ জুলাই শুক্রবার মধ্যরাতে পুলিশকে ‘দেখামাত্র গুলি’ করার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং কারফিউ জারি করা হয়। দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ, দেশজুড়ে কারফিউ জারি করে ‘দেখামাত্র গুলি’ করার নির্দেশ এবং ঢাকায় সব ধরনের বিক্ষোভের ওপর নিষেধাজ্ঞা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপর নজিরবিহীন দমন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এ ধরনের বিধিনিষেধ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তার লঙ্ঘন। 

আমরা জানতে পেরেছি, গত ২৩ জুলাই দেশে ছয় দিন পর ইন্টারনেট ফিরে আসে এবং ২৪ জুলাই কারফিউ শিথিল হয়। আর ২৮ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট ফিরে আসে। তবে এখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ রয়েছে। 

ক্যালামার্ড চিঠিতে আরও লিখেছেন, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের বেশির ভাগ বিরোধী দলের নেতা–কর্মী, আন্দোলনকারী, শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী। এ ছাড়া শুধু রাজধানীতেই থানায় ২০০ টির মতো মামলা করে ২ লাখ ১৩ হাজারের বেশি ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এসব আসামির বেশির ভাগই অজ্ঞাতনামা। এফআইআরে কারও নাম না দেওয়ার কৌশলটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য যে কাউকে চাইলেই গ্রেপ্তার করার সুযোগ এনে দেয়। গণগ্রেপ্তার ও ছাত্র বিক্ষোভকারীদের নির্বিচারে আটকে রাখা ভয়ের পরিবেশকে আরও দীর্ঘায়িত করেছে। 

এটা লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশে অসহিষ্ণুতা ও ভিন্নমত দমন বেড়ে যাওয়ার বিস্তৃত পটভূমিতে ছাত্র বিক্ষোভের ওপর এমন ভয়াবহ দমনাভিযান চালানো হয়েছে। দমনমূলক আইন যেমন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮, যা পরবর্তী সময়ে সব ধারা প্রায় একই রকম রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ভিন্নমত বা সমালোচনার জন্য সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও অ্যাকটিভিস্টদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়। 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন বাধ্যবাধকতাগুলোর প্রতি সম্মান দেখানো, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার রক্ষা এবং বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মানবাধিকার সমুন্নত রাখার পদ্ধতি অবলম্বনের আহ্বান জানানো হয়। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার বারবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা সমুন্নত রাখতে অনাগ্রহ দেখিয়েছে এবং সহিংসতা বন্ধে কোনো অর্থবহ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। 

এরই পরিপ্রেক্ষিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড চিঠিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে—

অবিলম্বে সম্পূর্ণরূপে কারফিউ প্রত্যাহার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া, ভবিষ্যতে বিক্ষোভ দমনে কারফিউতে ‘দেখামাত্র গুলি’ করার নির্দেশ ও ইন্টারনেট বন্ধ করা হবে না বা অন্যান্য মৌলিক অধিকারগুলো লঙ্ঘন করা হবে না—এমন নিশ্চয়তা দেওয়া। 

শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে গিয়ে যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে সংযম দেখানোর নির্দেশ, বিক্ষোভকারীদের ওপর অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ না করা এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ। 

বিক্ষোভ দমনের সময় হতাহতের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ, কার্যকর, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করা। এ ঘটনায় আইনবহির্ভূতভাবে শক্তিপ্রয়োগের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান। 

বাংলাদেশের সংবিধান এবং মানবাধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান এবং এ ক্ষেত্রে যেসব আইনি বাধা রয়েছে, যেমন: সাইবার নিরাপত্তা আইন ও ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা বিলুপ্ত করুন। 

ওপরের বাধ্যবাধকতাগুলো বাস্তবায়িত হলে আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে মানবাধিকারের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার প্রদর্শিত হবে বলে সব শেষে উল্লেখ করেছেন ক্যালামার্ড। তিনি লিখেছেন, বিশ্ব তাকিয়ে আছে এবং এটা অপরিহার্য যে বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষা করা হচ্ছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিমানবন্দর-৩০০ ফুট-গুলশানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিজিবি মোতায়েন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৩
বিমানবন্দর, ৩০০ ফুট ও গুলশানসহ রাজধানীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
বিমানবন্দর, ৩০০ ফুট ও গুলশানসহ রাজধানীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদারে বিমানবন্দর, ৩০০ ফুট ও গুলশানসহ রাজধানীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিজিবি সদর দপ্তর থেকে এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ১২টা ১৫ মিনিটে লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে বিমানের বিজি-২০২ ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন তারেক রহমান। স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও একমাত্র কন্যা জাইমা রহমানও তাঁর সঙ্গে আসছেন।

সকাল ৯টা ৩৪ মিনিটে একটি ছবি শেয়ার করে ফেসবুকে তারেক রহমান জানান দেশের সীমানায় প্রবেশ করেছেন তিনি। পোস্টে লেখেন ‘দীর্ঘ ৬ হাজার ৩শ ১৪ দিন পর বাংলাদেশের আকাশে!’

এর কিছুক্ষণ আগেই উড়োজাহাজের ভেতরে নির্দিষ্ট আসনে বসা তারেক রহমান বিমানের টিকিট হাতে নিয়ে একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন—ফেরা।

এদিকে তারেক রহমানকে সংবর্ধনা দিতে ঢাকার ৩০০ ফুট এলাকায় ৪৮ ফুট বাই ৩৬ ফুটের মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, কুড়িল থেকে সংবর্ধনা মঞ্চ পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে তারেক রহমানকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন রঙের ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। মঞ্চের দুই পাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টে লাগানো হয়েছে মাইক।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান তারেক রহমান। এরপর আর ফিরতে পারেননি। দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে আজ দেশে ফিরছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজ শুভ বড়দিন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬: ৪৩
আজ শুভ বড়দিন

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’ আজ ২৫ ডিসেম্বর। এই ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট আজকের এই দিনে প্রাচীন ফিলিস্তিনের বেথলেহেম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা এ দিনটিকে ‘বড়দিন’ হিসেবে উদ্‌যাপন করে থাকে। দিনটি উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার সরকারি ছুটি।

খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতেই প্রভু যিশুর পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল। মুসলিমদের কাছে যিশুখ্রিষ্ট হজরত ঈসা (আ.) হিসেবে পরিচিত। ঈসা (আ.)-এর ওপর নাজিল হওয়া আসমানি কিতাবের নাম ইঞ্জিল শরিফ। তবে দুই ধর্মের বিশ্বাসে কিছু তফাতও রয়েছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টান ধর্মানুসারীরাও যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বড়দিন উদ্‌যাপন করবে।

বড়দিন উপলক্ষে সারা দেশে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বাড়ি ও গির্জা উৎসবের সাজে সাজানো হয়। এ দিন গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

অনেক পরিবার তাদের বাড়িতে তৈরি করে প্রতীকী গোয়ালঘর। বিদেশি অতিথিদের বিবেচনায় তারকা হোটেলগুলো ক্রিসমাস ট্রি, সান্তা ক্লজসহ বিভিন্ন অনুষঙ্গ দিয়ে সাজানো হয়।

বড়দিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মহামতি যিশুখ্রিষ্ট ছিলেন মানবজাতির মুক্তির দূত এবং শান্তি, সত্য ও ন্যায়ের প্রচারক। তাঁর আদর্শ ভালোবাসা, সেবা ও ক্ষমার শিক্ষা দেয়। ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে দেশ ও জনগণের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। বড়দিন সবার জীবনে আনন্দ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বাণীতে বলেন, বড়দিন শান্তি, ন্যায় ও মানবমুক্তির বার্তা বহন করে। যিশুখ্রিষ্টের মানবসেবা, ভালোবাসা ও ক্ষমার আদর্শ অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বড়দিন উদ্‌যাপন দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আরও সুদৃঢ় করবে। বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

আতশবাজি, পটকা ও ফানুস নিষিদ্ধ

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান পবিত্র বড়দিন উদ্‌যাপন উপলক্ষে আতশবাজি, পটকা ফোটানো এবং ফানুস ও গ্যাস বেলুন ওড়ানো নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুভ বড়দিন ভাবগম্ভীর ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশের ২৮ ধারার ক্ষমতাবলে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামী শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় সব ধরনের আতশবাজি, পটকা ফোটানো এবং ফানুস ও গ্যাস বেলুন ওড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বড়দিনের অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও নিরাপদে উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ নগরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পদত্যাগ করলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকশ চৌধুরী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৪০
খোদা বকশ চৌধুরী। ফাইল ছবি
খোদা বকশ চৌধুরী। ফাইল ছবি

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন। তিনি প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতাপ্রাপ্ত ছিলেন।

খোদা বখশ চৌধুরীর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন জানিয়ে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে শেষ দিকে এসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে গুঞ্জন ওঠে। ওই পদে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও গুঞ্জন ছিল।

সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছিল, গত মঙ্গলবার রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার কথা ছিল খোদা বখশ চৌধুরীর। কিন্তু এ নিয়ে উপদেষ্টাদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হওয়ায় আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন প্রধান উপদেষ্টা।

একটি সূত্র বলছে, উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় খোদা বখশ চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন।

এর আগে গত ১০ মার্চ প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলামও এভাবে পদত্যাগ করেছিলেন।

অধ্যাপক আমিনুলকে শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু গত ৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও মানবাধিকারকর্মী সি আর আবরারকে শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পাঁচদিন পর পদত্যাগ করেন অধ্যাপক আমিনুল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই অভ্যুত্থানে চানখাঁরপুলে হত্যাকাণ্ডের রায় ২০ জানুয়ারি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ০১
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুলে ৬ জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আগামী ২০ জানুয়ারি রায় দেবেন ট্রাইব্যুনাল। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বুধবার রায়ের জন্য এই দিন ধার্য করেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

এই মামলায় আট আসামির বিরুদ্ধে গত ১৪ জুলাই অভিযোগ গঠন করা হয়। আট আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার থাকা শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, সাবেক কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। আর পলাতক রয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আক্তারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।

যাত্রাবাড়ীতে তাইম হত্যায় ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশ কর্মকর্তার ছেলে ইমাম হাসান তাইম হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১১ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। যাতে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারদের হাজিরের জন্য আগামী ৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পলাতকদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন ওসি আবুল হাসান ও তৎকালীন ওসি (তদন্ত) জাকির হোসাইন। আর পলাতক রয়েছেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, ওয়ারী জোনের সাবেক ডিসি ইকবাল হোসাইন ও এডিসি এস এম শামীম, ডেমরা জোনের তৎকালীন এডিসি মো. মাসুদুর রহমান মনির, তৎকালীন সহকারী পুলিশ কমিশনার নাহিদ ফেরদৌস, যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) ওহিদুল হক মামুন, এসআই (নিরস্ত্র) সাজ্জাদ উজ জামান ও মো. শাহদৎ আলী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত