Ajker Patrika

ফিরে দেখা ২০২৪ /রাজনৈতিক সহিংসতা ছিল বছরজুড়ে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০: ১৮
ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের মাধ্যমে ইতিহাসের বাঁকবদল। ছবি: আজকের পত্রিকা
ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের মাধ্যমে ইতিহাসের বাঁকবদল। ছবি: আজকের পত্রিকা

বছরের শুরুতে ৭ জানুয়ারি একতরফা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা করেছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তবে নির্বাচন নিয়ে মাঠে সেই অর্থে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কিন্তু সেই নির্বাচন ঘিরে বছরের শুরু থেকেই দেখা যায় রাজনৈতিক কোন্দল। এরপর ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা, ঘিরে তোলপাড় ছিল সারা দেশ। একপর্যায়ে নজিরবিহীনভাবে ভেঙে পড়ে পুলিশি ব্যবস্থা। চোর ডাকাত খুন ছিনতাইকারীদের দাপট ছেড়ে যায় ঢাকাসহ সারা দেশে।

তবে বছরের সবচেয়ে আলোচনা তৈরি করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্বিচার গুলি চালানো। তাদের হাতে খুন হয় প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। এরপর যখন শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় তখন জনরোষের ভয়ে শীর্ষ কর্মকর্তারাসহ সদস্যদের বড় অংশ আত্মগোপনে চলে যায়। বিদেশে পালিয়ে যায় কেউ কেউ। চাকরিচ্যুত, বদলি আর থানায় থানায় হামলার ঘটনা ঘটতে থাকে। ভঙ্গুর অবস্থা দেখা যায় পুলিশ বাহিনীতে। বছর শেষ হতে নিলেও সেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আর নিয়ন্ত্রণে আসে না।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যখন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়। তখন আসলে কিছু থাকে না। পরিস্থিতি তখন অবনতি হয়। অপরাধীরা সহ সুবিধাবাদীরা সুযোগ নেয়।

সংঘাত-সহিংসতায় বছর শুরু

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগের সাজানো এই নির্বাচন ঘিরেও বেশ কিছু সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রিক ৩৪৫টি সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন সাতজন। আহত হন পুলিশের সদস্যসহ সাড়ে চার শতাধিক ব্যক্তি।

ওই নির্বাচনের দুই দিন আগে ৫ জানুয়ারি যশোরের বেনাপোল থেকে ঢাকায় আসা ট্রেন বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়া হয়। এতে দুই নারী, এক শিশুসহ অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়। ওই আগুন কারা দিয়েছিল, তা এখনো শনাক্ত হয়নি।

কলকাতায় সংসদ সদস্য হত্যা

এই বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা ছিল কলকাতায় বাংলাদেশের তৎকালীন সংসদ সদস্য (ঝিনাইদহ-৪) আনোয়ারুল আজীমকে নৃশংসভাবে হত্যা। ১২ মে ভারতে গিয়ে পরদিন রাতে কলকাতার একটি বহুতল আবাসিক ভবনে তাঁকে হত্যার পর মরদেহ টুকরা টুকরা করা হয়। পরে কলকাতার দুটি স্থান থেকে কিছু হাড় ও মাংস উদ্ধার করা হয়।

সাবেক সংসদ সদস্য (ঝিনাইদহ-৪) আনোয়ারুল আজীম। ছবি: সংগৃহীত
সাবেক সংসদ সদস্য (ঝিনাইদহ-৪) আনোয়ারুল আজীম। ছবি: সংগৃহীত

ঘটনার সাত মাস পর ২০ ডিসেম্বর কলকাতার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আনোয়ারুলের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌসের (ডরিন) ডিএনএ নমুনার সঙ্গে উদ্ধার হওয়া ওই দেহাবশেষের ডিএনএর মিল পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছিল, দেশে খুনের পরিকল্পনা করে সেটা বাস্তবায়ন করা হয় কলকাতায়। এই ঘটনায় কলকাতায় এবং সেখান থেকে দেশে ফিরে আসা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এমনকি ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককেও গ্রেপ্তার করা হয়। তবে এই ঘটনায় ঢাকায় ও কলকাতার আদালতে একাধিক আসামি জবানবন্দি দিলেও তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।

রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ আগুন। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ আগুন। ছবি: সংগৃহীত

বেইলি রোডে অবহেলার আগুনে ৪৬ মৃত্যু

২০২৪ সালে বড় ধরনের ঘটনা-দুর্ঘটনার মধ্যে ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি ভবনে (সাততলা) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড অন্যতম। এতে নারী, শিশুসহ ৪৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। ওই ভবন দীর্ঘদিন ধরেই অগ্নিঝুঁকিতে ছিল। এটাকে নেহাত দুর্ঘটনা নয়, প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার নির্মম উদাহরণ হিসেবে দেখছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। যদিও ইমারত বিধিমালা ও অগ্নিনিরাপত্তা–সংক্রান্ত নির্দেশনা না মানার জন্য তদারক সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

গণ-অভ্যুত্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি

এ বছরের ৫ জুন যখন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করে দেয়, তখন কারও ধারণাই ছিল না যে পরের দুই মাসের মধ্যে সেটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটবে। শেষ পর্যন্ত এটি শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের টানা শাসন অবসানের দিকে নিয়ে গেছে। সেদিন হাইকোর্টের সেই আদেশটি অনেক পত্রিকায় তেমন গুরুত্বও পায়নি। কিন্তু পরবর্তী পাঁচ সপ্তাহের মাথায় সেই বিক্ষোভের জেরে এক সময় ১৬ বছর ধরে কঠোরভাবে বিরোধী দলকে দমন করে একটানা ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনাকে গোপনে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে হয়।

জুলাই বিক্ষোভের সময় সরাসরি গুলি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছবি: আজকের পত্রিকা
জুলাই বিক্ষোভের সময় সরাসরি গুলি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ছবি: আজকের পত্রিকা

আন্দোলনটি শুরুতে ছাত্রদের কোটা সংস্কার কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এর সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার, নানা বয়সের লাখো মানুষ অংশ নিতে শুরু করে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের নজিরবিহীন সংঘাত যেন থামে না। একপর্যায়ে কারফিউও জারি করা হয়। প্রথম দিকে আন্দোলন দমাতে ছাত্র জনতার ওপর গুলি চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের গুলিতে মারা যান প্রায় দুই হাজার জন সাধারণ মানুষ।

সারা দেশে কোথাও পুলিশ ছিল না

গণ আন্দোলন ও সহিংসতার মধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নজিরবিহীনভাবে পুলিশ ছাড়া একদিন ছিল বাংলাদেশ। যেখানে অনেকগুলো থানা ফাঁকা পড়েছিল, আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কোথাও কাজ করেনি পুলিশ।

ছাত্র-জনতার রাজপথ দখলে নেওয়ার তুমুল আন্দোলনের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর থেকেই দেশজুড়ে থানাসহ পুলিশের স্থাপনাগুলোতে একের পর এক হামলা হতে থাকে। নির্বিচারে আক্রমণ হতে থাকে থানায়, ভাঙচুর ও লুটপাটও করা হয় অনেক থানায়।

এসব হামলায় বহুসংখ্যক পুলিশ হতাহত হলে অন্যরা নিরাপদে সরে যেতে থাকেন। এতে করে এমন নজিরবিহীন অবস্থা তৈরি হয় বলে জানায় পুলিশ কর্মকর্তারা। জীবন বাঁচাতে আত্মগোপন করেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারাসহ বেশির ভাগ সদস্য। যে কারণে থানাগুলো ছিল পুলিশ শূন্য ও অরক্ষিত।

মব জাস্টিস চলে কয়েক মাস

৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় দেশজুড়ে বেশ কিছু হতাহত ও সম্পদহানির ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা সরকার শক্ত অবস্থান না নিতে পারায় এসব ঘটনা বাড়তে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গণপিটুনিতে দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় যা উদ্বেগ ও নিন্দার ঝড় উঠে।

ঢাবির ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামের এক যুবককে দুই দফায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। প্রায় একইভাবে জাবির একদল শিক্ষার্থীর দফায় দফায় মারধরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা প্রাণ হারান। বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় গ্রামবাসী পিটিয়ে মেরেছে এক সন্দেহভাজন গরুচোরকে। এ ঘটনাগুলোকে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখছেন পর্যবেক্ষকেরা।

ঢাবির ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
ঢাবির ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বিশেষ করে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। প্রতিবাদমুখর হয় সংস্কার ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে সদ্য গঠিত সংগঠনগুলো। কোটাবিরোধী ও হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারীরা এ ধরনের ঘটনার নিন্দা করে নির্যাতনকারী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেন।

পুলিশের তথ্য বলছে, সারা দেশে ২৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে মব জাস্টিসের নামে। নির্যাতন, মারধর, লাঞ্ছনা, হামলার ঘটনা অসংখ্য। একের পর এক ঘটনায় দেশে নতুন আতঙ্ক ও উদ্বেগ তৈরি করেছে মব জাস্টিস। অন্তর্বর্তী সরকারের হুঁশিয়ারিও আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া রোধ করতে পারে না।

৫০ হাজারের বেশি পুলিশ বদলি

হাসিনা সরকারের পতনের পর নানা সংকট, সীমাবদ্ধতা আর বিপর্যয় কাটিয়ে নতুন রূপে ফেরার চেষ্টায় করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে দ্রুত বাহিনীর গতি ফেরানো, অন্যদিকে জনআস্থা অর্জন। এ দুই চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে চলছে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার।

৫ আগস্টের পর প্রতিদিন পুলিশের বিভিন্ন পদে আসছে নতুন মুখ। গত কয়েক মাসে বদলি ও পদায়ন পেয়েছে ঝড়ের গতি। এ সময়ে সারা দেশে পোশাকধারী দুই লাখ দুই হাজার পুলিশের বিপরীতে রদবদল করা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার পুলিশ সদস্য। সে হিসাবে প্রায় ৩০ শতাংশ পুলিশের চেয়ার বদলে গেছে। অল্প সময়ে এত সংখ্যক পুলিশ সদস্যের কর্মস্থল বদলের ঘটনা নজিরবিহীন।

৬৪ জেলার পুলিশ, সব রেঞ্জ ডিআইজি, মহানগর কমিশনার এবং সব থানার ওসি পদে আসে নতুন মুখ। পুলিশে এককভাবে সবচেয়ে বড় ইউনিট হলো ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। অন্তত ৩২ হাজার সদস্য এখানে কাজ করেন। এ পর্যন্ত এখানকার ১৮ হাজার সদস্যকে বদলি করা  হয়েছে। যারা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে ডিএমপির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে ঢুকছেন, তাদের দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ ও উদ্দীপনা। রাজধানীর মতো জায়গায় নতুন পরিবেশে কাজের ধরন নিয়ে সম্যক ধারণা দিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, কাজে গতি আনতে এই বদলি। গেল দেড় দশকে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ায় পুলিশ। গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও দেখা গেছে। পুলিশ এ পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার চেষ্টায় আছে।

আনসার বিদ্রোহ

রাজধানীর সচিবালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনরত আনসার সদস্যদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই এটা একটা বড় ঘটনা। সচিবালয়ে আনসারদের তোপের মুখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহসহ অন্তত ৪০ জন আহত হন। পরে এ ঘটনায় সচিবালয় ও আশপাশের এলাকা থেকে দুই নারী সদস্যসহ প্রায় চার শতাধিক আনসার সদস্যকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সচিবালয়ের সামনে আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ। ছবি: সংগৃহীত
সচিবালয়ের সামনে আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ। ছবি: সংগৃহীত

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষ নিজেদের মত প্রকাশ করেন। জাতির ক্রান্তি লগ্নে এ বাহিনীর আচরণে ক্ষুব্ধ হন সবাই। অনেকেই আনসার বাহিনীকে বিলুপ্তির দাবিও জানান।

র‍্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ গুম কমিশনের

পুলিশের ‘বিতর্কিত’ এলিট ফোর্স র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) বিলুপ্তির সুপারিশ করে গুম সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গুম সংক্রান্ত কমিশন তাদের প্রথম প্রতিবেদন জমা দেন। এতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে র‍্যাবের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উল্লেখপূর্বক ওই সুপারিশ করে কমিশন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র‍্যাবের বিরুদ্ধে গুম-খুনের অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে। ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুন কাণ্ডে র‍্যাব সদস্যদের যুক্ত থাকার প্রমাণ মেলে। ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার’ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে র‍্যাব এবং এর ছয় কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

এতসব অভিযোগের মুখেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র‍্যাবের ‘বিতর্কিত’ কর্মকাণ্ড থামেনি। তবে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্রমেই র‍্যাব বিলুপ্তির দাবি জোরালো হয়। সম্প্রতি পুলিশ সংস্কার নিয়ে দেওয়া প্রস্তাবের অংশ হিসেবে র‍্যাব বিলুপ্তির দাবি জানায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।

চট্টগ্রামে আইনজীবী খুন

চট্টগ্রামে আইনজীবী ও সহকারী সরকারি কৌঁসুলি সাইফুল ইসলাম (৩৫) হত্যার ঘটনা ছিল বছরের আরেক আলোচিত ঘটনা। ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের সঙ্গে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের অনুসারীদের সংঘর্ষের সময় সাইফুলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘর্ষে পুলিশের ১০ সদস্যসহ আহত হন অন্তত ৩৭ জন। এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল থেকে ইসকনকে উগ্রবাদী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে নিষিদ্ধের দাবি ওঠে।

জাহাজে সাত খুন

বছরের শেষে এসে ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুরের হাইমচরে সারবাহী জাহাজে সাত খুনের ঘটনা ঘটে। জাহাজের কর্মীদের ঘুমানোর কক্ষে কক্ষে পড়ে ছিল দেহগুলো। পরে জাহাজের কর্মী আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানকে (২৬) গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর র‍্যাব জানায়, নিয়মিত বেতন-ভাতা ও ছুটি না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে আকাশ মণ্ডল এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

সচিবালয়ে সন্দেহজনক আগুন

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে গভীর রাতে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় পাঁচটি মন্ত্রণালয়। গত বুধবার দিবাগত রাত প্রায় ২টার দিকে নয়তলা একটি ভবনে লাগা এই আগুন ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের টানা ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে ভবনটির চারটি তলায় অবস্থিত স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও সেতু, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র, কম্পিউটার ও আসবাব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুন নেভানোর কাজ করতে গিয়ে ট্রাকচাপায় মো. সোহানুর জামান নামে ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য নিহত হয়েছেন।

সচিবালয়ে সন্দেহজনক আগুন। ছবি: সংগৃহীত
সচিবালয়ে সন্দেহজনক আগুন। ছবি: সংগৃহীত

সচিবালয় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর (কেপিআই) একটি। এখানে নজিরবিহীন এই ভয়াবহ আগুনের উৎস এখনো জানা যায়নি। রাজনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ এই আগুনের পেছনে ষড়যন্ত্র আছে বলে মনে করলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্যালটের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন এসপিরা

  • দেশের নবজন্মে ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন এসপিরা: প্রধান উপদেষ্টা
  • সবাইকে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহিত করতে আইজিপির পরামর্শ।
শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ০৫
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।

রাজধানীর রাজারবাগে আজ বৃহস্পতিবার সদ্য পদায়ন পাওয়া ৬৪ জেলার এসপি, কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সব নতুন এসপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব ও মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।

আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বক্তব্য দেওয়া এসপিদের সবার আলোচনাতেই কমবেশি ভোটকেন্দ্রে ব্যালটের নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে। আইজিপি বাহারুল আলম বৈঠকে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশ শতভাগ নিরপেক্ষ থাকবে। জেলায় জেলায় এসপিরা সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে এবং সবাইকে সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে। আইজি এসপিদের বলেছেন, যার যার জেলা ও আসন ধরে ধরে নির্বাচনের সকল প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এতে কাজটা সহজ হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলার এসপি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রশিক্ষণ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার ওপর জোর দিয়েছেন আইজিপি। তিনি বলেন, প্রত্যেক সদস্যকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত বা উত্তেজনার তথ্য আগে থেকেই সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা রেঞ্জের এক এসপি জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করার নির্দেশও দেওয়া হয়। তাঁর মতে, এসব অস্ত্র উদ্ধার করা গেলে সহিংসতার ঝুঁকিও কমে আসবে বলে মনে করে পুলিশ সদর দপ্তর।

বৈঠকের আলোচনা নিয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের এসপি ইয়াসমিন খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যার কথা বলা হয়েছে। ভোটার, ভোট, ভোটের কেন্দ্র নিয়ে আইজি স্যার আমাদের বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’

এর আগে সকালে এসপিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন বাংলাদেশের সূচনা করবে।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে। এই জন্ম দিতে আপনারা (এসপি) ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই আপনাদের দায়িত্ব।’

অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার সেই ইতিহাস বদলানোর সুযোগ এসেছে। যেন দেশে-বিদেশে সবাই বলতে পারে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এ নির্বাচন কেবল রুটিন নির্বাচন নয়; এটি গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী নির্বাচন। যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, সেই স্বপ্নের স্থায়ী ভিত্তি তৈরির সুযোগ এই নির্বাচন।

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেই চিঠি দায়িত্ববোধের বার্তা দিয়ে গেছে। এসপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কর্মস্থলে যাওয়ার আগে আনাসের চিঠিটা কাছে রাখবেন। সেটাই আপনাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেবে।’

পুলিশ সুপারদের পদায়নে লটারির কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর লক্ষ্য ছিল পক্ষপাতহীনতা নিশ্চিত করা। এতে ব্যক্তিগত অসুবিধা হলেও দায়িত্ব পালনে মনোযোগ বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএনপির আপত্তি তোলা দুই অধ্যাদেশে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

বিএনপির পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা সত্ত্বেও পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ ও এনজিও-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও-সংক্রান্ত আইন পাস করা নিয়ে গত ২৮ নভেম্বর উদ্বেগ জানায় বিএনপি। নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপ নেওয়া থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিরত থাকারও আহ্বান জানায় দলটি।

সেদিন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, তাড়াহুড়ো করে দুটি আইন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাস করাতে চাইছে। একটি সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন, অন্যটি এনজিও-সংক্রান্ত আইন। আমরা মনে করি, নির্বাচনের আগে এই আইনগুলো পাস করার পেছনে সরকারের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য কাজ করছে; যা গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে বাধাগ্রস্ত করবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই তড়িঘড়ি করে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইন পাস করা সমীচীন হবে না। আমরা মনে করি, উপরোক্ত বিষয়ে আইনগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদে যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে প্রণয়ন করা সঠিক হবে। সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য।’

বিএনপির আপত্তি আমলে না নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে প্রধান করে আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচ সদস্যের পুলিশ কমিশন গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) দুটি ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হয়।

বৈঠক শেষে এ বিষয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

উপদেষ্টা জানান, পুলিশ কমিশনে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ছাড়াও একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন—এমন কোনো অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি কর্মরত হতে পারেন বা অবসরপ্রাপ্তও হতে পারেন এবং মানবাধিকার ও সুশাসন বিষয়ে অন্তত ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন একজন ব্যক্তি থাকবেন।

পুলিশকে জনবান্ধব করতে করণীয় সম্পর্কে সরকারকে সুপারিশ করবে কমিশন। এ ছাড়া পুলিশ যাতে সংবেদনশীল হয়, সে জন্য তাদের আধুনিকায়ন কোথায় কোথায় দরকার, কী ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার—সেগুলোও চিহ্নিত করবে কমিশন।

কমিশনের কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে—পুলিশের বিষয়ে নাগরিকদের যেসব অভিযোগ থাকবে, সেগুলো তদন্ত ও নিষ্পত্তি করা এবং পেশাগত বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেগুলোর নিষ্পত্তি করা। পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা ও উৎকর্ষ আনা, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান ইত্যাদি কাজও হবে এ কমিশনের।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সুপারিশ-পরামর্শ কেউ কখনো মানতে বাধ্য না। পুলিশের সঙ্গে জনগণের একটি ব্রিজ (সেতু) করে দেওয়ার জন্যই এ কমিশন। আর পুলিশের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে, আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে, মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সরকারের একটা যোগসূত্র স্থাপন করে দেওয়ার কাজ হচ্ছে এ কমিশনের।

আরপিও সংশোধন করে কোন কোন ভোট বিবেচনায় নেওয়া হবে না এবং পোস্টাল ব্যালটের ভোটগুলো গণনা পদ্ধতি সংযুক্ত করা হয়েছে।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ব্যালটে যেখানে একটা সিল পড়ার কথা, সেখানে একাধিক সিল পড়লে গণনা করা হবে না। যদি সিল না দেয়, তাহলে গণনা করা হবে না। যখন পোস্টাল ভোট দেওয়া হয়, তখন একটা ডিক্লারেশন স্বাক্ষর করা হবে। ওই ডিক্লারেশনে যদি স্বাক্ষর না থাকে, তাহলে গণনা করা হবে না। আর আমাদের ভোটের দিন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেবে নির্বাচন কমিশন। সেই সময়ে যে ব্যালটগুলো এসে পৌঁছাবে রিটার্নিং অফিসারের কাছে—সেগুলো একইভাবে গণনা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জিয়া পরিবারের আর কেউ ভিভিআইপি সুবিধা পাবে না: রিজওয়ানা হাসান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৫২
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।  ফাইল ছবি
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ফাইল ছবি

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ভিভিআইপি (অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া ভিভিআইপি মর্যাদা জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা পাবেন কি না—এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে উপদেষ্টা বলেন, ‘ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (ভিভিআইপি) ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে গত ২৩ নভেম্বর থেকে চিকিৎসা নেওয়ার মধ্যেই তাঁকে এই বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়।

বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) (সংশোধন) অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা যেখানেই অবস্থান করুন না কেন, তাঁদের দৈহিক নিরাপত্তা দেওয়া এ বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব হবে। এ ছাড়া বাহিনী বাংলাদেশে অবস্থানরত অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকেও নিরাপত্তা দেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পোস্টাল ভোট গণনায় সংশোধনী ও পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত
ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আজ বৃহস্পতিবার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে (আরপিও) দুটি ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রথম—এখন থেকে পোস্টাল ভোট সাধারণ ভোটের সঙ্গে একই সঙ্গে গণনা করা হবে। দ্বিতীয়—ব্যালট পেপারে একাধিক সিল থাকলে সেই ভোট বাতিল বলে গণ্য হবে।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশও পাস হয়েছে। পুলিশকে জনবান্ধব করার জন্য এই কমিশন সরকারকে সুপারিশ করবে। পাশাপাশি, পেশাগত ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোও এই কমিশন দেখবে।

এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নিশ্চিত করেন, ভিভিআইপি হিসেবে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তায় এসএসএফ সুবিধা দেওয়া নিয়ে একটি গেজেট জারি হয়েছে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়া এই সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে তিনি আরও জানান, জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা এই সুবিধা পাবেন না।

উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁর পরিবার বিদেশে নিতে চাইলে তার সব প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে। তিনি জানান, সরকার এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছে এবং বিএনপি চাইলে আরও সহায়তা দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত