Ajker Patrika

শাহবাগে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের গণ অবস্থান, বিশেষ ট্রাইব্যুনালসহ ৮ দফা দাবি

ঢাবি প্রতিনিধি
শাহবাগে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের গণ অবস্থান, বিশেষ ট্রাইব্যুনালসহ ৮ দফা দাবি

শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে সারা দেশে পূজামণ্ডপে হামলা এবং বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে গণ অবস্থান করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। 

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বানে এবং সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে আজ শনিবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। 

গণ অবস্থানের একপর্যায়ে এক ঘণ্টারও বেশি সময় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এতে পল্টন, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, বনশ্রী, মালিবাগ, টঙ্গী ও গাজীপুরগামী যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। 

রাস্তা অবরোধকারীরা ‘জাগো রে জাগো, হিন্দু জাগো’, ‘জিহাদিদের আস্তানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘মৌলবাদের আস্তানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘দুনিয়ার হিন্দু, এক হও, লড়াই কর’, ‘মন্দিরে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। 

গণ অবস্থানের পাশাপাশি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি অংশকে অনশন পালন করতেও দেখা যায়। দুপুর ১২টার সময় মানবাধিকার সংগঠক খুশী কবির এসে অনশনকারীদের পানি পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান। 

গণ অবস্থান কর্মসূচিতে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংগঠক সংহতি প্রকাশ করেন। 

গণ অবস্থানে সংহতি প্রকাশ করে এ ধরনের ‘সাম্প্রদায়িক হামলা’র পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, হামলা ঠেকাতে না পারার জন্য দায়ী প্রশাসনের একটি অংশ। এই হামলার প্রতিবেদন দেখে আমার মনে হয়েছে এই হামলা ঠেকাতে কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থতা আছে, কিছু ক্ষেত্রে অদক্ষতা আছে, কিছু ক্ষেত্রে গাফিলতি আছে। নোয়াখালীসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় আমি দেখেছি, প্রশাসনের উদ্দেশ্যমূলক নিষ্ক্রিয়তা। এটা খুবই ভয়াবহ ঘটনা। এই ধরনের হামলা ঠেকাতে সাম্প্রদায়িক জঙ্গি গোষ্ঠীকে আর ছাড় দেওয়া যায় না। 

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব পলাশ কান্তি দে বলেন, সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করতে হবে। এসব ঘটনা সবার আগে বিচার করতে হবে। কারণ, এটা অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। এটা আমাদের বাঁচা-মরার লড়াই। এই লড়াইয়ে জিততে হবে। 

মহিলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, সারা দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর যে হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা চলছে, তার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমরা আর নির্যাতিত হতে চাই না। যাঁরা কোনো দিন রাস্তায় নামেননি, তাঁরা ন্যায়বিচারের দাবিতে সেই কাকডাকা ভোরে থেকে সড়কে প্রতিবাদ করছেন। আমরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে থাকতে চাই না। 

নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, আমরা এই সাম্প্রদায়িক হামলার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আগে যেসব হামলা হয়েছিল, সেগুলোরও বিচার করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এই হামলার বিচার করতে হবে। আমাদের আট দফা দাবি দ্রুত মেনে নিতে হবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা মানা যায় না। এসব ঘটনার দ্রুত বিচার করতে হবে। 

গণ অবস্থান থেকে আট দফা দাবি ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ। দাবিগুলো হলো: 

শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে এবং পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। 

সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ, গৃহহীনদের পুনর্বাসন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া ছাড়াও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে অন্যূন ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ অথবা প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের একজনকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। 

নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলাকারী ও তাদের পেছনে থাকা চক্রান্তকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাস দমন আইনের আওতায় এনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুততম সময়ে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। 

সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের রোধে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে যারা দায়িত্ব পালনে গাফিলতি ও অবহেলা করেছেন তাঁদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে তাঁদের বিরুদ্ধেও দ্রুত শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। 

সামাজিক গণমাধ্যম ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছাড়াও সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে যারা, তাদের চিহ্নিত করে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। 

প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় যেসব জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসেননি তাঁদেরও চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

 ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সংগঠিত সাম্প্রদায়িক ঘটনাবলি তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনায় গঠিত সাহাবুদ্দিন কমিশনের সুপারিশ সংবলিত রিপোর্ট অনতিবিলম্বে প্রকাশ ও এর সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

 ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের দ্রুত বাস্তবায়নসহ ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছে প্রদত্ত অঙ্গীকার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। 

এই আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে বা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ‘চল চল ঢাকায় চল’ স্লোগানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান আন্দোলনকারীরা। 

এ ছাড়া চলতি বছরের ৪ নভেম্বর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শ্যামাপূজায় দীপাবলি উৎসব বর্জন করে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৬টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে স্ব স্ব মন্দিরে নীরবতা পালন এবং মন্দির-মণ্ডপ ফটকে কালো কাপড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতাবিরোধী স্লোগান সংবলিত ব্যানার টানানোর প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করার যে ঘোষণা তার প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়। 

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন), বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাসংঘ, বাংলাদেশ সনাতন কল্যাণ জোট, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতি, জন্মাষ্টমী উদ্‌যাপন পরিষদ, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি, বাংলাদেশ মাইনরিটি সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু লীগ, মাইনরিটি রাইটস ফোরামের বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু ফোরাম ও হিন্দু ছাত্র ফোরাম, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংরক্ষণ সমিতি, ইন্টারন্যাশনাল শ্রী শ্রী হরি গুরুচাঁদ মতুয়া মিশন, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ এবং জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হবে—দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন দূতকে প্রধান উপদেষ্টা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়েই দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, যা স্বৈরাচারী শাসনামলে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।’

আজ সোমবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত সার্জিও গোরের সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী এই আলাপে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনা, আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং তরুণ রাজনৈতিক কর্মী শহীদ শরীফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়।

ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকারী সার্জিও গোর সাম্প্রতিক শুল্ক আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রফেসর ইউনূসকে অভিনন্দন জানান। আলোচনার ফলে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

আলাপকালে মার্কিন বিশেষ দূত শহীদ ওসমান হাদির বৃহৎ জানাজার বিষয়টিও উল্লেখ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী শাসনের সমর্থকেরা নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে এবং তাদের পলাতক নেতা সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন। তবে তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আর প্রায় ৫০ দিন বাকি। আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন করতে চাই। এটি যেন স্মরণীয় হয়, সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।’

ফোনালাপের সময় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হিন্দুত্ববাদী বিক্ষোভের মুখে শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র বন্ধ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ২৪
আজ সোমবার দুপুরে হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্রে যান। ছবি: শিলিগুড়ি টাইমস
আজ সোমবার দুপুরে হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্রে যান। ছবি: শিলিগুড়ি টাইমস

পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র ভাঙচুর করেছেন হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ও শিলিগুড়ি মহানগর সংগঠনের সদস্যরা আজ সোমবার শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্রে ভাঙচুরের পর সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

দিল্লি ও কলকাতার কয়েকটি কূটনৈতিক সূত্র বাংলাদেশি গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ‘ডিইউডিজিটাল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কয়েক বছর ধরে শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারের ঘটনার প্রতিবাদে শিলিগুড়ির বাঘা যতীন পার্কে জমায়েত হন ভিএইচপি, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, শিলিগুড়ি মহানগর সংগঠনের শ তিনেক সদস্য। এরপর তাঁরা বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে বাংলাদেশের ভিসা অফিস ঘেরাও করেন। বিক্ষোভের সময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ, দীপু দাসের হত্যার বিচার ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানান।

পরে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে পাঁচজনের একটি প্রতিনিধিদল ভিসা অফিসে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এবং প্রতিবাদস্বরূপ ভিসা অফিস বন্ধ রাখতে বলে।

এ সময় প্রতিনিধিদলের এক সদস্য ডিইউডিজিটালের কর্মকর্তাকে ফোন করে বলেন, ‘আপনাকে একটাই অনুরোধ, এই অফিসের তালা খুলবেন না। আপনার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিন, এই অফিসের তালা খুলবে না। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হবে, আপনি এখানে ব্যবসা করবেন, সেটা হবে না। বাংলাদেশের ভিসাসংক্রান্ত ব্যানার অথবা বোর্ড আজকের মধ্যে সরিয়ে নিন।’

প্রতিনিধিদলের ওই সদস্য পরে স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, তাঁরা সংগঠনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে জানাবেন। বাংলাদেশে তাঁদের হিন্দু ভাইদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। এখান থেকে যেন কোনো ভারতীয়, কোনো হিন্দু বাংলাদেশে না যায়, ব্যবসা না করে, সেটা তাঁরা চান।

কলকাতা থেকে একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার কথা ভেবে ডিইউডিজিটাল আজ বেলা ৩টার আগেই ভিসা কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর পুনরায় ভিসা কেন্দ্র চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে শিলিগুড়িতে ওই ভিসা কেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদারের অনুরোধ জানিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কলকাতা দপ্তরে কূটনৈতিকপত্র পাঠিয়েছে কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশন।

এদিকে আজ ভারতের দিল্লি ও আগরতলা মিশন থেকেও ভিসা ও কনস্যুলার সেবা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও ত্রিপুরার আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনের সামনে এ-সংক্রান্ত নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‎পুলিশ সদর দপ্তরে ৬ ডিআইজিকে রদবদল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
পুলিশ সদর দপ্তর। ছবি: সংগৃহীত
পুলিশ সদর দপ্তর। ছবি: সংগৃহীত

‎পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ ছয়টি ডিআইজি পদে রদবদল করা হয়েছে। বর্তমানে কর্মরত ও সদ্য যোগদান করা ছয়জন ডিআইজিকে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়।‎

‎আজ সোমবার পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের সই করা এক অফিস আদেশে এ রদবদল করা হয়েছে।‎

‎ছয়জনের মধ্যে— পুলিশ সদরদপ্তরের লজিস্টিকস বিভাগের ডিআইজি খোন্দকার নজমুল হাসানকে অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে, তাপতুন নাসরীনকে ডিআইজি হেডকোয়ার্টার্সে, আশিক সাঈদকে ডিআইজি ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টে, সারোয়ার মুর্শেদ শামীমকে লজিস্টিকসে, আতিকুর রহমানকে ফিন্যান্সে এবং মোস্তাফিজুর রহমানকে ডেভেলপমেন্টের ডিআইজি হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামার আশা সরকারের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও বাজেট ব‍্যয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে মূল্যস্ফীতি, মজুরি প্রবৃদ্ধি, কৃষি উৎপাদন, আর্থিক ও বৈদেশিক খাত, চলতি হিসাব, প্রবাসী আয়, আমদানি ও ঋণপত্র নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে আশা প্রকাশ করা হয়, সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও কৃচ্ছ্রসাধনের ফলে ২০২৬ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।

এতে আরও বলা হয়, ১২ মাসের গড় হিসাবে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বিগত জুন ২০২৩-এর পর প্রথম চলতি বছরের নভেম্বরে ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। উল্লেখ্য, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মার্চ ২০২৩-এ মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ পেরিয়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়। তবে সার্বিক মূল্যস্ফীতি (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) ইতিমধ্যে চলতি বছরের জুন মাসে ৯ শতাংশের নিচে চলে আসে এবং নভেম্বরে এটি আরও কমে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ হয়। আশা করা যায়, সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও কৃচ্ছ্রসাধনের ফলে আগামী জুন মাসে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।

মজুরি প্রবৃদ্ধির বিষয়ে বলা হয়, বিগত কয়েক বছরে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধির হারের মধ্যে পার্থক্য ছিল অনেক বেশি, যার ফলে দেশের মানুষের প্রকৃত আয় কমে আসছিল। তবে চলতি অর্থবছরের সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধির হারের মধ্যে পার্থক্য অনেকটাই কমে এসেছে। সর্বশেষ গত নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি ও মজুরি প্রবৃদ্ধি (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) যথাক্রমে ৮ দশমিক ২৯ ও ৮ দশমিক ০৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড়েছিল ৯ দশমিক ০২ ও ৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। ফলে বিগত বছরগুলোতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ফলে প্রকৃত আয়ের পরিমাণ অনেক কমলেও বর্তমান অর্থবছরে এই অবস্থা থেকে ক্রমান্বয়ে উত্তরণ সাধিত হবে।

কৃষি উৎপাদনের বিষয়ে বলা হয়, কৃষি খাতে যথাযথ প্রণোদনা ও ব্যবস্থাপনার ফলে বিগত অর্থবছরে বোরো মৌসুমে বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে এবং বর্তমান সময় পর্যন্ত কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটায় আমন ধানেরও ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে চলতি অর্থবছরে সরকারের খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে মর্মে আশা করা যায়। উল্লেখ্য, চলতি ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমন ধানের উৎপাদন ১৬০ দশমিক ৯৫ লক্ষ টনে পৌঁছেছে। অবশিষ্ট ফসল কাটা হলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে আশা করা যায়। পাশাপাশি, আউশ ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা কম হলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় মোট উৎপাদন ৭ দশমিক ২০ শতাংশ বেড়েছে। দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন চলকের ভারসাম্যহীনতা ইতিমধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে চলে এসেছে।

চলতি ১৮ ডিসেম্বর গ্রোস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগস্ট ২০২৪ মাসে ছিল মাত্র ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি। মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল হয়ে আসা, প্রবাসী আয়ের গতি বৃদ্ধি এবং দেশের আর্থিক খাতে সম্প্রতি সুদের হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভবিষ্যতে ক্রমান্বয়ে আরও বাড়বে।

বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলতি হিসাব ঋণাত্মক ছিল এবং ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে -১৮ দশমিক ৭, -১১ দশমিক ৬, ও -৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে আর্থিক খাতে সুব্যবস্থাপনা ও অর্থ পাচার রোধের ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে এটি হয়েছে মাত্র ১৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে এটি হয়েছে ৭৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে পাঁচ লাখ কর্মীর বৈদেশিক নিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার এবং একই সময়ে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় হয়েছে, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরও উৎপাদনশীল করতে আমদানির ক্ষেত্রে আরোপিত বিধিনিষেধ অপসারণ করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বরে আমদানি প্রবৃদ্ধির হার ছিল -১ দশমিক ২ শতাংশ (ঋণাত্মক), যা বর্তমান অর্থবছরের (২০২৫-২৬) একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ১ শতাংশ।

মূলধনি যন্ত্রপাতির ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি ছিল -৩২ দশমিক ৮ শতাংশ (ঋণাত্মক), যা বর্তমান অর্থবছরের একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া শিল্পজাত কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১ শতাংশ, যা চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের একই সময়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ৯৮ শতাংশে। আর্থিক অব্যবস্থাপনার ফলে দেশের ইমেজের নিম্নগতি বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে, যার উদাহরণ ঋণপত্র খোলার হার ও ট্রেড ফাইন্যান্সিং সহজতর হওয়া।

এই বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত