Ajker Patrika

আইনের খসড়া

মেট্রোরেলে শাস্তির আওতায় আসছেন যাত্রী-কর্মী

সৌগত বসু, ঢাকা 
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩: ৪৩
গ্রাফিক্স আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স আজকের পত্রিকা

মেট্রোরেল চালায় যারা, সেই ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। আইন সংশোধন করে এখন আধুনিক নগর পরিবহনটির নিয়ন্ত্রণ থেকে সেই কর্তৃপক্ষকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সংশোধিত আইনের খসড়ায় মেট্রোরেলের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি পরিচালনা কোম্পানি ডিএমটিসিএলের হাতেই রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত খসড়ায় মেট্রোরেলে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরক দিয়ে ক্ষতি করা, যাত্রীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, ভাঙচুর, অশালীন কাজ করা, ভিক্ষা করা এবং অনুমতি ছাড়া শুটিং করার মতো বিভিন্ন অপরাধের জন্য অর্থদণ্ড বা জরিমানা কিংবা উভয় ধরনের সাজার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাত্রী ও ট্রেনের বিমাবিষয়ক ধারা বাতিলেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ডিএমটিসিএলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের যৌক্তিকতা নিয়ে কার্যত একমত হলেও সম্ভাব্য অনিয়ম ও অঘটনের ক্ষেত্রে কর্তাব্যক্তিদের দায়মুক্তির প্রস্তাবে উদ্বেগ জানিয়েছেন।

যাত্রী পরিবহন সেবা চালুর দুই বছর পূর্তির আগেই মেট্রোরেল পরিচালনায় এই বড় পরিবর্তনের আভাস দিয়েছে ডিএমটিসিএল। গত মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের দপ্তরে ২০১৫ সালের মেট্রোরেল আইন সংশোধন করে তৈরি করা ‘মেট্রোরেল নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা আইন, ২০২৪’-এর খসড়া চূড়ান্ত করার সভা হয়। এতে ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক, ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয়। এরপর মেট্রোরেল আইন প্রণয়ন করা হয় ২০১৫ সালে। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে মেট্রোরেলের প্রথম লাইনে যাত্রী পরিবহন শুরু হয়। শুরু থেকে মেট্রোরেল পরিচালনা করে আসছিল ডিএমটিসিএল। ডিটিসিএ আইন, ২০১২ অনুযায়ী এই সংস্থাই মেট্রোরেলের প্রধান কর্তৃপক্ষ। নতুন আইনে ডিটিসিএকে বাদ দিয়ে সব দায়িত্ব নিতে চাইছে ডিএমটিসিএল। ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালকই মেট্রোরেলের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নতুন আইনের খসড়ায় সেই ধারা বিলুপ্ত করা হয়েছে।

যাত্রীসেবার কিছু ধারার বিলুপ্তি মেট্রোরেল পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে (লাইসেন্সি) বাধ্যতামূলকভাবে মেট্রোরেল ও যাত্রীর জন্য বিমা করার নির্দেশনা রয়েছে বর্তমান আইনে। মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় পড়ে কোনো ব্যক্তি বা স্থাপনার ক্ষতি হলে ৯০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে আইনে। নতুন আইনে এ-সংক্রান্ত ধারা বিলুপ্ত করতে চায় ডিএমটিসিএল। এ ছাড়া মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসার বাধ্যতামূলক দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল লাইসেন্সিকে। কোনো আহত ব্যক্তি লাইসেন্সির মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা নিতে না চাইলেও তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যয়ভার পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এই আইনে। ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ নতুন আইনে এ ধারা বিলুপ্ত করতে চাইছে।

মেট্রোরেল আইনে ‘লাইসেন্সি’ বলতে এ পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণ, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বোঝানো হতো। নতুন আইনের খসড়ায় সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের জন্য এ সুযোগ রাখা হয়েছে। মেট্রোরেল লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে এর আগে কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ না থাকলেও ডিএমটিসিএল এখন সেই কর্তৃত্ব চাইছে।

বিভিন্ন অপরাধে সাজার বিধান

মেট্রোরেলের যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করলে এক বছর জেল অথবা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে শুধু জরিমানা ছিল। যাত্রী মদ্যপ বা মাতাল অবস্থায় থাকলে, ভাঙচুর বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে অথবা অশালীন কাজ বা গালিগালাজ করলে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে এটি ছিল না। মেট্রোরেলে ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক সামগ্রী বহন করলে ২০ হাজার টাকা অথবা এক বছর কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

মেট্রোরেলের কোনো কর্মচারীকে কর্তব্যরত অবস্থায় যদি নেশাগ্রস্ত পাওয়া যায়, তবে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হবে।

খসড়ায় অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরক দ্রব্যের মাধ্যমে মেট্রোরেলের সম্পত্তির (রেললাইন, বক্স-কাঠামো, স্টেশন ভবন এবং বিভিন্ন যন্ত্র ও অবকাঠামো) ক্ষতি করলে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। মেট্রোরেলে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য এক বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বিনা অনুমতিতে বিজ্ঞাপন, পোস্টার লাগালে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাস কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড হবে। মেট্রোরেলের ভেতরে পণ্য বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা এক বছর কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড হবে। অনুমতি ছাড়া শুটিং করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৬ মাস কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড প্রযোজ্য হবে। মেট্রোরেলে ভিক্ষা করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ৩ মাস কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড থাকবে। এসব বিধান আগের আইনে ছিল না।

বাড়ির ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ

নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ভূগর্ভস্থ মেট্রোরেল লাইন (এমআরটি টানেল বা পাতালরেল) নির্মাণের সময় ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করবে, যেন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ভবন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তবে নির্মাণকাজ চলার সময় কারও ভবনের কোনো ক্ষতি হলে মালিকপক্ষকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তবে জমির মালিক কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন না। এমআরটি পিলার বা টানেল নির্মাণের সময় পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নানা পরিষেবা অপসারণ বা স্থানান্তরের যৌক্তিক ব্যয় বহন করা হবে।

মেট্রোরেল নির্মাণ, পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণের কাজে কেউ বাধা দিলে তার সাজা ছিল দুই বছরের কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড। এই জরিমানার অঙ্ক ১০ লাখ টাকায় উন্নীত করতে চায় ডিএমটিসিএল।

চিত্র থেকে বাদ পড়ছে ডিটিসিএ

ডিটিসিএ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী তারা মেট্রোরেলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হলেও নতুন আইনের খসড়া তৈরি করার ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। ভাড়া নির্ধারণের জন্য এখন ডিটিসিএর প্রধান নির্বাহীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। খসড়ায় ডিটিসিএর প্রধান নির্বাহীকে বাদ দিয়ে ৯ সদস্যের কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। এর প্রধান হিসেবে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে চায় ডিএমটিসিএল।

সংশোধিত আইনের খসড়ার বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ গতকাল বুধবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেট্রোরেলের নতুন আইনটি এখনো সরকারের বিবেচনার অপেক্ষায়। মেট্রোরেল পরিচালনায় যুক্ত সব কর্তৃপক্ষকে নিয়েই এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে। তবে আইনটিতে খুব বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়নি।

প্রসঙ্গত, গতকাল ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটে গিয়ে আগের আইনটি পাওয়া যায়নি।

মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ‘মেট্রোরেলের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জাপানের জাইকার কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে কিছু ধারা পরিবর্তন করার কথা বলা হয়েছে। তবে সেগুলো সড়ক মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হবে, তারপর আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে পর্যালোচনার জন্য। এই আইন নিয়ে আরও আলোচনা হবে।’

ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতারের কাছে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

এ বিষয়ে খসড়া চূড়ান্ত করার বৈঠকে সভাপতিত্বকারী আরবান ট্রান্সপোর্ট অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাফিউল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নতুন আইনে ডিটিসিএকে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা থেকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এম শামছুল হক বলেন, ‘ডিটিসিএ মূলত সমন্বয় কর্তৃপক্ষ। মেট্রোরেলের শুরুর দিকে তাদের মাদার অর্গানাইজেশন করা হয়েছিল; কারণ, তখন স্পেশাল পারপাস ভেহিকেল (এসপিভি) আইনের সুবিধা ডিএমটিসিএলের ছিল না। এখন তা আছে। এ ছাড়া মেট্রোরেল পরিচালনা-সম্পর্কিত সব দায়দায়িত্ব এখন ডিএমটিসিএল পালন করছে। মাদার অর্গানাইজেশন হিসেবে তাদেরই থাকা উচিত।’

‘দায়মুক্তির’ ধারায় ক্ষোভ

আইনের খসড়ায় মেট্রোরেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘সরল বিশ্বাসে কৃতকর্মের’ সুরক্ষার বিধান রেখে বলা হয়েছে, সরকার, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ মেট্রোরেলের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী সরল বিশ্বাসে কোনো কাজ করলে তার বিরুদ্ধে মেট্রোরেলের নতুন আইন এবং আইনের ধারা অনুযায়ী কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।

খসড়ায় সম্ভাব্য অনিয়ম বা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কর্তাব্যক্তিদের দায়মুক্তির সুপারিশে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক এম শামছুল হক। তিনি বলেন, ‘ভুলটা হয়েছিল মেট্রোরেলের সাবেক এমডি এম এ এন ছিদ্দিকের আমলে। তিনি তাঁর পছন্দমতো অভিজ্ঞতাহীন কিছু লোককে নিয়োগ দিয়েছিলেন। মেট্রোরেল পরিচালনায় যখন তাঁদের নানা ব্যর্থতা সামনে আসছে, তখন তাঁরা নিজেদের অপরাধ ও দুর্বলতা ঢাকতে এখন দায়মুক্তির বিধান করতে চাইছেন।’ মেট্রোরেল ও যাত্রীর জন্য বিমার বিধান বাতিল করা হলে ডিএমটিসিএল যাত্রী হারাতে শুরু করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পদত্যাগ করলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকশ চৌধুরী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৪০
খোদা বকশ চৌধুরী। ফাইল ছবি
খোদা বকশ চৌধুরী। ফাইল ছবি

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন। তিনি প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ক্ষমতাপ্রাপ্ত ছিলেন।

খোদা বখশ চৌধুরীর পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করেছেন জানিয়ে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে শেষ দিকে এসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে গুঞ্জন ওঠে। ওই পদে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলেও গুঞ্জন ছিল।

সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছিল, গত মঙ্গলবার রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার কথা ছিল খোদা বখশ চৌধুরীর। কিন্তু এ নিয়ে উপদেষ্টাদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হওয়ায় আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন প্রধান উপদেষ্টা।

একটি সূত্র বলছে, উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় খোদা বখশ চৌধুরী পদত্যাগ করেছেন।

এর আগে গত ১০ মার্চ প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলামও এভাবে পদত্যাগ করেছিলেন।

অধ্যাপক আমিনুলকে শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু গত ৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও মানবাধিকারকর্মী সি আর আবরারকে শিক্ষা উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পাঁচদিন পর পদত্যাগ করেন অধ্যাপক আমিনুল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই অভ্যুত্থানে চানখাঁরপুলে হত্যাকাণ্ডের রায় ২০ জানুয়ারি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ০১
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুলে ৬ জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আগামী ২০ জানুয়ারি রায় দেবেন ট্রাইব্যুনাল। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বুধবার রায়ের জন্য এই দিন ধার্য করেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

এই মামলায় আট আসামির বিরুদ্ধে গত ১৪ জুলাই অভিযোগ গঠন করা হয়। আট আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার থাকা শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, সাবেক কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। আর পলাতক রয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আক্তারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।

যাত্রাবাড়ীতে তাইম হত্যায় ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশ কর্মকর্তার ছেলে ইমাম হাসান তাইম হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১১ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। যাতে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারদের হাজিরের জন্য আগামী ৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পলাতকদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন ওসি আবুল হাসান ও তৎকালীন ওসি (তদন্ত) জাকির হোসাইন। আর পলাতক রয়েছেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, ওয়ারী জোনের সাবেক ডিসি ইকবাল হোসাইন ও এডিসি এস এম শামীম, ডেমরা জোনের তৎকালীন এডিসি মো. মাসুদুর রহমান মনির, তৎকালীন সহকারী পুলিশ কমিশনার নাহিদ ফেরদৌস, যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) ওহিদুল হক মামুন, এসআই (নিরস্ত্র) সাজ্জাদ উজ জামান ও মো. শাহদৎ আলী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিন উপলক্ষে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা বিনিময়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৫১
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং

বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।

ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, বাংলাদেশের ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ, ন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ফেলোশিপ অব বাংলাদেশের সভাপতি বিশপ ফিলিপ পি অধিকারী, খ্রিষ্টধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ড. বেনেডিক্ট আলো ডি রোজারিও, জাতীয় চার্চ পরিষদ বাংলাদেশের সভাপতি খ্রিস্টোফার অধিকারীসহ দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় খ্রিষ্টধর্মের নেতারা তাঁদের শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিশ্বজুড়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সুনাম এবং দেশের অর্থনীতি ও সার্বিক পরিস্থিতির উন্নয়নে তাঁর ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনও সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে আয়োজিত হবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন।

আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং

আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে যিশুখ্রিষ্টকে সর্বজনীন উল্লেখ করে বলেন, যিশুখ্রিষ্টের ক্ষমা ও মানবসেবার মহান আদর্শ সামনে রেখে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষও এ বছর উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে বড়দিন উদ্‌যাপন করছে।

প্রধান উপদেষ্টাকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে আর্চবিশপ বিজয় এন ডি’ক্রুজ বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে জনগণ আপনার ওপর আস্থা রেখেছিল। আপনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। আমরা প্রার্থনা করি, একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আপনার প্রচেষ্টা সফল হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত নেতৃবৃন্দসহ সবাইকে বড়দিন ও আসন্ন নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আপনারাই সমাজের প্রতিবিম্ব। আপনাদের দেখলে বুঝতে পারি, সবকিছু ঠিক আছে কি না।’

আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং
আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে চাই। সে জন্যই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে জুলাই সনদ প্রস্তুত করা হয়েছে। এই সনদের ওপর গণভোটের মাধ্যমে দেশ আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে জনগণ যে রায় দেবে, পরবর্তী সময়ে সংসদ সেভাবেই সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

প্রধান উপদেষ্টা এ সময় আসন্ন নির্বাচন ও গণভোটের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করে তুলতে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে আড়াই কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান ট্রাস্টের নেতৃবৃন্দ। দেশব্যাপী ৮০০টি চার্চের মধ্যে তিন ধাপে এই অনুদান বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানান তাঁরা।

পরে বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে সরকার: প্রেস সচিব

বাসস, ঢাকা  
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০২
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ বুধবার বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজ বুধবার বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁর বাংলাদেশে ফেরাকে স্বাগত জানাই। তাঁর জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে।’

প্রেস সচিব আরও জানান, সরকার তাঁর নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়টি বিএনপির সঙ্গে পরামর্শ করছে এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।’

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকারীদের বিচারের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। আমরা গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পাচ্ছি এবং ঘটনার তদন্তে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাকশ্রমিক দীপু চন্দ্র দাস হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, ‘সরকার হত্যাকাণ্ডকে নিন্দা জানিয়েছে। ভিডিও বিশ্লেষণের মাধ্যমে অন্তত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা আজ উপদেষ্টা পরিষদকে জানিয়েছেন, দীপু হত্যার বিচার দ্রুত বিচার আইনের আওতায় সম্পন্ন হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি।’

প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনার বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকটি মামলা করা হয়েছে। সব দোষীকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত