Ajker Patrika

ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে টিআইবির উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে টিআইবির উদ্বেগ

প্রস্তাবিত ‘ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন’ এর খসড়ায় ব্যক্তিতথ্য সুরক্ষার নামে বিরুদ্ধ মত নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হবে। তা স্বাধীন মতপ্রকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি করছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আইনটি জনসাধারণের তথ্যের সুরক্ষার পরিবর্তে কোনোভাবেই যাতে সরকারের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে জনমত সৃষ্টি এবং ব্যক্তির মতপ্রকাশ ও বাঁক স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করার মাধ্যমে একটি ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যবহৃত না হয়, সে জন্য সরকারকে স্বচ্ছতার সঙ্গে আইন সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনকে একসঙ্গে নিয়ে বৃহৎ পরিসরে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে একটি সময়োপযোগী জনবান্ধব আইন প্রণয়নের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি। 

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ব্যক্তিজীবনে যেভাবে ডিজিটাল জগতের গুরুত্ব বাড়ছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসব প্ল্যাটফর্মে দেওয়া তথ্যের সুরক্ষায় ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এ জাতীয় আইন করা হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইনটির মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, জনগণের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যক্তি যেন ভার্চুয়াল জগতে নিরাপদ বোধ করেন, তার ব্যবস্থা করা। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে, হতাশাজনক হলেও সত্য যে, ইতিপূর্বে প্রণীত ‘নিরাপত্তা’ ও ‘সুরক্ষা’ শব্দযুক্ত আইনগুলো মোটাদাগে নিবর্তনমূলক হিসেবেই প্রমাণিত হয়েছে। পাশাপাশি, বিদ্যমান বিতর্কিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়ন পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজন যে সকল আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, পরবর্তী সময়ে তার আক্ষরিক প্রতিফলন ঘটেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘নিরাপত্তার’ পরিবর্তে স্বাধীন মতপ্রকাশ ও সরকারের সমালোচনাকারীদের কণ্ঠরোধ করার পাশাপাশি সরকারের অবস্থান সংহত করতে আইনটির যথেচ্ছ ব্যবহার আমরা লক্ষ করছি। সময়ের প্রয়োজনে অন্যান্য দেশের আদলে ‘পারসোনাল ডেটা প্রোটেকশন আইন’-এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই সত্যি, কিন্তু শঙ্কার বিষয় হলো আমাদের শাসকগোষ্ঠীর মানসিকতা, প্রবণতা ও উদ্দেশ্য! তাই, প্রস্তাবিত আইনটি যাতে অধিকতর জনবান্ধব, ব্যক্তিতথ্যের সুরক্ষা এবং স্বাধীন মত ও ভাব প্রকাশের সহায়ক হয়, তা নিশ্চিতে বৃহৎ পরিসরে সকল পক্ষের অংশগ্রহণে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে আইনটি করায় সরকারকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।'  

তথ্যসূত্রগুলো বলছে আইনের খসড়াটি ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলেও কোনো এক অনির্দিষ্ট কারণে তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এমন লুকোচুরির কারণ ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন রেখে ড. জামান বলছেন, 'এ পদক্ষেপ আইনটি নিয়ে সাধারণের মধ্যে আলোচনা ও মতামতের সুযোগকে বঞ্চিত করার প্রয়াস বলা যায়, যদিও সাধারণের বৃহত্তর কল্যাণে আইনটি প্রণয়নের কাজে হাত দিয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রে সকল সংশয় দূর করতে শিগগিরই খসড়া আইনটি সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশের মাধ্যমে সর্বসাধারণের মতামতের জন্য উন্মুক্ত করতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।' 

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রস্তাবিত আইনে জনসাধারণের তথ্যের দেখভাল করার জন্য ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ও একজন সরকারি কর্মকর্তাকে ‘মহাপরিচালক’ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হবে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, 'বিভিন্ন সময়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির পারিবারিক ও ব্যক্তিগত অডিও এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটলেও বিদ্যমান আইনি কাঠামোতে ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়নি। এ রকম একটি অবস্থায় প্রস্তাবিত আইনে সংশ্লিষ্ট মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘সরল বিশ্বাসের’ কর্মকাণ্ডকে নিষ্কলঙ্ক ও বিচারবহির্ভূত রাখার অসাংবিধানিক বিধান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পাশাপাশি সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদালতের দ্বারস্থ হয়ে ন্যায়বিচার ও প্রতিকার চাইতে পারবে না মর্মে প্রহসনমূলক ধারার অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সমাজের আইনের অংশ হতে পারে না।'  

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, 'সময়ের প্রয়োজনে আইনটি যদি প্রণয়ন করা হয়, তাহলে সেটা দেখভাল করার দায়িত্ব মহাপরিচালকের অধীনে কোনো এজেন্সির হাতে নয়, বরং একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের মাধ্যমে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির স্বার্থ সুরক্ষাসহ ব্যক্তি গোপনীয়তা ভঙ্গকারী অভিযুক্ত যে কোনো পক্ষকে যাতে আইনের আওতায় আনা যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে, প্রস্তাবিত আইনে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের ‘ডেটা নিয়ন্ত্রণ’ করার উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’ নির্ধারণ ও মহাপরিচালকের প্রতি তার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার কথা বলা হচ্ছে। যা, গবেষণা ও অধিপরামর্শমূলক কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের কাজকে ভীষণভাবে বাধাগ্রস্ত করবে।'  

‘বাংলাদেশ সরকার ফেসবুক ও ইউটিউবের কাছে যত তথ্য চেয়েছে, তার মাত্র ৪০ শতাংশ দিয়েছে’ একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রীর উদ্ধৃতি উল্লেখ করে ড. জামান বলছে, 'প্রস্তাবিত আইনটির মাধ্যমে কী সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের শতভাগ নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়! শত প্রতিকূলতার মাঝেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসমূহের কল্যাণে কিছুটা হলেও জনমত তৈরি ও প্রতিবাদমুখর হতে দেখা যায়। গণমাধ্যমে যেভাবে তথ্য এসেছে, তাতে আইনটির মধ্যে অনেক নিবর্তনমূলক ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাতে করে স্বাধীন মতপ্রকাশ ও সরকারের সমালোচনাকারীদের নির্বিচারে একহাত নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। ২০১৮ সালে মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে মিথ্যা বলে বিটিআরসির তথ্য সংগ্রহের উদাহরণ, নতুন আইনের অধীনে তা আরও সহজে করার শঙ্কা পুরো মাত্রায় রয়েছে, যার রাজনৈতিকভাবে অপব্যবহারের নতুন সুযোগই বাড়াবে। আর ব্যক্তি তথ্যের সুরক্ষার নামে এমনটা ঘটলে দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্র পিছিয়ে পরবে, জনকল্যাণ, বাঁক স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার চর্চা আরও পিছিয়ে যাবে, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সম্পূর্ণ বিরোধী। তাই প্রস্তাবিত আইনটি প্রণয়ন করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানাই।'

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাংবাদিক আনিস আলমগীরের মুক্তি চায় অ্যামনেস্টি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আনিস আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত
আনিস আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে (এটিএ) গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিক আনিস আলমগীরের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

আজ বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি জানায়, গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি ও আরও চারজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অন্যান্য মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। এই অভিযোগের পর ঢাকার একটি মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গবেষক রিহ্যাব মাহামুর বলেন, আনিস আলমগীরের গ্রেপ্তার একটি উদ্বেগজনক ধারাবাহিকতার অংশ, যেখানে নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে সমর্থন রয়েছে—এমন ধারণার ভিত্তিতে ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন করতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার না করে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত এসব অধিকার নিশ্চিত করা, বিশেষ করে নির্বাচনের প্রাক্কালে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সনদের (আইসিসিপিআর) অধীনে নিজেদের দায়বদ্ধতার সম্মান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে আনিস আলমগীরকে মুক্তি দিতে হবে।

আদালতে শুনানির সময় আনিস আলমগীর বলেন, ‘আমি একজন সাংবাদিক। আমি ক্ষমতাসীনদের প্রশ্ন করি। গত দুই দশক ধরে আমি এই কাজই করছি। কারও কাছে মাথা নত করা আমার কাজ নয়।’

উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসে অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে। সংশোধনের পর থেকে দলটির প্রতি সমর্থনের অভিযোগে একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইন প্রয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাও রয়েছেন।

অ্যামনেস্টির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারকে এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে রাজনৈতিক মতাদর্শ-নির্বিশেষে সবার মানবাধিকার সুরক্ষিত ও বিকশিত হয়। একটি মানবাধিকারসম্মত সমাজের জন্য অপরিহার্য স্বাধীনতাগুলো খর্ব করতে দমনমূলক আইনপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জিয়াউলের বিরুদ্ধে শতাধিক ব্যক্তিকে গুম-খুনের অভিযোগ আমলে নিলেন ট্রাইব্যুনাল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জিয়াউল আহসান। ফাইল ছবি
জিয়াউল আহসান। ফাইল ছবি

গুমের পর শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ বুধবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এই অভিযোগ আমলে নিয়ে ২১ ডিসেম্বর জিয়াউল আহসানকে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন।

এর আগে সকালে এই মামলায় ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। মামলায় জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউশন।

অভিযোগের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, গুম-খুনের কালচার শেখ হাসিনার আমলে শুরু হয়েছিল। সেটা সরাসরি শেখ হাসিনার নির্দেশে হতো। পরে নির্দেশ আসত তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের মাধ্যমে। এসব কিছুর বাস্তবায়নের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন জিয়াউল আহসান। বাংলাদেশে এ রকম বীভৎস, নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালানোর ব্যাপারে তাঁর যে স্পর্ধা, সে জন্য তাঁকে একক আসামি হিসেবে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

অভিযোগ-১: ২০১১ সালের ১১ জুলাই রাতে গাজীপুরের পুবাইলের ঢাকা বাইপাস সড়কের পাশে জিয়াউল আহসানের পরিকল্পনায় ও প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে সজল ও অজ্ঞাতনামা তিনজনকে গুলি করে হত্যা।

অভিযোগ-২: ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বরগুনার পাথরঘাটা থানার চরদুয়ানীর নিকটবর্তী বলেশ্বর নদের মোহনায় নজরুল ইসলাম মল্লিক, আলকাছ মল্লিকসহ কমপক্ষে ৫০ জনকে গুলি করে হত্যা ও লাশ গুম।

অভিযোগ-৩: ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বরগুনার বলেশ্বর নদ ও বাগেরহাটের শরণখোলার সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলে তথাকথিত বনদস্যু দমনের নামে মাসুদসহ ৫০ জনকে গুলি করে হত্যা।

ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়, ২০০৯ সালে মেজর থাকাকালে র‍্যাবে পোস্টিং হওয়ার পর থেকে জিয়াউল আহসান বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ফলে ২০২৪ সালে মেজর জেনারেল হিসেবে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর আগপর্যন্ত কখনোই তাঁকে সেনাবাহিনীতে ফেরত যেতে হয়নি। ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত জিয়াউল আহসান র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক ও এডিজি (অপস) হিসেবে কর্মরত থাকাকালে অসংখ্য গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। অগণিত হত্যাকাণ্ড, গুমসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধ তাঁর সরাসরি নির্দেশে বিশ্বস্ত র‍্যাব সদস্যরা ঘটাতেন।

হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হটস্পট ছিল বরগুনার পাথরঘাটার চরদুয়ানী ইউনিয়নের চরদুয়ানী খাল বেয়ে অগ্রসর হয়ে বলেশ্বর নদের বিভিন্ন পয়েন্ট ও মোহনা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, সড়কপথে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া হয়ে বরগুনার চরদুয়ানীতে রাত ১১টা কিংবা তারও পরে কালো কাচের মাইক্রোবাস, জিপ, ডাবল কেবিন পিকআপসহ বিভিন্ন গাড়িবহরে র‍্যাব সদস্যরা সাদা পোশাকে আসতেন। তাঁদের সঙ্গে দু-একজন করে বন্দী থাকতেন, কখনো বন্দীর সংখ্যা অনেক বেশিও হতো। বন্দীদের ট্রলারে উঠিয়ে মাঝ নদীতে নিয়ে শরীরের সঙ্গে (মাথা বা বুকে) বালিশ ঠেকিয়ে পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হতো। এরপর পেট ছুরি দিয়ে ফেড়ে শরীরে (মাথা ও পায়ে) সিমেন্টের ব্লক বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হতো।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ঢাকার বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর মোহনা ও পতেঙ্গা উপকূলবর্তী বঙ্গোপসাগরেও এ ধরনের অপারেশন পরিচালিত হয়েছে। এ ধরনের অপারেশনের অনেকগুলোয় জিয়াউল আহসান সশরীরে অংশ নেন এবং অনেকগুলোয় তাঁর প্রত্যক্ষ নির্দেশনার আলোকে র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা অথবা তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্যান্য ব্যাটালিয়নের বাছাই করা সদস্যরা হত্যাকাণ্ড ঘটান।

অভিযোগে বলা হয়, গুম থাকা ব্যক্তিদের নিয়ে গভীর রাতে পাথরঘাটার চরদুয়ানী থেকে ট্রলারে করে বলেশ্বর নদ হয়ে সুন্দরবনের পূর্বনির্ধারিত নিজেদের সাজানো কথিত বনদস্যুদের আস্তানায় নিয়ে যাওয়া হতো। ভুক্তভোগীদের চোখ, হাত-পা বেঁধে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর উপর্যুপরি গুলিবর্ষণের মাধ্যমে বন্দুকযুদ্ধের আবহ তৈরি করা হতো। অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিযানের সাক্ষী হিসেবে নিয়ে যাওয়া হতো কিছু অনুগত সাংবাদিককে। তবে তাঁদের ঘটনাস্থলে না নিয়ে দৃষ্টিসীমার বাইরে ক্রসফায়ারের নামে ভুক্তভোগীদের হত্যা করা হতো। পরে তাঁদের ঘটনাস্থলে নিয়ে নিজেদের মনমতো ঘটনার বর্ণনা দিত। দস্যুনিধনের নামে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগে থেকে আটক রাখা নিরপরাধ বন্দীদের হত্যা করা হতো।

অধিকাংশ অভিযানে জিয়াউল আহসান নিজেই অংশ নিতেন। এ ছাড়া তদন্তে শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে ২০১০-১৩ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ২০০ জনকে হত্যা, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার নামে কমপক্ষে ৬১ জনকে হত্যাসহ আরও অসংখ্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউল আহসানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে পৃথক তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে হত্যা করা হয়েছে: চিফ প্রসিকিউটর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে হত্যা করা হয়েছে: চিফ প্রসিকিউটর

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। আজ বুধবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইলিয়াস আলীকে উঠিয়ে নেওয়া এবং পরে হত্যা করা হয়েছে বলে তদন্তে জানা গেছে।

আজ বুধবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন চিফ প্রসিকিউটর।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, বিএনপির নেতা সাজিদুল ইসলাম সুমনসহ আটজনকে তুলে নেওয়ার কাজটি জিয়াউল আহসানের নির্দেশ ও তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে হয়েছে। ইলিয়াস আলীকে উঠিয়ে নেওয়া এবং পরে হত্যা করা হয়েছে বলে তদন্তে জানা গেছে। ছাত্রশিবিরের নেতা গোলাম কিবরিয়া, হাফেজ জাকির, চৌধুরী আলম—এ রকম উল্লেখযোগ্য গুমের ঘটনার প্রতিটির পেছনের পরিকল্পনাকারী হচ্ছেন জিয়াউল আহসান।

চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমদকে তুলে নেওয়া এবং পরে ভারতে পাচার করে দেওয়ার পেছনেও জিয়াউল আহসান ছিলেন। বিচারের স্বার্থে এগুলোকে আলাদা করা হয়েছে, যাতে আরও সুষ্ঠুভাবে সাক্ষী উপস্থাপন করা যায়। তিনি বলেন, ‘আপাতত আমরা শতাধিক মানুষের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে চার্জ দাখিল করেছি। বাকি আরও পাঁচ শতাধিক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ আমাদের হাতে আছে। এগুলোকে আলাদাভাবে দাখিল করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি

শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করে এ তথ্য জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ বুধবার সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান দেশটিতে চিকিৎসাধীন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের অকুতোভয় যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে দেখতে গিয়েছিলেন।

রাত ৯টা ৪০ মিনিটে ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করেন এবং হাদির চিকিৎসা কার্যক্রম সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করেন। তিনি জানান, হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন।

প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে হাদির জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করার অনুরোধ করেছেন।

১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত অটোরিকশায় হাদিকে মোটরসাইকেল থেকে গুলি করা হয়। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত