জাহাঙ্গীর আলম

আজ ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমাদের মহান শহীদ দিবস, একই সঙ্গে এবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ২৫ তম বার্ষিকী উদ্যাপিত হচ্ছে। ১৯৫২ সালের এই দিন মাতৃভাষার মর্যাদার রক্ষার জন্য রক্ত দিয়েছিলেন বাংলাদেশের মানুষ। এই আত্মত্যাগের বৈশ্বিক স্বীকৃতি হিসেবে এই দিনটি এখন ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং মাতৃভাষাকে উন্নীত করার জন্য প্রতি বছর উদ্যাপন করা হয়।
কিন্তু শিগগিরই মাতৃভাষার ধারণা গিয়ে ঠেকেছে তথাকথিত শুদ্ধ ও প্রমিত বাংলায়। শিক্ষিত বাবা–মায়েরা শৈশব থেকেই সন্তানদের ভাষাকে পরিশুদ্ধ করার জন্য মুখ থেকে যেকোনো প্রকারের গ্রাম্যতা দূর করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। করুণ বাস্তবতা হচ্ছে, ছোটকালে এই প্রমিতকরণের পাল্লায় পড়ে আমাদের ঠোঁটের প্রতিটি শব্দই অস্বাভাবিক মনে হয়। স্কুলের পরীক্ষার খাতায় লিখিত প্রাতিষ্ঠানিক বাংলা, জাতে ওঠার জন্য শেখা ইংরেজি, দাদা–দাদি নানা–নানির ‘উপভাষায়’ বলা স্থানীয় শব্দ ঠোঁটে ঝুলে থাকে, গলার অর্ধেক পথে আটকে যায় কিন্তু মুখে প্রকাশ পায় না। গ্রামে বেড়ে ওঠা প্রতিটি শিশুরই এমন অভিজ্ঞতা হয়।
আমাদের শহরগুলোতে এখন ‘স্পোকেন ইংলিশ’ বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই বাণিজ্যের রমরমা। আমাদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে বাংলায় কথা বলাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। এমনকি বাবা–মায়েরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া সন্তানের সঙ্গে ঘরেও ইংরেজিতে কথা বলেন। বাংলা বলার ক্ষেত্রে অনেকে কড়া নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকেন।
এভাবে, আমরা সর্বশক্তিমান প্রমিত ও ইংরেজির কাছে নতজানু হয়ে পড়ছি। ব্যাকরণের নিয়ম আত্মস্থ করে ভদ্রস্থ বাংলা এবং বাজার অর্থনীতির যুগে জাতের ওঠার উচ্চাভিলাষের ফাঁদে বাংলাকে উপেক্ষা করছি। আমাদের শ্রম, সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করছি তথাকথিত কেজো ভাষা শিক্ষায়!
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বাংলার যে বেহাল দশা তার একটি চিত্র এখানে স্পষ্ট। ২০২৪ সালের মার্চে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএসের) একটি সমীক্ষা প্রকাশ পায়। তাতে দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণির ৭৬ শতাংশ ও চতুর্থ শ্রেণির প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঠিকমতো বাংলা পড়তে পারে না। তৃতীয় শ্রেণির প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী বর্ণ (অক্ষর) ও শব্দ ঠিকঠাক চিনতে পারে না। চতুর্থ শ্রেণির ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী সাধারণ শব্দ চিনতে পারে না। আর পড়ার (রিডিং) ক্ষেত্রেও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ঘাম ছুটে যায়!
১৮৩৫ সালে লর্ড ম্যাকলে তাঁর শিক্ষা বিষয়ক প্রস্তাবে একটি শ্রেণি তৈরি করার যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন যারা দোভাষী হতে পারে...যারা রক্তে এবং বর্ণে ভারতীয় কিন্তু রুচি, মতামত, নৈতিকতা এবং বুদ্ধিতে হবে ইংরেজ। আমরা আমাদের মুখের ভাষা, সংস্কৃতি ও স্থানীয় জ্ঞানকে পশ্চিমা বিশ্বের শ্রম ও ভোক্তা বাজারে পরিণত করার জন্য বিনিময় করেছি। আমাদের স্থানীয় ভাষাগুলো নিকৃষ্ট, অলিখিত (যদি কথ্য হয়) এবং যেকোনো গুরুতর জ্ঞান সৃষ্টি বা প্রচার প্রক্রিয়ার অংশ হওয়ার জন্য অক্ষম থেকে গেছে। আধুনিককালে ইংরেজির দাপটে আমরা দিশেহারা হয়ে তাকেই আলিঙ্গন করেছি।
বাংলাদেশের শিক্ষার উন্নয়ন ও নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রথম এ দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। এই শিক্ষানীতি ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন কৌশল ও পরিকল্পনাপত্রে এ বিষয়টির উল্লেখ বেশ আগে থেকেই লক্ষ করা গেছে। কিন্তু এখনো সব ভাষায় শিশুদের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন সম্ভব হয়নি। আর আঞ্চলিক ভাষা তো বরাবরই উপেক্ষিত। এমনকি জনপরিসরে আঞ্চলিক ভাষায় ভাব বিনিময়ও রীতিমতো লজ্জার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলত শহুরে ও গ্রামীণ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবং আঞ্চলিক ও নৃগোষ্ঠীর ভাষা এবং ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অবিচল বিভেদ তৈরি হয়ে রয়েছে।
এ ছাড়া সরকারি শিক্ষানীতির বাইরে রয়ে গেছে দেশের ইন্টারন্যাশনাল ব্যাকালোরিয়েট (আইবি) এবং কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল জেনারেল সার্টিফিকেট অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (আইজিসিএসই)–এর সঙ্গে যুক্ত স্কুলগুলো। আবার এমন স্কুল রয়েছে যেগুলোর আসলে এ ধরনের কোনো আন্তর্জাতিক যোগাযোগ নেই। এই স্কুলগুলো স্থানীয় ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তা দমিয়ে রাখে।
ইদানীং শিক্ষার্থীদের একটি নতুন প্রজন্ম দেখা যাচ্ছে। এরা সংকর ভাষায় কথা বলে। কিন্তু তাদের ডিএনএ–তে সে অর্থে বাংলা ভাষা নেই। এমনকি হিন্দিতে বোল ফুটছে ভালোই, কিন্তু বাংলা বলতে গিয়ে আটক যাচ্ছে। এমন অনেক শিশু আছে যারা ইংরেজিতে কথা বলে, বাংলায় একটি শব্দও বোঝে না।
বাবা–মায়েরা নিজেদের ভাষা হীনমন্যতায় গর্বিত! ‘আমার বাচ্চা ইংরেজিতে কথা বলতে পারে’, এই গর্ব ক্রমে ‘আমার বাচ্চা তো বাংলা বলতেই না’ এই এ পর্যায়ে পর্যবসিত হয়। অভিভাবকদের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছে, বাংলা আর শ্রম বা মর্যাদার বাজারে বিপণনযোগ্য নয়, সুতরাং এ ভাষা সন্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে শেখানোর প্রয়োজন নেই, কাজ চালানোর মতো হলেই হবে!
এই প্রবণতা নাগরিকদের একটি নতুন শ্রেণির জন্মকে চিহ্নিত করছে। তারা সে অর্থে ম্যাকলের দোভাষী শ্রেণি নয়; বরং, নিজস্ব পরিচয় স্পষ্ট করতে তাদের আরও আরও সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করতে হবে। তাদের কথিত বৈশ্বিকতা তাদের স্থানীয় সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্তির বিচ্ছেদের দিকে ঝোঁক তৈরি করছে।
আন্তর্জাতিক বোর্ডের (ইংরেজি মাধ্যম) শহুরে শিশুরা জাতীয় শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পড়াশোনা করা গ্রামীণ শিশুদের কিছুই বুঝবে না—এই দুই শ্রেণির মধ্যে কোনো সংযোগকারী কোনো ভাষা নেই। দেশীয় ভাষায় সাহিত্য এবং জ্ঞান নিয়ে আলোচনা তো আরও দূরের কথা। প্রমিত বাংলা ও ইংরেজির দাপটে আঞ্চলিক ভাষার বাগধারাগুলো আমাদের দৈনন্দিন ভাষা থেকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে, এতে বাংলার মধ্যে ইংরেজি শব্দ প্রক্ষিপ্ত হওয়ার পথ তৈরি হচ্ছে।
অবশ্য এর জন্য শুধু গ্লোবালাইজেশন, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ আর বাজার অর্থনীতির পাশাপাশি অভিভাবকদের হীনম্মন্যতাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। মূলত বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বাজারে এগিয়ে থাকতেই অভিভাবকদের ক্রমেই ইংরেজিপ্রীতি ও বাংলার প্রতি অবহেলা বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলার ব্যাপক ব্যবহার ও উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় বা ব্যক্তি পর্যায়েও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। ইন্টারনেটের এই যুগে শিশুরা ফিডার ধরতে শেখার আগে মোবাইল হাতে পায়। ইন্টারনেটে শিশুদের উপযোগী বাংলায় ভালো কোনো কনটেন্ট নেই, যেগুলো তারা আনন্দের সঙ্গে দেখবে। ফলে কথা বলতে শেখার আগেই হাতের মুঠোয় পাচ্ছে হিন্দি অথবা ইংরেজি কনটেন্ট। বাংলা শেখার আগেই শিশু ইংরেজিতে গড়গড় করে কথা বলা শিখছে, সেটি অভিভাবকদের জন্য আনন্দের বিষয়ই তো বটে!
বাংলাদেশের উদ্যোগে ১৯৯৯ সালে ইউনেসকোর সাধারণ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায় ২১ ফেব্রুয়ারি। ২০০২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এটিকে স্বাগত জানানো হয়।
ভাষাগত বৈচিত্র্যের মর্যাদা রক্ষা ও সংরক্ষণ এবং শিশুদের মাতৃভাষায় শেখার অধিকারকে সমর্থন করার জন্য এই দিবসটি গৃহীত হয়। যাতে শিশুরা আরও ভালো বোঝাপড়া, সম্পৃক্ততা এবং চিন্তার দক্ষতা অর্জন করতে পারে—এটিই ছিল উদ্দেশ্য। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার দ্বারা প্রভাবিত হয়নি এমন স্থানে টিকে থাকা ভাষাগুলো কত স্তরের দমন সহ্য করছে, সেটিরও একটি অনুস্মারক এটি। আধুনিক শিক্ষা ধারণায় মায়েদের এবং মাতৃভাষাগুলোকে সন্তানদের যথাযথভাবে শিক্ষিত করার ক্ষেত্রে অক্ষম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এভাবেই তাদের প্রান্তিক করে রাখা হয়।
লেখক: আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক

আজ ২১ শে ফেব্রুয়ারি আমাদের মহান শহীদ দিবস, একই সঙ্গে এবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ২৫ তম বার্ষিকী উদ্যাপিত হচ্ছে। ১৯৫২ সালের এই দিন মাতৃভাষার মর্যাদার রক্ষার জন্য রক্ত দিয়েছিলেন বাংলাদেশের মানুষ। এই আত্মত্যাগের বৈশ্বিক স্বীকৃতি হিসেবে এই দিনটি এখন ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং মাতৃভাষাকে উন্নীত করার জন্য প্রতি বছর উদ্যাপন করা হয়।
কিন্তু শিগগিরই মাতৃভাষার ধারণা গিয়ে ঠেকেছে তথাকথিত শুদ্ধ ও প্রমিত বাংলায়। শিক্ষিত বাবা–মায়েরা শৈশব থেকেই সন্তানদের ভাষাকে পরিশুদ্ধ করার জন্য মুখ থেকে যেকোনো প্রকারের গ্রাম্যতা দূর করার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। করুণ বাস্তবতা হচ্ছে, ছোটকালে এই প্রমিতকরণের পাল্লায় পড়ে আমাদের ঠোঁটের প্রতিটি শব্দই অস্বাভাবিক মনে হয়। স্কুলের পরীক্ষার খাতায় লিখিত প্রাতিষ্ঠানিক বাংলা, জাতে ওঠার জন্য শেখা ইংরেজি, দাদা–দাদি নানা–নানির ‘উপভাষায়’ বলা স্থানীয় শব্দ ঠোঁটে ঝুলে থাকে, গলার অর্ধেক পথে আটকে যায় কিন্তু মুখে প্রকাশ পায় না। গ্রামে বেড়ে ওঠা প্রতিটি শিশুরই এমন অভিজ্ঞতা হয়।
আমাদের শহরগুলোতে এখন ‘স্পোকেন ইংলিশ’ বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই বাণিজ্যের রমরমা। আমাদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে বাংলায় কথা বলাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। এমনকি বাবা–মায়েরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া সন্তানের সঙ্গে ঘরেও ইংরেজিতে কথা বলেন। বাংলা বলার ক্ষেত্রে অনেকে কড়া নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকেন।
এভাবে, আমরা সর্বশক্তিমান প্রমিত ও ইংরেজির কাছে নতজানু হয়ে পড়ছি। ব্যাকরণের নিয়ম আত্মস্থ করে ভদ্রস্থ বাংলা এবং বাজার অর্থনীতির যুগে জাতের ওঠার উচ্চাভিলাষের ফাঁদে বাংলাকে উপেক্ষা করছি। আমাদের শ্রম, সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করছি তথাকথিত কেজো ভাষা শিক্ষায়!
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বাংলার যে বেহাল দশা তার একটি চিত্র এখানে স্পষ্ট। ২০২৪ সালের মার্চে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএসের) একটি সমীক্ষা প্রকাশ পায়। তাতে দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণির ৭৬ শতাংশ ও চতুর্থ শ্রেণির প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঠিকমতো বাংলা পড়তে পারে না। তৃতীয় শ্রেণির প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী বর্ণ (অক্ষর) ও শব্দ ঠিকঠাক চিনতে পারে না। চতুর্থ শ্রেণির ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী সাধারণ শব্দ চিনতে পারে না। আর পড়ার (রিডিং) ক্ষেত্রেও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ঘাম ছুটে যায়!
১৮৩৫ সালে লর্ড ম্যাকলে তাঁর শিক্ষা বিষয়ক প্রস্তাবে একটি শ্রেণি তৈরি করার যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন যারা দোভাষী হতে পারে...যারা রক্তে এবং বর্ণে ভারতীয় কিন্তু রুচি, মতামত, নৈতিকতা এবং বুদ্ধিতে হবে ইংরেজ। আমরা আমাদের মুখের ভাষা, সংস্কৃতি ও স্থানীয় জ্ঞানকে পশ্চিমা বিশ্বের শ্রম ও ভোক্তা বাজারে পরিণত করার জন্য বিনিময় করেছি। আমাদের স্থানীয় ভাষাগুলো নিকৃষ্ট, অলিখিত (যদি কথ্য হয়) এবং যেকোনো গুরুতর জ্ঞান সৃষ্টি বা প্রচার প্রক্রিয়ার অংশ হওয়ার জন্য অক্ষম থেকে গেছে। আধুনিককালে ইংরেজির দাপটে আমরা দিশেহারা হয়ে তাকেই আলিঙ্গন করেছি।
বাংলাদেশের শিক্ষার উন্নয়ন ও নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রথম এ দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। এই শিক্ষানীতি ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন কৌশল ও পরিকল্পনাপত্রে এ বিষয়টির উল্লেখ বেশ আগে থেকেই লক্ষ করা গেছে। কিন্তু এখনো সব ভাষায় শিশুদের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন সম্ভব হয়নি। আর আঞ্চলিক ভাষা তো বরাবরই উপেক্ষিত। এমনকি জনপরিসরে আঞ্চলিক ভাষায় ভাব বিনিময়ও রীতিমতো লজ্জার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলত শহুরে ও গ্রামীণ স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবং আঞ্চলিক ও নৃগোষ্ঠীর ভাষা এবং ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অবিচল বিভেদ তৈরি হয়ে রয়েছে।
এ ছাড়া সরকারি শিক্ষানীতির বাইরে রয়ে গেছে দেশের ইন্টারন্যাশনাল ব্যাকালোরিয়েট (আইবি) এবং কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল জেনারেল সার্টিফিকেট অব সেকেন্ডারি এডুকেশন (আইজিসিএসই)–এর সঙ্গে যুক্ত স্কুলগুলো। আবার এমন স্কুল রয়েছে যেগুলোর আসলে এ ধরনের কোনো আন্তর্জাতিক যোগাযোগ নেই। এই স্কুলগুলো স্থানীয় ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তা দমিয়ে রাখে।
ইদানীং শিক্ষার্থীদের একটি নতুন প্রজন্ম দেখা যাচ্ছে। এরা সংকর ভাষায় কথা বলে। কিন্তু তাদের ডিএনএ–তে সে অর্থে বাংলা ভাষা নেই। এমনকি হিন্দিতে বোল ফুটছে ভালোই, কিন্তু বাংলা বলতে গিয়ে আটক যাচ্ছে। এমন অনেক শিশু আছে যারা ইংরেজিতে কথা বলে, বাংলায় একটি শব্দও বোঝে না।
বাবা–মায়েরা নিজেদের ভাষা হীনমন্যতায় গর্বিত! ‘আমার বাচ্চা ইংরেজিতে কথা বলতে পারে’, এই গর্ব ক্রমে ‘আমার বাচ্চা তো বাংলা বলতেই না’ এই এ পর্যায়ে পর্যবসিত হয়। অভিভাবকদের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছে, বাংলা আর শ্রম বা মর্যাদার বাজারে বিপণনযোগ্য নয়, সুতরাং এ ভাষা সন্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে শেখানোর প্রয়োজন নেই, কাজ চালানোর মতো হলেই হবে!
এই প্রবণতা নাগরিকদের একটি নতুন শ্রেণির জন্মকে চিহ্নিত করছে। তারা সে অর্থে ম্যাকলের দোভাষী শ্রেণি নয়; বরং, নিজস্ব পরিচয় স্পষ্ট করতে তাদের আরও আরও সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করতে হবে। তাদের কথিত বৈশ্বিকতা তাদের স্থানীয় সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্তির বিচ্ছেদের দিকে ঝোঁক তৈরি করছে।
আন্তর্জাতিক বোর্ডের (ইংরেজি মাধ্যম) শহুরে শিশুরা জাতীয় শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পড়াশোনা করা গ্রামীণ শিশুদের কিছুই বুঝবে না—এই দুই শ্রেণির মধ্যে কোনো সংযোগকারী কোনো ভাষা নেই। দেশীয় ভাষায় সাহিত্য এবং জ্ঞান নিয়ে আলোচনা তো আরও দূরের কথা। প্রমিত বাংলা ও ইংরেজির দাপটে আঞ্চলিক ভাষার বাগধারাগুলো আমাদের দৈনন্দিন ভাষা থেকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে, এতে বাংলার মধ্যে ইংরেজি শব্দ প্রক্ষিপ্ত হওয়ার পথ তৈরি হচ্ছে।
অবশ্য এর জন্য শুধু গ্লোবালাইজেশন, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ আর বাজার অর্থনীতির পাশাপাশি অভিভাবকদের হীনম্মন্যতাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। মূলত বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার বাজারে এগিয়ে থাকতেই অভিভাবকদের ক্রমেই ইংরেজিপ্রীতি ও বাংলার প্রতি অবহেলা বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে বাংলার ব্যাপক ব্যবহার ও উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় বা ব্যক্তি পর্যায়েও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। ইন্টারনেটের এই যুগে শিশুরা ফিডার ধরতে শেখার আগে মোবাইল হাতে পায়। ইন্টারনেটে শিশুদের উপযোগী বাংলায় ভালো কোনো কনটেন্ট নেই, যেগুলো তারা আনন্দের সঙ্গে দেখবে। ফলে কথা বলতে শেখার আগেই হাতের মুঠোয় পাচ্ছে হিন্দি অথবা ইংরেজি কনটেন্ট। বাংলা শেখার আগেই শিশু ইংরেজিতে গড়গড় করে কথা বলা শিখছে, সেটি অভিভাবকদের জন্য আনন্দের বিষয়ই তো বটে!
বাংলাদেশের উদ্যোগে ১৯৯৯ সালে ইউনেসকোর সাধারণ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায় ২১ ফেব্রুয়ারি। ২০০২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এটিকে স্বাগত জানানো হয়।
ভাষাগত বৈচিত্র্যের মর্যাদা রক্ষা ও সংরক্ষণ এবং শিশুদের মাতৃভাষায় শেখার অধিকারকে সমর্থন করার জন্য এই দিবসটি গৃহীত হয়। যাতে শিশুরা আরও ভালো বোঝাপড়া, সম্পৃক্ততা এবং চিন্তার দক্ষতা অর্জন করতে পারে—এটিই ছিল উদ্দেশ্য। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার দ্বারা প্রভাবিত হয়নি এমন স্থানে টিকে থাকা ভাষাগুলো কত স্তরের দমন সহ্য করছে, সেটিরও একটি অনুস্মারক এটি। আধুনিক শিক্ষা ধারণায় মায়েদের এবং মাতৃভাষাগুলোকে সন্তানদের যথাযথভাবে শিক্ষিত করার ক্ষেত্রে অক্ষম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এভাবেই তাদের প্রান্তিক করে রাখা হয়।
লেখক: আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে। গত প্রায় দেড় বছরে নানা ঘটনায় সেই টানাপোড়েন বেড়েছে। অতি সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক তলব, রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য, দুই দেশের হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
৭ ঘণ্টা আগে
প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয় এবং ছায়ানট ভবনে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মতামত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী...
১০ ঘণ্টা আগে
আগামী সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট উপলক্ষে দেশের আটটি বিভাগের জন্য আটটি গান তৈরি করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রিলিজ করা হয়েছে ঢাকা বিভাগের জন্য নির্মিত গান।
১০ ঘণ্টা আগে
ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনারকে তলবের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে পাল্টা তলব করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত ১০ দিনে চার দফায় দুই দেশ একে অন্যের কূটনীতিককে তলব করে নানা ইস্যুতে প্রতিবাদ আর উদ্বেগ জানাল।
১০ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে। গত প্রায় দেড় বছরে নানা ঘটনায় সেই টানাপোড়েন বেড়েছে। অতি সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক তলব, রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য, দুই দেশের হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এর জেরে প্রথমে বাংলাদেশে ভিসা সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় ভারত। তারপর বাংলাদেশও ভারতে ভিসা সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করে। এ ছাড়া ঢাকার অভিযোগ, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ‘নসিহত’ দেওয়ার চেষ্টা করছে ভারত।
সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও কলকাতায় উপহাইকমিশনের সামনে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বিক্ষোভ করেছে। দিল্লিতে তারা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে। এর আগের দিন গত সোমবারও নয়াদিল্লি ও শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এসব বিষয়ে গতকাল ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিপরীতে দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে গত ১০ দিনে চার দফায় দুই দেশ একে অন্যের কূটনীতিককে তলব করে প্রতিবাদ আর উদ্বেগ জানাল।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলমান টানাপোড়েনের বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সম্পর্কের অবনতি হওয়া খুব খারাপ লক্ষণ। এটি শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয়, বরং উদ্বেগজনক। এ রকম চলতে থাকলে দুই দেশে চরমপন্থীদের উত্থান ঘটবে এবং নির্বাচনে তার অশুভ প্রভাব পড়বে। এর ফলে নির্বাচিত সরকার এলেও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের টানাপোড়েন অব্যাহত থাকতে পারে।’
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকাণ্ডের পর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য নিয়ে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। এর জবাবে গত সপ্তাহে ভারতের আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা নিজ দেশকে ‘পারমাণবিক শক্তিধর দেশ’ এবং ‘বাংলাদেশকে শিক্ষা দেওয়া উচিত’ মন্তব্য করে ঢাকাকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেন। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয় ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায়।
১৪ ডিসেম্বর প্রণয় ভার্মাকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানাতে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ রিয়াজ হামিদউল্লাহকে তলব করে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই দিনই বিকেলের দিকে ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে মিছিলের আয়োজন করে ‘জুলাই ঐক্য’। যদিও পুলিশি বাধায় রাজধানীর বাড্ডায় সেই মিছিল আটকে যায়। এই বিক্ষোভ থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ভারতে পলাতকদের ফেরত পাঠানোর দাবি জানানো হয়। এই বিক্ষোভের আগে ওই দিন দুপুরে ঢাকায় ভারতীয় ভিসা সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ঠিক ওই দিন রাতেই ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে একটি পোশাক কারখানার কর্মী দীপু চন্দ্র দাসকে কারখানা থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভাজকের একটি গাছে ঝুলিয়ে তাঁর লাশে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনার জেরে নয়াদিল্লিতে ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ হয়। হুমকি দেওয়া হয় হাইকমিশনারকে। ওই রাতেই খবর আসে, গুলিবিদ্ধ হাদি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এর পরপরই চট্টগ্রাম ও খুলনায় ভারতীয় উপহাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ হয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয় চট্টগ্রাম উপহাইকমিশনের কার্যালয়ে। এসব ঘটনার ঠিক আগের দিন গত শনিবার নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে চট্টগ্রামেও অনির্দিষ্টকালের জন্য ভিসা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় ভারত।
এদিকে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনের বিক্ষোভের ঘটনা নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল গত রোববার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর গুজব প্রত্যক্ষ করেছি। বাস্তবতা হলো, ২০-২৫ জন তরুণ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে জড়ো হয়েছিলেন। ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসকে হত্যার প্রতিবাদে স্লোগান দিয়েছেন তাঁরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা কয়েক মিনিটের মধ্যে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেন।’
রণধীর জয়সওয়ালের বক্তব্যের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ‘বিভ্রান্তিকর প্রচার’ চালানো হচ্ছে, ভারত এ কথা বললেও কোনোভাবে তা মেনে নেওয়া যায় না। দুষ্কৃতকারীদের হাইকমিশনের সীমানার ঠিক বাইরে কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহে দীপু দাসকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন হামলা’ বলে অভিহিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর আগে রোববার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভের ঘটনায় ভারত সরকারের দেওয়া বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করে প্রশ্ন তোলেন, হাইকমিশনের মতো সুরক্ষিত এলাকায় কীভাবে বিক্ষোভকারীরা যেতে পারল? তিনি বলেন, বিক্ষোভের ওই ঘটনার পর থেকে নয়াদিল্লিতে নিয়োজিত বাংলাদেশের হাইকমিশনারের পরিবার ঝুঁকি অনুভব করছে। উপদেষ্টা বলেন, ‘নয়াদিল্লিতে কূটনৈতিক এলাকার ভেতরে বাংলাদেশ মিশনের অবস্থান খুবই নিরাপদ স্থানে, সেখানে হিন্দু চরমপন্থীরা ওই এলাকার মধ্যে আসতে পারবে কেন? তাহলে তাদের আসতে দেওয়া হয়েছে।’
পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভের মধ্যে নিরাপত্তার কারণে গত সোমবার নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশন এবং ত্রিপুরার আগরতলায় সহকারী হাইকমিশন ও পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির ভিসা সেন্টার থেকে ভিসা ও কনস্যুলার সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি দিল্লিতে অন্য কনস্যুলার পরিষেবাও আপাতত বন্ধ রেখেছে ঢাকা।
ভারতের সংবাদমাধ্যম শিলিগুড়ি টাইমস জানায়, সোমবার পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র ভাঙচুর করেছেন হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা। এতে নেতৃত্ব দেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ও শিলিগুড়ি মহানগর সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
এরপর গতকাল নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশন ও কলকাতায় উপহাইকমিশনের সামনে ভিএইচপির নেতৃত্বে বিক্ষোভ হয়, ভাঙার চেষ্টা করা হয় ব্যারিকেড। কলকাতার বিক্ষোভে সংহতি জানাতে পরে বিজেপি নেতারাও যোগ দেন।
এদিনই প্রণয় ভার্মাকে তলব করে নয়াদিল্লি ও শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক স্থাপনায় হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, কূটনৈতিক স্থাপনায় এ রকম পরিকল্পিত সহিংসতা এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এ ধরনের ঘটনা শুধু কূটনৈতিক মিশনের কর্মীদের নিরাপত্তাকেই হুমকির মুখে ফেলে না; বরং পারস্পরিক সম্মান, শান্তি ও সহনশীলতার নীতিকেও ক্ষুণ্ন করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে প্রণয় ভার্মা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়ামের দপ্তরে প্রবেশ করেন। আসা-যাওয়া মিলিয়ে ৫ মিনিটের মতো তিনি মন্ত্রণালয়ে ছিলেন। এ নিয়ে ১০ দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করা হলো।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশন প্রাঙ্গণ ও আবাসস্থলের বাইরে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং ২২ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্রে উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর ভাঙচুরের ঘটনায় ভারত সরকারের কাছে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের সামনে সহিংস বিক্ষোভের ঘটনাকে উদ্বেগজনক বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। ঘটনাগুলোর পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন ও সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা।
এরপর গতকাল বিকেলে দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তলব করে দেশটিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বি শ্যাম তলবের সময় বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে বলেছেন, বাংলাদেশ সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ইস্যুতে অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। তখন এই অভিযোগ খণ্ডন করে বাংলাদেশের হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন ইস্যুতে বাস্তবতার নিরিখে অবস্থান তুলে ধরছে।
সার্বিক বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ও একটা বললে আমি একটা বলব, এমন প্রতিযোগিতা ঠিক নয়। আমাদের চেষ্টা করতে হবে, কীভাবে ওখান থেকে সরে এসে একটা স্বাভাবিক সম্পর্কের দিকে যাওয়া যায়, সেই চেষ্টা করা। তাই বলে স্বাভাবিক সম্পর্ক মানেই নতজানু সম্পর্ক নয়।’
আরেক সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান বলেন, এ মুহূর্তে সম্পর্কের অবনতি রোধ প্রথম করণীয়। এ জন্য যাঁরা দায়িত্বশীল, তাঁদের দায় অনেক। অপর পক্ষ কী করছে, তার পাল্টা কীভাবে নেওয়া যায়, তা বিবেচনায় না নিয়ে বরং নিজ উদ্যোগে সম্পর্কের অবনতি কীভাবে রোধ করা যায়, তাতে সচেষ্ট হতে হবে।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে। গত প্রায় দেড় বছরে নানা ঘটনায় সেই টানাপোড়েন বেড়েছে। অতি সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক তলব, রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য, দুই দেশের হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এর জেরে প্রথমে বাংলাদেশে ভিসা সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় ভারত। তারপর বাংলাদেশও ভারতে ভিসা সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করে। এ ছাড়া ঢাকার অভিযোগ, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ‘নসিহত’ দেওয়ার চেষ্টা করছে ভারত।
সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও কলকাতায় উপহাইকমিশনের সামনে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বিক্ষোভ করেছে। দিল্লিতে তারা ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে। এর আগের দিন গত সোমবারও নয়াদিল্লি ও শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
এসব বিষয়ে গতকাল ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিপরীতে দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ রিয়াজ হামিদুল্লাহকে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে গত ১০ দিনে চার দফায় দুই দেশ একে অন্যের কূটনীতিককে তলব করে প্রতিবাদ আর উদ্বেগ জানাল।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলমান টানাপোড়েনের বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সম্পর্কের অবনতি হওয়া খুব খারাপ লক্ষণ। এটি শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয়, বরং উদ্বেগজনক। এ রকম চলতে থাকলে দুই দেশে চরমপন্থীদের উত্থান ঘটবে এবং নির্বাচনে তার অশুভ প্রভাব পড়বে। এর ফলে নির্বাচিত সরকার এলেও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের টানাপোড়েন অব্যাহত থাকতে পারে।’
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকাণ্ডের পর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য নিয়ে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। এর জবাবে গত সপ্তাহে ভারতের আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা নিজ দেশকে ‘পারমাণবিক শক্তিধর দেশ’ এবং ‘বাংলাদেশকে শিক্ষা দেওয়া উচিত’ মন্তব্য করে ঢাকাকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেন। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয় ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায়।
১৪ ডিসেম্বর প্রণয় ভার্মাকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ জানাতে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ রিয়াজ হামিদউল্লাহকে তলব করে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই দিনই বিকেলের দিকে ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে মিছিলের আয়োজন করে ‘জুলাই ঐক্য’। যদিও পুলিশি বাধায় রাজধানীর বাড্ডায় সেই মিছিল আটকে যায়। এই বিক্ষোভ থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ভারতে পলাতকদের ফেরত পাঠানোর দাবি জানানো হয়। এই বিক্ষোভের আগে ওই দিন দুপুরে ঢাকায় ভারতীয় ভিসা সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ঠিক ওই দিন রাতেই ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে একটি পোশাক কারখানার কর্মী দীপু চন্দ্র দাসকে কারখানা থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভাজকের একটি গাছে ঝুলিয়ে তাঁর লাশে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনার জেরে নয়াদিল্লিতে ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ হয়। হুমকি দেওয়া হয় হাইকমিশনারকে। ওই রাতেই খবর আসে, গুলিবিদ্ধ হাদি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এর পরপরই চট্টগ্রাম ও খুলনায় ভারতীয় উপহাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ হয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয় চট্টগ্রাম উপহাইকমিশনের কার্যালয়ে। এসব ঘটনার ঠিক আগের দিন গত শনিবার নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে চট্টগ্রামেও অনির্দিষ্টকালের জন্য ভিসা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় ভারত।
এদিকে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনের বিক্ষোভের ঘটনা নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল গত রোববার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর গুজব প্রত্যক্ষ করেছি। বাস্তবতা হলো, ২০-২৫ জন তরুণ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে জড়ো হয়েছিলেন। ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসকে হত্যার প্রতিবাদে স্লোগান দিয়েছেন তাঁরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা কয়েক মিনিটের মধ্যে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেন।’
রণধীর জয়সওয়ালের বক্তব্যের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ‘বিভ্রান্তিকর প্রচার’ চালানো হচ্ছে, ভারত এ কথা বললেও কোনোভাবে তা মেনে নেওয়া যায় না। দুষ্কৃতকারীদের হাইকমিশনের সীমানার ঠিক বাইরে কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহে দীপু দাসকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন হামলা’ বলে অভিহিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এর আগে রোববার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভের ঘটনায় ভারত সরকারের দেওয়া বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করে প্রশ্ন তোলেন, হাইকমিশনের মতো সুরক্ষিত এলাকায় কীভাবে বিক্ষোভকারীরা যেতে পারল? তিনি বলেন, বিক্ষোভের ওই ঘটনার পর থেকে নয়াদিল্লিতে নিয়োজিত বাংলাদেশের হাইকমিশনারের পরিবার ঝুঁকি অনুভব করছে। উপদেষ্টা বলেন, ‘নয়াদিল্লিতে কূটনৈতিক এলাকার ভেতরে বাংলাদেশ মিশনের অবস্থান খুবই নিরাপদ স্থানে, সেখানে হিন্দু চরমপন্থীরা ওই এলাকার মধ্যে আসতে পারবে কেন? তাহলে তাদের আসতে দেওয়া হয়েছে।’
পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভের মধ্যে নিরাপত্তার কারণে গত সোমবার নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশন এবং ত্রিপুরার আগরতলায় সহকারী হাইকমিশন ও পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির ভিসা সেন্টার থেকে ভিসা ও কনস্যুলার সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি দিল্লিতে অন্য কনস্যুলার পরিষেবাও আপাতত বন্ধ রেখেছে ঢাকা।
ভারতের সংবাদমাধ্যম শিলিগুড়ি টাইমস জানায়, সোমবার পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্র ভাঙচুর করেছেন হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা। এতে নেতৃত্ব দেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), হিন্দু জাগরণ মঞ্চ ও শিলিগুড়ি মহানগর সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
এরপর গতকাল নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশন ও কলকাতায় উপহাইকমিশনের সামনে ভিএইচপির নেতৃত্বে বিক্ষোভ হয়, ভাঙার চেষ্টা করা হয় ব্যারিকেড। কলকাতার বিক্ষোভে সংহতি জানাতে পরে বিজেপি নেতারাও যোগ দেন।
এদিনই প্রণয় ভার্মাকে তলব করে নয়াদিল্লি ও শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক স্থাপনায় হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, কূটনৈতিক স্থাপনায় এ রকম পরিকল্পিত সহিংসতা এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এ ধরনের ঘটনা শুধু কূটনৈতিক মিশনের কর্মীদের নিরাপত্তাকেই হুমকির মুখে ফেলে না; বরং পারস্পরিক সম্মান, শান্তি ও সহনশীলতার নীতিকেও ক্ষুণ্ন করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে প্রণয় ভার্মা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়ামের দপ্তরে প্রবেশ করেন। আসা-যাওয়া মিলিয়ে ৫ মিনিটের মতো তিনি মন্ত্রণালয়ে ছিলেন। এ নিয়ে ১০ দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করা হলো।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশন প্রাঙ্গণ ও আবাসস্থলের বাইরে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং ২২ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্রে উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর ভাঙচুরের ঘটনায় ভারত সরকারের কাছে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের সামনে সহিংস বিক্ষোভের ঘটনাকে উদ্বেগজনক বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। ঘটনাগুলোর পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন ও সংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা।
এরপর গতকাল বিকেলে দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তলব করে দেশটিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বি শ্যাম তলবের সময় বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে বলেছেন, বাংলাদেশ সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ইস্যুতে অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। তখন এই অভিযোগ খণ্ডন করে বাংলাদেশের হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন ইস্যুতে বাস্তবতার নিরিখে অবস্থান তুলে ধরছে।
সার্বিক বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ও একটা বললে আমি একটা বলব, এমন প্রতিযোগিতা ঠিক নয়। আমাদের চেষ্টা করতে হবে, কীভাবে ওখান থেকে সরে এসে একটা স্বাভাবিক সম্পর্কের দিকে যাওয়া যায়, সেই চেষ্টা করা। তাই বলে স্বাভাবিক সম্পর্ক মানেই নতজানু সম্পর্ক নয়।’
আরেক সাবেক রাষ্ট্রদূত মাহফুজুর রহমান বলেন, এ মুহূর্তে সম্পর্কের অবনতি রোধ প্রথম করণীয়। এ জন্য যাঁরা দায়িত্বশীল, তাঁদের দায় অনেক। অপর পক্ষ কী করছে, তার পাল্টা কীভাবে নেওয়া যায়, তা বিবেচনায় না নিয়ে বরং নিজ উদ্যোগে সম্পর্কের অবনতি কীভাবে রোধ করা যায়, তাতে সচেষ্ট হতে হবে।

আমাদের শহরগুলোতে এখন ‘স্পোকেন ইংলিশ’ বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই বাণিজ্যের রমরমা। আমাদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে বাংলায় কথা বলাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। এমনকি বাবা–মায়েরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া সন্তানের সঙ্গে ঘরেও ইংরেজিতে কথা বলেন। বাংলা বলার ক্ষেত্রে অনেকে কড়া নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকেন।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয় এবং ছায়ানট ভবনে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মতামত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী...
১০ ঘণ্টা আগে
আগামী সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট উপলক্ষে দেশের আটটি বিভাগের জন্য আটটি গান তৈরি করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রিলিজ করা হয়েছে ঢাকা বিভাগের জন্য নির্মিত গান।
১০ ঘণ্টা আগে
ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনারকে তলবের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে পাল্টা তলব করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত ১০ দিনে চার দফায় দুই দেশ একে অন্যের কূটনীতিককে তলব করে নানা ইস্যুতে প্রতিবাদ আর উদ্বেগ জানাল।
১০ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয় এবং ছায়ানট ভবনে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মতামত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ‘মব’ বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার হামলা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর ও স্বচ্ছ তদন্ত পরিচালনা করে অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের প্রখ্যাত তরুণ নেতা শরিফ ওসমান বিন হাদির প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো কার্যালয় এবং ছায়ানট ভবনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো হয়। একই সময়ে নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটে।
আইরিন খান বলেন, ‘এই মব আক্রমণগুলো হাওয়া থেকে ঘটেনি। বিচারহীনতা দূর করতে এবং সংবাদমাধ্যম ও শিল্প-সাহিত্যের স্বাধীনতা রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতাই এসব ঘটনার পথ তৈরি করেছে।’ শরিফ ওসমান বিন হাদির পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি তাঁর মৃত্যুর ঘোষণার পর সাংবাদিক ও শিল্পীদের লক্ষ্য করে সংগঠিত সহিংসতারও তিনি কঠোর নিন্দা জানান।
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলেন, জনরোষকে সাংবাদিক ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা অত্যন্ত বিপজ্জনক—বিশেষ করে এমন সময়ে, যখন দেশ একটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর ফলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সংখ্যালঘুদের কণ্ঠস্বর ও ভিন্নমতের ওপর গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে কয়েক শ সাংবাদিককে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অস্পষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেককে দীর্ঘ সময় নিবর্তনমূলকভাবে আটক রাখা হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। আইরিন খান বলেন, সরকার যদি নিরাপদ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে চায়, তবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার এবং সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই হবে।

প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয় এবং ছায়ানট ভবনে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মতামত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে ‘মব’ বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার হামলা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সরকারকে অবিলম্বে কার্যকর ও স্বচ্ছ তদন্ত পরিচালনা করে অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের প্রখ্যাত তরুণ নেতা শরিফ ওসমান বিন হাদির প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় দ্য ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো কার্যালয় এবং ছায়ানট ভবনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো হয়। একই সময়ে নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটে।
আইরিন খান বলেন, ‘এই মব আক্রমণগুলো হাওয়া থেকে ঘটেনি। বিচারহীনতা দূর করতে এবং সংবাদমাধ্যম ও শিল্প-সাহিত্যের স্বাধীনতা রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতাই এসব ঘটনার পথ তৈরি করেছে।’ শরিফ ওসমান বিন হাদির পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি তাঁর মৃত্যুর ঘোষণার পর সাংবাদিক ও শিল্পীদের লক্ষ্য করে সংগঠিত সহিংসতারও তিনি কঠোর নিন্দা জানান।
জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলেন, জনরোষকে সাংবাদিক ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা অত্যন্ত বিপজ্জনক—বিশেষ করে এমন সময়ে, যখন দেশ একটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর ফলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সংখ্যালঘুদের কণ্ঠস্বর ও ভিন্নমতের ওপর গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে কয়েক শ সাংবাদিককে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অস্পষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেককে দীর্ঘ সময় নিবর্তনমূলকভাবে আটক রাখা হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। আইরিন খান বলেন, সরকার যদি নিরাপদ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে চায়, তবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার এবং সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই হবে।

আমাদের শহরগুলোতে এখন ‘স্পোকেন ইংলিশ’ বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই বাণিজ্যের রমরমা। আমাদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে বাংলায় কথা বলাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। এমনকি বাবা–মায়েরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া সন্তানের সঙ্গে ঘরেও ইংরেজিতে কথা বলেন। বাংলা বলার ক্ষেত্রে অনেকে কড়া নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকেন।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে। গত প্রায় দেড় বছরে নানা ঘটনায় সেই টানাপোড়েন বেড়েছে। অতি সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক তলব, রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য, দুই দেশের হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
৭ ঘণ্টা আগে
আগামী সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট উপলক্ষে দেশের আটটি বিভাগের জন্য আটটি গান তৈরি করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রিলিজ করা হয়েছে ঢাকা বিভাগের জন্য নির্মিত গান।
১০ ঘণ্টা আগে
ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনারকে তলবের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে পাল্টা তলব করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত ১০ দিনে চার দফায় দুই দেশ একে অন্যের কূটনীতিককে তলব করে নানা ইস্যুতে প্রতিবাদ আর উদ্বেগ জানাল।
১০ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

আগামী সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট উপলক্ষে দেশের আটটি বিভাগের জন্য আটটি গান তৈরি করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রিলিজ করা হয়েছে ঢাকা বিভাগের জন্য নির্মিত গান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
গানটি গেয়েছেন স্টয়িক ব্লিসখ্যাত কাজী।

আগামী সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট উপলক্ষে দেশের আটটি বিভাগের জন্য আটটি গান তৈরি করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রিলিজ করা হয়েছে ঢাকা বিভাগের জন্য নির্মিত গান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
গানটি গেয়েছেন স্টয়িক ব্লিসখ্যাত কাজী।

আমাদের শহরগুলোতে এখন ‘স্পোকেন ইংলিশ’ বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই বাণিজ্যের রমরমা। আমাদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে বাংলায় কথা বলাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। এমনকি বাবা–মায়েরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া সন্তানের সঙ্গে ঘরেও ইংরেজিতে কথা বলেন। বাংলা বলার ক্ষেত্রে অনেকে কড়া নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকেন।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে। গত প্রায় দেড় বছরে নানা ঘটনায় সেই টানাপোড়েন বেড়েছে। অতি সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক তলব, রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য, দুই দেশের হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
৭ ঘণ্টা আগে
প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয় এবং ছায়ানট ভবনে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মতামত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী...
১০ ঘণ্টা আগে
ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনারকে তলবের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে পাল্টা তলব করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত ১০ দিনে চার দফায় দুই দেশ একে অন্যের কূটনীতিককে তলব করে নানা ইস্যুতে প্রতিবাদ আর উদ্বেগ জানাল।
১০ ঘণ্টা আগেবিবিসি বাংলা

ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনারকে তলবের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে পাল্টা তলব করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত ১০ দিনে চার দফায় দুই দেশ একে অন্যের কূটনীতিককে তলব করে নানা ইস্যুতে প্রতিবাদ আর উদ্বেগ জানাল।
মঙ্গলবার টানা চতুর্থ দিনের মতো বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা চলেছে। দিনের শুরুতে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। এ সময় ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও হাইকমিশনারের বাসভবনের বাইরে বিক্ষোভ ও হুমকি প্রদান, ২২ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসাকেন্দ্রে কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যদের ভাঙচুরের ঘটনায় ভারত সরকারের কাছে গভীর উদ্বেগ জানানো হয়।
এর জের ধরে বিকেলে দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তলব করে দেশটিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বি শ্যাম তলবের সময় বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে বলেছেন, বাংলাদেশ সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ইস্যুতে অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। তখন এই অভিযোগ খণ্ডন করে বাংলাদেশের হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন ইস্যুতে বাস্তবতার নিরিখে অবস্থান তুলে ধরছে।
গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে এই ১৬ মাসে একই দিনে সকালে এক দেশের দূতকে তলবের পাল্টায় বিকেলে অন্য দেশের দূতকে তলবের ঘটনা এই প্রথম ঘটেছে।
এদিকে কলকাতায় বাংলাদেশের উপদূতাবাসের সামনে দুপুরে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর মিছিলের পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মিছিল করেছেন বামপন্থী দলগুলোর নেতা-কর্মীরা। হিন্দুত্ববাদীরা একপর্যায়ে ব্যারিকেড ভেঙে ফেললেও বামপন্থীরা সেই চেষ্টা করেনি।

ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনারকে তলবের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে পাল্টা তলব করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত ১০ দিনে চার দফায় দুই দেশ একে অন্যের কূটনীতিককে তলব করে নানা ইস্যুতে প্রতিবাদ আর উদ্বেগ জানাল।
মঙ্গলবার টানা চতুর্থ দিনের মতো বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা চলেছে। দিনের শুরুতে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। এ সময় ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও হাইকমিশনারের বাসভবনের বাইরে বিক্ষোভ ও হুমকি প্রদান, ২২ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসাকেন্দ্রে কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যদের ভাঙচুরের ঘটনায় ভারত সরকারের কাছে গভীর উদ্বেগ জানানো হয়।
এর জের ধরে বিকেলে দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তলব করে দেশটিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার এম রিয়াজ হামিদুল্লাহকে। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বি শ্যাম তলবের সময় বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে বলেছেন, বাংলাদেশ সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ইস্যুতে অযৌক্তিক ও অপ্রাসঙ্গিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। তখন এই অভিযোগ খণ্ডন করে বাংলাদেশের হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশ বিভিন্ন ইস্যুতে বাস্তবতার নিরিখে অবস্থান তুলে ধরছে।
গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে এই ১৬ মাসে একই দিনে সকালে এক দেশের দূতকে তলবের পাল্টায় বিকেলে অন্য দেশের দূতকে তলবের ঘটনা এই প্রথম ঘটেছে।
এদিকে কলকাতায় বাংলাদেশের উপদূতাবাসের সামনে দুপুরে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর মিছিলের পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মিছিল করেছেন বামপন্থী দলগুলোর নেতা-কর্মীরা। হিন্দুত্ববাদীরা একপর্যায়ে ব্যারিকেড ভেঙে ফেললেও বামপন্থীরা সেই চেষ্টা করেনি।

আমাদের শহরগুলোতে এখন ‘স্পোকেন ইংলিশ’ বিজ্ঞাপনে ছেয়ে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই বাণিজ্যের রমরমা। আমাদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে বাংলায় কথা বলাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। এমনকি বাবা–মায়েরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া সন্তানের সঙ্গে ঘরেও ইংরেজিতে কথা বলেন। বাংলা বলার ক্ষেত্রে অনেকে কড়া নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকেন।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে। গত প্রায় দেড় বছরে নানা ঘটনায় সেই টানাপোড়েন বেড়েছে। অতি সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক তলব, রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য, দুই দেশের হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
৭ ঘণ্টা আগে
প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয় এবং ছায়ানট ভবনে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মতামত ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী...
১০ ঘণ্টা আগে
আগামী সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট উপলক্ষে দেশের আটটি বিভাগের জন্য আটটি গান তৈরি করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রিলিজ করা হয়েছে ঢাকা বিভাগের জন্য নির্মিত গান।
১০ ঘণ্টা আগে